সম্ভাবনাময় মহেশখালী । খবরের কাগজ
ঢাকা ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, সোমবার, ২০ মে ২০২৪

সম্ভাবনাময় মহেশখালী

প্রকাশ: ২৯ মার্চ ২০২৪, ১২:০৪ পিএম
সম্ভাবনাময় মহেশখালী

কক্সবাজারকে বলা হয় দেশের পর্যটন রাজধানী। এই কক্সবাজারকে ঘিরে পর্যটনবলয় তৈরি করা হলে এ অঞ্চলে পর্যটকদের সমাগম বাড়বে। আকৃষ্ট করা যাবে বিদেশি পর্যটকদেরও। তেমনি এক আকর্ষণীয় স্থান হতে পারে মহেশখালী দ্বীপ। জানাচ্ছেন জাজাফী

বিশাল সাগরের জলরাশির মাঝে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এক লীলাভূমি মহেশখালী দ্বীপ। বাঁকখালী নদীর কিছু অংশ এবং বঙ্গোপসাগরের মহেশখালী চ্যানেল পাড়ি দিয়ে যেতে হয় মহেশখালী। আবার চকরিয়া উপজেলার বদরখালী-মহেশখালী সংযোগ ব্রিজ হয়ে সড়কপথেও যাওয়া যায় এই দ্বীপে।

কক্সবাজার থেকে এটি মাত্র ১২ কিলোমিটার দূরত্বে প্রায় ৩৬২ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের মহেশখালী উপজেলায় সোনাদিয়া, মাতারবাড়ী, ধলঘাটা নামে তিনটি দ্বীপ রয়েছে। ১৮৫৪ সালে গড়ে ওঠে এই দ্বীপ। তবে জনশ্রুতি আছে, ১৫৫৯ সালের প্রচণ্ড ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের ফলে মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে এই দ্বীপের সৃষ্টি হয়। কক্সবাজার থেকে ৪-৫ ঘণ্টা সময় ব্যয় করলেই মহেশখালী দ্বীপ থেকে ঘুরে আসা যায়।

গ্রামবাংলার প্রাচীন ঐতিহ্য সারি সারি পানের বরজ আর সুপারি বাগান, পাহাড়ি কাঠ, ফল-ফলাদির বাগান, লবণের মাঠ, মাছের ঘেরের নয়নাভিরাম দৃশ্য, ফসলের সবুজ-শ্যামল মাঠ ও প্রাকৃতিক অপরূপ সৌন্দর্য সবাইকে আনমনা করে। সোনাদিয়ার শুঁটকি উৎপাদন ক্ষেত্র ও গভীর সমুদ্রে মাছ ধরা জেলেদের হৈ-হুল্লোড়, সৈকতে ঝুড়ি হাতে শামুক কুড়ানো বালক-বালিকাদের চপলতা, ধান ও লবণচাষিদের হাড়ভাঙ্গা খাটুনির ফাঁকে ফাঁকে ক্লান্তিনাশী ভাটিয়ালি এবং আঞ্চলিক গান আর ভরা জোয়ারে সমুদ্রের উত্তাল ঢেউ মনকে আন্দোলিত করে।

আদিনাথ মন্দির

মহেশখালী বাংলাদেশের একমাত্র পাহাড়িয়া দ্বীপ। এ দ্বীপের মৈনাক পর্বতের ওপরে রয়েছে আদিনাথ মন্দির। এ দ্বীপের কারুকার্য এখানে আসা দর্শনার্থীদের আকৃষ্ট করে। এ ছাড়াও বছরের ফাল্গুন মাসে এখানে আদিনাথ মেলা অনুষ্ঠিত হয়। এখানে রয়েছে বেশকিছু বৌদ্ধবিহার, জলাবন ও নানা প্রজাতির পশুপাখি। এ ছাড়াও আছে রাখাইনপাড়া ও স্বর্ণমন্দির। চলতি পথেই দেখা মিলবে পান-বাগান আর লবণের মাঠ। মহেশখালীর পানের সুনাম সারা বাংলাদেশে।

পযর্টন ও অর্থনৈতিকভাবে অপার সম্ভাবনাময় মহেশখালী দ্বীপের রয়েছে অনেক সীমাবদ্ধতা। শিক্ষাক্ষেত্রে অনগ্রসরতা, যোগাযোগব্যবস্থার বেহাল অবস্থা, স্বাস্থ্য খাতে অরাজকতা এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি এ অঞ্চলের মানুষকে ব্যথিত করে। ফলে পযর্টনশিল্পের প্রসারও সেভাবে ঘটছে না। শহরের সঙ্গে এই দ্বীপের মানুষের যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম নৌকা বা স্পিডবোট।

তবে কক্সবাজারকে সত্যিকারের পর্যটননগরী হিসেবে গড়ে তুলতে হলে কক্সবাজার শহরের পার্শ্ববর্তী অঞ্চলসমূহে নতুন নতুন পর্যটন স্পট সৃষ্টি করতে হবে। বিশেষত প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি সাগর তনয়া মহেশখালীকে অপরূপ সাজে সজ্জিত করতে হবে এবং মহেশখালীর পর্যটন সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে হবে। দ্বীপ অঞ্চলটিকে একটি আকর্ষণীয় পর্যটন ও বিনোদনকেন্দ্রে পরিণত করা যেতে পারে। মহেশখালীর রাখাইনপল্লী ও ক্যাংসমূহের প্রয়োজনীয় সংস্কার, রাখাইনদের হস্তশিল্প ও সংস্কৃতি ইত্যাদিকে কেন্দ্র করে একটি স্বতন্ত্র রাখাইন সাংস্কৃতিক কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করে তাকে একটি পর্যটন স্পটে পরিণত করা যেতে পারে।

