উচ্চ বেতনে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে সাতক্ষীরার রোজিনা খাতুন (৩৪) নামে এক নারীকে সৌদি আরবে ‘যৌনকর্মী’ হিসেবে ব্যবহার করার অভিযোগ উঠেছে। গত ১৯ মার্চ ঢাকার মতিঝিলের সেভেন স্টার ম্যানপাওয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে সৌদি আরবে যান ওই নারী। সেখানে তাকে স্থানীয় পাচারচক্রের কাছে বিক্রি করা হয় বলে হোয়াটসঅ্যাপ ‘ভয়েস মেসেজে’ জানান রোজিনা।
ভুক্তভোগী রোজিনা খাতুন সাতক্ষীরার শ্যামনগরের উপজেলার এক প্রত্যন্ত এলাকার বাসিন্দা। এ ঘটনায় রোজিনার ভাই সালাউদ্দীন শ্যামনগর থানায় মানবপাচারের একটি মামলা করেছেন। মামলায় উপজেলার শংকরকাটি গ্রামের মোমিন খাঁর ছেলে মোস্তাফিজুর রহমান চঞ্চল (২৮), তার মা তাসলিমা বেগম (৪৭) ও সেভেন স্টার ম্যানপাওয়ার সার্ভিসেসের ম্যানেজার রাসেল আকন শিমুলসহ (৩৩) অজ্ঞাতনামা আরও দু-তিনজনকে আসামি করা হয়েছে।
এদিকে রোজিনার ‘ভয়েস মেসেজে’ এসেছে খবরের কাগজের হাতে। ভাইয়ের কাছে পাঠানো রোজিনার ৩ মিনিট ৩৯ সেকেন্ডের ভয়েস মেসেজের সবটা জুড়ে নির্মম নির্যাতনের বর্ণনা দিয়েছেন তিনি। ওই ভয়েস মেসেজের মধ্যে রোজিনাকে বলতে শোনা যায়, সৌদিতে পৌঁছানোর পরই তার ফোন ছিনিয়ে নিয়ে তাকে একটি কোম্পানির কাছে বিক্রি করে দেওয়া হয়। অসুস্থতার জন্য প্রয়োজনীয় ওষুধ নিয়ে গেলেও সেগুলোও ছিনিয়ে নেন তারা। তাকে একটি কক্ষে আটকে রেখে বিভিন্ন স্থানে (যৌনকর্মী হিসেবে) পাঠানোর পাশাপাশি মাঝে মধ্যে দৈনিক ভিত্তিতে ভিন্ন ভিন্ন জায়গায় গৃহস্থালির ভারী কাজ করানো হয়। কিন্তু পারিশ্রমিকের অর্থপাচার চক্রের সদস্যরা রেখে দেন। কাজে যেতে রাজি না হলে কিংবা দেশে ফিরতে চাইলে তাকে মারধর করা হচ্ছে।
এ ব্যাপারে পাচারের শিকার রোজিনা খাতুনের ভাই সালাউদ্দীন জানান, ছয় মাস আগে তার বোনের বিবাহ বিচ্ছেদ হলে বাবার বাড়িতে চলে আসেন। তখন এলাকার পূর্ব পরিচিত তাসলিমা ও তার ছেলে মোস্তাফিজুর রোজিনাকে সৌদি আরবে চাকরির প্রস্তাব দেন। তাদের প্রস্তাবে রাজি হয়ে উন্নত জীবনের আশায় রোজিনা পাসপোর্ট করার পর গত ১৭ মার্চ তাদের সঙ্গে ঢাকায় চলে যান।
সালাউদ্দীন বলেন, ‘সৌদি আরব যাওয়ার পর রোজিনার সঙ্গে তাদের যোগাযোগ করতে দেওয়া হয়নি। তবে তিনি ভালো জায়গায় কাজ করছেন বলে আমাদের আশ্বস্ত করা হয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘দ্রুত উদ্ধার করা না হলে মারা যাওয়ার শঙ্কার কথা জানিয়েছেন রোজিনা। আমাকে বলেন, রাসেল আকন, তাসলিমা, মোস্তাফিজুরসহ অপরিচিত দু-তিনজন এই মানবপাচার চক্রের সঙ্গে জড়িত। তারা মতিঝিলের সেভেন স্টার ম্যানপাওয়ার সার্ভিসেস গ্রামের সহজ-সরল, অভাবী এবং ডিভোর্সি নারীদের টার্গেট করে।’
সালাউদ্দীন জানান, রোজিনার দুরবস্থার কথা জানতে পেরে তিনি লাইসেন্স মালিক শিমুলের সঙ্গে কথা বলেছেন। তবে রোজিনাকে ফিরিয়ে আনার বিনিময়ে তিনি দুই লাখ টাকা দাবি করেন।
শ্যামনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘মানবপাচারের অভিযোগে ভুক্তোভোগী নারীর ভাই একটি মামলা করেছেন। ইতোমধ্যে আসামিদের একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকিদের গ্রেপ্তারসহ ভিকটিমকে উদ্ধারে সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হচ্ছে।’