হজরত আদম এবং হাওয়া (আ.)-এর মাধ্যমে পৃথিবীতে মানুষের আগমন শুরু হয়। তারা প্রতিবারই যমজ সন্তান জন্ম দিতেন; একটি ছেলে ও একটি মেয়ে। ইবনে জারির (রহ.) বলেছেন, ‘হাওয়া (আ.) ২০ বার গর্ভধারণ করেন।’ কেউ কেউ বলেছেন, ‘১২০ বার গর্ভধারণ করেন এবং ২৪০ জন সন্তান জন্ম দেন।’ (নবুওয়াতু আদম ওয়া রিসালাতুহু, পৃষ্ঠা : ১১৫; মুজাজুত-তারিখিল ইসলামি, খণ্ড : ২, পৃষ্ঠা : ১৩)
বংশবৃদ্ধির জন্য আল্লাহর নির্দেশে আদম (আ.) নিজের ছেলেদের সঙ্গে মেয়েদের বিয়ে দিতেন। কারণ, সে সময় পৃথিবীতে আদমসন্তান ছাড়া কোনো মানুষ ছিল না। প্রতিবারই এক ছেলে ও এক মেয়ে জন্ম নিত। একবারের ছেলে ও মেয়ের সঙ্গে অন্যবারের মেয়ে ও ছেলেকে বিয়ে দিতেন।
আদম (আ.)-এর দুই ছেলে ছিল কাবিল ও হাবিল। কাবিল ছিল বড়। হাবিল ছোট। আদম-হাওয়া দম্পতির আকলিমা নামে একটি মেয়ে ছিল। আকলিমা ছিল কাবিলের যমজ বোন, সে ছিল বেশ সুন্দরী। কিন্তু হাবিলের যমজ বোনটি তুলনামূলক কম সুন্দরী ছিল। নিয়ম অনুযায়ী হাবিলের সঙ্গে আকলিমার বিয়ের ব্যাপারটি সামনে আসে। কাবিল তা মেনে নিতে পারেনি। গোল বাঁধল।
আল্লাহর আদেশে তারা উৎসর্গ নিবেদন করেছিল। কথা ছিল, যার উৎসর্গ আল্লাহ গ্রহণ করবেন, সে নিজের ইচ্ছাপূরণের অধিকার পাবেন। সে কালে উৎসর্গ গ্রহণ হয়েছে কি না তা জানা যেত—উৎসর্গের বস্তু কোনো উঁচু স্থানে রাখার পর আল্লাহর কাছে তা কবুল হলে আসমান থেকে আগুন এসে বস্তুটি পুড়িয়ে দিত।
হাবিলের ছিল পশুর পাল আর কাবিলের ছিল শস্যভাণ্ডার। হাবিল একটি হৃষ্টপুষ্ট দুম্বা আল্লাহর নামে কোরবানি করল। কাবিল পেশ করল কিছু শস্য। নিয়ম অনুযায়ী অদৃশ্য থেকে আগুন এলো। হাবিল আল্লাহভীরু হওয়ার ফলে তার কোরবানির বস্তু পুড়িয়ে ফেলল। কাবিলের শস্য রয়ে গেল তেমনই।
কাবিলের উৎসর্গ গ্রহণ না হওয়ায় সে ক্ষেপে গেল। ক্রোধান্বিত হলো। সে হাবিলকে বলল, ‘আমি তোমাকে হত্যা করব।’ হাবিল বলল, ‘আল্লাহ শুধু বিশ্বাসীদের থেকে গ্রহণ করেন। তুমি আমার দিকে হাত বাড়ালেও আমি তোমাকে কিছু করব না।’ একদিন কাবিল তাকে হত্যা করল। পৃথিবীর ইতিহাসে ঘটল প্রথম মানবহত্যার কাহিনি। কিন্তু লাশ কীভাবে লুকিয়ে রাখবে তা বুঝতে পারছিল না। তখন অদূরে কাবিল দেখতে পেল, একটি কাক ঠোঁট দিয়ে মাটি খুঁড়ে অন্য একটি কাককে দাফন করছে।
কোরআনের সুরা মায়েদার ২৭ থেকে ৩১ নম্বর আয়াতে হাবিল-কাবিলের এ ঘটনার বিবরণ রয়েছে। আল্লাহ বলেন, ‘আর তুমি তাদের কাছে আদমের দুই পুত্রের সংবাদ যথাযথভাবে বর্ণনা করো, যখন তারা উভয়ে কোরবানি পেশ করল। অতঃপর তাদের একজন থেকে গ্রহণ করা হলো, আর অপরজন থেকে গ্রহণ করা হলো না। সে বলল, ‘অবশ্যই আমি তোমাকে হত্যা করব।’ অন্যজন বলল, ‘আল্লাহ শুধু বিশ্বাসীদের থেকে গ্রহণ করেন। আমাকে খুন করার জন্য তুমি হাত তুললেও তোমাকে খুন করার জন্য আমি হাত তুলব না; আমি তো বিশ্বজগতের প্রতিপালককে ভয় করি। নিশ্চয় আমি চাই যে, তুমি আমার ও তোমার পাপ নিয়ে ফিরে যাও, ফলে তুমি আগুনের অধিবাসী হও। আর সেটিই হচ্ছে জালিমদের প্রতিদান। সুতরাং তার নফস তাকে বশ করল তার ভাইকে হত্যা করতে। ফলে সে তাকে হত্যা করল এবং ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হলো। অতঃপর আল্লাহ একটি কাক পাঠালেন, যা মাটি খুঁড়ছিল, যাতে তাকে দেখাতে পারে, কীভাবে সে ভাইয়ের লাশ গোপন করবে। সে বলল, ‘হায়! আমি এই কাকটির মতো হতেও অক্ষম হয়েছি যে, আমার ভাইয়ের লাশ গোপন করব।’ ফলে সে লজ্জিত হলো।
লেখক: আলেম ও সাংবাদিক