উত্তরাঞ্চলের প্রাচীন জনপদ দিনাজপুর। ঐতিহাসিকদের মতে, দিনাজপুর রাজ পরিবারের প্রতিষ্ঠাতা জনৈক ‘দিনাজ’ অথবা ‘দিনারাজ’-এর নামানুসারে এ জনপদের নামকরণ করা হয়। তার নামানুসারেই রাজবাড়িতে অবস্থিত মৌজার নাম হয় দিনাজপুর। পরবর্তীতে ব্রিটিশ শাসকরা ঘোড়াঘাট সরকার বাতিল করে নতুন জেলা গঠন করেন এবং রাজার সম্মানে জেলার নামকরণ করেন ‘দিনাজপুর’। কৃষিসমৃদ্ধ এই জেলায় রয়েছে ঘুরে দেখার অনেক সুন্দর সুন্দর স্থান। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে রামসাগর, স্বপ্নপূরী, কান্তজীর মন্দির।
দিনাজপুর রাজবাড়ি
শহরের উত্তর-পুবে রাজারামপুর গ্রামের কাছে রাজবাটিকা এলাকায় অবস্থিত এই দর্শনীয় স্থানটি। রাজবাড়ি বলা হলেও ঐতিহাসিক পটভূমি অনুসারে এটি আসলে একটি জমিদারবাড়ি। দিনাজপুর জেলার ঐতিহ্য ও সমৃদ্ধির প্রতিনিধি বলতেই বোঝানো হয় এই রাজবাড়িকে। তাই সর্বসাকল্যে ভবনের অবস্থা বেশ নাজুক থাকা সত্ত্বেও ইতিহাসপ্রেমীরা বেশ আগ্রহ নিয়ে ঘুরতে আসেন রাজবাড়ি। এখানকার ইতিহাসসমৃদ্ধ ভবন ও জায়গাগুলোর মধ্যে রয়েছে কুমার মহল, আয়না মহল, রানি মহল, লক্ষ্মীর ঘর, আটচালা ঘর, ঠাকুরঘর, কালিয়া জিউমন্দির, আতুরঘর, রানী পুকুর ও চম্পাতলা দিঘি।
শহর থেকে যেকোনো স্থানীয় গাড়িতে করে ঘুরে আসা যায় রাজবাড়ি। শহর থেকে সর্বোচ্চ ২০ টাকা দিয়ে ইজিবাইক নিয়ে যাওয়া যায় এই দর্শনীয় স্থানে।
রামসাগর দিঘি
বাংলাদেশের বৃহত্তম দিঘি হিসেবে পরিচিত এই জলাশয়টি মূলত একটি কৃত্রিম দিঘি। পলাশী বিপ্লবের কিছু আগে রাজা রামনাথ রাজ্যের পানির চাহিদা মেটাতে খনন করেছিলেন এই দিঘি। রাজার নামানুসারেই দিঘিটি পরবর্তীতে পরিচিতি পায়। বর্তমানে এটি দিনাজপুর পর্যটন বিভাগের দায়িত্বে আছে।
প্রায় ৪ লাখ ৩৭ হাজার ৪৯২ বর্গমিটার ক্ষেত্রফল এবং ১০ মিটার গভীরতার এই দিঘির আশপাশ বিকালে ঘুরে বেড়ানোর জন্য দারুণ জায়গা। এখানে সাঁতার কাটারও ব্যবস্থা আছে। পূর্ণিমার সময় ক্যাম্পিংয়ের জন্য রামসাগর এখন জনপ্রিয় স্থান।
শহরের প্রাণকেন্দ্র থেকে অটোরিকশা ভাড়া নিয়ে রামসাগর জাতীয় উদ্যানে যেতে ৩০ থেকে ৪০ মিনিট লাগতে পারে। শহর থেকে ইজিবাইকে প্রতিজন ৪০ টাকা ভাড়ায় যাওয়া যাবে।
কান্তজীর মন্দির
বাংলাদেশের এই বিখ্যাত স্থাপনাটি নির্মিত হয়েছিল ১৮ শতকে, যার আরও একটি নাম নবরত্ন মন্দির। ঢেপা নদীর তীরে কান্তনগর গ্রামের অবস্থান। মন্দিরের শিলালিপি অনুসারে মহারাজা প্রাণনাথ রায় মন্দিরের কাজ শুরু করেছিলেন। ১৭২২ সালে তিনি মারা যাওয়ার পর তার ছেলে মহারাজা রামনাথ রায় ১৭৫২ সালে এর নির্মাণকাজ শেষ করেন।
প্রথমে মন্দিরটির উচ্চতা ছিল ৭০ ফুট। ১৮৯৭ সালের ভূমিকম্পে ক্ষতির কারণে এটি কিছুটা দেবে যায়, ফলে এখন এর উচ্চতা ৫০ ফুট। মহাভারত, রামায়ণ ও অন্যান্য পৌরাণিক কাহিনিগুলো মন্দিরের বাইরের দেয়ালে প্রায় ১৫ হাজার বর্গাকার পোড়ামাটির ফলকে চিত্রিত করা।
দিনাজপুর শহর থেকে ৮ কিলোমিটার দক্ষিণ-পুবে অটোরিকশায় করে পৌঁছানো যায় কান্তজীর মন্দিরে।
নয়াবাদ মসজিদ
দিনাজপুর জেলার এই অনন্য প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনটি নির্মিত হয়েছে ১৭৯৩ সালে সম্রাট দ্বিতীয় শাহ আলমের শাসনামলে। সে সময় অনেকগুলো টেরাকোটায় কারুকার্যমণ্ডিত করে বানালেও এখন তার মাত্র ১০৪টি অবশিষ্ট রয়েছে। এগুলোর অধিকাংশই আবার সম্পূর্ণ অক্ষত নয়।
স্থানীয়দের মতে, ১৮ শতকের মাঝামাঝিতে কান্তজীর মন্দির নির্মাণের সময় পশ্চিমের কোনো এক দেশ থেকে আগত মুসলমান স্থপতিরা বসবাস করতে শুরু করেন এই নয়াবাদ গ্রামে। তারাই পরবর্তীতে নিজেদের ব্যবহারের জন্য গড়ে তুলেছেন এই মসজিদটি।