ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কার্যক্রমের শুরুতে হিন্দু শিক্ষকের সংখ্যাধিক্য থাকলেও তারা স্বীয় সম্প্রদায়ের লোক ছিলেন না। ছিলেন শিক্ষক ও মানুষ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে জ্ঞানের অব্যাহত প্রবাহের সম্ভব হয়েছিল ধর্মনিরপেক্ষ শ্রেণি চরিত্রের জন্য। বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ের বহিঃসমাজেও প্রসারিত হয়েছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ের সব অনুশীলনের দৃষ্টি ছিল ইহজাগতিক এবং অঙ্গীকার ছিল ধর্মকে ব্যক্তিগত আচার ও বিশ্বাসের ব্যাপার হিসেবে রেখে বিশ্ববিদ্যালয় ব্যবস্থাপনায় ধর্মীয় পরিচয় গ্রহণ থেকে বিরত রাখা। এ ক্ষেত্রে শিক্ষকদের কৌলিন্যবোধ বড় প্রভাবক ছিল।...
শতকের পথ পরিক্রমণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সবচেয়ে বড় অর্জন হচ্ছে এ বিদ্যাপীঠ জাতীয় জীবনের প্রায় সব ঘটনাপ্রবাহের অংশীজন হতে পেরেছে। শুধু একটি বিদ্যাপীঠ নয়, জাতির গতি-প্রকৃতির যেন আঁতুড়ঘর এ প্রতিষ্ঠান। অনেকেই বিশ্বাস করতে চান ‘Dhaka University is a state With in the state’। এই বিশ্বাস নিয়ে অনেকের মধ্যে তৃপ্তির ঢেকুর থাকলেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈশ্বিক অবস্থান এখনো কাম্যমানের নয়। তবে যাত্রাপথের প্রথম সিকি শতাব্দীর অর্জন এখনো আমাদের স্বস্তির বার্তা দেয়।
বঙ্গভঙ্গ রদপর্বে পূর্ববঙ্গের মুসলমানদের ক্ষতি কিছুটা নিবারণ করতে ব্রিটিশরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠাকে লর্ড লিটনের ভাষায় ‘বাংলা ভাগ রদের এক উজ্জ্বল রাজকীয় ক্ষতিপূরণ’ মনে করেন। লর্ড হার্ডিঞ্জের ভাষায়- রাজকীয় ছাড় হিসেবে উল্লেখ করেন। ঢাকার নবাব স্যার সলিমূল্লাহ ও ধনবাড়ীর নবাব ও বাংলার শিক্ষামন্ত্রী নওয়াব আলী চৌধুরীর নেতৃত্বে পূর্ববঙ্গের নেতা শেরেবাংলা ফজলুল হকের যৌথ প্রয়াসে নানা দ্যুতিয়ালির মাধ্যমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আলোর পথ দেখে ১৯২১ সালের পয়লা জুলাই।
পূর্ববঙ্গের নাগরিক সমাজের জাগরণের ফলে ব্রিটিশ সরকারের দীর্ঘমেয়াদি বোঝাপড়ার ফসল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। শুরুতে হিন্দু-মুসলিমদের মধ্যে সৌহার্দ্য রক্ষা করে একটি অসাম্প্রদায়িক চালচিত্রে চলার পথ মসৃণ না হলেও অনেকাংশে সফল হয়েছিল প্রথম পর্যায়ের প্রশাসন। অক্সফোর্ডের আদলে হলগুলোকে কলেজের মতো ইউনিট বিবেচনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আধুনিকতার ছাপ নিয়েই যাত্রা করে। বিশ্ববিদ্যালয়ে কোর্ট, এক্সিকিউটিভ কাউন্সিলে উপমহাদেশের জ্ঞানী-গুণীদের সন্নিবেশ ঘটিয়ে একটি সুদূরপ্রসারী ও বড় পটভূমি ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য প্রেরণাদায়ী। এ জন্যই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে বলা হতো ‘অক্সফোর্ড অব দ্য ইস্ট’।
মুক্তবুদ্ধির চর্চা, বুদ্ধির মুক্তি আন্দোলন, পূর্ববাংলার উচ্চশিক্ষার প্যারাডাইমকে পালটে দিয়েছিল এ প্রতিষ্ঠান। পুরাতন পাণ্ডুলিপি সংগ্রহ, বির্তক প্রতিযোগিতা, তাৎপর্যপূর্ণ গ্রন্থ প্রকাশ, মৌলিক গবেষণাকর্ম, ছাত্র সংসদ, সাহিত্য কর্মকাণ্ড- সবমিলিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় একটি গতিময় প্রতিষ্ঠান হয়ে ওঠে। রবীন্দ্র-নজরুল-শরৎ-সুভাষ বসু প্রমুখ বরেণ্যজনের আগমনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পায় সঞ্জিবনী শক্তি। যদি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাকলগ্নের আত্মসমীক্ষা করা হয় তবে অবলোকন করা যায়, বিদ্যায়তনিক স্বাধীনতা বা একাডেমিক ফ্রিডম অনেকটাই ছিল। অর্থাৎ শিক্ষা দেওয়ার স্বাধীনতা ও জ্ঞানার্জনের স্বাধীনতা।
