মার্কিন কথাসাহিত্যিক মার্ক টোয়েন বলেছিলেন, প্রতিদিন দুটো করে সূর্য ওঠে। একটি প্রভাত সূর্য, অপরটি সংবাদপত্র সূর্য। প্রভাত সূর্যের চিরন্তন আলোয় সমগ্র জগৎ উদ্ভাসিত হয়। তেমনি সংবাদপত্র সূর্য বা সাংবাদিকতার কল্যাণে আমরা সমগ্র পৃথিবীর দৈনন্দিন ঘটনাবলিকে জানতে পারি। সংবাদপত্র ও সাংবাদিকতার দায়িত্ব প্রভাত সূর্যের মতোই চিরভাস্বর।
বাংলাদেশে দৈনিক, সাপ্তাহিক, পাক্ষিক, মাসিক এ রকম বিভিন্ন প্রকারভেদে শুধু নিবন্ধিত পত্র-পত্রিকা রয়েছে ৩ হাজার ২১০টি। তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বাংলাদেশ চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তরের নিবন্ধন শাখা থেকে এই সংবাদপত্রের নিবন্ধন দেওয়া হয়। পাশাপাশি সম্পূর্ণ অনলাইনভিত্তিক অসংখ্য সংবাদমাধ্যম বিদ্যমান রয়েছে। এসব গণমাধ্যমে অভিজ্ঞ, জ্ঞানী, দক্ষ অনেক সাংবাদিক রয়েছেন।
তবে বর্তমানে পাঠকদের রুচি ও চাহিদার পরিবর্তন হয়েছে। এতে গণমাধ্যমেও রূপান্তর ঘটছে। কিন্তু সেই পরিবর্তনের সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নিতে না পেরে আধুনিক পাঠকদের সংবাদের যে তৃষ্ণা তা পূরণে ব্যর্থ হয়েছে অধিকাংশ পত্রিকা। এ ক্ষেত্রে চাটুকারিতা, দলদাসে পরিণত হওয়া, বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশনে অনাগ্রহ, চ্যালেঞ্জ নেওয়ার সক্ষমতা না থাকা, ব্যবসায়িক, রাজনৈতিক ও ব্যক্তি স্বার্থে হাতিয়ার হিসেবে গণমাধ্যমকে ব্যবহার করাই অন্যতম কারণ বলে মনে করা হয়। ফলে চাহিদার সঙ্গে তাল মিলিয়ে সঠিক সাংবাদিকতা চর্চা না হওয়ায় গণমাধ্যম থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে শুরু করেন পাঠকরা।
তবে এসব প্রতিবন্ধকতাকে পেছনে ফেলে নিখাদ, নিরপেক্ষ, বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ প্রকাশ ও প্রচারের মাধ্যমে সংবাদপত্রের প্রতি আবারও পাঠকের আস্থা ফেরানোর চ্যালেঞ্জ নেন প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক ও সাংবাদিক মোস্তফা কামাল। পাঠকদের আশা-আকাঙ্ক্ষা, তথ্যের তৃষ্ণা মেটাতে তথ্য-সুন্দর, বস্তুনিষ্ঠ প্রতিবেদন উপস্থাপনের লক্ষ্যে একটি ভালো মানের পত্রিকা উপহার দেওয়ার ব্রত নেন তিনি। তবে শুরুতে পত্রিকাটির নাম নিয়ে রাখা হয় রহস্য, শুধু বলা হয় বরেণ্য কথাসাহিত্যিক ও সাংবাদিক মোস্তফা কামালের প্রকাশনায় ও সম্পাদনায় যে পত্রিকাটি বাজারে আসছে তার প্রথম অক্ষর হবে ‘খ’। এতেই দেশব্যাপী ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়।
নাম ও ভবিষ্যৎ না জেনেই সারা দেশের বাঘা বাঘা অনেক গণমাধ্যমকর্মী এই পত্রিকার সঙ্গে যুক্ত হতে রীতিমতো প্রতিযোগিতায় নেমে পড়েন। তবে দক্ষ, যোগ্য, উদ্যমীর পাশাপাশি সৎ ও স্বচ্ছ ব্যক্তিত্বের অধিকারী সাংবাদিকদের অগ্রাধিকার দিয়ে একঝাঁক তরুণ ও প্রবীণ সাংবাদিককে নিয়ে ২০২৩ সালের ১৫ অক্টোবর যাত্রা শুরু করে দৈনিক খবরের কাগজ।
সংবাদপত্রকে সমাজ ও রাষ্ট্রের দর্পণ বলা হয়। কারণ দর্পণে যেমন কোনো বস্তুর প্রকৃত রূপ ফুটে ওঠে- তেমনি সমকালীন বিশ্ব চরাচরের চলমান গতি-প্রকৃতি, ঘটনাপ্রবাহ, জীবনচিত্র ও দিকনির্দেশনা পাওয়া যায় সংবাদপত্রে। দৈনিক খবরের কাগজ পত্রিকাটি বাজারের আসার পর থেকে সুনিপুণভাবে সেই দায়িত্ব পালন করে আসছে। ভূমিকা রাখছে সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় উন্নয়ন-অগ্রগতি, সত্য-সুন্দর এবং ন্যায়-নীতি প্রতিষ্ঠায়। পাশাপাশি প্রভাবশালীদের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে একের পর এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করতে থাকে। তথ্যপ্রমাণসহ যেখানে তুলে ধরা হয় অনিয়ম-দুর্নীতিসহ নানা অসঙ্গতির কথা।
এ ছাড়া জনদুর্ভোগ, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষিসহ জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়েও প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। আবার সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক বিষয়েও প্রতিনিয়ত সংবাদ প্রচার ও প্রকাশের মাধ্যমে ইতিবাচকভাবে পাঠকের মন জয় করে নিয়েছে মুক্ত চিন্তার স্বাধীন এই দৈনিকটি।
সারা দেশের মতো রাজশাহীতেও ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে খবরের কাগজ। গত এক বছরে রাজশাহীর বিভিন্ন ব্যক্তি ও
প্রতিষ্ঠানের অনিয়ম-দুর্নীতির তথ্য পত্রিকার পাতায় তুলে ধরা হয়েছে। এতে অধিকাংশ ক্ষেত্রে বিষয়গুলো সংশোধন করতে বাধ্য হয়েছে কর্তৃপক্ষ। দূর হয়েছে বৈষম্যের, প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ন্যায় ও সাম্য। ফলে মাত্র এক বছরেই পাঠকের হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছে দৈনিক খবরের কাগজ।
আগামীতেও বৈষম্যহীন, দুর্নীতিমুক্ত, প্রাণের বাংলাদেশ গড়তে দৈনিক খবরের কাগজ বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখার পাশাপাশি উত্তরোত্তর আরও পাঠক প্রিয় হয়ে উঠবে বলে আশা করি। প্রথম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে মুক্ত চিন্তার স্বাধীন এই দৈনিকের পাঠক, বিজ্ঞাপনদাতা, শুভানুধ্যায়ীসহ সকলের প্রতি নিরন্তর শুভেচ্ছা ও শুভ কামনা।