তাপমাত্রার প্রভাবে ভয়ংকর হতে পারে ডেঙ্গু । খবরের কাগজ
ঢাকা ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, সোমবার, ২০ মে ২০২৪

তাপমাত্রার প্রভাবে ভয়ংকর হতে পারে ডেঙ্গু

প্রকাশ: ২৩ মার্চ ২০২৪, ০১:১৪ পিএম
তাপমাত্রার প্রভাবে ভয়ংকর হতে পারে ডেঙ্গু

শীতকাল শেষে গরম আসতে না আসতেই আবার আলোচনায় গরম হয়ে উঠছে ডেঙ্গু ইস্যু। গত বছর দেশে ডেঙ্গুতে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত ও মৃত্যুর ঘটনায় তোলপাড় হয়েছিল। এবার পরিস্থিতি আগের চেয়েও খারাপ ও ভয়ংকর হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। 

এই পরিস্থিতির জন্য সব মহল থেকেই প্রথমত দায়ী করা হচ্ছে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত বিরূপ প্রভাবকে। কীটতত্ত্ববিদরা বলছেন, একদিকে তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়া, অন্যদিকে বিরতি দিয়ে বৃষ্টির কারণে যে পরিবেশ তৈরি হয়, তা মশার প্রজননবান্ধব। এমন পরিবেশ যেকোনো মশা ও পোকামাকড় বংশবৃদ্ধির সহায়ক হয়ে ওঠে। এ ক্ষেত্রে মশা নিয়ন্ত্রণের সবচেয়ে কার্যকর পদক্ষেপ হচ্ছে মশার প্রজননক্ষেত্র ধ্বংস বা নষ্ট করে ফেলা। তা না হলে মশা থেকে কোনোমতেই সুরক্ষা মিলবে না বাংলাদেশের আবহাওয়ার কারণে। এবার উপকূলীয় অঞ্চলে ডেঙ্গুর বিস্তার বেশি হবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন একজন বিশেষজ্ঞ।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, ডেঙ্গু হলো একটি ভাইরাল সংক্রমণ, যা সংক্রমিত হয় মশার কামড়ের মাধ্যমে। এটি বিশ্বব্যাপী গ্রীষ্মমণ্ডলীয় এবং উপগ্রীষ্মমণ্ডলীয় জলবায়ুতে বেশি হয়ে থাকে। বেশির ভাগ শহুরে এবং আধা শহুরে এলাকায় এই মশার প্রজনন বেশি। ডেঙ্গু ভাইরাসের বাহক মশা হচ্ছে এডিস ইজিপ্টি মশা এবং কিছুটা হলেও এডিস অ্যালবোপিকটাস। এ ছাড়া অন্য মশাগুলোরও প্রজনন ও বংশবিস্তারে তাপমাত্রার বড় প্রভাব রয়েছে।

কীটতত্ত্ববিদ ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. মাহবুবার রহমান খবরের কাগজকে বলেন, ‘জলবায়ুর বিরূপ প্রভাবের কারণে আমাদের দেশে মশার বিস্তার ভয়ংকর পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। তাপমাত্রা যত বাড়তে থাকবে, এই মশার বিস্তারও বাড়বে। এবার তো মনে হয় গতবারের চেয়েও বেশি বিস্তার ঘটতে পারে ডেঙ্গুর।’

ওই বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘মশার সাইকেলটা হচ্ছে প্রথমে ডিম, তারপর লার্ভা, তারপর পিউপা, তারপর হচ্ছে অ্যাডাল্ট মশা। মশার প্রজনন ক্ষেত্রকে যদি আমরা বিচ্ছিন্ন না করতে পারি, তাহলে মশা নিধন সম্ভব নয়। প্রজনন ক্ষেত্রগুলোকে মশার জন্য প্রতিকূল করতে হবে। মশার বাসস্থানগুলো ধ্বংস করতে হবে। এটা না করলে যত ইচ্ছা ওষুধ ছিটালেও কাজ হবে না। টানা বৃষ্টি হলে জলাবদ্ধতা কেটে যায়। তখন পানিটা থাকে পরিষ্কার। সেই পরিষ্কার পানিতে মশার লার্ভা জন্ম নিতে পারে না। কিন্তু এক দিন বৃষ্টি হলো, তার পরের দিন হলো না, এ সময় জায়গায় জায়গায় পানি জমে যায়। এই পানি মশা প্রজননের জন্য উপযুক্ত।’

আরেক কীটতত্ত্ববিদ ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. কবিরুল বাশার খবরের কাগজকে বলেন, ‘আমরা উপকূলীয় অঞ্চলের চট্টগ্রাম, বরগুনা, চাঁদপুর, পিরোজপুরসহ আরও কয়েকটি এলাকায় প্রাক-জরিপ করেছি। প্রাথমিকভাবে দেখা যাচ্ছে, এবার এসব অঞ্চলে ডেঙ্গুর বিস্তার আগের তুলনায় অনেক বেশি হবে। ইতোমধ্যেই এর লক্ষণ দেখা যাচ্ছে রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধির মধ্য দিয়ে। এ ক্ষেত্রে অবশ্যই তাপমাত্রার প্রভাব রয়েছে।’

ওই বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘প্রধানত এডিস মশার প্রজননের জন্য ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের (২ কম-বেশি) কাছাকাছি তাপমাত্রা সবচেয়ে উপযুক্ত। তবে ২৫ থেকে ৩৫ ডিগ্রির মধ্যে তাপমাত্রা এডিসের প্রজননবান্ধব। আমাদের দেশে এই তাপমাত্রাই থাকে মৌসুমজুড়ে। এবারও কেবল রাজধানী ঢাকাতেই নয়, বাইরেও বিস্তার নিয়ে বড় আশঙ্কা রয়েছে।’ 