জেলেপল্লী

মহেশখালীর পর্যটন সম্ভাবনার অন্যতম প্রতিবন্ধক হলো দুর্গম যোগাযোগ ও অপর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা। আদিনাথ স্পটে প্রতিবছর লাখ লাখ পর্যটক আগমন করে থাকেন। আসা-যাওয়ার পথে তাদের অবর্ণনীয় দুর্ভোগের সম্মুখীন হতে হয়। মহেশখালীর প্রতি পর্যটকদের আকৃষ্ট করার লক্ষ্যে কক্সবাজার-মহেশখালী চ্যানেলে পর্যাপ্ত স্পিডবোট, নৌকা, লঞ্চ ও সি-ট্রাক চালুপূর্বক অস্বাভাবিক ভাড়া বৃদ্ধি রোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য মহেশখালী থানা প্রশাসনকে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। প্রয়োজনে আদিনাথ অঞ্চলে একটি পুলিশ ফাঁড়ি স্থাপন করা যেতে পারে। বাঁকখালী ও মহেশখালী চ্যানেলের ভরাট হওয়া নদী ড্রেজিংয়ের জন্য কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

মহেশখালীতে স্থলপথে যাতায়াতের প্রধান সড়ক গোরকঘাটা-জনতা বাজার সড়কের ২৭ কি. মি. রাস্তা পাকা করতে হবে। মহেশখালীতে বাস্তবায়নাধীন কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্প ও প্রস্তাবিত গভীর সমুদ্রবন্দর পর্যটন সম্ভাবনার এক নবদ্বার উন্মুক্ত করবে। পর্যটনের ব্যবসায়িক সুবিধার্থে মহেশখালীর সঙ্গে কক্সবাজার শহরের সরাসরি স্থল যোগাযোগ স্থাপনের লক্ষ্যে যমুনা কিংবা পদ্মা সেতুর ন্যায় একটি সেতু নির্মাণ করা যেতে পারে।

কক্সবাজার সদর থেকে মহেশখালী পর্যন্ত কেবল কারের ব্যবস্থা করলে পযর্টকদের আগ্রহ বাড়বে। এখান থেকে সরকারের বড় অংকের আয় হবে, যা পযর্টনশিল্পকে আরও এগিয়ে যেতে সহযোগিতা করবে। তবে দ্বীপের অনন্য বৈশিষ্ট্য বজায় রাখতে অবশ্যই এখানে বড় বড় হোটেল-মোটেল করা যাবে না। তার বদলে কটেজ তৈরি করা যেতে পারে। যেহেতু কক্সবাজার শহর থেকে খুব বেশি দূরে নয়, তাই পযর্টকরা অনায়াসেই মহেশখালী ঘুরে শহরে ফিরে আসতে পারবেন। নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করলে এবং যাতায়াত ব্যবস্থা ঠিক করতে পারলে সারা বছরই এই অঞ্চলটি হতে পারে পযর্টকদের জন্য শীর্ষ পছন্দের জায়গা।

জাহ্নবী

 

পর্যটন সম্ভাবনাময় সুসং দুর্গাপুর

প্রকাশ: ১৭ মে ২০২৪, ১১:৫৭ এএম
পর্যটন সম্ভাবনাময় সুসং দুর্গাপুর

বাংলাদেশ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপরূপ লীলাভূমি। যেখানে নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, নদনদী, পাহাড়-পর্বত, সমুদ্রসৈকত, প্রাচীন ঐতিহাসিক ও প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনগুলো যুগ যুগ ধরে আলোচিত। ফলে ভ্রমণপিপাসু মানুষকে বারবার আকৃষ্ট করে বাংলাদেশ। কেউ কেউ আবার বাংলার সৌন্দর্যে পুলকিত ও মুগ্ধ হন এবং রূপসী বলে আখ্যায়িত করেন। বাংলাদেশের অপরূপ সৌন্দর্যে প্রতিনিয়ত মুগ্ধ হচ্ছেন ভ্রমণপিপাসুরা। ফলে দেশে এ শিল্পের সম্ভাবনা উজ্জ্বল। দেশের কোনো কোনো জায়গা শুধুই দর্শনীয় স্থান নয়, যেন পৃথিবীর বুকে একখণ্ড স্বর্গ। সেসব স্থানের একটি হলো ‘সুসং দুর্গাপুর’।

মেঘালয়ের কোলঘেঁষে ময়মনসিংহ বিভাগের উত্তরে নেত্রকোনায় অবস্থিত এক টুকরো স্বর্গ  ‘সুসং দুর্গাপুর’। শান্ত, স্নিগ্ধ ও চারপাশে সবুজে আবৃত মনোরম পরিবেশ। তাছাড়া রয়েছে সুউচ্চ পাহাড়, হ্রদ, টিলা, বিভিন্ন সংস্কৃতির ছোঁয়া ও নদনদীর সমাহার। প্রকৃতিপ্রেমীদের জন্য অন্যতম আদর্শ স্থান।

