ঢাকা ১ শ্রাবণ ১৪৩২, বুধবার, ১৬ জুলাই ২০২৫
English

ঈদ পর্যটন

প্রকাশ: ০৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১:৫৭ এএম
ঈদ পর্যটন

কত উপলক্ষই তো মানুষকে পর্যটন করতে হয়। তবে উপলক্ষটা যদি হয় মুসলমানদের সবচেয়ে আনন্দময় উৎসব ঈদ, তাহলে তো কথাই নেই। ঈদ উপলক্ষে দুই ধরনের পর্যটন ঘটে। এর মধ্যে এক ধরনের পর্যটন হচ্ছে বাড়ি যাওয়া। সামাজিক ও পারিবারিক বন্ধনের কারণে সবাই পরিবার-পরিজন নিয়ে এই আনন্দ একসঙ্গে উপভোগ করতে চায়। আর সে কারণে মানুষ ছুটে যায় কর্মস্থল থেকে নাড়ির টানে, জন্মস্থানে কিংবা প্রিয়জনদের কাছে। আর ঈদের সময় কম দূরত্বের পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে মানুষ ছুটে যায় সামান্য বিনোদনের আশায়।

ঈদের সময় আরেক ধরনের পর্যটন ঘটে- ঘুরতে যাওয়া। এই ঘুরতে যাওয়া পর্যটন আবার দুই রকমের। অভ্যন্তরীণ এবং আন্তর্জাতিক। ঈদকে কেন্দ্র করে দেশের উল্লেখযোগ্য পর্যটন কেন্দ্রগুলো নতুন সাজে সেজে ওঠে পর্যটকদের আশায়। ঈদের আনন্দকে আরও উপভোগ করার জন্য মানুষও এখন দূরের পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে ছুটতে শুরু করেছেন। দেশের অভ্যন্তরের কক্সবাজার, রাঙামাটি, সাজেক, কুয়াকাটা, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা ইত্যাদি জায়গাগুলোয় পর্যটকদের সমাগম হয় বিপুল পরিমাণে। এই অভ্যন্তরীণ পর্যটনে সাধারণত নিম্নমধ্যবিত্ত শ্রেণিকেই বেশি দেখা যায়।

বৃহত্তর সিলেট অঞ্চলের পর্যটন আকর্ষণ কেন্দ্রগুলোর নৈসর্গিক সৌন্দর্যের জন্য বিভিন্ন চা বাগানসহ জাফলং, লালাখাল, বিছনাকান্দি, পাংথুমাই ঝরনা, সোয়াফ ফরেস্ট, রাতারগুল, হাকালুকি, কানাইঘাটে ছুটে যান তারা। বগুড়ার মহাস্থানগড়, বৌদ্ধবিহার, ষাটগম্বুজ মসজিদ, লালবাগ কেল্লা, আহসান মঞ্জিল, পানামনগর, সোনারগাঁ, বড় কাটরা, ছোট কাটরাসহ প্রত্নতাত্তিক পর্যটনকেন্দ্রগুলোতেও পর্যটকের সমাগম বাড়ে।

পানাম নগর

আর্থিকভাবে আরেকটু সুবিধাজনক অবস্থায় যারা আছেন, তারা আন্তর্জাতিক পর্যটক হিসেবে নাম লেখান। তাদের গন্তব্য দেশের আশপাশে- ভারত, নেপাল, শ্রীলংকা, ভুটান এসব দেশ। এরপর উচ্চবিত্ত বা ধনীদের জন্য তো পুরো দুনিয়াই খোলা। অনেকেই ঈদ উপলক্ষে ছুটে যান পৃথিবীর নানা প্রান্তে। থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, দুবাই, মালয়েশিয়া, মিসর, ইউরোপ, অস্ট্রেলিয়াসহ ঐতিহাসিক ও গুরুত্বপূর্ণ জায়গাগুলোতে ঘুরতে চলে যান তারা।

দেশের পর্যটন খাতে ঈদ মৌসুম একটি বাড়তি মাত্রা যোগ করেছে নিঃসন্দেহে। এই বাড়তি মাত্রাকে পুরোদস্তুর কাজে লাগানোর ব্যবস্থা করতে হবে। দেশের পর্যটনকেন্দ্রগুলো নিয়ে মানুষের অভিযোগের কমতি নেই। এ সময় হোটেল ভাড়া থেকে শুরু করে, খাবার, যানবাহনসহ নানান সেবার দাম বাড়িয়ে দেওয়া হয়। যেটা পর্যটকদের জন্য খুবই অস্বস্তিকর অবস্থা তৈরি করে। এমনকি এটাও দেখা যায়, দেশের সবচেয়ে বড় পর্যটনকেন্দ্র কক্সবাজারে পর্যটকদের উপচে পড়া ভিড়ের কারণে ভয়ংকর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। হোটেলে থাকার মতো জায়গা নেই, খাবার নেই- পর্যটন ব্যবস্থাপনার দুর্বলতার চিত্র এটি। এরকম দুর্বলতা দেশের পর্যটনে হরহামেশাই চোখে পড়ে। পর্যটন উন্নয়নে, বিশেষ করে ঈদ মৌসুমে পর্যটন থেকে সর্বোচ্চ সুবিধা পেতে পর্যটন ব্যবস্থাপনার উন্নতি ঘটানোর বিকল্প নেই। ঈদ মৌসুমে পর্যটকদের আস্থা অর্জন করতে পারলে, দেশের অর্থনীতি যেমন সমৃদ্ধ হবে, তেমনি শৃঙ্খলা তৈরি করতে পারলে আরও বেশি দেশি পর্যটককে অভ্যন্তরীণ পর্যটনে আগ্রহী করে তোলা যাবে। শুধু তাই নয়, বিদেশি পর্যটকরাও তখন বাংলাদেশের প্রতি আরও বেশি আগ্রহী হয়ে এ দেশ ভ্রমণে চলে আসতে পারেন। ট্যুর অপারেটিং প্রতিষ্ঠান, দেশের পর্যটন করপোরেশন, পর্যটন পুলিশসহ সবার সম্মিলিত উদ্যোগ দেশের পর্যটনশিল্পকে এগিয়ে নিতে পারে অনেক দূর। এর পাশাপাশি দেশের উল্লেখযোগ্য পর্যটন আকর্ষণগুলো চিহ্নিত করে, পর্যটনকেন্দ্রগুলোয় আধুনিক সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করে, অবকাঠামো উন্নয়ন, স্থানীয় জনগোষ্ঠীকে সম্পৃক্ত করে, স্থানীয় প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন ও বিষয়কে ব্র্যান্ডিংয়ের মাধ্যমে দেশি ও বিদেশি পর্যটক আকর্ষণ করা সহজ হবে। আর সেটা ঈদ মৌসুমকে ঘিরে হলে তো কথাই নেই। দেশের মানুষও নিশ্চিন্তে এবং আরও ভালোভাবে ঈদ আনন্দ উপভোগ করার সুযোগ পাবেন।

