ঢাকা ২০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, সোমবার, ০৩ জুন ২০২৪

সুস্থতার তথ্য জানাবে কানের দুল!

প্রকাশ: ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২:০৫ পিএম
সুস্থতার তথ্য জানাবে কানের দুল!

নতুন নতুন প্রযুক্তিপণ্য বাজারে এনে তাক লাগিয়ে দিচ্ছেন গবেষকরা। স্মার্ট ঘড়ি ও আংটির পর স্মার্ট ফ্যাশনপণ্যের তালিকায় এবার নতুন করে যুক্ত হলো স্মার্ট কানের দুলও। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক থার্মাল প্রযুক্তিসংবলিত স্মার্ট দুল তৈরি করছেন।

গত ৭ ফেব্রুয়ারি ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণাপত্রে স্মার্ট দুল নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। সেখানে বলা হয়েছে, এই দুলের মাধ্যমে মানসিক চাপ, তাপমাত্রা, জ্বর, ব্যায়াম, খাদ্যাভ্যাস ও নারী-স্বাস্থ্যের নানা বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করা যাবে। দুলটিতে থাকা স্কিন টেম্পারেচার সেন্সর ত্বকের তাপমাত্রা ও ড্যাংলিং সেন্সর আশপাশের তাপমাত্রা পরিমাপে সাহায্য করে। এটি কানের লতির মাধ্যমে ত্বকের তাপমাত্রা নির্ধারণ করে বলে অনেক বেশি নির্ভুল তথ্য পাওয়া সম্ভব। তাই স্মার্ট দুলটি কবজিতে পরা ঘড়ির চেয়ে বেশি কার্যকর হবে বলে আশা করা হচ্ছে। ছয়জন মানুষের ওপর এই দুলের কার্যক্ষমতা যাচাই করে দেখা গেছে, সঠিকভাবে ত্বকের তাপমাত্রা নির্ণয়ে কানের দুলটি স্মার্টওয়াচকে ছাড়িয়ে গেছে।

একবার চার্জ দিয়ে স্মার্ট এই কানের দুল ২৮ দিন পর্যন্ত ব্যবহার করা যাবে। এতে ডেটা আদান-প্রদানের জন্য কম শক্তি খরচ করে এমন ব্লুটুথ ব্যবহার করা হয়েছে। ভবিষ্যতে দুলটি সৌরশক্তি ও কাইনেটিক বা গতিশক্তি দিয়ে চার্জ দেওয়া যাবে। তখন চার্জ দিতে কান থেকে দুল খুলতে হবে না। স্মার্ট দুল নিয়ে প্রাথমিক গবেষণা শেষ হলেও এই দুল হাতে পেতে আগ্রহীদের অপেক্ষা করতে হবে। কারণ আরও পরীক্ষা–নিরীক্ষা করে এর কার্যকারিতার বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া সময়সাপেক্ষ ব্যাপার।

জাহ্নবী 

লাখো বছরের বিবর্তনে ধান বন্য থেকে ঘরে

প্রকাশ: ৩১ মে ২০২৪, ০৫:৩৫ পিএম
লাখো বছরের বিবর্তনে ধান বন্য থেকে ঘরে
চাষের ধান ‘ওরিজা স্যাটিভা’-এর জন্মভুমি চীন ছবি: সংগৃহীত

সম্প্রতি চীনের একদল বিজ্ঞানী ধানের বিবর্তনের ১ লাখ বছরের অবিশ্বাস্য ইতিহাস উন্মোচন করেছেন। তাদের গবেষণায় উঠে এসেছে, কীভাবে বন্য উদ্ভিদ থেকে চাষের ফসলে রূপান্তরিত হয়েছে ধান। সম্প্রতি বিজ্ঞানভিত্তিক জার্নাল ‘সায়েন্স’-এ প্রকাশিত এক গবেষণায় ধানের বিবর্তন সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ এ তথ্য উঠে এসেছে। যেখানে ধান কীভাবে ক্রমাগত বিবর্তিত হয়েছে, যা মানবসমাজের বিকাশ ও কৃষির উৎপত্তি সম্পর্কে নতুন ধারণা দিয়েছে।

