জান্নাতের সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন স্থানে কারা থাকবেন? । খবরের কাগজ
ঢাকা ৩০ বৈশাখ ১৪৩১, সোমবার, ১৩ মে ২০২৪

জান্নাতের সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন স্থানে কারা থাকবেন?

প্রকাশ: ১৬ নভেম্বর ২০২৩, ০৬:৩০ পিএম
জান্নাতের সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন স্থানে কারা থাকবেন?
ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত প্রতীকী ছবি

মুগিরা ইবনে শুবা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘একবার মুসা (আ.) তার রবকে জিজ্ঞেস করেন, কে জান্নাতের সবচেয়ে নিম্ন মর্যাদার অধিকারী হবে? তিনি বলেন, জান্নাতবাসীকে জান্নাতে প্রবেশ করানোর পর এক ব্যক্তি আসবে। তাকে বলা হবে, জান্নাতে প্রবেশ করো। সে বলবে, হে আমার রব! কীভাবে প্রবেশ করব আমি? সবাই তো নিজ নিজ স্থান দখল করে ফেলেছে। নিজেদের প্রাপ্য বুঝে নিয়েছে। তখন তাকে বলা হবে, তুমি কি এতে সন্তুষ্ট—তোমাকে পৃথিবীর সবচেয়ে প্রভাবশালী সম্রাটের সমপরিমাণ সাম্রাজ্য ও সম্পদ দেওয়া হবে? সে বলবে, আমি সন্তুষ্ট। তখন আল্লাহ বলবেন, এর সাথে দেওয়া হবে আরো এতখানি, আরো এতখানি, আরো এতখানি, আরো এতখানি। পঞ্চমবারে সে বলে উঠবে, হে আমার প্রতিপালক! আমি পরিপূর্ণভাবে পরিতুষ্ট হয়েছি। তখন আল্লাহ বলবেন, এর সাথে তোমাকে দেওয়া হবে আরো ১০ গুণ! আরো থাকবে এমন জিনিস, যা দ্বারা মন তৃপ্ত হয় এবং চোখ জুড়িয়ে যায়। লোকটি বলবে, হে আমার রব! আমি পরিতৃপ্ত।

এরপর মুসা (সা.) জিজ্ঞেস করেন, হে আমার রব! তাদের মধ্যে সর্বোচ্চ মর্যাদার অধিকারী কে? আল্লাহতায়ালা বলেন, তারা আমার মনোনীত বান্দা। আমি নিজ হাতে তাদের সম্মাননা দিয়েছি এবং তাদেরকে মর্যাদার চূড়ান্ত আসনে উন্নীত করেছি। আমি তাদের জন্য যা প্রস্তুত করে রেখেছি, তা কোনো চোখ দেখেনি। কোনো কান শোনেনি এবং কোনো হৃদয় কল্পনাও করেনি।’ (মুসলিম, হাদিস: ১৮৯)

কোরআনুল কারিমের একটি আয়াতে এদিকেই ইঙ্গিত করা হয়েছে—‘কেউ জানে না, কর্মের প্রতিদান হিসেবে তাদের জন্য চোখ জুড়ানো কী কী পুরস্কার দৃষ্টির আড়ালে রাখা হয়েছে।’ (সুরা সিজদা, আয়াত: ১৭)

 

জান্নাতের সর্বোচ্চ স্তরের নাম ‘আল-ওয়াসিলা’। আর এটা আমাদের রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর জন্য বরাদ্দকৃত। ইবনে কাসির (রহ.) বলেন, ‘জান্নাতের সর্বোচ্চ স্তর হলো, আল-ওয়াসিলা। নবীজি (সা.) এখানেই বাস করবেন।

একবার সাহাবিরা আল্লাহর রাসুলকে জিজ্ঞেস করেন, ‘আল-ওয়াসিলা’ কী? উত্তরে তিনি বলেন, জান্নাতের সর্বোচ্চ স্থান। আল্লাহর একজন মাত্র বান্দা ওই স্থানের অধিকার লাভ করবে। আমি আশা করি, আমিই হব ওই একজন।

