বৃদ্ধ জাকারিয়া (আ.)-এর বাবা হওয়ার গল্প । খবরের কাগজ
ঢাকা ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, শনিবার, ১৮ মে ২০২৪

বৃদ্ধ জাকারিয়া (আ.)-এর বাবা হওয়ার গল্প

প্রকাশ: ০৪ মে ২০২৪, ১০:৩৩ এএম
বৃদ্ধ জাকারিয়া (আ.)-এর বাবা হওয়ার গল্প
শিল্পীর তুলিতে আঁকা জাকারিয়া (আ.)-এর আরবি নামের ক্যালিগ্রাফি। ইন্টারনেট

জাকারিয়া (আ.) ছিলেন বনি ইসরায়েলের অন্যতম প্রধান নবি। ছিলেন ইসা (আ.)-এর মা মরিয়ম (আ.)-এর তত্ত্বাবধায়ক। মরিয়ম (আ.) বায়তুল মুকাদ্দাসে জাকারিয়া (আ.)-এর তত্ত্বাবধানে ছিলেন। মসজিদের এক কামরায় মরিয়ম (আ.) থাকতেন। দিনমান আল্লাহর ইবাদতে নিবেদিতপ্রাণ ছিলেন। তার জন্য জান্নাত থেকে খাবার আসত। বাহারি ফলমূল আসত; অথচ সে সময় অনেক ফলের মৌসুম ছিল না। এসব অলৌকিক কর্মকাণ্ড দেখে জাকারিয়া (আ.) বিমুগ্ধ ও বিস্মিত হলেন। তার ভেতর সন্তানের প্রবল আগ্রহ জেগে উঠল। তার কোনো সন্তান ছিল না। তার সন্তানও যদি এমন ইবাদতগুজার হয়। সন্তানের জন্যও যদি আল্লাহ এমন সব বাহারি খাবারের আয়োজন পাঠান। পাশাপাশি সন্তান না থাকায় নবুওয়াতের রেখে যাওয়া আমানত বিনষ্ট হওয়ার আশঙ্কা করছিলেন তিনি। বিশ্বাসী মানুষ অবিশ্বাসী হয়ে যাওয়ার ভয় করছিলেন। তিনি আল্লাহর কাছে সন্তান চাইলেন। তার প্রার্থনার কথা কোরআনে এসেছে এভাবে—‘হে পালনকর্তা, আমার হাড় দুর্বল হয়ে পড়ে। বার্ধক্যে আমার মাথা শুভ্র-উজ্জ্বল হয়েছে। হে আমার প্রতিপালক, আপনাকে ডেকে আমি কখনো ব্যর্থ হইনি। আমি আশঙ্কা করি আমার পর আমার স্বগোত্রীয়দের সম্পর্কে। আমার স্ত্রী বন্ধ্যা। সুতরাং আপনি আপনার পক্ষ থেকে আমাকে উত্তরাধিকারী দান করুন।’ (সুরা মরিয়ম, আয়াত: ২-৫)

জাকারিয়া (আ.) তখন শতবর্ষী বৃদ্ধ, হাড় দুর্বল হয়ে পড়েছে। চুল শুভ্র হয়ে গেছে কাশফুলের মতো । তার স্ত্রীও বৃদ্ধা, উপরন্তু বন্ধ্যা। ইতিহাস বা তাফসির গ্রন্থে তার স্ত্রীর নাম পাওয়া যায় না। তবে কেউ কেউ ‘ইশাআ’ বলেছেন। স্ত্রী ছিলেন মরিয়ম (আ.)-এর মা হান্নাহর বোন।

জাকারিয়া (আ.)-এর এই বৃদ্ধ বয়স আর স্ত্রী বন্ধ্যা; এসব মিলিয়ে সন্তান লাভের স্বাভাবিক কোনো ব্যাপার ছিল না তখন। কিন্তু নবির বিশ্বাস আর ভরসা ছিল করুণাময় অসীম শক্তিধর আল্লাহর ওপর। আল্লাহ চাইলে সব পারেন। তিনি বললে সব হয়ে যায়। যেমন সৃষ্টি হয়েছে পিতা-মাতা ছাড়া আদম-হাওয়া এবং পিতা ছাড়া ইসা (আ.)।

জাকারিয়া (আ.)-এর বিশ্বাস, ভরসা আর আকাঙ্ক্ষাভরা আকুতির কথা কোরআনে বাঙময় হয়েছে, ‘হে আমাদের প্রতিপালক, তোমার পক্ষ থেকে আমাকে পূতপবিত্র সন্তান দান করো। নিশ্চয়ই তুমি প্রার্থনা কবুলকারী।’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত: ৩৮)

আল্লাহ তার দোয়া কবুল করে একটি পুত্রসন্তান দিলেন। নামও রেখে দিলেন ‘ইয়াহইয়া’। এর আগে এ নাম শোনেনি কেউ। রাখেনিও কেউ। এ নাম জমা ছিল আরশে আজিমে। আল্লাহর কাছে। সন্তানদান ও নাম রাখার পাশাপাশি আল্লাহ জাকারিয়া (আ.)-কে সুসংবাদ দেন, তার সন্তান হবে। কোরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘(আল্লাহ বললেন) ‘হে জাকারিয়া, আমি তোমাকে একটি পুত্রসন্তানের সুসংবাদ দিচ্ছি, তার নাম ইয়াহইয়া। এর আগে কাউকে আমি এ নাম দিইনি।’ (সুরা মরিয়ম, আয়াত: ৭)

