গোলাপি আর সবুজের মাখামাখি দূর থেকেই চোখে পড়বে। কাছে গেলে ধীরে ধীরে সবুজের পটভূমিতে গাঢ় গোলাপির অস্তিত্ব চোখ জুড়িয়ে দেবে। বিস্তৃত বিলের জলে ফুটে থাকে কোটি কোটি শাপলা। জাতীয় ফুল শাপলার গাঢ় গোলাপি রং বলে স্থানীয়ভাবে এটিকে লাল শাপলা হিসেবেই চিহ্নিত করা হয়।
বরিশাল সদর থেকে প্রায় ৭০ কিলোমিটার দূরে উজিরপুর উপজেলার সাতলা ইউনিয়নের উত্তর সাতলা গ্রাম এবং আগৈলঝাড়া উপজেলার বাগধা ইউনিয়নের বাগধা ও খাজুরিয়া গ্রামের বিস্তীর্ণ জলাভূমিতে বিছিয়ে আছে শাপলার বিল। তবে সাতলার বিল ‘লাল শাপলার বিল’ নামেই বেশি পরিচিত। প্রাকৃতিকভাবেই বিলটির জন্ম। পর্যটকদের কাছে অল্প সময়ে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে বিলটি। প্রতিবছর নয়নাভিরাম এই বিলে দেশের বিভিন্ন স্থানে ঘুরতে আসেন হাজার হাজার দর্শনার্থী।
কখন যাবেন লাল শাপলার বিলে: প্রায় ১০ হাজার একরেরও বেশি বিস্তীর্ণ জলাভূমির টলটলে পানির ওপরের অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করতে সেখানে যেতে হবে জুলাই থেকে অক্টোবরের মধ্যে।
এ সময়টায় বিলে থাকে লাল শাপলার সমারোহ। শাপলার প্রকৃত রূপ দেখতে সূর্যোদয়ের আগেই পৌঁছাতে হবে। ভোরের আলোয় সাতলা বিল সৌন্দর্যের লীলাভূমিতে পরিণত হয়। বিলের টলটলে পানিতে সবুজ পাতার ওপর মাথা উঁচু করে সৌন্দর্য ছড়ায় লাল শাপলা। তারই মাঝে বক, পানকৌড়ি, মাছরাঙা, ফিঙে, শালিক, দোয়েল, চড়ুইসহ বিভিন্ন প্রজাতির পাখির কলকাকলিতে মুখর হয়ে ওঠে পুরো বিল। যা দেখে নিমিষেই পথের ক্লান্তি দূর হয়ে যায় পর্যটকদের। প্রাকৃতিকভাবে গড়ে ওঠা লাল শাপলা বিল দেখতে ছুটির দিনসহ সপ্তাহের সাত দিনই সূর্য ওঠার আগ থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পর্যটকদের পদচারণায় মুখর থাকে সাতলা-বাগতা সড়কটি। লাল শাপলার সৌন্দর্য খুব কাছ থেকে উপভোগের জন্য কমপক্ষে ২০টি স্পটে রয়েছে ৫ শতাধিক ছোট-বড় নৌকা। নৌকাযোগে পর্যটকরা বিলের মাঝে শাপলা দেখতে যান। প্রতি ঘণ্টায় নেওয়া হয় ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা। তবে এজন্য মাঝিদের সঙ্গে দরকষাকষি করে নিতে হবে।
যেভাবে যাবেন: ঢাকার সায়েদাবাদ, গাবতলী ও মহাখালী বাসস্ট্যান্ডসহ বিভিন্ন স্থান থেকে ঢাকা-বরিশাল রুটের বাসে উঠতে হবে। এসি, নন-এসি সব ধরনের বাসই ঢাকা থেকে বরিশালে যায়। ভাড়া ৫০০ টাকা থেকে শুরু করে ১ হাজার ৫০০ টাকা পর্যন্ত রয়েছে। এ ছাড়া ঢাকার সদরঘাট থেকে বরিশালের লঞ্চে যাওয়া যায়। লঞ্চের ডেকের ভাড়া ৩০০ টাকা, আর প্রকারভেদে কেবিন ভাড়া ১ হাজার থেকে ৮ হাজার টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে। বরিশাল নথুল্লাবাদ বাসস্ট্যান্ড অথবা লঞ্চঘাট নেমে সিএনজি অটোরিকশা, মাহিন্দ্রা অথবা রেন্টে-এ-কার থেকে গাড়ি ভাড়া নিয়ে লাল শাপলার বিলে যেতে পারবেন। সে ক্ষেত্রে যানবাহনভেদে বরিশাল শহর থেকে প্রায় ৭০ কিলোমিটার দূরত্বের এই পর্যটন স্পটে যেতে ব্যয় হবে ২ হাজার থেকে ৬ হাজার টাকা পর্যন্ত। এ ছাড়া নথুল্লাবাদ বাসস্ট্যান্ডে ভাড়ায়চালিত মোটরসাইকেলও পাওয়া যায়, যেগুলোতে একজনের হিসেবে কম খরচে যেতে পারবেন।
আবাসন সুবিধা: লাল শাপলার বিল এলাকায় এখনো তেমন কোনো আবাসন সুবিধা গড়ে ওঠেনি। তবে বিল এলাকায় বসবাসকারী পরিবারগুলো পর্যটকদের সুবিধার জন্য তাদের ঘর ভাড়া দিয়ে থাকেন। এ ছাড়া বরিশাল শহরে থাকার জন্য আছে থ্রি স্টার সমমানসহ অর্ধশত আবাসিক হোটেল। এ ছাড়া সরকারি ও বেসরকারি দফতরের রেস্ট হাউস পাওয়া যায়। ৫০০ টাকা থেকে শুরু করে ২০ হাজার টাকার মধ্যে ওই সব আবাসিক হোটেল ও রেস্ট হাউসের রুম ভাড়া পাওয়া যায়।