অপর এক হাদিসে তিনি বলেন, ‘আল-ওয়াসিলা’ হলো জান্নাতের সর্বোচ্চ স্তর। এর ওপরে আর কোনো স্তর নেই। সুতরাং তোমরা আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করো, তিনি যেন আমাকে ‘আল-ওয়াসিলা’ দান করেন।’ (আল-মুজামুল আওসাত, তাবরানি, হাদিস: ২৬৩)

 

নাইম ইবনে হাম্মার (রা.) বলেন, সর্বোত্তম শহিদ তারা, যারা প্রথম সারিতে দাঁড়িয়ে যুদ্ধ করে; এক মুহূর্তের জন্যও পেছনে ফিরে তাকায় না। শত্রুদের হত্যা করতে করতে একসময় নিজেই শাহাদাত বরণ করে। তারা জান্নাতের উচ্চ ঘরগুলোতে স্বাচ্ছন্দ্যে বিচরণ করবে। তাদের দেখে তোমার রব প্রীত হবেন। আর তোমার রব কোথাও কারো প্রতি সন্তুষ্ট হলে তার হিসাব গ্রহণ করেন না।’ (মুসনাদে আহমদ, হাদিস: ২২৪৭৬)

 

যারা অসহায় ও বিধবার পাশে দাঁড়ায় এবং তাদের কষ্ট লাঘবের চেষ্টা করে, তারাও মুজাহিদদের সমমর্যাদায় ভূষিত হবে। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি বিধবা ও অসহায়ের ভাগ্য পরিবর্তনের চেষ্টা করে, সে ওই ব্যক্তির মতো, যে আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করে; কিংবা ওই ব্যক্তির মতো, যে সারা রাত ইবাদত করে এবং সারা দিন সিয়াম পালন করে।’ (বুখারি, হাদিস: ৫৩৫৩)

 

আর যারা এতিমের ভরণপোষণ ও দেখভাল করে, তাদের মর্যাদা নবি-রাসুলদের মর্যাদার কাছাকাছি। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘নিজের আত্মীয় সম্পর্কীয় কিংবা অপরিচিত এতিমের ভরণ পোষণকারী (চাই সেই সম্পদ নিজের বা ইয়াতিমের সম্পদ থেকে হোক) এবং আমি জান্নাতে কাছাকাছি থাকব। ইমাম মালিক হাদিসটি বর্ণনা করার সময় তর্জনী ও মধ্যমা আঙুল দিয়ে ইশারা করেন।’ (মুসলিম, হাদিস: ২৯৮৩)

 

 

লেখক: আলেম ও গবেষক

শিশুদের নিরাপদ রাখতে যা বলেছেন রাসুলুল্লাহ (সা.)

প্রকাশ: ১৩ মে ২০২৪, ১০:২৯ এএম
শিশুদের নিরাপদ রাখতে যা বলেছেন রাসুলুল্লাহ (সা.)
দুই শিশুর ছবি। এআই

ভালো চরিত্রের শিশু নির্মাণ করতে পারে সুন্দর পৃথিবী। শিশুকে সুন্দর ও ভালো চরিত্রে নির্মাণ করা অভিভাবকের নৈতিক দায়িত্ব। শিশুর জন্মের পর থেকে অভিভাবকের ওপর কিছু দায়িত্ব এসে পড়ে। জন্মের পর প্রথমত তার জন্য দুধপানের ব্যবস্থা করতে হবে। সুন্দর নাম রাখতে হবে। তাকে ভালোবাসতে হবে। দ্বীন শেখাতে হবে। মেধা বিকাশে যত্ন নিতে হবে। নামাজে অভ্যস্ত করতে হবে। তার সঙ্গে কখনো রূঢ় আচরণ করা যাবে না। 

