ঢাকা ৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, শুক্রবার, ২৩ মে ২০২৫
English

রাজধানীতে বেড়ানো প্রিয়জনকে নিয়ে

প্রকাশ: ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০১:৩৭ পিএম
আপডেট: ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১০:৫৩ এএম
রাজধানীতে বেড়ানো প্রিয়জনকে নিয়ে
আহসান মঞ্জিল

যে কেউ আজকাল ছুটির দিনটা একটু ভিন্নভাবে পালন করার সুযোগ পেলে ছাড়েন না। কিন্তু ঢাকায় কোথাও যাওয়ার, কাউকে নিয়ে একমুহূর্ত চুপ করে বসার জায়গার খুব অভাব হলেও প্রিয় রাজধানীতে আছে ঘুরে বেড়ানোর জন্য সুন্দর ও নির্মল কিছু জায়গা। জেনে নিন প্রিয় মানুষকে নিয়ে যেতে পারেন এমন কিছু জায়গার অবস্থান ও পরিচিতি। 

জাতীয় সংসদ ভবন

রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে অবস্থিত জাতীয় সংসদ ভবনটি শুধু বাংলাদেশই নয়, বরং বিশ্বের উল্লেখযোগ্য সেরা স্থাপত্যশৈলীর এক উদাহরণ। লুই কানের নকশায় নির্মিত ভবনটির সামনে থাকা খোলামেলা পরিবেশ ও কৃত্রিম লেকের পাশে বেশ ভালো সময় কাটিয়ে দেওয়া যায়।

হাতির ঝিল

গুলশানের পাশেই অবস্থিত এক ব্যতিক্রমী সুন্দর জায়গা হাতির ঝিল। সন্ধ্যায় জায়গাটি বাহারি আলোয় সেজে ওঠে এবং ভ্রমণকেন্দ্রে পরিণত হয়। শান্তি ও স্বস্তির খোঁজে নিম্নবিত্ত, নিম্ন মধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্তরা এখানে আসেন। একপাশে সবুজ অন্যপাশে পানি; টলটলে জলের ওপর দিয়ে ছুটে চলা ওয়াটার বাসে চড়ে ঘোরা যায় পুরো হাতির ঝিল। 

জাতীয় জাদুঘর

রাজধানীর শাহবাগে অবস্থিত জাতীয় জাদুঘরটি সুসংগঠিত এবং নৃতাত্ত্বিক ও আলংকারিক দিক থেকে অনন্য। ভবনটির কক্ষগুলো শিল্প বিভাগ, ইতিহাস ও ধ্রুপদী শিল্প বিভাগ, প্রাকৃতিক ইতিহাস বিভাগ এবং সমসাময়িক কিংবা বিশ্বসভ্যতা বিভাগের মতো বিভিন্ন বিভাগে সাজানো।

ভাসানি নভোথিয়েটার

রাজধানীর বিজয় সরণিতে আধুনিক এ নভোথিয়েটারটি অবস্থিত। ঘোরার মতো উপযুক্ত জায়গা না হলেও এখানে দেখা ও জানার আছে অনেক কিছু। তাই ব্যস্ত শহরে ঘুরতে না চাইলে এখানে ঘুরে আসা যায় সঙ্গীকে নিয়ে।

ধানমন্ডি লেক ও রবীন্দ্র সরোবর

ধানমন্ডি লেক ও এর পার্শ্ববর্তী জায়গাগুলো বেড়ানোর জন্য ভালো জায়গা। এখানে রয়েছে সুন্দর মনোরম পরিবেশ। লেকে নৌকা করে ঘুরে বেড়ানো ছাড়াও নির্মল গাছের নিচে বসে কিছুটা সময় কাটিয়ে দেওয়া যায়। ৮ নম্বর সেতুর কাছে রয়েছে রবীন্দ্র সরোবর, এটি বসার জন্য সুন্দর খোলা একটি জায়গা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা 

রাজধানীর শাহবাগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় কার্জন হল অবস্থিত। ব্রিটিশ স্থাপত্যের নিদর্শন ও ঐতিহাসিক ভবনটির পুরোনো কাঠের সিঁড়িতে বসে খানিকটা সময় কাটিয়ে দেওয়া যায় নির্জনে। ভবনের পেছনে রয়েছে প্রায় ৪০০ বছরের পুরোনো মুসা খাঁ মসজিদ ও বিশাল পুকুর। কার্জন হল থেকে বেরিয়েই আছে দোয়েল চত্বর। সেখানে আপনি বিভিন্ন হস্তশিল্প পণ্য কেনাকাটা করতে পারবেন। 

আরও আছে কিছু ছোট নার্সারি, যেখান থেকে আপনি বিভিন্ন ধরনের ছোট-বড় গাছ কিনতে পারবেন। দোয়েল চত্বরের অদূরেই আমাদের জাতীয় শহীদ মিনার। এ জায়গাটি বিকেলে বসার জন্য তরুণদের প্রিয়। এ ছাড়াও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটের প্রাঙ্গণটি প্রাকৃতিক পরিবেশের কারণে অনেকেরই পছন্দের। তার পার্শ্ববর্তী টিএসসি এলাকাটিও সব সময়ই তরুণদের কোলাহলে মুখরিত হয়ে থাকে। 

বোটানিক্যাল গার্ডেন ও বলধা গার্ডেন 

মিরপুরে অবস্থিত বোটানিক্যাল গার্ডেনে রয়েছে দেশি-বিদেশি অনেক গাছ, পুকুর, খাল আর সরু রাস্তা; যেখানে আপনি কিছু সময় বসে কাটাতে পারবেন। এ ছাড়া ওয়ারীতে অবস্থিত বলধা গার্ডেনে রয়েছে মন জুড়ানো প্রায় দেড় হাজার প্রজাতির গাছ, সুন্দর পুকুর। 

রমনা পার্ক

শাহবাগের পাশে অবস্থিত রমনা পার্ক প্রতিদিনই খোলা থাকে। এর ভেতরে আছে চমৎকার খাল, পায়ে চলার সরু পথ, অসংখ্য গাছ আর সবুজ ঘাসের লন। ভেতরে রয়েছে চাইনিজ রেস্তোরাঁ। 

আহসান মঞ্জিল ও লালবাগ কেল্লা 

পুরান ঢাকায় বুড়িগঙ্গার তীরে অবস্থিত আহসান মঞ্জিল এক সময় ঢাকার নবাবদের আবাসিক প্রাসাদ ও জমিদারির কাছারি হিসেবে ব্যবহৃত হলেও বর্তমানে এটি ব্যবহৃত হচ্ছে জাদুঘর হিসেবে। তৎকালীন ঢাকায় এত সুন্দর ভবন আর ছিল না। একই নদীর তীরে লালবাগ এলাকায় অবস্থিত মোগল স্থাপত্যের এক অনন্য নিদর্শন লালবাগ কেল্লা। মূল তিনটি ভবনের সমন্বয়ে (মসজিদ, পরী বিবির সমাধি এবং দেওয়ান-ই-আম বা দরবার হল) স্থাপনাটি গঠিত। এখানে আরও আছে কিছু ফোয়ারা এবং সর্বসাধারণের জন্য শায়েস্তা খাঁর বাসভবনে তৈরি করা জাদুঘর। 

দিয়াবাড়ি 

নৈসর্গিক সৌন্দর্যমণ্ডিত উত্তরার দিয়াবাড়ি সাম্প্রতিককালে ঢাকাবাসীর একটি পছন্দের বেড়ানোর জায়গায় পরিণত হয়েছে। উত্তরার ১৫ নম্বর সেক্টরে অবস্থিত এই স্থানটি প্রিয়জনদের নিয়ে বেড়ানোর জন্য চমৎকার জায়গা। 

