সাগরকন্যা পটুয়াখালীর ৯ সৈকত । খবরের কাগজ
ঢাকা ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, সোমবার, ২০ মে ২০২৪

সাগরকন্যা পটুয়াখালীর ৯ সৈকত

প্রকাশ: ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০১:০৭ পিএম
সাগরকন্যা পটুয়াখালীর ৯ সৈকত
কুয়াকাটা সূর্যাস্তের মুহুর্ত

সাগরের বুকে সকালেই দিনের তেজী সূর্যটা আলো ছড়াতে শুরু করে। আবার সন্ধ্যায় সাগরের পানিতে নিভে যায়। দিনের আলোয় কখনো লাল, কখনো সোনালি কিংবা নীল আকাশ সাগরের নোনা জলকেও ওই রঙে রাঙিয়ে তোলে। সারাক্ষণ পানির কসরত চলে সৈকতজুড়ে। দক্ষিণের মৃদু বাতাসে মন ও শরীর দুলিয়ে যায় ক্ষণে ক্ষণে। জেলের জালে দেখা যায় তাজা মাছের লম্ফঝম্প। দেখা মেলে দেশি-বিদেশি পাখির আপন উৎসব। পূর্ণিমার আলো রাঙিয়ে তোলে রাতের আঁধার। আছে লাল কাঁকড়ার ছোটাছুটি। দেখা মেলে হরিণ-বানরের লুকোচুরি। প্রকৃতি যেন দুই হাত মেলে তার রূপ-সৌন্দর্য উজাড় করে আছে উপকূলজুড়ে। কুয়াকাটা এবং এর আশপাশের চর ও দ্বীপগুলো এমন রূপ-রসের সৌন্দর্য বিলোচ্ছে বছরের পর বছর। প্রকৃতি কতটা উদার, তা পটুয়াখালীর উপকূল না ঘুরলে দেখা যাবে না।

কাউয়ার চর সৈকত

কুয়াকাটা সৈকত থেকে কাউয়ার চর সৈকতের দূরত্ব মাত্র ১৫ কিলোমিটার। কলাপাড়ার ধুলাসার ইউনিয়নের এই সৈকত স্থানীয়ভাবে গঙ্গামতি সৈকত নামেও পরিচিত। এ সৈকতের মূল বৈশিষ্ট্য হলো, চোখ জুড়ানো ঝাউবাগান। বন বিভাগের ঝাউগাছ দিয়ে সাজিয়ে রাখা আছে এই সৈকতটিকে। এ ছাড়া সকালবেলায় সৈকতের বালুকাবেলায় সারি সারি সাজানো থাকে জেলেদের নৌকার বহর, শেষ বিকালে তা সাগরে ভাসে মাছ শিকারের জন্য। এখান থেকেই অবলোকন করা যায় সাগরে সংগ্রামী জেলেদের জীবনযাত্রা।

যেভাবে যাবেন : গঙ্গামতি সৈকতে গিয়ে সূর্যোদয় উপভোগ করতে হলে খুব ভোরে কুয়াকাটা থেকে মোটরসাইকেল কিংবা অটোবাইক অথবা সংখ্যায় বেশি হলে বিচ কার নিয়ে যেতে পারবেন। যেহেতু কুয়াকাটা থেকে কাছেই, সেহেতু গঙ্গামতি ঘুরে আবার কুয়াকাটা চলে আসতে পারবেন।

চর বিজয় সৈকত

কুয়াকাটা থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্ব কোণে বঙ্গোপসাগরের বুকে জেগে উঠেছে একটি চর। বিজয়ের মাসে এর সন্ধান পাওয়ায় নাম রাখা হয় ‘চর বিজয়’। চরটি বর্ষার ছয় মাস পানিতে ডুবে থাকে। আবার পানি নেমে গেলে, বিশেষ করে শীত মৌসুমে চরের সৈকতে পুরো দখলে নিয়ে নেয় লাল কাঁকড়া। সৈকতজুড়ে দেখা যায় অসংখ্য পরিযায়ী পাখির ওড়াউড়ি। দুচোখ দিয়ে চারদিকে তাকালেই দেখা মেলে পানিতে ছোট বড় অসংখ্য মাছের নাচানাচি।

যেভাবে যাবেন: কুয়াকাটা সৈকত থেকে ট্যুরিস্ট বোর্ড কিংবা স্পিডবোট অথবা ট্রলার ভাড়া করে যেতে হবে ‘চর বিজয়’। যেহেতু দ্বীপটি বর্ষায় তলিয়ে যায়, তাই থাকার কোনো ব্যবস্থা নেই। সন্ধ্যায় আবার চলে আসতে হবে কুয়াকাটায়।

চর তুফানিয়া সৈকত 

কুয়াকাটা থেকে থেকে ১০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে রয়েছে চর তুফানিয়া দ্বীপ। সাধারণত এটা লাল কাঁকড়ার নিরাপদ আবাসভূমি। ষাটের দশকে দ্বীপটি জেগে ওঠে। তুফানের সময় যেমন হয়, তেমনি বিশাল বিশাল ঢেউ আছড়ে পড়ত বলে জেলেরাই নাম দিয়েছেন তুফানিয়া। এখানে রয়েছে ৫০০ একর বনাঞ্চল।

যেভাবে যাবেন : কুয়াকাটা থেকে সরাসরি ট্যুরিস্ট বোট কিংবা স্পিড বোট অথবা ট্রলারে করে আসতে হয় এ দ্বীপে। তবে এখানে কোনো থাকার ব্যবস্থা না থাকায় দুই কিলোমিটার দূরেই রয়েছে জাহাজমারা দ্বীপ, সেখানে যেতে হবে।

জাহাজমারা সৈকত

সৈকত লাগোয়া জলে নির্বিঘ্নে সাঁতার কাটছে মাছের দল। সাগরের ঢেউয়ের তালে তালে ছোট ছোট বিভিন্ন প্রজাতির মাছের দলের ছোটাছুটি চোখে পড়ে। এমন একটি জায়গার নাম জাহাজমারা। স্থানীয়দের দাবি, অনেক বছর আগে এই সৈকতে একটি জাহাজ আটকে পড়ে এবং ধীরে ধীরে সেই জাহাজটি বালুতে ডুবে যায়। এরপর থেকেই স্থানীয়রা জাহাজমারা সৈকত নামকরণ করে। চর তুফানিয়া থেকে ২ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত জাহাজমারা সৈকত। পটুয়াখালীর সাগরঘেঁষা রাঙ্গাবালী উপজেলায় মৌডুবী ইউনিয়নে সৌন্দর্যের লীলাভূমি জাহাজমারার প্রধান আকর্ষণ সূর্যাস্ত। এ ছাড়া সৈকতজুড়ে তরমুজের বিস্তীর্ণ মাঠ।

