রক্তিম সাজে সেজেছে সুনামগঞ্জের শিমুল বাগান । খবরের কাগজ
ঢাকা ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, সোমবার, ২০ মে ২০২৪

রক্তিম সাজে সেজেছে সুনামগঞ্জের শিমুল বাগান

প্রকাশ: ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০২:৩৯ পিএম
রক্তিম সাজে সেজেছে সুনামগঞ্জের শিমুল বাগান
সুনামগঞ্জের শিমুল বাগান। ছবি : খবরের কাগজ

ঋতুরাজ বসন্তের আগমনী বার্তায় নবযৌবনের সাজে সাজতে শুরু করেছে প্রকৃতি। আর এই প্রকৃতিই রক্তের লালে লাল হয়ে আহ্বান জানাচ্ছে নৈসর্গিক সৌন্দর্যের। সুনামগঞ্জের তাহিরপুরের শিমুল বাগানে আবারও জমেছে প্রাণের মেলা। গাছে গাছে থোকায় থোকায় ফুল, পাখিদের কলকাকলিতে মুখরিত পরিবেশ এবং সব বয়সী মানুষের পদচারণা, সব মিলিয়ে মানুষ এবং প্রকৃতি মিলে নবপ্রাণের সঞ্চার হয়েছে। শহুরে জীবনের ব্যস্ততা আর কোলাহলময় একঘেয়েমি জীবনে একটু স্বস্তির আশায় পরিবার-পরিজন, বন্ধু-বান্ধব মিলে হেসে-খেলে, গানে-গানে আড্ডায় সময় পার করেছেন ভ্রমণপিপাসু মানুষ। যাপিত জীবনের অস্থিরতা ভুলে কিছু সময় প্রকৃতির কাছাকাছি থেকে আনন্দে কাটাতে দেশ-বিদেশের মানুষ এসেছেন শিমুল বাগানে। 

তাহিরপুর সুনামগঞ্জের সীমান্তবর্তী উপজেলা। এই উপজেলার লাউড়েরগড় এলাকার একপাশে মেঘালয় পাহাড়; অন্যপাশে এশিয়ার সর্ববৃহৎ শিমুল বাগান। আর এই দুইয়ের বুক চিরে বারিকের টিলার কোলঘেঁষে বয়ে গেছে যাদুকাটা নদী। যাদুকাটা নদীতে পানি কম থাকায় পড়ে আছে বালুচর। বছরের এ সময়টাতে এসে শিমুল বাগান, মেঘালয় পাহাড়, বারিকের টিলা আর যাদুকাটা নদী সব মিলে অপরূপ সৌন্দর্যের সৃষ্টি করেছে। আর নৈসর্গিক সৌন্দর্য নিজ চোখে দেখতে প্রতিদিন মানুষের ছুটে আসছেন এখানে। আর এই শিমুল বাগান একেক সময় একেক রূপ নেয়। বর্ষায় শিমুল বাগান সবুজপাতায় আবৃত থাকে আর বসন্তে পাতা ঝরে গিয়ে রক্তিম আভায় সাজে পুরো এলাকা।  তবে মেঘালয় পাহাড় কুয়াশাচ্ছন্ন থাকলেও সৌন্দর্যে এতটুকু কমতি হয় না। মেঘালয় পাহাড়, যাদুকাটা নদী, বালুচর- সেই সঙ্গে শিমুল ফুলের রক্তিম আভায় লাউড়েরগড়কে নিয়ে যায় অনন্য উচ্চতায়।  শিমুল ফুলের তেমন কোনো বিশেষ গন্ধ না থাকলেও এর সৌরভ ছড়াচ্ছে আকাশে-বাতাসে। আর এই সৌরভ দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশি মানুষকেও আকৃষ্ট করছে।  

অনেকেই প্রিয়জনদের নিয়ে ছবি তুলে সেই সুন্দর মুহূর্ত ক্যামেরাবন্দি করছেন। আর তাই তো শিমুল বাগানের অপরূপ সৌন্দর্য দেখতে দেশি-বিদেশি দর্শনার্থীরা ছুটে আসছেন। কেউ বন্ধুবান্ধব মিলে গলা ছেড়ে গান গাইছেন, আবার কেউ ঘোড়ায় চড়ছেন। কেউ কেউ ছবি তুলছেন; আবার কেউ শিমুল ফুলের মালায় মাথায় পরিয়ে দিচ্ছেন প্রিয়জনকে। যে যার মতো করে সময়টা উপভোগ  করছেন। 

জানা যায়, ২০০৩ সালে জয়নাল আবেদীন নামে এক ব্যক্তি প্রথমে বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে ৩৩ একর জমির ওপর এই বাগান গড়ে তোলেন। এই বাগানে প্রায় ২ হাজার ২৩টি শিমুল গাছ রয়েছে। আর এখন প্রায় সবগুলো গাছেই ফুল ফোটে। প্রথমে শুধু তুলা সংগ্রহের জন্য গাছ লাগানো হলেও এখন মানুষের বিনোদনের জন্য পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হয়।  জয়নাল আবেদীন মারা যাওয়ার পর তার সন্তানরা এই বাগানের দেখভাল করেন; এই বাগানের পরিচর্যা করেন। 

শিমুল বাগানের স্বত্বাধিকারী সাবেক চেয়ারম্যান রাকাব উদ্দিন বলেন, শিমুল বাগান প্রথমে তুলা সংগ্রহের জন্য করা হলেও পরে এই বাগানের ফুলের সৌন্দর্য দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে পড়লে দর্শনার্থীরা এই বাগান দেখতে প্রতিদিন ভিড় জমান। তাই পর্যটকের কথা মাথায় রেখে বাগানকে সুসজ্জিত করা হয়। দর্শনার্থী যাতে আরও নিরিবিলিতে সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারেন, তাই রিসোর্ট করার পরিকল্পনা রয়েছে। প্রতিবছরই বাগানকে নতুন নতুন সাজে সাজানো হচ্ছে।

