ঢাকা ৩০ ভাদ্র ১৪৩১, শনিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪

সীমান্তে পেঁয়াজ বেচাকেনা বন্ধ, খাতুনগঞ্জে বেড়েছে দাম

প্রকাশ: ১২ আগস্ট ২০২৪, ০৩:৩৬ পিএম
সীমান্তে পেঁয়াজ বেচাকেনা বন্ধ, খাতুনগঞ্জে বেড়েছে দাম
সীমান্তে বেচাকেনা বন্ধ থাকায় খাতুনগঞ্জে দাম বেড়েছে পেঁয়াজের। ছবি: খবরের কাগজ

লোকসানে পড়ার আশঙ্কায় সীমান্তে পেঁয়াজ বেচাকেনা বন্ধ রয়েছে। পাইপলাইনে থাকা পেঁয়াজ গুদামে মজুত করা হচ্ছে। এদিকে সীমান্ত থেকে পেঁয়াজ সরবরাহ বন্ধ থাকায় খাতুনগঞ্জে দাম বেড়ে গেছে। তিন দিনের ব্যবধানে পাকিস্তানি পেঁয়াজ কেজিতে ১০ টাকা ও ভারতীয় পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ২ টাকা।

সীমান্তের একাধিক ব্যবসায়ী জানিয়েছেন, শিক্ষার্থীরা চায়, প্রতি কেজি পেঁয়াজ ৭০ টাকায় বিক্রি হোক। এখন পেঁয়াজ ভারত থেকে আনতেই খরচ পড়ছে আকারভেদে ৯০ থেকে ৯৫ টাকা। তাহলে ৭০ টাকায় বিক্রি করা সম্ভব নয়। এ দরে বিক্রি করতে গেলে বড় ধরনের লোকসান গুণতে হবে। তাই সারা দেশে পেঁয়াজ সরবরাহ বন্ধ রাখা হয়েছে। পাশাপাশি দেশের সব স্থলবন্দর দিয়ে ২৫০ ট্রাক (প্রতি ট্রাকে ২৬ টন) পেঁয়াজ পাইপলাইনে রয়েছে। এসব পেঁয়াজ গোডাউনে মজুত করা হবে বলে জানান তারা। 

এদিকে খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, সীমান্ত থেকে পেঁয়াজ আসছে না। তার ওপর দেশি পেঁয়াজও নেই। বর্তমানে খাতুনগঞ্জে আগের কেনা পাকিস্তানি ও ভারতীয় পেঁয়াজ রয়েছে। সরবরাহ কমে যাওয়ায় পাইকারিতে পণ্যটির দাম বেড়েছে বলে জানান তারা। যদিও উভয় প্রান্তের ব্যবসায়ীরা সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছেন বলে জানিয়েছেন। 

তিন দিন আগে খাতুনগঞ্জে প্রতি কেজি পাকিস্তানি পেঁয়াজ ৮০ টাকা ও ভারতীয় পেঁয়াজ ৯৩ থেকে ৯৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে। বর্তমানে পাকিস্তানি পেঁয়াজ কেজিতে ৯০ টাকা ও ভারতীয় পেঁয়াজের কেজিতে ৯৫ থেকে ৯৭ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।  

হিলি স্থলবন্দরের আমদানিকারক মো. মোবারক হোসাইন খবরের কাগজকে বলেন, ‘সীমান্ত দিয়ে প্রচুর পেঁয়াজ আসছে। এসব পেঁয়াজ কেনা পড়ছে ৯০ টাকার ওপরে। শিক্ষার্থীরা চাইছে আমরা ৭০ টাকা কেজি দরে পেঁয়াজ বিক্রি করি। কেনাই বেশি পড়ছে, তাহলে আমরা কীভাবে ৭০ টাকায় বিক্রি করব? তাই আমরা বেচাকেনা বন্ধ করে দিয়েছি। নতুন সরকার গঠন হয়েছে। আমরা সরকারের সিদ্ধান্তের দিকে তাকিয়ে আছি। সরকার যখন সিদ্ধান্ত জানাবে তখনই আমরা বেচাকেনা শুরু করব।’ 

খাতুনগঞ্জের হামিদুল্লাহ মিয়া মার্কেট ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. ইদ্রিস আলী খবরের কাগজকে বলেন, ‘সীমান্ত থেকে পেঁয়াজ আসছে না। তাই আমাদের এখানে পণ্যটির সরবরাহ অনেক কমে গেছে। তাই দাম কিছুটা বেড়েছে। শিক্ষার্থীরা আমাদের এখানে এখনো আসেনি। তবে তারা চায় ৭০ টাকা কেজিতে পেঁয়াজ বিক্রি হোক- এটা আমরা জানতে পেরেছি। কিন্তু এটা করলে আমাদের সবারই লোকসান হবে। শিক্ষার্থীরা বয়সে ছোট, তারা তো আর ব্যবসা বোঝে না। তারা অনেক কথা বলছে, বলবে। আমরা তাদের কোনো কথা এখন পাত্তা দিচ্ছি না। সরকার আলোচনা করে সিদ্ধান্ত দিক। আমরা সেটাই মেনে ব্যবসা পরিচালনা করব।’  

এদিকে পাইকারি বাজারে দাম বাড়ার প্রভাব পড়েছে খুচরা বাজারে। সেখানে প্রতি কেজি পাকিস্তানি পেঁয়াজ ১০০ টাকা ও ভারতীয় পেঁয়াজ ১১০ থেকে ১১৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে কিছু কিছু খুচরা দোকানে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে। এসব পেঁয়াজ কেজিপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ৯৫ টাকায়। 