যেভাবে যাবেন: চর তুফানিয়া থেকে ওই পদ্ধতিতেই আসতে হবে এখানে। আর থাকতে চাইলে যেতে হবে রাঙ্গাবালীতে, ওখানে  ডাকবাংলোসহ রয়েছে স্থানীয় কিছু হোটেলে থাকার ব্যবস্থা। অথবা ক্যাম্প করেও থাকা যাবে এখানে। এখান থেকে যাওয়া যাবে আর এক সৌন্দর্যের লীলাভূমি সোনারচর সৈকতে।

সোনার চর সৈকত

এ জেলায় অবস্থিত আরেকটি নয়নাভিরাম সৈকতের নাম সোনার চর। সূর্যাস্ত ও সূর্যোদয়ের সময় লাল রং ধারণ করে এই সৈকত। তাই এর নামকরণ করা হয় সোনার চর। কুয়াকাটা সৈকত থেকে দক্ষিণে ১০ কিলোমিটার দূরে সাগরের মাঝে অবস্থিত সোনার চরের সৌন্দর্য।

সোনার চরে সুন্দরবনের মতোই রয়েছে ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল এবং এর ভেতরে ছোট ছোট খাল। গোটা দ্বীপটি যেন সাজানো-গোছানো এক বনভূমি। রয়েছে কেওড়া, সুন্দরী, গড়ান, হেঁতাল, গোলপাতাসহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছ। নিভৃত সোনার চরে শুধু নানা ধরনের বৃক্ষের সমাহারই নয়, রয়েছে বিভিন্ন ধরনের প্রাণীও। হরিণ, শিয়াল, মহিষ, বন্য শুয়োর, বানর এ বনের বাসিন্দা। রয়েছে চার কিলোমিটার সমুদ্রসৈকত। নগরের কর্মচাঞ্চল্য থেকে বহুদূরে এই সৈকতের নয়নাভিরাম সৌন্দর্য এখনো অনেকের কাছে অজানা।

যেভাবে যাবেন: জাহাজমারা দ্বীপ থেকে সোনারচরের দূরত্ব ১০ কিলোমিটার। জাহাজমারা থেকে সরাসরি নদীপথে আসতে হবে সোনার চরে। চাইলে এখানে রাত যাপন করতে পারবেন তাঁবু করে। আর সোনার চর থেকে ১ কিলোমিটার দূরেই রয়েছে আরেকটি দ্বীপ ‘চর হেয়ার’। সোনার চরের সৌন্দর্য উপভোগ করে চলে যাওয়া যাবে সেখানে।

‘চর হেয়ার’ সৈকত 

এ দ্বীপটি গুগলে সার্চ করলে ‘চর হেয়ার’ নামে এলেও স্থানীয়দের কাছে একটি কলাগাছিয়ার চর নামে পরিচিত। চর হেয়ারের ভেতরটা পাখিদের কিচিরমিচির ও ঝরা পাতা দিয়ে ঢেলে সাজানো। নিঃশ্বাস নেওয়ার জন্য রয়েছে এক বিশাল সৈকত।

যেভাবে যাবেন : সোনার চরের মতোই একইভাবে আসতে হবে এর হেয়ার দ্বীপে। তবে সোনার চর ও এখানে থাকার কোনো ব্যবস্থা নেই, তবে এর অধিকাংশ পর্যটক তাঁবু করে থাকেন। আর হোটেলে থাকতে চাইলে যেতে হবে ৫ কিলোমিটার দূরে চরমন্তাজ ইউনিয়নে। সেখানে রয়েছে কয়েকটি থাকার হোটেল এবং খাওয়ার ব্যবস্থা।

লেম্বুর চর সৈকত 

কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকত থেকে ৫ কিলোমিটার পূর্বে লেবুর বন অবস্থিত, যা স্থানীয়দের কাছে লেম্বুর চর বা নেম্বুর চর নামেও পরিচিত। এবং তিন নদীর মোহনায় এ সৈকতটি অবস্থিত হওয়ায় সূর্যাস্ত দেখার জন্য পর্যটকদের কাছে জনপ্রিয় জায়গা এই লেবুর চর। ১ হাজার একর আয়তনের লেবুর চরে আছে বিভিন্ন প্রজাতির গাছ; যেমন- কেওড়া, গেওয়া, গোরান, কড়ই, গোলপাতা ইত্যাদি। 

যেভাবে যাবেন: কুয়াকাটার পূর্বপ্রান্তে অবস্থিত হওয়ায় এই চরে কুয়াকাটা থেকে সহজেই যাওয়া যায়। সৈকতসংলগ্ন বেড়িবাঁধের ওপর থেকে মোটরসাইকেল, ভ্যান কিংবা যেকোনো যানবাহনে চরে যেতে পারবেন। চাইলে হেঁটেও যাওয়া যায়। এ ছাড়া কুয়াকাটা সৈকত থেকে স্পিডবোট কিংবা ট্রলারে যাওয়া যায়।

ফাতরার চর সৈকত

কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকতের জিরো পয়েন্ট থেকে পশ্চিমে ১০ কিলোমিটার গেলে চোখে পড়বে সবুজে ঘেরা, নীল জলরাশি সাগর মোহনার বুকে জেগে ওঠা ফাতরার বন বা ফাতরার চর নামক সংরক্ষিত ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল। এ যেন সাগরের বুকে ভাসমান কোনো অরণ্য। এর পাশেই ট্রলারে চেপে যখনই আপনি ফাতরার চরের খালে ঢুকবেন, তখনই আপনাকে স্বাগত জানাবে দুপাশের ঘন সবুজ অরণ্য। ট্রলারের জেটি পেরিয়ে আপনি চরের ভেতরে ঢুকলেই চোখে পড়বে একটি সাইনবোর্ডে লেখা আছে টেংরাগিরি অরণ্য। এর ভেতরেই শান বাঁধানো একটি পুকুর ও বন বিভাগ নির্মিত একটি রেস্ট হাউস। মূলত চরে অস্থায়ীভাবে বসবাস করা মানুষের মিঠাপানির জন্য করা হয়েছে এই পুকুর। পুকুরপাড় দিয়ে আপনি এবার প্রবেশ করবেন ঘন গহিন অরণ্যে। প্রকৃতির এই নিস্তব্ধতার মাঝে ক্ষণে ক্ষণে ডেকে ওঠা পাখির ডাক আপনাকে নিয়ে যাবে এক অন্য জগতে। চরের পূর্ব অংশে রয়েছে একটি ছোট সমুদ্রসৈকত, ভাটার সময়ে আপনি নামতে পারেন এই সৈকতটিতে।