শিমুল বাগান যেভাবে যাবেন

ঢাকার গাবতলী অথবা সায়েদাবাদ ফকিরাপুল থেকে এনা, শ্যামলী, হানিফ, মামুন পরিবহনসহ যাত্রীবাহী বাসে সুনামগঞ্জ আসতে সাড়ে ৭শ থেকে সাড়ে ৮শ ভাড়া লাগবে। ঢাকা থেকে রাত ৯টা থেকে সাড়ে ১১টা পর্যন্ত বাস ছেড়ে আসে। একইভাবে সুনামগঞ্জ থেকেও একই সময়ে বাস ছেড়ে যায়। সুনামগঞ্জ শহর থেকে তাহিরপুরের শিমুল বাগানে যেতে হলে যাত্রীবাহী মোটরসাইকেল, সিএনজি, লেগুনা, প্রাইভেট কার ভাড়া নিতে পারবেন। এক মোটরসাইকেলে দুইজন যেতে পারবেন। শিমুল বাগানে যেতে ভাড়া লাগবে ৪০০ টাকা। সিএনজিতে গেলে ২ হাজার টাকা। বেশি মানুষ এক সঙ্গে যেতে চাইলে পুরোনো বাসস্টেশন থেকে লেগুনা ভাড়া নেওয়া যাবে। সারা দিনের জন্য আড়াই থেকে তিন হাজার টাকা খচর পড়বে। 

সুনামগঞ্জে পৌঁছে বাস কাউন্টারের পাশেই থাকা-খাওয়ার ভালো ব্যবস্থা রয়েছে। সুনামগঞ্জ শহরে ভালোমানের আবাসিক হোটেলের মধ্যে হোটেল রয়েল ইন, আয়ান বাবা, হোটেল ওমর, প্যালেসে এসি নন-এসি রুম আছে। এসব হোটেলে শুধু থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। এক রাত থাকতে ১ হাজার থেকে দুই হাজার ৫শ টাকা খরচ পড়বে। আর মাঝারি মানের হোটেলে এক রাত ৫শ থেকে এক হাজার টাকা খরচ পড়বে। খাবার হোটেলগুলোর মধ্যে রয়েছে পানশি রেস্টুরেন্ট, রোজ গার্ডেন, হক, মোল্লা, রাজধানী, অ্যাম্ব্রশিয়া। 

বাংলাদেশে রবি পর্যটন

প্রকাশ: ১০ মে ২০২৪, ০২:১৩ পিএম
বাংলাদেশে রবি পর্যটন
শাহজাদপুর রবীন্দ্র কাচারিবাড়ি

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সঙ্গে বাংলাদেশের রয়েছে গভীর সম্পর্ক। সে সম্পর্কটা যেমন মানসিক, তেমনি আত্মীয়তার। জমিদারি কাজের তদারকি করার জন্যও তিনি বাংলাদেশে এসেছিলেন বেশ কয়েকবার। রবীন্দ্রনাথের স্মৃতিময় কিছু জায়গার পর্যটন নিয়ে জানাচ্ছে পর্যটন ডেস্ক

শিলাইদহ রবীন্দ্র কুঠিবাড়ি


কুষ্টিয়া জেলা সদর থেকে প্রায় ১২ কিলোমিটার দূরে কুমারখালী উপজেলার শিলাইদহে জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবারের ঐতিহাসিক কুঠিবাড়ি। ১৮০৭ সালে রামলোচন ঠাকুরের উইল সূত্রে রবীন্দ্রনাথের পিতামহ দ্বারকানাথ ঠাকুর এ জমিদারির মালিকানা পান। এখানে বসেই কবি রচনা করেন সোনারতরী, চিত্রা, চৈতালী, কথা ও কাহিনী, ক্ষণিকা, নৈবেদ্য ও খেয়ার অধিকাংশ কবিতাসহ আরও অনেক রচনা। এখানে বসেই ১৯১২ সালে কবি ‘গীতাঞ্জলি’ কাব্যের ইংরেজি অনুবাদ শুরু করেন। শিলাইদহ কুঠিবাড়িতে সরকারি ব্যবস্থাপনায় এখন প্রতিষ্ঠিত হয়েছে জাদুঘর।


রবীন্দ্রনাথের শ্বশুরবাড়ি ও নানাবাড়ি


খুলনা ও যশোর জেলার শেষ সীমানায় খুলনার ফুলতলা উপজেলা সদর থেকে তিন কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে দক্ষিণডিহি গ্রাম। গ্রামের ঠিক মধ্যখানে রয়েছে জমিদার বাড়ির বিশাল প্রাঙ্গণ। এটাই রবীন্দ্রনাথ-মৃণালিনীর স্মৃতিধন্য দোতলা ভবন-বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শ্বশুরবাড়ি। অন্যদিকে খুলনার রূপসা উপজেলার ঘাটভোগ ইউনিয়নের পিঠাভোগ গ্রামে রয়েছে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নানাবাড়ি। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মা সারদা সুন্দরী দেবীর জন্ম এই গ্রামে। রবীন্দ্রনাথের কাকিমা ত্রিপুরা সুন্দরী দেবী এবং স্ত্রী মৃণালিনী দেবী দক্ষিণডিহি গ্রামেরই মেয়ে। যৌবনে কবি দক্ষিণডিহি গ্রামে মামা বাড়িতে এসেছিলেন।


