পৃথিবীতে ঘোরার মতো হাজারও পর্যটন কেন্দ্র রয়েছে। এগুলোর মধ্যে কিছু আছে উল্লেখযোগ্য। জনপ্রিয়তা, পর্যটক সমাগম, ঐতিহাসিক গুরুত্ব, দৃষ্টি নান্দনিকতা, সুযোগ-সুবিধাসহ নানা বৈশিষ্ট্যের কারণে এসব পর্যটন কেন্দ্র একেকটা একেক রকম। ২০২৩ সালে বিখ্যাত সংবাদপত্র নিউইয়র্ক টাইমস ম্যাগাজিনের দৃষ্টিতে সেরা ৫০টি পর্যটন কেন্দ্রের মধ্যে ছয়টি এবং জনপ্রিয় আরও চারটিসহ মোট দশটি পর্যটন কেন্দ্রের খবর।
১. ডমিনিকা
বলা হয় ক্যারিবিয়ান সৌন্দর্য সংরক্ষিত আছে ডমিনিকায়। পাহাড়ি সবুজ বলতে যা বোঝায়, সেটাই হচ্ছে উত্তর আমেরিকার ছোট্ট একটা দ্বীপদেশ ডমিনিকা। অভিযানপ্রিয় পর্যটকদের স্বর্গ ডমিনিকায় রয়েছে রেইন ফরেস্ট, জলপ্রপাত, উষ্ণ ঝরনা এবং আগ্নেয়গিরি। ক্যারিবিয়ান অঞ্চলগুলোর মধ্যে সবচেয়ে দীর্ঘ হাইকিং ট্রেইলও রয়েছে এখানে। ১১৫ মাইল বা ১৮৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এ ট্রেইলের নাম ওয়েটুকুবুলি ন্যাশনাল ট্রেইল। ক্যারিবিয়ান অঞ্চলের একমাত্র সি-কায়াকিং ট্রেইলও রয়েছে এখানে। এসবের বাইরে পর্যটকদের আবাসনের দারুণ সব ব্যবস্থা তো আছেই। আর সব মিলিয়ে নিউইয়র্ক টাইমসের তালিকার প্রথম স্থানে রয়েছে ডমিনিকা।
২. বার্সেলোনা, স্পেন
বিশ্বের ঐতিহাসিক শহরগুলোর একটি বার্সেলোনা। এই শহরে রয়েছে ১৭৬ বছর ধরে ক্লাসিক্যাল মিউজিকের ভেন্যু হিসেবে ব্যবহৃত লিসিউ অপেরা। স্পেনের উত্তর-পূর্ব উপকূলের এই শহর স্পেনের সংস্কৃতির গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। এখানে রয়েছে আন্তোনি গাউদির নকশা করা বিস্ময়কর স্থাপত্য এবং অসম্পূর্ণ সাগ্রাদা ফ্যামিলিয়া। আছে সম্প্রতি সম্পন্ন করা ধর্মপ্রচারক লুক এবং মার্কের টাওয়ার, যা ভার্জিন মেরির টাওয়ারের সঙ্গে এসে মিশেছে। প্যাশন টাওয়ার বা অ্যাপসল টাওয়ারে উঠে শহরের দৃষ্টিনন্দন ভবনগুলো দেখার ব্যবস্থাও রয়েছে পর্যটকদের জন্য। আর এ সবকিছু মিলে বার্সেলোনা হয়ে উঠেছে পর্যটকদের পছন্দের একটি স্থান।
৩. তরেস দেল পাইন জাতীয় উদ্যান, চিলি
চিলির দক্ষিণের পাতাগোনিয়া অঞ্চলের এমন একটি স্থান এটি, যেখানে পর্বতমালা, হিমবাহ, হ্রদ ও নদীর দেখা মিলবে। বছরে পঁচিশ লাখেরও বেশি পর্যটকের আনাগোনা হয়, যার মধ্যে শতকরা ৫৪ ভাগই বিদেশি। নানা ধরনের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এ জায়গা পর্যটকদের ভীষণ পছন্দের।
৪. লাদাখ, ভারত
ভারতের উত্তরে কুনলুন পর্বতশ্রেণি এবং দক্ষিণে হিমালয় বেষ্টিত অঞ্চল লাদাখ। এই লাদাখেই রয়েছে ভারত ঘোষিত দেশটির প্রথম ডার্ক স্কাই রিজার্ভ অঞ্চল। স্থানটি লাদাখের রাজধানী লেহ থেকে ১৬৮ মাইল দক্ষিণ-পশ্চিমে, হানলি গ্রামে। বছরের প্রায় ২৭০ দিনই এ গ্রামের রাতের আকাশ থাকে পরিষ্কার। আর সে কারণে জায়গাটি জ্যোতিপর্যটনের আদর্শ একটি কেন্দ্র। প্রাকৃতির সৌন্দর্যের পাশাপাশি লাদাখে কৃত্রিম বেশকিছু পর্যটন স্থান আছে। আর আছে বিখ্যাত সব মোগলাই খাবারের ব্যবস্থা।
৫. চার্চিল, ম্যানিটোবা, কানাডা
মেরুপ্রভা বা অরোরা দেখার স্বপ্ন অনেকেরই থাকে। মেরুপ্রভা দেখার সবচেয়ে চমৎকার একটি স্থান হচ্ছে কানাডার ম্যানিটোবা রাজ্যের চার্চিল নামক জায়গা। এখানে আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে বছরের ৩০০ দিনই রাতের আকাশে আলোর নৃত্য দেখা যায়। দৃষ্টিনন্দন আলোর নৃত্য দেখার জন্য অনেক পর্যটকের আনাগোনা ঘটে এখানে। এ ছাড়া হাজার হাজার বেলুগা তিমি গ্রীষ্মকালে এ অঞ্চলের সাগরে প্রবেশ করে। ট্যুর অপারেটর কোম্পানিগুলো ‘সাগর ক্যানারি’ হিসেবে বিখ্যাত বেলুগার শব্দের সঙ্গে পর্যটকদের পরিচয় করায়।