যদিও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার অঙ্কুরলগ্নে বিরোধিতা তেতিয়ে ওঠে পশ্চিম ও পূর্ববঙ্গের হিন্দু বুদ্ধিজীবীদের পক্ষ থেকে। এ বিরোধিতা মূলত স্বার্থহানির বিরোধিতা। কারণ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়কে কেন্দ্র করে যে কৌলিন্য তৈরি হয়েছিল তা ক্ষতি হবে। পূর্ববঙ্গের মুসলিম শ্রেণির শিক্ষার অগ্রসর হলে হিন্দুদের প্রভাব কমে যাবে। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের আয় কমে যাবে, সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রভাবও কমে যাবে। বলে রাখা প্রয়োজন, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে মুসলিম ছাত্রদের প্রবেশাধিকারের সুযোগ সীমিত ছিল। এ বিরোধিতার মূল কুশীলব ছিলেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায়। পূর্ববঙ্গের এলিট হিন্দু সমাজ কিছু ব্যতিক্রম বাদে নিজেদের শ্রেণি কৌলিন্য অটুট রাখতে অবধারিতভাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিপরীত প্রান্তে দাঁড়ায়।
যে নাথান কমিটির সুপারিশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক পরিকাঠামো তৈরি হয়েছিল তা ছিল সুষম।
নাথান কমিটি ২৬টি অধ্যায়বিশিষ্ট একটি প্রতিবেদন সরকারের কাছে পেশ করে। এই ২৫টি অধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক বিষয় এবং ২৬তম অধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার আর্থিক বিষয়-সংক্রান্ত।
উল্লেখ্য, নাথান কমিশন ছাড়াও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্য ১৯১৭ সালের ৬ জানুয়ারি ভারত সরকার উচ্চশিক্ষা বিস্তারে মাইকেল স্যাডলারের নেতৃত্বে একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কমিশন গঠন করে বিদ্যালয়ের কর্মসূচি নির্ধারণের জন্য। স্যাডলার কমিশন নামে খ্যাত এ কমিশনের রিপোর্টে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পথ সুগম হয়। রিপোর্টে বলা হয়, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র অধিভুক্ত কলেজের সংখ্যা ধারণক্ষমতার অধিক, তাই ঢাকায় একটি শিক্ষাঙ্গন ও আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা প্রয়োজন। এ বিশ্ববিদ্যালয় হবে স্বায়ত্তশাসিত। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বৈশিষ্ট্য হবে শিক্ষণ ও আবাসিকধর্মী।
উপমহাদেশের উচ্চশিক্ষা বিষয়ে এক অবিস্মরণীয় দলিল হলো স্যাডলার কমিশনের বিশাল রিপোর্টটি। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের পূর্ববর্তী ৬০ বছরের কার্যক্রম, দুর্বলতা, সীমাবদ্ধতা ও অর্জন পর্যালোচনা করে স্যাডলার কমিশন বাংলার বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষাকে মূলগতবাবে ত্রুটিপূর্ণ বলে মন্তব্য করেছিল। কারণ, ওই শিক্ষা এমন একটি উচ্চশিক্ষিত শ্রেণি তৈরি করেছে, যারা পশ্চিমের শিল্প-সাহিত্য, দর্শন, বিজ্ঞান প্রভৃতি সম্পর্কে জ্ঞানার্জন করলেও, তারা সমাজ ও জীবনবিচ্ছিন্ন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ত্রুটি-বিচ্যুতি পরিমার্জন-পূর্বক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকৌশলের যোজনা হয়েছিল।