দুর্গাপুরের বুনো হাতি

 চারদিকে সবুজ গাছগাছালি আর তারই মাঝে একটি  ‘সাদা মাটির পাহাড়’। একটি দুটি নয়, শতাধিক সাদামাটির টিলা আছে সেখানে। চীনামাটিকে সাদামাটি বলে আখ্যায়িত করলেও চীনামাটি পুরোপুরি সাদা নয়। বরং কোথাও লালচে, ধূসর, হালকা নীলাভ, গোলাপি, ঈষৎ বেগুনি, হলুদ কিংবা টিয়া রঙেরও। বিচিত্র রঙের মাটির সংমিশ্রণ দেখা যায় পাহাড়গুলোয়। এর নিচেই রয়েছে আবার স্বচ্ছ নীল পানির হ্রদ। আর বিস্তৃত মাঠজুড়ে সবুজের সমারোহ। পাহাড় কেটে মাটি উত্তোলন করার ফলে তৈরি হয়েছে বড় বড় গর্ত। সেসব গর্তে বা ঢালুতে বৃষ্টির পানি জমে তৈরি হয়েছে এ স্বচ্ছ নীল পানির হ্রদ। চীনামাটির পাহাড়ের কাছেই রয়েছে কমলার বাগান, বিজিবি ক্যাম্প ও নয়নাভিরাম আরও দর্শনীয় স্থান। বর্তমানে চীনামাটি উত্তোলন বন্ধ থাকায় এটি পরিণত হয়েছে দেশের অন্যতম একটি টুরিস্ট স্পটে। বিজয়পুর চীনামাটির পাহাড়ের রয়েছে ইতিহাস, ঐতিহ্য ও অতুলনীয় গুরুত্ব। এটি টারশিয়ারি যুগের পাহাড়ের অন্তর্ভুক্ত। এখানকার মাটি মিহি, কোমাল- ট্যালকম পাউডারের মতো, যা সিরামিক শিল্পের প্রধান কাঁচামাল। বাংলাদেশের খনিজ সম্পদের অন্যতম খনিজ অঞ্চল বিজয়পুর। পুরো এলাকা ঘিরে ছোট-বড়ো টিলা বা পাহাড় ও সমতল ভূমি মিলিয়ে দৈর্ঘ্যে ১৫ দশমিক ৫ কিলোমিটার ও প্রস্থে ৬০০ মিটার খনিজ এলাকা হিসেবে চিহ্নিত। এ পর্যন্ত ৫ লাখ মেট্রিক টন মাটি উত্তোলন করা হয়েছে। মজুদ আছে ১৩.৭৭ লাখ মেট্রিক টন। উল্লেখ্য, এই প্রাকৃতিক সম্পদটিকে জিআই স্বীকৃতি দিতে নিবন্ধনের আবেদন করেছিল নেত্রকোনা জেলা প্রশাসনের কার্যালয়। ২০২১ সালে এসে স্বীকৃতি পায়।

দুর্গাপুর জমিদার বাড়ি

সুসং দুর্গাপুরের আরেকটি আকর্ষণ হলো সোমেশ্বরী নদী। ভারতের মেঘালয় রাজ্যের গারো পাহাড়ের বিঞ্চুরীছড়া, বাঙাছড়া প্রভৃতি ঝরনাধারা ও পশ্চিম দিক থেকে রমফা নদীর স্রোতধারা একত্রিত হয়ে সোমেশ্বরীর সৃষ্টি। দুর্গাপুর উপজেলার বিজয়পুর ও ভবানীপুর গ্রামের ভেতর দিয়ে নদীটি বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। এটি বাংলাদেশ ও  ভারতের একটি আন্তঃসীমান্ত নদী। নদীটির বাংলাদেশ অংশের দৈর্ঘ্য ৫০ কিলোমিটার, গড় প্রশস্ততা ১১৪ মিটার এবং প্রকৃতি সর্পিলাকার। রানীখং পাহাড়ের পাশ দিয়ে দক্ষিণ দিকে শিবগঞ্জ বাজারের কাছে পূর্ব দিকে প্রবাহিত হয় এটি। সোমেশ্বরী নদীতে ঘুরে বেড়ালেই চোখে পড়ে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত ঘেঁষে সবুজঘেরা ও লাল চীনা মাটির অসংখ্য পাহাড়। বছরের বেশির ভাগ সময় এর একপাশজুড়ে থাকে ধুধু বালুচর, অন্য পাশেই হালকা নীলাভ জল। নদীর একপাশে খরস্রোতা বয়ে চলার দৃশ্য মনোমুগ্ধকর। শীত শুরু হলেই ভিন্ন রূপ ধারণ করে নদীটি। শুকনো মৌসুমে সোমেশ্বরী যৌবন হারিয়ে প্রায় মরা নদীতে রূপ নেয়। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের পাশাপাশি সোমেশ্বরী নদী কয়লা, নুড়ি-পাথর ও সিলিকা বালু বয়ে আনে। কয়লা, নুড়ি-পাথর ও সিলিকা বালুতে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করছে হাজারো মানুষ। কেউ কেউ আর্থিক অবস্থারও উন্নতি করেছেন। দুর্গাপুরের বালু এখন দেশব্যাপী জনপ্রিয়। আর এ নদীতে রয়েছে মহাশোল মাছ। যা বাংলাদেশে এ মাছটির অন্যতম আবাসস্থল।

তাছাড়া বৈচিত্র্যময় জনবসতি, ঐতিহ্যবাহী পোশাকে ছুটে চলা আদিবাসী, ক্ষুদ্র ও নৃ-তাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর কিছু প্রতিষ্ঠান, সাধু জোসেফের ধর্মপল্লী, রানীখং মিশন, ক্ষুদ্র ও নৃ-গোষ্ঠীর কালচারাল একাডেমি, ফান্দা ভ্যালি, টঙ্ক শহিদ স্মৃতিস্তম্ভ, কমরেড মণি সিংহের বাড়ি, মণি সিংহ জাদুঘর, সুসং মহারাজার সুদৃশ্য বাড়ি, রাশমণি স্মৃতিসৌধ, কমলা রানীর দিঘি, কংস নদ, আত্রাখালী নদী, চণ্ডীগড় গ্রামের মানবকল্যাণকামী অনাথালয়, কুল্লাগড়ার রামকৃষ্ণ মঠ, দুর্গাপুর সদরের দশভুজা মন্দির, বিজয়পুরের স্থলশুল্ক বন্দর, বিরিশিরি বধ্যভূমিসহ আরও বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান ভ্রমণপিপাসুদের দারুণ ভাবে আকৃষ্ট করে।

