বইমেলায় একটা টিভি চ্যানেল থেকে ফোন করেছে ইন্টারভিউয়ের জন্য। আমি বই নিয়ে গেলাম সেখানে। সাংবাদিক বললেন, ভাই দুইটা মিনিট অপেক্ষা করেন, একজন লেখক ইন্টারভিউ দিচ্ছেন। তারটা শেষ হলেই আপনারটা শুরু হবে। আমি ঘাড় নেড়ে বললাম, আচ্ছা।
শুভ্র কেশের একজন ষাটোর্ধ্ব নারী লেখক ইন্টারভিউ দিচ্ছেন। পান চিবানোর মতো চিবিয়ে চিবিয়ে কথা বলছেন। সূর্যের আলো চলে যাচ্ছে। ক্যামেরাম্যান শেষ করার জন্য বারবার তাড়া দিচ্ছেন উপস্থাপককে। উপস্থাপক মুখে কিছুটা বিরক্তি মিশিয়ে ওই লেখকের দিকে তাকিয়ে আছেন কিন্তু ওই নারী লেখক কথা বলা শেষ করছেন না। তার বুকের ভেতর জমানো কথা এখনো অনেক বাকি। তিনি সেসব কথা জাতিকে শোনাতে চান।
আমি দাঁড়িয়ে আছি। হাতের আঙুল ফুটাচ্ছি। প্রোডিউসার এসে বললেন, ভাই আরেকটু সময় নেব। আমি হাই তুলে বললাম, নেন।
ওই নারী লেখকের ইন্টারভিউ শেষ। আমি ভাবলাম, যাক বাবা বাঁচা গেল। তাড়াতাড়ি শেষ করে স্টলে যাই। অনেকে আমার সঙ্গে দেখা করতে এসে নিশ্চয়ই ফিরে যাবেন।মন খারাপ করবেন।
কিন্তু না, সিনেমার মোড় ঘুরে গেল। ওই নারী লেখক আবার এসে বললেন, আমি অনেকগুলো পুরস্কার পেয়েছি। সেগুলোর কথা বলা হয়নি। ক্যামেরা চালু করো।
ক্যামেরাম্যান বাধ্য হয়ে ক্যামেরা অন করল। উপস্থাপক পাথরের মূর্তির মতো মুখে প্লাস্টিকের হাসি নিয়ে মাইক্রোফোন ধরে রাখল। আমি সুযোগ খুঁজছি পালিয়ে যাওয়ার। কিন্তু প্রোডিউসার আমার সঙ্গে থাকার কারণে পালানো সম্ভব হচ্ছে না। আমি নড়নচড়ন করলেই তিনি আমাকে খপ করে ধরে ফেলবেন।
আরও ১০ মিনিট চলল ওই নারী লেখকের ইন্টারভিউ। এবার তিনি বেশ খুশি। উঠে যাবেন যাবেন সময়ে তিনি আবার দুম করে সেটে বসে পড়লেন। দাঁত সবকটি বের করে বললেন, আমার নাতি-পুতির কথা আছে এই বইতে। সেটা বলতে ভুলে গেছি। এই ক্যামেরা আবার চালু করো। আবার ক্যামেরা চালু হলো। সূর্য মামা টাটা বলে টুপ করে ডুবে গেল। ওই লেখকের বয়সজনিত কারণে কেউ মেজাজ দেখাতে পারল না। শুধু ক্যামেরাম্যান ক্যামেরা রেখে পাশে গিয়ে হুতুম প্যাঁচার মতো মুখ করে দাঁড়িয়ে থাকল।
আমি একটা চিকন হাসি দিয়ে প্রোডিউসারকে বললাম,
- ভাই অনেক হইছে, এবার আমি যাই!
- লাইট, ক্যামেরা সব রেডি, এবার আপনার পালা ভাই!
কলি