শাহজাদপুর রবীন্দ্র কাচারিবাড়ি
সিরাজগঞ্জ জেলার শাহজাদপুরে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পৈতৃক জমিদারি ছিল। কবির দাদা প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুর নীলকরদের একটি কুঠি নিলামে কিনে নেন। ২৯ বছর বয়সে ১৮৯০ সালে সর্বপ্রথম শাহজাদপুরে জমিদারি তত্ত্বাবধান করতে আসেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। এরপর ১৮৯৭ সাল পর্যন্ত জমিদারির কাজে এখানে যাওয়া-আসা ও অবস্থান করেন কবি। জমিদারি খাজনা আদায়ের একটি পুরোনো দোতলা ভবন রয়েছে, বর্তমানে সেটা জাদুঘর।


পতিসর কুঠিবাড়ি


নওগাঁ জেলা শহর থেকে প্রায় ২৬ কিলোমিটার দূরে আত্রাই উপজেলার পতিসর। এখানে নাগর নদীর তীরে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কুঠিবাড়ি। জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবারের জমিদারির কালিগ্রাম পরগনার সদর কাছারি ছিল এখানে। রবীন্দ্রনাথের পিতামহ দ্বারকানাথ ঠাকুর ১৮৩০ সালে এ জমিদারি কিনেছিলেন। জমিদারি দেখাশোনার জন্য ১৮৯১ সালে প্রথম পতিসরে আসেন রবীন্দ্রনাথ। শিলাইদহ ও শাহজাদপুরের মতোই প্রায় পতিসরের দোতলা কুঠিবাড়ি। বাড়ির সামনের প্রশস্ত খোলা মাঠ নাগর নদী পর্যন্ত বিস্তৃত। এখানে থাকাকালীন ১৯০৫ সালে কবি পতিসরে কৃষি ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করেন। নোবেল পুরস্কারের এক লাখ টাকাও তিনি এই ব্যাংকে দান করেন।


কালীগ্রাম রথীন্দ্রনাথ ইনস্টিটিউশন


নওগাঁ জেলার আত্রাই উপজেলার কালীগ্রাম ইউনিয়নে অবস্থিত এই স্কুলটি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নিজেই নোবেল পুরস্কারে পাওয়া অর্থ দিয়ে নির্মাণ করেছিলেন। বাংলাদেশে জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবারের তিনটি জমিদারি ছিল। সেগুলো হলো- কুষ্টিয়া জেলার শিলাইদহ, সিরাজগঞ্জ জেলার শাহাজাদপুর ও নওগাঁ জেলার কালীগ্রামে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কালীগ্রামের জমিদারের দায়িত্ব পেয়ে ১৮৯১ সালের ১৩ জুন কালীগ্রামে আসেন। শেষবার আসেন ১৯৩৭ সালের ২৭ জুলাই। ওই বছরই কালীগ্রাম রথীন্দ্রনাথ ইনস্টিটিউশন প্রতিষ্ঠিত করা হয়। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছেলে রথীন্দ্রনাথের নামে হাইস্কুলটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মৃত্যুর পর তার পুত্র রথীন্দ্রনাথ উত্তরাধিকার সূত্রে জমিদারির দায়িত্ব পান। তিনি ১৯৪৫ সালের দিকে দাম্পত্য সঙ্গী প্রতিমা দেবীসহ তিনি কালীগ্রামে আসেন। নিজের নামে নির্মিত ইনস্টিটিউশনের প্রতি তার টান ছিল। তিনি সেই সময় শিক্ষক-ছাত্রদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখতেন।

কালীগ্রাম রথীন্দ্রনাথ ইনস্টিটিউশন সেই সময়ে মাটি দিয়ে তৈরি করা হয়েছিল। রবীন্দ্রনাথের দেওয়া আশীর্বাণী, চিঠি, প্রজাদের উদ্দেশে দেওয়া তার শেষ ভাষণ, তার দেওয়া বিভিন্ন বই এই ইনস্টিটিউশনে সংগ্রহ করা আছে। এই প্রতিষ্ঠানে কালীগ্রামের শেষ জমিদার রবীন্দ্রনাথের পুত্র রথীন্দ্রনাথ ঠাকুরের চিঠি, রবীন্দ্রনাথের পুত্রবধূ প্রতিমা দেবীর চিঠিসহ রবীন্দ্রনাথের অনেক স্মৃতিস্মারক সংগ্রহ করা আছে।

জাহ্নবী

 

শিক্ষা-পর্যটন

প্রকাশ: ০৩ মে ২০২৪, ০১:৪১ পিএম
শিক্ষা-পর্যটন

দার্শনিকদের দাবি, ‘শিক্ষার ক্ষেত্রে পর্যটন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’ যেহেতু অনুসন্ধান, যুক্তি, নান্দনিকতা ও মূল্যবোধ দিয়ে দর্শন পরিচালিত। সেহেতু শিক্ষা ও দর্শন এমনভাবে সম্পর্কযুক্ত যে, বলতে গেলে দুটো বিষয় মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ। শিক্ষার মাধ্যমেই মানুষের সক্ষমতা, দৃষ্টিভঙ্গি, মূল্যবোধসহ সব রকমের ব্যক্তিগত ও সামাজিক গুণগুলো গড়ে ওঠে। আত্মোন্নয়নে তো শিক্ষার কোনো বিকল্পই নেই। তাই পরিপূর্ণ শিক্ষা অর্জনের জন্য যেতে হবে চার দেয়ালের বাইরে। শিক্ষা-পর্যটনে।