এত ঐতিহাসিক স্থান ও নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য থাকা সত্ত্বেও পর্যটনশিল্পে কিছুটা পিছিয়ে সুসং দুর্গাপুর। নানা প্রতিকূলতার জন্য পর্যটনশিল্প বিকাশ লাভ করছে না, দেশব্যাপী আলোড়িত হচ্ছে না। যার মধ্যে অন্যতম হলো রাস্তার বেহাল দশা। বালু দুর্গাপুরের জন্য আশীর্বাদ হলেও পর্যটনশিল্পে কিছুটা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে। বালুবাহী ট্রাকের কবলে তৈরি হচ্ছে অসহনীয় জ্যাম। যোগাযোগ সমস্যা, নিরাপত্তার অভাব ও নানা ভোগান্তির কারণে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন পর্যটকরা। ফলে প্রতিনিয়ত কমছে পর্যটকের সংখ্যা।

তবে নানান প্রতিকূলতার মাঝেও দুর্গাপুর নিয়ে স্বপ্ন দেখছে জনগণ, আশা করছে দুর্গাপুরেও স্থলবন্দর হবে এবং সবকিছু উপেক্ষা করে, পর্যটনশিল্পে দেশে আলোকিত নাম হবে। এজন্য সোমেশ্বরী নদীর বালু যথাযথ ব্যবহার, চীনা মাটির পাহাড়ে যেতে তেরী বাজার ও শিবগঞ্জের মাঝে ব্রিজ নির্মাণ, রাস্তার বেহাল দশা সমাধানে বিকল্প রাস্তা তৈরি কিংবা দুর্গাপুর পর্যন্ত ট্রেন লাইন আনার মতো যুগান্তকারী উন্নয়ন হলেই তবে পর্যটনশিল্পে এগিয়ে যাবে সুসং দুর্গাপুর।

জাহ্নবী

বাংলাদেশে রবি পর্যটন

প্রকাশ: ১০ মে ২০২৪, ০২:১৩ পিএম
বাংলাদেশে রবি পর্যটন
শাহজাদপুর রবীন্দ্র কাচারিবাড়ি

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সঙ্গে বাংলাদেশের রয়েছে গভীর সম্পর্ক। সে সম্পর্কটা যেমন মানসিক, তেমনি আত্মীয়তার। জমিদারি কাজের তদারকি করার জন্যও তিনি বাংলাদেশে এসেছিলেন বেশ কয়েকবার। রবীন্দ্রনাথের স্মৃতিময় কিছু জায়গার পর্যটন নিয়ে জানাচ্ছে পর্যটন ডেস্ক

শিলাইদহ রবীন্দ্র কুঠিবাড়ি


কুষ্টিয়া জেলা সদর থেকে প্রায় ১২ কিলোমিটার দূরে কুমারখালী উপজেলার শিলাইদহে জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবারের ঐতিহাসিক কুঠিবাড়ি। ১৮০৭ সালে রামলোচন ঠাকুরের উইল সূত্রে রবীন্দ্রনাথের পিতামহ দ্বারকানাথ ঠাকুর এ জমিদারির মালিকানা পান। এখানে বসেই কবি রচনা করেন সোনারতরী, চিত্রা, চৈতালী, কথা ও কাহিনী, ক্ষণিকা, নৈবেদ্য ও খেয়ার অধিকাংশ কবিতাসহ আরও অনেক রচনা। এখানে বসেই ১৯১২ সালে কবি ‘গীতাঞ্জলি’ কাব্যের ইংরেজি অনুবাদ শুরু করেন। শিলাইদহ কুঠিবাড়িতে সরকারি ব্যবস্থাপনায় এখন প্রতিষ্ঠিত হয়েছে জাদুঘর।


রবীন্দ্রনাথের শ্বশুরবাড়ি ও নানাবাড়ি


খুলনা ও যশোর জেলার শেষ সীমানায় খুলনার ফুলতলা উপজেলা সদর থেকে তিন কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে দক্ষিণডিহি গ্রাম। গ্রামের ঠিক মধ্যখানে রয়েছে জমিদার বাড়ির বিশাল প্রাঙ্গণ। এটাই রবীন্দ্রনাথ-মৃণালিনীর স্মৃতিধন্য দোতলা ভবন-বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শ্বশুরবাড়ি। অন্যদিকে খুলনার রূপসা উপজেলার ঘাটভোগ ইউনিয়নের পিঠাভোগ গ্রামে রয়েছে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নানাবাড়ি। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মা সারদা সুন্দরী দেবীর জন্ম এই গ্রামে। রবীন্দ্রনাথের কাকিমা ত্রিপুরা সুন্দরী দেবী এবং স্ত্রী মৃণালিনী দেবী দক্ষিণডিহি গ্রামেরই মেয়ে। যৌবনে কবি দক্ষিণডিহি গ্রামে মামা বাড়িতে এসেছিলেন।


শাহজাদপুর রবীন্দ্র কাচারিবাড়ি
সিরাজগঞ্জ জেলার শাহজাদপুরে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পৈতৃক জমিদারি ছিল। কবির দাদা প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুর নীলকরদের একটি কুঠি নিলামে কিনে নেন। ২৯ বছর বয়সে ১৮৯০ সালে সর্বপ্রথম শাহজাদপুরে জমিদারি তত্ত্বাবধান করতে আসেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। এরপর ১৮৯৭ সাল পর্যন্ত জমিদারির কাজে এখানে যাওয়া-আসা ও অবস্থান করেন কবি। জমিদারি খাজনা আদায়ের একটি পুরোনো দোতলা ভবন রয়েছে, বর্তমানে সেটা জাদুঘর।