নগরের কাজীর দেউড়ি এলাকায় আল আমিন স্টোরের মালিক মো. আব্দুল আলিম জানান, বর্তমানে আমরাও খুব বিপাকে পড়েছি। পাইকারি বাজারে দাম বাড়ায় আমাদের এখানে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে। আমরা সে দামে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছি। কেজিপ্রতি ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে পেঁয়াজ- এমন খবর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। মানুষ এসে জানতে চাইছে, আমরা কেনো বাড়তি দামে পেঁয়াজ বিক্রি করছি। এটার একটা সমাধান হওয়া দরকার বলে আমরা মনে করি।’ 

কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন খবরের কাগজকে বলেন, ‘আমরা সব সময় দেখেছি, যেকোনো একটা অজুহাত পেলেই ব্যবসায়ীরা ভোগ্যপণ্যের দাম বাড়িয়ে দেন। এবারও তার বিকল্প হয়নি। এখন আমাদের শিক্ষার্থীরা বাজার তদারকি করতে যাচ্ছে। তারা তাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করছে। কিন্তু প্রশাসন, ভোক্তা অধিকারকে এখন কঠোর ভূমিকা পালন করতে হবে। কেনা কত, বিক্রি কত? সবকিছু ভালো করে খতিয়ে দেখতে হবে। অপরাধ প্রমাণিত হলেই কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।’ 

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. ফয়েজ উল্যাহ জানান, সম্প্রতি আমরা ক্যাব সদস্য, শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিয়ে রিয়াজুদ্দিন বাজারে পাইকারি ও খুচরা দোকানগুলোতে তদারকি করেছি। সেখানে বিভিন্ন পণ্যের দামে গরমিল পেয়েছি। আমরা তাদের সতর্ক করেছি। পাশাপাশি পণ্যে কৃত্রিম সংকট তৈরি না করা, অতিরিক্ত মুনাফা না করার বিষয়ে সতর্ক করা হয়েছে। আমাদের বক্তব্য হলো জনস্বার্থে আমাদের অভিযান অব্যাহত থাকবে। কোনো প্রকার অনিয়ম প্রমাণিত হলে বিধি মোতাবেক অবশ্যই শাস্তির আওতায় আনা হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংক ১৫ বছর আইএফআইসিতে ঢুকতে পারেনি

প্রকাশ: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:০২ পিএম
আপডেট: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:০৫ পিএম
বাংলাদেশ ব্যাংক ১৫ বছর আইএফআইসিতে ঢুকতে পারেনি
বাংলাদেশ ব্যাংক-আইএফআইসি ব্যাংক

গত দেড় যুগেরও বেশি সময় ধরে একটি ব্যাংকে বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়মতান্ত্রিক কোনো খবরদারি চলেনি। বলা যায়, নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ সেখানে নিষিদ্ধ ছিল। ফলে নানাবিধ অনিয়ম হলেও ব্যাংকটিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শক দল কোনো কাজ করতে পারেনি। দেশের প্রথম প্রজন্মের এ ব্যাংকটি হলো ইন্টারন্যাশনাল ফাইনান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট কোম্পানি যা সংক্ষেপে আইএফআইসি ব্যাংক নামে পরিচিত।

২০০৯ সালে ওয়ান-ইলেভেন পরবর্তী পরিবর্তিত রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বেক্সিমকো গ্রুপের কর্ণধার সালমান এফ রহমান ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদে ঢোকেন, কায়েম করেন একচ্ছত্র দোর্দণ্ড প্রতাপ। তিনি বাংলাদেশ ব্যাংকের গর্ভনরসহ ঊর্ধ্বতন অনেক কর্মকর্তাকে বিভিন্ন সময়ে ধমক দিয়েছেন। সর্বশেষ তার ছেলে আহমেদ সায়ান ফজলুর রহমান ব্যাংকটির পরিচালক ও ভাইস-চেয়ারম্যান পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। বাপ-বেটা মিলে আর্থিক অনিয়মের মাধ্যমে গত ১৫ বছরে ব্যাংকটি থেকে নিয়ে গেছেন প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা।

যেসব কোম্পানির বিপরীতে নিয়ম বহির্ভূত এসব ঋণ বিতরণ করা হয়েছে সেগুলো হলো বেক্সিমকো লিমিটেড, বেক্সিমকো ফার্মা ও বেক্সিমকো টেক্সটাইল। পরবর্তী সময়ে ব্যাংকটি থেকে গাজীপুরের শ্রীপুরে মায়ানগর টাউনশিপ আবাসন প্রকল্পের নামে সালমান আরও ঋণ নেন। এ ছাড়াও সাধারণ মানুষকে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে টেনে এনে তিনি বন্ড ও সুকুক ছেড়ে বিপুল অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। 

সালমান এফ রহমান ২০০৯ সাল থেকে ২০২৪ সালের আগস্টের শুরু পর্যন্ত পর্ষদ চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন। তার এ দীর্ঘসময়ে আইএফআইসি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোহাম্মদ শাহ আলম সারওয়ার এই আর্থিক অনিয়ম ও দুর্নীতির সহযোগী হিসেবে ভূমিকা পালন করেন। 

গত ২৯ মে এমডির পদ থেকে অবসরে গেলে আলম সারওয়ারকে ব্যাংকটির ‘কৌশলগত উপদেষ্টা’ হিসেবে নিয়োগ দেন সালমান এফ রহমান। মোহাম্মদ শাহ আলম সারওয়ার ২০১২ সালের ডিসেম্বরে আইএফআইসি ব্যাংকে এমডি হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যুত হলে তিনি আত্মগোপনে থাকা অবস্থায় সদরঘাট এলাকা থেকে গ্রেপ্তার হন। তার বিরুদ্ধে হত্যা মামলা চলমান আছে।