সামনে ডেঙ্গুর বিস্তার রোধে এরই মধ্যে নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের বড় এক বৈঠক করেছে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়। অংশ নেন ঢাকার দুই মেয়রসহ স্বাস্থ্য এবং স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। বৈঠকে ডেঙ্গুর উৎস এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে যেমন কথা হয়েছে, তেমনি ডেঙ্গুর চিকিৎসা নিয়েও কথা হয়েছে। এর পরদিন উত্তরায় স্থানীয় সরকারমন্ত্রী ও উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র মশা নিয়ন্ত্রণসংক্রান্ত এক অনুষ্ঠানে অংশ নেন। যেখানে তারা দুজন অনুষ্ঠান মঞ্চে বসেই বারবার মশার কামড়ের শিকার হন। এ নিয়ে বিভিন্ন মহলে হাস্যরসের সৃষ্টি হয়।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বাংলাদেশ চ্যাপ্টারের তথ্য অনুসারে, ষাটের দশকে বর্তমান বাংলাদেশে (তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান) প্রথম ডেঙ্গু ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা রেকর্ড করা হয়েছিল, যা প্রথমে ‘ঢাকা জ্বর’ নামে পরিচিত ছিল। তবে ২০১০ সাল থেকে ডেঙ্গুর প্রকোপ প্রায় ধারাবাহিক হয়ে উঠেছে প্রতিবছর। বিশেষ করে মে থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বর্ষাকাল এবং উচ্চ তাপমাত্রার কারণে ডেঙ্গুর বাহক হিসেবে এডিস মশার বিস্তার ঘটে। অত্যধিক বৃষ্টিপাত, জলাবদ্ধতা, বন্যা, তাপমাত্রা বৃদ্ধি এবং দেশের ঋতুচক্রে অস্বাভাবিক পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশের জলবায়ু পরিস্থিতি ডেঙ্গু এবং ম্যালেরিয়া এবং চিকুনগুনিয়া ভাইরাসসহ অন্যান্য ভেক্টরবাহিত রোগের সংক্রমণের জন্য আরও অনুকূল হয়ে ওঠার কথা বলছে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থাও।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক পরিচালক (রোগ নিয়ন্ত্রণ) অধ্যাপক ডা. বে-নজীর আহম্মেদ খবরের কাগজকে বলেন, ডেঙ্গু ভাইরাসের চারটি সেরোটাইপ রয়েছে। এগুলো হচ্ছে ডেনভি১, ডেনভি২, ডেনভি৩ ও ডেনভি৪। প্রথম সেরোটাইপের সংক্রমণ হোমোলোগাস সেরোটাইপকে দীর্ঘমেয়াদি করে, কিন্তু অন্য সেরোটাইপগুলোতে তা নাও হতে পারে। ভিন্ন সেরোটাইপের অনুক্রমিক সংক্রমণগুলো মানুষকে মারাত্মক ডেঙ্গুর ঝুঁকিতে ফেলে। ডেনভি১ ডেঙ্গুর সংক্রমণ শুধু হালকা ফ্লুর মতো অসুস্থতা তৈরি করে এবং ৮০ শতাংশের বেশি ক্ষেত্রে হয়ে থাকে উপসর্গবিহীন।

তিনি বলেন, ডেঙ্গুর কোনো সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই। সময়মতো কেস শনাক্ত করা, গুরুতর ডেঙ্গু সংক্রমণের কোনো সতর্কতা লক্ষণ শনাক্ত করা এবং উপযুক্ত কেস ম্যানেজমেন্ট হলে কেসের মৃত্যুর হার ১ শতাংশের নিচে রাখা যায়। কিন্তু পুরো ব্যবস্থাপনা যদি সমন্বিত না হয়, তবে বিপদ বাড়তে থাকে।

গত ১৯ মার্চ মন্ত্রণালয়ে ডেঙ্গুবিষয়ক সমন্বয় সভায় স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন জানান, বাংলাদেশে বিগত ২৩ বছরে যত ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন, গত ২০২৩ সালে এক বছরেই তার থেকে বেশি রোগী আক্রান্ত হয়েছেন। অর্থাৎ গত ২৩ বছরে দেশে মোট ডেঙ্গু রোগী ছিলেন প্রায় আড়াই লাখ।

কিন্তু গত ২০২৩ সালে মাত্র এক বছরেই আক্রান্ত হন প্রায় ৩ লাখ। এই সংখ্যা শুধু হাসপাতালে ভর্তিকৃতদের। এর বাইরে তো আরও রোগী ছিলেনই। মন্ত্রী আরও বলেন, ‘এতেই বোঝা যায়, ডেঙ্গু রোগী নিয়ে আমাদের এবার আগে থেকেই সতর্ক না হয়ে কোনো উপায় নেই। এ ক্ষেত্রে সব সেক্টরকে এক হয়ে কাজ করতে হবে।’

স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. রোকেয়া সুলতানা ঢাকা সিটি করপোরেশনের উদ্দেশে বলেন, প্রতিটি বাড়ি বাড়ি গিয়ে লার্ভার তথ্য জানতে হবে। নিয়ম না মানলে জরিমানার ব্যবস্থা করতে হবে। দেশের মানুষের স্বাস্থ্যসেবায় যারা বাধা হবে, তাদের জরিমানাসহ আরও কঠোর নিয়ম প্রয়োগ করতে হবে। 

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে গতকাল শুক্রবার (২২ মার্চ) পাঠানো নিয়মিত প্রেস বিজ্ঞপ্তির তথ্য অনুসারে চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে গতকাল পর্যন্ত দেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন মোট ১ হাজার ৬১৮ জন। এর মধ্যে এ পর্যন্ত মারা গেছেন ২১ জন। 

মতামত
>জলবায়ুর বিরূপ প্রভাবে মশার প্রজনন বাড়ছে
>সোচ্চার হতে হবে উন্নয়নশীল দেশগুলোকে
>কার্বন জিরোতে আনার চ্যালেঞ্জ নিতে হবে

ব্যাটারিচালিত রিকশা বন্ধে হাইকোর্টের নির্দেশনা বাস্তবায়ন হয়নি ১০ বছরেও

প্রকাশ: ২০ মে ২০২৪, ১২:৩৫ পিএম
ব্যাটারিচালিত রিকশা বন্ধে হাইকোর্টের নির্দেশনা বাস্তবায়ন হয়নি ১০ বছরেও
হাইকোর্ট

ব্যাটারিচালিত রিকশা বন্ধ করার জন্য ২০১৪ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত সাত বছরে মোট তিন দফা নির্দেশনা দিয়েছেন হাইকোর্ট। বিগত ১০ বছরেও এসব নির্দেশনা বাস্তবায়নে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ লক্ষ্য করা যায়নি। মাঝেমধ্যে কিছু পুলিশি তৎপরতা দেখা গেলেও তদারকির অভাবে ক্রমান্বয়ে সড়ক-মহাসড়ক চলে গেছে তাদের দখলে। 

ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরে এ ধরনের সব রিকশা বন্ধ করতে ২০১৪ সালে প্রথমবার নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। ২০১৭ সালে এসব পরিবহন বন্ধে আরেক দফা নির্দেশনা দেওয়া হয় হাইকোর্ট থেকে। এরপর ২০২১ সালের ১৫ ডিসেম্বর ব্যাটারিচালিত রিকশাসহ থ্রি-হুইলার ও ইজিবাইক বন্ধ করতে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। আদেশে অটোরিকশার আমদানিও নিষিদ্ধ করা হয়। এ আদেশের সংশোধন চেয়ে বাংলাদেশ ইলেকট্রিক থ্রি-হুইলার ম্যানুফ্যাকচারিং অ্যান্ড মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশন আপিল বিভাগে আবেদন করে। আবেদনের শুনানি শেষে মহাসড়কে সব ধরনের থ্রি-হুইলার ও ইজিবাইক চলাচল নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন তৎকালীন প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বে আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ। 

