কত উপলক্ষই তো মানুষকে পর্যটন করতে হয়। তবে উপলক্ষটা যদি হয় মুসলমানদের সবচেয়ে আনন্দময় উৎসব ঈদ, তাহলে তো কথাই নেই। ঈদ উপলক্ষে দুই ধরনের পর্যটন ঘটে। এর মধ্যে এক ধরনের পর্যটন হচ্ছে বাড়ি যাওয়া। সামাজিক ও পারিবারিক বন্ধনের কারণে সবাই পরিবার-পরিজন নিয়ে এই আনন্দ একসঙ্গে উপভোগ করতে চায়। আর সে কারণে মানুষ ছুটে যায় কর্মস্থল থেকে নাড়ির টানে, জন্মস্থানে কিংবা প্রিয়জনদের কাছে। আর ঈদের সময় কম দূরত্বের পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে মানুষ ছুটে যায় সামান্য বিনোদনের আশায়।
ঈদের সময় আরেক ধরনের পর্যটন ঘটে- ঘুরতে যাওয়া। এই ঘুরতে যাওয়া পর্যটন আবার দুই রকমের। অভ্যন্তরীণ এবং আন্তর্জাতিক। ঈদকে কেন্দ্র করে দেশের উল্লেখযোগ্য পর্যটন কেন্দ্রগুলো নতুন সাজে সেজে ওঠে পর্যটকদের আশায়। ঈদের আনন্দকে আরও উপভোগ করার জন্য মানুষও এখন দূরের পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে ছুটতে শুরু করেছেন। দেশের অভ্যন্তরের কক্সবাজার, রাঙামাটি, সাজেক, কুয়াকাটা, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা ইত্যাদি জায়গাগুলোয় পর্যটকদের সমাগম হয় বিপুল পরিমাণে। এই অভ্যন্তরীণ পর্যটনে সাধারণত নিম্নমধ্যবিত্ত শ্রেণিকেই বেশি দেখা যায়।
বৃহত্তর সিলেট অঞ্চলের পর্যটন আকর্ষণ কেন্দ্রগুলোর নৈসর্গিক সৌন্দর্যের জন্য বিভিন্ন চা বাগানসহ জাফলং, লালাখাল, বিছনাকান্দি, পাংথুমাই ঝরনা, সোয়াফ ফরেস্ট, রাতারগুল, হাকালুকি, কানাইঘাটে ছুটে যান তারা। বগুড়ার মহাস্থানগড়, বৌদ্ধবিহার, ষাটগম্বুজ মসজিদ, লালবাগ কেল্লা, আহসান মঞ্জিল, পানামনগর, সোনারগাঁ, বড় কাটরা, ছোট কাটরাসহ প্রত্নতাত্তিক পর্যটনকেন্দ্রগুলোতেও পর্যটকের সমাগম বাড়ে।
আর্থিকভাবে আরেকটু সুবিধাজনক অবস্থায় যারা আছেন, তারা আন্তর্জাতিক পর্যটক হিসেবে নাম লেখান। তাদের গন্তব্য দেশের আশপাশে- ভারত, নেপাল, শ্রীলংকা, ভুটান এসব দেশ। এরপর উচ্চবিত্ত বা ধনীদের জন্য তো পুরো দুনিয়াই খোলা। অনেকেই ঈদ উপলক্ষে ছুটে যান পৃথিবীর নানা প্রান্তে। থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, দুবাই, মালয়েশিয়া, মিসর, ইউরোপ, অস্ট্রেলিয়াসহ ঐতিহাসিক ও গুরুত্বপূর্ণ জায়গাগুলোতে ঘুরতে চলে যান তারা।
দেশের পর্যটন খাতে ঈদ মৌসুম একটি বাড়তি মাত্রা যোগ করেছে নিঃসন্দেহে। এই বাড়তি মাত্রাকে পুরোদস্তুর কাজে লাগানোর ব্যবস্থা করতে হবে। দেশের পর্যটনকেন্দ্রগুলো নিয়ে মানুষের অভিযোগের কমতি নেই। এ সময় হোটেল ভাড়া থেকে শুরু করে, খাবার, যানবাহনসহ নানান সেবার দাম বাড়িয়ে দেওয়া হয়। যেটা পর্যটকদের জন্য খুবই অস্বস্তিকর অবস্থা তৈরি করে। এমনকি এটাও দেখা যায়, দেশের সবচেয়ে বড় পর্যটনকেন্দ্র কক্সবাজারে পর্যটকদের উপচে পড়া ভিড়ের কারণে ভয়ংকর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। হোটেলে থাকার মতো জায়গা নেই, খাবার নেই- পর্যটন ব্যবস্থাপনার দুর্বলতার চিত্র এটি। এরকম দুর্বলতা দেশের পর্যটনে হরহামেশাই চোখে পড়ে। পর্যটন উন্নয়নে, বিশেষ করে ঈদ মৌসুমে পর্যটন থেকে সর্বোচ্চ সুবিধা পেতে পর্যটন ব্যবস্থাপনার উন্নতি ঘটানোর বিকল্প নেই। ঈদ মৌসুমে পর্যটকদের আস্থা অর্জন করতে পারলে, দেশের অর্থনীতি যেমন সমৃদ্ধ হবে, তেমনি শৃঙ্খলা তৈরি করতে পারলে আরও বেশি দেশি পর্যটককে অভ্যন্তরীণ পর্যটনে আগ্রহী করে তোলা যাবে। শুধু তাই নয়, বিদেশি পর্যটকরাও তখন বাংলাদেশের প্রতি আরও বেশি আগ্রহী হয়ে এ দেশ ভ্রমণে চলে আসতে পারেন। ট্যুর অপারেটিং প্রতিষ্ঠান, দেশের পর্যটন করপোরেশন, পর্যটন পুলিশসহ সবার সম্মিলিত উদ্যোগ দেশের পর্যটনশিল্পকে এগিয়ে নিতে পারে অনেক দূর। এর পাশাপাশি দেশের উল্লেখযোগ্য পর্যটন আকর্ষণগুলো চিহ্নিত করে, পর্যটনকেন্দ্রগুলোয় আধুনিক সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করে, অবকাঠামো উন্নয়ন, স্থানীয় জনগোষ্ঠীকে সম্পৃক্ত করে, স্থানীয় প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন ও বিষয়কে ব্র্যান্ডিংয়ের মাধ্যমে দেশি ও বিদেশি পর্যটক আকর্ষণ করা সহজ হবে। আর সেটা ঈদ মৌসুমকে ঘিরে হলে তো কথাই নেই। দেশের মানুষও নিশ্চিন্তে এবং আরও ভালোভাবে ঈদ আনন্দ উপভোগ করার সুযোগ পাবেন।
জাহ্নবী