তার আগে আইএফআইসি ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ ছিল আগে প্রভাবশালী বিএনপি নেতা মোসাদ্দেক আলী ফালুর নেতৃত্বাধীন পর্ষদের হাতে। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এলে এর নিয়ন্ত্রণ নিয়েছিলেন ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি খাতবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান। এরপর থেকেই ব্যাংকটিতে আর্থিক অনিয়মের যুগ শুরু হয়। 

২০১০ সালে ব্যাংকটিতে সরকারের শেয়ার ৪৯ শতাংশ হলেও পরে তা কমে ৩২ দশমিক ৭৫ শতাংশ হয়। ফলে সরকার মনোনীত পরিচালকরা নামে মাত্র পর্ষদে ছিলেন। অবশিষ্ট ৫১ শতাংশ শেয়ার বেসরকারি খাতের স্পন্সর ও শেয়ারহোল্ডারদের হাতে ছিল। ব্যাংকটির পর্ষদে জায়গা করে নিতে সে সময় বিপুল পরিমাণ খেলাপি ঋণের বিপরীতে এক দফায় (ওয়ান শট) ১১০ কোটি টাকা পরিশোধ করেন সালমান। ২০১০ সালের পর্ষদে থাকা সরকারের প্রতিনিধি পরিচালক বর্তমানে অবসরপ্রাপ্ত সচিব আরাস্ত খান এ তথ্য জানিয়েছেন। 

গত বৃহস্পতিবার (১২ আগস্ট) খবরের কাগজকে আরাস্ত খান বলেন, আমার মনে আছে ওই সময় মোহাম্মদ লুৎফর রহমান বাদল ছিলেন পর্ষদে। হঠাৎ করেই সালমান সাহেব ১১০ কোটি টাকা পরিশোধ করলেন। ওই দিনই পর্ষদ সভা হলো। তিনি পরিচালক ও চেয়ারম্যান নির্বাচিত হলেন। তার (সালমান এফ রহমান) সঙ্গে কাজ করা কঠিন ছিল। তিনি সব সময় দুই নাম্বারি চিন্তা-ভাবনা করতেন। আর তার এসব ফন্দি-ফিকির আর্থিকবিষয়কে কেন্দ্র করে হতো।

সালমান নেতৃত্বাধীন পর্ষদ থাকাকালে ব্যাংকটিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শক দল কাজ করতে না পারা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে একজন ভুক্তভোগী কর্মকর্তা বলেছেন, ‘সময়টা ২০১৬ সাল হবে। আমি ও আমার একজন সিনিয়র কর্মকর্তা ব্যাংকটিতে পরিদর্শনে গেলে আমাদের রিসিপশন থেকে ক্লিয়ারেন্স দেওয়া হয়নি। অপমানিত হয়ে আমরা ফিরে এসেছি। আর উপরে উঠিনি।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের আগে ও পরে কোনো কর্মকর্তা ব্যাংকটিতে অ্যাক্সেস (প্রবেশাধিকার) পায়নি। অন্য ব্যাংকগুলোর অনেকেই এ বিষয়টি জানতো। এটি বাংলাদেশ ব্যাংকের জন্য দুঃখজনক ছিল। তাদের ক্ষমতার দাপটের কারণে বাংলাদেশ ব্যাংক কিছু করতেও পারত না। আইএফআইসি ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাংকের অসংখ্য চিঠির জবাব দেয়নি।’

যোগাযোগ করলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকটির মুখপাত্র মো. মেজবাউল হক খবরের কাগজকে বলেন, ‘এ ব্যাপারে আমি যতটুকু জেনেছি পরিদর্শন দলের সদস্যদের অভিজ্ঞতা খুব তিক্ত। এখন সময় পাল্টেছে। নতুন পর্ষদ নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তারা নিশ্চয়ই সব আর্থিক অনিয়ম বের করে আনবে এবং ব্যাংকটিতে করপোরেট সুশাসন নিশ্চিত করবে। 

এদিকে অন্তর্বর্তী সরকার সংস্কার কার্যক্রমের অংশ হিসেবে গত ৪ সেপ্টেম্বর আইএফআইসি ব্যাংকের পূর্বতন পর্ষদ বাতিল করে ছয় সদস্যের নতুন পর্ষদ নিয়োগ দেয়। বাদ পড়েন সালমান ও তার ছেলে সায়ান। নতুন পর্ষদকে দায়িত্ব দেওয়া হয় ব্যাংকটিতে গত ১৫ বছরে সংঘটিত সব অনিয়ম চিহ্নিত করে আর্থিক অবস্থার প্রকৃত চিত্র নিরূপণ করার মাধ্যমে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে সুপারিশ দেওয়া। গত বৃহস্পতিবার (১২ সেপ্টেম্বর) ব্যাংকটির নতুন পর্ষদের সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। 

এ দিন সন্ধ্যায় নবনিযুক্ত পর্ষদ চেয়ারম্যান মো. মেহমুদ হোসেন খবরের কাগজকে বলেন, ‘আগে যেসব আর্থিক অনিয়ম হয়েছে সেগুলো চিহ্নিত করা হচ্ছে। আমাদের ওপর দায়িত্ব হলো সামনের দিনগুলোতে ব্যাংকটির পরিচালনায় করপোরেট সুশাসনের উন্নতি ঘটানো। আমরা সে বিষয়টাতে মনযোগ দিয়েছি। ব্যাংকটিতে দক্ষ জনবল রয়েছে। আশা করছি আর্থিক অবস্থারও উন্নতি ঘটানো সম্ভব হবে। আমরা ভালো কিছু করতে চাই।