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগঠিত কাঠামো নির্ধিারিত হলে প্রথমে উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পান স্যার ফিলিপ জোসেফ হার্টগ (কার্যকাল: ১৯২০-১৯২৫) তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদানের আগে লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাডেমিক রেজিস্ট্রার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। কোষাধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পান আইসিএস অফিসার জে এইচ লিন্ডসে এবং রেজিস্ট্রার হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয় ঢাকার নবাব পরিবারের সদস্য ও বেঙ্গল সিভিল সার্ভিসের সদস্য খান বাহাদুর নাজির উদ্দিনকে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপনের প্রকল্প পরিচালক ছিলেন এইচ ই স্টেপলটন ও স্থপতি ছিলেন গ্যারেথ।
১৯২১ সালের ১ জুলাই আনুষ্ঠানিকভাবে তিনটি অনুষদ (কলা, বিজ্ঞান, আইন), তিনটি হল, (মুসলিম হল, ঢাকা হল, জগন্নাথ হল) ১২টি বিভাগ, ৬০ জন শিক্ষক ও ৮৭৭ জন ছাত্র সহযোগে পাতশাহী (বর্তমান শাহবাগ) ও রমণীয় রমণায় কমবেশি ৬০০ একর জমি বঙ্গবঙ্গের রদের ফলে এ অঞ্চলে অবস্থিত পরিত্যক্ত ভবন ও অট্টালিকা নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যাত্রা।
ভাইস চ্যান্সেলর ফিলিপ হার্টগ খুব দূরদর্শী ছিলেন। ভারতের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শিক্ষক ঢাকা শহরের মতো একটা মফস্বল শহরে নিয়ে আসতে হলে বেতন বৃদ্ধিসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা দেওয়া দরকার। হার্টগ সেই পথেই অগ্রসর হন। প্রারাম্ভে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্থিক সুযোগ-সুবিধা কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের চেয়ে বেশি ছিল। এর ফলে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কয়েকজন শিক্ষক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে যোগদান করেন। এর ফলে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বন্দ্ব-ফ্যাসাদ বাড়তে থাকে। সূচনাপর্বে যুক্ত হয়েছিলেন হরপ্রসাদ শাস্ত্রী, ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ, অধ্যাপক সত্যেন্দ্রনাথ বোস, জ্ঞান ঘোষ, রমেশ চন্দ্র মজুমদার, নরেশচন্দ্র সেন গুপ্ত, হরিদাস ভট্টাচার্য প্রমুখ। আরও এসেছিলেন মোহিতলাল মজুমদার ও চারুচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়। এদের স্নাতকোত্তর ডিগ্রি ছিল না। কিন্তু তারা ছিলেন উচ্চমানের শিক্ষক ও গবেষক। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কার্যক্রমের শুরুতে হিন্দু শিক্ষকের সংখ্যাধিক্য থাকলেও তারা স্বীয় সম্প্রদায়ের লোক ছিলেন না। ছিলেন শিক্ষক ও মানুষ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে জ্ঞানের অব্যাহত প্রবাহের সম্ভব হয়েছিল ধর্মনিরপেক্ষ শ্রেণি চরিত্রের জন্য। বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ের বহিঃসমাজেও প্রসারিত হয়েছিল।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সব অনুশীলনের দৃষ্টি ছিল ইহজাগতিক এবং অঙ্গীকার ছিল ধর্মকে ব্যক্তিগত আচার ও বিশ্বাসের ব্যাপার হিসেবে রেখে বিশ্ববিদ্যালয় ব্যবস্থাপনায় ধর্মীয় পরিচয় গ্রহণ থেকে বিরত রাখা। এ ক্ষেত্রে শিক্ষকদের কৌলিন্যবোধ বড় প্রভাবক ছিল।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এক সময় বিশ্বের খ্যাতনামা শিক্ষকদের ইনভাইট করে আনা হতো। এ কার্যক্রমে পরবর্তীতে যুক্ত হন অধ্যাপক নিউম্যান, ত্র্যামি জেরালিন্ড স্টকের মতো বিদেশি শিক্ষক। বিদেশি শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের জন্য পরর্বতীতে নির্মিত হয়েছিল ইন্টারন্যাশনাল হল।