গবেষণায় নিশ্চিত করা হয়েছে, চাষের ধান ‘ওরিজা স্যাটিভা’-এর জন্মভূমি চীন। চায়নিজ একাডেমি অব সায়েন্সেস (আইজিজিএসিএএস) ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের জিওলজি ও জিওফিজিক্স ইনস্টিটিউটের যৌথ গবেষণা দল ঝেজিয়াংয়ের শাংশান সাংস্কৃতিক এলাকায় গবেষণাটি পরিচালনা করেছে।

তাদের আবিষ্কার বিশ্বব্যাপী কৃষির উৎপত্তিতে শাংশান সংস্কৃতির গুরুত্ব তুলে ধরেছে। মানুষের জীবনযাপন শিকার ও সংগ্রহ থেকে কৃষিক্ষেত্রে স্থানান্তরের মাধ্যমে মানব ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড় নিয়েছে। কারণ বর্তমানে বিশ্বের অর্ধেক জনসংখ্যার প্রধান খাদ্য ধান, যা চীনা সভ্যতার উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।

কখন ও কীভাবে মানুষ বন্য ধান ঘরে তুলতে শুরু করেছে, এ নিয়ে বিজ্ঞানীদের মাঝে দীর্ঘদিন ধরে বিতর্ক চলছে। ধানের উৎপত্তির বিষয়টি গত শতাব্দীতে সবচেয়ে আলোচিত বিষয় ছিল। ১৯৭০ এর দশকে চীনের ইয়াংসি নদী অঞ্চলের হেমুডু ও শাংশানের মতো স্থানে আবিষ্কারের মাধ্যমে, বিজ্ঞানীরা অঞ্চলটিকে ধানের উৎপত্তির জন্য গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছেন।

প্রাচীন নমুনায় বন্য ও চাষাবাদের ধানের মধ্যে পার্থক্য করা, এই গবেষণার প্রধান চ্যালেঞ্জ ছিল। আইজিজিএসিএএসের ড. লু হুয়ুয়ান ও তার দল বছরের পর বছর ধরে ধানের ‘ফাইটোলিথ’ পর্যবেক্ষণ করেছেন। এই ফাইটোলিথগুলো গাছপালায় পাওয়া ক্ষুদ্র সিলিকা কণিকা।

তারা এ গবেষণায় খুঁজে পেয়েছেন, ধানের ‘বুলিফর্ম’ কোষ মাছের আঁশের মতো বিভিন্ন ফাইটোলিথের আকার বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে ধান আবাদি হয়েছে। এই তথ্যের সাহায্যে গবেষকরা বন্য ও চাষের ধানের মধ্যে পার্থক্য নির্ণয়ের একটি পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছেন। ধানের ফাইটোলিথ বিশ্লেষণের সঙ্গে তারা আরও কিছু কৌশল যেমন- পরাগ ও কাঠকয়লার বিশ্লেষণ, মাটি পরীক্ষা, শস্যের দানার আকার পরীক্ষা ও প্রত্নতাত্ত্বিক খননের সম্মিলিত পদ্ধতি ব্যবহার করেছেন। এই পদ্ধতি ব্যবহার করে চীনের পুজিয়াং প্রদেশের শাংশান সাইট ও লংইউ প্রদেশের হেহুয়াশান সাইট পরীক্ষা করেছেন।

এই স্থানগুলো বিশ্লেষণ করে গবেষকরা প্রায় ১ লাখ বছরের একটি ধারাবাহিক সময়রেখা তৈরি করেছেন। গবেষণায় ইঙ্গিত মিলেছে, প্রায় ১ লাখ বছর আগে ইয়াংসি অঞ্চলে বন্য ধানের পরিমাণ অনেক বেশি ছিল। প্রায় ২৪ হাজার বছর আগে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সম্ভবত মানুষ বন্য ধান সংগ্রহ শুরু করে। প্রায় ১৩ হাজার বছর আগে মানুষ বন্য ধানের প্রাক-চাষাবাদ শুরু করে। ১১ হাজার বছর পর চাষের আরও বেশি সাধারণ হয়ে ওঠে, যা পূর্ব এশিয়ায় ধান চাষের শুরুকে চিহ্নিত করে।