আদেশে ব্যাটারিচালিত রিকশা সর্বত্র বন্ধের আদেশ বহাল রাখেন সর্বোচ্চ আদালত। আদেশের ফলে ইজিবাইক ও থ্রি-হুইলার গ্রামাঞ্চলের সাধারণ রাস্তায় চলাচলের সুযোগ পায়। সর্বোচ্চ আদালতের আদেশ অনুযায়ী ২০১৫ সাল থেকে বিভিন্ন সময়ে সারা দেশে সব মহাসড়কে তিন চাকার ব্যাটারিচালিত রিকশা, থ্রি-হুইলার, ইজিবাইক, নছিমন, করিমন, ভটভটি চলাচল নিষিদ্ধ ঘোষণা করে কয়েক দফা বিজ্ঞপ্তি জারি করে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ। 

বিজ্ঞপ্তি জারি করা হলেও প্রয়োজনীয় তদারকির অভাবে সড়কে আজও কোনো শৃঙ্খলা ফেরেনি বলে অভিমত ব্যক্ত করেন আইনজীবীরা। এ ব্যাপারে রিটের শুনানিতে অংশগ্রহণকারী ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত দাশগুপ্ত খবরের কাগজকে বলেন, ‘সড়ক দুর্ঘটনা কমানো, সড়কে শৃঙ্খলা ফেরানো, বিদ্যুতের অপচয় রোধসহ বিভিন্ন কারণে ওই রিট দায়ের করা হয়েছিল। আদালতের নির্দেশনা প্রতিপালনের দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের। শুনেছি নির্দেশনার আলোকে কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল। তবে প্রত্যেকটি পদক্ষেপ বাস্তবায়নে তদারকির প্রয়োজন, যা এখন পর্যন্ত দৃশ্যমান নয়।’

রিটকারীর আইনজীবী আতিক তৌহিদুল ইসলাম খবরের কাগজকে বলেন, ‘হাইকোর্ট ও আপিল বিভাগের রায় অনুযায়ী ব্যাটারিচালিত রিকশা কোনো অবস্থাতেই দেশের কোথাও চলাচল করতে পারবে না। এ ছাড়া থ্রি-হুইলার, ইজিবাইকসহ এ ধরনের কোনো যানবাহন দেশের কোনো মহাসড়কে উঠতে পারবে না। কিন্তু অদ্যাবধি এ রায় বাস্তবায়ন করা হয়নি। কর্তৃপক্ষ রায় বাস্তবায়ন না করায় মূলত সর্বোচ্চ আদালতকে অবজ্ঞা করা হয়েছে।’

ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহাসড়কসহ সারা দেশে সড়ক-মহাসড়কে ব্যাটারিচালিত রিকশা, থ্রি-হুইলার, ইজিবাইকসহ এ ধরনের যানবাহন চলাচল নিষিদ্ধ চেয়ে ২০২১ সালে ১৩ ডিসেম্বর হাইকোর্টে রিট করেছিলেন বাঘ ইকো মোটরস লিমিটেডের সভাপতি কাজী জসিমুল ইসলাম। এতে শিল্পসচিব, সড়ক পরিবহনসচিব, পরিবেশসচিবসহ সাতজনকে বিবাদী করা হয়েছিল। রিটে বলা হয়, ব্যাটারিচালিত রিকশা, ইজিবাইক এবং এ ধরনের যানবাহনে অবৈধভাবে বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়ে ব্যাটারি চার্জ দেওয়া হয়। এ জন্য বিদ্যুৎ খাত থেকে সরকার প্রয়োজনীয় রাজস্ব হারাচ্ছে। এগুলো পরিবেশ ও মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর। রুট পারমিট ছাড়াই রাস্তায় বেপরোয়া চলাচল করে। এতে দুর্ঘটনা বেড়েছে। মানুষের প্রাণহানির ঘটনা বেড়েই চলেছে। তাই এ ধরনের যানবাহন বন্ধ করা জরুরি। 

রিটের শুনানি শেষে ১৫ ডিসেম্বর এক আদেশে ব্যাটারিচালিত রিকশা, থ্রি-হুইলার, ইজিবাইকসহ এ ধরনের যানবাহন চলাচল নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন হাইকোর্টের বিচারপতি মামনুন রহমান ও বিচারপতি খন্দকার দিলীরুজ্জামানের বেঞ্চ। একই সঙ্গে ব্যাটারিচালিত রিকশা, থ্রি-হুইলার, ইজিবাইকসহ এ ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধে কর্তৃপক্ষের নিষ্ক্রিয়তা কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, মর্মে রুল জারি করেন হাইকোর্ট। শুনানিতে রিটের পক্ষে বক্তব্য উপস্থাপন করেন অ্যাডভোকেট আতিক তৌহিদুল ইসলাম। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত দাশগুপ্ত।

এর আগে ২০১৪ এবং ২০১৭ সালে ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরসহ দেশের সব মহাসড়কে ব্যাটারিচালিত রিকশা, থ্রি-হুইলার, ইজিবাইক, নছিমন, করিমন, ভটভটি চলাচল নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন হাইকোর্ট। এসব নির্দেশনার আলোকে প্রথম দিকে পুলিশি তৎপরতায় মহাসড়কে এসব যান চলাচল কমে গিয়েছিল। এ সময় সড়ক দুর্ঘটনার সংখ্যাও কমতে থাকে। তবে অল্প সময়ের মধ্যেই মহাসড়ক আবার তিন চাকার গাড়ির দখলে চলে যায়। এর ফলে সড়ক-মহাসড়কে দুর্ঘটনা ও মৃত্যুর হার আবার উদ্বেগজনক হারে বেড়েছে।

ব্যাটারিচালিত রিকশা এখন গলার কাঁটা

ব্যাটারিচালিত রিকশা এখন গলার কাঁটা
ব্যাটারিচালিত রিকশা

ব্যাটারিচালিত রিকশা প্রথম ঢাকা শহরে চালু হয় অবিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশনের (ডিসিসি) আমলে, ২০০৯ সালের শেষের দিকে। তৎকালীন মেয়র সাদেক হোসেন খোকা এগুলোকে বৈধতা দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু বাদ সাধে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)। সেই সময় ডিসিসি ও বিআরটিএর মধ্যে বিরোধ নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে নিয়মিত সংবাদ প্রকাশিত হয়। তখন পিছু হটে ডিসিসি। 

তারপর থেকে অবৈধভাবেই বিকশিত হতে থাকে এই রিকশা। বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ যেটাকে ‘বাংলার টেসলা’ বলছেন সেটাকেই এখন অবৈধ তকমা দিয়ে নিষিদ্ধ করতে চাইছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শুরু থেকেই ক্ষমতাসীনরা না চাইলে তো এটি বিকশিত হতে পারত না। শুরুতেই যদি সরকার কঠোর হতো তাহলে আজ এই পরিস্থিতি দেখতে হতো না। এখন লাখ লাখ পরিবারের জীবিকা এর সঙ্গে জড়িয়ে গেছে। সে ক্ষেত্রে এই বিপুলসংখ্যক মানুষকে বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে। তারপর কঠোর সিদ্ধান্তে আসতে হবে। 