যেভাবে যাবেন: কুয়াকাটা থেকে প্রতিদিন সকালে থেকে ট্যুরিস্ট বোট পর্যটকদের নিয়ে বনের উদ্দেশে ছেড়ে যায়। চাইলে রিজার্ভ নিয়েও যাওয়া যায়। এ ছাড়া স্পিডবোট কিংবা ট্রলারেও আসতে পারবেন। তবে দৃষ্টিনন্দন এই চরটিতে এখনো পর্যটকদের জন্য থাকার কোনো স্থায়ী ব্যবস্থা গড়ে ওঠেনি। তাই চাইলে তাঁবু করে থাকতে পারবেন অথবা আপনাকে ওইদিনই আবার ফিরে যেতে হবে কুয়াকাটায়।

শুভসন্ধ্যা সৈকত

নিদ্রা সৈকত থেকে ৪  কিলোমিটার দূরে শুভসন্ধ্যা সমুদ্রসৈকতের সাগরতীরের মুক্ত বাতাস এবং চোখ জুড়ানো প্রাকৃতিক সৌন্দর্য পর্যটকদের আকর্ষণ করে। শুভসন্ধ্যা সমুদ্রসৈকত বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট টেংরাগিরির অংশ হওয়ায় সাগরপাড়ে সবুজের সমারোহের সাথে সাথে বন্যপ্রাণীর অবাধ বিচরণ চোখে পড়ে। প্রচলিত সমুদ্রসৈকতের তুলনায় এখানে দর্শনার্থীদের ভিড় কম থাকায় নিরিবিলিতে সময় কাটাতে পর্যটকদের কাছে দ্রুত জনপ্রিয়তা অর্জন করছে শুভসন্ধ্যা সমুদ্রসৈকত। এ ছাড়া উপমহাদেশের সর্ববৃহৎ জোছনা উৎসব অনুষ্ঠিত হয় এ সৈকতেই।

যেভাবে যাবেন: নিদ্রা সৈকত থেকে থেকে সরাসরি বোট নিয়ে সাগরপথে যাওয়া যায় শুভসন্ধ্যা সৈকতে এবং সড়কপথেও যাওয়া যায়।  এ ছাড়া হেঁটে যেতে সময় লাগে মাত্র ২০ মিনিট। তবে শুভসন্ধ্যা সৈকতে থাকার কোনো ব্যবস্থা নেই। চাইলে তাঁবু করে থাকা যায় অথবা তালতলীতে হোটেলে থাকতে হবে।

এসব সৈকতের সৌন্দর্য সহজেই উপভোগ করতে চাইলে স্থানীয় ‘জল তরণী’ নামের একটি ভ্রমণ গাইড রয়েছে; তাদের সহযোগিতা নিলে এসব সৈকতের যে কোনো জায়গায় তাঁবু করে থাকা সম্ভব। এর জন্য ‘জল তরণী’র রয়েছে আকর্ষণীয় আয়োজন।

পর্যটন সম্ভাবনাময় সুসং দুর্গাপুর

প্রকাশ: ১৭ মে ২০২৪, ১১:৫৭ এএম
পর্যটন সম্ভাবনাময় সুসং দুর্গাপুর

বাংলাদেশ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপরূপ লীলাভূমি। যেখানে নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, নদনদী, পাহাড়-পর্বত, সমুদ্রসৈকত, প্রাচীন ঐতিহাসিক ও প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনগুলো যুগ যুগ ধরে আলোচিত। ফলে ভ্রমণপিপাসু মানুষকে বারবার আকৃষ্ট করে বাংলাদেশ। কেউ কেউ আবার বাংলার সৌন্দর্যে পুলকিত ও মুগ্ধ হন এবং রূপসী বলে আখ্যায়িত করেন। বাংলাদেশের অপরূপ সৌন্দর্যে প্রতিনিয়ত মুগ্ধ হচ্ছেন ভ্রমণপিপাসুরা। ফলে দেশে এ শিল্পের সম্ভাবনা উজ্জ্বল। দেশের কোনো কোনো জায়গা শুধুই দর্শনীয় স্থান নয়, যেন পৃথিবীর বুকে একখণ্ড স্বর্গ। সেসব স্থানের একটি হলো ‘সুসং দুর্গাপুর’।

মেঘালয়ের কোলঘেঁষে ময়মনসিংহ বিভাগের উত্তরে নেত্রকোনায় অবস্থিত এক টুকরো স্বর্গ  ‘সুসং দুর্গাপুর’। শান্ত, স্নিগ্ধ ও চারপাশে সবুজে আবৃত মনোরম পরিবেশ। তাছাড়া রয়েছে সুউচ্চ পাহাড়, হ্রদ, টিলা, বিভিন্ন সংস্কৃতির ছোঁয়া ও নদনদীর সমাহার। প্রকৃতিপ্রেমীদের জন্য অন্যতম আদর্শ স্থান।

দুর্গাপুরের বুনো হাতি

 চারদিকে সবুজ গাছগাছালি আর তারই মাঝে একটি  ‘সাদা মাটির পাহাড়’। একটি দুটি নয়, শতাধিক সাদামাটির টিলা আছে সেখানে। চীনামাটিকে সাদামাটি বলে আখ্যায়িত করলেও চীনামাটি পুরোপুরি সাদা নয়। বরং কোথাও লালচে, ধূসর, হালকা নীলাভ, গোলাপি, ঈষৎ বেগুনি, হলুদ কিংবা টিয়া রঙেরও। বিচিত্র রঙের মাটির সংমিশ্রণ দেখা যায় পাহাড়গুলোয়। এর নিচেই রয়েছে আবার স্বচ্ছ নীল পানির হ্রদ। আর বিস্তৃত মাঠজুড়ে সবুজের সমারোহ। পাহাড় কেটে মাটি উত্তোলন করার ফলে তৈরি হয়েছে বড় বড় গর্ত। সেসব গর্তে বা ঢালুতে বৃষ্টির পানি জমে তৈরি হয়েছে এ স্বচ্ছ নীল পানির হ্রদ। চীনামাটির পাহাড়ের কাছেই রয়েছে কমলার বাগান, বিজিবি ক্যাম্প ও নয়নাভিরাম আরও দর্শনীয় স্থান। বর্তমানে চীনামাটি উত্তোলন বন্ধ থাকায় এটি পরিণত হয়েছে দেশের অন্যতম একটি টুরিস্ট স্পটে। বিজয়পুর চীনামাটির পাহাড়ের রয়েছে ইতিহাস, ঐতিহ্য ও অতুলনীয় গুরুত্ব। এটি টারশিয়ারি যুগের পাহাড়ের অন্তর্ভুক্ত। এখানকার মাটি মিহি, কোমাল- ট্যালকম পাউডারের মতো, যা সিরামিক শিল্পের প্রধান কাঁচামাল। বাংলাদেশের খনিজ সম্পদের অন্যতম খনিজ অঞ্চল বিজয়পুর। পুরো এলাকা ঘিরে ছোট-বড়ো টিলা বা পাহাড় ও সমতল ভূমি মিলিয়ে দৈর্ঘ্যে ১৫ দশমিক ৫ কিলোমিটার ও প্রস্থে ৬০০ মিটার খনিজ এলাকা হিসেবে চিহ্নিত। এ পর্যন্ত ৫ লাখ মেট্রিক টন মাটি উত্তোলন করা হয়েছে। মজুদ আছে ১৩.৭৭ লাখ মেট্রিক টন। উল্লেখ্য, এই প্রাকৃতিক সম্পদটিকে জিআই স্বীকৃতি দিতে নিবন্ধনের আবেদন করেছিল নেত্রকোনা জেলা প্রশাসনের কার্যালয়। ২০২১ সালে এসে স্বীকৃতি পায়।