এসবের পাশাপাশি রাজধানীজুড়ে আপনি বিভিন্ন ধরনের এবং বিভিন্ন মূল্যমানের রেস্তোরাঁ পাবেন। তবে বেড়াতে যাওয়ার আগে একটা বিষয় অবশ্যই মাথায় রাখবেন- নিজের এবং প্রিয় মানুষটির নিরাপত্তা সবার আগে। কোনো নিরিবিলি এলাকায় গেলে চেষ্টা করুন সন্ধ্যার আগেই চলে আসতে।

সম্পদ সুশাসন সৌন্দর্যে অনন্য দেশ ফিনল্যান্ড

প্রকাশ: ২২ মে ২০২৫, ১০:৩৭ এএম
সম্পদ সুশাসন সৌন্দর্যে অনন্য দেশ ফিনল্যান্ড
ছবি: জামান সরকার

ফিনল্যান্ডের প্রাকৃতিক সম্পদ, অর্থনৈতিক কাঠামো, আন্তর্জাতিক অবস্থান ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য সম্পর্কে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য নিজের অভিজ্ঞতা ও গবেষণার ভিত্তিতে বিস্তারিত প্রতিবেদন ‘ফিনল্যান্ড: সম্পদ, সুশাসন ও সৌন্দর্যের এক অনন্য রাষ্ট্র’। এই প্রতিবেদনটি বিশেষভাবে প্রাসঙ্গিক, কারণ ফিনল্যান্ডে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশিরা তো বটেই, এমনকি বাংলাদেশের মানুষ অনেকেই জানেন না- এই উন্নত দেশের আয়ের প্রকৃত উৎস কী, অর্থনীতি কিভাবে চলে, তাদের সুশাসন কেমন, বা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ফিনল্যান্ডের অবস্থান কতটুকু।

এ সম্পর্কে কেউ জানতে চাইলে আমরা নিজেরাও কখনো নিশ্চিতভাবে উত্তর দিতে পারি না। এই বিষয়গুলো জানার মাধ্যমে আমাদের অভিবাসী সমাজ, শিক্ষার্থী এবং বাংলাদেশের আগ্রহী পাঠকরাও উপকৃত হবেন।

উত্তরের শান্ত, শীতল অথচ উন্নয়নশীল রাষ্ট্র ফিনল্যান্ড বিশ্বের মানচিত্রে এক অনন্য নাম। পরপর আট বছর বিশ্বের সবচেয়ে সুখী দেশের মর্যাদা অর্জনকারী এই দেশটি শুধু অর্থনৈতিকভাবে নয়, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও আন্তর্জাতিক স্তরেও এক উজ্জ্বল উদাহরণ।

প্রধান প্রাকৃতিক সম্পদ-

বনজসম্পদ: দেশটির প্রায় ৭৩ শতাংশ বনভূমি, যা ইউরোপে সর্বোচ্চ। এটি কাঠ, কাগজ ও সেলুলোজ শিল্পের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
খনিজসম্পদ: লোহা, তামা, নিকেল, সোনা, ক্রোমিয়াম, সীসা ও দস্তা। ফিনল্যান্ড ইউরোপের অন্যতম সোনার উৎপাদক।
জলসম্পদ: প্রচুর হ্রদ ও নদী রয়েছে, যা হাইড্রোইলেকট্রিক শক্তি উৎপাদন ও কাগজ শিল্পে ব্যবহৃত হয়।

প্রধান রপ্তানি পণ্য (২০২৩):

> যন্ত্রপাতি ও যান্ত্রিক উপকরণ: ১৪ দশমিক ৪ শতাংশ (প্রায় ১১ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলার)
> বিদ্যুৎ ও ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতি: ৯ দশমিক ৪ শতাংশ (প্রায় ৭ দশমিক ৮ বিলিয়ন)
> কাগজ ও সেলুলোজ: প্রায় ৭ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলার
> লোহা ও ইস্পাত: প্রায় ৬ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলার
> মোটরযান ও যন্ত্রাংশ: প্রায় ৫ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার
> কাঠ ও কাঠজাত পণ্য: প্রায় ৪ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার

প্রধান রপ্তানি গন্তব্য: জার্মানি, সুইডেন, চীন, যুক্তরাষ্ট্র ও নেদারল্যান্ডস।

প্রধান আমদানি পণ্য (২০২৩):

> খনিজ জ্বালানি ও তেল: ১৪.৬ শতাংশ (প্রায় ১২.১ বিলিয়ন ডলার)
> যন্ত্রপাতি ও যান্ত্রিক উপকরণ: ১২.৩ শতাংশ (প্রায় ১০ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার)
> বিদ্যুৎ ও ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতি: ১১ দশমিক ৬ শতাংশ (প্রায় ৯ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার)
> মোটরযান ও যন্ত্রাংশ: ৯ দশমিক ৫ শতাংশ (প্রায় ৭ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলার)
> আয়রন ও ইস্পাত: প্রায় ৩ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলার
> ওষুধ ও ফার্মাসিউটিক্যাল পণ্য: প্রায় ২ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলার

প্রধান আমদানি উৎস: জার্মানি, সুইডেন, চীন, নরওয়ে ও যুক্তরাষ্ট্র।

অর্থনৈতিক চিত্র (২০২৫):

• মোট দেশজ উৎপাদন (GDP): $৩১৯.৯৯ বিলিয়ন (নমিনাল)
• প্রতি মাথাপিছু আয়: $৫৭,১৮১ (নমিনাল)
• অর্থনৈতিক খাতের অবদান:
  - সেবা খাত: ৬৯ দশমিক ১ শতাংশ
  - শিল্প খাত: ২৮ দশমিক ২ শতাংশ
  - কৃষি খাত: ২ দশমিক ৭ শতাংশ

• বেকারত্ব হার: ৯ দশমিক ২ শতাংশ (জানুয়ারি ২০২৫)
• মুদ্রাস্ফীতি হার: ১ দশমিক ৬ শতাংশ (২০২২)
• মানব উন্নয়ন সূচক (HDI): শূন্য দশমিক ৯৪০ (২০২১), বিশ্বের ১১তম স্থান

টেকসই শক্তি ও পরিবেশ:
• বায়োমাস: ৩৮ শতাংশ
• হাইড্রোইলেকট্রিক: ৬ দশমিক ১ শতাংশ
• বায়ু শক্তি: ৩ দশমিক ৩ শতাংশ
দেশটি ২০৩৫ সালের মধ্যে কার্বন নিরপেক্ষতা অর্জনের লক্ষ্যে কাজ করছে।

আইন-শৃঙ্খলা ও সুখ:
আইন-শৃঙ্খলা ও দুর্নীতিমুক্ততার দিক থেকে ফিনল্যান্ড বিশ্বের শীর্ষে। পুলিশ ও প্রশাসনের প্রতি মানুষের আস্থা বিস্ময়করভাবে দৃঢ়। এই সুশাসন, সামাজিক সমতা, মানসম্পন্ন শিক্ষা ও স্বাস্থ্যব্যবস্থা, এবং প্রাকৃতিক ভারসাম্যই গড়েছে ‘সুখী দেশ’ - যার সুফল উপভোগ করেন প্রায় ৫৬ লাখ নাগরিক।