শিশুদের সব ধরনের ক্ষতি থেকে রক্ষা করার ওপর গুরুত্বারোপ করেছে ইসলাম। দৃশ্যমান অনেক ক্ষতিকর বস্তু থেকে মানুষ তার শিশুসন্তানদের রক্ষা করে; কিন্তু রাসুলুল্লাহ (সা.) তাদের অদেখা বস্তুর অনিষ্ট থেকে রক্ষা করে আরও বেশি নিরাপত্তাবলয়ে রাখতে চান। অদেখা বলতে জিন-শয়তানের উদ্দেশ্য। এদের থেকে নিরাপদ থাকার উপায় অনেক। এর একটি হলো রাতের প্রথম প্রহরে বাচ্চাদের ঘরে রাখা। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যখন রাতের আঁধার নেমে আসবে, বা বলেছেন যখন সন্ধ্যা হয়ে যাবে, তখন তোমরা তোমাদের শিশুদের (ঘরে) আটকে রাখবে। কেননা এ সময় শয়তানরা ছড়িয়ে পড়ে। আর যখন রাতের কিছু অংশ অতিবাহিত হয়ে যাবে, তখন তাদের ছেড়ে দিতে পারো। তোমরা ঘরের দরজা বন্ধ করবে এবং আল্লাহর নাম স্মরণ করবে। কেননা শয়তান বন্ধ দরজা খুলতে পারে না।’ (বুখারি, হাদিস: ৩১২৮)

সন্ধ্যাবেলায় শিশুদের ঘরের বাইরে রাখা যাবে না। তাদেরকে আদর-আপ্যায়নে ঘরে রাখতে হবে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আর তোমরা ঘরের দরজাগুলো বন্ধ করে রেখো, সন্ধ্যাবেলায় তোমাদের শিশুদের ঘরে আটকে রেখো। কেননা এ সময় জিনেরা ছড়িয়ে পড়ে এবং কোনো কিছুকে দ্রুত পাকড়াও করে।’ (বুখারি, হাদিস: ৩১৩৮)

হাদিসগুলোর অর্থ হলো, শয়তানের দল রাতের প্রথম প্রহরে ছড়িয়ে পড়ে। মনে হচ্ছে দিনের বেলায় তাদের আনাগোনা সীমিত থাকে। আর তাই সূর্যাস্তে সময় তাদের তৎপরতা বেড়ে যায়। তাই এ মুহূর্তটি আশঙ্কাজনক। শিশুদের ওপর তারা চড়াও হতে পারে। এটি হতে পারে শিশুরা আল্লাহর স্মরণ থেকে বিমুখ থাকার কারণে অথবা তাদের গায়ে নাপাক লেগে থাকার কারণে। সুতরাং এই শঙ্কা থেকে শিশুদের বাঁচাতে প্রয়োজন রাত শুরু হতেই তাদের ঘরে রাখা। ঘরের দরজা-জানালা সব বন্ধ করে রাখা। কারণ, বদ্ধ দুয়ার শয়তানরা খুলতে পারে না।

লেখক: আলেম ও সাংবাদিক

যে কারণে সুগন্ধি লাগানো সুন্নত

প্রকাশ: ১২ মে ২০২৪, ০৭:০০ পিএম
যে কারণে সুগন্ধি লাগানো সুন্নত
সুগন্ধির ছবি। ইন্টারনেট

মানুষই স্বভাবতই সুন্দরপ্রিয়। ভালো ও পরিপাটি থাকতে পছন্দ করে। সুন্দরের পাশাপাশি নিজেকে ফুটিয়ে তুলতে সুগন্ধি ব্যবহার করতে চায়। সুগন্ধি আভিজাত্যের প্রতীক। ইসলামে সুগন্ধি ব্যবহারের আছে নিয়মকানুন। এখানে সে সম্পর্কে আলাপ করা হলো—

ইসলাম পবিত্র মানুষের ধর্ম। সুন্দরের ধর্ম। আল্লাহতায়ালাও সুন্দর পছন্দ করেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘নিশ্চয় আল্লাহতায়ালা সুন্দর। সৌন্দর্য তিনি পছন্দ করেন।’ (মুসলিম, হাদিস: ৯১) 

