সাজ সাজ রব নওগাঁর ঐতিহাসিক ও প্রকৃতিক নিদর্শন, যাদুঘর, দর্শনীয় ও বিনোদনকেন্দ্রগুলোতে। জেলার পাহাড়পুরে অবস্থিত যাদুঘর ও ঐহিতাসিক সোমপুর বিহারের আঙ্গিনায় এবার ঈদের ছুটিতে প্রায় আড়াই লাখ মানুষের আগমন ঘটবে বলে আশা করছেন কর্তৃপক্ষ।
এছাড়া কুসুম্বা শাহি মসজিদ, আলতাদিঘি শালবন, পতিসর বরীন্দ্র কাচারি বাড়ি, ঘুঘুডাঙা তাল সড়ক ও জবই বিলে প্রতিদিন লাখো দর্শনার্থীর আগম ঘটবে। বাড়তি চাপ সামাল দিতে প্রস্তুতি গ্রহনের কথা জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
পাহাড়পুর:
ধর্মীয় উৎসব বিশেষ করে ঈদ, দূর্গাপূজা এবং সরকারি ছুটির দিনে পাহাড়পুর যাদুঘর ও বৌদ্ধ বিহারে স্বভাবিকের চেয়ে কয়েকগুন দর্শনার্থী বাড়ে। ইতোপূর্বে ঈদুল ফিতরে সবচেয়ে বেশি মানুষের সমাগম দেখা গেছে। আশেপাশের এলাকার মানুষ ছাড়াও দেশের প্রায় সব প্রান্তের বিনোদনপ্রেমীরা ঈদে ছুটে আসেন বিহার ও যাদুঘরে। বিদেশি পর্যটকদের আগমনও বাড়ে। এ জন্য কর্তৃপক্ষকে আগে থেকেই বাড়তি প্রস্তুতি নিতে হয়।
ঈদ সামনে রেখে এবারও যাদুঘরের ভেতরের মূল্যবান ঐতিহাসিক নিদর্শনসমূহ নতুন করে সাজানো হচ্ছে। এছাড়া বিহার ও যাদুঘরের প্রতিটি স্থানে ধোয়া মোছা ও রঙয়ের প্রলেপ দেওয়া হয়েছে। রেস্টহাউস, ফুলের বাগান, পিকনিক ও পার্কিং এরিয়াগুলো আগের চেয়ে আরও গোছানো ও সৌন্দর্য বর্ধন করা হয়েছে।
প্রত্নত্ত্ব বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, এবার ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ১০ থেকে ১৪ তারিখ পর্যন্ত মোট চার দিন সরকারি ছুটি। কিন্তু ঈদের দিন থেকে অন্তত এক সপ্তাহ জুড়ে দর্শনার্থীর আগমনে মুখর থাকবে পাহাড়পুর। আগতদের বিনোদন নির্বিঘ্ন করতে কয়েক দফায় স্থানীয় বাসিন্দা বা অংশীজন, প্রশাসনের কর্মকর্তা, থানা পুলিশ ও ট্যুরিস্ট পুলিশের কর্মকর্তা এবং সংশ্লিষ্ট অন্যান্য বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ।
যেহেতু দর্শনার্থীর উপচেপড়া ভিড় হবে তাই নিরাপত্তা জোরদার করতে যাদুঘরের পাশাপাশি বিহার অংশে নতুন করে আরও ৫০টি সিসি ক্যামেরা বসানো হয়েছে। প্রবেশপথগুলো ছাড়াও গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলো ক্যামেরার আওতায় আনা হয়েছে। ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজ সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ করা হবে। এছাড়া বিহারের প্রতিটি প্রান্তে নিরাপত্তাকর্মীরা আগতদের সহযোগিতা করতে প্রস্তুত থাকবে।
কুসম্বা শাহি মসজিদ:
ঈদুল ফিতরের নামাজ আদায় করতে হাজারো মুসল্লি সকাল থেকেই ভিড় করেন মান্দা ঐতিহাসিক কুসম্বা শাহি মসজিদে। মসজিদের ভেতরে ও বাইরে মিলিয়ে নামাজ আদায় করা হয়। এখানে তিন থেকে চারটি জামাত অনুষ্ঠিত হয়।
মুসল্লিরা জানান, প্রায় সাড়ে ৪০০ বছর আগে সুলতানি আমলে নির্মিত কুসুম্বা শাহি মসজিদ। ঈদের ছুটিতে ঐতিহাসিক এই মসজিদে নামাজ আদায় করতে এবং সৌন্দর্য দেখতে প্রতিদিন অন্তত পাঁচ থেকে সাত হাজার মানুষ আসেন।
স্থানীয় সংসদ সদস্য ব্রুহানী সুলতান গামা বলেন, পাঁচ টাকার নোটে মুদ্রিত কুসুম্বা মসজিদে আগত দর্শনার্থীদের সুবিধা বাড়ানো হয়েছে। নিরাপত্তা জোড়দার করতে এ বছর নতুন করে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের আনসার সদস্য, পুলিশ ও গ্রামপুলিশ নিয়োজিত রাখা হয়েছে।
আলতাদিঘি শালবন:
