যে কেউ আজকাল ছুটির দিনটা একটু ভিন্নভাবে পালন করার সুযোগ পেলে ছাড়েন না। কিন্তু ঢাকায় কোথাও যাওয়ার, কাউকে নিয়ে একমুহূর্ত চুপ করে বসার জায়গার খুব অভাব হলেও প্রিয় রাজধানীতে আছে ঘুরে বেড়ানোর জন্য সুন্দর ও নির্মল কিছু জায়গা। জেনে নিন প্রিয় মানুষকে নিয়ে যেতে পারেন এমন কিছু জায়গার অবস্থান ও পরিচিতি।
জাতীয় সংসদ ভবন
রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে অবস্থিত জাতীয় সংসদ ভবনটি শুধু বাংলাদেশই নয়, বরং বিশ্বের উল্লেখযোগ্য সেরা স্থাপত্যশৈলীর এক উদাহরণ। লুই কানের নকশায় নির্মিত ভবনটির সামনে থাকা খোলামেলা পরিবেশ ও কৃত্রিম লেকের পাশে বেশ ভালো সময় কাটিয়ে দেওয়া যায়।
হাতির ঝিল
গুলশানের পাশেই অবস্থিত এক ব্যতিক্রমী সুন্দর জায়গা হাতির ঝিল। সন্ধ্যায় জায়গাটি বাহারি আলোয় সেজে ওঠে এবং ভ্রমণকেন্দ্রে পরিণত হয়। শান্তি ও স্বস্তির খোঁজে নিম্নবিত্ত, নিম্ন মধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্তরা এখানে আসেন। একপাশে সবুজ অন্যপাশে পানি; টলটলে জলের ওপর দিয়ে ছুটে চলা ওয়াটার বাসে চড়ে ঘোরা যায় পুরো হাতির ঝিল।
জাতীয় জাদুঘর
রাজধানীর শাহবাগে অবস্থিত জাতীয় জাদুঘরটি সুসংগঠিত এবং নৃতাত্ত্বিক ও আলংকারিক দিক থেকে অনন্য। ভবনটির কক্ষগুলো শিল্প বিভাগ, ইতিহাস ও ধ্রুপদী শিল্প বিভাগ, প্রাকৃতিক ইতিহাস বিভাগ এবং সমসাময়িক কিংবা বিশ্বসভ্যতা বিভাগের মতো বিভিন্ন বিভাগে সাজানো।
ভাসানি নভোথিয়েটার
রাজধানীর বিজয় সরণিতে আধুনিক এ নভোথিয়েটারটি অবস্থিত। ঘোরার মতো উপযুক্ত জায়গা না হলেও এখানে দেখা ও জানার আছে অনেক কিছু। তাই ব্যস্ত শহরে ঘুরতে না চাইলে এখানে ঘুরে আসা যায় সঙ্গীকে নিয়ে।
ধানমন্ডি লেক ও রবীন্দ্র সরোবর
ধানমন্ডি লেক ও এর পার্শ্ববর্তী জায়গাগুলো বেড়ানোর জন্য ভালো জায়গা। এখানে রয়েছে সুন্দর মনোরম পরিবেশ। লেকে নৌকা করে ঘুরে বেড়ানো ছাড়াও নির্মল গাছের নিচে বসে কিছুটা সময় কাটিয়ে দেওয়া যায়। ৮ নম্বর সেতুর কাছে রয়েছে রবীন্দ্র সরোবর, এটি বসার জন্য সুন্দর খোলা একটি জায়গা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা
রাজধানীর শাহবাগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় কার্জন হল অবস্থিত। ব্রিটিশ স্থাপত্যের নিদর্শন ও ঐতিহাসিক ভবনটির পুরোনো কাঠের সিঁড়িতে বসে খানিকটা সময় কাটিয়ে দেওয়া যায় নির্জনে। ভবনের পেছনে রয়েছে প্রায় ৪০০ বছরের পুরোনো মুসা খাঁ মসজিদ ও বিশাল পুকুর। কার্জন হল থেকে বেরিয়েই আছে দোয়েল চত্বর। সেখানে আপনি বিভিন্ন হস্তশিল্প পণ্য কেনাকাটা করতে পারবেন।