দুর্গাপুর জমিদার বাড়ি

সুসং দুর্গাপুরের আরেকটি আকর্ষণ হলো সোমেশ্বরী নদী। ভারতের মেঘালয় রাজ্যের গারো পাহাড়ের বিঞ্চুরীছড়া, বাঙাছড়া প্রভৃতি ঝরনাধারা ও পশ্চিম দিক থেকে রমফা নদীর স্রোতধারা একত্রিত হয়ে সোমেশ্বরীর সৃষ্টি। দুর্গাপুর উপজেলার বিজয়পুর ও ভবানীপুর গ্রামের ভেতর দিয়ে নদীটি বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। এটি বাংলাদেশ ও  ভারতের একটি আন্তঃসীমান্ত নদী। নদীটির বাংলাদেশ অংশের দৈর্ঘ্য ৫০ কিলোমিটার, গড় প্রশস্ততা ১১৪ মিটার এবং প্রকৃতি সর্পিলাকার। রানীখং পাহাড়ের পাশ দিয়ে দক্ষিণ দিকে শিবগঞ্জ বাজারের কাছে পূর্ব দিকে প্রবাহিত হয় এটি। সোমেশ্বরী নদীতে ঘুরে বেড়ালেই চোখে পড়ে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত ঘেঁষে সবুজঘেরা ও লাল চীনা মাটির অসংখ্য পাহাড়। বছরের বেশির ভাগ সময় এর একপাশজুড়ে থাকে ধুধু বালুচর, অন্য পাশেই হালকা নীলাভ জল। নদীর একপাশে খরস্রোতা বয়ে চলার দৃশ্য মনোমুগ্ধকর। শীত শুরু হলেই ভিন্ন রূপ ধারণ করে নদীটি। শুকনো মৌসুমে সোমেশ্বরী যৌবন হারিয়ে প্রায় মরা নদীতে রূপ নেয়। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের পাশাপাশি সোমেশ্বরী নদী কয়লা, নুড়ি-পাথর ও সিলিকা বালু বয়ে আনে। কয়লা, নুড়ি-পাথর ও সিলিকা বালুতে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করছে হাজারো মানুষ। কেউ কেউ আর্থিক অবস্থারও উন্নতি করেছেন। দুর্গাপুরের বালু এখন দেশব্যাপী জনপ্রিয়। আর এ নদীতে রয়েছে মহাশোল মাছ। যা বাংলাদেশে এ মাছটির অন্যতম আবাসস্থল।

তাছাড়া বৈচিত্র্যময় জনবসতি, ঐতিহ্যবাহী পোশাকে ছুটে চলা আদিবাসী, ক্ষুদ্র ও নৃ-তাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর কিছু প্রতিষ্ঠান, সাধু জোসেফের ধর্মপল্লী, রানীখং মিশন, ক্ষুদ্র ও নৃ-গোষ্ঠীর কালচারাল একাডেমি, ফান্দা ভ্যালি, টঙ্ক শহিদ স্মৃতিস্তম্ভ, কমরেড মণি সিংহের বাড়ি, মণি সিংহ জাদুঘর, সুসং মহারাজার সুদৃশ্য বাড়ি, রাশমণি স্মৃতিসৌধ, কমলা রানীর দিঘি, কংস নদ, আত্রাখালী নদী, চণ্ডীগড় গ্রামের মানবকল্যাণকামী অনাথালয়, কুল্লাগড়ার রামকৃষ্ণ মঠ, দুর্গাপুর সদরের দশভুজা মন্দির, বিজয়পুরের স্থলশুল্ক বন্দর, বিরিশিরি বধ্যভূমিসহ আরও বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান ভ্রমণপিপাসুদের দারুণ ভাবে আকৃষ্ট করে।

এত ঐতিহাসিক স্থান ও নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য থাকা সত্ত্বেও পর্যটনশিল্পে কিছুটা পিছিয়ে সুসং দুর্গাপুর। নানা প্রতিকূলতার জন্য পর্যটনশিল্প বিকাশ লাভ করছে না, দেশব্যাপী আলোড়িত হচ্ছে না। যার মধ্যে অন্যতম হলো রাস্তার বেহাল দশা। বালু দুর্গাপুরের জন্য আশীর্বাদ হলেও পর্যটনশিল্পে কিছুটা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে। বালুবাহী ট্রাকের কবলে তৈরি হচ্ছে অসহনীয় জ্যাম। যোগাযোগ সমস্যা, নিরাপত্তার অভাব ও নানা ভোগান্তির কারণে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন পর্যটকরা। ফলে প্রতিনিয়ত কমছে পর্যটকের সংখ্যা।

তবে নানান প্রতিকূলতার মাঝেও দুর্গাপুর নিয়ে স্বপ্ন দেখছে জনগণ, আশা করছে দুর্গাপুরেও স্থলবন্দর হবে এবং সবকিছু উপেক্ষা করে, পর্যটনশিল্পে দেশে আলোকিত নাম হবে। এজন্য সোমেশ্বরী নদীর বালু যথাযথ ব্যবহার, চীনা মাটির পাহাড়ে যেতে তেরী বাজার ও শিবগঞ্জের মাঝে ব্রিজ নির্মাণ, রাস্তার বেহাল দশা সমাধানে বিকল্প রাস্তা তৈরি কিংবা দুর্গাপুর পর্যন্ত ট্রেন লাইন আনার মতো যুগান্তকারী উন্নয়ন হলেই তবে পর্যটনশিল্পে এগিয়ে যাবে সুসং দুর্গাপুর।

জাহ্নবী

বাংলাদেশে রবি পর্যটন

প্রকাশ: ১০ মে ২০২৪, ০২:১৩ পিএম
বাংলাদেশে রবি পর্যটন
শাহজাদপুর রবীন্দ্র কাচারিবাড়ি