জাহ্নবী

বাংলাদেশ জাতীয় চিড়িয়াখানা প্রকৃতি ও প্রাণীর এক অপূর্ব মিলনমেলা

প্রকাশ: ১১ জুলাই ২০২৫, ০২:০০ পিএম
প্রকৃতি ও প্রাণীর এক অপূর্ব মিলনমেলা
বাংলাদেশ জাতীয় চিড়িয়াখানায় সিংহ।

প্রাণী ও প্রকৃতির প্রতি ভালোবাসা মানবজাতির চিরন্তন এক অনুভব। শহরের যান্ত্রিক কোলাহল ও কৃত্রিমতার ভিড়ে দাঁড়িয়ে এই অনুভবকে একটু ছুঁয়ে দেখার সুযোগ করে দেয় বাংলাদেশ জাতীয় চিড়িয়াখানা। ঢাকার মিরপুরে অবস্থিত চিড়িয়াখানাটি শুধু শিশু-কিশোরদের বিনোদনের জায়গা নয়, বরং সব বয়সী মানুষের জ্ঞানের ভাণ্ডার।
১৯৭৪ সালের ২৩ জুন আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করা বাংলাদেশ জাতীয় চিড়িয়াখানা বর্তমানে প্রায় ৭৫ একর জায়গাজুড়ে বিস্তৃত। এখানে প্রায় ২০০ প্রজাতির ৩ হাজারেরও বেশি প্রাণী রয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে নানা ধরনের স্তন্যপায়ী, পাখি, সরীসৃপ ও জলজ প্রাণী। বিভিন্ন প্রজাতির বাঘ, সিংহ, হাতি, জিরাফ, হরিণ, কুমির, সাপ ও বিদেশি পাখি- সবকিছু মিলিয়ে এটি যেন এক ছোট্ট পৃথিবী, যেখানে প্রকৃতি নিজেই তার রং ও রূপে ধরা দিয়েছে।
চিড়িয়াখানায় প্রবেশ করেই চোখে পড়ে পরিচ্ছন্ন ও সবুজে ঘেরা পথ। পথের দুই পাশে ছায়াদার গাছ আর ফুলের সৌন্দর্য দর্শনার্থীদের স্বাগত জানায়। শিশুদের জন্য রয়েছে আলাদা খেলার জায়গা, যেখানে তারা মুক্তভাবে দৌড়াতে ও খেলতে পারে। পরিবার নিয়ে যারা আসেন, তাদের জন্যও রয়েছে বসার জায়গা ও খাবারের আয়োজন। প্রতিটি খাঁচার সামনে প্রাণীদের সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্যসংবলিত বোর্ড থাকায় শিক্ষার্থীরা শুধু বিনোদনই নয়, শিক্ষাও গ্রহণ করতে পারে।
সবচেয়ে আকর্ষণীয় অংশ হলো বাঘ ও সিংহের খাঁচা। এই দুই প্রাণীর কর্মকাণ্ডে শিশুদের মনে রীতিমতো বিস্ময়ের সৃষ্টি করে। এ ছাড়া জিরাফ, জেব্রা ও উটের মতো দূরদেশীয় প্রাণী দেখা যায় কাছ থেকে। পাখিদের খাঁচায় রঙিন টিয়া, ময়না, হর্নবিল বা ম্যাকাও পাখির ঝাঁক যেন এক স্বপ্নপুরীর ছবি আঁকে। কুমিরের পুকুর, অজগরের কাচ ঘেরা ঘর কিংবা উন্মুক্ত হরিণ প্রাঙ্গণ- সবই দর্শনার্থীদের মনোমুগ্ধ করে।
বাংলাদেশ জাতীয় চিড়িয়াখানা শুধু বিনোদনের মাধ্যম নয়; এটি গবেষণা ও সংরক্ষণের ক্ষেত্র হিসেবেও গুরুত্বপূর্ণ। বিরল প্রজাতির প্রাণী সংরক্ষণ ও প্রজননের মাধ্যমে প্রাণবৈচিত্র্য রক্ষায় এর ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। এখানকার প্রাণীদের নিয়মিত চিকিৎসা ও পরিচর্যার মধ্য দিয়ে সুস্থ রাখা হয়। চিড়িয়াখানায় রয়েছে প্রাণী চিকিৎসাকেন্দ্র ও প্রশিক্ষিত কর্মীবাহিনী, যারা প্রতিদিন প্রাণীদের পরিচর্যায় নিয়োজিত।
এখানে শিক্ষার্থীদের জন্য নিয়মিত শিক্ষা সফরের আয়োজন করা হয়। অনেক বিদ্যালয় ও কলেজ থেকে শিক্ষার্থীরা এখানে এসে জীববিজ্ঞানের পাঠ বাস্তবে দেখতে পায়, যা শ্রেণিকক্ষের বাইরে এক বাস্তব অভিজ্ঞতা হয়ে ওঠে। এ ছাড়া আলোকচিত্রপ্রেমীদের জন্যও এটি একটি দারুণ গন্তব্য।
তবে কিছু সীমাবদ্ধতার কথাও বলতে হয়। অনেক সময় কিছু খাঁচা অপরিষ্কার থাকে, কিছু তথ্য বোর্ড ধোঁয়াশা বা পুরোনো হয়ে যায়। পর্যাপ্ত বিশ্রামাগার বা পানির ব্যবস্থা না থাকাও মাঝে মাঝে সমস্যার সৃষ্টি করে। দর্শনার্থীদের জন্য উন্নত দিকনির্দেশনা ও পরিচ্ছন্নতার বিষয়ে কর্তৃপক্ষ যদি মনোযোগ দেয়, তবে দর্শকসংখ্যা আরও বাড়বে।
সব মিলিয়ে, বাংলাদেশ জাতীয় চিড়িয়াখানা একটি এমন স্থান যেখানে মানুষ প্রকৃতির সৌন্দর্য ও নানা প্রাণীকে কাছ থেকে দেখতে পারে। এটি আমাদের পরিবেশ ও প্রাণিকুল সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। পরিবারের সঙ্গে একটি আনন্দময় দিন কাটানোর পাশাপাশি শিশুদের শেখার একটি চমৎকার জায়গা এই চিড়িয়াখানা। সময় সুযোগ করে একবার ঘুরে আসা যেতে পারে প্রকৃতি ও প্রাণীর এই মিলনমেলায়।