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও সহায়তা:
ফিনল্যান্ড ২০২৩ সালে ন্যাটোর সদস্যপদ অর্জনের মধ্য দিয়ে নিরাপত্তা নীতিতে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। আর্কটিক অঞ্চলে তার কৌশলগত অবস্থান ও পরিবেশবান্ধব কূটনীতি আন্তর্জাতিক ফোরামে তাকে বিশেষ মর্যাদা দিয়েছে। প্রতি বছর ফিনল্যান্ড প্রায় ১ বিলিয়ন ইউরো উন্নয়ন সহায়তা দিয়ে থাকে।

বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক:
বাংলাদেশ ও ফিনল্যান্ডের বাণিজ্যিক সম্পর্ক ক্রমবর্ধমান। ২০২৩ সালে বাংলাদেশ ফিনল্যান্ডে ২১৯ মিলিয়ন ডলারের তৈরি পোশাক, জুতা ও হস্তশিল্প রপ্তানি করেছে। ফিনিশ কোম্পানিগুলো বাংলাদেশের প্রযুক্তি ও টেক্সটাইল খাতে বিনিয়োগে আগ্রহী।

খেলাধুলা, সংগীত ও সৌন্দর্য:
ফিনল্যান্ডে খেলাধুলা শুধু বিনোদন নয়, জাতীয় গর্ব। আইস হকি, স্কি, ও ম্যারাথন জাতীয় খেলায় ফিনিশরা বিশ্বখ্যাত। সংগীতপ্রেমী জাতি ফিনল্যান্ড - বিশ্ববিখ্যাত সিম্ফনি রচয়িতা জঁ সিবেলিয়াস এখানকার গর্ব। মেটাল মিউজিক থেকে ক্লাসিক্যাল, সব ধারাতেই ফিনল্যান্ডের অবস্থান সুপ্রতিষ্ঠিত। সৌন্দর্য প্রতিযোগিতায়ও ফিনল্যান্ড বহুবার আন্তর্জাতিকভাবে প্রতিনিধিত্ব করেছে।

সব শেষে বলা যায়, ফিনল্যান্ড শুধুই একটি উন্নত রাষ্ট্র নয় - এটি একটি সুশৃঙ্খল, সমৃদ্ধ, মানবিক ও সংস্কৃতিবান জাতির প্রতিচ্ছবি। বাংলাদেশের জন্য এটি হতে পারে শেখার এক অনন্য ক্ষেত্র - যেখানে সুশাসন, উদ্ভাবন, শান্তি ও প্রগতির পথ এক সুসংহত নীতিতে বাঁধা।

অমিয়/

যশোর জেলার দর্শনীয় স্থান

প্রকাশ: ২০ মে ২০২৫, ০৩:২০ পিএম
আপডেট: ২০ মে ২০২৫, ০৩:২৪ পিএম
যশোর জেলার দর্শনীয় স্থান
মাইকেল মধুসূদন দত্তের বাড়ি

যশোর জেলা ভ্রমণের জন্য একটি চমৎকার গন্তব্য, যেখানে ইতিহাস, প্রকৃতি ও সংস্কৃতির অপূর্ব সংমিশ্রণ রয়েছে। এখানে রয়েছে মাইকেল মধুসূদনের জন্মভিটা, প্রাচীন জমিদার বাড়ি, পুরাকীর্তি ও মসজিদ-মন্দির। কপোতাক্ষ নদী ও বিস্তীর্ণ বিল-ঝিল পর্যটকদের মন জয় করে নেয়। শীতকালে অতিথি পাখির আগমন প্রকৃতিপ্রেমীদের আকর্ষণ করে। বেনাপোল স্থলবন্দর ঘুরে সীমান্ত অভিজ্ঞতাও নেওয়া যায়। শহরের বিভিন্ন পার্ক ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র পরিবারসহ ঘুরে দেখার উপযোগী। ভোজনপ্রেমীদের জন্য রয়েছে স্থানীয় খাবারের স্বাদ। সার্বিকভাবে যশোর শান্তিপূর্ণ ও বৈচিত্র্যপূর্ণ একটি পর্যটন জেলা। আসুন দেখে নেই যশোর জেলার কিছু দর্শনীয় স্থান সম্পর্কে।

◉ বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদের স্মৃতিসৌধ (মহেশপুর, ঝিনাইদহ সীমান্ত): ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে শহীদ নূর মোহাম্মদের স্মৃতিচিহ্ন।

◉ চাঁচড়া জমিদার বাড়ি (যশোর সদর): ঐতিহাসিক জমিদার বাড়ি, বর্তমানে ধ্বংসপ্রাপ্ত হলেও পর্যটকদের আকর্ষণ করে।

◉ নওয়াপাড়া জমিদার বাড়ি (অভয়নগর): ব্রিটিশ আমলের জমিদারদের তৈরি স্থাপনা।

◉ রানী কোঠা (ঝিকরগাছা): প্রাচীন একটি রাজপ্রাসাদ, স্থানীয়ভাবে রানী কোঠা নামে পরিচিত।

◉ বারান্দীপাড়া মসজিদ (চৌগাছা): মুঘল আমলের নিদর্শনবাহী একটি প্রাচীন মসজিদ।

◉ পূর্ব পুটখালি শিবমন্দির (শার্শা): পুরনো হিন্দু মন্দির, ধর্মীয় এবং স্থাপত্যিক দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ।

◉ রাজার দিঘি (মণিরামপুর): প্রাচীন কালের একটি দিঘি, স্থানীয় কিংবদন্তির সাথে জড়িত।

◉ মণিরামপুর রাজবাড়ি: জমিদারদের বসতবাড়ি ও দালানকোঠা।

◉ শামসুল হক টঙ্ক (যশোর শহর): শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত বিশ্রামের জায়গা।

◉ উপবন পার্ক (যশোর শহর): শিশু ও পরিবারের জন্য উপযোগী পার্ক।

 

কপোতাক্ষ নদ

 

◉ জয়নগর পার্ক: স্থানীয়দের বিশ্রাম ও প্রাতঃভ্রমণের স্থান।

◉ চৌগাছা ইকোপার্ক: প্রকৃতিপ্রেমীদের জন্য মনোমুগ্ধকর স্থান।

◉ ভেকুটিয়া বিল (কেশবপুর): শীতকালে অতিথি পাখির আগমনের জন্য পরিচিত।

◉ হাকিমপুর বিল (ঝিকরগাছা): মাছ ধরার ও পাখি দেখার সুযোগ থাকে।

◉ বড়খোলা বিল (মনিরামপুর): স্থানীয়দের অন্যতম মাছ ধরার জায়গা।

◉ বনবাড়িয়া খাল: নৌকা ভ্রমণের জন্য জনপ্রিয় একটি খাল।

◉ ভৈরব নদী: শহরের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত গুরুত্বপূর্ণ নদী।

◉ কপোতাক্ষ নদ (কেশবপুর): কাব্যিক খ্যাতির অধিকারী নদী, মাইকেল মধুসূদনের স্মৃতি বিজড়িত।

◉ তালতলা দিঘি (শার্শা): ঐতিহাসিক দিঘি, ধর্মীয় অনুষ্ঠানেও ব্যবহৃত হয়।

◉ বড়দল বিল (চৌগাছা): গ্রামীণ জীবনধারার অন্যতম প্রাকৃতিক জলাধার।

◉ বারোবাজার শাহী মসজিদ (ঝিনাইদহ সীমান্ত): ৭০০ বছরের পুরনো মসজিদ, পুরাকীর্তি।

◉ মণিরামপুর বড় মন্দির: হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের তীর্থস্থান।