বিশ্বের উন্নত দেশগুলো শিক্ষার্থীদের নিয়ে শিক্ষা-পর্যটনের আয়োজন করে। আমাদের দেশেও অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষার্থীদের ভ্রমণে নিয়ে যায়। তবে এই ভ্রমণগুলো বেশির ভাগ সময় পিকনিক রূপে হয়ে থাকে। কখনো আবার শিক্ষা সফর হিসেবে ঐতিহাসিক স্থান বা জাদুঘর পরিদর্শনেও নিয়ে যাওয়া হয়। তবে বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর আয়োজন একটু অন্য রকম। নানা ঐতিহাসিক, বা মনোরম প্রাকৃতিক জায়গা ছাড়াও শিক্ষা পর্যটনে তারা স্কুল বা কলেজের শিক্ষার্থীদের নিয়ে যান নামকরা কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে। তবে কোনোরকম হইহুল্লোড় বা উচ্চশব্দে বাজনা বাজিয়ে নাচ গান নয়। সুশৃঙ্খলভাবে সেখানে শিক্ষার্থীরা পুরো বিশ্ববিদ্যালয়টি ঘুরে দেখে। আমরাও এমন শিক্ষা-পর্যটনের উদ্যোগ নিতে পারি। উন্নত রাষ্ট্রের শিক্ষা-পর্যটনের মতো আমরাও শিক্ষার্থীদের প্রথমে ছোট ছোট দলে ভাগ করে নিতে পারি। এক এক দলে ৩০ বা ৪০ জন করে শিক্ষার্থী রাখতে পারি। প্রতিটি দল পরিচালনার জন্য একজন শিক্ষক দায়িত্ব নিতে পারেন। বাসের সামনে শুধুমাত্র ব্যানার লাগিয়ে রওনা দিতে পারি শিক্ষা-পর্যটনের উদ্দেশ্যে। সেটা হতে পারে নিজ জেলারই সুন্দর কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে। সকালে গিয়ে বিকেলের মধ্যেই যেন আবার আমরা ফিরে আসতে পারি। দুপুরের খাবারের ব্যবস্থা যদি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যান্টিনে করা যায় তাহলে তো কথাই নেই।

শিক্ষা-পর্যটনে যাওয়ার আগে আমরা শিক্ষার্থীদের সাত দিনের একটা ছোট্ট প্রশিক্ষণ দিয়ে নিতে পারি। প্রশিক্ষণের অংশ হিসেবে থাকতে পারে শৃঙ্খলা, পরিচ্ছন্নতা, সময়ানুবর্তিতা ইত্যাদি। এতে শিক্ষার্থীরা সুশৃঙ্খলভাবে বিশ্ববিদ্যালয় এবং এর চারপাশের পরিবেশ নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করতে পারবে। বিষয়ভিত্তিক বিভিন্ন ফ্যাকাল্টি ঘুরে দেখার সময় এই প্রশিক্ষণগুলো তাদের সাহায্য করবে। উন্নত বিশ্বের শিক্ষার্থীদের মতো আমাদের শিক্ষর্থীরাও বিষয়ভিত্তিক বিভাগগুলোর কোন বিভাগে কী নিয়ে পড়াশোনা হয় তা মনোযোগ দিয়ে দেখবে এবং ধারণা নেবে। সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের সুযোগ-সুবিধা সম্পর্কে জানবে। পড়াশোনার পরিবেশ সম্পর্কে জানবে। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের দেখেও তারা অনুপ্রাণিত হবে। ভবিষ্যতে তারা উচ্চশিক্ষার প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠবে। তাদের বড় হওয়ার স্বপ্নগুলো আরও বড় হবে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ঘুরে এসে তারা নিজেরাই সিদ্ধান্ত নিতে শিখবে সে বড় হয়ে কোন বিষয় নিয়ে পড়তে চায়। কিংবা কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে চায়।

শিক্ষা-পর্যটনের মাধ্যমে শিক্ষার মান হবে উন্নত ও মজবুত। আন্তন চেখভের মতে, ‘কম পোড়া ইটের তৈরি বাড়িতে বসবাস যেমন আতঙ্কের সৃষ্টি করে তেমনি দুর্বল শিক্ষা কখনো উন্নত সমাজ গড়তে পারে না। তাই শিক্ষা মজবুত হওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

মজবুত শিক্ষার মাধ্যমেই মজবুত সমাজ গড়ে উঠবে। আর শিক্ষা পরিপূর্ণ ও মজবুত করতে শিক্ষা-পর্যটনের ভূমিকা অপরিসীম।

জাহ্নবী

 

মহাকাশে পর্যটন

প্রকাশ: ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২:৪৯ পিএম
মহাকাশে পর্যটন

২০০১ সালের ২৮ এপ্রিল। পৃথিবীর প্রথম পর্যটক মহাকাশযান হিসেবে মহাশূন্যের পথে পাড়ি জমায় রাশিয়ার সয়ুজ টিএম-৩২। আর এর মাধ্যমে পর্যটনে নতুন এক মাত্রা যুক্ত হলো- মহাশূন্য ভ্রমণ। বাণিজ্যিকভাবে ওটাই ছিল মহাশূন্যে প্রথম যাত্রা। আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে এ যাত্রায় পর্যটক হিসেবে ছিলেন ইতালীয় বংশোদ্ভূত মার্কিন প্রকৌশলী ও ধনকুবের ডেনিস অ্যান্থনি টিটো। সে হিসেবে পৃথিবীর প্রথম মহাকাশ পর্যটকের তকমা পেয়ে যান টিটো। যদিও মহাকাশ ভ্রমণকারী হিসেবে তিনি ছিলেন ৪১৫তম মানুষ। তবে তার এ যাত্রা সহজ ছিল না।

