একাদশ অধ্যায় : খনিজ সম্পদ : জীবাশ্ম
সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর-৩
উদ্দীপকটি পড়ে নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর লেখ।
রাইয়ানের মা গ্যাসের চুলায় রান্না করছিলেন। রাইয়ান তার মায়ের কাছে গ্যাসটি সম্পর্কে জানতে চাওয়ায় মা বলল, এটি একটি সম্পৃক্ত হাইড্রোকার্বন, যা সাধারণত অ্যালকেন শ্রেণিভুক্ত।
ক. ভিনেগার কী?
খ. পলিমারকরণ বলতে কী বোঝায়?
গ. উদ্দীপকে নির্দেশিত যৌগটি শিল্পক্ষেত্রে কীভাবে প্রস্তুত করা হয়, ব্যাখ্যা করো।
ঘ. আমাদের দৈনন্দিন জীবনে এ জাতীয় যৌগের গুরুত্ব বিশ্লেষণ করো।
উত্তর: ক. ভিনেগার হলো অ্যাসিটিক অ্যাসিডের (ইথানোয়িক অ্যাসিড) জলীয় দ্রবণ। সাধারণত, এতে অ্যাসিটিক অ্যাসিডের পরিমাণ ৫ থেকে ৮ শতাংশ পর্যন্ত থাকে। ভিনেগার খাদ্য সংরক্ষণে, রান্নার কাজে এবং পরিষ্কারক হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এটি গাঁজন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ইথানলকে জারিত করে তৈরি করা হয়।
খ. পলিমারকরণ হলো একটি রাসায়নিক প্রক্রিয়া, যেখানে ছোট ছোট অসংখ্য অণু (মনোমার) পরস্পর রাসায়নিক বন্ধনের মাধ্যমে যুক্ত হয়ে একটি বৃহৎ অণু (পলিমার) গঠন করে। পলিমারের আণবিক ভর মনোমারের আণবিক ভরের তুলনায় অনেক বেশি হয়। বিভিন্ন ধরনের পলিমার যেমন- পলিথিন, পভিসি, পলিস্টার ইত্যাদি তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।
আরো পড়ুন : খনিজ সম্পদ: জীবাশ্ম অধ্যায়ের ১টি সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর, ২য় পর্ব
গ. উদ্দীপকে নির্দেশিত যৌগটি একটি সম্পৃক্ত হাইড্রোকার্বন, যা অ্যালকেন শ্রেণিভুক্ত এবং গ্যাসের চুলায় ব্যবহৃত হয়। গ্যাসের চুলায় সাধারণত মিথেন (CH4) প্রধান উপাদান হিসেবে থাকে, যা প্রাকৃতিক গ্যাসের মূল অংশ। মিথেন মূলত প্রাকৃতিক গ্যাস উত্তোলন করে পাওয়া যায়।
প্রাকৃতিক গ্যাস ভূপৃষ্ঠের নিচে খনিতে জমা থাকে। কূপ খনন করে এই গ্যাস উত্তোলন করা হয়। উত্তোলিত প্রাকৃতিক গ্যাসে মিথেন ছাড়াও ইথেন, প্রোপেন, বিউটেন এবং সামান্য পরিমাণে অন্যান্য গ্যাস মিশ্রিত থাকে। ব্যবহারের আগে এই গ্যাসকে পরিশোধন করা হয়।
পরিশোধন প্রক্রিয়ায়, প্রাকৃতিক গ্যাস থেকে অন্যান্য গ্যাস এবং অপদ্রব্য (যেমন- হাইড্রোজেন সালফাইড, কার্বন ডাই-অক্সাইড, জলীয় বাষ্প) বিভিন্ন পদ্ধতির মাধ্যমে দূর করা হয়। এই পরিশোধন প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই বিশুদ্ধ মিথেন বা এলপিজির (তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাস, যাতে প্রোপেন ও বিউটেনের পরিমাণ বেশি থাকে) মতো জ্বালানি গ্যাস প্রস্তুত করা হয়, যা রান্নার কাজে ব্যবহৃত হয়।