এই গবেষণায় আরও উঠে আসে, কৃষিতে পূর্ব এশিয়ায় ধান ও দক্ষিণ-পশ্চিম এশিয়ায় প্রায় একই সময়ে গড়ে উঠেছিল। এই গবেষণা বিশ্বব্যাপী কৃষি কীভাবে শুরু হয়েছিল সে সম্পর্কে আমাদের জ্ঞানকে আরও সমৃদ্ধ করেছে এবং ধান, জলবায়ু, মানুষের কার্যকলাপ ও সাংস্কৃতিক বিকাশের মধ্যে জটিল সম্পর্ককে তুলে ধরেছে।

 

প্লাস্টিকের টেকসই বিকল্প কাঠ থেকে তৈরি শপিং ব্যাগ

প্রকাশ: ৩১ মে ২০২৪, ০৪:০৬ পিএম
প্লাস্টিকের টেকসই বিকল্প কাঠ থেকে তৈরি শপিং ব্যাগ
লিগনিন ইন্ডাস্ট্রিজের রেনোল উপাদান ব্যবহার করে তৈরি একটি বায়োপ্লাস্টিক ব্যাগ ছবি: দ্য ইনডিপেন্ডেন্ট

কাঠ থেকে তৈরি শপিং ব্যাগ প্লাস্টিকের ব্যাগের টেকসই বিকল্প হিসেবে আশা জাগাচ্ছে। ‘লিগনিন ইন্ডাস্ট্রিজ’ নামের সুইডিশ এক স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠান কাঠশিল্পের বর্জ্য থেকে বায়োপ্লাস্টিক তৈরির কৌশল আবিষ্কার করেছে। শপিং ব্যাগ থেকে শুরু করে স্মার্টফোন পর্যন্ত তৈরিতে এটি ব্যবহার করা যেতে পারে।

কাঠের প্রধান উপাদান লিগনিন থেকে এই জৈবভিত্তিক উপাদান তৈরি করা হয়েছে। কাগজ ও মণ্ড তৈরির কারখানায় সাধারণত এই উপাদান ফেলে দেওয়া হয় বা পোড়ানো হয়। তবে লিগনিন ইন্ডাস্ট্রিজ এমন এক পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছে, যার মাধ্যমে বিভিন্ন অপ্রয়োজনীয় লিগনিনের গুঁড়াকে ‘রেনোল’ নামের জৈবভিত্তিক উপাদানে রূপান্তর করা যায়।

                    লিগনিন থেকে তৈরি জৈবভিত্তিক উপাদান রেনোলের সিলিন্ডার ছবি: দ্য ইনডিপেন্ডেন্ট

 

রেনোলের রং দেখতে কাঠের মতোই, গন্ধও একই রকম হয়। তবে এতে প্লাস্টিকের মতো নমনীয়তা ও বৈচিত্র্য থাকায়, বর্তমানে প্লাস্টিক শিল্পে ব্যবহার করা জীবাশ্মভিত্তিক উপাদানের টেকসই বিকল্প হয়ে উঠতে পারে।

ব্রিটিশ সংবাদ মাধ্যম দ্য ইনডিপেনডেন্ট পত্রিকার এক সাক্ষাৎকারে লিগনিন ইন্ডাস্ট্রিজের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান প্রযুক্তি কর্মকর্তা ড. ক্রিস্টোফার ক্যারিক বলেন, ‘আমরা কাঁচামাল হিসেবে তেলের পরিবর্তে এটি ব্যবহার করছি।’

সাধারণত জৈবভিত্তিক উপাদানগুলো নির্দিষ্ট একটি পণ্য তৈরির জন্য উপযোগী করে তৈরি করা হয়। তবে এই উপাদান বিভিন্ন ধরনের প্লাস্টিক তৈরিতে কাজে লাগানো যাবে। শপিং ব্যাগ থেকে শুরু করে গাড়ির যন্ত্রাংশ তৈরি করা সম্ভব এর মাধ্যমে।’