শালীন, পরিপাটি ও সুন্দর পোশাক পরিধানকারীকে মানুষ ভালোবাসে। তার সঙ্গে মানুষ মিশতে চায়। তার সঙ্গলাভ কাঙ্ক্ষিত থাকে অনেকের। রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে সব সময় ঘিরে থাকত সাহাবিদের জটলা। দূর-দূরান্ত থেকে মানুষজন তার সান্নিধ্যে আসতেন। তিনি সবাইকে সময় দিতেন। সবার সঙ্গে মিশতেন। কথা বলতেন। এ জন্য তিনি বেশির ভাগ সময় সুগন্ধি ব্যবহার করতেন। সাহাবিদেরও সুগন্ধি ব্যবহারের প্রতি উৎসাহিত করতেন। আনাস ইবনে মালেক (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘দুনিয়ার মধ্যে আমার কাছে স্ত্রী এবং সুগন্ধিকে প্রিয় করা হয়েছে। আর নামাজকে করা হয়েছে আমার চক্ষুশীতলতা।’ (নাসায়ি, হাদিস: ৮৮৮৭)

এই হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) পৃথিবীতে উপভোগ করার মতো সবচেয়ে হালাল বস্তু হিসেবে দুটি বিষয়কে নির্ধারণ করেছেন। স্ত্রীদের সঙ্গে মিলিত হওয়া এবং সুগন্ধি ব্যবহার করা। এই শ্রেষ্ঠ উপভোগ্য দুটি বিষয় বাস্তবেই খুব চমৎকার। কারণ, এর উপকারিতা শুধু নিজের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে না; বরং অন্যদের মাঝেও ছড়িয়ে যায়। নারীদের প্রতি ভালোবাসার অর্থ হলো, স্ত্রীদের সম্মান করা, তাদের খুশি রাখা। আর সুগন্ধি পছন্দ করার অর্থ হলো সংস্রবে আসা ব্যক্তিদের অনন্দিত করা। তাদের মুগ্ধ করা।

রাসুলুল্লাহ (সা.) বেশি পরিমাণে সুগন্ধি ব্যবহার করতেন। আয়েশা বলেন, ‘আমি যত উত্তম সুগন্ধি পেতাম, তা রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে মেখে দিতাম। এমনকি সেই সুগন্ধির চমক তাঁর মাথায় ও দাঁড়িতে দেখতে পেতাম।’ (বুখারি, হাদিস: ৬৮২)

ইহরামের অবস্থা ছাড়া কখনো রাসুলুল্লাহ (সা.) সুগন্ধি ছাড়া থাকতেন না। কারণ, ইহরামের অবস্থায় সুগন্ধি ব্যবহার করা নিষেধ। তাঁকে কেউ সুগন্ধি উপহার দিলে তিনি তা গ্রহণ করতেন, ফিরিয়ে দিতেন না। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘চারটি বস্তু সব নবির সুন্নত—আতর, বিয়ে, মিসওয়াক ও লজ্জাস্থান ঢেকে রাখা’ (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ২২৪৭৮)

যেসব পারফিউমে অ্যালকোহল আছে অথবা শরিয়ত সমর্থন করে না—এমন বস্তু দ্বারা তৈরি পারফিউম ব্যবহার করা যাবে না। রাসুলুল্লাহ (সা. ) বলেছেন, ‘নেশা সৃষ্টিকারী প্রতিটি বস্তুই হারাম’ (বুখারি, হাদিস: ৪৩৪৩)

লেখক: আলেম, গবেষক ও সাংবাদিক

 

মদিনার যে মসজিদ পুড়িয়ে দিয়েছিলেন নবিজি (সা.)