তখন অভিবক্ত ডিসিসি বৈধতা দিতে চাইলেও এখন বিভক্ত ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি ও ডিএসসিসি) চায় না এই রিকশা চলাচল করুক। কারণ হিসেবে সংস্থা দুটি নিরাপত্তা ঝুঁকির কথা বলছে। 

ডিএনসিসির মেয়র আতিকুল ইসলাম বলছেন, সিদ্ধান্তে আসা দরকার যে ঢাকায় ব্যাটারিচালিত রিকশা, অটোরিকশা, ইজিবাইক চলবে না। এগুলো অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ।

অন্যদিকে ডিএসসিসির মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস বলছেন, ভয়াবহ ব্যাপার, যখন ব্যাটারিচালিত রিকশার চালকরা দুই পা ওপরে উঠিয়ে বেপরোয়া গতিতে চালান। অনেক প্রতিবন্ধী চালক আছেন, যারা চোখে কিছুটা কম দেখেন, তারাও এই রিকশা নিয়ে নেমে পড়েন।

এ প্রসঙ্গে পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের (পবা) সভাপতি আবু নাসের খান খবরের কাগজকে বলেন, ‘প্রথম থেকেই এটা নিয়ন্ত্রণ করতে হতো, তা যখন করা যায়নি তাহলে বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে তারপর কঠোর হওয়া দরকার।’

‘বাংলার টেসলা’ নিয়ে শুরুর মতবিরোধ চলছে এখনো
অবিভক্ত ডিসিসি ও বিআরটিএর সেই পুরোনো মতবিরোধ এখনো বিদ্যমান। সরকারের একটি অংশ মনে করছে এটি বিপজ্জনক। তাই চলতে দেওয়া যাবে না। আরেকটি অংশ বলছে, এটি কিছুটা ঝুঁকিপূর্ণ হলেও রয়েছে ব্যাপক উপযোগিতা। 

টেসলা যুক্তরাষ্ট্রের একটি বৈদ্যুতিক গাড়ি নির্মাণ কোম্পানি। ব্যাটারিচালিত রিকশাকে তাই বাংলার টেসলা বলে অভিহিত করেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। তিনি বলছেন, ব্যাটারিচালিত রিকশা হলো ‘বাংলার টেসলা’। এসব যান যতটুকু বিদ্যুৎ ব্যবহার করছে, তার চেয়ে রিটার্ন অনেক বেশি। অথচ যেসব কথা বলে এখন এসব রিকশা নিষিদ্ধ করার কথা বলা হচ্ছে, তার মধ্যে অন্যতম হলো এসব রিকশার ব্যাটারি চার্জ দিতে বিপুল বিদ্যুৎ খরচ হয়। 

রিকশা, ব্যাটারি রিকশা-ভ্যান ও ইজিবাইক সংগ্রাম পরিষদের ঢাকা মহানগর শাখার আহ্বায়ক খালেকুজ্জামান রিপন খবরের কাগজকে বলেন, সম্প্রতি বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী ব্যাটারিচালিত রিকশাকে বাংলার টেসলা বলেছেন। তিনি দ্রুত এসব রিকশার গতিসীমা ঠিক করে ও নীতিমালা প্রণয়ন করে লাইসেন্স দিতে বিআরটিএকে অনুরোধ জানিয়েছিলেন। ব্যাটারিচালিত রিকশার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তারা বিদ্যুৎ অপচয় করছে। একটি বাসায় ৬ ঘণ্টা এসি চালাতে ১৬ ইউনিট বিদ্যুৎ লাগে; আর একটি ব্যাটারিচালিত রিকশার ব্যাটারি চার্জ দিতে সাড়ে ৩ থেকে ৪ ইউনিট বিদ্যুৎ লাগে। এ ছাড়া আবাসিকের চেয়ে বহুলাংশে বিল দিচ্ছে ব্যাটারিচালিত রিকশামালিকরা। আমাদের দাবি হলো, মোটরযান গতিসীমা নীতিমালা সংশোধন করে দ্রুত লাইসেন্স দেওয়া হোক। ব্যাটারিচালিত রিকশা কিন্তু মূল সড়কে চলে না, চলে অলিগলিতে। হুট করে এসব রিকশা বন্ধ হয়ে গেলে নগরবাসী যে বিপাকে পড়বেন, তার দায় নিতে হবে বিআরটিএ ও সড়ক মন্ত্রণালয়কে। 

সম্ভাব্য রাজস্ব যাচ্ছে চাঁদাবাজদের পেটে
নিবন্ধন দেওয়া, না দেওয়া নিয়ে সরকারের ভেতরে মতবিরোধের মধ্যেই বেড়ে ওঠা এই খাত থেকে বিপুল রাজস্ব পেতে পারত সরকার। নিবন্ধন দিলে বছরে হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আহরণ সম্ভব বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। অথচ পুরোটা চলে যাচ্ছে চাঁদাবাজদের পকেটে। 

বাংলাদেশ ইলেকট্রিক ব্যাটারি অ্যান্ড মোটরচালিত অটোরিকশা অটোবাইক সার্ভিস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আবুল কালাম বলেন, আমদানিকারকরা বিভিন্নভাবে ইজিবাইক আমদানি করে রাস্তায় নামিয়েছেন। এর মাধ্যমে লাখ লাখ কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়েছে। সেখানে অনেক শিক্ষিত বেকার রয়েছে। ২০১৬ সালে সারা দেশে ইজিবাইক ও অটোরিকশার সংখ্যা ছিল দুই থেকে আড়াই লাখ। বর্তমানে সেটি ৫০ লাখে উন্নীত হয়েছে। বিশাল সেক্টরের আয়ের সিংহভাগ চাঁদাবাজরা বিভিন্নভাবে আদায় করে নিয়ে যাচ্ছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, অটোরিকশার চাঁদার ভাগ পায় ট্রাফিক পুলিশ, স্থানীয় সংসদ সদস্য ও কাউন্সিলররা। এ ছাড়া স্থানীয় অসাধু রাজনৈতিক নেতা ও পাড়ামহল্লার মাস্তানরাও চাঁদাবাজি করছে। বিনিময়ে এসব রিকশা চলতে দিচ্ছে তাদের এলাকায়। চাঁদা না দিলে অটোরিকশা চালকদের ধরে এনে নির্যাতন করে পুলিশ। এক হিসাবে রাজধানী ঢাকাতে টোকেনের নামে ৬০ কোটি টাকা চাঁদা দিতে হয় অটোরিকশা চালকদের। 