লিগনিন ইন্ডাস্ট্রিজের প্রধান নির্বাহী ফ্রেডরিক মালমফোর্স বলেন, ‘কাগজের ব্যাগের প্রতি অনেকের অনেক আগ্রহ দেখা যাচ্ছে। কাগজ ভালো জিনিস, আমরাও কাগজ পছন্দ করি। তবে আমাদের পণ্যটি কাগজ ও প্লাস্টিকের মাঝামাঝি অবস্থান করে। ফলে এর মাধ্যমে কাগজের মতো পরিবেশবান্ধব ব্যাগ পাওয়া যাবে, আবার প্লাস্টিকের মতো সুবিধাও পাওয়া যাবে।’

বাণিজ্যিকভাবে লাভজনক পণ্য তৈরির ক্ষেত্রে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল লিগনিন গুঁড়াকে থার্মোপ্লাস্টিক রেনোলে রূপান্তর করার রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় তৈরি পচা ডিমের গন্ধ দূর করা। লিগনিন ইন্ডাস্ট্রিজ পাঁচ বছর গবেষণা করে, লিগনিনের আসল গন্ধ ধরে রাখার সমাধান খুঁজে বের করেছে। বর্তমানে উপাদানটির গন্ধ বন থেকে সংগ্রহ করা কাঠের মতোই।

প্রতিষ্ঠানটি বর্তমানে তাদের তৈরি জৈব প্লাস্টিককে বাণিজ্যিকভাবে বাজারজাতে কাজ করছে। ইভি চার্জার, হিট পাম্প ও ভ্যাকুয়াম ক্লিনারের জন্য প্লাস্টিক তৈরি করে এমন একটি ব্রিটিশ সংস্থার সঙ্গে তারা চুক্তি করেছে। পরিবেশ দূষণকারী প্লাস্টিক উৎপাদনকারীদের নিয়ে নতুন করে জল্পনা-কল্পনার মধ্যে এই জৈব প্লাস্টিকের সাফল্য এল।

নদী থেকে প্রাপ্ত মাইক্রোপ্লাস্টিকের নমুনা ছবি: দ্য ইনডিপেন্ডেন্ট

 

সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের এক গবেষণায় চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে। গবেষণায় দেখা গেছে, পরীক্ষা করা প্রতিটি মানুষের অণ্ডকোষে মাইক্রোপ্লাস্টিক নামের ক্ষুদ্র প্লাস্টিকের কণা পাওয়া গেছে। অন্যদিকে চীনা গবেষকরা হৃদযন্ত্র, মস্তিষ্ক এবং পায়ের রক্তের জমাটেও এগুলোর উপস্থিতি পেয়েছেন।

এর আগে লেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের এক প্রকল্পে নতুন তথ্য প্রকাশ পেয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়টির স্কুল অব কেমিস্ট্রির ড. সারাহ কি-এর নেতৃত্বে পরিচালিত গবেষণায় দেখা যায়, উজ্জ্বল রঙের প্লাস্টিক সাধারণ রঙের চেয়ে দ্রুত নষ্ট হয়। গবেষণাটির প্রধান ‍ড. সারাহ বলেন, ‘লাল ও সবুজের মতো রঙিন প্লাস্টিক খুব দ্রুত নষ্ট হয়ে মাইক্রোপ্লাস্টিক তৈরি করে। যেসব পণ্য খোলা আকাশের নিচে বা রোদে অনেক বেশি সময় থাকে, সেগুলোর ক্ষেত্রে উজ্জ্বল রং এড়িয়ে চলা উচিত।’

লিগনিন ইন্ডাস্ট্রিজ দাবি করেছে, তাদের তৈরি খয়েরি রঙের জৈব প্লাস্টিক মাইক্রোপ্লাস্টিক কমাতে ও পরিবেশবান্ধব প্লাস্টিকের ব্যবহার বাড়াতে সাহায্য করতে পারে। কার্বন নিরপেক্ষ রেনোল উপাদান বিশ্বব্যাপী প্লাস্টিকের চাহিদার ৫০ শতাংশেরও বেশি মেটাতে সক্ষম। ফ্রেডরিক মালমফোর্স আরও বলেন, পৃথিবীতে প্রচুর পরিমাণে লিগনিন পাওয়া যায়।

