লোকসানে পড়ার আশঙ্কায় সীমান্তে পেঁয়াজ বেচাকেনা বন্ধ রয়েছে। পাইপলাইনে থাকা পেঁয়াজ গুদামে মজুত করা হচ্ছে। এদিকে সীমান্ত থেকে পেঁয়াজ সরবরাহ বন্ধ থাকায় খাতুনগঞ্জে দাম বেড়ে গেছে। তিন দিনের ব্যবধানে পাকিস্তানি পেঁয়াজ কেজিতে ১০ টাকা ও ভারতীয় পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ২ টাকা।
সীমান্তের একাধিক ব্যবসায়ী জানিয়েছেন, শিক্ষার্থীরা চায়, প্রতি কেজি পেঁয়াজ ৭০ টাকায় বিক্রি হোক। এখন পেঁয়াজ ভারত থেকে আনতেই খরচ পড়ছে আকারভেদে ৯০ থেকে ৯৫ টাকা। তাহলে ৭০ টাকায় বিক্রি করা সম্ভব নয়। এ দরে বিক্রি করতে গেলে বড় ধরনের লোকসান গুণতে হবে। তাই সারা দেশে পেঁয়াজ সরবরাহ বন্ধ রাখা হয়েছে। পাশাপাশি দেশের সব স্থলবন্দর দিয়ে ২৫০ ট্রাক (প্রতি ট্রাকে ২৬ টন) পেঁয়াজ পাইপলাইনে রয়েছে। এসব পেঁয়াজ গোডাউনে মজুত করা হবে বলে জানান তারা।
এদিকে খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, সীমান্ত থেকে পেঁয়াজ আসছে না। তার ওপর দেশি পেঁয়াজও নেই। বর্তমানে খাতুনগঞ্জে আগের কেনা পাকিস্তানি ও ভারতীয় পেঁয়াজ রয়েছে। সরবরাহ কমে যাওয়ায় পাইকারিতে পণ্যটির দাম বেড়েছে বলে জানান তারা। যদিও উভয় প্রান্তের ব্যবসায়ীরা সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছেন বলে জানিয়েছেন।
তিন দিন আগে খাতুনগঞ্জে প্রতি কেজি পাকিস্তানি পেঁয়াজ ৮০ টাকা ও ভারতীয় পেঁয়াজ ৯৩ থেকে ৯৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে। বর্তমানে পাকিস্তানি পেঁয়াজ কেজিতে ৯০ টাকা ও ভারতীয় পেঁয়াজের কেজিতে ৯৫ থেকে ৯৭ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
হিলি স্থলবন্দরের আমদানিকারক মো. মোবারক হোসাইন খবরের কাগজকে বলেন, ‘সীমান্ত দিয়ে প্রচুর পেঁয়াজ আসছে। এসব পেঁয়াজ কেনা পড়ছে ৯০ টাকার ওপরে। শিক্ষার্থীরা চাইছে আমরা ৭০ টাকা কেজি দরে পেঁয়াজ বিক্রি করি। কেনাই বেশি পড়ছে, তাহলে আমরা কীভাবে ৭০ টাকায় বিক্রি করব? তাই আমরা বেচাকেনা বন্ধ করে দিয়েছি। নতুন সরকার গঠন হয়েছে। আমরা সরকারের সিদ্ধান্তের দিকে তাকিয়ে আছি। সরকার যখন সিদ্ধান্ত জানাবে তখনই আমরা বেচাকেনা শুরু করব।’
খাতুনগঞ্জের হামিদুল্লাহ মিয়া মার্কেট ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. ইদ্রিস আলী খবরের কাগজকে বলেন, ‘সীমান্ত থেকে পেঁয়াজ আসছে না। তাই আমাদের এখানে পণ্যটির সরবরাহ অনেক কমে গেছে। তাই দাম কিছুটা বেড়েছে। শিক্ষার্থীরা আমাদের এখানে এখনো আসেনি। তবে তারা চায় ৭০ টাকা কেজিতে পেঁয়াজ বিক্রি হোক- এটা আমরা জানতে পেরেছি। কিন্তু এটা করলে আমাদের সবারই লোকসান হবে। শিক্ষার্থীরা বয়সে ছোট, তারা তো আর ব্যবসা বোঝে না। তারা অনেক কথা বলছে, বলবে। আমরা তাদের কোনো কথা এখন পাত্তা দিচ্ছি না। সরকার আলোচনা করে সিদ্ধান্ত দিক। আমরা সেটাই মেনে ব্যবসা পরিচালনা করব।’
এদিকে পাইকারি বাজারে দাম বাড়ার প্রভাব পড়েছে খুচরা বাজারে। সেখানে প্রতি কেজি পাকিস্তানি পেঁয়াজ ১০০ টাকা ও ভারতীয় পেঁয়াজ ১১০ থেকে ১১৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে কিছু কিছু খুচরা দোকানে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে। এসব পেঁয়াজ কেজিপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ৯৫ টাকায়।
নগরের কাজীর দেউড়ি এলাকায় আল আমিন স্টোরের মালিক মো. আব্দুল আলিম জানান, বর্তমানে আমরাও খুব বিপাকে পড়েছি। পাইকারি বাজারে দাম বাড়ায় আমাদের এখানে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে। আমরা সে দামে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছি। কেজিপ্রতি ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে পেঁয়াজ- এমন খবর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। মানুষ এসে জানতে চাইছে, আমরা কেনো বাড়তি দামে পেঁয়াজ বিক্রি করছি। এটার একটা সমাধান হওয়া দরকার বলে আমরা মনে করি।’
কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন খবরের কাগজকে বলেন, ‘আমরা সব সময় দেখেছি, যেকোনো একটা অজুহাত পেলেই ব্যবসায়ীরা ভোগ্যপণ্যের দাম বাড়িয়ে দেন। এবারও তার বিকল্প হয়নি। এখন আমাদের শিক্ষার্থীরা বাজার তদারকি করতে যাচ্ছে। তারা তাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করছে। কিন্তু প্রশাসন, ভোক্তা অধিকারকে এখন কঠোর ভূমিকা পালন করতে হবে। কেনা কত, বিক্রি কত? সবকিছু ভালো করে খতিয়ে দেখতে হবে। অপরাধ প্রমাণিত হলেই কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।’
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. ফয়েজ উল্যাহ জানান, সম্প্রতি আমরা ক্যাব সদস্য, শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিয়ে রিয়াজুদ্দিন বাজারে পাইকারি ও খুচরা দোকানগুলোতে তদারকি করেছি। সেখানে বিভিন্ন পণ্যের দামে গরমিল পেয়েছি। আমরা তাদের সতর্ক করেছি। পাশাপাশি পণ্যে কৃত্রিম সংকট তৈরি না করা, অতিরিক্ত মুনাফা না করার বিষয়ে সতর্ক করা হয়েছে। আমাদের বক্তব্য হলো জনস্বার্থে আমাদের অভিযান অব্যাহত থাকবে। কোনো প্রকার অনিয়ম প্রমাণিত হলে বিধি মোতাবেক অবশ্যই শাস্তির আওতায় আনা হবে।