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সঙ্গে বাংলাদেশের রয়েছে গভীর সম্পর্ক। সে সম্পর্কটা যেমন মানসিক, তেমনি আত্মীয়তার। জমিদারি কাজের তদারকি করার জন্যও তিনি বাংলাদেশে এসেছিলেন বেশ কয়েকবার। রবীন্দ্রনাথের স্মৃতিময় কিছু জায়গার পর্যটন নিয়ে জানাচ্ছে পর্যটন ডেস্ক

শিলাইদহ রবীন্দ্র কুঠিবাড়ি


কুষ্টিয়া জেলা সদর থেকে প্রায় ১২ কিলোমিটার দূরে কুমারখালী উপজেলার শিলাইদহে জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবারের ঐতিহাসিক কুঠিবাড়ি। ১৮০৭ সালে রামলোচন ঠাকুরের উইল সূত্রে রবীন্দ্রনাথের পিতামহ দ্বারকানাথ ঠাকুর এ জমিদারির মালিকানা পান। এখানে বসেই কবি রচনা করেন সোনারতরী, চিত্রা, চৈতালী, কথা ও কাহিনী, ক্ষণিকা, নৈবেদ্য ও খেয়ার অধিকাংশ কবিতাসহ আরও অনেক রচনা। এখানে বসেই ১৯১২ সালে কবি ‘গীতাঞ্জলি’ কাব্যের ইংরেজি অনুবাদ শুরু করেন। শিলাইদহ কুঠিবাড়িতে সরকারি ব্যবস্থাপনায় এখন প্রতিষ্ঠিত হয়েছে জাদুঘর।


রবীন্দ্রনাথের শ্বশুরবাড়ি ও নানাবাড়ি


খুলনা ও যশোর জেলার শেষ সীমানায় খুলনার ফুলতলা উপজেলা সদর থেকে তিন কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে দক্ষিণডিহি গ্রাম। গ্রামের ঠিক মধ্যখানে রয়েছে জমিদার বাড়ির বিশাল প্রাঙ্গণ। এটাই রবীন্দ্রনাথ-মৃণালিনীর স্মৃতিধন্য দোতলা ভবন-বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শ্বশুরবাড়ি। অন্যদিকে খুলনার রূপসা উপজেলার ঘাটভোগ ইউনিয়নের পিঠাভোগ গ্রামে রয়েছে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নানাবাড়ি। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মা সারদা সুন্দরী দেবীর জন্ম এই গ্রামে। রবীন্দ্রনাথের কাকিমা ত্রিপুরা সুন্দরী দেবী এবং স্ত্রী মৃণালিনী দেবী দক্ষিণডিহি গ্রামেরই মেয়ে। যৌবনে কবি দক্ষিণডিহি গ্রামে মামা বাড়িতে এসেছিলেন।


শাহজাদপুর রবীন্দ্র কাচারিবাড়ি
সিরাজগঞ্জ জেলার শাহজাদপুরে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পৈতৃক জমিদারি ছিল। কবির দাদা প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুর নীলকরদের একটি কুঠি নিলামে কিনে নেন। ২৯ বছর বয়সে ১৮৯০ সালে সর্বপ্রথম শাহজাদপুরে জমিদারি তত্ত্বাবধান করতে আসেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। এরপর ১৮৯৭ সাল পর্যন্ত জমিদারির কাজে এখানে যাওয়া-আসা ও অবস্থান করেন কবি। জমিদারি খাজনা আদায়ের একটি পুরোনো দোতলা ভবন রয়েছে, বর্তমানে সেটা জাদুঘর।


পতিসর কুঠিবাড়ি


নওগাঁ জেলা শহর থেকে প্রায় ২৬ কিলোমিটার দূরে আত্রাই উপজেলার পতিসর। এখানে নাগর নদীর তীরে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কুঠিবাড়ি। জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবারের জমিদারির কালিগ্রাম পরগনার সদর কাছারি ছিল এখানে। রবীন্দ্রনাথের পিতামহ দ্বারকানাথ ঠাকুর ১৮৩০ সালে এ জমিদারি কিনেছিলেন। জমিদারি দেখাশোনার জন্য ১৮৯১ সালে প্রথম পতিসরে আসেন রবীন্দ্রনাথ। শিলাইদহ ও শাহজাদপুরের মতোই প্রায় পতিসরের দোতলা কুঠিবাড়ি। বাড়ির সামনের প্রশস্ত খোলা মাঠ নাগর নদী পর্যন্ত বিস্তৃত। এখানে থাকাকালীন ১৯০৫ সালে কবি পতিসরে কৃষি ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করেন। নোবেল পুরস্কারের এক লাখ টাকাও তিনি এই ব্যাংকে দান করেন।


কালীগ্রাম রথীন্দ্রনাথ ইনস্টিটিউশন


নওগাঁ জেলার আত্রাই উপজেলার কালীগ্রাম ইউনিয়নে অবস্থিত এই স্কুলটি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নিজেই নোবেল পুরস্কারে পাওয়া অর্থ দিয়ে নির্মাণ করেছিলেন। বাংলাদেশে জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবারের তিনটি জমিদারি ছিল। সেগুলো হলো- কুষ্টিয়া জেলার শিলাইদহ, সিরাজগঞ্জ জেলার শাহাজাদপুর ও নওগাঁ জেলার কালীগ্রামে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কালীগ্রামের জমিদারের দায়িত্ব পেয়ে ১৮৯১ সালের ১৩ জুন কালীগ্রামে আসেন। শেষবার আসেন ১৯৩৭ সালের ২৭ জুলাই। ওই বছরই কালীগ্রাম রথীন্দ্রনাথ ইনস্টিটিউশন প্রতিষ্ঠিত করা হয়। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছেলে রথীন্দ্রনাথের নামে হাইস্কুলটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মৃত্যুর পর তার পুত্র রথীন্দ্রনাথ উত্তরাধিকার সূত্রে জমিদারির দায়িত্ব পান। তিনি ১৯৪৫ সালের দিকে দাম্পত্য সঙ্গী প্রতিমা দেবীসহ তিনি কালীগ্রামে আসেন। নিজের নামে নির্মিত ইনস্টিটিউশনের প্রতি তার টান ছিল। তিনি সেই সময় শিক্ষক-ছাত্রদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখতেন।