সরকারের পক্ষ থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার মৌলিক উদ্দেশ্য ছিল-পূর্ববঙ্গের মানুষের মধ্যে শিক্ষার প্রসার। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ভারতের একটি স্বশাসিত আদর্শ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, যে প্রতিষ্ঠান কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর চাপ কমাবে বলে কর্তৃপক্ষ মান্য করতেন।
শুরুতেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘বুদ্ধির মুক্তি আন্দোলন’ বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম একযুগ এ আন্দোলন জোরালো ছিল। ১৯২৬ সালের শুরু হওয়া ‘মুসলিম সাহিত্য সমাজ’ এবং ১৯৩৯ সালে ঢাকা শহরে সৃজিত ‘প্রগতি লেখক আন্দোলন’ এই পর্বে মাইলফলক। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক এ আন্দোলনের প্রাণসঞ্জিবনী।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পূর্ববাংলার উচ্চশিক্ষার প্যারাডাইমকে পালটে দিয়েছিল। এর আগে মধ্যযুগে এখানকার মুসলিম সুলতান এবং সুবেদাররা এ এলাকার মুসলিমদের উচ্চশিক্ষার জন্য কয়েকটি বড় মাদ্রাসা বা জামিয়া স্থাপন করেছিলেন। যেমন গৌড়, লখনৌতি, দারসবাড়ি, বাঘা, সোনারগাঁও ইত্যাদি উত্তর-পশ্চিম ও মধ্যবঙ্গে স্থাপিত বড় মাদ্রাসাসমূহ। এসব মাদ্রাসায় তখনকার দারসে নিজামি কারিকুলাম ও সিলেবাসসহ ইউনানি চিকিৎসাবিদ্যাও পড়ানো হতো। তবে একথা ঠিক যে, এ মাদ্রাসাশিক্ষা ও জ্ঞানতত্ত্বে কোরআন ও সুন্নাহর একটা কেন্দ্রীয় ভূমিকা থাকত। ফলে এসব উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান একটি ইসলামিকতার প্যারাডাইমে গড়ে উঠেছিল।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে পূর্ববঙ্গের সমাজে পশ্চিম আধুনিক লিবারেল হিউম্যানিস্ট প্যারাডাইমেই সংযুক্ততা তৈরি হয়।
রাজা কালী নারায়ণ বৃত্তি মেধাবী শিক্ষার্থীদের স্বীকৃতির একটি মানদণ্ড হয়ে দাঁড়ায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একেবারে গোড়ার ও প্রাথমিক বিকাশপর্বে। দেশের প্রথম উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সৌরভ ছড়িয়েছে চারদিকে।
তৎসময়ে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে অনার্স কোর্স দুই বছর মেয়াদের হলেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাগ্রসর চিন্তা নিয়ে অনার্স কোর্স চালু করে তিন বছর মেয়াদি। এ বিষয়টি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কর্যক্রমের ইতিবাচক দিক।
বলে রাখা প্রয়োজন, ১৮৫৭ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপিত হয়েছিল কিন্তু ১৯০৪ অব্দি সেখানে স্নাতকোত্তর পড়ানো হতো না। তখন এমএ পড়ানো হতো কলেজে কলেজে। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায় প্রথম কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকোত্তর পড়ানোর রীতি চালু করলেন। অবশ্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এ ক্ষেত্রে অগ্রগামী। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যাত্রাকাল থেকেই স্নাতকোত্তর পর্যায়ে পড়ানো হয়।