এদিকে সর্বশেষ ২০২২-২৩ অর্থবছরের আর্থিক প্রতিবেদনে দেখা যায়, ব্যাংকটিতে সরকারের শেয়ার কমে ৩২ দশমিক ৭৫ শতাংশ হয়েছে। পাকিস্তানের একটি ব্যাংকে আইএফআইসির মোটা অঙ্কের বিনিয়োগ ছিল যা পরবর্তীতে কমিয়ে আনা হয়েছে। এর বাইরে নেপালের একটি ব্যাংক ও একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানে আইএফআইসির বিনিয়োগ রয়েছে। ১৯৭৬ সালে সরকারি মূলধন ও ব্যবস্থাপনায় আইএফআইসি ব্যাংক যাত্রা শুরু করে। ১৯৮৩ সালে এই ব্যাংকের ৫১ শতাংশ বেসরকারি স্পন্সর ও শেয়ারহোল্ডারদের হাতে ছেড়ে দেওয়া হয়।

আরাস্ত খান এ বিষয়ে বলেন, সরকার মনোনীত পরিচালকদের সালমান এফ রহমান ও তার সহযোগীরা ‘বি’ গ্রেডের পরিচালক হিসেবে দেখতেন। এটি দুর্ভাগ্যজনক ছিল।

উপদেষ্টা ফাওজুলের সঙ্গে এফআইসিসিআই প্রতিনিধিদলের সাক্ষাৎ

প্রকাশ: ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৫:০৩ পিএম
আপডেট: ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬:১৯ পিএম
উপদেষ্টা ফাওজুলের সঙ্গে এফআইসিসিআই প্রতিনিধিদলের সাক্ষাৎ
সচিবালয়ে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সভাকক্ষে এফআইসিসিআই প্রতিনিধিদলের সাক্ষাৎ। ছবি: খবরের কাগজ

সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়; বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয় এবং রেলপথ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন ফরেন ইনভেস্টরস চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফআইসিসিআই) প্রতিনিধিদল।

বৃহস্পতিবার (১২ সেপ্টেম্বর) সকালে সচিবালয়ে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সভাকক্ষে তাদের এই সাক্ষাৎ অনুষ্ঠিত হয়। 

এ সময় মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেন, ‘বিদ্যুৎ, জ্বালানি, সড়ক, সেতু এবং রেল খাতসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংস্থা, কোম্পানি পুর্নগঠন ও সংস্কার করা হচ্ছে। দেশের মানুষ বৈষম্যহীন নতুন বাংলাদেশ দেখতে চায় এবং আমি আশা করি নতুন এই বাংলাদেশ তৈরিতে জনগণের স্বার্থ সুরক্ষার্থে বর্তমান সরকারকে এফআইসিসিআই সর্বাত্মক সহযোগিতা করবে।’ 

এফআইসিসিআই-এর সভাপতি জাভেদ আখতার বলেন, ‘সততার সঙ্গে ব্যবসা করে আমরা বৈষম্যহীন নতুন বাংলাদেশ তৈরিতে অবদান রাখতে চাই এবং যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে বাংলাদেশে ব্যবসা পরিচালনা করতে চাই।’

বৈঠকে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. এহছানুল হক, বিদ্যুৎ বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. হাবিবুর রহমান, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগের সচিব মো. নূরুল আলম, এফআইসিসিআই-এর সিনিয়র সহসভাপতি এরিক এম ওয়াকার, সহসভাপতি ইয়াসির আজমান, কার্যনিবাহী পরিচালক টি আই এম নুরুল কবিরসহ এফআইসিসিআই-এর অন্যান্য প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

জয়ন্ত সাহা/ইসরাত চৈতী/অমিয়/

শেয়ারবাজারে বেড়েছে সূচক ও লেনদেন

প্রকাশ: ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১১:২৬ এএম
শেয়ারবাজারে বেড়েছে সূচক ও লেনদেন

দেশের দুই পুঁজিবাজার ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই-সিএসই) বুধবার (১১ সেপ্টেম্বর) সূচকের উত্থানের মধ্যে দিয়ে লেনদেন শেষ হয়েছে। এদিন ডিএসই ও সিএসইতে আগের কার্যদিবসের চেয়ে টাকার পরিমাণে লেনদেন বেড়েছে।
 
বুধবার দিন শেষে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের চেয়ে ১১.১২ পয়েন্ট বেড়ে ৫ হাজার ৭১৩ পয়েন্টে অবস্থান করছে। ডিএসই শরিয়া সূচক ৫.৫৬ পয়েন্ট বেড়ে ১ হাজার ২৪০ পয়েন্টে এবং ডিএস৩০ সূচক ৬.৯২ পয়েন্ট কমে ২ হাজার ১০৭ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।

ডিএসইতে মোট ৩৯৭টি কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে শেয়ার ও ইউনিটের দাম বেড়েছে ১৬৩টি কোম্পানির, কমেছে ১৭২টির এবং অপরিবর্তিত আছে ৬২টির।

ডিএসইতে এদিন মোট ৬২৫ কোটি ৭২ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয়েছিল ৫৬২ কোটি ৭২ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট।

ডিএসইতে গতকাল লেনদেনের শীর্ষে উঠে এসেছে অগ্নি সিস্টেমস লিমিটেড।

এদিন অগ্নি সিস্টেমস লিমিটেডের ৩২ কোটি ১৫ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। তাতে লেনদেনের শীর্ষে জায়গা নিয়েছে কোম্পানিটি।