পতিসর কুঠিবাড়ি


নওগাঁ জেলা শহর থেকে প্রায় ২৬ কিলোমিটার দূরে আত্রাই উপজেলার পতিসর। এখানে নাগর নদীর তীরে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কুঠিবাড়ি। জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবারের জমিদারির কালিগ্রাম পরগনার সদর কাছারি ছিল এখানে। রবীন্দ্রনাথের পিতামহ দ্বারকানাথ ঠাকুর ১৮৩০ সালে এ জমিদারি কিনেছিলেন। জমিদারি দেখাশোনার জন্য ১৮৯১ সালে প্রথম পতিসরে আসেন রবীন্দ্রনাথ। শিলাইদহ ও শাহজাদপুরের মতোই প্রায় পতিসরের দোতলা কুঠিবাড়ি। বাড়ির সামনের প্রশস্ত খোলা মাঠ নাগর নদী পর্যন্ত বিস্তৃত। এখানে থাকাকালীন ১৯০৫ সালে কবি পতিসরে কৃষি ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করেন। নোবেল পুরস্কারের এক লাখ টাকাও তিনি এই ব্যাংকে দান করেন।


কালীগ্রাম রথীন্দ্রনাথ ইনস্টিটিউশন


নওগাঁ জেলার আত্রাই উপজেলার কালীগ্রাম ইউনিয়নে অবস্থিত এই স্কুলটি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নিজেই নোবেল পুরস্কারে পাওয়া অর্থ দিয়ে নির্মাণ করেছিলেন। বাংলাদেশে জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবারের তিনটি জমিদারি ছিল। সেগুলো হলো- কুষ্টিয়া জেলার শিলাইদহ, সিরাজগঞ্জ জেলার শাহাজাদপুর ও নওগাঁ জেলার কালীগ্রামে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কালীগ্রামের জমিদারের দায়িত্ব পেয়ে ১৮৯১ সালের ১৩ জুন কালীগ্রামে আসেন। শেষবার আসেন ১৯৩৭ সালের ২৭ জুলাই। ওই বছরই কালীগ্রাম রথীন্দ্রনাথ ইনস্টিটিউশন প্রতিষ্ঠিত করা হয়। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছেলে রথীন্দ্রনাথের নামে হাইস্কুলটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মৃত্যুর পর তার পুত্র রথীন্দ্রনাথ উত্তরাধিকার সূত্রে জমিদারির দায়িত্ব পান। তিনি ১৯৪৫ সালের দিকে দাম্পত্য সঙ্গী প্রতিমা দেবীসহ তিনি কালীগ্রামে আসেন। নিজের নামে নির্মিত ইনস্টিটিউশনের প্রতি তার টান ছিল। তিনি সেই সময় শিক্ষক-ছাত্রদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখতেন।

কালীগ্রাম রথীন্দ্রনাথ ইনস্টিটিউশন সেই সময়ে মাটি দিয়ে তৈরি করা হয়েছিল। রবীন্দ্রনাথের দেওয়া আশীর্বাণী, চিঠি, প্রজাদের উদ্দেশে দেওয়া তার শেষ ভাষণ, তার দেওয়া বিভিন্ন বই এই ইনস্টিটিউশনে সংগ্রহ করা আছে। এই প্রতিষ্ঠানে কালীগ্রামের শেষ জমিদার রবীন্দ্রনাথের পুত্র রথীন্দ্রনাথ ঠাকুরের চিঠি, রবীন্দ্রনাথের পুত্রবধূ প্রতিমা দেবীর চিঠিসহ রবীন্দ্রনাথের অনেক স্মৃতিস্মারক সংগ্রহ করা আছে।

জাহ্নবী

 

শিক্ষা-পর্যটন

প্রকাশ: ০৩ মে ২০২৪, ০১:৪১ পিএম
শিক্ষা-পর্যটন

দার্শনিকদের দাবি, ‘শিক্ষার ক্ষেত্রে পর্যটন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’ যেহেতু অনুসন্ধান, যুক্তি, নান্দনিকতা ও মূল্যবোধ দিয়ে দর্শন পরিচালিত। সেহেতু শিক্ষা ও দর্শন এমনভাবে সম্পর্কযুক্ত যে, বলতে গেলে দুটো বিষয় মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ। শিক্ষার মাধ্যমেই মানুষের সক্ষমতা, দৃষ্টিভঙ্গি, মূল্যবোধসহ সব রকমের ব্যক্তিগত ও সামাজিক গুণগুলো গড়ে ওঠে। আত্মোন্নয়নে তো শিক্ষার কোনো বিকল্পই নেই। তাই পরিপূর্ণ শিক্ষা অর্জনের জন্য যেতে হবে চার দেয়ালের বাইরে। শিক্ষা-পর্যটনে।

বিশ্বের উন্নত দেশগুলো শিক্ষার্থীদের নিয়ে শিক্ষা-পর্যটনের আয়োজন করে। আমাদের দেশেও অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষার্থীদের ভ্রমণে নিয়ে যায়। তবে এই ভ্রমণগুলো বেশির ভাগ সময় পিকনিক রূপে হয়ে থাকে। কখনো আবার শিক্ষা সফর হিসেবে ঐতিহাসিক স্থান বা জাদুঘর পরিদর্শনেও নিয়ে যাওয়া হয়। তবে বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর আয়োজন একটু অন্য রকম। নানা ঐতিহাসিক, বা মনোরম প্রাকৃতিক জায়গা ছাড়াও শিক্ষা পর্যটনে তারা স্কুল বা কলেজের শিক্ষার্থীদের নিয়ে যান নামকরা কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে। তবে কোনোরকম হইহুল্লোড় বা উচ্চশব্দে বাজনা বাজিয়ে নাচ গান নয়। সুশৃঙ্খলভাবে সেখানে শিক্ষার্থীরা পুরো বিশ্ববিদ্যালয়টি ঘুরে দেখে। আমরাও এমন শিক্ষা-পর্যটনের উদ্যোগ নিতে পারি। উন্নত রাষ্ট্রের শিক্ষা-পর্যটনের মতো আমরাও শিক্ষার্থীদের প্রথমে ছোট ছোট দলে ভাগ করে নিতে পারি। এক এক দলে ৩০ বা ৪০ জন করে শিক্ষার্থী রাখতে পারি। প্রতিটি দল পরিচালনার জন্য একজন শিক্ষক দায়িত্ব নিতে পারেন। বাসের সামনে শুধুমাত্র ব্যানার লাগিয়ে রওনা দিতে পারি শিক্ষা-পর্যটনের উদ্দেশ্যে। সেটা হতে পারে নিজ জেলারই সুন্দর কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে। সকালে গিয়ে বিকেলের মধ্যেই যেন আবার আমরা ফিরে আসতে পারি। দুপুরের খাবারের ব্যবস্থা যদি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যান্টিনে করা যায় তাহলে তো কথাই নেই।