কালীগ্রাম রথীন্দ্রনাথ ইনস্টিটিউশন সেই সময়ে মাটি দিয়ে তৈরি করা হয়েছিল। রবীন্দ্রনাথের দেওয়া আশীর্বাণী, চিঠি, প্রজাদের উদ্দেশে দেওয়া তার শেষ ভাষণ, তার দেওয়া বিভিন্ন বই এই ইনস্টিটিউশনে সংগ্রহ করা আছে। এই প্রতিষ্ঠানে কালীগ্রামের শেষ জমিদার রবীন্দ্রনাথের পুত্র রথীন্দ্রনাথ ঠাকুরের চিঠি, রবীন্দ্রনাথের পুত্রবধূ প্রতিমা দেবীর চিঠিসহ রবীন্দ্রনাথের অনেক স্মৃতিস্মারক সংগ্রহ করা আছে।

জাহ্নবী

 

শিক্ষা-পর্যটন

প্রকাশ: ০৩ মে ২০২৪, ০১:৪১ পিএম
শিক্ষা-পর্যটন

দার্শনিকদের দাবি, ‘শিক্ষার ক্ষেত্রে পর্যটন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’ যেহেতু অনুসন্ধান, যুক্তি, নান্দনিকতা ও মূল্যবোধ দিয়ে দর্শন পরিচালিত। সেহেতু শিক্ষা ও দর্শন এমনভাবে সম্পর্কযুক্ত যে, বলতে গেলে দুটো বিষয় মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ। শিক্ষার মাধ্যমেই মানুষের সক্ষমতা, দৃষ্টিভঙ্গি, মূল্যবোধসহ সব রকমের ব্যক্তিগত ও সামাজিক গুণগুলো গড়ে ওঠে। আত্মোন্নয়নে তো শিক্ষার কোনো বিকল্পই নেই। তাই পরিপূর্ণ শিক্ষা অর্জনের জন্য যেতে হবে চার দেয়ালের বাইরে। শিক্ষা-পর্যটনে।

বিশ্বের উন্নত দেশগুলো শিক্ষার্থীদের নিয়ে শিক্ষা-পর্যটনের আয়োজন করে। আমাদের দেশেও অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষার্থীদের ভ্রমণে নিয়ে যায়। তবে এই ভ্রমণগুলো বেশির ভাগ সময় পিকনিক রূপে হয়ে থাকে। কখনো আবার শিক্ষা সফর হিসেবে ঐতিহাসিক স্থান বা জাদুঘর পরিদর্শনেও নিয়ে যাওয়া হয়। তবে বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর আয়োজন একটু অন্য রকম। নানা ঐতিহাসিক, বা মনোরম প্রাকৃতিক জায়গা ছাড়াও শিক্ষা পর্যটনে তারা স্কুল বা কলেজের শিক্ষার্থীদের নিয়ে যান নামকরা কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে। তবে কোনোরকম হইহুল্লোড় বা উচ্চশব্দে বাজনা বাজিয়ে নাচ গান নয়। সুশৃঙ্খলভাবে সেখানে শিক্ষার্থীরা পুরো বিশ্ববিদ্যালয়টি ঘুরে দেখে। আমরাও এমন শিক্ষা-পর্যটনের উদ্যোগ নিতে পারি। উন্নত রাষ্ট্রের শিক্ষা-পর্যটনের মতো আমরাও শিক্ষার্থীদের প্রথমে ছোট ছোট দলে ভাগ করে নিতে পারি। এক এক দলে ৩০ বা ৪০ জন করে শিক্ষার্থী রাখতে পারি। প্রতিটি দল পরিচালনার জন্য একজন শিক্ষক দায়িত্ব নিতে পারেন। বাসের সামনে শুধুমাত্র ব্যানার লাগিয়ে রওনা দিতে পারি শিক্ষা-পর্যটনের উদ্দেশ্যে। সেটা হতে পারে নিজ জেলারই সুন্দর কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে। সকালে গিয়ে বিকেলের মধ্যেই যেন আবার আমরা ফিরে আসতে পারি। দুপুরের খাবারের ব্যবস্থা যদি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যান্টিনে করা যায় তাহলে তো কথাই নেই।

শিক্ষা-পর্যটনে যাওয়ার আগে আমরা শিক্ষার্থীদের সাত দিনের একটা ছোট্ট প্রশিক্ষণ দিয়ে নিতে পারি। প্রশিক্ষণের অংশ হিসেবে থাকতে পারে শৃঙ্খলা, পরিচ্ছন্নতা, সময়ানুবর্তিতা ইত্যাদি। এতে শিক্ষার্থীরা সুশৃঙ্খলভাবে বিশ্ববিদ্যালয় এবং এর চারপাশের পরিবেশ নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করতে পারবে। বিষয়ভিত্তিক বিভিন্ন ফ্যাকাল্টি ঘুরে দেখার সময় এই প্রশিক্ষণগুলো তাদের সাহায্য করবে। উন্নত বিশ্বের শিক্ষার্থীদের মতো আমাদের শিক্ষর্থীরাও বিষয়ভিত্তিক বিভাগগুলোর কোন বিভাগে কী নিয়ে পড়াশোনা হয় তা মনোযোগ দিয়ে দেখবে এবং ধারণা নেবে। সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের সুযোগ-সুবিধা সম্পর্কে জানবে। পড়াশোনার পরিবেশ সম্পর্কে জানবে। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের দেখেও তারা অনুপ্রাণিত হবে। ভবিষ্যতে তারা উচ্চশিক্ষার প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠবে। তাদের বড় হওয়ার স্বপ্নগুলো আরও বড় হবে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ঘুরে এসে তারা নিজেরাই সিদ্ধান্ত নিতে শিখবে সে বড় হয়ে কোন বিষয় নিয়ে পড়তে চায়। কিংবা কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে চায়।

শিক্ষা-পর্যটনের মাধ্যমে শিক্ষার মান হবে উন্নত ও মজবুত। আন্তন চেখভের মতে, ‘কম পোড়া ইটের তৈরি বাড়িতে বসবাস যেমন আতঙ্কের সৃষ্টি করে তেমনি দুর্বল শিক্ষা কখনো উন্নত সমাজ গড়তে পারে না। তাই শিক্ষা মজবুত হওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

মজবুত শিক্ষার মাধ্যমেই মজবুত সমাজ গড়ে উঠবে। আর শিক্ষা পরিপূর্ণ ও মজবুত করতে শিক্ষা-পর্যটনের ভূমিকা অপরিসীম।

জাহ্নবী

 

মহাকাশে পর্যটন

প্রকাশ: ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২:৪৯ পিএম
মহাকাশে পর্যটন