যেভাবে যাবেন
ঢাকার মিরপুরে অবস্থিত বাংলাদেশ জাতীয় চিড়িয়াখানায় যাওয়ার জন্য বিভিন্ন পরিবহন ব্যবস্থা রয়েছে। প্রথমেই আসি মেট্রোরেলের কথায়। যেকোনো স্টেশন থেকে যাত্রা শুরু করে মিরপুর-১০ বা মিরপুর-১১ স্টেশনে নামতে হবে। সেখানে থেকে চিড়িয়াখানার প্রবেশদ্বার মাত্র দুই থেকে তিন কিলোমিটার দূরে। সিএনজি অটোরিকশা অথবা রিকশায় করে সহজেই পৌঁছানো যাবে। 
চাইলে লোকাল বাসেও যাওয়া যায়। যাত্রাবাড়ী, গাবতলী বা শাহবাগ থেকে মিরপুর চিড়িয়াখানায় যাওয়ার বাস পাওয়া যায়। বাস থামে চিড়িয়াখানা বাসস্ট্যান্ডে। এ ছাড়া রাইড শেয়ারে অর্থাৎ উবার-পাঠাওয়ে সহজেই চিড়িয়াখানায় যাওয়া যায়।

সতর্কতা 
বাংলাদেশ জাতীয় চিড়িয়াখানায় ভ্রমণের সময় নিরাপত্তা, পরিবেশ রক্ষা ও প্রাণীদের সুস্থতার স্বার্থে কিছু গুরুত্বপূর্ণ সতর্কতা মেনে চলা প্রয়োজন। যেমন-
○ প্রাণীদের খাঁচায় কিছু ফেলবেন না: খাবার, বোতল, কাগজ বা কোনো বর্জ্য প্রাণীদের ক্ষতি করতে পারে।
○ প্রাণীদের উত্ত্যক্ত করা বা ভয় দেখাবেন না: চিৎকার, পাথর ছুড়ে মারা বা লাঠি দিয়ে খোঁচানো নিষেধ।
○ খাঁচার খুব কাছে বা ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করবেন না: নিরাপত্তার জন্য নির্ধারিত দূরত্ব বজায় রাখা বাধ্যতামূলক।
○ নিজস্ব খাবার প্রাণীদের খাওয়াবেন না: চিড়িয়াখানার প্রাণীরা নির্দিষ্ট খাদ্যতালিকা অনুসারে খাবার পায়।
○ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখুন: নির্ধারিত ডাস্টবিনে ময়লা ফেলুন; পরিবেশ স্বাস্থ্যসম্মত রাখতে সহায়তা করুন।
○ শিশুদের চোখে চোখে রাখুন: শিশুরা যাতে খাঁচার বেশি কাছে না যায় বা প্রাণীদের বিরক্ত না করে, তা নিশ্চিত করুন।
○ নির্ধারিত পথ অনুসরণ করুন: নিরাপত্তা নিশ্চিতে ও সময় বাঁচাতে মূল পথ বা নির্দেশনা মেনে চলুন।
○ প্রয়োজনে গাইড বা নিরাপত্তাকর্মীদের সাহায্য নিন: কোনো বিপত্তি বা জরুরি পরিস্থিতিতে দ্বিধা না করে সহায়তা নিন।
○ প্রাণীদের ছবি তুললেও ফ্ল্যাশ ব্যবহার করবেন না: ক্যামেরার ফ্ল্যাশ অনেক প্রাণীর জন্য ক্ষতিকর। এটা দেখে তারা উত্তেজিত হয়ে যেতে পারে।
○ চিড়িয়াখানার নিয়মকানুন মেনে চলুন: প্রবেশপত্রের পেছনে বা প্রবেশদ্বারে লেখা নিয়মাবলি ভালোভাবে পড়ে অনুসরণ করুন।
○ ধূমপান ও আগুন জ্বালানো নিষিদ্ধ: এটি প্রাণীদের জন্য অত্যন্ত বিপজ্জনক এবং আইনত দণ্ডনীয়।
○ রাস্তায় দৌড়াদৌড়ি এড়িয়ে চলুন: অন্য দর্শনার্থীদের বিরক্ত না করে শান্ত পরিবেশ বজায় রাখুন।

