আল্লাহতায়ালা প্রতিটি বস্তু জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্টি করেছেন। জিন জাতির মধ্যেও রয়েছে নর-নারীর জোড়া। মানুষের মতো তাদেরও রয়েছে বিয়েশাদি ও বাচ্চা প্রজননের নির্ধারিত প্রক্রিয়া। পবিত্র কোরআনে জান্নাতি রমণীদের কুমারিত্বের বর্ণনায় এসেছে যে, ‘তাদের কোনো মানুষ বা জিন স্পর্শ করেনি।’ (সুরা আর রহমান, আয়াত: ৫৬)
অনেকেই মনে করে জিনের সঙ্গে মানুষের বিয়ে সম্ভব। আগে কখনো কখনো তাদের মাঝে বিয়ে হয়েছে। কোরআনের একটি আয়াত, সাহাবি এবং তাবিয়িদের থেকে কিছু বর্ণনা থেকে তারা এমনটা মনে করে থাকেন। আল্লাহ শয়তানকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘আর তুই তাদের (মানুষের) ধন-সম্পদ ও সন্তানসন্ততির মধ্যে অংশীদার হ এবং তাদেরকে (মিথ্যা) প্রতিশ্রুতি দিতে থাক। তাদের প্রতি শয়তানের অঙ্গীকার ধোঁকা ছাড়া কিছুই নয়।’ (সুরা ইসরা, আয়াত: ৬৪)
সুদ ও হারাম পন্থায় সম্পদ উপার্জন ও ব্যয় করার মাধ্যমে শয়তান মানুষের সম্পদে অংশীদার হয়। আর জিনা অথবা স্ত্রী সহবাসের সময় যারা ‘বিসমিল্লাহ’ বলে না, শয়তান তাদের কর্মে অংশীদার হয়। ইমাম আল-হাকিমুত তিরমিজি মুজাহিদ (রহ.) থেকে বর্ণনা করেন, ‘স্ত্রী সহবাস করার সময় যে ব্যক্তি ‘বিসমিল্লাহ’ বলে না, শয়তান তার সাথে স্ত্রী-সহবাসে লিপ্ত হয়।’ (নাওয়াদিরুল উসুল, আল-হাকিমুত তিরমিজি, খণ্ড: ১, পৃষ্ঠা: ৩৮৪)
মুজাহিদ (রহ.) বলেন, ‘ইয়েমেনের সাবা অঞ্চলের রানি বিলকিসের মা ছিল একজন দীর্ঘ কেশিনী নারী জিন।’ (মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা, হাদিস: ৩১৮৬০)
শরিয়তের বিধান সাব্যস্ত করার ক্ষেত্রে এ ধরনের বর্ণনা গ্রহণযোগ্য নয়। যদিও ইতিহাসের পাতায় বর্ণনাগুলো উঠে এসেছে।
অধিকাংশ ফকিহ জিনের সঙ্গে মানুষের বিয়েশাদি নিষেধ করেছেন; চাই সে পুরুষ হোক বা নারী। মানুষ ও জিন আলাদা জাতি। মৌলিক উপাদান ভিন্ন হওয়া এটির বড় প্রমাণ। আল্লাহ বলেন, ‘আল্লাহর অন্যতম একটি নিদর্শন হলো, তোমাদের থেকেই তিনি তোমাদের সঙ্গিনী সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা তাদের কাছে প্রশান্তি লাভ করতে পারো। আর সুদৃঢ় করেছেন তোমাদের পরস্পরের মাঝে দয়া ও ভালোবাসা। নিশ্চয় এর মাঝে রয়েছে চিন্তাশীলদের জন্য বহু নিদর্শন।’ (সুরা রুম, আয়াত: ২১)
অপর এক আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘আল্লাহ তোমাদের থেকেই তোমাদের জোড়া তৈরি করেছেন।’ (সুরা নাহল, আয়াত: ৭২)
এই দুই আয়াতের ব্যাখ্যায় মুফাসসিরগণ বলেছেন, ‘আল্লাহ পুরুষের সঙ্গী হিসেবে নারী জাতিকে সৃষ্টি করেছেন সমগোত্রীয় এবং একই উপাদান থেকে।’
আনাস ইবনে মালেক (রা.)-এর কাছে ইয়েমেনের এক সম্প্রদায় জিজ্ঞাসা করে, “একটি পুরুষ জিন আমাদের গোত্রের এক নারীর ব্যাপারে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছে, ‘তারা ভেবেছিল এ ধরনের বিয়ে হালাল হবে।’ আমরা কি তা কবুল করব।’ উত্তরে তিনি বলেন, ‘আমি তা ভীষণ অপছন্দ করি। এর দ্বারা বরং ফিতনাই বৃদ্ধি পাবে। কারণ যখন কোনো গর্ভবতী নারীকে জিজ্ঞাসা করা হবে এটা কার সন্তান? সে বলবে জিনের।’ (রুহুল মায়ানি, আল্লামা আলুসি, খণ্ড: ১০, পৃষ্ঠা: ১৮৪)
আনাস ইবনে মালেক (রা.)-এর মতে, ‘কেউ কেউ জিনের সঙ্গে বিয়েকে হারাম না বলে অপছন্দনীয় বলেছেন।’ (মাজমুউল ফাতাওয়া, ইবনে তাইমিয়া, খণ্ড: ১৯, পৃষ্ঠা: ৩৯)। জিন জাতি আল্লাহর মাখলুকের মধ্য থেকে একটি মাখলুক। মহান আল্লাহ তাদের রব।
লেখক: আলেম, গবেষক ও সাংবাদিক