প্রতি বছর কমপক্ষে ১০ কোটি টন লিগনিন উৎপন্ন হয়। আর জৈব পদার্থের সবচেয়ে ভালো দিক হলো এটি বাতাস থেকে কার্বন ডাই-অক্সাইড শোষণ করে। আমাদের প্লাস্টিক শিল্পের জীবাশ্ম প্রভাব ভাঙতে হবে।

 

সদয় হওয়ার আহ্বান

প্রকাশ: ২৯ মে ২০২৪, ০২:৫৬ পিএম
সদয় হওয়ার আহ্বান
কার্লা সোফিয়া গ্যাসকন

দীর্ঘ দিনের চেপে রাখা কান্না কান সৈকতের পাড়ে গিয়ে কাঁদলেন কার্লা সোফিয়া গ্যাসকন। রূপান্তরকামী একজন নারী হিসেবে নিজের দেশেও অপমানিত হতে হয়েছে তাকে। কান চলচ্চিত্র উৎসবে সেরা অভিনেত্রীর পুরস্কার পেয়ে সবার নজর কেড়েছেন তিনি। সেখান থেকেই রূপান্তরকামীদের প্রতি সদয় হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন এই অভিনয়শিল্পী। 

’ইমিলিয়া পেরেস’ সিনেমার জন্য কান চলচ্চিত্র উৎসবে সেরা অভিনেত্রীর পুরস্কার পেয়েছেন চারজন। তাদের অন্যতম কার্লা। জ্যাক অদিয়াঁর নির্মিত ছবিটায় পুরস্কার পাওয়ার পর বক্তৃতায় তিনি নিজের সংগ্রামের কথা তুলে ধরেন। জানান, রূপান্তরকামী হওয়ায় পদে পদে কীভাবে নানা বাধার মুখে পড়তে হয়েছে তাকে। বক্তৃতায় রূপান্তরকামিতা নিয়ে কুসংস্কার ও তার সম্প্রদায়ের সঙ্গে বৈষম্য নিয়েও কথা বলেন তিনি। ট্রান্সজেন্ডারদের প্রতিনিয়ত অপমানিত হতে হয়, হত্যার হুমকির মধ্য দিয়ে যেতে হয় সেসব তিক্ত অভিজ্ঞতাও তুলে ধরেন কার্লা। তিনি বলেন, ‘আমার নিজের দেশ মেক্সিকোতে মানুষ আমাদের বিশ্রি ভাষায় সম্বোধন করে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা যা, আমাদের সেভাবেই গ্রহণ করা উচিত। শরীর আমাদের, এটা বদলে ফেলার অধিকারও আমার আছে।’ তার স্পষ্ট বক্তব্য হচ্ছে, ট্রান্সজেন্ডাররা স্বাভাবিক মানুষ, তাদের সম্মান পাওয়ার অধিকার আছে।

রূপান্তরকামী সম্প্রদায়ের সংগ্রাম শুধু সামাজিক নয়, মানসিক স্বাস্থ্য নিয়েও তাদের সংগ্রাম করতে হয় প্রতিনিয়ত। রূপান্তরকামিতা কোনো মানসিক রোগ নয়, এটি এখনো সমাজে প্রতিষ্ঠিত নয়। এ কারণে এই সম্প্রদায়ের মানুষকে নানা বিতর্কের মুখোমুখি হতে হয়। ‘এমিলিয়া পেরেস’ সিনেমায় শুরুতে কার্লার ভূমিকা নিয়ে ধোঁয়াশা ছিল। তিনি কি একজন পুরুষ মাদকমাফিয়া হবেন, নাকি নারী! যদিও ছবিতে তার অনবদ্য অভিনয় অতিথিদের চোখে পড়েছিল। টানা ১১ মিনিটের অভিবাদনই সে কথা বলে দেয়।