লেনদেনের তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে উঠে আসা কোম্পানি লিন্ডে বাংলাদেশ লিমিটেডের ব্র্যাক ব্যাংক লিমিটেডের ২২ কোটি ৫৩ লাখ ৪৪ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। আর ২০ কোটি ২৪ লাখ ৪৩ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন করায় তালিকার তৃতীয় স্থান নিয়েছে বাংলাদেশে সাবমেরিন ক্যাবলস পিএলসি।

এদিন লেনদেনের শীর্ষ তালিকায় থাকা অন্য কোম্পানিগুলো হলো সোনালী আঁশ ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, এনআরবি ব্যাংক লিমিটেড, গ্রামীণফোন লিমিটেড, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসি, দ্য ইবনে সিনা ফার্মাসিটিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ, দ্য একমি ল্যাবরেটরিজ লিমিটেড।

গতকাল ডিএসইতে লেনদেনে অংশ নেওয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে দর বৃদ্ধির শীর্ষে উঠে এসেছে শাইনপুকুর সিরামিকস লিমিটেড।

এদিন ডিএসইতে শাইনপুকুর সিরামিকস লিমিটেডের শেয়ারদর আগের কার্যদিবসের তুলনায় ১ টাকা ৬০ পয়সা বা ১০ শতাংশ বেড়েছে।

গতকাল ডিএসইতে  লেনদেনে অংশ নেওয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে দরপতনের তালিকায় শীর্ষে উঠে এসেছে প্রাইম টেক্সটাইল স্পিনিং মিলস লিমিটেড।

এদিন নিউলাইন প্রাইম টেক্সটাইল স্পিনিং মিলস লিমিটেডের ইউনিট দর আগের কার্যদিবসের তুলনায় কমেছে ১ টাকা ৩০ পয়সা বা ৮ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ। তাতে দরপতনের শীর্ষে জায়গা করে নিয়েছে কোম্পানিটি।

এদিকে দর হারানোর তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে উঠে আসা আইসিবি এএমসিএল সেকেন্ড মিউচুয়াল ফান্ডের শেয়ারদর আগের দিনের তুলনায় ৪০ পয়সা বা ৫ দশমিক ৭১ শতাংশ কমেছে। আর শেয়ারদর ৫ দশমিক ৬১ শতাংশ কমে যাওয়ায় তালিকার তৃতীয় স্থানে অবস্থান নিয়েছে ন্যাশনাল লাইফ ইন্স্যুরেন্স পিএলসি।

এদিন দরপতনের তালিকায় উঠে আসা অন্যান্য কোম্পানিগুলো হলো এফএএস ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড, হামি ইন্ডাস্ট্রিজ পিএলসি, বাংলাদেশ ল্যাম্পস লিমিটেড, দ্য ইবনে সিনা ফার্মাসিটিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ পিএলসি, তমিজউদ্দিন টেক্সটাইল মিলস পিএলসি, লিব্রা ইনফিউশন লিমিটেড, বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কোম্পানি লিমিটেডের দর কমেছে।

দর বৃদ্ধির দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে খান ব্রাদার্স পিপি ওভেন বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড। কোম্পানিটির শেয়ারদর ৯ দশমিক ৯৫ শতাংশ বেড়েছে। দর বৃদ্ধির তালিকায় তৃতীয় স্থানে থাকা এসকে ট্রিমস অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের শেয়ারদর বেড়েছে ১ টাকা ৪০ পয়সা বা ৯ দশমিক ৪৫ শতাংশ।

গতকাল দর বৃদ্ধির শীর্ষে উঠে আসা অপর কোম্পানিগুলো হচ্ছে ওরিয়ন ইনফিউশন লিমিটেড, এডিএন টেলিকম লিমিটেড, বাংলাদেশ সাবমেরিন ক্যাবলস, রানার অটোমোবাইলস পিএলসি, কোহিনূর কেমিক্যালস কোম্পানি লিমিটেড, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক পিএলসি, প্রাইম ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড।

অন্যদিকে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সিএসসিএক্স সূচক ১৯.৮৪ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করছে ৯ হাজার ৭৪৪ পয়েন্টে। সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ৩৪.৫৭ পয়েন্ট বেড়ে ১৬ হাজার ১৬১ পয়েন্টে, শরিয়া সূচক ৫.৫২ পয়েন্ট বেড়ে ১ হাজার ৩১ পয়েন্টে এবং সিএসই৩০ সূচক ১১.২২ পয়েন্ট কমে ১৩ হাজার ৬০ পয়েন্টে অবস্থান করছে।

সিএসইতে ২৩৯টি কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে শেয়ার ও ইউনিটের দাম বেড়েছে ১১৪টি কোম্পানির, কমেছে ৯০টির এবং অপরিবর্তিত আছে ৩৫টির।

ওয়ালটনে মুনাফা বেড়েছে ৫৭৪ কোটি টাকা

প্রকাশ: ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১১:২০ এএম
ওয়ালটনে মুনাফা বেড়েছে ৫৭৪ কোটি টাকা

প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যেও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের জন্য এযাবৎকালের সর্বোচ্চ ক্যাশ ডিভিডেন্ড বা নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে পুঁজিবাজারে প্রকৌশল খাতের তালিকাভুক্ত কোম্পানি ‘ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ পিএলসি’।