প্রথমপর্বে পাঠদানের জন্য লেকচার থিয়েটার, ক্লাসরুম, গ্রন্থাগার, গবেষণাগার, পরীক্ষার হল এবং মিউজিয়াম সুপারিশ করা হয়। অধিক সংখ্যক শিক্ষার্থীর পাঠদানের জন্য লেকচার থিয়েটার এবং সীমিতসংখ্যক শিক্ষাার্থীর জন্য লেকচার এবং টিউটোরিয়াল কক্ষ ব্যবহার করা হতো। স্নাতক (জুনিয়র) পর্যায়ে কলেজসমূহ পাঠদান করবে। স্নাতক (সিনিয়র) পর্যায়ে মেধাবী শিক্ষার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকরা পাঠদান করবেন। পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ে তিন ধরনের গ্রন্থাগারের প্রস্তাব দেওয়া হয়- (১) কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার, (২) সেমিনার গ্রন্থাগার ও (৩) কলেজসমূহে কলেজ গ্রন্থাগার।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাথমিক পর্বের শিক্ষা কার্যক্রমে প্রথম ভর্তির পর কিছুকালের মধ্যে ছাত্রদের একটি ‘ইংলিশ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হতো।
উপাচার্য হার্টগের কর্মের প্রতিফলন ঘটে অ্যাকাডেমিক কার্যক্রমের প্রথম দিকেই। উপাচার্য নিয়ম চালু করেন অনার্স ও এমএ পরীক্ষায় প্রত্যেক পেপার দুজন পরীক্ষক দেখবেন। উত্তরপত্রে কোনো নম্বর দেওয়া হতো না। পরীক্ষকের উত্তরপত্রে আলাদা কাগজে নম্বর লিখে বিভাগের প্রধানের কাছে পাঠাতে হতো। পরীক্ষাপদ্ধতি আধুনিকায়ন হলেও মূল কাঠামো পরীক্ষার এখনো অনেকটা এমনি রয়ে গেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মর্যাদা ও কৌলিন্যের বিষয়ে ছাত্ররা প্রথম থেকে সজাগ ছিলেন। ১৯২৬-১৯২৭ লর্ড লিটন বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর হিসেবে সমাবর্তন অনুষ্ঠানের সভাপতি হওয়ার কথা ছিল। ঢাকা হলের ছাত্ররা লর্ড লিটনের হাত থেকে ডিপ্লোমা গ্রহণ করতে সম্মত হলো না, কারণ কিছুদিন আগে লাট সাহেব বার্ষিক পুলিশ কনফারেন্সে ভারতীয় নারীদের সম্মন্ধে অসৌজন্যসূচক মন্তব্য করেছিলেন। এর বিরুদ্ধে খবরের কাগজে তীব্র প্রতিবাদ ধ্বনিত হয়েছিল। ঢাকা হলের ছাত্ররা তাদের সংকল্পে অটল থাকল, সমাবর্তন অনুষ্ঠান বয়কট করল।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ছাত্রী নীলা নাগ ১৯২৩ সালে ইংরেজিতে এমএ পাস করেছিলেন। এমএ পাস করার পর তিনি শুরু করেছেন প্রদীপ জ্বালাবার কাজ। লীলা নাগ ‘শ্রীসংঘে’ যোগদান করে সাময়িকভাবে বিপ্লবী জীবনের সঙ্গে পরিচিত হন। এ সময়ে লীলা নাগ গড়ে তোলেন বাংলার প্রথম ছাত্রী সংগঠন, যা ‘দীপালি সংঘ’ নামে পরিচিত। এ সংঘ নারীশিক্ষার ওপর গুরুত্বারোপ করে কয়েকটি বালিকা বিদ্যালয় গড়ে তুলতে সমর্থ হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালায়ের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ছাত্রী ‘দীপালি সংঘে’র সঙ্গে জড়িত ছিলেন। এদের মধ্যে সুষমা সেনগুপ্ত (১৯০৩-১৯৮৭), রেনুকা সেনগুপ্ত (১৯০৯-১৯৪১), লতিকা দাশ (১৯১১-১৯৪৯) ফজিলাতুন্নেছা (১৮৯৯-১৯৭৭) উল্লেখযোগ্য। লীলা নাগ জয়শ্রী নামে যে মাসিক পত্রিকা বের করেন তা বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথের আশীর্বাদধন্য হয়েছিল।
বলাবাহুল্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সূচনালগ্নের কুশীলবগণ বিশ্ববিদ্যালয়কে বিশ্বজনীন জ্ঞানভাণ্ডার রূপে দেশের ভৌগোলিক সীমা অতিক্রম করে যেন বহির্বিশ্বের সঙ্গে সংযোগ ঘটিয়ে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিয়ে জ্ঞানসৃষ্টি ও প্রবাহবিস্তার করতে পারে, সে লক্ষ্যেই কাঠামো বিন্যাস ও কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছিল।