প্রকাশ: ১২ মে ২০২৪, ১০:৩৭ এএম
মদিনার যে মসজিদ পুড়িয়ে দিয়েছিলেন নবিজি (সা.)
মুহাম্মাদ (সা.) লেখা আরবি ক্যালিগ্রাফি। ইন্টারনেট

পবিত্র কোরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘আর যারা মসজিদ তৈরি করেছে ক্ষতিসাধন, কুফুরি এবং মুমিনদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টির উদ্দেশ্যে, আর যে ব্যক্তি আগে থেকেই আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছে তার ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহারের নিমিত্তে, তারা অবশ্যই শপথ করবে যে, আমাদের উদ্দেশ্য সৎ ছাড়া নয়। আল্লাহ সাক্ষ্য দিচ্ছেন, তারা নিশ্চিত মিথ্যাবাদী। তুমি ওর ভেতরে কখনো দাঁড়াবে না। প্রথম দিন থেকেই যে মসজিদের ভিত্তি তাকওয়ার (খোদাভীতি) ওপর প্রতিষ্ঠিত, তোমার দাঁড়ানোর জন্য সেটাই অধিক উপযুক্ত, সেখানে এমন সব লোক আছে যারা পবিত্রতা লাভ করতে ভালোবাসে, আর আল্লাহ পবিত্রতা অর্জনকারীদের ভালোবাসেন। কে উত্তম যে তার ভিত্তি আল্লাহভীরুতা ও আল্লাহর সন্তুষ্টির ওপর স্থাপন করে সে, না ওই ব্যক্তি যে তার ভিত্তি স্থাপন করে পতনোন্মুখ একটি ধসের কিনারায় যা তাকে নিয়ে জাহান্নামের আগুনে ধসে পড়বে? আল্লাহ অত্যাচারীদের সঠিক পথে পরিচালিত করেন না। তাদের তৈরি ঘরটি তাদের অন্তরে সবসময় সন্দেহের উদ্রেক করে যাবে, যে পর্যন্ত না তাদের হৃদয়গুলো ছিন্নভিন্ন হয়ে যায়। আল্লাহ সর্বজ্ঞ, মহা প্রজ্ঞাময়।’(সুরা তওবা, আয়াত: ১০৭-১১০) 

মুসলিম সমাজের মূল কেন্দ্র হলো মসজিদ। মুসলমান যেখানে বসতি গড়বে, সেখানে গড়ে উঠবে মসজিদ—এটা নবিজি (সা.)-এর শিক্ষা। রাসুলুল্লাহ (সা.) মদিনায় হিজরতের সময় যাত্রাবিরতিকালে কুবা নামক স্থানে ইসলামের প্রথম মসজিদ নির্মাণ করেন। পরে মদিনায় পৌঁছে তিনি মসজিদে নববি স্থাপন করেন। 

মসজিদ আল্লাহর ঘর। আল্লাহর পছন্দনীয় জায়গা। মুমিনজীবনের আনুষ্ঠানিক সেজদা করার পবিত্র স্থান। মুসলমানদের বিশ্বাস, চেতনা, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের ধারক মসজিদ।

মসজিদ নির্মাণ সওয়াবের কাজ। আল্লাহকে খুশি করার মাধ্যম। আল্লাহ মানুষকে মসজিদ নির্মাণে উৎসাহিত করেছেন। নবিজি তাগিদ করেছেন। জান্নাতের সুসংবাদ দিয়েছেন। তবে মসজিদ নির্মাণ হতে হবে তাকওয়ার ওপর ভিত্তি করে। আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য। মুসলমানদের কল্যাণের জন্য। আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠার জন্য। ইসলামের ক্ষতিসাধন হয়—এমন মসজিদ নির্মাণ করা যাবে না। রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর আমলেই মুসলিমদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করার জন্য একটি মসজিদ নির্মিত হয়েছিল। মদিনার অদূরে, কুবা এলাকায়। মসজিদটি ইসলামের ইতিহাসে ‘মসজিদে জিরার’ (জেদবশত মসজিদ) নামে পরিচিত। পরে নবি (সা.) মসজিদটি ধ্বংস করার নির্দেশ দেন। 