সমুদ্রপাড়ে শুরু হচ্ছে ডিসকোর্স বাই দ্য শোর: ট্যুরিজম আর্কিটেকচার সামিট

প্রকাশ: ০৭ জুলাই ২০২৫, ১০:১৩ এএম
সমুদ্রপাড়ে শুরু হচ্ছে ডিসকোর্স বাই দ্য শোর: ট্যুরিজম আর্কিটেকচার সামিট
ছবি: খবরের কাগজ

বিশ্বের সবচেয়ে বড় সমুদ্রসৈকতের নগরী কক্সবাজারে প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে দুই দিনব্যাপী ‘ডিসকোর্স বাই দ্য শোর: ট্যুরিজম আর্কিটেকচার সামিট-২০২৫’।

আগামী ১১ জুলাই কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের প্যাঁচার দ্বীপ সৈকতের পরিবেশবান্ধব মারমেইড বিচ রিসোর্টে এই সম্মেলন শুরু হবে। শেষ হবে ১২ জুলাই। এই সম্মেলনে মূলত পরিবেশবান্ধব পর্যটন এবং জলবায়ু নিয়ে আলোচনা করা হবে।

সম্মেলনের আয়োজক প্রতিষ্ঠান মারমেইড বিচ রিসোর্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আনিসুল হক চৌধুরী জানিয়েছেন, সম্মেলনে উপকূলীয়, সাংস্কৃতিক এবং টেকসই প্রসঙ্গে কাজ করা স্থপতিরা অংশ নেবেন। তারা পর্যটননির্ভর উন্নয়নে স্থাপত্যের ভূমিকা পুনর্নির্মাণ করবেন। কক্সবাজার এখনো বিকাশমান একটি অঞ্চল, পরিবেশবান্ধব কক্সবাজার গড়তে এই সম্মেলন খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

কক্সবাজারে ইতোমধ্যে অপরিকল্পিতভাবে পাঁচ শতাধিক হোটেল, রিসোর্ট, গেস্টহাউস, কটেজ ও কয়েকশ রেস্তোরাঁ তৈরি হয়েছে। সুষ্ঠু বর্জ্য ব্যবস্থাপনা গড়ে না ওঠায় এক ঘণ্টার বৃষ্টিতে শহরের প্রধান সড়ক, সৈকত সড়কসহ অলিগলি ডুবে যায়। হোটেল-রেস্তোরাঁর বর্জ্য ছড়িয়ে পড়ে সমুদ্র ও নদীর পানিতে। তাতে পরিবেশ-প্রতিবেশের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে সবচেয়ে ঝুঁকিতে থাকা কক্সবাজারের প্রাকৃতিক পরিবেশও নানা কৌশলে ধ্বংস হচ্ছে। ভ্রমণে আসা পর্যটকদের বিনোদনে নতুন ক্ষেত্রও তৈরি হচ্ছে না।

দুই দিনব্যাপী সম্মেলনে স্থাপত্যের মাধ্যমে কীভাবে টেকসই পর্যটনকে সমর্থন করা যায় এবং পরিবেশগত ভারসাম্য ও সাংস্কৃতিক ঐহিত্য তুলে ধরা যায়- এর একটা উপায় বের করা হবে। যেখানে উপস্থিত থাকবেন স্থপতি মেরিনা তাবাসসুম, খোন্দকার হাসিবুল কবির ও এহসান খান। বিকেলে সাতজন স্থপতি তাদের প্রেজেন্টেশন উপস্থাপন করবেন। পরে একটি গাইডেড সান-সেট মেডিটেশনের মাধ্যমে প্রাকৃতিক পরিবেশে নকশা তৈরি করা হবে।

দ্বিতীয় দিনে আরও ১০ জন স্থপতি দুটি সেশনে তাদের ধারণাগুলো তুলে ধরবেন। সম্মেলন শেষ হবে একটি ওপেন ফ্লোর প্যানেল আলোচনার মাধ্যমে, যার মডারেটর হিসেবে থাকবেন মাহমুদুল আনওয়ার রিয়াদ ও নাহাস খলিল। সমাপনী বক্তব্যে সম্মেলনের সারমর্ম তুলে ধরবেন মেরিনা তাবাসসুম।

মুহিবুল্লাহ/সুমন/

টাঙ্গুয়ার হাওরের হাউজবোট চলাচলে নিষেধাজ্ঞা

প্রকাশ: ২৩ জুন ২০২৫, ১০:০২ এএম
টাঙ্গুয়ার হাওরের হাউজবোট চলাচলে নিষেধাজ্ঞা
ছবি: খবরের কাগজ

দেশের দ্বিতীয় রামসার সাইট (আন্তর্জাতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ জলাভূমি) হিসেবে পরিচিত সুনামগঞ্জের টাঙ্গুয়ারের প্রাকৃতিক জীববৈচিত্র্য রক্ষা ও পরিবেশ এবং প্রতিবেশগত ক্ষতি রোধ করতে হাওরের ওয়াচ টাওয়ার ও এর আশেপাশে হাউজবোট চলাচল বন্ধের নির্দেশনা জারি করেছে সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসন।

রবিবার (২২ জুন) অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ও অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ রেজাউল করীম এ নির্দেশনা জারি করেন।