গত ৩০ জুন সমাপ্ত হিসাব বছরে কোম্পানিটির মুনাফা আগের বছরের তুলনায় ৫৭৩ দশমিক ৮৫ কোটি টাকা বেড়েছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে আলোচিত বছরের জন্য কোম্পানিটি সাধারণ বিনিয়োগকারীদের ৩৫০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছে। অর্থাৎ শেয়ারপ্রতি ৩৫ টাকা লভ্যাংশ পাচ্ছেন ওয়ালটনের সাধারণ বিনিয়োগকারীরা, যা এযাবৎকালের সর্বোচ্চ। এর আগে ২০২২-২৩ অর্থবছরে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের জন্য ৩০০ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড দিয়েছিল ওয়ালটন। 

তবে কোম্পানিটির উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের জন্য ২০০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করা হয়েছে। অর্থাৎ ওয়ালটনের উদ্যোক্তা ও পরিচালকরা শেয়ারপ্রতি ২০ টাকা লভ্যাংশ পাবেন। 

গত বুধবার অনুষ্ঠিত কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদের ৪০তম সভায় ২০২৩-২৪ হিসাব বছরের নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা ও অনুমোদনের পর লভ্যাংশ প্রদানের এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। 

কোম্পানি সূত্রে জানা গেছে, ঘোষিত লভ্যাংশ ও অন্য বিষয়াদি শেয়ারহোল্ডারদের অনুমোদনের লক্ষ্যে কোম্পানিটির ১৮তম বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) আগামী ২৯ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হবে। এর জন্য রেকর্ড ডেট নির্ধারণ করা হয়েছে ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪। 

প্রকাশিত প্রতিবেদনের তথ্যমতে, সদ্য সমাপ্ত হিসাব বছরে কোম্পানির অপারেটিং প্রফিট মার্জিন বৃদ্ধি পাওয়ার পাশাপাশি বিক্রয়ের বিপরীতে আর্থিক ব্যয় হ্রাস পেয়েছে। ফলে ২০২৩-২৪ হিসাব বছরে কোম্পানিটির মুনাফা হয়েছে ১ হাজার ৩৫৬ দশমিক ৫৩ কোটি টাকা।

যেখানে আগের হিসাব বছরের একই সময়ে প্রতিষ্ঠানটির মুনাফা হয়েছিল ৭৮২ দশমিক ৬৮ কোটি টাকা। সেই হিসাবে আলোচ্য সময়ে প্রতিষ্ঠানটির মুনাফা ৫৭৩ দশমিক ৮৫ কোটি টাকা বেড়ে ৭৩ দশমিক ৩২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে।

এরই পরিপ্রেক্ষিতে ২০২৩-২৪ হিসাব বছরে ওয়ালটনের শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে ৪৪ দশমিক ৭৮ টাকা, যা পূর্ববর্তী হিসাব বছরে ছিল ২৫ দশমিক ৮৪ টাকা। 

এ ছাড়া ৩০ জুন, ২০২৪ শেষে পুনর্মূল্যায়ন ব্যতীত কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদ মূল্য (এনএভিপিএস) আগের বছরের চেয়ে ১৪ দশমিক ৭৩ শতাংশ বেড়ে ২৭৭ দশমিক ৮৬ টাকায় দাঁড়িয়েছে। আলোচ্য সময়ে পুনর্মূল্যায়নসহ এনএভিপিএসের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩৭৯ দশমিক ৩০ টাকা, যার পরিমাণ ৩০ জুন, ২০২৩-এ ছিল ৩৪৩ দশমিক ৭৩ টাকা। 

৩০ জুন, ২০২৪-এ কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি নিট অপারেটিং ক্যাশ ফ্লো (এনওসিএফপিএস) দাঁড়িয়েছে ৫৬ দশমিক ৯৬ টাকা, যা আগের হিসাব বছর শেষে ছিল ১১১ দশমিক ৮৪ টাকা। মূলত সদ্য সমাপ্ত হিসাব বছরে বিগত বছরের তুলনায় সরকারি কোষাগারের পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানের সরবরাহকারীদের অর্থ প্রদানের পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়ায় এনওসিএফপিএস হ্রাস পেয়েছে। যদিও আলোচ্য সময়ে প্রচুর পরিমাণ কাঁচামাল ক্রয়ের কারণে টেকসই বিক্রয় প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে। 

কোম্পানি সূত্রে জানা গেছে, নানা রকম প্রতিকূলতা সত্ত্বেও কোম্পানির দক্ষ ম্যানেজমেন্ট বিভিন্ন খাতে পরিচালন ব্যয় হ্রাস করার কারণে কোম্পানির বিভিন্ন আর্থিক সূচকেও ব্যাপক উন্নতি হয়েছে। এ ছাড়া দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক বাজারে ব্যবসা সম্প্রসারণের কারণেও কোম্পানির বিক্রয় বৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে মুনাফাও কাঙ্ক্ষিত হারে বৃদ্ধি পেয়েছে।

কোম্পানির সার্বিক ব্যবসায়িক সাফল্যে পরিচালনা পর্ষদ সন্তোষ প্রকাশ করে এবং ম্যানেজমেন্টকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে। এ ছাড়া বিগত বছরের মতো আগামী বছরগুলোতেও কোম্পানিটি মুনাফা বৃদ্ধির ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে সক্ষম হবে বলে দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করে ওয়ালটন কর্তৃপক্ষ।

নারী ফ্যাশনশিল্পে বিপুল সম্ভাবনা সৌদির

প্রকাশ: ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১১:১২ এএম
নারী ফ্যাশনশিল্পে বিপুল সম্ভাবনা সৌদির
সৌদি আরবের একটি শপিং মলে দুই নারী। ছবি: সংগৃহীত