সূত্র জানায়, রিকশাপ্রতি রেকার বিল গুনতে হয় ১ হাজার থেকে ২ হাজার টাকা। আবার কোনো রিকশা ডাম্পিং স্টেশনে নেওয়া হলে দিতে হয় ২ হাজার থেকে ৫ হাজার পর্যন্ত। মাসিক চাঁদার টাকা পরিশোধ করে রাস্তায় নামাতে হয় রিকশা। রাজধানী ঢাকায় অন্তত ৩ থেকে ৪ লাখের মতো ব্যাটারিচালিত রিকশা রয়েছে। মাসে গড়ে রিকশাপ্রতি প্রায় ২ হাজার টাকা টোকেন নিতে হয়। এই হিসাবে মাসে অবৈধভাবে আদায় করা হয় ৬০ কোটি টাকা।

সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার ভিত্তিতে ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচলের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) ঢাকা মহানগর দক্ষিণ কমিটি। কমিটির সভাপতি জামসেদ আনোয়ার তপন ও সাধারণ সম্পাদক জলি তালুকদার স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে এই দাবি জানিয়ে বলা হয়, অবিলম্বে সব ধরনের চাঁদাবাজি বন্ধ করে ব্যাটারিচালিত রিকশাকে লাইসেন্স দিতে হবে বিআরটিএকে। বিবৃতিতে বলা হয়, ব্যাটারিচালিত রিকশাকে নিরাপদ ও উন্নত করার একাধিক মডেলের প্রস্তাব দেশের অন্তত দুটি প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় করেছে। এই লোকায়ত প্রযুক্তিটি বিপুলসংখ্যক মানুষের কষ্ট লাঘব ও কর্মের সংস্থান করেছে। একটি টেকসই ব্যবস্থাপনার পরিবর্তে কর্তৃত্ববাদী ও আমলাতান্ত্রিক নির্দেশে বারবার এসব শ্রমজীবী মানুষের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালিত হচ্ছে।

তারা অভিযোগ করেন, ক্ষমতাসীন দলের মদদে ও প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ের যৌথ অংশগ্রহণে ঢাকা শহরে ব্যাটারিচালিত রিকশা থেকে যারা এত দিন অবৈধ রুট পারমিট প্রদানের মাধ্যমে চাঁদাবাজি চক্র পরিচালনা করেছে তারাই গত দুই দিন ধরে গ্যারেজে গ্যারেজে হামলা চালিয়ে ব্যাটারিসহ মূল্যবান যন্ত্রাংশ আটকের নামে লুটতরাজ পরিচালনা করছে। কয়েকটি স্থানে সড়কে রিকশাচালকদের পিটিয়ে গুরুতর আহত করার ঘটনা ঘটেছে।

অনড় অবস্থানে সরকার
গত বুধবার রাজধানীর বনানীতে বিআরটিএ ভবনে সড়ক পরিবহন উপদেষ্টা পরিষদের প্রথম সভায় রাজধানীতে ব্যাটারি বা যন্ত্রচালিত কোনো রিকশা চলতে না দেওয়ার নির্দেশ দেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। ওই সভায় মন্ত্রী বলেন, ‘ঢাকায় কোনো ব্যাটারিচালিত রিকশা চালানো যাবে না। এটা আগে কার্যকর করুন। এ ছাড়া ২২ মহাসড়কে রিকশা ও ইজিবাইক নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সেটা বাস্তবায়ন করুন। আর ঢাকা সিটিতে ব্যাটারিচালিত রিকশা যাতে না চলে, সেই বিষয়ে শুধু নিষেধাজ্ঞা আরোপ নয়, এগুলো চলতে যাতে না পারে, সেটার ব্যবস্থা করুন।’

এর পরপরই এসব রিকশা নিষিদ্ধে তোড়জোড় শুরু করে প্রশাসন। বিআরটিএর এনফোর্সমেন্ট বিভাগসংশ্লিষ্টরা জানান, শুধু ঢাকা নয়, দেশের সব মহানগরীর সড়ক থেকে ও ২২টি মহাসড়কে ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল বন্ধে গতকাল থেকে তৎপরতা শুরু হয়েছে। মহানগর, জেলা ও হাইওয়ে পুলিশের পাশাপাশি সিটি করপোরেশন ও জেলা প্রশাসনের ম্যাজিস্ট্রেটরা ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করছেন। 

বিকল্প কর্মসংস্থান করে নিষিদ্ধের দাবি
যদি এসব রিকশা নিষিদ্ধই করতে হয় তাহলে বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে তারপর নিষিদ্ধ করা উচিত বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। না হলে লাখ লাখ মানুষের পথে বসার উপক্রম হবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। 

রিকশা, ব্যাটারি রিকশা-ভ্যান ও ইজিবাইক সংগ্রাম পরিষদের ঢাকা মহানগর শাখার অর্থ সম্পাদক রোকশানা আফরোজ আশা খবরের কাগজকে বলেন, ‘হাইকোর্ট যে উদ্যোগ নিয়েছে সেটা নেওয়ার আগে ভাবা উচিত ছিল, এসব মানুষ যাবে কোথায়? বিকল্প ব্যবস্থা না করে গরিব মানুষের ওপর অত্যাচার করা হচ্ছে। বিকল্প ব্যবস্থা না হলে এই রিকশাচালকদের কিছুই করা যাবে না।’

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অ্যাক্সিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক ও গণপরিবহন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. আরমানা সাবিহা হক খবরের কাগজকে বলেন, ‘ব্যাটারিচালিত রিকশাগুলো যখন সড়কে নামানো হয়েছিল, তখনই কিন্তু ওদের চলাচলের এলাকা আর গতিসীমা নির্ধারিত করে দেওয়ার দরকার ছিল। শুধু নিরাপত্তার ইস্যুকে প্রাধান্য দিয়ে ব্যাটারিচালিত রিকশা তুলে দিলে সড়কের সমস্যার সমাধান হবে না। এখানে অনেক শ্রমিকের রুটিরুজির ব্যাপার আছে। আর্থিক নিরাপত্তার দিক চিন্তা করে তাদের আগে পুনর্বাসন করা দরকার। ব্যাটারিচালিত রিকশা সড়ক থেকে তুলে দিলে সেখানে বিকল্প পরিবহন কী হবে, তা নিয়ে চিন্তা করতে হবে। 

দুবাইতে অর্থ পাচারকারীদের তালিকা করেছে এনবিআর

প্রকাশ: ২০ মে ২০২৪, ১২:১০ পিএম
দুবাইতে অর্থ পাচারকারীদের তালিকা করেছে এনবিআর
খবরের কাগজ গ্রাফিকস