কলি

মহাজাগতিক সংকেত আবিষ্কারে এআই

প্রকাশ: ২৪ মে ২০২৪, ০১:৫৬ পিএম
মহাজাগতিক সংকেত আবিষ্কারে এআই
ছবি: সংগৃহীত

সম্প্রতি চীনা একদল গবেষক কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) সাহায্যে বিরল মহাজাগতিক সংকেত আবিষ্কার করেছেন। দেশটির সাংহাই অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল অবজারভেটরির অধ্যাপক জি জিয়ানের নেতৃত্বে একটি আন্তর্জাতিক দল মহাবিশ্বের দুর্লভ সংকেতগুলো শনাক্ত করতে এআই ব্যবহার করেছে।

গবেষণা দলটি কোয়াসার বর্ণালী থেকে নির্গত বিভিন্ন দুর্বল আলোর সংকেত খুঁজতে নজর দিয়েছিল। এটি মূলত দূরবর্তী ছায়াপথ থেকে আসা আলোর উৎস। এ গবেষণায় ‘ডিপ লার্নিং নিউরাল নেটওয়ার্ক’ নামের একটি পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়েছে। এই পদ্ধতির মাধ্যমে গবেষকরা বিভিন্ন ‘নিউট্রাল কার্বন অ্যাবজর্বার’ চিহ্নিত করেছেন, যা ছায়াপথের গঠন ও বিবর্তন গবেষণার জন্য গুরুত্বপূর্ণ উপকরণ।

মহাবিশ্বে ছড়িয়ে থাকা ধূলিকণাযুক্ত ঠাণ্ডা গ্যাসের সঙ্গে পাওয়া যায় নিউট্রাল কার্বন অ্যাবজর্বার। তবে এই সংকেত দুর্বল ও শনাক্ত করা কঠিন। প্রচলিত পদ্ধতিতে বড় ধরনের ডেটাসেট থেকে সংকেত খুঁজে পেতে লড়াই করতে হয়েছে। অধ্যাপক জি জিয়ান এটিকে ‘খড়ের গাদায় সুই খোঁজার সঙ্গে তুলনা করেছেন।’ এর আগে ২০১৫ সালে বিজ্ঞানীরা জোতির্বিদ্যাবিষয়ক জরিপ ‘স্লোন ডিজিটাল স্কাই সার্ভে (এসডিএসএস)’-এর ডেটা থেকে ৬৬টি নিউট্রাল কার্বন অ্যাবজর্বার খুঁজে পেয়েছিলেন।

তবে অধ্যাপক জি জিয়ানের গবেষক দলটি নিজস্ব এআই পদ্ধতি ব্যবহার করে এমন আরও ১০৭টি বিরল অ্যাবজর্বার খুঁজে পেয়েছেন। এটি ২০১৫ সালে পাওয়া সংখ্যার দ্বিগুণ ও আরও ক্ষীণ সংকেত শনাক্ত করেছে। প্রকৃত পর্যবেক্ষণের ওপর ভিত্তি করে তৈরি নমুনা দিয়ে ডিপ লার্নিং নিউরাল নেটওয়ার্ককে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে, যার মাধ্যমে দলটির এই সাফল্য পেয়েছে। এসডিএসএসের ডেটা এই নেটওয়ার্কগুলোয় প্রয়োগ করার পর, সেগুলো আরও বেশি নিউট্রাল কার্বন অ্যাবজর্বার চিহ্নিত করেছে। তাদের এই গবেষণা ইঙ্গিত দেয়, নিউট্রাল কার্বন অ্যাবজর্বারযুক্ত প্রাথমিক ছায়াপথগুলো বিগ ব্যাংয়ের প্রায় ৩০০ কোটি বছর পর দ্রুতগতিতে বিবর্তিত হয়েছে।

‘লার্জ ম্যাজেলানিক ক্লাউড’ নামের ছোট গ্যালাক্সি মতো অবস্থা থেকে মিল্কিওয়ের মতো অবস্থায় রূপান্তরিত হওয়ার সময়, এই ছায়াপথগুলো প্রচুর পরিমাণে ধাতব উপাদান তৈরি করেছে। এর কিছু অংশ ধূলিকণায় রূপান্তরিত হয়েছে। এর মাধ্যমে পরবর্তী সময়ে ‘ডাস্ট রেডেনিং ইফেক্ট’ নামের ঘটনাটিও পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব হয়েছে।