শিক্ষা-পর্যটনে যাওয়ার আগে আমরা শিক্ষার্থীদের সাত দিনের একটা ছোট্ট প্রশিক্ষণ দিয়ে নিতে পারি। প্রশিক্ষণের অংশ হিসেবে থাকতে পারে শৃঙ্খলা, পরিচ্ছন্নতা, সময়ানুবর্তিতা ইত্যাদি। এতে শিক্ষার্থীরা সুশৃঙ্খলভাবে বিশ্ববিদ্যালয় এবং এর চারপাশের পরিবেশ নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করতে পারবে। বিষয়ভিত্তিক বিভিন্ন ফ্যাকাল্টি ঘুরে দেখার সময় এই প্রশিক্ষণগুলো তাদের সাহায্য করবে। উন্নত বিশ্বের শিক্ষার্থীদের মতো আমাদের শিক্ষর্থীরাও বিষয়ভিত্তিক বিভাগগুলোর কোন বিভাগে কী নিয়ে পড়াশোনা হয় তা মনোযোগ দিয়ে দেখবে এবং ধারণা নেবে। সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের সুযোগ-সুবিধা সম্পর্কে জানবে। পড়াশোনার পরিবেশ সম্পর্কে জানবে। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের দেখেও তারা অনুপ্রাণিত হবে। ভবিষ্যতে তারা উচ্চশিক্ষার প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠবে। তাদের বড় হওয়ার স্বপ্নগুলো আরও বড় হবে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ঘুরে এসে তারা নিজেরাই সিদ্ধান্ত নিতে শিখবে সে বড় হয়ে কোন বিষয় নিয়ে পড়তে চায়। কিংবা কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে চায়।

শিক্ষা-পর্যটনের মাধ্যমে শিক্ষার মান হবে উন্নত ও মজবুত। আন্তন চেখভের মতে, ‘কম পোড়া ইটের তৈরি বাড়িতে বসবাস যেমন আতঙ্কের সৃষ্টি করে তেমনি দুর্বল শিক্ষা কখনো উন্নত সমাজ গড়তে পারে না। তাই শিক্ষা মজবুত হওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

মজবুত শিক্ষার মাধ্যমেই মজবুত সমাজ গড়ে উঠবে। আর শিক্ষা পরিপূর্ণ ও মজবুত করতে শিক্ষা-পর্যটনের ভূমিকা অপরিসীম।

জাহ্নবী

 

মহাকাশে পর্যটন

প্রকাশ: ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২:৪৯ পিএম
মহাকাশে পর্যটন

২০০১ সালের ২৮ এপ্রিল। পৃথিবীর প্রথম পর্যটক মহাকাশযান হিসেবে মহাশূন্যের পথে পাড়ি জমায় রাশিয়ার সয়ুজ টিএম-৩২। আর এর মাধ্যমে পর্যটনে নতুন এক মাত্রা যুক্ত হলো- মহাশূন্য ভ্রমণ। বাণিজ্যিকভাবে ওটাই ছিল মহাশূন্যে প্রথম যাত্রা। আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে এ যাত্রায় পর্যটক হিসেবে ছিলেন ইতালীয় বংশোদ্ভূত মার্কিন প্রকৌশলী ও ধনকুবের ডেনিস অ্যান্থনি টিটো। সে হিসেবে পৃথিবীর প্রথম মহাকাশ পর্যটকের তকমা পেয়ে যান টিটো। যদিও মহাকাশ ভ্রমণকারী হিসেবে তিনি ছিলেন ৪১৫তম মানুষ। তবে তার এ যাত্রা সহজ ছিল না।

যদিও ইউরি গ্যাগারিনের মহাকাশ ভ্রমণের পর, কিশোর বয়স থেকেই মহাকাশ ভ্রমণের স্বপ্ন দেখতেন তিনি। কিন্তু স্বপ্ন দেখলেই তো আর মহাকাশে ভ্রমণ করা সম্ভবও নয়। মহাকাশ যাত্রা ও গবেষণায় উন্নতির কারণে তিনি সুযোগটা পেয়ে যান। মিরকর্প নামের একটি মহাকাশবিষয়ক প্রতিষ্ঠান বাণিজ্যিকভাবে মহাকাশ যাত্রার উদ্যোগ নিয়েছিল। আর সে উদ্যোগে রাশিয়ান ফেডারেল মহাকাশ সংস্থা ডেনিশ টিটোকে যাত্রী হিসেবে বেছে নেয়। তবে বেছে নিলেই তো আর হলো না। এটা তো আর টিকিট কাটলাম, বাহনে উঠলাম এবং গন্তব্যে পৌঁছে গেলাম ধরনের যাত্রা নয়। মহাকাশ যাত্রার আগে স্টার সিটি কমপ্লেক্সে প্রশিক্ষণ নিতে হয় তাকে। এ প্রশিক্ষণের কারণ হচ্ছে তার শরীরকে ওজনহীনতার সঙ্গে খাপ খাওয়ানো। যাই হোক, সে সময় নাসার প্রশাসক ড্যানিয়েল গোলডিন এ মহাকাশ ভ্রমণের ঘোর বিরোধী ছিলেন। তিনি মনে করতেন, পর্যটকদের জন্য মহাকাশ মোটেই উপযুক্ত স্থান নয়। আর সে কারণে ডেনিশ টিটো যখন নানার জনসন মহাকাশ কেন্দ্রে প্রশিক্ষণ নিতে গেলেন, নাসা তাকে প্রশিক্ষণ দিতে রাজি হয়নি। আর সে কারণেই তিনি রাশিয়ার স্টার সিটিতে প্রশিক্ষণ নেন। তারপর সয়ুজ দলের সঙ্গে প্রথম মহাকাশ পর্যটক হিসেবে যাত্রা করেন। মহাকাশে তিনি ৭ দিন, ২২ ঘণ্টা, ৪ মিনিট অবস্থান করেন এবং ১২৮ বার পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করেন। এ ভ্রমণের জন্য তাকে খরচ করতে হয় ২০ মিলিয়ন বা দুই কোটি মার্কিন ডলার।

