
ঘুরতে পছন্দ করে না এমন মানুষ খুব কমই আছে। আর ঈদ এলে তো কথাই নেই। নতুন নতুন জায়গায় ঘুরতে অনেকের পরিকল্পনার শেষ নেই। এই পরিকল্পনা যদি কোলাহলমুক্ত সবুজে ঘেরা কোনো প্রকৃতি, নদী কিংবা স্নিগ্ধ বালুময় সমুদ্রের তীরে অবকাশ যাপনের জন্য না করা যায় তাহলে যেন তৃপ্তি নেই! এবার এমনি দুটি স্থান শুভসন্ধ্যা ও সুরঞ্জনা ভ্রমণের পরিকল্পনা করতে পারেন এবারের ঈদে।
শুভসন্ধ্যা
বাংলাদেশের সর্ব দক্ষিণের উপকূলীয় বরগুনা জেলার প্রধান তিনটি নদী- পায়রা, বিষখালী ও বলেশ্বরের জল মোহনার সাগরে মিশে যাওয়ার স্নিগ্ধ বেলাভূমির বালুচর শুভসন্ধ্যা। যার একদিকে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট সুন্দরবন অপরদিকে সীমাহীন বঙ্গোপসাগর।
সাগরঘেঁষা নয়নাভিরাম এই সৈকতটি তালতলী উপজেলার নিশানবাড়িয়া ইউনিয়নের নলবুনিয়া এলাকায় অবস্থিত হওয়ায় স্থানীয়দের কাছে এটি নলবুনিয়া চর নামে পরিচিত। এ চরের বনাঞ্চল প্রায় ১০ কিলোমিটার।
২০০৬ সালে ৫৮ হেক্টর জমিতে এখানে নন ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল গড়ে তোলে বন বিভাগ। ঝাউগাছ, খইয়্যা বাবলা, মাউন্ট, আকাশমনি, অর্জুন, কালি বাবলা, কড়ই, খয়ের ও বাদামসহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছ রয়েছে এখানে।
বিস্তীর্ণ বেলাভূমির এই বনাঞ্চলের সাগর প্রান্তে দাঁড়িয়ে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত দুটোই উপভোগ করা যায়।
সুরঞ্জনা
ইকোট্যুরিজমের উন্নয়নের লক্ষে সম্প্রতি বরগুনা সদর উপজেলার ঢলুয়া ইউনিয়নের বরইতলা সংলগ্ন বিষখালী ও খাকদোন নদীর মোহনায় গড়ে তোলা হয়েছে সুরঞ্জনা নামে একটি ইকোপার্ক। ভ্রমণপিপাসু বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ কমবেশি প্রতিদিনই এখানে বেড়াতে আসেন।
এখানে রয়েছে প্রাণ-প্রকৃতির অবাধ বিচরণ। ছৈলা, গোলপাতা, কেওড়াসহ নানা ধরনের বনজ বৃক্ষে ঘেরা দৃষ্টিনন্দন এই ইকোপার্কের মাঝখানে বসানো হয়েছে বিশালাকারের কুমির ও কাঁকড়ার অবয়ব।
বাঘ, সিংহ, হরিণ, বক, জিরাফসহ বেশকিছু জীবজন্তুর অবয়বও বয়েছে এখানে।
এ ছাড়াও এখানকার জল ও স্থলে পাখি, বেজি, শিয়াল, কাঁঠবিড়ালি, গুইসাপ, কাকড়া, গিরগিটিসহ নানা প্রাণির দেখা মিলবে।
যেভাবে যাবেন-
পর্যটকরা সাধারণত নৌ ও স্থলপথেই বরগুনা আসেন। ঢাকা থেকে বিকেল ৫টায় বরগুনার উদ্দেশে লঞ্চ ছেড়ে যায়। এ ছাড়া গাবতলী ও সায়েদাবাদ থেকে আসা যাবে বাসেও। সকাল ৮টার মধ্যে লঞ্চ বরগুনা পৌঁছাবে। আর পদ্মা সেতু হয়ে বাসে লাগবে মাত্র ৬ ঘন্টা।
বরগুনা শহরে স্বল্প খরচে আবাসিক হোটেল, ডাকবাংলো, এনজিওর রেস্টহাউস পাওয়া যায়। তাই বরগুনা পৌর শহরে পৌঁছে যেকোনো একটিতে রুম নিয়ে ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে পড়ুন ভ্রমণের উদ্দেশ্যে।
প্রথমেই বরগুনা পৌরসভার সামনে থেকে আটোরিকশা রিজার্ভ করে কিংবা মোটরসাইকেল ভাড়া নিয়ে চলে যাবেন কাঙ্ক্ষিত গন্তব্য সুরঞ্জনা ইকোপার্কে।
সুরঞ্জনায় ঘোরাঘুরির পর শুভসন্ধ্যায় যেতে প্রথমে তালতলীর উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাওয়া যানবাহন ও ট্রলারে যাবেন তালতলী সদরে। সেখান থেকে ভ্যান, রিকশা বা মোটরসাইকেল ভাড়া নিয়ে সোজা কাঙ্খিত শুভসন্ধ্যায়।
বরগুনায় রাত কাটানোর পরদিন বিকেল ৩টার লঞ্চে কিংবা সন্ধ্যা বা রাতে বাসে ফিরতে পারবেন ঢাকায়।
মহিউদ্দিন অপু/ইসরাত চৈতী/অমিয়/