চট্টগ্রাম নগরের পতেঙ্গা থানাধীন বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর জহুরুল হক ঘাঁটির প্রশিক্ষণরত বিমান বিধ্বস্ত হয়ে পড়েছে কর্ণফূলী নদীর চট্টগ্রাম বন্দর চ্যানেলে। এ ঘটনায় এক পাইলটের মৃত্যু হয়েছে। আহত আরেক পাইলট হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।
বৃহস্পতিবার (৯ মে) সকাল ১০টা ২০ মিনিটে এ ঘটনা ঘটে। বিকাল তিনটা থেকে উদ্ধার তৎপরতা শুরু করেছে নৌবাহিনী। উদ্ধারের অংশ নিয়েছে নৌবাহিনীর উদ্ধার জাহাজ বলবান ও বিশেষ টিম সোয়াড।
প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়ে পড়া স্থানটি কর্ণফুলী নদীর জাহাজ চলাচলের চ্যানেল হওয়ায় ধ্বংসাবশেষ উদ্ধার না হওয়া পর্যন্ত কাজ চালিয়ে যাবে বাংলাদেশ নৌবাহিনী। বিকাল ৩টা থেকে ডুবুরি, স্পিডবোট, উদ্ধারকারী জাহাজ, ট্রলার, চট্টগ্রাম বন্দরের উদ্ধার জাহাজ ঘটনাস্থালে উদ্ধার কাজ চালাচ্ছে। বিধ্বস্ত হওয়া স্থানে নদীর গভীরতা ৩০ থেকে ৩৫ ফুট গভীর। ফলে নদীর জোয়ার ও ভাটার স্রোতের কারণে উদ্ধার কাছে বিঘ্ন ঘটছে।
জানা গেছে, বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা ২০ মিনিটে চট্টগ্রাম মহানগরীর পতেঙ্গা থানাধীন জহুরুল হক ঘাঁটির বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ বিমান (ওয়াইএকে-১৩০ রাশিয়ান) যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে বিধ্বস্ত হয়ে চট্টগ্রাম বোট ক্লাব এর কাছে ১১নং ঘাটের নতুন পতেঙ্গা টার্মিনালের বিপরীত পাশে এইচ এম স্টিল ফ্যাক্টরির সামনে কর্ণফুলী নদীতে পড়ে তলিয়ে যায়। তখন বিমানে থাকা দুই পাইলট প্যারাশুট দিয়ে নেমে যান।
ওই বিমানে উইং কমান্ডার সুহান ও স্কোয়াড্রন লিডার আসিম জাওয়াদ নামে দুইজন পাইলট ছিলেন। আহত উইং কমান্ডার সুহান জহুরুল হক ঘাটির মেডিকেল স্কোয়ার্ডন (এসকিউএন) এ চিকিৎসাধীন আছেন।
অপরদিকে স্কোয়াড্রন লিডার আসিম জাওয়াদকে গুরতর আহত অবস্থায় বানৌজা ঈসা খাঁ হাসপাতালে (নেভি হাসপাতাল) বেলা ১২টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। মারা যাওয়া স্কোয়াড্রন লিডার আসিম জাওয়াদ চট্টগ্রাম বিমান বাহিনী ঘাটি জহরুল হক অফিসার্স আবাসিক এলাকার নীলিমা-এ ১ ভবনে বাস করতেন। তার পিতার নাম মোহাম্মদ আমানউল্লাহ।
চট্টগ্রাম শাহ আমানত বিমানবন্দরের পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন তাসলীম আহমেদ খবরের কাগজকে বলেন, বৃহস্পতিবার সকালে অবতরণের সময় বিমান বাহিনীর প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হয়েছে। বিমানে থাকা দু'জন পাইলট প্যারাশুট দিয়ে বিমান থেকে নেমে গেছেন। কিন্তু আশঙ্কাজনক অবস্থায় স্কোয়াড্রন লিডার আসিম জাওয়াদকে হাসপাতালে নেওয়া হলে তিনি সেখানেই মৃত্যুবরণ করেন। অপরজন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।