এ ছাড়া মিথেন পরীক্ষাগারে বা শিল্পক্ষেত্রে সামান্য পরিমাণে অন্য উপায়েও প্রস্তুত করা যেতে পারে, যেমন-
সোডিয়াম অ্যাসিটেটকে সোডালাইমের সঙ্গে উত্তপ্ত করে: CH3COONa + NaOHCaO, ∆CH4 + Na2CO3
তবে বাণিজ্যিক উৎপাদনে প্রাকৃতিক গ্যাস উত্তোলনই প্রধান পদ্ধতি।
ঘ. উদ্দীপকে উল্লিখিত অ্যালকেন শ্রেণির যৌগ (প্রধানত মিথেন এবং এলপিজির অন্যান্য উপাদান) আমাদের দৈনন্দিন জীবনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এদের গুরুত্ব নিচে বিশ্লেষণ করা হলো-
জ্বালানি ও রান্নার কাজে: মিথেন প্রাকৃতিক গ্যাসের প্রধান উপাদান এবং এলপিজির মূল উপাদান (প্রোপেন ও বিউটেন) রান্নার জন্য বহুল ব্যবহৃত জ্বালানি। এটি সহজলভ্য, পরিষ্কার করা এবং তাপ উৎপাদনে কার্যকর।
পরিবহন: সিএনজি (কম্প্রেসড ন্যাচারাল গ্যাস), যার প্রধান উপাদান মিথেন, বর্তমানে যানবাহনের জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এটি পেট্রোল ও ডিজেলের তুলনায় পরিবেশবান্ধব এবং সাশ্রয়ী। এলপিজিও কিছু ক্ষেত্রে যানবাহনের জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
বিদ্যুৎ উৎপাদন: প্রাকৃতিক গ্যাস বিদ্যুৎকেন্দ্রে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য ব্যবহৃত হয়। টারবাইন ঘুরিয়ে জেনারেটরের মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপন্ন করা হয়।
শিল্পক্ষেত্রে কাঁচামাল: মিথেন বিভিন্ন রাসায়নিক যৌগ উৎপাদনে কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এর মধ্যে মিথানল, ফরমালডিহাইড, হাইড্রোজেন সায়ানাইড উল্লেখযোগ্য। অ্যালকেন থেকে বিভিন্ন জৈব দ্রাবক এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় রাসায়নিক পদার্থ তৈরি করা হয়।
অন্যান্য ব্যবহার: এলপিজি শিল্প কারখানায় বিভিন্ন তাপ উৎপাদী কাজে ব্যবহৃত হয়। প্রাকৃতিক গ্যাস থেকে প্রাপ্ত কার্বন ব্ল্যাক টায়ার ও অন্যান্য রাবারজাত দ্রব্য উৎপাদনে ব্যবহৃত হয়।
পরিশেষে বলা যায়, অ্যালকেন শ্রেণির যৌগ, বিশেষ করে মিথেন এবং এলপিজির উপাদানগুলো আমাদের দৈনন্দিন জীবনের জ্বালানির চাহিদা পূরণ করা থেকে শুরু করে শিল্পক্ষেত্রে কাঁচামাল সরবরাহ পর্যন্ত বিস্তৃত ক্ষেত্রে অপরিহার্য ভূমিকা পালন করে। এদের সহজলভ্যতা, উচ্চ তাপ উৎপাদন ক্ষমতা এবং তুলনামূলকভাবে পরিবেশবান্ধব বৈশিষ্ট্য এদের গুরুত্ব আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।
লেখক : প্রধান শিক্ষক
হাজী রফিজুদ্দিন ভূঁইয়া বালিকা উচ্চবিদ্যালয়, রূপগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ
কবীর