সৌদি আরবের একটি বিরাট অংশ দখল করে আছে নারীদের ফ্যাশন পোশাক। গত পাঁচ বছরে এটি সৌদির দ্রুত বর্ধনশীল খুচরা বিক্রয়ের খাত হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সেই সঙ্গে দেশের সমগ্র খুচরা বাজারের এক-চতুর্থাংশ দখল করছে ফ্যাশন খাতটি। এ কারণে এই খাতের বিপুল সম্ভাবনা দেখছেন বিশেষজ্ঞরা। সাম্প্রতিক একটি বাজার গবেষণায় এসব তথ্য উঠে এসেছে। গবেষণাটি পরিচালনা করেছে বৈশ্বিক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান রেডসিয়ার।
 
গবেষণা অনুযায়ী, সৌদি আরবের ফ্যাশনশিল্পের বাজার ২০৩০ সালের মধ্যে ৫৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের (২০০ বিলিয়ন সৌদি রিয়াল) বেশি হবে এবং খাতের ভবিষ্যৎ প্রবৃদ্ধির জন্য ডি২সি (ডাইরেক্ট-টু-কনজ্যুমার) ব্র্যান্ডগুলো একটি গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ হিসেবে আবির্ভূত হবে। নারীদের ক্রমবর্ধমান কর্মক্ষমতা, পোশাকের পশ্চিমাকরণ, সামাজিক মিডিয়ার প্রভাব বৃদ্ধি এবং অনলাইন শপিং প্ল্যাটফর্মগুলোর সংখ্যা বেড়ে যাওয়া ইত্যাদি কারণগুলো সৌদি আরবের ফ্যাশন পোশাক সেগমেন্টের অভূতপূর্ব প্রবৃদ্ধির প্রধান চালিকাশক্তি।

গবেষণায় রেডসিয়ার বলছে, একদল তরুণ ও প্রযুক্তি সচেতন জনগোষ্ঠী, যাদের কাছে অতিরিক্ত ব্যয় করার জন্য পর্যাপ্ত আয়ের উৎস রয়েছে, তারা সুবিধা ও ব্যক্তিগত চাহিদার কারণে অনলাইন ফ্যাশনের প্রবৃদ্ধিতে একটা বড় ভূমিকা রাখছে।

ফ্যাশনশিল্পের বিকাশের নেতৃত্বে অনলাইন প্রতিষ্ঠানগুলো
শিল্প বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, অ্যামাজন, শেইন, টেমু, সান অ্যান্ড স্যান্ড স্পোর্টস, নুন ও নামশিসহ বিশ্বব্যাপী ও আঞ্চলিক বড় বড় প্রতিষ্ঠানগুলোর নেতৃত্বে বেশ কয়েকটি খুচরা বিক্রেতা ও অনলাইন কোম্পানির উত্থান সৌদি আরবের বাজারে নারী ফ্যাশন পোশাকের বৃদ্ধিতে নেতৃত্ব দিয়েছে।

সেনোমি রিটেইল, সেন্টারপয়েন্ট, মধ্যপ্রাচ্যের বিলাসবহুল অনলাইন রিটেইলার ওউনাস, তুর্কি ফ্যাশন পোশাক প্রধান ট্রেন্ডিওল এবং ফ্যাশন ও জুতার প্রধান কোম্পানি আলশায়া গ্রুপ সৌদির দ্রুত বর্ধমান ফ্যাশন পোশাক সেগমেন্টের অন্যতম প্রধান প্রতিযোগী। দেশের অর্থনীতিকে বৈচিত্র্যময় করার জন্য সৌদি সরকারের তেলবহির্ভূত খাত বাড়ানোর উদ্দেশ্যে সম্প্রতি গ্রহীত নীতিগুলো এবং ফ্যাশন কোম্পানিগুলোর প্রবেশ বাজারের প্রবৃদ্ধিকে সহজ করেছে।

সৌদি আরবের শ্রমশক্তিতে নারীর অংশগ্রহণ, পশ্চিমা পোশাকের প্রবণতা এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও অনলাইন শপিংয়ের প্রভাবের ফলে ফ্যাশনশিল্প পরিবর্তিত হচ্ছে। 

নীতি বাস্তবায়ন, বিভিন্ন নন-অয়েল খাতসহ রিটেল খাতে বহু বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ সৌদি আরবের অর্থনীতিকে ২০৩০ সালের মধ্যে ১ দশমিক ৪৬ ট্রিলিয়ন ডলারে (৫ দশমিক ৫০ ট্রিলিয়ন সৌদি রিয়ালের) পৌঁছাতে ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

রেডসিয়ার গবেষণায় দেখা গেছে, অনলাইন রিটেল সৌদি আরবের বাজারে ফ্যাশন পণ্যের প্রসারে প্রধান ভূমিকা পালন করছে। ২০২০ সালের তুলনায় এটি পাঁচগুণ বেড়ে দেশটির সামগ্রিক ফ্যাশন রিটেল বাজারের ২০ শতাংশ অবদান রাখছে। এ ছাড়া অনলাইন বিক্রয় সেগমেন্টের সামগ্রিক প্রবৃদ্ধিতে ৯০ শতাংশ অবদান রেখেছে বলে ধারণা করা হয়।

দুবাইভিত্তিক রেডসিয়ার স্ট্র্যাটেজি কনসালট্যান্টসের পার্টনার সন্দীপ গানেডিওয়ালা বলেন, সৌদি আরবে ফ্যাশনের একটি প্রধান চালিকাশক্তি হয়ে উঠেছে অনলাইন, এই খাত থেকে ৯০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি এসেছে। সন্দীপ গানেডিওয়ালা বলেন, শেইন ও ওমনি-চ্যানেল ফ্যাশন বিশেষজ্ঞদের মতো অনলাইন ফ্যাশন কেন্দ্রিক খেলোয়াড়রা প্রতিযোগিতামূলক দামে বহু পণ্য সরবরাহ করে, যার ফলে এই উচ্চমাত্রার প্রবৃদ্ধি অর্জন করা সম্ভব হয়েছে।