যদিও ইউরি গ্যাগারিনের মহাকাশ ভ্রমণের পর, কিশোর বয়স থেকেই মহাকাশ ভ্রমণের স্বপ্ন দেখতেন তিনি। কিন্তু স্বপ্ন দেখলেই তো আর মহাকাশে ভ্রমণ করা সম্ভবও নয়। মহাকাশ যাত্রা ও গবেষণায় উন্নতির কারণে তিনি সুযোগটা পেয়ে যান। মিরকর্প নামের একটি মহাকাশবিষয়ক প্রতিষ্ঠান বাণিজ্যিকভাবে মহাকাশ যাত্রার উদ্যোগ নিয়েছিল। আর সে উদ্যোগে রাশিয়ান ফেডারেল মহাকাশ সংস্থা ডেনিশ টিটোকে যাত্রী হিসেবে বেছে নেয়। তবে বেছে নিলেই তো আর হলো না। এটা তো আর টিকিট কাটলাম, বাহনে উঠলাম এবং গন্তব্যে পৌঁছে গেলাম ধরনের যাত্রা নয়। মহাকাশ যাত্রার আগে স্টার সিটি কমপ্লেক্সে প্রশিক্ষণ নিতে হয় তাকে। এ প্রশিক্ষণের কারণ হচ্ছে তার শরীরকে ওজনহীনতার সঙ্গে খাপ খাওয়ানো। যাই হোক, সে সময় নাসার প্রশাসক ড্যানিয়েল গোলডিন এ মহাকাশ ভ্রমণের ঘোর বিরোধী ছিলেন। তিনি মনে করতেন, পর্যটকদের জন্য মহাকাশ মোটেই উপযুক্ত স্থান নয়। আর সে কারণে ডেনিশ টিটো যখন নানার জনসন মহাকাশ কেন্দ্রে প্রশিক্ষণ নিতে গেলেন, নাসা তাকে প্রশিক্ষণ দিতে রাজি হয়নি। আর সে কারণেই তিনি রাশিয়ার স্টার সিটিতে প্রশিক্ষণ নেন। তারপর সয়ুজ দলের সঙ্গে প্রথম মহাকাশ পর্যটক হিসেবে যাত্রা করেন। মহাকাশে তিনি ৭ দিন, ২২ ঘণ্টা, ৪ মিনিট অবস্থান করেন এবং ১২৮ বার পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করেন। এ ভ্রমণের জন্য তাকে খরচ করতে হয় ২০ মিলিয়ন বা দুই কোটি মার্কিন ডলার।

মহাকাশ পর্যটনের গুরুত্ব কিন্তু দিন দিন বাড়ছে। বিশ্বের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে মহাকাশ পর্যটন বিষয়ে কোর্স চালু হয়েছে। নিউইয়র্কের রচেস্টার ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি, জাপানের কিয়ো বিশ্ববিদ্যালয় এবং ফ্লোরিডার এমব্রিরিডল অ্যারোনটিক্যাল ইউনিভার্সিটিতে মহাকাশ পর্যটনবিষয়ক কোর্স চালু হয়েছে।

মহাকাশ পর্যটন দুই ধরনের। প্রথম ধরনটি হচ্ছে সাব-অরবিটাল। সাব-অরবিটাল মহাকাশযানটি যাত্রীদের কারমান লাইনের ঠিক বাইরে নিয়ে যায়- যেটা আমাদের মাথার ওপরে প্রায় ১০০ কিলোমিটার দূরে অবস্থান করছে। এটি পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল এবং মহাকাশের মধ্যে সীমানা হিসেবে বিবেচিত হয়। সাব-অরবিটাল পর্যটকরা মহাকাশে কয়েক মিনিট কাটিয়ে পৃথিবীতে ফিরে আসেন।

অন্যদিকে অরবিটাল পর্যটকরা কারমান লাইনের চেয়ে অনেক বেশি দূরত্বে যেতে পারেন। সাধারণত যাত্রীরা প্রায় ৪০০ কিলোমিটার উচ্চতায় কয়েক দিন থেকে এক সপ্তাহের বেশি সময় কাটাতে পারে এবং পৃথিবীকেও প্রদক্ষিণ করতে পারে। ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে স্পেস এক্সের ফ্যালকন ৯ চারজন যাত্রীকে ১৬০ কিলোমিটার উচ্চতায় নিয়ে যায় এবং তিন দিন ধরে পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করে আবার ফিরে আসে।

মহাকাশ পর্যটন অত্যন্ত ব্যয়বহুল পর্যটন। মহাকাশে যেতে একেক পর্যটককে সর্বনিম্ন ১০ লাখ ডলার দিতে হয়। এর মধ্যে কিছু ক্ষতিকর বিষয়ও আছে।

মহাকাশ পর্যটনের ব্যবহৃত রকেটগুলো সরাসরি উপরের বায়ুমণ্ডলে গ্যাসীয় এবং কঠিন রাসায়নিক পদার্থ নির্গত করে পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি করে। ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডন (ইউসিএল), কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় এবং ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি (এমআইটি) দ্বারা করা ২০২২ সালের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, রকেট উৎক্ষেপণ থেকে নির্গমনে বায়ুমণ্ডল যে পরিমাণ উষ্ণ হয়, তা অন্য কোনো কারণে হয় না। এ ছাড়া রয়েছে নিরাপত্তা। অ্যাস্ট্রোনমি ম্যাগাজিনের প্রতিবেদনে বলা হয়, নিরাপত্তাজনিত বিশেষ সতর্কতার পরও ২০২৩ সালের নভেম্বর পর্যন্ত ৬৭৬ জন মহাকাশচারীর মধ্যে ১৯ জন মারা গেছেন। অর্থাৎ শতকরা ৩ ভাগ নভোচারী উড্ডয়নের সময় মারা যান।

২০০১ থেকে ২০০৯ পর্যন্ত আটজন পর্যটক মহাশূন্য ভ্রমণ করেছিলেন। ২০১১ সালে স্পেস অ্যাডভেঞ্চারস জানিয়েছিল ২০২০ সালের মধ্যে মহাকাশ পর্যটকের সংখ্যা ১৪০ হতে পারে। নানা কারণে যদিও পর্যটকের সংখ্যা আশানুরূপ হয়নি, তবু মহাকাশ পর্যটন দিন দিন জনপ্রিয় হচ্ছে।