জানা যায়, সম্প্রতি সুনামগঞ্জের টাঙ্গুয়ার হাওরে পর্যটক অনেক বেড়েছে। পর্যটকদের নিয়ে হাউজবোট, ট্রলার সরাসরি ওয়াচ-টাওয়ারের গিয়ে এর পাশে হিজল, করচের বাগানে অবাধে ঘুরাফেরা করা, ইঞ্জিনচালিত নৌকা নিয়ে যত্রতত্র চলাচল করায় মাছের অভয়াশ্রমের ক্ষতি করা, বড় বড় হাউজবোটগুলো হিজল ও করচ গাছের সঙ্গে বেঁধে গাছের ক্ষতি করা ছাড়াও পর্যটকদের ব্যবহৃত প্লাস্টিক বর্জ্য হাওরের মারাত্মক ক্ষতি করছে। সেইসঙ্গে হাওরে উচ্চস্বরে গান বাজানোসহ নানা অভিযোগ পাওয়ায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে এই নির্দেশনা জারি করা হয়।

সুনামগঞ্জ পরিবেশ ও হাওর উন্নয়ন সংস্থার সভাপতি কাশমির রেজা জানান, দীর্ঘদিন ধরে আমরা টাঙ্গুয়ার হাওরের জীব-বৈচিত্র্য রক্ষায় প্রশাসনকে উদ্যোগ নেওয়ার কথা বলে আসছি। আজকে যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে এটিকে সাধুবাদ জানাই। তবে টাঙ্গুয়ার হাওরের মূল সৌন্দর্য ওয়াচ টাওয়ার এলাকা। সেখানে পর্যটকেরা কীভাবে যাবেন তাও নির্দেশনায় বলা দরকার। সেইসঙ্গে স্থানীয়দের এখানে যুক্ত করার দাবি জানিয়েছি। স্থানীয়দের জীবিকা ঠিক রাখতে তাদের ছোট নৌকা, হাত দিয়ে চালাতে পারে এমন নৌকা বানাতে সরকারকে তাদের পাশে থাকা দরকার বলেও মনে করি। 

সুনামগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ও চলতি দায়িত্বে থাকা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রেজাউল করীম জানান, পরিবেশ ও বন উপদেষ্টা রেজোয়ানা হাসানের নির্দেশে সুনামগঞ্জের জীব-বৈচিত্রর আধার টাঙ্গুয়ার হাওরের জীব-বৈচিত্র রক্ষায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে কিছু নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এই নির্দেশনায় টাঙ্গুয়ার হাওরের ওয়াচ টাওয়ার ও এর আশেপাশের এলাকা হাউজবোট চলাচলেরর স্থগিতাদেশ দেওয়া হয়। পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত এই নির্দেশনা জারি থাকবে।

দেওয়ান গিয়াস/অমিয়/

ছুঁয়ে এলাম ‘দুটি পাতা একটি কুঁড়ি’

প্রকাশ: ১৯ জুন ২০২৫, ১২:১৭ পিএম
ছুঁয়ে এলাম ‘দুটি পাতা একটি কুঁড়ি’
ছবি: লেখক

রৌদ্রস্নাত পড়ন্ত বিকেলের নিস্তব্ধতায় অবশেষে পৌঁছুতে পারলাম। এ যেন অনেক দিনের কাঙ্খিত ক্ষণটি এল। গাড়ি থেকেই দেখা যাচ্ছিল চারিদিকে সবুজের সমারোহ। নীল আকাশের নিচে যেন সবুজ গালিচা পেতে অপেক্ষায় প্রকৃতি। চা বাগান দর্শন এটিই প্রথম নয়। চা বাগান মানেই যে সবুজের চাদর বিছানো উঁচু-নিচু টিলায় দুটি পাতা একটি কুঁড়ির দৃশ্য তা মনে গেঁথে আছে তখন থেকেই যখন প্রথমবার শ্রীমঙ্গলের চা বাগান প্রদর্শন করেছিলাম বছর কয়েক আগে। এবারের এই চা বাগান দর্শনে ভিন্নতা আছে। উপমহাদেশের সর্বপ্রথম ও প্রাচীন প্রতিষ্ঠিত ও সর্ববৃহৎ চা বাগান মালনীছড়া বলে কথা।

সবুজে ঘেরা অনিন্দ্যসুন্দর মালনীছড়া! বাগানটির প্রবেশ পথ দেখতেই ড্রাইভারকে থামাতে বলে হুড়মুড়িয়ে বেরিয়ে পড়লাম। সঙ্গে মিরাক্কেলখ্যাত স্ট্যান্ডআপ কমেডিয়ান আবু হেনা রনি ভাই। মজার মানুষ বটে। এ ছাড়াও বাংলা পুঁথি গবেষক, পুঁথি সংগ্রাহক ও পুঁথি শিল্পী এথেন্স শাওন ভাইয়ের পরম ও সরস সান্নিধ্য ছিল।

চোখ যেনো মাটিতে পড়ে না। রূপসীর অতুলনীয় রূপে ডুবে যেতে লাগলাম। ‘পড়ে না চোখের পলক’ স্টাইলে দেখা যাকে বলে। স্যাট স্যাট ছবি তোলার কাজটি চলছে। সমানে চলছে ভিডিও ধারণও। খাদিমনগর ইউনিয়নে বিমানবন্দর সড়কের পাশে অবস্থিত এই চা বাগান। বাংলাদেশের প্রথম বাণিজ্যিক চা বাগান মালনীছড়া। স্থানীয় ভাষায় বলা হয়- ‘মালনীচেরা চা বাগান’। যেখানে চলছে সবুজের চাষাবাদ। ইংরেজি বানানটাও বোধ করি সেখান থেকে লেখা হয়। সিলেটের ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে দূরত্ব মাত্র সাড়ে চার কিলোমিটার। সিলেট শহরের জিরো পয়েন্ট থেকে লাক্কাতুরা ও মালনীছড়া চা বাগানের দূরত্ব মাত্র তিন কিলোমিটার।