নওগাঁর ধামইরহাট উপজেলায় অবস্থিত বিশাল আকৃতির ঐতিহাসিক দীঘি ও প্রাকৃতিক শালবন ঘিরে বিনোদনকেন্দ্র। সুযোগ পেলেই বিনোদন ও প্রকৃতিপ্রেমীরা ছুটে আসনে এই বন দেখতে। ঈদে মানুষের ভিড় বাড়বে অন্তত ১০ গুন। পাশের জয়পুরহাট, বগুড়া, গাইবান্ধাসহ বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষের আগম ঘটে আলতাদীঘি শালবনে। তাই বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
পতিসর:
নওগাঁর আত্রাই উপজেলার মনিয়ারী ইউনিয়নে অবস্থিত বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নিজস্ব জমিদারি কালী গ্রামের কাচারি বাড়ি পতিসর। এবার ঈদের কদিন পরেই ২৫ বৈশাখ কবির জন্মোৎসব। তাই এখন থেকেই দর্শনার্থীর সামাল দেওয়ার প্রস্ততি চলছে।
তাল সড়ক ও জবই বিল:
জেলার নিয়ামতপুরের ঘুঘুডাঙা তালসড়ক ও সাপাহার উপজেলার জবই বিলে ঈদের ছুটিতে বিনোদনপ্রেমীদের উপচেপড়া ভিড় থাকে। দেশের নানা প্রান্তের মানুষ ছুটে আসেন বরেন্দ্র অঞ্চলের মুগ্ধতা ছড়ানো ঐতিহাসিক প্রকৃতিক ও দর্শনীয় স্থানগুলোতে। তাই ঈদের দিন ঘনিয়ে আসতেই সাজসাজ রব পড়েছে ওই এলাকাগুলোতে।
প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের কর্মকর্তা পাহাড়পুর যাদুঘর ও বৌদ্ধ বিহারের কাস্টোডিয়ান ফজলুল হক আরজু খবরের কাগজকে জানান, আবহাওয়া ভাল থাকলে ঈদের দিন থেকেই কুসম্বা মসজিদে প্রচুর মানুষের আগমন ঘটবে। পাহাড়পুরে প্রতিদিন ৩০ থেকে ৩৫ হাজার দর্শনার্থীর সমাগম ঘটবে। সরকারি ছুটির দিনগুলোতে ভ্রমণপিপাসু ও বিনোদনপ্রেমীদের আগমনে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এসব স্থানে নিযোজিতদের দম ফেলার সময় থাকে না। সপ্তাহ খানেক পর থেকে ভিড় কমতে শুরু করে।
তিনি বলেন, ঈদের মৌসুমে এবার কুসুম্বা মসজিদ, পাহাড়পুর যাদুঘর, বিহার ও অন্যান্য দর্শনীয় স্থানগুলো মিলিয়ে প্রায় ১০ লাখ দর্শনার্থীর আগম ঘটবে। আর শুধু পাহাড়পুর বিহারের আঙ্গিনাতেই ১৫ দিনে পা পড়বে অন্তত আড়াই লাখ দর্শনার্থীর।
তিনি আরও বলেন, দূরের ও বিদেশি পর্যটকদের জন্য কুসুম্বা মসজিদের পাশে একটি ও পাহাড়পুর বিহার এলাকায় নতুন করে আরও একটি রেস্টহাউস প্রস্তুত করা হয়েছে। ঐতিহাসিক নিদর্শনগুলোর ইতিহাস ছড়িয়ে দিতে প্রত্ন নিদর্শন ও গবেষকদের লেখা, পত্রিকা, বই ও পুস্তিকা পাহাড়পুর যাদুঘরে সংরক্ষিত আছে। আগতরা বিহারের সৌন্দর্য উপভোগের পাশাপাশি সহজেই নিদর্শনগুলোর ঐতিহাসিক পটভূমি ও গুরুত্ব জানতে পারবেন।
নওগাঁর পুলিশ সুপার মুহাম্মদ রাশিদুল হক বলেন, নওগাঁ জেলা প্রাকৃতিক ও প্রত্নতত্ত্বসম্পদে ভরপুর। মান্দা কুসুম্বা শাহি মসজিদ, পাহাড়পুর যাদুঘর ও সোমপুর বিহারসহ ঐতিহাসিক নিদর্শন ও বিনোদনকেন্দ্র এলাকাগুলোতে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। ঈদের আগে থেকেই পোশাকধারী থানা পুলিশ ও ট্যুরিস্ট পুলিশের পাশাপাশি সাদা পোশাকে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। সড়কগুলোতেও যাতে কেউ চাঁদাবাজি ও বিশৃঙ্খলা করতে না পারে সেদিকে কড়া নজর দেওয়া হয়েছে।
নওগাঁর জেলা প্রশাসক মো. গোলাম মওলা জানান, ঈদে বিনোদনকেন্দ্রগুলোতে মানুষের উপস্থিতি কয়েকগুন বাড়বে। সেদিকে খেয়াল রেখে জেলা আইনশৃঙ্খলা ও সমন্বয় সভায় বেশ কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। পদক্ষেপগুলোর মধ্যে সড়কে নিরাপত্তা ও দূর্ঘটনারোধে একাধিক স্থানে চেকপোস্ট বাসানো হবে। বিনোদনকেন্দ্র ও দর্শনীয় স্থানগুলোতে মানুষের নিরাপত্তা দিতে পুলিশ ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সার্বক্ষনিক মাঠে কাজ করবে।
শফিক ছোটন/অমিয়/