◉ যশোর কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ: শহরের অন্যতম পুরাতন মসজিদ।

◉ কেশবপুর কালী মন্দির: প্রাচীন মন্দির, বিভিন্ন পূজায় হাজারো ভক্তের সমাগম হয়।

◉ নওয়াপাড়া গির্জা: খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের উপাসনালয়।

◉ মাইকেল মধুসূদন দত্তের জন্মস্থান (সাগরদাঁড়ি, কেশবপুর): বিখ্যাত কবির পৈত্রিক ভিটা ও জাদুঘর।

◉ মধুসূদন জাদুঘর (সাগরদাঁড়ি): কবির ব্যবহৃত জিনিসপত্র ও সাহিত্য সংরক্ষিত আছে।

◉ যশোর ইনস্টিটিউট: সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের কেন্দ্র।

◉ টাউন হল ময়দান: বিভিন্ন মেলা ও অনুষ্ঠান আয়োজনের স্থান।

◉ নওয়াপাড়া রেলওয়ে জংশন: দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ রেলস্টেশন।

◉ বেনাপোল স্থলবন্দর: বাংলাদেশের বৃহত্তম স্থলবন্দর।

◉ যশোর বিমানবন্দর: দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থার কেন্দ্র।

◉ গোয়ালহাটি রেলসেতু: ঐতিহাসিক ও কৌশলগত দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ।

◉ ধলগ্রাম মেলা (চৌগাছা): লোকজ সংস্কৃতির অন্যতম উৎসব।

◉ সদর উপজেলার নড়াইলঘাটা খাল: প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও গ্রামীণ দৃশ্যপট।

 

বেনাপোল স্থলবন্দর

 

◉ ছোট আঁচড়া গ্রাম (সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যবাহী): ঐতিহ্যবাহী নকশিকাঁথা ও হস্তশিল্প।

◉ কেশবপুর হস্তশিল্প কেন্দ্র: স্থানীয় নারীদের তৈরি হস্তশিল্পের প্রদর্শনী ও বিক্রয়কেন্দ্র।

◉ ঝিকরগাছা চিত্রশিল্প গ্রাম: চিত্রশিল্প ও কুমারশিল্পের জন্য বিখ্যাত।

◉ মণিরামপুরের কুমারপাড়া: মৃৎশিল্প তৈরির গ্রাম।

◉ বড় আড়পাড়া পীরের দরগা: ধর্মীয় ও সামাজিক সমাগমস্থল।

সতর্কতা
যশোর ভ্রমণের সময় কিছু সতর্কতা অবলম্বন করলে আপনার ভ্রমণ হবে নিরাপদ, আরামদায়ক ও উপভোগ্য। যেমন —

❏ সীমান্ত এলাকা ঘোরার সময় সতর্ক থাকুন, প্রয়োজন হলে স্থানীয় প্রশাসনের পরামর্শ নিন।
❏ রাত্রিকালীন ভ্রমণ এড়িয়ে চলুন বিশেষ করে অজপাড়াগাঁ বা সীমান্তবর্তী এলাকায়।
❏ জনসমাগমপূর্ণ স্থানে ব্যাগ, মোবাইল ও মানিব্যাগ সতর্কভাবে রাখুন। 
❏ বর্ষাকালে গেলে বৃষ্টির উপযোগী পোশাক ও ছাতা রাখুন।
❏ গ্রামীণ বা জলাশয় এলাকাগুলোয় ঘোরার সময় মশার প্রতিরোধক ব্যবহার করুন।
❏ বিশুদ্ধ পানি পান করুন এবং অচেনা জায়গা থেকে খাবার কেনার আগে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা যাচাই করুন।
❏ ধর্মীয় স্থানে উপযুক্ত পোশাক পরিধান করুন এবং আচরণে ভদ্রতা বজায় রাখুন।
❏ স্থানীয়দের অনুমতি ছাড়া ছবি তুলবেন না, বিশেষ করে ব্যক্তিগত জায়গা বা মানুষদের।
❏ গুগল ম্যাপ বা লোকাল গাইড সঙ্গে রাখুন। যদি গ্রামে যান, তাহলে মোবাইল নেটওয়ার্ক দুর্বল হতে পারে।
❏ প্রয়োজনে পুলিশের সহায়তা নিন (৯৯৯) বা স্থানীয় টুরিস্ট হেল্পলাইন ব্যবহার করুন।

আপনি যদি পরিবারসহ ভ্রমণ করেন, তাহলে এই সতর্কতাগুলো আরও গুরুত্বের সাথে মানা উচিত।

ফিনল্যান্ডে গ্রীষ্মে সেরা গন্তব্য স্যোমেনলিন্না দুর্গ দ্বীপ

প্রকাশ: ১৭ মে ২০২৫, ১২:১৮ পিএম
আপডেট: ১৭ মে ২০২৫, ১২:২৫ পিএম
ফিনল্যান্ডে গ্রীষ্মে সেরা গন্তব্য স্যোমেনলিন্না দুর্গ দ্বীপ
ফিনল্যান্ডের স্যোমেনলিন্না দুর্গ দ্বীপ। ছবি: জামান সরকার

ফিনল্যান্ডে যখন দীর্ঘ শীত শেষে আসে গ্রীষ্ম, তখনই যেন প্রকৃতি নতুন করে প্রাণ ফিরে পায়। পাহাড়-জঙ্গল, হ্রদ-নদী আর শহরের প্রতিটি প্রান্ত হয়ে ওঠে আলোকোজ্জ্বল, উষ্ণ আর প্রাণবন্ত। এই সময়েই হাজারো মানুষ স্বজন, পরিবার বা বন্ধুদের নিয়ে ঘুরে বেড়ান সারা দেশে ছড়িয়ে থাকা অসাধারণ সব পর্যটনস্থানে। আর তাদের পছন্দের শীর্ষে থাকে হেলসিঙ্কির উপকূলে অবস্থিত স্যোমেনলিন্না দুর্গ দ্বীপ। যা ইতিহাস, স্থাপত্য ও প্রকৃতির এক দুর্লভ মিলনস্থল।

স্যোমেনলিন্নার ঐতিহাসিক গুরুত্ব: ৩০০ বছরের সাক্ষী
স্যোমেনলিন্না (Suomenlinna) দুর্গের নির্মাণকাজ শুরু হয় ১৭৪৮ সালে। তখন ফিনল্যান্ড ছিল সুইডেনের অংশ। সে সময় রাশিয়ার বর্ধিত সামরিক ক্ষমতা ঠেকাতে এটি ছিল একটি গুরুত্বপূর্ণ সমুদ্র প্রতিরক্ষা ঘাঁটি। Sveaborg নামে পরিচিত এই দুর্গটি নির্মাণ করেন সুইডিশ সেনা প্রকৌশলীরা। তাদের নকশায় দ্বীপজুড়ে গড়ে ওঠে ব্যারাক, কামান ঘাঁটি, গোপন টানেল ও সামুদ্রিক দুর্গ প্রাচীর।

১৮০৮ সালে ফিনল্যান্ড যখন রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে আসে, তখন স্যোমেনলিন্না রুশদের নিয়ন্ত্রণে চলে যায়। এখান থেকে পরিচালিত হয় সামরিক তৎপরতা এবং বহু যুদ্ধের সাক্ষী হয়ে ওঠে এই দ্বীপ। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পর্যন্ত এটি ব্যবহৃত হয় সামরিক ঘাঁটি হিসেবে। ১৯৭৩ সালে এটি ফিনল্যান্ডের প্রতিরক্ষা বাহিনীর হাত থেকে জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা হয়। ১৯৯১ সালে ইউনেস্কো স্যোমেনলিন্নাকে বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।