আমদানি-রপ্তানির আড়ালে মিথ্যা তথ্য দিয়ে ব্যাংকিং চ্যানেলে এবং হুন্ডিতে সংযুক্ত আরব আমিরাতের (ইউএই) রাজধানী আবুধাবি, বাণিজ্যিক শহর দুবাই, শারজাহ এবং আজমানে অর্থ পাচার করেছেন বাংলাদেশের শতাধিক ব্যবসায়ী। প্রাথমিক তদন্ত শেষে এসব ব্যবসায়ীর নামের তালিকা করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) টাস্কফোর্স কমিটি। এ তালিকায় আরও আছেন শিল্পী, খেলোয়াড়, চিকিৎসক, আইনজীবী, সাংবাদিক, সাবেক ও বর্তমান সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তাসহ অনেকে। এনবিআর সূত্রে এসব জানা যায়।

চূড়ান্ত প্রতিবেদন তৈরি করে আইনের আওতায় আনতে আরও বিস্তারিত তদন্তে নামছে এনবিআরের টাস্কফোর্স কমিটি। মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে, বিশেষভাবে এসব এলাকার বিভিন্ন বিলাসবহুল শহরে বাংলাদেশ থেকে কে বা কারা অর্থ পাচার করে অবৈধভাবে সম্পদ করেছে বা ব্যবসা করছে, তাদের চিহ্নিত করে আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার সুপারিশ করেছে অর্থ পাচার এবং পাচারকৃত অর্থ থেকে রাজস্ব আদায়ে গঠিত উচ্চপর্যায়ের টাস্কফোর্স কমিটি। এ কমিটির সুপারিশে এনবিআর থেকে এই টাস্কফোর্স কমিটি গঠন করে তদন্তে নেমেছে। এ কমিটিতে এনবিআরের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা শাখা সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স সেল (সিআইসি), ভ্যাট নিরীক্ষা, গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর, শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর, ট্রান্সফার প্রাইজিং সেলের একাধিক কর্মকর্তা আছেন। তদন্তের প্রয়োজনে এনবিআরের এ কমিটির সদস্যরা মধ্যপ্রাচ্যের ওই সব শহরেও যাবেন। তদন্তের কাজে যদি প্রয়োজন হয় তবে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, স্বরাষ্ট্র, অর্থ, পররাষ্ট্র, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এবং ওই দেশে বাংলাদেশ দূতাবাসের সহায়তা নেওয়া হবে। ইউএইর রাজস্ব প্রশাসন এবং ওই দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহায়তাও নেওয়া হবে। বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সহায়তা নেওয়া হবে।

দেশি-বিদেশি সংবাদমাধ্যম, তদন্ত প্রতিবেদন ও রিপোর্ট এবং এনবিআর টাস্কফোর্সের কর্মকর্তাদের সংগৃহীত তথ্যের সমন্বয়ে এ বিষয়ে এনবিআর প্রতিবেদন তৈরি করেছে। এ প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, অর্থ পাচার করে বাংলাদেশিরা নিজস্ব ভিলা, ফ্ল্যাট, ছোট হোটেল, তারকা হোটেল, জমি, বাণিজ্যিক স্থাপনা, দোকানসহ বিভিন্ন ব্যবসায়ে বিনিয়োগ করেছেন। অনেকে ইউএইর কৃত্রিম দ্বীপপুঞ্জ ‘পাম জুমেইরা’, জুমেইরা, সিলিকন ওয়েসিস, এমিরেটস হিল, দুবাই মেরিনা ও বিজনেস বের মতো অভিজাত এলাকাগুলোতেও নিজস্ব বাড়ি ও তারকা হোটেল গড়ে তুলেছেন। এসব ক্ষেত্রে বেশির ভাগ বিনিয়োগকারী নিজেদের আড়ালে রেখেছেন।

এনবিআরের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, এসব ব্যক্তি বা তাদের পরিবারের সদস্যরা বছরে একাধিকবার বাংলাদেশ থেকে সরাসরি আবুধাবি, দুবাই, শারজাহ বা আজমানে গিয়েছেন। অনেকে আবার অন্য দেশ হয়েও সেখানে গিয়েছেন। ওই সব শহরে বাংলাদেশ থেকে অর্থ পাঠিয়ে বিনিয়োগের জন্য এখনো পর্যন্ত বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে কোনো অনুমতি দেওয়া হয়নি। তবে কোন পথে অর্থ পাঠিয়ে এসব করা হয়েছে, তদন্তে তা খতিয়ে দেখা হবে। এসব ব্যক্তির বেশির ভাগ বাংলাদেশের পরিবর্তে ইউরোপের বিভিন্ন দেশ, আলবেনিয়া, সাইপ্রাস, মিসর, ব্রাজিল, সিয়েরা লিওনসহ বিভিন্ন দেশের নাগরিকত্ব বা পাসপোর্ট ব্যবহার করেছেন। 

প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ইউএইর আবুধাবি, বাণিজ্যিক শহর দুবাই ও শারজাহতে বাংলাদেশিদের বসবাস বেশি। এনবিআরের এ তালিকায় অনেক আবাসন ব্যবসায়ী আছেন। বাংলাদেশের অনেক আবাসন ব্যবসায়ী এসব শহরে আবাসন ব্যবসা করছেন। বাংলাদেশে বসেই ওই সব শহরে ফ্ল্যাট, বাড়ি বা জমি কেনা যায়। উচ্চমূল্যের এসব সম্পদ বাংলাদেশের অনেকেই কিনেছেন। এ ক্ষেত্রে ওই আবাসন ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান ক্রেতার সব তথ্য গোপন রেখেছে। বাংলাদেশ থেকে হন্ডিতে পাঠিয়ে মূল্য পরিশোধ করা হয়েছে। দুবাইয়ে তিন-চার কক্ষের ফ্ল্যাট কিনতে খরচ হয় ৩ থেকে ৪ লাখ দিরহাম। টাকার বিনিময় মূল্য হিসেবে ঢাকার অভিজাত এলাকাগুলোর চেয়ে দুবাইয়ে ফ্ল্যাটের মূল্য কিছুটা কম হয়। চাকরির জন্য দুবাইয়ে আসা অনেক বাংলাদেশি ফ্ল্যাট কিনেছেন। অন্য দেশে বসবাসকারী অনেক বাংলাদেশিও দুবাইয়ে ফ্ল্যাট কিনেছেন। এ ছাড়া ফ্ল্যাট কিনে কিছু লাভ রেখে আবারও বিক্রি করছেন, এমন অনেক ব্যবসায়ী, রাজনীতিবিদ এবং সাবেক ও বর্তমান সরকারি কর্মকর্তারাও আছেন। তবে নথিপত্রে তারা অন্য নাম ব্যবহার করেছেন। কেউ কেউ আরব আমিরাতে অবস্থান করলেও বেশির ভাগই দেশে থাকেন। তারা মাঝেমধ্যে সেখানে গিয়ে থাকছেন। 