রাসুলুল্লাহ (সা.) তখন তাবুক যুদ্ধে যাচ্ছিলেন। এক ঘণ্টা পথ চলে জুআওয়ান নামক স্থানে থামলেন। মসজিদে জিরার নির্মাণকারীরা নবিজির কাছে এসে বললেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল, দুর্বলদের জন্য এবং বৃষ্টির রাতে নামাজ পড়ার জন্য আমরা একটি মসজিদ নির্মাণ করেছি। আমরা চাই যে, আপনি তাতে আসবেন এবং নামাজ পড়ে মসজিদটি উদ্বোধন করে দেবেন।’ নবিজি (সা.) বললেন, ‘আমি সফরে যাচ্ছি। ফেরার পথে তোমাদের এখানে যাব, ইনশাআল্লাহ।’ 

মূলত মুসলমানদের ক্ষতি করার জন্য খ্রিষ্টান পাদরি আবু আমেরের উসকানিতে কিছু অমুসলিম ইসলাম গ্রহণের ভান করে ওই মসজিদ বানায়। সেখানে তারা লোক দেখানো নামাজ পড়ত আর অশান্তি সৃষ্টি এবং মুসলিমদের বিরুদ্ধে বহিঃশত্রুর আক্রমণের সুযোগ তৈরিসহ নানা রকম ষড়যন্ত্র করত। তাবুক থেকে ফেরার পথে নবিজিকে সতর্ক করে আল্লাহ বলেন, ‘আর যারা মসজিদ তৈরি করেছে ক্ষতিসাধন, কুফুরি আর মুমিনদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টির উদ্দেশ্যে, আর যে ব্যক্তি আগে থেকেই আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছে তার ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহারের নিমিত্তে, তারা অবশ্যই শপথ করবে যে, আমাদের উদ্দেশ্য সৎ ব্যতীত নয়। আল্লাহ সাক্ষ্য দিচ্ছেন, তারা নিশ্চিত মিথ্যাবাদী।’ (সুরা তওবা: ১০৭)

রাসুলুল্লাহ (সা.) তখনই দুই সাহাবিকে এই মসজিদ পুড়িয়ে দেওয়ার জন্য পাঠালেন। তিনি মদিনায় পৌঁছার আগেই তারা মসজিদটি একেবারে জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে ধ্বংস করে দেন। 

লেখক: আলেম ও সাংবাদিক

বন্ধু নির্বাচনে ইসলামের নির্দেশনা

প্রকাশ: ১১ মে ২০২৪, ০৭:০০ পিএম
বন্ধু নির্বাচনে ইসলামের নির্দেশনা
ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত দুজন বন্ধুর ছবি।

আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘হে ঈমানদাররা, তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং সত্যবাদীদের অন্তর্ভুক্ত হও।’ (সুরা তওবা, আয়াত: ১১৯)

মানুষ একা চলতে পারে না। মানুষের সঙ্গে মানুষের মিশতে হয়। চলতে হয়। কথা বলতে হয়। তবে এক্ষেত্রে ইসলামের নির্দেশনা হলো, পুণ্যবান ও সৎ মানুষের সঙ্গে মিশতে হবে। পুণ্যবানদের সঙ্গে ওঠাবসা করতে হবে। বন্ধু নির্বাচনেও খুব সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। ভালো বন্ধু জীবনে কল্যাণ বয়ে আনে, মন্দ বন্ধু জীবনকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেয়। রাসুলুল্লাহ (সা.) প্রায়ই মুসলিমদের এ ব্যাপারে সাবধান করতেন। সৎসঙ্গী নির্বাচনের তাগিদ দিতেন। কারণ, যাদের সঙ্গে মানুষ নিয়মিত ওঠাবসা করে, তাদের স্বভাব ও চরিত্র দ্রুত তার মধ্যে স্থানান্তরিত হয়। কেননা মেলামেশা, ওঠাবসা ও দীর্ঘ আলাপের কারণে মানুষ সঙ্গীদের চরিত্র ধারণ করে খুব সহজে। অনেক সময় তার মাঝে সেই চরিত্র প্রবেশ করতে থাকে খুব ধীর গতিতে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘মানুষ তার বন্ধুর ধর্ম অনুসরণ করে। কাজেই তোমাদের সতর্ক থাকা উচিত যে, তুমি কার সঙ্গে বন্ধুত্ব করছ।’ (আবু দাউদ, হাদিস: ৪৮৩৩)