২০০১ সালের ২৮ এপ্রিল। পৃথিবীর প্রথম পর্যটক মহাকাশযান হিসেবে মহাশূন্যের পথে পাড়ি জমায় রাশিয়ার সয়ুজ টিএম-৩২। আর এর মাধ্যমে পর্যটনে নতুন এক মাত্রা যুক্ত হলো- মহাশূন্য ভ্রমণ। বাণিজ্যিকভাবে ওটাই ছিল মহাশূন্যে প্রথম যাত্রা। আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে এ যাত্রায় পর্যটক হিসেবে ছিলেন ইতালীয় বংশোদ্ভূত মার্কিন প্রকৌশলী ও ধনকুবের ডেনিস অ্যান্থনি টিটো। সে হিসেবে পৃথিবীর প্রথম মহাকাশ পর্যটকের তকমা পেয়ে যান টিটো। যদিও মহাকাশ ভ্রমণকারী হিসেবে তিনি ছিলেন ৪১৫তম মানুষ। তবে তার এ যাত্রা সহজ ছিল না।

যদিও ইউরি গ্যাগারিনের মহাকাশ ভ্রমণের পর, কিশোর বয়স থেকেই মহাকাশ ভ্রমণের স্বপ্ন দেখতেন তিনি। কিন্তু স্বপ্ন দেখলেই তো আর মহাকাশে ভ্রমণ করা সম্ভবও নয়। মহাকাশ যাত্রা ও গবেষণায় উন্নতির কারণে তিনি সুযোগটা পেয়ে যান। মিরকর্প নামের একটি মহাকাশবিষয়ক প্রতিষ্ঠান বাণিজ্যিকভাবে মহাকাশ যাত্রার উদ্যোগ নিয়েছিল। আর সে উদ্যোগে রাশিয়ান ফেডারেল মহাকাশ সংস্থা ডেনিশ টিটোকে যাত্রী হিসেবে বেছে নেয়। তবে বেছে নিলেই তো আর হলো না। এটা তো আর টিকিট কাটলাম, বাহনে উঠলাম এবং গন্তব্যে পৌঁছে গেলাম ধরনের যাত্রা নয়। মহাকাশ যাত্রার আগে স্টার সিটি কমপ্লেক্সে প্রশিক্ষণ নিতে হয় তাকে। এ প্রশিক্ষণের কারণ হচ্ছে তার শরীরকে ওজনহীনতার সঙ্গে খাপ খাওয়ানো। যাই হোক, সে সময় নাসার প্রশাসক ড্যানিয়েল গোলডিন এ মহাকাশ ভ্রমণের ঘোর বিরোধী ছিলেন। তিনি মনে করতেন, পর্যটকদের জন্য মহাকাশ মোটেই উপযুক্ত স্থান নয়। আর সে কারণে ডেনিশ টিটো যখন নানার জনসন মহাকাশ কেন্দ্রে প্রশিক্ষণ নিতে গেলেন, নাসা তাকে প্রশিক্ষণ দিতে রাজি হয়নি। আর সে কারণেই তিনি রাশিয়ার স্টার সিটিতে প্রশিক্ষণ নেন। তারপর সয়ুজ দলের সঙ্গে প্রথম মহাকাশ পর্যটক হিসেবে যাত্রা করেন। মহাকাশে তিনি ৭ দিন, ২২ ঘণ্টা, ৪ মিনিট অবস্থান করেন এবং ১২৮ বার পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করেন। এ ভ্রমণের জন্য তাকে খরচ করতে হয় ২০ মিলিয়ন বা দুই কোটি মার্কিন ডলার।

মহাকাশ পর্যটনের গুরুত্ব কিন্তু দিন দিন বাড়ছে। বিশ্বের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে মহাকাশ পর্যটন বিষয়ে কোর্স চালু হয়েছে। নিউইয়র্কের রচেস্টার ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি, জাপানের কিয়ো বিশ্ববিদ্যালয় এবং ফ্লোরিডার এমব্রিরিডল অ্যারোনটিক্যাল ইউনিভার্সিটিতে মহাকাশ পর্যটনবিষয়ক কোর্স চালু হয়েছে।

মহাকাশ পর্যটন দুই ধরনের। প্রথম ধরনটি হচ্ছে সাব-অরবিটাল। সাব-অরবিটাল মহাকাশযানটি যাত্রীদের কারমান লাইনের ঠিক বাইরে নিয়ে যায়- যেটা আমাদের মাথার ওপরে প্রায় ১০০ কিলোমিটার দূরে অবস্থান করছে। এটি পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল এবং মহাকাশের মধ্যে সীমানা হিসেবে বিবেচিত হয়। সাব-অরবিটাল পর্যটকরা মহাকাশে কয়েক মিনিট কাটিয়ে পৃথিবীতে ফিরে আসেন।

অন্যদিকে অরবিটাল পর্যটকরা কারমান লাইনের চেয়ে অনেক বেশি দূরত্বে যেতে পারেন। সাধারণত যাত্রীরা প্রায় ৪০০ কিলোমিটার উচ্চতায় কয়েক দিন থেকে এক সপ্তাহের বেশি সময় কাটাতে পারে এবং পৃথিবীকেও প্রদক্ষিণ করতে পারে। ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে স্পেস এক্সের ফ্যালকন ৯ চারজন যাত্রীকে ১৬০ কিলোমিটার উচ্চতায় নিয়ে যায় এবং তিন দিন ধরে পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করে আবার ফিরে আসে।

মহাকাশ পর্যটন অত্যন্ত ব্যয়বহুল পর্যটন। মহাকাশে যেতে একেক পর্যটককে সর্বনিম্ন ১০ লাখ ডলার দিতে হয়। এর মধ্যে কিছু ক্ষতিকর বিষয়ও আছে।

মহাকাশ পর্যটনের ব্যবহৃত রকেটগুলো সরাসরি উপরের বায়ুমণ্ডলে গ্যাসীয় এবং কঠিন রাসায়নিক পদার্থ নির্গত করে পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি করে। ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডন (ইউসিএল), কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় এবং ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি (এমআইটি) দ্বারা করা ২০২২ সালের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, রকেট উৎক্ষেপণ থেকে নির্গমনে বায়ুমণ্ডল যে পরিমাণ উষ্ণ হয়, তা অন্য কোনো কারণে হয় না। এ ছাড়া রয়েছে নিরাপত্তা। অ্যাস্ট্রোনমি ম্যাগাজিনের প্রতিবেদনে বলা হয়, নিরাপত্তাজনিত বিশেষ সতর্কতার পরও ২০২৩ সালের নভেম্বর পর্যন্ত ৬৭৬ জন মহাকাশচারীর মধ্যে ১৯ জন মারা গেছেন। অর্থাৎ শতকরা ৩ ভাগ নভোচারী উড্ডয়নের সময় মারা যান।

২০০১ থেকে ২০০৯ পর্যন্ত আটজন পর্যটক মহাশূন্য ভ্রমণ করেছিলেন। ২০১১ সালে স্পেস অ্যাডভেঞ্চারস জানিয়েছিল ২০২০ সালের মধ্যে মহাকাশ পর্যটকের সংখ্যা ১৪০ হতে পারে। নানা কারণে যদিও পর্যটকের সংখ্যা আশানুরূপ হয়নি, তবু মহাকাশ পর্যটন দিন দিন জনপ্রিয় হচ্ছে।