মহাকাশ পর্যটনের গুরুত্ব কিন্তু দিন দিন বাড়ছে। বিশ্বের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে মহাকাশ পর্যটন বিষয়ে কোর্স চালু হয়েছে। নিউইয়র্কের রচেস্টার ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি, জাপানের কিয়ো বিশ্ববিদ্যালয় এবং ফ্লোরিডার এমব্রিরিডল অ্যারোনটিক্যাল ইউনিভার্সিটিতে মহাকাশ পর্যটনবিষয়ক কোর্স চালু হয়েছে।

মহাকাশ পর্যটন দুই ধরনের। প্রথম ধরনটি হচ্ছে সাব-অরবিটাল। সাব-অরবিটাল মহাকাশযানটি যাত্রীদের কারমান লাইনের ঠিক বাইরে নিয়ে যায়- যেটা আমাদের মাথার ওপরে প্রায় ১০০ কিলোমিটার দূরে অবস্থান করছে। এটি পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল এবং মহাকাশের মধ্যে সীমানা হিসেবে বিবেচিত হয়। সাব-অরবিটাল পর্যটকরা মহাকাশে কয়েক মিনিট কাটিয়ে পৃথিবীতে ফিরে আসেন।

অন্যদিকে অরবিটাল পর্যটকরা কারমান লাইনের চেয়ে অনেক বেশি দূরত্বে যেতে পারেন। সাধারণত যাত্রীরা প্রায় ৪০০ কিলোমিটার উচ্চতায় কয়েক দিন থেকে এক সপ্তাহের বেশি সময় কাটাতে পারে এবং পৃথিবীকেও প্রদক্ষিণ করতে পারে। ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে স্পেস এক্সের ফ্যালকন ৯ চারজন যাত্রীকে ১৬০ কিলোমিটার উচ্চতায় নিয়ে যায় এবং তিন দিন ধরে পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করে আবার ফিরে আসে।

মহাকাশ পর্যটন অত্যন্ত ব্যয়বহুল পর্যটন। মহাকাশে যেতে একেক পর্যটককে সর্বনিম্ন ১০ লাখ ডলার দিতে হয়। এর মধ্যে কিছু ক্ষতিকর বিষয়ও আছে।

মহাকাশ পর্যটনের ব্যবহৃত রকেটগুলো সরাসরি উপরের বায়ুমণ্ডলে গ্যাসীয় এবং কঠিন রাসায়নিক পদার্থ নির্গত করে পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি করে। ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডন (ইউসিএল), কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় এবং ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি (এমআইটি) দ্বারা করা ২০২২ সালের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, রকেট উৎক্ষেপণ থেকে নির্গমনে বায়ুমণ্ডল যে পরিমাণ উষ্ণ হয়, তা অন্য কোনো কারণে হয় না। এ ছাড়া রয়েছে নিরাপত্তা। অ্যাস্ট্রোনমি ম্যাগাজিনের প্রতিবেদনে বলা হয়, নিরাপত্তাজনিত বিশেষ সতর্কতার পরও ২০২৩ সালের নভেম্বর পর্যন্ত ৬৭৬ জন মহাকাশচারীর মধ্যে ১৯ জন মারা গেছেন। অর্থাৎ শতকরা ৩ ভাগ নভোচারী উড্ডয়নের সময় মারা যান।

২০০১ থেকে ২০০৯ পর্যন্ত আটজন পর্যটক মহাশূন্য ভ্রমণ করেছিলেন। ২০১১ সালে স্পেস অ্যাডভেঞ্চারস জানিয়েছিল ২০২০ সালের মধ্যে মহাকাশ পর্যটকের সংখ্যা ১৪০ হতে পারে। নানা কারণে যদিও পর্যটকের সংখ্যা আশানুরূপ হয়নি, তবু মহাকাশ পর্যটন দিন দিন জনপ্রিয় হচ্ছে।

‘গ্লোবাল স্পেস ট্যুরিজম মার্কেট’ শিরোনামে রিসার্চ অ্যান্ড মার্কেটসের ২০২২ সালের প্রতিবেদন অনুসারে, ২০৩০ সালের মধ্যে আনুমানিক চক্রবৃদ্ধি বার্ষিক বৃদ্ধির হার (CAGR) ৩৭ দশমিক ১ শতাংশসহ ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বব্যাপী মহাকাশ পর্যটনশিল্প ৮ দশমিক ৬৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছাবে বলে অনুমান করা হয়েছে।