‘গ্লোবাল স্পেস ট্যুরিজম মার্কেট’ শিরোনামে রিসার্চ অ্যান্ড মার্কেটসের ২০২২ সালের প্রতিবেদন অনুসারে, ২০৩০ সালের মধ্যে আনুমানিক চক্রবৃদ্ধি বার্ষিক বৃদ্ধির হার (CAGR) ৩৭ দশমিক ১ শতাংশসহ ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বব্যাপী মহাকাশ পর্যটনশিল্প ৮ দশমিক ৬৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছাবে বলে অনুমান করা হয়েছে।

এ.জে/জাহ্নবী

প্রকৃতির সান্নিধ্য পেতে ঘুরে আসুন সুরঞ্জনা-শুভসন্ধ্যায়

প্রকাশ: ১৩ এপ্রিল ২০২৪, ১১:৫২ এএম
প্রকৃতির সান্নিধ্য পেতে ঘুরে আসুন সুরঞ্জনা-শুভসন্ধ্যায়
সুরঞ্জনা ইকোপার্ক

ঘুরতে পছন্দ করে না এমন মানুষ খুব কমই আছে। আর ঈদ এলে তো কথাই নেই। নতুন নতুন জায়গায় ঘুরতে অনেকের পরিকল্পনার শেষ নেই। এই পরিকল্পনা যদি কোলাহলমুক্ত সবুজে ঘেরা কোনো প্রকৃতি, নদী কিংবা স্নিগ্ধ বালুময় সমুদ্রের তীরে অবকাশ যাপনের জন্য না করা যায় তাহলে যেন তৃপ্তি নেই! এবার এমনি দুটি স্থান শুভসন্ধ্যা ও সুরঞ্জনা ভ্রমণের পরিকল্পনা করতে পারেন এবারের ঈদে। 

শুভসন্ধ্যা

বাংলাদেশের সর্ব দক্ষিণের উপকূলীয় বরগুনা জেলার প্রধান তিনটি নদী- পায়রা, বিষখালী ও বলেশ্বরের জল মোহনার সাগরে মিশে যাওয়ার স্নিগ্ধ বেলাভূমির বালুচর শুভসন্ধ্যা। যার একদিকে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট সুন্দরবন অপরদিকে সীমাহীন বঙ্গোপসাগর। 

সাগরঘেঁষা নয়নাভিরাম এই সৈকতটি তালতলী উপজেলার নিশানবাড়িয়া ইউনিয়নের নলবুনিয়া এলাকায় অবস্থিত হওয়ায় স্থানীয়দের কাছে এটি নলবুনিয়া চর নামে পরিচিত। এ চরের বনাঞ্চল প্রায় ১০ কিলোমিটার। 

২০০৬ সালে ৫৮ হেক্টর জমিতে এখানে নন ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল গড়ে তোলে বন বিভাগ। ঝাউগাছ, খইয়্যা বাবলা, মাউন্ট, আকাশমনি, অর্জুন, কালি বাবলা, কড়ই, খয়ের ও বাদামসহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছ রয়েছে এখানে। 

বিস্তীর্ণ বেলাভূমির এই বনাঞ্চলের সাগর প্রান্তে দাঁড়িয়ে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত দুটোই উপভোগ করা যায়।

সুরঞ্জনা

ইকোট্যুরিজমের উন্নয়নের লক্ষে সম্প্রতি বরগুনা সদর উপজেলার ঢলুয়া ইউনিয়নের বরইতলা সংলগ্ন বিষখালী ও খাকদোন নদীর মোহনায় গড়ে তোলা হয়েছে সুরঞ্জনা নামে একটি ইকোপার্ক। ভ্রমণপিপাসু বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ কমবেশি প্রতিদিনই এখানে বেড়াতে আসেন।

এখানে রয়েছে প্রাণ-প্রকৃতির অবাধ বিচরণ। ছৈলা, গোলপাতা, কেওড়াসহ নানা ধরনের বনজ বৃক্ষে ঘেরা  দৃষ্টিনন্দন এই ইকোপার্কের মাঝখানে বসানো হয়েছে বিশালাকারের কুমির ও কাঁকড়ার অবয়ব।

বাঘ, সিংহ, হরিণ, বক, জিরাফসহ বেশকিছু জীবজন্তুর অবয়বও বয়েছে এখানে। 

এ ছাড়াও এখানকার জল ও স্থলে পাখি, বেজি, শিয়াল, কাঁঠবিড়ালি, গুইসাপ, কাকড়া, গিরগিটিসহ নানা প্রাণির দেখা মিলবে। 

যেভাবে যাবেন-

পর্যটকরা সাধারণত নৌ ও স্থলপথেই বরগুনা আসেন। ঢাকা থেকে বিকেল ৫টায় বরগুনার উদ্দেশে লঞ্চ ছেড়ে যায়। এ ছাড়া গাবতলী ও সায়েদাবাদ থেকে আসা যাবে বাসেও। সকাল ৮টার মধ্যে লঞ্চ বরগুনা পৌঁছাবে। আর পদ্মা সেতু হয়ে বাসে লাগবে মাত্র ৬ ঘন্টা।  

বরগুনা শহরে স্বল্প খরচে আবাসিক হোটেল, ডাকবাংলো, এনজিওর রেস্টহাউস পাওয়া যায়। তাই বরগুনা পৌর শহরে পৌঁছে যেকোনো একটিতে রুম নিয়ে ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে পড়ুন ভ্রমণের উদ্দেশ্যে। 

প্রথমেই বরগুনা পৌরসভার সামনে থেকে আটোরিকশা রিজার্ভ করে কিংবা মোটরসাইকেল ভাড়া নিয়ে চলে যাবেন কাঙ্ক্ষিত গন্তব্য সুরঞ্জনা ইকোপার্কে। 