‘গ্লোবাল স্পেস ট্যুরিজম মার্কেট’ শিরোনামে রিসার্চ অ্যান্ড মার্কেটসের ২০২২ সালের প্রতিবেদন অনুসারে, ২০৩০ সালের মধ্যে আনুমানিক চক্রবৃদ্ধি বার্ষিক বৃদ্ধির হার (CAGR) ৩৭ দশমিক ১ শতাংশসহ ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বব্যাপী মহাকাশ পর্যটনশিল্প ৮ দশমিক ৬৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছাবে বলে অনুমান করা হয়েছে।

এ.জে/জাহ্নবী

প্রকৃতির সান্নিধ্য পেতে ঘুরে আসুন সুরঞ্জনা-শুভসন্ধ্যায়

প্রকাশ: ১৩ এপ্রিল ২০২৪, ১১:৫২ এএম
প্রকৃতির সান্নিধ্য পেতে ঘুরে আসুন সুরঞ্জনা-শুভসন্ধ্যায়
সুরঞ্জনা ইকোপার্ক

ঘুরতে পছন্দ করে না এমন মানুষ খুব কমই আছে। আর ঈদ এলে তো কথাই নেই। নতুন নতুন জায়গায় ঘুরতে অনেকের পরিকল্পনার শেষ নেই। এই পরিকল্পনা যদি কোলাহলমুক্ত সবুজে ঘেরা কোনো প্রকৃতি, নদী কিংবা স্নিগ্ধ বালুময় সমুদ্রের তীরে অবকাশ যাপনের জন্য না করা যায় তাহলে যেন তৃপ্তি নেই! এবার এমনি দুটি স্থান শুভসন্ধ্যা ও সুরঞ্জনা ভ্রমণের পরিকল্পনা করতে পারেন এবারের ঈদে। 

শুভসন্ধ্যা

বাংলাদেশের সর্ব দক্ষিণের উপকূলীয় বরগুনা জেলার প্রধান তিনটি নদী- পায়রা, বিষখালী ও বলেশ্বরের জল মোহনার সাগরে মিশে যাওয়ার স্নিগ্ধ বেলাভূমির বালুচর শুভসন্ধ্যা। যার একদিকে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট সুন্দরবন অপরদিকে সীমাহীন বঙ্গোপসাগর। 

সাগরঘেঁষা নয়নাভিরাম এই সৈকতটি তালতলী উপজেলার নিশানবাড়িয়া ইউনিয়নের নলবুনিয়া এলাকায় অবস্থিত হওয়ায় স্থানীয়দের কাছে এটি নলবুনিয়া চর নামে পরিচিত। এ চরের বনাঞ্চল প্রায় ১০ কিলোমিটার। 

২০০৬ সালে ৫৮ হেক্টর জমিতে এখানে নন ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল গড়ে তোলে বন বিভাগ। ঝাউগাছ, খইয়্যা বাবলা, মাউন্ট, আকাশমনি, অর্জুন, কালি বাবলা, কড়ই, খয়ের ও বাদামসহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছ রয়েছে এখানে। 

বিস্তীর্ণ বেলাভূমির এই বনাঞ্চলের সাগর প্রান্তে দাঁড়িয়ে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত দুটোই উপভোগ করা যায়।

সুরঞ্জনা

ইকোট্যুরিজমের উন্নয়নের লক্ষে সম্প্রতি বরগুনা সদর উপজেলার ঢলুয়া ইউনিয়নের বরইতলা সংলগ্ন বিষখালী ও খাকদোন নদীর মোহনায় গড়ে তোলা হয়েছে সুরঞ্জনা নামে একটি ইকোপার্ক। ভ্রমণপিপাসু বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ কমবেশি প্রতিদিনই এখানে বেড়াতে আসেন।

এখানে রয়েছে প্রাণ-প্রকৃতির অবাধ বিচরণ। ছৈলা, গোলপাতা, কেওড়াসহ নানা ধরনের বনজ বৃক্ষে ঘেরা  দৃষ্টিনন্দন এই ইকোপার্কের মাঝখানে বসানো হয়েছে বিশালাকারের কুমির ও কাঁকড়ার অবয়ব।

বাঘ, সিংহ, হরিণ, বক, জিরাফসহ বেশকিছু জীবজন্তুর অবয়বও বয়েছে এখানে। 

এ ছাড়াও এখানকার জল ও স্থলে পাখি, বেজি, শিয়াল, কাঁঠবিড়ালি, গুইসাপ, কাকড়া, গিরগিটিসহ নানা প্রাণির দেখা মিলবে। 

যেভাবে যাবেন-

পর্যটকরা সাধারণত নৌ ও স্থলপথেই বরগুনা আসেন। ঢাকা থেকে বিকেল ৫টায় বরগুনার উদ্দেশে লঞ্চ ছেড়ে যায়। এ ছাড়া গাবতলী ও সায়েদাবাদ থেকে আসা যাবে বাসেও। সকাল ৮টার মধ্যে লঞ্চ বরগুনা পৌঁছাবে। আর পদ্মা সেতু হয়ে বাসে লাগবে মাত্র ৬ ঘন্টা।  

বরগুনা শহরে স্বল্প খরচে আবাসিক হোটেল, ডাকবাংলো, এনজিওর রেস্টহাউস পাওয়া যায়। তাই বরগুনা পৌর শহরে পৌঁছে যেকোনো একটিতে রুম নিয়ে ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে পড়ুন ভ্রমণের উদ্দেশ্যে। 

প্রথমেই বরগুনা পৌরসভার সামনে থেকে আটোরিকশা রিজার্ভ করে কিংবা মোটরসাইকেল ভাড়া নিয়ে চলে যাবেন কাঙ্ক্ষিত গন্তব্য সুরঞ্জনা ইকোপার্কে। 

সুরঞ্জনায় ঘোরাঘুরির পর শুভসন্ধ্যায় যেতে প্রথমে তালতলীর উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাওয়া যানবাহন ও ট্রলারে যাবেন তালতলী সদরে। সেখান থেকে ভ্যান, রিকশা বা মোটরসাইকেল ভাড়া নিয়ে সোজা কাঙ্খিত শুভসন্ধ্যায়। 

বরগুনায় রাত কাটানোর পরদিন বিকেল ৩টার লঞ্চে কিংবা সন্ধ্যা বা রাতে বাসে ফিরতে পারবেন ঢাকায়। 

মহিউদ্দিন অপু/ইসরাত চৈতী/অমিয়/