৬. প্যারিস, ফ্রান্স
বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় পর্যটন স্থান ফ্রান্সের প্যারিস। প্রধান আকর্ষণ আইফেল টাওয়ার ছাড়াও দৃষ্টিনন্দন ভবন, ঐতিহাসিক ও আধুনিক আর্ট গ্যালারি ও জাদুঘরের কারণে বিশ্বের প্রায় বেশিরভাগ পর্যটকের কাছেই এ শহরের আকর্ষণ রয়েছে। খাবার-দাবার থেকে শুরু করে যানবাহনের সুবিধা আর ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, সৌন্দর্য ও আধুনিকতার সমন্বয় প্যারিসের বৈশিষ্ট্য।
৭. বালি, ইন্দোনেশিয়া
বিশ্বের জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্রের মধ্যে ইন্দোনেশিয়ার বালি অন্যতম। জাভা ও লম্বুকের মাঝে বালি দ্বীপের অবস্থান। সাদা বালির সৈকত, পাহাড়, আগ্নেয়গিরি, পুরোনো মন্দিরসহ রয়েছে অসংখ্য আকর্ষণীয় স্থান। বালির সূর্যাস্তের দৃশ্য, নীল জলের সৌন্দর্য, জঙ্গলের পাখির গানের সঙ্গে সংগীত, নৃত্য, শিল্প, ধর্ম এবং চিত্রকলায় বালিনিজ সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য পর্যটকদের জন্য বাড়তি আকর্ষণ। উষ্ণ আতিথেয়তার কারণেও পর্যটকদের মধ্যে বালি খুব জনপ্রিয়।
৮. মালদ্বীপ
স্ফটিক স্বচ্ছ নীল পানি, দোলনা পামগাছ এবং চকচকে সাদা বালির জন্য বিখ্যাত মালদ্বীপ। সারা বছর এখানকার আবহাওয়া বেশ মনোরম। অ্যাডভেঞ্চার, হানিমুন বা অবসর ছুটি কাটানো পর্যটকদের কাছে মালদ্বীপ তুমুল জনপ্রিয়। মালদ্বীপে ৬০টিরও বেশি ডাইভ সাইট রয়েছে, যেগুলো বিশ্বের সেরা ডাইভিং গন্তব্যগুলোর মধ্যে স্থান পেয়েছে।
৯. সান্তোরিনি, গ্রিস
প্রায় ৬ হাজার দ্বীপের দেশ গ্রিস। এসব দ্বীপের মধ্যে পর্যটকদের কাছে সবচেয়ে জনপ্রিয় সান্তোরিনি। এ দ্বীপকে বিশ্বের অন্যতম গ্রীষ্মকালীন গন্তব্য হিসেবে ধরা হয়। এজিয়ান সাগরের সাইক্লেড দ্বীপগুলোর একটি এই সান্তোরিনির রয়েছে শ্বাসরুদ্ধকর সৌন্দর্য। আছে দর্শনীয় সূর্যাস্ত, ঐতিহ্যবাহী সাদা বাড়ি, পুরোনো দুর্গ, প্রাচীন ধ্বংসাবশেষ এবং মাছ ধরার বন্দর। এ ছাড়া আমাউদি উপসাগরের সূর্যাস্ত, প্রাগৈতিহাসিক থেরা মিউজিয়াম, ফোকলোর মিউজিয়ামের সঙ্গে আরও আছে ৩ হাজার ৬০০ বছর আগে আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের লাভার নিচে চাপা পড়া প্রাচীন মিনোয়ান বসতি- অ্যাক্রোটেরিয়ার প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন।
১০. লোহিত সাগর, সৌদি আরব
২০৩০ সালের মধ্যে বছরে দশ কোটি পর্যটককে আকৃষ্ট করার লক্ষ্যে বিভিন্ন পরিকল্পনা নিয়েছে সৌদি আরব। এ জন্য প্রাচীন ঐতিহ্যের স্থানের সঙ্গে নতুন করে তৈরি করা কিছু গিগা-প্রকল্প হাতে নিয়েছে দেশটি। লোহিত সাগরে বিশ্বের সবচেয়ে বড় ডার্ক স্কাই রিজার্ভ তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ১২৫ মাইল দীর্ঘ উপকূলরেখায় ম্যানগ্রোভ কায়াকিং, লোহিত সাগরের ৯০টি দ্বীপে নৌকাভ্রমণ এবং ৩০০ বছরের পুরোনো কাঠের জাহাজে করে নতুন নতুন সাগর এলাকায় ডুবসাঁতার ও ডাইভিংসহ নানা জলনির্ভর কার্যক্রমের পরিকল্পনাও করা হয়েছে। আবার পায়ে হাঁটা পর্যটকদের জন্য গ্রানাইট পাহাড়ে হাইকিং, আগ্নেয় লাভা পাড়ি দিয়ে পাহাড়ি বাইকিং এবং পরিযায়ী পাখি ট্র্যাকিংয়ের ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে। পর্যটকদের আবাসনের জন্য পানির ওপর নির্মাণ করা হয়েছে বিলাসবহুল হোটেল। আর সে কারণে নিউইয়র্ক টাইমস ম্যাগাজিনের দৃষ্টিতে বিশ্বের সেরা ৫০টি পর্যটন কেন্দ্রে জায়গা করে নিয়েছে সৌদি আরবের লোহিত সাগর।