দুর্গ, দ্বীপ ও সাগরের অপূর্ব মিলন
স্যোমেনলিন্না একটি দুর্গমাত্র নয়- এটি মূলত ছয়টি দ্বীপ নিয়ে গঠিত একটি বিশাল এলাকা, যার প্রতিটি কোণে ইতিহাস আর প্রকৃতির সম্মিলন। পাথরের গাঁথুনি, কামান, সুড়ঙ্গ, প্রাচীন ব্যারাক- প্রতিটি স্থাপনা যেন ইতিহাসের গল্প শোনায়। দ্বীপের চারপাশ ঘেরা নীল সমুদ্র এবং সবুজ গাছপালা এক অপার্থিব দৃশ্য তৈরি করে।

গ্রীষ্মে বাড়ে পর্যটকদের ভিড়
স্যোমেনলিন্না ফিনল্যান্ডের সবচেয়ে জনপ্রিয় পর্যটন গন্তব্যগুলোর একটি। সরকারি হিসাব অনুযায়ী, প্রতি বছর প্রায় ১০ লাখেরও বেশি পর্যটক এই দুর্গ দ্বীপে ভ্রমণ করেন। তাদের বড় একটি অংশই আসেন গ্রীষ্মকালে - যখন আবহাওয়া অনুকূল, সূর্য প্রায় মধ্যরাত পর্যন্ত থাকে, এবং দ্বীপে অনুষ্ঠিত হয় নানা সাংস্কৃতিক আয়োজন।

পর্যটকদের মধ্যে ফিনিশদের পাশাপাশি জার্মানি, সুইডেন, ফ্রান্স, চীন ও জাপানের ভ্রমণকারীর সংখ্যা উল্লেখযোগ্য। অনেকেই পরিবার নিয়ে পিকনিক করতে আসেন, কেউ ইতিহাস জানতে, আবার কেউ ক্যামেরা হাতে প্রকৃতির রূপ ধরে রাখতে।

দেখার মতো গুরুত্বপূর্ণ স্থানসমূহ
স্যোমেনলিন্না মিউজিয়াম – দুর্গের ২৫০ বছরের ইতিহাস সংরক্ষিত যেখানে।
ভেসিকাসারমি গ্যালারি – সমসাময়িক শিল্প ও ফটোগ্রাফির প্রদর্শনী।
রাণীর গেট (King's Gate) – রাশিয়াবিরোধী প্রতিরক্ষা প্রবেশদ্বার। এটি এখন পর্যটকদের ছবি তোলার প্রিয় স্থান।
গোপন টানেল ও কামানঘাঁটি – যুদ্ধে ব্যবহৃত কৌশলগত পথ ও স্থাপনা।
পার্ক ও সবুজ খোলা মাঠ – শিশুদের খেলার মাঠ, পিকনিক স্পট এবং সূর্যস্নানের উপযুক্ত স্থান।

যেভাবে পৌঁছাবেন:
হেলসিঙ্কির কেন্দ্রে অবস্থিত Kauppatori থেকে প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে রাত পর্যন্ত ঘনঘন ফেরি চলে স্যোমেনলিন্নার উদ্দেশ্যে। যাত্রা সময় মাত্র ১৫-২০ মিনিট। ট্রাম বা বাসে সহজেই Kauppatori পৌঁছানো যায়।

গ্রীষ্মকালে স্যোমেনলিন্নার প্রাণবন্ত আয়োজন:
গ্রীষ্মকালে দ্বীপটিতে একের পর এক আয়োজনে মুখর থাকে। এর মধ্যে উন্মুক্ত মঞ্চনাটক, লাইভ কনসার্ট ও জ্যাজ নাইট. লোকজ শিল্প প্রদর্শনী ও হস্তশিল্পের মেলা, শিশুদের জন্য থিয়েটার ও ম্যাজিক শো।

এছাড়া, দ্বীপের ক্যাফেগুলোতে পাওয়া যায় ফিনল্যান্ডের ঐতিহ্যবাহী korvapuusti পেস্ট্রি, ব্ল্যাক কফি, আর্কটিক বেরির জুস ও স্থানীয় খাবার।

ভ্রমণকারীদের জন্য পরামর্শ:
টিকিট অগ্রিম কেটে নিন, বিশেষ করে গ্রীষ্মের উইকেন্ডে। আরামদায়ক জুতো পরুন, কারণ - ঘুরে দেখার জন্য হাঁটতে হয় অনেক।
গাইডেড ট্যুর নিলে দুর্গের ইতিহাস ও কৌশলগত গুরুত্ব আরও ভালোভাবে বোঝা যায়। ছবি তোলার জন্য ক্যামেরা সঙ্গে রাখুন, বিশেষ করে King's Gate, Bastion Zander ও পশ্চিম দিকের সমুদ্রতীর অসাধারণ।

পরিশেষে বলা যায়, স্যোমেনলিন্না শুধু একটি পুরনো দুর্গ নয়- এটি ইতিহাসের পৃষ্ঠায় লেখা এক জীবন্ত চিত্র। ফিনল্যান্ডে গ্রীষ্মকালে ভ্রমণের জন্য এটি নিঃসন্দেহে সেরা গন্তব্যগুলোর একটি। যেখানে ইতিহাস, প্রকৃতি এবং সমুদ্র মিলিয়ে গড়ে উঠেছে এক অনন্য সাংস্কৃতিক ও পর্যটন অভিজ্ঞতা। এখানে গেলে আপনি শুধু একটি স্থান দেখবেন না- আপনি ছুঁয়ে দেখবেন সময়কে, নিঃশ্বাস নেবেন ইতিহাসে।

>> ফিনল্যান্ডে গ্রীষ্মে যে স্থানে সূর্য ডুবে না

অমিয়/

সীতাকুণ্ডের গহিনে লুকিয়ে থাকা এক জলপ্রপাতের গল্প

প্রকাশ: ১৬ মে ২০২৫, ০১:২৮ পিএম
আপডেট: ১৬ মে ২০২৫, ০১:৩০ পিএম
সীতাকুণ্ডের গহিনে লুকিয়ে থাকা এক জলপ্রপাতের গল্প
ছাগলকান্দা ঝরনা