অসৎসঙ্গের কারণে মানুষের জীবনে যে পরিবর্তন ঘটে তা এক সময় ধর্ম পরিবর্তন পর্যন্ত পৌঁছতে পারে। এ জন্য সঙ্গলাভের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। আবু মুসা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘সৎসঙ্গী ও অসৎসঙ্গীর উদাহরণ আতর বিক্রেতা ও কর্মকারের হাপরের ন্যায়। আতর বিক্রেতার কাছে গেলে তুমি রেহাই পাবে না। হয় তুমি আতর কিনবে, না হয় আতরের সুঘ্রাণ পাবে। আর কর্মকারের কাছে গেলে তার হাপর হয় তোমার শরীর বা কাপড় পুড়িয়ে দেবে, না হয় তুমি তার দুর্গন্ধ পাবে।’ (বুখারি, হাদিস: ১৯৯৫)

রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর অন্যতম সুন্নাহ হলো, সৎ, পুণ্যবান ও মুমিনদের সংস্রব গ্রহণ করা। মুমিন ছাড়া কারও সঙ্গে অন্তরঙ্গভাবে মেশা যাবে না। আল্লাহভীরু ছাড়া ভিন্ন কাউকে খাবারও খাওয়ানো যাবে না। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘মুমিন ছাড়া আর কারও সংস্রবে যেয়ো না। আর তোমার খাবার যেন শুধু তাকওয়ার অধিকারী মুমিনরাই খায়।’ (আবু দাউদ, হাদিস: ৪৮৩২)

আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আর ঈমানদার পুরুষ ও ঈমানদার নারীরা একে অপরের বন্ধু। তারা ভালো কথার শিক্ষা দেয়। মন্দ কাজ থেকে বিরত রাখে। নামাজ প্রতিষ্ঠিত করে, জাকাত দেয়, আল্লাহ ও রসুলের নির্দেশ অনুযায়ী জীবনযাপন করে। তাদের ওপর আল্লাহতায়ালা অনুগ্রহ করবেন। নিশ্চয় আল্লাহ পরাক্রমশালী সুকৌশলী।’ (সুরা তওবা, আয়াত: ৭১)


লেখক: আলেম ও গবেষক

সালাম আদান-প্রদানের সুন্নত ও আদব

প্রকাশ: ১১ মে ২০২৪, ০৯:০০ এএম
সালাম আদান-প্রদানের সুন্নত ও আদব
আরবিতে আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহস লেখা ছবি

প্রথমে সালাম দেওয়া উচিত: সাহাবিদের সঙ্গে দেখা হলে রাসুলুল্লাহ (সা.) আগে সালাম দিতেন। মোসাফাহা করে তাদের জন্য দোয়া করতেন। অন্যজন হাত না ছাড়লে তিনি হাত ছাড়াতেন না। (তিরমিজি, ৩৫০২; নাসায়ি, ১০২৩৪)

কথা বলার আগেই সালাম দেওয়া উচিত : রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, নিশ্চয়ই আল্লাহর কাছে সেই ব্যক্তি উত্তম, যে প্রথমে সালাম দেয়। (আবু দাউদ, ৫১৯৭)
সালাম না দিলে, কথা বলার অনুমতি দিতে নিষেধ করেছেন রাসুলুল্লাহ (সা.)। তিনি বলেছেন, যে ব্যক্তি আগে সালাম দেয় না; তোমরা তাকে (কথা বলার) অনুমতি দিও না। (সহিহাহ, ৮১৭; সহিহুল জামে, ৭১৯০)

