‘নিভৃতে নিসর্গ পার্ক’ কক্সবাজারের চকরিয়ায় পর্যটকদের এক নতুন আকর্ষণের নাম। মাতামুহুরী নদী ও পাহাড়ের কূলঘেঁষে গড়ে ওঠা পার্কটি এ এলাকার পর্যটনশিল্পে সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করেছে। কক্সবাজার মহাসড়কের চকরিয়া জিদ্দাবাজার থেকে পূর্বে ১০ কিলোমিটার গেলেই মিলবে এ পার্কের দেখা।
‘নিভৃত নিসর্গ’ এলাকায় দর্শনার্থীদের বিনোদনের জন্য বেশ কয়েকটি পাহাড়ের মাঝখানে মাটি কেটে লেক সৃষ্টি করা হয়েছে। এই লেকে রাখা হয়েছে ছোট ছোট বোট, রয়েছে কায়াকিংয়ের ব্যবস্থাও। সকাল ৭টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত নদী ভ্রমণ সবার জন্য উন্মুক্ত। দুই পাশে পাহাড়ের মাঝ দিয়ে চলে গেছে মাতামুহুরী নদী। পাহাড় ও নদীর অপরূপ সান্নিধ্য এখানে। নদীতে নৌকা ভ্রমণে পাহাড়, নদীর মিতালি দেখার সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন বন্যপ্রাণী, পাহাড় বেয়ে ঝরে পড়া ঝরনা, নানা পাখির কলরব মনকে পুলকিত করবে। নীল জলরাশি দিয়ে যেতে যেতে দেখা মিলবে একাধিক সুউচ্চ সাদা পাথরের পাহাড়।
অপরূপ এই পার্ক থেকে নৌকায় করে শ্বেতপাথরের পাহাড়ে যাওয়ার জন্য ৮-১০টি নৌকা রাখা হয়েছে। প্রতিদিন হাজারও পর্যটক ভিড় করে এই পার্কে। সুরাজপুর মানিকপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আজিমুল হক আজিম জানান, প্রায় ১০০ একর জায়গা নিয়ে এ নিভৃতে নিসর্গ পার্কটিতে প্রথম প্রথম শুধু স্থানীয় পর্যটক-দর্শনার্থী এলেও এখন দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পর্যটক ও দর্শনার্থী আসা শুরু হয়েছে। ভ্রমণে আসা অধিকাংশ পর্যটক মাতামুহুরী নদীতে নৌকায় করে প্রাকৃতিক দৃশ্য উপভোগ করে থাকেন। এ পার্ককে কেন্দ্র করে পার্বত্য বান্দরবান জেলার লামা ও আলীকদম উপজেলায় যাতায়াতের সুবিধার্থে করা হয়েছে নতুন প্রশস্ত সড়ক। রয়েছে নদীপথে পাহাড়ের কূলঘেঁষে যাওয়ার সুযোগ। এতে প্রতিদিন পার্শ্ববর্তী জেলা বান্দরবান হয়ে পর্যটকদের আসার সুযোগ-সুবিধা আরও বেড়েছে।
এখানে পর্যটকদের নিরাপত্তার জন্য ট্যুরিস্ট পুলিশ ও সার্বক্ষণিক বিদ্যুৎ সরবরাহ করার উদ্যোগ নেওয়া হবে বলে জানান কর্তৃপক্ষ। ইতিমধ্যে পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব এ পার্ক পরিদর্শন করেছেন। পার্কটি আধুনিক মানের ও পর্যটকদের আকর্ষণীয় করে তোলার জন্য অবকাঠামোগত উন্নয়নে প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন এবং ওই প্রকল্প বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দেরও আশ্বাস দিয়েছেন।
পার্কের তথ্য কর্মকর্তা এরশাদুল হক জানান, সাপ্তাহিক ছুটির দিন শুক্র ও শনিবার স্থানীয় দর্শনার্থীদের পাশাপাশি সারাদেশ থেকে ভ্রমণপিপাসুরা আসেন। মাতামুহুরী নদীতে নৌকা ভ্রমণ পর্যটকদের আনন্দে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। নৌকা ভ্রমণের জন্য স্থানীয়ভাবে বিভিন্ন মডেলের প্রায় ৪০-৫০টি নৌকা প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘নিভৃতে নিসর্গ পার্ক’টি প্রায় ১০০ একরজুড়ে উপজেলা প্রশাসনের একটি পার্ক। এই পার্কের জন্য একটি দৃষ্টিনন্দন তোরণ, শিশুদের জন্য খেলার ব্যবস্থাসহ বেশকিছু প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। এগুলো আগামী ১ বছরের মধ্যে শেষ হবে বলে আশা করি, এটি পর্যটকদের জন্য একটি আকর্ষণীয় স্থান হিসেবে পরিগণিত হবে।’
যাওয়ার উপায় : ঢাকা বা দেশের অন্য যেকোনো জেলা থেকে গেলে কক্সবাজারগামী গাড়িতে চড়ে চকরিয়া বাসস্ট্যান্ডে নামতে হবে। চকরিয়া সিটি সেন্টারের সামনে থেকে সিএনজি অটোরিকশা বা জিপ রিজার্ভ করে সরাসরি এই পার্কে যেতে পারবেন। এটাই সবচেয়ে সহজ উপায়। এ ছাড়া স্থানীয়ভাবে বিরতি দিয়ে যেতে চাইলে চকরিয়া থেকে মানিকপুর হয়ে ৪০ টাকা ভাড়ায় যাওয়া যায় এই পার্কে। কক্সবাজার থেকে যেতে চাইলে চকরিয়া যাওয়ার পথে ফাঁসিয়াখালী স্টেশন থেকে বান্দরবানের লামা সড়ক ধরে ইয়াংছাবাজারে, সেখান থেকে অটোরিকশা অথবা ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক নিয়ে আড়াই কিলোমিটার গেলেই ‘নিভৃতে নিসর্গ’। কক্সবাজার থেকে প্রাইভেট কারেও যাতায়াত করা যায়। এ ছাড়া চাইলে আগে এই পার্ক ঘুরে তারপর কক্সবাজার যেতে পারবেন।
কোথায় থাকবেন : পার্কের আশপাশে থাকার কোনো জায়গা নেই। রাতে থাকতে চাইলে আপনাকে চকরিয়া শহরে চলে যেতে হবে। সেখানে মাঝারি মানের হোটেল আছে। আর যদি পরিকল্পনা থাকে কক্সবাজার যাওয়ার, তা হলে চকরিয়া থেকে দেড় ঘণ্টা পথ দূরত্বে কক্সবাজার চলে যেতে পারবেন।
কোথায় খাবেন : পার্কে খাওয়ার ব্যবস্থা নেই, তবে হাল্কা নাশতা খাওয়ার জন্য ছোট দোকান আছে। মানিকপুর বাজারে খাবারের জন্য দেশি কিছু হোটেল আছে। এ ছাড়া চকরিয়া বাজারে কয়েকটি মাঝারি মানের খাবার হোটেলও আছে। তবে সেখানে পিকনিকের মতো করে নিজেরা তৈরি খাবার নিয়ে যেতে পারবেন, কিন্তু সেক্ষেত্রে অবশ্যই পরিবেশের পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখতে হবে।