ছাগলকান্দা ঝরনা চট্টগ্রাম বিভাগের সীতাকুণ্ড উপজেলার এক মনোরম ও অপেক্ষাকৃত কম পরিচিত প্রাকৃতিক জলপ্রপাত। এটি মূলত সীতাকুণ্ডের কমলদহ ট্রেইলে অবস্থিত এবং কমলদহ ঝরনার ধারাবাহিকতায় উপরের দিকে অবস্থিত হওয়ায় অনেকেই একে ‘কমলদহ-২’ বলেও ডাকেন। ভ্রমণপ্রেমীদের কাছে এটি এক অপার বিস্ময়ের নাম হয়ে উঠছে ধীরে ধীরে।
এই ঝরনাটি একটি ক্যাসকেড (ধাপে ধাপে গঠিত) টাইপের ঝরনা, যার তিনটি ধাপ রয়েছে। নিচ থেকে সাধারণত প্রথম ধাপটিই সহজে দেখা যায়। বাকি দুটি ধাপে পৌঁছাতে হলে আপনাকে উঁচু পাহাড়ি পথে আরোহণ করতে হবে, যা একদিকে যেমন রোমাঞ্চকর, তেমনই ঝুঁকিপূর্ণও হতে পারে। বর্ষাকালে ঝরনার পানি প্রবাহ সবচেয়ে বেশি থাকে এবং তখন ঝরনার সৌন্দর্য প্রকৃত অর্থে প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে।
ছাগলকান্দা ঝরনায় পৌঁছানোর জন্য প্রথমে ঢাকাসহ অন্যান্য বড় শহর থেকে সীতাকুণ্ড উপজেলার বড় দারোগারহাট বাজারে যেতে হবে। এই বাজার থেকে মহাসড়কের পাশে একটি মাটির পথ ধরে ২৫-৩০ মিনিট হেঁটে ঝিরিপথে পৌঁছাতে হয়। এই ঝিরিপথ ধরে হাঁটলে প্রথমে দেখা যায় কমলদহ ঝরনা, এরপর পাহাড়ি পথে উঠে ছাগলকান্দা ঝরনায় পৌঁছাতে হয়। যাত্রাপথটি কষ্টসাধ্য হলেও প্রাকৃতিক দৃশ্য, ঝিরিপথে হাঁটার অভিজ্ঞতা, পাখির কুজন এবং পানির শব্দ- সব মিলিয়ে এটি এক চমৎকার অভিজ্ঞতা।
ঝরনা দর্শনের সবচেয়ে উপযুক্ত সময় হলো বর্ষাকাল (জুন থেকে সেপ্টেম্বর)। তবে এই সময় পথ অনেকটাই পিচ্ছিল ও দুর্গম হয়ে পড়ে, তাই সাবধানে চলাফেরা করা অত্যন্ত জরুরি। গ্রুপে গিয়ে গাইডের সহায়তা নেওয়া বাঞ্ছনীয়। নিরাপত্তার স্বার্থে ঝরনার উঁচু ধাপে না উঠাই ভালো, বিশেষ করে যদি আপনার অভিজ্ঞতা কম থাকে।
সব মিলিয়ে ছাগলকান্দা ঝরনা হলো এক নিখুঁত গন্তব্য- যেখানে প্রকৃতির সান্নিধ্যে আপনি পেতে পারেন মানসিক প্রশান্তি, রোমাঞ্চকর অভিযান এবং অপার সৌন্দর্যের ছোঁয়া। এটি এমন একটি স্থান, যা একবার গেলে স্মৃতির পাতায় আজীবন জায়গা করে নেবে।

কীভাবে যাবেন
ঢাকা থেকে ছাগলকান্দা ঝরনায় যেতে চাইলে প্রথমে চট্টগ্রামগামী বাসে চরে জনপ্রতি ৪০০-১২০০ টাকা ভাড়ায় সীতাকুণ্ডের বড় দারোগারহাট বাজারে চলে আসুন। আর ট্রেনে করে যেতে চাইলে সবচেয়ে ভালো হয় ফেনী রেলওয়ে স্টেশন নেমে গেলে। ট্রেনের টিকিটের ভাড়া জনপ্রতি ২৬৫-৯০৯ টাকা। ফেনী রেলওয়ে স্টেশন থেকে লোকাল বাসে করে বড় দারোগারহাট বাজারে চলে আসতে পারবেন।
বড় দারোগারহাট বাজার থেকে ঢাকার দিকে এগিয়ে গেলে একটা ইটখোলা পাবেন। এই ইটখোলা পার হয়ে ডানের মাটির রাস্তা ধরে কিছুদূর গেলে ঝিরি পথ দেখা যাবে। মূলত এই ঝিরি পথ ধরেই কমলদহ ঝরনার দেখা পাওয়া যাবে। কমলদহ ঝরনা পার হয়ে ঝিরি পথ ধরে ওপরের দিকে গেলে ছাগলকান্দা ঝরনা পৌঁছে যাবেন।
কমলদহ ঝরনার ওপরে ওঠে ছোট একটি ক্যাসকেড পার হয়ে ঝিরি পথে কিছুটা এগিয়ে গেলে সামনে দেখতে পাবেন ঝিরি পথ দুই ভাগ হয়ে ডান ও বাম দিকে চলে গেছে। প্রথমে হাতের বাম দিকের ঝিরি পথ ধরে এগিয়ে যান। এই ঝিরি পথে গেলে কিছুটা দূর গেলে আবারও হাতের ডান দিকে আরেকটি ঝিরি পথ পাবেন। সোজা ঝিরি পথে একটু এগোলেই ছাগলকান্দা ঝরনা দেখতে পাবেন।

কোথায় থাকবেন 
মিরসরাইতে রাত্রি যাপন করার মতো তেমন কোনো আবাসিক হোটেল নেই। সেজন্য আপনাকে থাকতে হবে সীতাকুণ্ডে। সীতাকুণ্ডে বাজারের মধ্যে কয়েকটি আবাসিক হোটেল রয়েছে। তার মধ্যে একটি হচ্ছে সাইমুন হোটেল। এর ভাড়া পড়বে প্রায় ৩০০ থেকে ৫০০ টাকার মধ্যে।
খুব বেশি উন্নত মানের রেস্তোরাঁ বা হোটেল পাওয়া যাবে না এখানে। তা ছাড়া সরকারি প্রতিষ্ঠানের ডাকবাংলোও রয়েছে। আবার আরও কিছুটা ভালো মানের হোটেল পাওয়া যাবে বারৈয়ারহাট বা ভাটিয়ারীতে। এগুলোর সিঙ্গেল রুম নন-এসির ভাড়া ৬০০ টাকা এবং দুই বিছানার এসি রুমের ভাড়া পড়বে ১২০০ টাকা।

সতর্কতা 
পাহাড়ি ঝরনা দেখতে যাওয়া এক দারুণ অভিজ্ঞতা হলেও এর সঙ্গে কিছু ঝুঁকিও জড়িত থাকে। নিরাপদ ও আনন্দদায়ক ভ্রমণের জন্য নিচের সতর্কতাগুলো মেনে চলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ-
◉ সঠিক পোশাক ও জুতা পরুন। পাহাড়ি পথে হাঁটার জন্য গ্রিপযুক্ত, স্লিপরোধী জুতা পরা ভালো।
◉ হালকা ও দ্রুত শুকায় এমন কাপড় পরা ভালো; সুতির কাপড় পানিতে ভিজলে ভারী হয়ে যায়।
◉ মৌসুম বুঝে যান। বর্ষাকালে ঝরনায় পানি বেশি থাকে, ঝুঁকিও বেশি থাকে। এ সময় পথ পিচ্ছিল হয়ে পড়ে।
◉ শুষ্ক মৌসুমে পানি কম থাকতে পারে, তবে পথ অপেক্ষাকৃত নিরাপদ।
◉ ঝরনার আশপাশের পাথরগুলো ভেজা ও পিচ্ছিল থাকে, সেখানে পা রাখার সময় খুব সাবধানে চলুন।
◉ ঝরনার নিচে সাঁতার বা ঝাঁপ না দেওয়া। পানির গভীরতা বোঝা কঠিন, নিচে পাথরও থাকতে পারে। অজানা জায়গায় ঝাঁপ দিলে গুরুতর আঘাত পেতে পারেন।
◉ পাহাড়ি পথে একা না গিয়ে দলবদ্ধভাবে যান। একজন বিপদে পড়লে অন্যরা সহায়তা করতে পারে।
◉ পথ না চেনা থাকলে স্থানীয় গাইড নিতে পারেন। এতে পথ হারানোর বা বিপদে পড়ার আশঙ্কা কমে।
◉ পর্যাপ্ত খাবার ও পানি সঙ্গে রাখুন। পাহাড়ি পথে দোকান না-ও থাকতে পারে, তাই শুকনো খাবার ও বিশুদ্ধ পানি সঙ্গে নিন।
◉ পাওয়ার ব্যাংক বা অতিরিক্ত চার্জড মোবাইল রাখুন। দুর্যোগপূর্ণ অবস্থায় যোগাযোগের জন্য এটি গুরুত্বপূর্ণ।
◉ ছোটখাটো আঘাত, কেটে যাওয়া বা মশার কামড়ের জন্য ব্যান্ডেজ, অ্যান্টিসেপটিক, ওষুধ রাখুন।
◉ এখানে সেখানে কোনো ধরনের পলিথিন, বোতল বা খাবারের প্যাকেট না ফেলে প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষা করুন।
◉ পানির স্রোত বা আকস্মিক বন্যা সম্পর্কে সচেতন থাকুন। ঝরনার উৎসে হঠাৎ পানি বাড়লে আকস্মিক বন্যা হতে পারে। আবহাওয়ার পূর্বাভাস দেখে ভ্রমণ করুন।
এই সাবধানতাগুলো মেনে চললে পাহাড়ি ঝরনা ভ্রমণ হয়ে উঠবে নিরাপদ, উপভোগ্য ও স্মরণীয়।