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অনেক ব্যবসায়ী আমদানি-রপ্তানির আড়ালেও অর্থ পাচার করেছেন। অনেকে ওই সব শহরে সন্তান পড়িয়ে থাকেন। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বেতন এবং খাওয়া ও থাকার খরচ প্রকৃত হিসাবের চেয়ে বেশি পাঠিয়েও অর্থ পাচার করছেন। বাংলাদেশিদের নিজেদের হোটেলগুলোতে হুন্ডিতে দেশ থেকে টাকা আনার ব্যবস্থা করা আছে। এখানে এসব বাংলাদেশির দোকান আছে। দোকান কেনার অর্থ দেশ থেকে নেওয়া হয়েছে। বেশির ভাগ দোকানে সোনা বেচাকেনা হয়। এ ছাড়া পোশাক, প্রসাধনী, জুয়েলারি, প্রসাধনী, জুতা, স্যান্ডেলসহ অন্যান্য জিনিসপত্রেরও দোকান আছে। এসব দোকানের কর্মচারীরা অধিকাংশই বাংলাদেশের। এসব কর্মচারী বাংলাদেশ থেকে দোকানের মালিকদের বড় অঙ্কের অর্থ দিয়ে কাজ করতে গিয়েছেন। এদের বেতনের অর্থও দেশে হুন্ডিতে পাঠানো হয়। বাংলাদেশিদের বিলাসবহুল হোটেলে বিভিন্ন দেশ থেকে আসা ধনী ব্যক্তিরা থাকেন। এখান থেকে আয় ভালো, যা এসব শহরেই ব্যাংকে গচ্ছিত রাখা হয়েছে। 

এনবিআর থেকে টাস্কফোর্স কমিটি চূড়ান্ত তদন্তকালে এসব পাচারকারীর পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করবে। পাচারকৃত অর্থের পরিমাণ নিশ্চিত হলে তা দেশে ফেরত আনতে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে। একই সঙ্গে পাচারকৃত অর্থ থেকে হিসাব কষে রাজস্ব আদায় করা হবে। 

এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মো. আবদুল মজিদ খবরের কাগজকে বলেন, ‘সরকারের একটি প্রতিষ্ঠান হিসেবে এনবিআর কঠোর থেকে তদন্ত করলে পাচারকারীদের চিহ্নিত করা সম্ভব। পাচারকারীদের রিটার্নে বিদেশে পাঠানো অর্থের বিষয়ে কিছু জানিয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখতে হবে। প্রয়োজনে বাংলাদেশ ব্যাংকের গোয়েন্দা শাখারও সহায়তা নিতে হবে।’

বাংলাদেশের অর্থ পাচার নিয়ে কাজ করা সংস্থাগুলোর একটি ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ বা টিআইবি। এর নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান খবরের কাগজকে বলছেন, ‘বাংলাদেশ থেকে যেসব দেশে অর্থ বেশি পাচার হয়েছে তার মধ্যে মধ্যপ্রাচ্যের শহরগুলো আছে। এসব জায়গায় বিনিয়োগ করা হলে অর্থের উৎস নিয়ে খুব একটা ঝামেলায় পড়তে হয় না। তাই বাংলাদেশ থেকে এখানে অর্থ পাচার বাড়ছে। এদের আইনের আওতায় নিয়ে গেলে পাচার কমবে।’

সড়ক যেন ‘ধান মাড়াইয়ের উঠান’

প্রকাশ: ২০ মে ২০২৪, ০৯:৩৭ এএম
সড়ক যেন ‘ধান মাড়াইয়ের উঠান’
ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া-শিবগঞ্জ সড়কের ওপর ধানের খড় শুকানো হচ্ছে। খবরের কাগজ

ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলার বিভিন্ন সড়ক দখল করে চাষিরা বোরো ধান মাড়াই ও খড় শুকানোর কাজ করছেন। এতে যানবাহনের চালক ও পথচারীরা ভোগান্তিতে পড়ছেন। প্রায়ই ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা। ওই সড়কে চলাচলকারীরা বলছেন, রাস্তার ওপর ধান শুকানোর কারণে গাড়ি ধীরে চালাতে হয়।

এতে তাদের ট্রিপের সংখ্যা কমায় আগের তুলনায় আয় কমেছে। পাশাপাশি রয়েছে ছোট-বড় দুর্ঘটনার অভিজ্ঞতা। তারা এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন। অধিকারকর্মীর ভাষ্য অনুযায়ী, বাড়িতে উঠান ছোট থাকার মতো ঠুনকো কারণকে সামনে এনে অনেকে রাস্তার ওপর ধান শুকাচ্ছেন। এগুলো বন্ধ করা প্রয়োজন। 

সরেজমিনে উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, সড়কের পাশেই শ্যালোচালিত ইঞ্জিন দিয়ে ধান মাড়াই করা হচ্ছে। মাড়াই শেষে সড়কের ওপরেই সেগুলো শুকানো হচ্ছে। অনেকে ধান বাড়ি নিয়ে গেলেও খড় শুকানোর জন্য সড়কের ওপরই ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রেখেছেন। শুকানো শেষ হলে সড়কের পাশেই সেগুলো স্তূপ করে রাখা হয়েছে।

ফুলবাড়িয়া-শিবগঞ্জ সড়কে অটোরিকশা চালান আকরাম হোসেন। তিনি খবরের কাগজকে বলেন, ‘সড়কে ধান মাড়াইয়ের আগে প্রতিদিন গড়ে ১৩০০ টাকার ভাড়া উঠত। ৮০০ টাকা অটোরিকশার মালিককে দেওয়ার পরও ৫০০ টাকা থাকত। কিন্তু বর্তমানে সড়ক দখল করে ধান মাড়াইয়ের কারণে গাড়ি ধীর গতিতে চালাতে হয়। এতে ট্রিপের পরিমাণ কমে আসছে। এ জন্য প্রতিদিন ৭ থেকে ৮শ টাকার বেশি ভাড়া ওঠে না। ফলে মালিককে নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা দেওয়ার পর নিজের সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।’

সিএনজিচালিত অটোরকিশার চালক সেলিম মিয়া বলেন, ‘কিছুদিন আগে যাত্রী নিয়ে শিবগঞ্জ বাজারের দিকে যাচ্ছিলাম। পথে ধান-খড়ে চাকা পিছলে সিএনজি উল্টে যায়। এতে তিন যাত্রী আহত হন। সড়কে ধান মাড়াই করার কারণে সবসময় ধীর গতিতে গাড়ি চালাতে হচ্ছে। নির্দিষ্ট সময়েও গন্তব্যে পৌঁছাতে না পারায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি।’

ফুলবাড়িয়া পৌর এলাকার বাসিন্দা খোকন মিয়া বলেন, ‘উপজেলার প্রায় প্রত্যেকটি সড়ক দখল করে ধান মাড়াই ও খড় শুকানো হচ্ছে। দেখে মনে হবে বাড়ির উঠান। বৃষ্টি হলে ওই খড় সড়কে কর্দমাক্ত অবস্থা ধারণ করে। পরে সেগুলো আর সরানো হয় না। ধীরে ধীরে এগুলো পচে সড়ক পিচ্ছিল হয়ে থাকে। এতে যেকোনো সময় ঘটতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা।’