আরও আছে কিছু ছোট নার্সারি, যেখান থেকে আপনি বিভিন্ন ধরনের ছোট-বড় গাছ কিনতে পারবেন। দোয়েল চত্বরের অদূরেই আমাদের জাতীয় শহীদ মিনার। এ জায়গাটি বিকেলে বসার জন্য তরুণদের প্রিয়। এ ছাড়াও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটের প্রাঙ্গণটি প্রাকৃতিক পরিবেশের কারণে অনেকেরই পছন্দের। তার পার্শ্ববর্তী টিএসসি এলাকাটিও সব সময়ই তরুণদের কোলাহলে মুখরিত হয়ে থাকে।
বোটানিক্যাল গার্ডেন ও বলধা গার্ডেন
মিরপুরে অবস্থিত বোটানিক্যাল গার্ডেনে রয়েছে দেশি-বিদেশি অনেক গাছ, পুকুর, খাল আর সরু রাস্তা; যেখানে আপনি কিছু সময় বসে কাটাতে পারবেন। এ ছাড়া ওয়ারীতে অবস্থিত বলধা গার্ডেনে রয়েছে মন জুড়ানো প্রায় দেড় হাজার প্রজাতির গাছ, সুন্দর পুকুর।
রমনা পার্ক
শাহবাগের পাশে অবস্থিত রমনা পার্ক প্রতিদিনই খোলা থাকে। এর ভেতরে আছে চমৎকার খাল, পায়ে চলার সরু পথ, অসংখ্য গাছ আর সবুজ ঘাসের লন। ভেতরে রয়েছে চাইনিজ রেস্তোরাঁ।
আহসান মঞ্জিল ও লালবাগ কেল্লা
পুরান ঢাকায় বুড়িগঙ্গার তীরে অবস্থিত আহসান মঞ্জিল এক সময় ঢাকার নবাবদের আবাসিক প্রাসাদ ও জমিদারির কাছারি হিসেবে ব্যবহৃত হলেও বর্তমানে এটি ব্যবহৃত হচ্ছে জাদুঘর হিসেবে। তৎকালীন ঢাকায় এত সুন্দর ভবন আর ছিল না। একই নদীর তীরে লালবাগ এলাকায় অবস্থিত মোগল স্থাপত্যের এক অনন্য নিদর্শন লালবাগ কেল্লা। মূল তিনটি ভবনের সমন্বয়ে (মসজিদ, পরী বিবির সমাধি এবং দেওয়ান-ই-আম বা দরবার হল) স্থাপনাটি গঠিত। এখানে আরও আছে কিছু ফোয়ারা এবং সর্বসাধারণের জন্য শায়েস্তা খাঁর বাসভবনে তৈরি করা জাদুঘর।
দিয়াবাড়ি
নৈসর্গিক সৌন্দর্যমণ্ডিত উত্তরার দিয়াবাড়ি সাম্প্রতিককালে ঢাকাবাসীর একটি পছন্দের বেড়ানোর জায়গায় পরিণত হয়েছে। উত্তরার ১৫ নম্বর সেক্টরে অবস্থিত এই স্থানটি প্রিয়জনদের নিয়ে বেড়ানোর জন্য চমৎকার জায়গা।
এসবের পাশাপাশি রাজধানীজুড়ে আপনি বিভিন্ন ধরনের এবং বিভিন্ন মূল্যমানের রেস্তোরাঁ পাবেন। তবে বেড়াতে যাওয়ার আগে একটা বিষয় অবশ্যই মাথায় রাখবেন- নিজের এবং প্রিয় মানুষটির নিরাপত্তা সবার আগে। কোনো নিরিবিলি এলাকায় গেলে চেষ্টা করুন সন্ধ্যার আগেই চলে আসতে।