সুরঞ্জনায় ঘোরাঘুরির পর শুভসন্ধ্যায় যেতে প্রথমে তালতলীর উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাওয়া যানবাহন ও ট্রলারে যাবেন তালতলী সদরে। সেখান থেকে ভ্যান, রিকশা বা মোটরসাইকেল ভাড়া নিয়ে সোজা কাঙ্খিত শুভসন্ধ্যায়। 

বরগুনায় রাত কাটানোর পরদিন বিকেল ৩টার লঞ্চে কিংবা সন্ধ্যা বা রাতে বাসে ফিরতে পারবেন ঢাকায়। 

মহিউদ্দিন অপু/ইসরাত চৈতী/অমিয়/

ঈদে দর্শনার্থীদের জন্য প্রস্তুত নওগাঁর বিনোদন কেন্দ্রগুলো

প্রকাশ: ০৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫:২৭ পিএম
ঈদে দর্শনার্থীদের জন্য প্রস্তুত নওগাঁর বিনোদন কেন্দ্রগুলো
নিয়ামতপুরের ঘুঘুডাঙা তালসড়ক। ছবি: খবরের কাগজ

সাজ সাজ রব নওগাঁর ঐতিহাসিক ও প্রকৃতিক নিদর্শন, যাদুঘর, দর্শনীয় ও বিনোদনকেন্দ্রগুলোতে। জেলার পাহাড়পুরে অবস্থিত যাদুঘর ও ঐহিতাসিক সোমপুর বিহারের আঙ্গিনায় এবার ঈদের ছুটিতে প্রায় আড়াই লাখ মানুষের আগমন ঘটবে বলে আশা করছেন কর্তৃপক্ষ।

এছাড়া কুসুম্বা শাহি মসজিদ, আলতাদিঘি শালবন, পতিসর বরীন্দ্র কাচারি বাড়ি, ঘুঘুডাঙা তাল সড়ক ও জবই বিলে প্রতিদিন লাখো দর্শনার্থীর আগম ঘটবে। বাড়তি চাপ সামাল দিতে প্রস্তুতি গ্রহনের কথা জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

পাহাড়পুর:
ধর্মীয় উৎসব বিশেষ করে ঈদ, দূর্গাপূজা এবং সরকারি ছুটির দিনে পাহাড়পুর যাদুঘর ও বৌদ্ধ বিহারে স্বভাবিকের চেয়ে কয়েকগুন দর্শনার্থী বাড়ে। ইতোপূর্বে ঈদুল ফিতরে সবচেয়ে বেশি মানুষের সমাগম দেখা গেছে। আশেপাশের এলাকার মানুষ ছাড়াও দেশের প্রায় সব প্রান্তের বিনোদনপ্রেমীরা ঈদে ছুটে আসেন বিহার ও যাদুঘরে। বিদেশি পর্যটকদের আগমনও বাড়ে। এ জন্য কর্তৃপক্ষকে আগে থেকেই বাড়তি প্রস্তুতি নিতে হয়।

ঈদ সামনে রেখে এবারও যাদুঘরের ভেতরের মূল্যবান ঐতিহাসিক নিদর্শনসমূহ নতুন করে সাজানো হচ্ছে। এছাড়া বিহার ও যাদুঘরের প্রতিটি স্থানে ধোয়া মোছা ও রঙয়ের প্রলেপ দেওয়া হয়েছে। রেস্টহাউস, ফুলের বাগান, পিকনিক ও পার্কিং এরিয়াগুলো আগের চেয়ে আরও গোছানো ও সৌন্দর্য বর্ধন করা হয়েছে। 

প্রত্নত্ত্ব বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, এবার ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ১০ থেকে ১৪ তারিখ পর্যন্ত মোট চার দিন সরকারি ছুটি। কিন্তু ঈদের দিন থেকে অন্তত এক সপ্তাহ জুড়ে দর্শনার্থীর আগমনে মুখর থাকবে পাহাড়পুর। আগতদের বিনোদন নির্বিঘ্ন করতে কয়েক দফায় স্থানীয় বাসিন্দা বা অংশীজন, প্রশাসনের কর্মকর্তা, থানা পুলিশ ও ট্যুরিস্ট পুলিশের কর্মকর্তা এবং সংশ্লিষ্ট অন্যান্য বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ। 

যেহেতু দর্শনার্থীর উপচেপড়া ভিড় হবে তাই নিরাপত্তা জোরদার করতে যাদুঘরের পাশাপাশি বিহার অংশে নতুন করে আরও ৫০টি সিসি ক্যামেরা বসানো হয়েছে। প্রবেশপথগুলো ছাড়াও গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলো ক্যামেরার আওতায় আনা হয়েছে। ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজ সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ করা হবে। এছাড়া বিহারের প্রতিটি প্রান্তে নিরাপত্তাকর্মীরা আগতদের সহযোগিতা করতে প্রস্তুত থাকবে। 

কুসম্বা শাহি মসজিদ:
ঈদুল ফিতরের নামাজ আদায় করতে হাজারো মুসল্লি সকাল থেকেই ভিড় করেন মান্দা ঐতিহাসিক কুসম্বা শাহি মসজিদে। মসজিদের ভেতরে ও বাইরে মিলিয়ে নামাজ আদায় করা হয়। এখানে তিন থেকে চারটি জামাত অনুষ্ঠিত হয়। 

মুসল্লিরা জানান, প্রায় সাড়ে ৪০০ বছর আগে সুলতানি আমলে নির্মিত কুসুম্বা শাহি মসজিদ। ঈদের ছুটিতে ঐতিহাসিক এই মসজিদে নামাজ আদায় করতে এবং সৌন্দর্য দেখতে প্রতিদিন অন্তত পাঁচ থেকে সাত হাজার মানুষ আসেন। 