এই আবিষ্কারে সঙ্গে জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপের সাম্প্রতিক অনুসন্ধানের মিল রয়েছে। যেটি প্রাচীনতম বিভিন্ন তারায় কার্বনের ধূলিকণা শনাক্ত করেছে। এই দুই গবেষণা ইঙ্গিত দেয়, আগের ধারণার চেয়ে কিছু ছায়াপথ অনেক দ্রুতগতিতে বিবর্তিত হচ্ছে। ফলে ছায়াপথ গঠনের বিদ্যমান মডেলগুলোকে চ্যালেঞ্জ করে।

জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপে গবেষক দল ছায়াপথের নিঃসরিত বর্ণালী পর্যবেক্ষণ করলেও, জি জিয়ানের দল কোয়াসার শোষিত বর্ণালী পর্যবেক্ষণ করছেন। নিউট্রাল কার্বন অ্যাবজর্বার শনাক্তে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার প্রথম দিকের ছায়াপথের বিবর্তন গবেষণার ক্ষেত্রে নতুন পথ খুলে দিয়েছে। এটি জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপের গবেষণাকে আরও সমৃদ্ধ করবে।

অধ্যাপক জি জিয়ান মহাকাশীয় তথ্যের বিশাল ভাণ্ডার থেকে দ্রুত ও নিখুঁতভাবে দুর্লভ সংকেতগুলো আবিষ্কার করতে অভিনব কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা অ্যালগোরিদম উন্নয়নের আরও জোর দিয়েছেন। দলটি তাদের পদ্ধতিটিকে ছবি শনাক্তকরণের জন্য ব্যবহার করতে চায়। এ লক্ষ্যে তারা দুর্বল সংকেত শনাক্তকরণ ও প্রশিক্ষণের উন্নতির জন্য কৃত্রিম মাল্টি-স্ট্রাকচার চিত্র তৈরি করছে। রয়্যাল অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল সোসাইটির মাসিক বিবৃতিতে প্রকাশ করা হয়েছে, দলটির এই গবেষণা মহাবিশ্ব সম্পর্কে জ্ঞান বৃদ্ধিতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সম্ভাবনাকে তুলে ধরেছে। সূত্র: নোরিজ।

গত ৫০ বছরের সবচেয়ে বড় সৌরঝড়

প্রকাশ: ১৭ মে ২০২৪, ০৭:৫০ পিএম
গত ৫০ বছরের সবচেয়ে বড় সৌরঝড়
প্রবল ঝড়ে সৌরশিখা ছিটকে বেরিয়েছে সূর্যের বাইরে মহাকাশেও। ছবি: নাসা

সম্প্রতি শক্তিশালী সৌরঝড় সংঘটিত হয়েছে। এই সৌরঝড়কে গত ৫০ বছরের মধ্যে ঘটে যাওয়া সবচেয়ে শক্তিশালী বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা। প্রবল ঝড়ে সৌরশিখা ছিটকে বেরিয়েছে সূর্যের বাইরে মহাকাশেও। সৌরঝড়ের প্রভাব পড়েছে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে। এবার শক্তিশালী সৌরঝড়ের ফলে উজ্জ্বল আলোয় আলোকিত হয়ে উঠেছে উত্তর মেরুতে অবস্থিত বিভিন্ন দেশের আকাশ। ইউএস ন্যাশনাল ওশেনিক অ্যান্ড অ্যাটমোস্ফিয়ারিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন জানিয়েছে, সৌরঝড়ের কারণে বিভিন্ন দেশে বৈদ্যুতিক পাওয়ার গ্রিড, উচ্চ ফ্রিকোয়েন্সির রেডিও সংযোগ ও গ্লোবাল পজিশনিং সিস্টেমের কার্যক্রমে কিছুটা সমস্যা দেখা দিয়েছে।