এ.জে/জাহ্নবী

প্রকৃতির সান্নিধ্য পেতে ঘুরে আসুন সুরঞ্জনা-শুভসন্ধ্যায়

প্রকাশ: ১৩ এপ্রিল ২০২৪, ১১:৫২ এএম
প্রকৃতির সান্নিধ্য পেতে ঘুরে আসুন সুরঞ্জনা-শুভসন্ধ্যায়
সুরঞ্জনা ইকোপার্ক

ঘুরতে পছন্দ করে না এমন মানুষ খুব কমই আছে। আর ঈদ এলে তো কথাই নেই। নতুন নতুন জায়গায় ঘুরতে অনেকের পরিকল্পনার শেষ নেই। এই পরিকল্পনা যদি কোলাহলমুক্ত সবুজে ঘেরা কোনো প্রকৃতি, নদী কিংবা স্নিগ্ধ বালুময় সমুদ্রের তীরে অবকাশ যাপনের জন্য না করা যায় তাহলে যেন তৃপ্তি নেই! এবার এমনি দুটি স্থান শুভসন্ধ্যা ও সুরঞ্জনা ভ্রমণের পরিকল্পনা করতে পারেন এবারের ঈদে। 

শুভসন্ধ্যা

বাংলাদেশের সর্ব দক্ষিণের উপকূলীয় বরগুনা জেলার প্রধান তিনটি নদী- পায়রা, বিষখালী ও বলেশ্বরের জল মোহনার সাগরে মিশে যাওয়ার স্নিগ্ধ বেলাভূমির বালুচর শুভসন্ধ্যা। যার একদিকে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট সুন্দরবন অপরদিকে সীমাহীন বঙ্গোপসাগর। 

সাগরঘেঁষা নয়নাভিরাম এই সৈকতটি তালতলী উপজেলার নিশানবাড়িয়া ইউনিয়নের নলবুনিয়া এলাকায় অবস্থিত হওয়ায় স্থানীয়দের কাছে এটি নলবুনিয়া চর নামে পরিচিত। এ চরের বনাঞ্চল প্রায় ১০ কিলোমিটার। 

২০০৬ সালে ৫৮ হেক্টর জমিতে এখানে নন ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল গড়ে তোলে বন বিভাগ। ঝাউগাছ, খইয়্যা বাবলা, মাউন্ট, আকাশমনি, অর্জুন, কালি বাবলা, কড়ই, খয়ের ও বাদামসহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছ রয়েছে এখানে। 

বিস্তীর্ণ বেলাভূমির এই বনাঞ্চলের সাগর প্রান্তে দাঁড়িয়ে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত দুটোই উপভোগ করা যায়।

সুরঞ্জনা

ইকোট্যুরিজমের উন্নয়নের লক্ষে সম্প্রতি বরগুনা সদর উপজেলার ঢলুয়া ইউনিয়নের বরইতলা সংলগ্ন বিষখালী ও খাকদোন নদীর মোহনায় গড়ে তোলা হয়েছে সুরঞ্জনা নামে একটি ইকোপার্ক। ভ্রমণপিপাসু বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ কমবেশি প্রতিদিনই এখানে বেড়াতে আসেন।

এখানে রয়েছে প্রাণ-প্রকৃতির অবাধ বিচরণ। ছৈলা, গোলপাতা, কেওড়াসহ নানা ধরনের বনজ বৃক্ষে ঘেরা  দৃষ্টিনন্দন এই ইকোপার্কের মাঝখানে বসানো হয়েছে বিশালাকারের কুমির ও কাঁকড়ার অবয়ব।

বাঘ, সিংহ, হরিণ, বক, জিরাফসহ বেশকিছু জীবজন্তুর অবয়বও বয়েছে এখানে। 

এ ছাড়াও এখানকার জল ও স্থলে পাখি, বেজি, শিয়াল, কাঁঠবিড়ালি, গুইসাপ, কাকড়া, গিরগিটিসহ নানা প্রাণির দেখা মিলবে। 

যেভাবে যাবেন-

পর্যটকরা সাধারণত নৌ ও স্থলপথেই বরগুনা আসেন। ঢাকা থেকে বিকেল ৫টায় বরগুনার উদ্দেশে লঞ্চ ছেড়ে যায়। এ ছাড়া গাবতলী ও সায়েদাবাদ থেকে আসা যাবে বাসেও। সকাল ৮টার মধ্যে লঞ্চ বরগুনা পৌঁছাবে। আর পদ্মা সেতু হয়ে বাসে লাগবে মাত্র ৬ ঘন্টা।  

বরগুনা শহরে স্বল্প খরচে আবাসিক হোটেল, ডাকবাংলো, এনজিওর রেস্টহাউস পাওয়া যায়। তাই বরগুনা পৌর শহরে পৌঁছে যেকোনো একটিতে রুম নিয়ে ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে পড়ুন ভ্রমণের উদ্দেশ্যে। 

প্রথমেই বরগুনা পৌরসভার সামনে থেকে আটোরিকশা রিজার্ভ করে কিংবা মোটরসাইকেল ভাড়া নিয়ে চলে যাবেন কাঙ্ক্ষিত গন্তব্য সুরঞ্জনা ইকোপার্কে। 

সুরঞ্জনায় ঘোরাঘুরির পর শুভসন্ধ্যায় যেতে প্রথমে তালতলীর উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাওয়া যানবাহন ও ট্রলারে যাবেন তালতলী সদরে। সেখান থেকে ভ্যান, রিকশা বা মোটরসাইকেল ভাড়া নিয়ে সোজা কাঙ্খিত শুভসন্ধ্যায়। 

বরগুনায় রাত কাটানোর পরদিন বিকেল ৩টার লঞ্চে কিংবা সন্ধ্যা বা রাতে বাসে ফিরতে পারবেন ঢাকায়। 

মহিউদ্দিন অপু/ইসরাত চৈতী/অমিয়/