চায়ের দেশ মূলত চীন। প্রাচীন চীনাদের হাত ধরে এগিয়ে যায় চায়ের চাষ। জানা যায়, চীন দেশে ১৬৫০ সালে প্রথম চা উৎপাদন শুরু হয়। চা পান করাকে দেশটির তৎকালীন বুদ্ধিজীবী সমাজ নাকি দৈনন্দিন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজের একটি মনে করতেন। চীনাদের প্রায় ২০০ বছর পরে ১৮৫৪ সালে ভারতীয় উপমহাদেশের সিলেটে প্রথম চা উৎপাদন শুরু হয়। প্রচলিত আছে, এ সময় ইংরেজরা চা আসক্ত হয়ে পড়েন। চীনের ছোঁয়ায় ভারতবর্ষের আসাম ও তৎসংলগ্ন এলাকায় চা চাষ শুরু হয়। ব্রিটিশদের তত্ত্বাবধানে ১৮২৮ সালে চট্টগ্রাম জেলার কর্ণফুলী নদীর তীরসহ চট্টগ্রামের বিভিন্ন জায়গায় চা উৎপাদনের চেষ্টা করা হয়। চায়ের ফলন আশানুরূপ হয় না। ব্রিটিশরা হাল ছাড়েনি। ১৮৪৭ সালে মালনীছড়া চা বাগান করে সফলতা আসে। এখান থেকে ধীরে ধীরে চা’র বাণিজ্যিক প্রসার ঘটে।

গবেষকরা বলছেন, চট্টগ্রামের কোদালা চা বাগান দেশের প্রথম চা বাগান। যা প্রতিষ্ঠিত হয় ১৮৪৩ সালে। যদিও অন্যান্য গবেষকদের মতে, ১৮৫৪ সালে দেশে প্রথমবারের মতো বাণিজ্যিকভাবে চালু হওয়া চা বাগান মালনীছড়া। মালনীছড়া চা বাগানের মাধ্যমেই দেশে চা চাষের গোড়াপত্তন। যদিও চা বোর্ডের রেকর্ডপত্রে বাগানের প্রতিষ্ঠাকাল ১৮৫৬ সালের ১৪ আগস্ট। 

অন্য গবেষণা থেকে জানা যাচ্ছে, মালনীছড়া চা বাগানটি মূলত ১৮৪৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। বৃটেনের নাগরিক লর্ড হার্ডসন বাগানটি প্রতিষ্ঠা করেন। শহরের যেকোনো জায়গা থেকে রিকশা কিংবা অটোরিকশায় সহজেই মালনিছড়া চা বাগানে যাওয়া যায়। কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে ঘুরে আসা যায় যথেচ্ছা।

প্রথম দিকে এই চা বাগান পরিচালনার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন বহু ইংরেজ। এরপর সময়ের পরিক্রমায় যুক্ত ছিলেন পাকিস্তানি ও বাংলাদেশি নানান ব্যবস্থাপক। এই চা বাগানের মোট আয়তনের ৭০০ একর জায়গা জুড়ে রাবার ও সাত একর জায়গায় কমলা উৎপাতি হচ্ছে। বাগানে স্থায়ী-অস্থাীয় মিলে প্রায় আড়াই হাজার শ্রমিক কাজ করেন। প্রতিদিনই দল বেঁধে দেশ-বিদেশের পর্যটকরা ভিড় জমান এই সবুজের মেলায়।

বিভিন্ন প্রতিবেদন মতে, দেশে উৎপাদিত মোট চা’র ৯০ শতাংশই উৎপন্ন হয় সিলেটে। বাংলাদেশের ১৬৩টি চা বাগানের মধ্যে ১৩৫টির অবস্থান বৃহত্তর সিলেটে। এ জন্যেই সিলেটকে ‘দুটি পাতা একটি কুড়ির দেশ’ বলা হয়। বৃহত্তর সিলেটের মধ্যে সিলেট জেলার জৈন্তাপুর, কানাইঘাট, গোয়াইনঘাট, কোম্পানীগঞ্জ ও সিলেট সদর উপজেলায় রয়েছে বেশ কয়েকটি চা বাগান। যার মধ্যে মালনিছড়া, লাক্কাতুরা, তারাপুর, দলদলি, খাদিম, বড়জান, গুলিন, আলী বাহার, হাবিব নগর, আহমদ টি এস্টেট, খান চা বাগান, লালাখাল টি এস্টেট, শ্রীপুর চা বাগান ও মুলাগুল চা বাগান উল্লেখযোগ্য।

নাটক ও সিনেমার ভাল শুটিং স্পটও এই মালনীছড়া চা-বাগানসহ আশপাশের এসব চা-বাগান। ছুটির দিনগুলোতে স্বাভাবিকভাবেই হাজারো মানুষের ভিড় হয় চা বাগানে। স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মালনীছড়া চা বাগানে চা গাছের পাশাপাশি কাঁঠালগাছই রয়েছে এক লাখের বেশি। এর বাইরে দারুচিনি, গোলমরিচ, জলপাই, হরীতকী, আমলকী, অর্জুন, জাম, আম, লটকন ও বেলসহ নানা প্রজাতির গাছ রয়েছে এই চা বাগানে। প্রচলিতভাবে এসব গাছের বিভিন্ন ফল নাকি চা-শ্রমিকরা বিনা পয়সাতেই নিজেদের মতো খেতে পারেন! যদিও এর সত্যতা বলার অধিকার শ্রমিকদের।