আমেরিকার মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা সৌরঝড়ের ছবি তুলেছে। সংস্থাটির একাধিক ক্যামেরায় সৌরঝড়ের মুহূর্ত ধরা পড়েছে। নাসা জানিয়েছে, ১৪ মে সূর্য থেকে শক্তিশালী সৌরশিখা নির্গত হয়েছে। এ সময় বিস্ফোরণের ঘনত্ব ছিল এক্স৮.৭। এর আগে চলতি মাসের ১১ ও ১৩ তারিখে  সূর্যে একই জায়গায় দুটি বিস্ফোরণ হয়েছে। ১৪ তারিখ ওই একই জায়গা তৃতীয় বিস্ফোরণ হয়। সেই কারণেই তৃতীয় বিস্ফোরণের অভিঘাত তীব্র ছিল।

ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইসরোর ‘আদিত্য-এল১’ সৌরযানও তীব্র সৌরঝড়ের ছবি তুলেছে। ইসরো গত মঙ্গলবার আদিত্য-এল১ এর তোলা সৌরঝড়ের ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্সে (সাবেক টুইটার) শেয়ার করেছে। সূর্য ও পৃথিবীর মাঝের ল্যাগরেঞ্জ পয়েন্টে (এল ১ পয়েন্ট) রয়েছে আদিত্য-এল১। সেখান থেকে প্রতি মুহূর্তে সে সূর্যকে পর্যবেক্ষণ করছে। চাঁদ থেকেও এই ঝড়ের ছবি তোলা হয়েছে। চাঁদের চারদিকে ঘুরছে চন্দ্রযান-২-এর অরবিটার। সেই ক্যামেরাতেও সৌরঝড় ধরা পড়েছে।

সৌরঝড়ের প্রভাবে পৃথিবীর নানা প্রান্তে ইন্টারনেট ব্যবস্থায় ব্যাঘাত ঘটেছে বলে মত বিজ্ঞানীদের একাংশের। সৌরঝড়ের কারণে স্টারলিংক স্যাটেলাইটের মাধ্যমে ইন্টারনেট সেবা পরিচালনায় কিছুটা সমস্যা দেখা দিয়েছে বলে জানিয়েছে স্পেস এক্সের সহযোগী প্রতিষ্ঠান স্টারলিংক। স্পেস এক্সের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ইলন মাস্ক এ বিষয়ে এক্সে লিখেছেন, ‘অনেক চাপ তৈরি হয়েছে, যদিও এখন পর্যন্ত ইন্টারনেট সেবা দেওয়া যাচ্ছে।’

এ ছাড়া সৌরঝড়ের প্রভাবে বিভিন্ন দেশের আকাশে যে উজ্জ্বল বেগুনি, সবুজ, হলুদ ও গোলাপি রঙের আলো দেখা যাচ্ছে, তাকে বলা হচ্ছে নর্দার্ন লাইট বা উত্তরের আলো। জার্মানি, সুইজারল্যান্ড, চীন, ইংল্যান্ড, স্পেনসহ নানা দেশে দেখা যাওয়া এই আলো বিজ্ঞানীদের কাছে ‘অরোরা বোরিয়ালিস’ নামে পরিচিত। ১৬১৯ সালে এই শব্দের নামকরণ করেন বিজ্ঞানী গ্যালিলিও গ্যালিলেই। তিনি রোমান ভোরের ঈশ্বর অরোরার নামে নামকরণ করেন।

নাসা জানিয়েছে, এ ঘটনায় সূর্য শক্তিশালী সৌরশিখা তৈরি করেছে। এর মধ্যে অন্তত সাতটি প্লাজমা বিস্ফোরণ ঘটেছে। এতে সূর্যের বাইরের বায়ুমণ্ডল, যা করোনা নামে পরিচিত, সেখানে কোটি কোটি টন প্লাজমা ও শক্তিশালী চৌম্বকক্ষেত্র তৈরি হয়। সৌরঝড়ের কারণে সৃষ্ট অগ্নিশিখার জন্য পৃথিবীর ব্যাসের ১৬ গুণ বেশি সানস্পট বা সূর্যদাগের যুক্ত বলে মনে করা হয়। সূর্য যখন তার ১১ বছরের চক্রের শীর্ষে পৌঁছায় তখন সৌরঝড় দেখা যায়। সূত্র: নাসা

/আবরার জাহিন