সশব্দে সালাম ও উত্তর দেওয়া উচিত: সশব্দে সালাম ও সালামের উত্তর দিতে হবে, যাতে অন্যরা শুনতে পায়। তবে কোথাও ঘুমন্ত মানুষ থাকলে এমনভাবে সালাম দেবে, যাতে শুধু জাগ্রত ব্যক্তি শুনতে পায় এবং ঘুমন্ত ব্যক্তির কোনো অসুবিধা না হয়।
মিকদাদ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, তিনি (রাসুলুল্লাহ) রাতে এসে এমনভাবে সালাম দিতেন, যাতে নিদ্রারত ব্যক্তি উঠে না যায় এবং জাগ্রত ব্যক্তি শুনতে পায়। (মুসলিম, ২০৫৫; মুসনাদে আহমাদ, ২৩৮৬৩)

ইশারার মাধ্যমে সালাম দেওয়া যাবে না: বোবা কিংবা দূরে অবস্থানকারী হলে অথবা বধির ব্যক্তিকে মুখে উচ্চারণসহ ইশারায় সালাম বা উত্তর দেওয়া যেতে পারে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, তোমরা ইহুদি-নাসারাদের সালামের মতো সালাম দিও না। কারণ তারা হাত দ্বারা ইশারার মাধ্যমে সালাম দেয়। (সহিহুল জামে, ৭৩২৭; সহিহাহ, ১৭৮৩)

সালাম দেওয়ার সময় কারও সামনে মাথা অবনত করা বা ঝোঁকানো যাবে না: আনাস বিন মালেক (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, কোনো এক সময় এক ব্যক্তি প্রশ্ন করল, হে আল্লাহর রাসুল! আমাদের কোনো ব্যক্তি তার ভাই কিংবা বন্ধুর সঙ্গে দেখা করার সময় সে কি তার সামনে ঝুঁকে (নত) যাবে? তিনি বললেন, না। ব্যক্তিটি আবার প্রশ্ন করল, তা হলে সে কি তাকে জড়িয়ে ধরে চুমু খাবে? তিনি বললেন, না। এরপর সে আবার জিজ্ঞাসা করল, তা হলে সে কি তার সঙ্গে মোসাফাহা (করমর্দন) করবে? তিনি (রাসুলুল্লাহ) বললেন, হ্যাঁ। (তিরমিজি, ২৭২৮)

সালামে যথাসম্ভব শব্দ বাড়িয়ে বলা: সালামে যত শব্দ বাড়িয়ে বলা হবে, আল্লাহতায়ালা তত বেশি সওয়াব বাড়িয়ে দেবেন। ইমরান ইবনে হুসাইন (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে এসে এক ব্যক্তি বলল, আসসালামু আলাইকুম। তিনি (রাসুলুল্লাহ) বললেন, ১০ নেকি। এরপর এক ব্যক্তি এসে বলল, আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ। তিনি (রাসুলুল্লাহ) বললেন, ২০ নেকি। এরপর আরেক ব্যক্তি এসে বলল, আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতু। তিনি (রাসুলুল্লাহ) বললেন, ৩০ নেকি। (তিরমিজি, ২৬৮৯; আবু দাউদ, ৫১৯৫)

কে কাকে সালাম দেবে: রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, আরোহী ব্যক্তি পদাতিক ব্যক্তিকে, চলমান ব্যক্তি বসা ব্যক্তিকে এবং কম সংখ্যক মানুষ অধিক মানুষকে সালাম প্রদান করবে। (বুখারি, ৬২৩২) অন্য এক বর্ণনায় তিনি বলেছেন, ছোটরা বড়দের সালাম দেবে। (বুখারি, ৬২৩১) তবে রাসুলুল্লাহ (সা.) চলার পথে শিশুদের আগে সালাম দিতেন। (বুখারি, ৬২৪৭)

অনুরূপ বা উত্তমরূপে সালামের উত্তম দেওয়া: এ ব্যাপারে আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনে এরশাদ করেছেন, আর যখন তোমাদেরকে অভিবাদন করা হয়, তখন তোমরাও তা অপেক্ষা উত্তম অভিবাদন করবে অথবা অনুরূপই করবে। (সুরা নিসা, ৮৬)

লেখক: আলেম, গবেষক ও সাংবাদিক