চট্টগ্রামের আরও কিছু দর্শনীয় স্থান
চট্টগ্রাম বাংলাদেশের একটি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর ও ঐতিহাসিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ জেলা। এখানে পাহাড়, সমুদ্র, ঝরনা ও ধর্মীয় স্থাপনাসহ অনেক দর্শনীয় স্থান রয়েছে। যেমন পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকত, ফয়’স লেক, বাটালি হিল, সীতাকুণ্ড ইকো পার্ক ও বোটানিক্যাল গার্ডেন, চন্দ্রনাথ পাহাড় ও মন্দির, মহামায়া লেক, গুলিয়াখালী সমুদ্রসৈকত, কর্ণফুলী নদী, সুবর্ণদ্বীপের পাশে নতুন পর্যটন স্পট, কমলদহ ঝরনা-১, হাটহাজারী বড় মাদরাসা ও মসজিদ, চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা, বায়েজিদ বোস্তামী দরগাহ ও কচ্ছপ পুকুর, ডুমুরিয়া ঝরনা, আলি কদমের নাফাখুম জলপ্রপাতের মতো পাহাড়ি দৃশ্য, মিনি বাংলাদেশ, চট্টগ্রাম জাদুঘর, শাহ আমানত সেতু ও কর্ণফুলী টানেল এলাকা, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও তার পাহাড়ি ট্রেইল ও লেকে ভ্রমণ। এগুলোর অনেকগুলোই পাহাড়, সমুদ্র ও ঝরনার মিশেলে গঠিত হওয়ায় চট্টগ্রাম প্রকৃতিপ্রেমীদের জন্য এক স্বর্গভূমি।

বগুড়া জেলার দর্শনীয় স্থান

প্রকাশ: ১৫ মে ২০২৫, ০৪:৪৯ পিএম
আপডেট: ১৫ মে ২০২৫, ০৫:০৪ পিএম
বগুড়া জেলার দর্শনীয় স্থান
বগুড়া জেলা বাংলাদেশে পর্যটনের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ও ঐতিহাসিক স্থান।

বগুড়া জেলা বাংলাদেশে পর্যটনের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ও ঐতিহাসিক স্থান। এখানে প্রাচীন ইতিহাস, প্রত্নতত্ত্ব, ধর্মীয় নিদর্শন এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপূর্ব সমন্বয় রয়েছে। মহাস্থানগড় ও গোকুল মেধ প্রাচীন বাংলার সভ্যতা ও সংস্কৃতির সাক্ষ্যবহন করে। এগুলো পর্যটকদের ইতিহাসচর্চা ও ঐতিহ্যের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার সুযোগ করে দেয়।
করতোয়া ও যমুনা নদীর পাড়, সারিয়াকান্দি ঘাট, ধুনট ও শিবগঞ্জ এলাকার প্রাকৃতিক দৃশ্য পর্যটকদের বিমোহিত করে। সেই সঙ্গে, বগুড়ার বিভিন্ন মন্দির, মসজিদ, মাজার ও জমিদার বাড়ি ধর্মীয় ও স্থাপত্যিক গুরুত্ব বহন করে। শহরের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত পার্ক, খেলার মাঠ ও যাত্রাবিরতির জায়গাগুলোও ভ্রমণপিপাসুদের জন্য আকর্ষণীয়।
বগুড়ার খাবার, বিশেষ করে দই ও চিতই পিঠা, ভোজনরসিক পর্যটকদের জন্য বাড়তি আকর্ষণ। সড়ক ও রেলপথে সহজ যোগাযোগ এবং শহরের নিরাপদ পরিবেশও পর্যটনে ইতিবাচক ভূমিকা রাখে। সব মিলিয়ে বগুড়া ঐতিহ্য ও আধুনিকতার এক অনন্য মিশ্রণে পর্যটকদের জন্য একটি সমৃদ্ধ অভিজ্ঞতা উপহার দিতে সক্ষম।

আসুন দেখে নেই বগুড়া জেলার কিছু দর্শনীয় স্থান —

▶ মহাস্থানগড়: বাংলার প্রাচীন রাজধানী পুণ্ড্রনগরের অবশেষ। খ্রিস্টপূর্ব ৩য় শতাব্দীর ঐতিহাসিক দুর্গনগরী।

▶ গোকুল মেধ (বেহুলার বাসর ঘর): মহাস্থানগড়ের কাছে অবস্থিত প্রাচীন একটি পুরাকীর্তি। এটি মহাভারতের সঙ্গে সম্পৃক্ত একটি ঐতিহাসিক স্থান।

▶ ভাসুবিহার: বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের প্রাচীন বিহার। প্রত্নতাত্ত্বিক খননে বহু মূল্যবান নিদর্শন উদ্ধার হয়েছে।

▶ জলেশ্বরীতলা মন্দির: হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের একটি ঐতিহাসিক পূজাস্থল। মহাস্থানগড়ের কাছে অবস্থিত।

▶ পরশুরাম প্যালেস: নবাব আমলের জমিদার বাড়ি, ইতিহাসপ্রেমীদের জন্য আকর্ষণীয় স্থান।

 

পরশুরাম প্যালেস

 

▶ কাহালু রাজবাড়ি: জমিদার আমলের একটি প্রাচীন রাজবাড়ি, এখন ঐতিহ্যবাহী স্থাপত্য নিদর্শন।

▶ বারভিপি মসজিদ: মুঘল স্থাপত্যশৈলীর প্রাচীন মসজিদ। দৃষ্টিনন্দন কারুকাজে পরিপূর্ণ।

▶ শিবগঞ্জ জমিদার বাড়ি: শিবগঞ্জ উপজেলার একটি দৃষ্টিনন্দন পুরনো জমিদার বাড়ি।

▶ মহাস্থান হাইস্কুল: উপমহাদেশের প্রাচীনতম স্কুলগুলোর একটি, স্থাপত্য ও ঐতিহ্যের সাক্ষী।

▶ সান্তাহার রেলওয়ে স্টেশন: ঐতিহাসিক ও গুরুত্বপূর্ণ রেলওয়ে জংশন। ব্রিটিশ আমলের স্থাপত্যচিহ্ন।