এক আকাশ মুগ্ধতা নিয়ে সিলেট শহরের খুব কাছেই সবুজ ছড়াচ্ছে চা বাগানটি। মাঝে মাঝে টিলাবেষ্টিত ছোট ছোট জনপদ চোখে পড়বে। পাহাড় ও টিলার পাশ ঘেঁষে নেমে গেছে আঁকাবাঁকা কত মেঠোপথ, তার ইয়ত্তা নেই। বাগানের অভ্যন্তরে কোনো যান্ত্রিক দূষণ বা শহুরে কোলাহল নেই। পিনপতন নিরবতা। চা পাতা তোলার মৌসুম নয় বলে শ্রমিকদের তেমন দেখা যাচ্ছে না। সারা বাগানে মাহসুখে রং-বেরঙের চেনা-অচেনা পাখি উড়ে বেড়াচ্ছে। কোথাও ছুটে চলছে রূপালী ঝর্ণাধারা। যতদূর চোখ যায় কেবলই সবুজ। হাঁটছি। চায়ের সবুজ পাতাগুলো আলতো করে ছুঁয়ে দিচ্ছি। চা বাগানের কোনো এক কোন থেকে ভালোবাসার স্পর্শে হেঁটে আসছেন নবদম্পতি। একে অপরকে জড়িয়ে ধরে চুমু খাওয়ার দৃশ্যও চোখ এড়ায় না। মনে হতে পারে তারা চা-বাগানের আশেপাশে কোনো জায়গা থেকে একটু আগেই বিয়ের পিঁড়ি থেকে হানিমুনে চলছেন চা-বাগানের অভ্যন্তরে। তারা এই অনিন্দ্যসুন্দর প্রকৃতিকে স্বাক্ষী রাখতে চায়। পেছনে তাদের ক্যামেরাপার্সনের হাঁক-ডাক, ‘দুজন একটু এভাবে দাঁড়ান’।

উঁচু টিলায় উঠছি। নিচে নেমে যাচ্ছি বাঁকে বাঁকে। কতদূরে এর শেষ? কোনো অন্ত পাচ্ছি না। অগত্যা মামার স্মরণাপন্ন হলাম। গুগল মামা বলছে - প্রায় আড়াই হাজার একর ভূমিস্বত্ব সীমানা নিয়ে উঁচু-নিচু টিলার পর টিলায় ভরা চা-বাগান। সুন্দরীর কোলে উঠে নেমে এলাম। আদি-অন্ত পর্যন্ত পৌঁছানো এবার আর হবে না। সময় কম। সন্ধ্যের ডাক। ফেরার ডাক।

দিগন্তে সূর্য নেমে যাচ্ছে। সূর্য ও আকাশের মিলিত গাঢ় লাল রঙ এখন এসে পড়ছে রূপসীর গায়ে। রাত আর যৌবনের হাতছানি পাচ্ছে মালনীছড়া। সন্ধ্যে নেমে আসায় বুকের মধ্যে ধুকধুকানি শুরু হলো। পর্যটকরা ছাড়ছেন। সন্ধ্যে নামছে আর রূপসীর চেহারা কালো হয়ে উঠছে! কিন্তু না! চারপাশের নিয়ন বাতি আর আকাশের গাঢ় লাল রঙ গায়ে মেখে সে তখন আরেক রূপে ফিরে এল। দারুণ এক স্নিগ্ধতায় ভরে উঠছে চারপাশ। এ এক ভিন্ন মায়াবিনী। লাল-নীল-কালো সন্ধ্যের আলোয় রূপবতী মালনীছড়া। এ যেন তার আরেক আবেদনময়ী রূপের প্রকাশ। চিরযৌবনা। তুমি অপেক্ষায় থাকো।

লেখক: ওয়ালটনের জনসংযোগ বিভাগের সিনিয়র অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর
[email protected]

অমিয়/

গরমে পর্যটকদের পছন্দ খাগড়াছড়ির রিছাং ঝরনা

প্রকাশ: ১৫ জুন ২০২৫, ০৯:১৯ এএম
আপডেট: ১৫ জুন ২০২৫, ০৯:২০ এএম
গরমে পর্যটকদের পছন্দ খাগড়াছড়ির রিছাং ঝরনা
ঈদের ছুটিতে খাগড়াছড়ির রিছাং ঝরনার শীতল পানিতে গা ভেজাচ্ছেন পর্যটকরা সংগৃহীত

খাগড়াছড়িতে এই গরমে বেড়াতে আসা পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষণ ‘রিছাং ঝরনা’। তাই তো রিছাং ঝরনার শীতল পানিতে গা ভাসাতে প্রতিবছর বিভিন্ন উৎসব পালনে বিপুলসংখ্যক পর্যটকের আগমন ঘটে। 

তবে এবার ঈদুল আজহার ছুটিতেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। ঈদের ছুটির সপ্তম দিনে প্রচুর পর্যটক আসেন রিছাং ঝরনার শীতল পানিতে গা ভেজাতে। খাগড়াছড়ির আলুটিলা পর্যটন কেন্দ্র থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার পশ্চিমে রিছাং ঝরনা। মূল সড়ক থেকে নেমে এক কিলোমিটার দক্ষিণে গেলেই শোনা যায় ঝরনার কলতান।

ঝরনায় যাওয়ার পথটাও দারুণ রোমাঞ্চকর। দূরের উঁচু-নিচু সবুজ পাহাড়। জুমঘর, বুনো ঝোপসহ নাম না জানা অসংখ্য বুনো ফুল যেন অভ্যর্থনা জানাবে। আর বাড়তি পাওয়া হিসেবে রয়েছে এক কিলোমিটারের সড়কের দুই পাশে স্থানীয়দের ঘরবাড়ি। পরিবেশটাই এমন যে মুগ্ধ না হয়ে উপায় নেই। যেদিকে চোখ যায় শুধু সবুজের সমাহার। পাহাড়ের বিভিন্ন পাখির কিচিরমিচির শব্দ। গাড়ি থেকে নেমে ঝরনায় পৌঁছার আগে পাহাড় থেকে নামতে হবে। পাহাড় নামার পরেই ২৫০ ধাপের বিশাল এক সিঁড়ি। সেই সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামতেই ঝরনার ধ্বনি। সিঁড়ি শেষ না হতেই ঝরনার দেখা পাওয়া যায়। ঝরনার কাছে গেলে এক স্নিগ্ধতায় দেহ-মন ভরে ওঠে। ১২০ ফুট উঁচু পাহাড় থেকে পড়ে ঝরনার পানি। গত 

