আমি মুরগি। না না, কক কক করতে আসিনি। দু-চারটা কথা বলতে এসেছি। কয়েক মিনিট সময় চেয়ে নিচ্ছি। এমনিতে বেশি কথাও বলি না, ওই সকালে উঠে আমাদের সাহেবরা যা একটু চিৎকার চেঁচামেচি করে আরকি। এর জন্য অবশ্য আমরা দায়ী না, এটা আমাদের বংশগত সমস্যা। সমস্যাও বলব না, মানুষজনকে জানান দিই যে সকাল হয়েছে। এটা নিয়ে নাকি অনেকেই বিরক্তি প্রকাশ করে বলে পাশের বাড়ির লাল মুরগি ভাবীর কাছে শুনলাম। কেন ভাই, আমাদের সাহেবরাই শুধু চিৎকার চেঁচামেচি করে, মানুষরা করে না? এই যে যার বাড়িতে আছি, এখন এই ঘরের সাহেব তো সকালে কাজে যাওয়ার সময় শুধু শুধু বউয়ের সঙ্গে ঘ্যান ঘ্যান করে।
মানুষের কথা কী আর বলব! নিজের বেলায় ষোলো আনা আর মুরগির বেলায় এক আনাও না! কোনোদিনই আমাদের বোঝার চেষ্টা করে না। বুঝবে বুঝবে, সময় হলে ঠিকই বুঝবে। যেদিন সব মুরগি মিলে দু-একদিন ডিম দেওয়া বন্ধ করে দেব, সেদিন ঠিকই বুঝবে।
এই বাড়ির গৃহকর্ত্রীও কম খারাপ না। সকালবেলা উঠেই বকবক করবে আমার সঙ্গে। ডিম কেন ছোট দিই, ডিমের কালার দিনদিন এমন হচ্ছে কেন। আরও কত কী তার অভিযোগ। আরে, তুমি খাবার দেবে কম অথচ ডিম আশা কর বড় সাইজের? কস্টিং কম অথচ প্রোডাকশন কার্ভ উঁচু আশা করে। সে নাকি ইকোনমিকসে মাস্টার্স করেছে। কী পড়াশোনা করেছে কী জানি!
আসলে সারাটা জীবনই বিভিন্নভাবে অবহেলার শিকার হই। বেঁচে থাকতে আমাদের কোনো দাম নেই কিন্তু মৃত্যুর পর চিকেন ফ্রাই, চিকেন টিক্কা, চিকেন শর্মা, চিকেন তন্দুরিসহ আরও কত নাম দেয় আমাদের। এই নাম তো চাইনি আমরা, শুধু একটু দাম চেয়েছিলাম। তবে হ্যাঁ, স্বার্থপর মানুষ ঈদ কিংবা বিয়ের সিজন এলে দাম দেয় আরকি। এখন বাজারে যান, দেশি মুরগি এক কেজি সাইজের একটা যদি ৬০০ টাকার কমে পান তাহলে আমি আমার চার পায়ের একটা কেঁটে ফেলব। স্যরি ভাই, পা আমার চারটা না, স্লিপ অব টাং। আসলে মুরগি মাত্রই ভুল করে। আর যা গরম পড়ছে, ভুল-ভ্রান্তি তো এক-আধটু হবেই।
মানুষের বেলায় ভুল হয়, মুরগির বেলায় হতে পারে না? তাই বলে আমাদের গায়ে হাত তুলবে? লাঠি দিয়ে ঠ্যাঙাবে? অনেক হয়েছে, আর না। আমাদের সচেতন হওয়ার সময় এসেছে। ইতোমধ্যে মোরগ-মুরগি সমাজের অধিকার রক্ষায় আমরা গঠন করেছি ন্যাশনাল কাউন্সিল অব মোরগ-মুরগি (ন্যাকামো)। ইতোমধ্যে আমাদের প্রায় ৪০ জন সদস্য হয়েছে। তাদের নিয়ে একটা জাতীয় কমিটি দেব খুব শিগগিরই। ভালো সাড়া পেলে দেশজুড়ে জেলা, উপজেলাভিত্তিক কমিটিও দেওয়া হবে।
কলি