স্থানীয় সংসদ সদস্য ব্রুহানী সুলতান গামা বলেন, পাঁচ টাকার নোটে মুদ্রিত কুসুম্বা মসজিদে আগত দর্শনার্থীদের সুবিধা বাড়ানো হয়েছে। নিরাপত্তা জোড়দার করতে এ বছর নতুন করে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের আনসার সদস্য, পুলিশ ও গ্রামপুলিশ নিয়োজিত রাখা হয়েছে। 

আলতাদিঘি শালবন:
নওগাঁর ধামইরহাট উপজেলায় অবস্থিত বিশাল আকৃতির ঐতিহাসিক দীঘি ও প্রাকৃতিক শালবন ঘিরে বিনোদনকেন্দ্র। সুযোগ পেলেই বিনোদন ও প্রকৃতিপ্রেমীরা ছুটে আসনে এই বন দেখতে। ঈদে মানুষের ভিড় বাড়বে অন্তত ১০ গুন। পাশের জয়পুরহাট, বগুড়া, গাইবান্ধাসহ বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষের আগম ঘটে আলতাদীঘি শালবনে। তাই বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। 

পতিসর:
নওগাঁর আত্রাই উপজেলার মনিয়ারী ইউনিয়নে অবস্থিত বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নিজস্ব জমিদারি কালী গ্রামের কাচারি বাড়ি পতিসর। এবার ঈদের কদিন পরেই ২৫ বৈশাখ কবির জন্মোৎসব। তাই এখন থেকেই দর্শনার্থীর সামাল দেওয়ার প্রস্ততি চলছে।

তাল সড়ক ও জবই বিল: 
জেলার নিয়ামতপুরের ঘুঘুডাঙা তালসড়ক ও সাপাহার উপজেলার জবই বিলে ঈদের ছুটিতে বিনোদনপ্রেমীদের উপচেপড়া ভিড় থাকে। দেশের নানা প্রান্তের মানুষ ছুটে আসেন বরেন্দ্র অঞ্চলের মুগ্ধতা ছড়ানো ঐতিহাসিক প্রকৃতিক ও দর্শনীয় স্থানগুলোতে। তাই ঈদের দিন ঘনিয়ে আসতেই সাজসাজ রব পড়েছে ওই এলাকাগুলোতে। 

প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের কর্মকর্তা পাহাড়পুর যাদুঘর ও বৌদ্ধ বিহারের কাস্টোডিয়ান ফজলুল হক আরজু খবরের কাগজকে জানান, আবহাওয়া ভাল থাকলে ঈদের দিন থেকেই কুসম্বা মসজিদে প্রচুর মানুষের আগমন ঘটবে। পাহাড়পুরে প্রতিদিন ৩০ থেকে ৩৫ হাজার দর্শনার্থীর সমাগম ঘটবে। সরকারি ছুটির দিনগুলোতে ভ্রমণপিপাসু ও বিনোদনপ্রেমীদের আগমনে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এসব স্থানে নিযোজিতদের দম ফেলার সময় থাকে না। সপ্তাহ খানেক পর থেকে ভিড় কমতে শুরু করে।

তিনি বলেন, ঈদের মৌসুমে এবার কুসুম্বা মসজিদ, পাহাড়পুর যাদুঘর, বিহার ও অন্যান্য দর্শনীয় স্থানগুলো মিলিয়ে প্রায় ১০ লাখ দর্শনার্থীর আগম ঘটবে। আর শুধু পাহাড়পুর বিহারের আঙ্গিনাতেই ১৫ দিনে পা পড়বে অন্তত আড়াই লাখ দর্শনার্থীর।

তিনি আরও বলেন, দূরের ও বিদেশি পর্যটকদের জন্য কুসুম্বা মসজিদের পাশে একটি ও পাহাড়পুর বিহার এলাকায় নতুন করে আরও একটি রেস্টহাউস প্রস্তুত করা হয়েছে। ঐতিহাসিক নিদর্শনগুলোর ইতিহাস ছড়িয়ে দিতে প্রত্ন নিদর্শন ও গবেষকদের লেখা, পত্রিকা, বই ও পুস্তিকা পাহাড়পুর যাদুঘরে সংরক্ষিত আছে। আগতরা বিহারের সৌন্দর্য উপভোগের পাশাপাশি সহজেই নিদর্শনগুলোর ঐতিহাসিক পটভূমি ও গুরুত্ব জানতে পারবেন। 

নওগাঁর পুলিশ সুপার মুহাম্মদ রাশিদুল হক বলেন, নওগাঁ জেলা প্রাকৃতিক ও  প্রত্নতত্ত্বসম্পদে ভরপুর। মান্দা কুসুম্বা শাহি মসজিদ, পাহাড়পুর যাদুঘর ও সোমপুর বিহারসহ ঐতিহাসিক নিদর্শন ও বিনোদনকেন্দ্র এলাকাগুলোতে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। ঈদের আগে থেকেই পোশাকধারী থানা পুলিশ ও ট্যুরিস্ট পুলিশের পাশাপাশি সাদা পোশাকে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। সড়কগুলোতেও যাতে কেউ চাঁদাবাজি ও বিশৃঙ্খলা করতে না পারে সেদিকে কড়া নজর দেওয়া হয়েছে। 

নওগাঁর জেলা প্রশাসক মো. গোলাম মওলা জানান, ঈদে বিনোদনকেন্দ্রগুলোতে মানুষের উপস্থিতি কয়েকগুন বাড়বে। সেদিকে খেয়াল রেখে জেলা আইনশৃঙ্খলা ও সমন্বয় সভায় বেশ কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। পদক্ষেপগুলোর মধ্যে সড়কে নিরাপত্তা ও দূর্ঘটনারোধে একাধিক স্থানে চেকপোস্ট বাসানো হবে। বিনোদনকেন্দ্র ও দর্শনীয় স্থানগুলোতে মানুষের নিরাপত্তা দিতে পুলিশ ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সার্বক্ষনিক মাঠে কাজ করবে। 

শফিক ছোটন/অমিয়/