এ প্রসঙ্গে উল্লেখ্য, ১৯২০ সালের ১১-১২ মার্চ ‘ঢাকা সোশ্যাল সার্ভিস এক্সিবিউশন নর্থব্রুক হলে অনুষ্ঠিত হয়। এ অনুষ্ঠানের মূল আলোচ্য বিষয় ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ইতিবৃত্ত ও কী রকম টিচিং অ্যান্ড রেসিডেন্সিয়াল’ বিশ্ববিদ্যালয় হতে যাচ্ছে তার একটি রূপরেখা। প্রধান আলোচক ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের বিশেষ অফিসার এইচ ই স্টেপলটন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের কাঠামো সম্পর্কে বলেন, শিক্ষাদানে লেকচার ও সেমিনার কাজের জন্য থাকবেন অতি উঁচুমাপের সীমিত সংখ্যক প্রফেসর। শিক্ষদের ব্যক্তিত্বের ওপর এ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভবিষ্যৎ নির্ভর করবে। তাছাড়া থাকবেন রিডার, যারা হবেন ‘টিচার্স অব নোট’ এবং তাদের মূল্যবান গবেষণা থাকবেই। যোগ্যতা প্রমাণ করতে পারলে একপর্যায়ে তারা প্রফেসরশিপ পাবেন। আরও থাকবেন সুযোগ্য লেকচারার, সহকারী লেকচারার ও ডেমোনেস্ট্রেটর। ক্যাম্পাস অক্সফোর্ডের নিয়মকানুন অনুসারে চলবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
শিক্ষাদানভিত্তিক নাকি গবেষণাভিত্তিক বিশ্ববিদ্যালয় হবে এ বিষয়ে দোলাচল থাকলেও দুইয়ের মিশেলে চলেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম সিকি শতাব্দীর কার্যক্রম।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রারম্ভিক শিক্ষকদের মধ্যে ছিলেন ইংরেজ অধ্যাপক জর্জ হ্যারি ল্যাংলি, পরবর্তীতে উপাচার্য ‘মিস্টার জোকিন্স, মিস্টার টমার, এ জি স্টক প্রমুখ একাডেমিক কাজে পারিদর্শিতা দেখাতে সক্ষম হন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাডেমিক কার্যক্রমে একটি প্রশাসনিক সিদ্ধান্তের মাধ্যমে ঢাকা কলেজ ও জগন্নাথ কলেজের ডিগ্রি পর্যায়ের ছাত্রদের এ বিশ্ববিদ্যালয়ে যুক্ত করা হয়। দুটি কলেজের বেশ কিছু বই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগারে যুক্ত হয়। আজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগারের দুর্লভ সম্ভার নিয়ে আমাদের যে গৌরব তা সৃজিত হয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম পর্বে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে প্রারম্ভে চড়াই-উতড়াই পেরোতে হয়েছে। কারণ সমাজে তখন ধর্মকে প্রাধান্য দিয়ে প্রতিষ্ঠা করতে সমাজের ক্রিয়াশীল শ্রেণি নানামাত্রিক চাপ প্রয়োগ করে সামাজিক সংহতি বিনষ্ট করতে তৎপর হয়। একটি বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা তৎসময়ের বাস্তবতায় সত্যই দুরূহ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে অসাম্প্রদায়িক সর্বজনীন বিদ্যায়তন হিসেবে গড়তে সরকারের দৃষ্টিভঙ্গির নৈতিক সমর্থনের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠাকালীন উপাচার্য, কোষাধ্যক্ষ, রেজিস্ট্রার, ডিন, প্রভোস্টসহ এক্সিকিউটিভ কোর্টের অধিকাংশ সদস্যের ইতিবাচক দৃষ্টি ছিল। সর্বপরি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকমণ্ডলীর অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে ধর্মীয় ধোঁয়া তুলে আতর বা ধূপের গন্ধ মাখতে দেননি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তার জ্ঞান অন্বেষ চরিত্রের প্রকাশ ঘটায় প্রথম দশকেই। ১৯২৫ সালে প্রকাশিত হয় রমেশচন্দ্র মজুমদার প্রণীত ‘দ্য আর্লি হিস্ট্রি অব বেঙ্গল’।
রমেশচন্দ্র বাংলার ইতিহাস লেখার কর্মে মনোনিবেশ করেন। এ ইতিহাস রচনার যে কমিটি গঠিত হয় সেই কমিটির সভাপতিও ছিলেন স্বয়ং রমেশচন্দ্র। এ ইতিহাস লেখার কর্মের জন্য আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায় এক হাজার টাকা এবং বাংলা সরকার এক হাজার টাকা চাঁদা দেন, আর এভাবেই আরম্ভ হয় বাংলার ইতিহাস লেখার কর্ম। ১৯৪৩ সালে বাংলার ইতিহাসের প্রথম খণ্ড প্রকাশিত হয়। প্রকাশ হওয়ার পরপরই গ্রন্থটি খুব সমাদৃত হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সূচনাপর্বে প্রকাশিত হয় নিয়মিতভাবে ‘ঢাকা ইউনির্ভাসিটি বুলেটিন’। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জ্ঞানগর্ভ বক্তৃতামালার আয়োজন করে ১৯৩০-১৯৩১ শিক্ষাবর্ষে।
