জাকারিয়া (আ.) ছিলেন বনি ইসরায়েলের অন্যতম প্রধান নবি। ছিলেন ইসা (আ.)-এর মা মরিয়ম (আ.)-এর তত্ত্বাবধায়ক। মরিয়ম (আ.) বায়তুল মুকাদ্দাসে জাকারিয়া (আ.)-এর তত্ত্বাবধানে ছিলেন। মসজিদের এক কামরায় মরিয়ম (আ.) থাকতেন। দিনমান আল্লাহর ইবাদতে নিবেদিতপ্রাণ ছিলেন। তার জন্য জান্নাত থেকে খাবার আসত। বাহারি ফলমূল আসত; অথচ সে সময় অনেক ফলের মৌসুম ছিল না। এসব অলৌকিক কর্মকাণ্ড দেখে জাকারিয়া (আ.) বিমুগ্ধ ও বিস্মিত হলেন। তার ভেতর সন্তানের প্রবল আগ্রহ জেগে উঠল। তার কোনো সন্তান ছিল না। তার সন্তানও যদি এমন ইবাদতগুজার হয়। সন্তানের জন্যও যদি আল্লাহ এমন সব বাহারি খাবারের আয়োজন পাঠান। পাশাপাশি সন্তান না থাকায় নবুওয়াতের রেখে যাওয়া আমানত বিনষ্ট হওয়ার আশঙ্কা করছিলেন তিনি। বিশ্বাসী মানুষ অবিশ্বাসী হয়ে যাওয়ার ভয় করছিলেন। তিনি আল্লাহর কাছে সন্তান চাইলেন। তার প্রার্থনার কথা কোরআনে এসেছে এভাবে—‘হে পালনকর্তা, আমার হাড় দুর্বল হয়ে পড়ে। বার্ধক্যে আমার মাথা শুভ্র-উজ্জ্বল হয়েছে। হে আমার প্রতিপালক, আপনাকে ডেকে আমি কখনো ব্যর্থ হইনি। আমি আশঙ্কা করি আমার পর আমার স্বগোত্রীয়দের সম্পর্কে। আমার স্ত্রী বন্ধ্যা। সুতরাং আপনি আপনার পক্ষ থেকে আমাকে উত্তরাধিকারী দান করুন।’ (সুরা মরিয়ম, আয়াত: ২-৫)
জাকারিয়া (আ.) তখন শতবর্ষী বৃদ্ধ, হাড় দুর্বল হয়ে পড়েছে। চুল শুভ্র হয়ে গেছে কাশফুলের মতো । তার স্ত্রীও বৃদ্ধা, উপরন্তু বন্ধ্যা। ইতিহাস বা তাফসির গ্রন্থে তার স্ত্রীর নাম পাওয়া যায় না। তবে কেউ কেউ ‘ইশাআ’ বলেছেন। স্ত্রী ছিলেন মরিয়ম (আ.)-এর মা হান্নাহর বোন।
জাকারিয়া (আ.)-এর এই বৃদ্ধ বয়স আর স্ত্রী বন্ধ্যা; এসব মিলিয়ে সন্তান লাভের স্বাভাবিক কোনো ব্যাপার ছিল না তখন। কিন্তু নবির বিশ্বাস আর ভরসা ছিল করুণাময় অসীম শক্তিধর আল্লাহর ওপর। আল্লাহ চাইলে সব পারেন। তিনি বললে সব হয়ে যায়। যেমন সৃষ্টি হয়েছে পিতা-মাতা ছাড়া আদম-হাওয়া এবং পিতা ছাড়া ইসা (আ.)।
জাকারিয়া (আ.)-এর বিশ্বাস, ভরসা আর আকাঙ্ক্ষাভরা আকুতির কথা কোরআনে বাঙময় হয়েছে, ‘হে আমাদের প্রতিপালক, তোমার পক্ষ থেকে আমাকে পূতপবিত্র সন্তান দান করো। নিশ্চয়ই তুমি প্রার্থনা কবুলকারী।’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত: ৩৮)
আল্লাহ তার দোয়া কবুল করে একটি পুত্রসন্তান দিলেন। নামও রেখে দিলেন ‘ইয়াহইয়া’। এর আগে এ নাম শোনেনি কেউ। রাখেনিও কেউ। এ নাম জমা ছিল আরশে আজিমে। আল্লাহর কাছে। সন্তানদান ও নাম রাখার পাশাপাশি আল্লাহ জাকারিয়া (আ.)-কে সুসংবাদ দেন, তার সন্তান হবে। কোরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘(আল্লাহ বললেন) ‘হে জাকারিয়া, আমি তোমাকে একটি পুত্রসন্তানের সুসংবাদ দিচ্ছি, তার নাম ইয়াহইয়া। এর আগে কাউকে আমি এ নাম দিইনি।’ (সুরা মরিয়ম, আয়াত: ৭)
আল্লাহ জাকারিয়া (আ.)-এর পরিবারের ওপর বিশেষ অনুগ্রহ করেছিলেন। ইয়াহইয়া (আ.)-কে শৈশবেই জ্ঞানদান করেছিলেন। হৃদয়কে করেছিলেন পবিত্র ও কোমল। ইয়াহইয়া (আ.) ছিলেন মুত্তাকি। ছিলেন পিতা-মাতার অনুগত সন্তান। তার প্রতি আল্লাহ শান্তি নাজিল করেন। আল্লাহ বলেন, ‘হে ইয়াহইয়া, আপনি শক্ত করে কিতাব আঁকড়ে ধরুন, আমি তাকে শৈশবেই দান করেছিলাম জ্ঞান। আমার কাছ থেকে হৃদয়ের কোমলতা ও পবিত্রতা। সে ছিল মুত্তাকি, পিতা-মাতার প্রতি অনুগত এবং সে ছিল না উদ্ধত ও অবাধ্য। তার প্রতি শান্তি যেদিন সে জন্ম লাভ করে, যেদিন সে জীবিত অবস্থায় উত্থিত হবে।’ (সুরা মরিয়ম, আয়াত: ১২-১৫)
লেখক: আলেম ও সাংবাদিক