রেডসিয়ার মতে, সামনের দিনগুলোতে সৌদি ফ্যাশনশিল্পটি ২০০ বিলিয়ন সৌদি রিয়ালের (৫৩ দশমিক ৩০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার) মার্কেটে রূপান্তরিত হবে, যেখানে ভবিষ্যৎ প্রবৃদ্ধির জন্য অনলাইন একটি গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ হয়ে উঠবে।

ডি২সি ব্র্যান্ডগুলোর প্রাধান্য বাড়বে
গবেষণাটি বলছে, যদিও ই-টেইলিং (অনলাইন খুচরা বিক্রি) বিশেষজ্ঞ ও ওমনি-চ্যানেলগুলো (একই কোম্পানির পণ্য বিক্রির বিভিন্ন প্ল্যাটফর্ম) বর্তমানে ফ্যাশন পোশাক সেগমেন্টকে প্রাধান্য দিচ্ছে। স্থানীয় প্রবণতা ও চাহিদার বিভিন্নতা বাড়ার ফলে ভবিষ্যতে স্থানীয় ডি২সি ব্র্যান্ডগুলোর জন্য উর্বর ক্ষেত্র তৈরি হবে। সেই সঙ্গে ভবিষ্যতে নারীদের সব ধরনের কাজে যোগ দেওয়ার জন্য আরও বেশি অফিশিয়াল আউটওয়্যারের প্রয়োজন হবে, এটি আরও বেশি স্থানীয় ডি২সি ব্র্যান্ডের চাহিদা বাড়াবে বলেও গবেষণায় উঠে এসেছে।

সৌদির ক্রেতাদের একটি উল্লেখযোগ্য সংখ্যা তথা ৪৫ শতাংশ ট্রেন্ডি। তবে তারা সহজ ফ্যাশন পছন্দ করে। গাড়ি চালানোর জন্য আরামদায়ক পোশাক, জুতা এবং এক্সেসরিজের প্রয়োজন হয়, যার ফলে ট্রেন্ডি এবং স্টাইলিশ পোশাকের চাহিদা বাড়ছে। একই সঙ্গে, খেলাধুলায় নারীদের সক্রিয় অংশগ্রহণ স্পোর্টসওয়্যারের চাহিদা বাড়াবে বলে গবেষণায় উল্লেখ করা হয়েছে।

রেডসিয়ার মতে, আবায়াকে একটি আধুনিক ও উচ্চমানের পোশাক হিসেবে পুনর্বিবেচনা করা হচ্ছে, যা দেশটিতে দ্রুত বৃদ্ধি পাওয়া ফ্যাশন ট্রেন্ডে অবদান রাখছে। প্রতিষ্ঠানটির বিশেষজ্ঞরা জানান, চুল ও মাথার সাজসজ্জার বাজারও ব্যাপকভাবে প্রসারিত হচ্ছে। কারণ দেশটিকে এখন আর নারীদের জন্য মাথা ঢাকা বাধ্যতামূলক নয়। গবেষণাটি বলেছে, সৌদি আরবের প্রায় ৬০ শতাংশ ক্রেতা নতুন স্থানীয় ব্র্যান্ডের জিনিসই কিনতে চেষ্টা করেন এবং ৫৫ শতাংশ মানুষ বিভিন্নতা খুঁজছেন, যার ফলে স্থানীয় ডি২সি ব্র্যান্ডগুলোর জন্য সুযোগ তৈরি হয়েছে। রেডসিয়ার আরও বলেছে, সৌদির ক্রেতাদের একটি উল্লেখযোগ্য সংখ্যা অর্থাৎ ৪৫ শতাংশই ট্রেন্ডি কিন্তু মার্জিত ফ্যাশন পছন্দ করতে চায়।

গানেদিওয়ালা বলেন, ল্যান্ডমার্ক ও কামাল ওসমান জামজুমের (কেওজে) মতো বাজারের প্রতিযোগীরা সফলভাবে স্থানীয় ফ্যাশন ব্র্যান্ড তৈরি করে এবং সেগুলোকে সরাসরি অফলাইনে গ্রাহকদের কাছে নিয়ে গেছে।

রেডসিয়ারের জ্যেষ্ঠ নির্বাহী বলেন, সৌদির গ্রাহকরা তাদের কেনাকাটায় খুব ডিজিটাল হয়ে উঠছে এবং তাদের মধ্যে ৬০ শতাংশ নতুন স্থানীয় ফ্যাশন ব্র্যান্ড কেনার চেষ্টা করছে। আমরা আশা করি ভবিষ্যতে স্থানীয় অনলাইনভিত্তিক সরাসরি গ্রাহক পর্যায়ে (ডি২সি) ব্র্যান্ডগুলো ফ্যাশন খাতকে আরও এগিয়ে নেবে।

বর্তমানে ই-টেইলিং বিশেষজ্ঞরা সৌদি আরবে ফ্যাশন রিটেইল বাজারের নেতৃত্ব দিচ্ছে, যা মোট বিক্রির ৫০ শতাংশ অবদান রাখছে। এরপরেই ওমনি-চ্যানেলগুলোর অবদান ৩০ শতাংশ বলে গবেষণায় উঠে এসেছে। [অ্যারাবিয়ান বিজনেসের প্রতিবেদন থেকে অনুবাদ করেছেন ইসমাঈল হোসাইন সোহেল]