প্রথমার্ধে ব্রিটিশ সরকার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র আন্দোলনকে অনুমোদন দেয়নি। এমনকি ছাত্ররা ‘কোনো আন্দোলনে যোগদান করবে না’ এই মর্মে মুচলেকা পর্যন্ত দিতে হয়েছিল। অনিল রায়ের বিপ্লবী ‘শ্রীসংঘ’, ‘অনুশীলন সমিতি’, ‘যুগান্তর পার্টি’ ও ‘বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্স’ ইত্যাদি বিভিন্ন বৈপ্লবিক দলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা গোপনে যোগদান করত। গত শতাব্দীর মধ্য দশকে পূর্ববঙ্গ তথা ভারতীয় উপমহাদেশে রাজনীতির এক কেন্দ্র হয়ে ওঠে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। ভারত ও বাংলার বিভিন্ন অঞ্চলের মতো ঢাকায় ছাত্র ফেডারশনের শাখা প্রতিষ্ঠিত হয় এবং ঢাকা জেলায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রী এ সংগঠনে নেতৃত্ব দেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা-পরবর্তী বেশ কিছু দিকদিশারি কর্ম ছিল। যা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিধিবদ্ধ দায়বদ্ধতাকে ছাড়িয়ে গিয়েছিল। ১৯২৫ সালেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রথম পিএইচডি অর্জন করেন বিনয় ঘোষ। ১৯২৫ সাল থেকেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পাণ্ডুলিপি সংগ্রহের প্রয়াস লক্ষ্য করা যায় এবং ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত এ প্রচেষ্টা থাকে অব্যাহত। এ সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিদগ্ধ পণ্ডিতরা এ সুমহান কাজের সঙ্গে জড়িত ছিলেন এবং এ সময়কালের মধ্যে বহুসংখ্যক পাণ্ডুলিপি সংগ্রহ করা সম্ভব হয়। যদিও এসব দুষ্পাপ্য পাণ্ডুলিপি, পুথি এখনো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারে অনাদরে পড়ে আছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্ঞানমনস্ক চরিত্রের পরিচয় প্রথম দিকেই বিকশিত হয়। এ প্রসঙ্গে ড. অমলেন্দু বসু ১৯২৬-৩০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলের আবাসিক ছাত্র এবং পরে ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক ছিলেন। তিনি মন্তব্য করেন,
‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কয়েক সপ্তাহ পড়ার পরেই বুঝতে পারলাম, এই বিশ্ববিদ্যালয় নেহাত গ্রাজুয়েট তৈরির কারখানা নয়, ...ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে জ্ঞান-বিজ্ঞানের সাধনা নিরন্তর অগ্রসরমান। এখানে ব্যক্তিত্বের সংযত বিকাশের অমূল্য সংযোগ, এখানে জ্ঞানপথিক যুবজনচিত্ত ক্রমেই এগিয়ে যায়।’
ঢাকার মুসলিমরা খুব একটা অবস্থাপন্ন না হলেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের জায়গির হিসেবে রাখতেন। এ যেন তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি মমত্ববোধ। এমনকি উপাচার্য সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেনও জায়গির থেকে পড়েছেন। ঢাকার গরিবরাই জায়গির রাখত। কিন্তু তারা ছাত্র-মাস্টারসাবদের খুব ইজ্জত করত, খুব খাতির দেখাত।
আজও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশের মানুষের কাছে এক আশার রাহাবার। কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রমের কলানৈপুণ্যে অংশীজনদের অতৃপ্তি থেকেই যাচ্ছে। তাই বারবার ইতিহাসের খেরোখাতা উল্টিয়ে দেখতে হচ্ছে যাত্রাপথের প্রথম দিকের অর্জনকে।
লেখক: প্রাবন্ধিক ও গবেষক