সদরঘাট নৌপুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) একরাম উল্ল্যাহ খবরের কাগজকে বলেন, দুর্ঘটনায় মারা যাওয়া পাইলটের সুরতহাল প্রতিবেদন প্রস্তুতসহ আইনগত বিষয় প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
বলবান ও সোয়াডের উদ্ধার তৎপরতা
নৌবাহিনীর উদ্ধার জাহাজ বলবান ও বিশেষ প্রশিক্ষণ টিম সোয়াড বেশ কয়েকটি স্পিডবোট, ট্রলার ও ডুবুরি দিয়ে উদ্ধার তৎপরতা শুরু করেছেন। বিকাল ৩টা থেকে বিধ্বস্ত হওয়া বিমানের ধ্বংসাবশেষ উদ্ধার করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। বিমান বাহিনীর প্রশিক্ষণ বিমানটি যে স্থানে কর্ণফুলিতে পড়েছে সেই জায়গায় একটি বয়া দিয়ে চিহ্নিত করেছে নৌবাহিনী। যাতে উদ্ধার তৎপরতা চালাতে সুবিধা হয়, সে জন্য এ ব্যবস্থা করে রেখেছেন বলে জানিয়েছেন নৌ বাহিনীর পক্ষ থেকে।
বাংলাদেশ নৌ বাহিনীর একজন ঊর্ধ্বতন একজন কর্মকর্তা ঘটনাস্থলে বলেন, বিধ্বস্ত বিমানের ধ্বংসাবশেষ উদ্ধার না হওয়া পর্যন্ত উদ্ধার কাজ বন্ধ হবে না। কারণ চট্টগ্রাম বন্দরের জাহাজ চলাচলে চ্যানেলেই এ বিমানটি বিধ্বস্ত হয়েছে। এটি উদ্ধার না হলে জাহাজ চলাচলে বিঘ্ন ঘটাতে পারে। তাই রাতেও উদ্ধার তৎপরতা অব্যাহত থাকবে। প্রয়োজনে শুক্রবার দিনেও উদ্বার কাজ চালানো হবে।
এদিকে , চট্টগ্রাম বন্দরের পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনালেরে এলাকার বরাবর আনোয়ার অংশের দিকে কর্ণফুলীতে পড়ে বিধ্বস্ত হওয়া বিমানটি। যা আকাশে আগুন ধরে বিধ্বস্ত হয়ে দুই টুকরা হয়ে যায়। উদ্ধার কাজ চলাকালীন সময়ে বিমানের একটি পাখার অংশবিশেষ পাওয়া গেছে। যা বিমানের পাখার অতি ছোট একটি অংশ।
উদ্ধারকারী দলের সদস্যরা জানান, বিমানটি বিধ্বস্ত হওয়ার সময় কর্ণফুলী নদীতে জোয়ার ছিল। উদ্ধার কাজ চালানোর সময় ভাটা। পানির গভীরতা কমার জন্য অপেক্ষায় ছিল উদ্ধারকারী দল। জোয়ারে এবং ভাটায় একশ থেকে দুইশ মিটার দূরে চলে যেতে পারে বিধ্বস্ত বিমানটি।
সরেজমিনের দেখা যায়, কর্ণফুলী মাঝ বরাবর একটি নীল রংয়ের বয়া স্থাপন করা হয়েছে। যা দিয়ে বিমানটি বিধ্বস্ত হওয়ার স্থানকে নির্ণয় করা হয়েছে। এর চারপাশ ঘিরে নৌবাহিনীর উদ্ধার জাহাজ, স্পিডবোট, ট্রলার অবস্থান করছেন। পানির গভীরের বিশেষ যন্ত্রের সাহায্যে শব্দের মাধ্যমে অবস্থান নির্ণয়ের কাজ করছেন নৌবাহিনীর টিম। ঘটনাস্থলে বিমান বাহিনী, সেনার বাহিনী, কোস্টগার্ড ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা অবস্থান করছে। পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল থেকে বিভিন্ন সংস্থার কর্মকর্তারা ঘটনার পর্যবেক্ষণ করতে দেখা যায়।
আবদুস সাত্তার/এমএ/