শুক্রবার (১৩ জুন) সকালে গিয়ে দেখা যায় ঝরনার স্বচ্ছ জলে হইহুল্লোড় করছেন বেশ কিছু পর্যটক।

জেলা সদর থেকে ১১ কিলোমিটার আর খাগড়াছড়ি-ঢাকা আঞ্চলিক সড়ক ছেড়ে প্রায় এক কিলোমিটার দক্ষিণে রিছাং ঝরনা। মারমা ভাষায় ‘রি’ শব্দের অর্থ পানি আর ‘ছাং’ শব্দের অর্থ কোনো উঁচু স্থান হতে গড়িয়ে পড়া। অর্থাৎ কোনো উঁচু স্থান থেকে জলরাশি গড়িয়ে পড়া আবার ত্রিপুরা ভাষায় এর অন্য নাম ‘তেরাং তৈকালাই’। অর্থাৎ তেরাংয়ের অর্থ পানি আর তৈকালাই’-এর অর্থ হচ্ছে পাহাড় থেকে গড়িয়ে পড়া পানি। তবে ঝরনাটি ‘রিছাং ঝরনা’ নামে বেশি পরিচিত। খাগড়াছড়ি জেলার বেশ কয়েকটি ঝরনার মধ্যে ‘রিছাং ঝরনা’ অন্যতম আকর্ষণীয়।

২০০৩ সালে ভ্রমণপিপাসুদের নজরে আসে রিছাং ঝরনাটি। সময়ের ব্যবধানে খাগড়াছড়ির অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে নিজের জায়গা তৈরি করে নিয়েছে রিছাং ঝরনা। একসময় এই ঝরনায় যাওয়ার রাস্তা না থাকলেও জেলা প্রশাসন ও জেলা পরিষদের উদ্যোগে রাস্তা হওয়ায় পর্যটকরা সহজে এ ঝরনায় যেতে পারছেন। প্রায় ৩৫ মিটার উচ্চ পাহাড় থেকে পানি আছড়ে পড়ছে। এমন মনোরম দৃশ্য আপনাকে অন্য জগতে নিয়ে যাবে, যা ঘণ্টার পর ঘণ্টা উপভোগ করার মতো। আর আপনি চাইলে রিছাং ঝরনার পানিতে অনায়াসেই শরীর ভিজিয়ে নিতে পারবেন।

রিছাং ঝরনাটি পাহাড়ি প্রকৃতির মাঝে অবস্থান। ঝরনায় যাত্রা পথটাই দারুণ রোমাঞ্চকর। এই ঝরনাকে ঘিরে প্রতিদিন বহুসংখ্যক পর্যটক এসে ভিড় করেন। আর ঝরনার শীতল পানিতে গা ভিজিয়ে প্রকৃতির সঙ্গে একাত্ম হন।

জেলা শহর থেকে চাঁদের গাড়ি, প্রাইভেট কার, মাইক্রোবাসে ঝরনার পাদদেশে এসে নেমে প্রায় ২০০ গজ পায়ে হাঁটা পথ। এই সামান্য পাহাড়ি রাস্তায় পাড়ি দিলেই দেখতে পাবেন পাহাড়ের বুক বেয়ে প্রায় ১০০ ফুট উঁচু থেকে নিচে আছড়ে পড়ছে ঝরনার জলরাশি। হয়তো আপনার ইচ্ছে করবে প্রকৃতির মাঝেই কাটিয়ে দিই সারাক্ষণ। ভ্রমণকারীরা যাতে সহজে রিছাং ঝরনায় পৌঁছতে পারেন তার জন্য এখানে পাকা সিঁড়ি তৈরি করা হয়েছে। 

ঝরনা উপভোগ করতে সপরিবার এসেছেন চট্টগ্রাম থেকে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবী বেলাল আহমদ। তিনি বলেন, ‘ঈদের বন্ধের আগেই আমরা ঠিক করেছি খাগড়াছড়ি দেখতে আসব। পাহাড় দেখার জন্যই ছুটি কাটাতে আমরা খাগড়াছড়ি এসেছি। এ গরমে ঝরনাটি দেখে সত্যিই খুব ভালো লাগছে। যদিও সিঁড়ি বেয়ে নামতে একটু কষ্ট হয়েছে।’ বেলালের মতো আরও অনেক পর্যটক ঝরনা ঘিরে ভিড় জমিয়েছেন। তারা ঝরনাটি উপভোগ করার পাশাপাশি পার্শ্ববর্তী আলুটিলা পর্যটন কেন্দ্র, গুহা, তারেং আর জেলা পরিষদ পার্কও ঘুরে দেখেন। 

রামগড় থেকে ঈদ উপলক্ষে ঘুরতে এসেছেন সাব্বির মাহমুদ, আরমান হোসেনসহ এক দল তরুণ। তারা জানান, বিভিন্ন জায়গায় বেড়ানোর ইচ্ছে থাকলেও গরমের কারণে ঝরনায় তারা এসেছেন।

রিছাং ঝরনার ব্যবস্থাপক নিপুণ জয় ত্রিপুরা বলেন, ঈদের দিন থেকে পর্যটকের আসা শুরু হয়েছে। ঈদের পর থেকে এ পর্যন্ত দিন ১০ হাজারের বেশি পর্যটক এসেছেন। সামনে আরও পর্যটক বাড়তে পারে। 

জেলা প্রশাসক এ বি এম ইফতেখারুল ইসলাম খন্দকার বলেন, ‘ঈদ কেন্দ্র করে আমাদের সব পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। যাতে পর্যটক এবং স্থানীয়রা নির্বিঘ্নে ঘুরতে পারেন। সূত্র: বাসস।