উপজেলার পুটিজানা ইউনিয়নের পানজানা গ্রামের কৃষক চান মিয়া বলেন, আমি ৯ একর জমিতে ধান আবাদ করেছি। অনেক ধানসহ খড় বাড়ির উঠানে শুকানো সম্ভব হয় না। এ জন্য সড়কে এসেছি।

এভাবে সড়কে ধান মাড়াই করলে যানবাহনের যাত্রী, চালকসহ পথচারীদের সমস্যা হচ্ছে জানালে তিনি বলেন, ‘জানি সড়ক দিয়ে চলাচলকারী সবারই কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। খুব দ্রুতই ধান-খড় সড়ক থেকে সরিয়ে বাড়িতে নেওয়া হবে।’

একই গ্রামের গৃহিণী আছমা খাতুন বলেন, আশপাশে ধান-খড় শুকানোর মতো কোনো মাঠ নেই। কয়েক বছর আগে বাড়ির উঠান বড় থাকলেও ভাগাভাগির কারণে উঠান ছোট হয়ে গেছে। তাই জমি থেকে ধান কেটে আনার পর মাড়াই ও শুকানোর যাবতীয় কাজ সড়কেই করা হচ্ছে।

নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনের (নিসচা) ময়মনসিংহের সভাপতি আব্দুল কাদের চৌধুরী মুন্না বলেন, সবারই যে উঠান নেই, বিষয়টি এমন নয়। অনেকের উঠান থাকা সত্ত্বেও ভালোভাবে সহজে রৌদ্রে মাড়াই করতে সড়কে নিয়ে আসেন। সড়কে চলাচলকারীদের ঝুঁকি এড়াতে ধান মাড়াই কিংবা খড় শুকানো একেবারেই উচিত নয়।

এ বিষয়ে ফুলবাড়িয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কাবেরী জালাল বলেন, সড়ক দখল করে এ ধরনের কর্মকাণ্ড বেআইনি। জনস্বার্থে সড়কে ধান মাড়াই বন্ধ করা হবে।

‘মোরা না খাইয়া কষ্টে দিন কাডাব, ভারতীয়রা তো ঠিকই মাছ ধইরা নেবে’

প্রকাশ: ২০ মে ২০২৪, ০৯:২৩ এএম
‘মোরা না খাইয়া কষ্টে দিন কাডাব, ভারতীয়রা তো ঠিকই মাছ ধইরা নেবে’
ছবি : খবরের কাগজ

‘৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞায় মোরা সাগরে মাছ ধরতে না গেলেও ভারতীয়রা তো ঠিকই মাছ ধইরা নেবে। এই সময় মোরা না খাইয়া কষ্টে দিন কাডাইলেও ভারতের ট্রলারগুলা ঠিকই মাছ ধরবে। এই ৬৫ দিনে আমাগো হাজার হাজার জেলে কর্মহীন হইয়া পড়বে। এ চিন্তায় জাইল্লা পল্লিগুলা আন্ধার ইইয়া যাইতাছে।’

রবিবার (২০ মে) বিকেলে কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদর উপজেলার গোরাপদ্মমা এলাকার জেলে মো. দুলাল হাওলাদার।
 
দেশের মৎস্য সম্পদ সুরক্ষা ও মাছের বংশবিস্তারে সাগরে মাছ ধরার ওপর রবিবার মধ্যরাত থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা শুরু হচ্ছে। ইতোমধ্যে সরকারি আইন মেনে উপকূলীয় বরগুনার বেশির ভাগ জেলে ট্রলার ঘাটে ফিরলেও নিষেধাজ্ঞার এই সুযোগে পার্শ্ববর্তী দেশের জেলেরা দেশের জলসীমানায় ঢুকে ইলিশ শিকার করে নিয়ে যায় বলে দাবি মো. দুলাল হাওলাদারসহ স্থানীয় জেলেদের। এ ছাড়া এ সময়ে সরকারের দেওয়া খাদ্যসহায়তাও অপ্রতুল বলে দাবি জেলেদের।

জানা যায়, বরগুনায় ২৭ হাজার ২৫০ জন সমুদ্রগামী জেলে রয়েছে। এসব জেলের জন্য প্রথম ধাপে সহায়তার চাল বিতরণ করতে গত ২৯ এপ্রিল ১ হাজার ৫শ ২৬ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দিয়েছে সরকার। 

জেলার বিভিন্ন স্থানে দেখা গেছে, জেলে পল্লিতে জেলে পরিবারগুলোতে কর্মহীন হয়ে যাওয়ার চিন্তা বিরাজ করছে। অভাব অনটনে কাটবে এই ৬৫ দিন।

বরগুনার ঢলুয়া এলাকার নাসির নামের এক জেলে বলেন, ‘৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞার সময়ে আমরা ৪০ কেজি চাল পাই। এ ছাড়াও যারা জেলে না, তারাও চাল পায়। কিন্তু আমাদের জন্য বরাদ্দ ৮৬ কেজি চাল আমরা পাই না। এই দীর্ঘদিনের নিষেধাজ্ঞায় ৪০ কেজি চালে আমাদের পরিবার চালানো কষ্ট হয়।’ 

পাথরঘাটার জেলে মো. সালাম বলেন, ‘এ সময়ে নদীতে ও সাগরে তেমন মাছও নেই। থাকলে পুঁজি করে কিছু টাকা রাখতে পারতাম। ধারদেনা করে জীবন চলে। আর অন্য কোনো কাজের ব্যবস্থা নেই যে সামনের ৬৫ দিন কাজ করে খাব।’

বরগুনা মৎস্যজীবী ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময়ে জেলেদের অনেকটাই কষ্টে কাটবে। এই ৬৫ দিনের জন্য জেলেদের বিকল্প কোনো কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে দেওয়ার দাবি জানাই সরকারের কাছে। পাশাপাশি ভারত-বাংলাদেশ একই সময়ে সাগরে মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা জারি করা হোক।’

এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মোহা. রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘সমুদ্রগামী জেলেদের জন্য বরাদ্দকৃত এসব চাল আমরা পেয়েছি। দ্রুত সময়ের মধ্যে জেলেদের কাছে বরাদ্দকৃত চাল পৌঁছে দিতে সংশ্লিষ্ট ইউপি সদস্য ও চেয়ারম্যানদের বলা হয়েছে।’

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. মহসীন বলেন, ‘নিবন্ধনের বাইরে থাকা জেলেদের তালিকা করার জন্য সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে তালিকার কাজ চলছে। এ ছাড়া সরকারিভাবে অন্য কোনো সহায়তা বৃদ্ধি করলে তা জেলেদের কাছে পৌঁছে দেব।’