 

মহাস্থানগড়

 

▶ করতোয়া নদী: বগুড়ার প্রধান নদী, মহাস্থানগড় ও আশপাশের এলাকার সৌন্দর্য বাড়িয়েছে।

▶ শাহ সুলতান বলখী (রহ.) মাজার: একজন মুসলিম সাধকের মাজার, স্থানীয়দের কাছে পবিত্র স্থান।

▶ সারিয়াকান্দির যমুনা নদীর পাড়: নদীভ্রমণ ও প্রকৃতিপ্রেমীদের জন্য উপযুক্ত স্থান।

▶ আড়িয়াবাড়ি জমিদার বাড়ি: ঐতিহাসিক জমিদার বাড়ি, এখন ধ্বংসপ্রায় অবস্থায় থাকলেও ইতিহাসের সাক্ষ্য দেয়।

▶ কাহালুর মসজিদ: প্রাচীন স্থাপত্যের অন্যতম উদাহরণ, ধর্মীয় ও ঐতিহাসিক গুরুত্বসম্পন্ন।

 

সান্তাহার রেলওয়ে স্টেশন

 

▶ গাবতলী ফিসারিজ: মৎস্য খামার ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র; প্রাকৃতিক পরিবেশে বিশ্রাম ও ভ্রমণের জায়গা।

▶ নন্দীগ্রাম সেচ প্রকল্প: সেচ কার্যক্রম দেখার পাশাপাশি প্রকৃতিপ্রেমীদের জন্য উপযোগী।

▶ নওদাপাড়া বটগাছ: প্রায় শতবর্ষী বটগাছ, এলাকার অন্যতম আকর্ষণ।

▶ ধুনটের পল্লী জীবনের দৃশ্য: প্রকৃতি ও গ্রামীণ জীবনযাত্রা পর্যবেক্ষণের সুযোগ।

▶ ফাঁপোড় খাল: অবসর সময় কাটাতে একটি শান্তিপূর্ণ জায়গা।

▶ খান্দার রাজবাড়ি: ইতিহাস ঘেরা এক জমিদার বাড়ি, স্থাপত্যে প্রাচীনতার ছাপ।

▶ শিবগঞ্জ নীলকুঠি: ইংরেজ শাসনামলের নীলচাষ কেন্দ্র।

 

করতোয়া সেতু

 

▶ চেলোপাড়া মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি স্তম্ভ: ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের স্মরণে নির্মিত।

▶ বগুড়া শহীদ খোকন পার্ক: বাচ্চাদের খেলার উপযোগী পার্ক, পরিবারের জন্য আদর্শ।

▶ মাটিডালি বিমানঘাঁটি: পূর্বে ব্যবহৃত ছোট বিমানঘাঁটি, এখন পরিত্যক্ত হলেও দর্শনীয়।

▶ ঠেঙ্গামারা জুট মিল: একটি বৃহৎ শিল্প প্রতিষ্ঠান, শিল্পায়নের সাক্ষী।

▶ সরকার পুকুর: বড় পুকুর যা স্থানীয়দের মধ্যে ঐতিহাসিকভাবে পরিচিত।

▶ রাণীরপুকুর: একসময়ের রাজ পরিবার দ্বারা খননকৃত পুকুর।

▶ করতোয়া সেতু: নদীর ওপর নির্মিত পুরনো সেতু, স্থাপত্য ও প্রকৃতির সংমিশ্রণ।

 

নলডাঙ্গা রাজবাড়ি

 

▶ ফুলবাড়ী জমিদার বাড়ি: পুরনো জমিদার প্রাসাদ, বর্তমানে ঐতিহ্যচিহ্ন।

▶ নলডাঙ্গা রাজবাড়ি: ঐতিহাসিকভাবে সমৃদ্ধ জমিদার বাড়ি।

▶ চাঁদপুর ঘাট: যমুনা নদীর পাড়ে অবস্থিত একটি জনপ্রিয় ঘাট।

▶ গোকুল চৌধুরীর বাড়ি: এক সময়ের ধনী ব্যবসায়ীর ঐতিহ্যবাহী বাড়ি।

▶ ভাটকান্দি বিল: প্রাকৃতিক জলাশয়, মাছ ধরা ও পাখি দেখার স্থান।

▶ আমরুল ইউথ পার্ক: বগুড়া শহরতলিতে অবস্থিত বিনোদন কেন্দ্র।

▶ কালীতলা মন্দির: প্রাচীন হিন্দু মন্দির, ধর্মীয় ও ঐতিহাসিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

 

করতোয়া নদী

 

▶ শাজাহানপুর কৃষি খামার: কৃষিভিত্তিক গবেষণা ও দেখার উপযুক্ত স্থান।

▶ আদমদীঘি শালবন: প্রাকৃতিক শালগাছের বনভূমি, প্রকৃতিপ্রেমীদের জন্য আকর্ষণীয়।

▶ আমরুল মডেল পার্ক: পরিবারসহ ঘোরাঘুরির জন্য জনপ্রিয় পার্ক।

▶ বারপুর নবাব বাড়ি: বগুড়ার এক ঐতিহাসিক নবাব পরিবারের বাসভবন।


সতর্কতা 

বগুড়া ভ্রমণের সময় আনন্দদায়ক ও নিরাপদ অভিজ্ঞতা নিশ্চিত করতে কিছু গুরুত্বপূর্ণ সতর্কতা মেনে চলা উচিত। যেমন —

❏ আবহাওয়ার পূর্বাভাস দেখে রওনা দিন: বর্ষাকালে নদী ভ্রমণ বা প্রাচীন স্থানে যাওয়া ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। আগে থেকে আবহাওয়ার খবর জেনে নিন।
❏ ঐতিহাসিক স্থানে সাবধানে চলাফেরা করুন: মহাস্থানগড়, গোকুল মেধসহ প্রত্নতাত্ত্বিক স্থানগুলোতে অনেক জায়গায় খোলা গর্ত বা ভাঙা গঠন থাকতে পারে। ছবি তোলার সময় সতর্ক থাকুন।

 

বগুড়া


❏ স্থানীয় নিয়ম ও সংস্কৃতি সম্মান করুন: ধর্মীয় স্থান বা মাজারে প্রবেশের সময় পোশাক ও আচরণে শালীনতা বজায় রাখুন।
❏ অজানা খাবার খাওয়ার ক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বন করুন: পথের পাশে বিক্রি হওয়া খাবার খাওয়ার আগে বিশুদ্ধতা যাচাই করুন। পানিবাহিত রোগের ঝুঁকি এড়াতে বোতলজাত পানি পান করুন।
❏ নদী বা খালে নামার সময় সতর্ক থাকুন: সারিয়াকান্দি, যমুনা নদী বা বিল এলাকায় স্রোতের গতি বা গভীরতা বুঝে নামুন।
❏ প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট ও ওষুধ সঙ্গে রাখুন: পরিচয়পত্র, জরুরি ওষুধ এবং মোবাইল চার্জারসহ প্রয়োজনীয় জিনিস সঙ্গে রাখুন।
❏ রাতের বেলায় অজানা জায়গায় ঘোরাফেরা এড়িয়ে চলুন: অজানা বা নির্জন জায়গায় নিরাপত্তা বিবেচনায় রাতে না যাওয়াই ভালো।

এসব সতর্কতা মেনে চললে বগুড়া ভ্রমণ হবে আনন্দদায়ক, নিরাপদ এবং স্মরণীয়।