আল্লাহ জাকারিয়া (আ.)-এর পরিবারের ওপর বিশেষ অনুগ্রহ করেছিলেন। ইয়াহইয়া (আ.)-কে শৈশবেই জ্ঞানদান করেছিলেন। হৃদয়কে করেছিলেন পবিত্র ও কোমল। ইয়াহইয়া (আ.) ছিলেন মুত্তাকি। ছিলেন পিতা-মাতার অনুগত সন্তান। তার প্রতি আল্লাহ শান্তি নাজিল করেন। আল্লাহ বলেন, ‘হে ইয়াহইয়া, আপনি শক্ত করে কিতাব আঁকড়ে ধরুন, আমি তাকে শৈশবেই দান করেছিলাম জ্ঞান। আমার কাছ থেকে হৃদয়ের কোমলতা ও পবিত্রতা। সে ছিল মুত্তাকি, পিতা-মাতার প্রতি অনুগত এবং সে ছিল না উদ্ধত ও অবাধ্য। তার প্রতি শান্তি যেদিন সে জন্ম লাভ করে, যেদিন সে জীবিত অবস্থায় উত্থিত হবে।’ (সুরা মরিয়ম, আয়াত: ১২-১৫)

লেখক: আলেম ও সাংবাদিক

 

দাম্পত্য কলহ নিরসনে ইসলামের শিক্ষা

প্রকাশ: ১৮ মে ২০২৪, ০৯:০০ এএম
দাম্পত্য কলহ নিরসনে ইসলামের শিক্ষা
প্রতীকী ছবি

স্বামী-স্ত্রীর মধুর সম্পর্ক আল্লাহতায়ালার বিশেষ নেয়ামত। পৃথিবীর সব ধর্ম এই সম্পর্কের গুরুত্ব ও বৈধতা প্রদান করেছে। বিবাহের মাধ্যমে দাম্পত্য সম্পর্কই একমাত্র মানব সৃষ্টির ও বংশবিস্তারের বৈধ প্রক্রিয়া। জান্নাতের মধ্যে আদম (আ.) এত আরাম-আয়েশের মধ্যে থেকেও একাকিত্ব বোধ করায় আল্লাহতায়ালা তার জন্য হাওয়া (আ.)-কে সঙ্গী হিসেবে সৃষ্টি করেন। স্বামী এবং স্ত্রীর দাম্পত্য জীবনের গুরুত্ব অপরিসীম। স্বামী-স্ত্রী একে অপরের সহায়ক ও পরিপূরক—যেন একই বৃন্তে দুটি ফুল। পরস্পরের যেমন চাহিদা রয়েছে, তেমনি রয়েছে অধিকার। আবার উভয়ের রয়েছে বিশেষ দায়িত্ব ও কর্তব্য। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের মধ্যে সেই সর্বোত্তম, যে তার স্ত্রীর কাছে উত্তম। আর আমি তোমাদের মধ্যে আমার স্ত্রীদের কাছে সর্বোত্তম ব্যক্তি।’ (তিরমিজি, ৩৮৯৫) 

আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘পুরুষরা নারীদের প্রতি দায়িত্বশীল, যেহেতু আল্লাহ একের ওপর অন্যকে প্রাধান্য দিয়েছেন এবং তারা তাদের সম্পদ থেকে ব্যয়ও করে।’ (সুরা নিসা, আয়াত: ৩৪)


পবিত্র কোরআনে নারীদের প্রতি পুরুষদের আচরণের বিষয়ে আল্লাহতায়ালা বহু আয়াত নাজিল করেছেন। সংসার টিকিয়ে রাখাকেও আল্লাহ অধিক পছন্দ করেন। সংসারে রাগ-অভিমান নিত্যনৈমিত্তিক ও স্বাভাবিক ব্যাপার। অভিমান কিংবা অল্পতে ভেঙে পড়া নারীর স্বভাবসুলভ বৈশিষ্ট্য। নারীর অভিমানের পাল্লা ভারি হয়ে গেলে কিংবা পুরুষের বোঝার ভুলের কারণে তৈরি হয় ভুল বোঝাবুঝি। আর এভাবেই সম্পর্কের টানাপোড়েন-বিচ্ছেদের মতো নিকৃষ্ট ব্যাপার এখন প্রতিনিয়ত ঘটছে।

 
স্বামীকে ভালোবাসা যেমন স্ত্রীর কর্তব্য ও ইবাদতের অংশ। তেমন স্ত্রীকে ভালোবাসা স্বামীর। ইসলাম বৈবাহিক সম্পর্ক জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত টিকিয়ে রাখার তাগিদ দেয় এবং সে লক্ষ্যে ধৈর্য, সহনশীলতা ও দায়িত্বশীল আচরণের নির্দেশনা প্রদান করে।


দাম্পত্য কলহ নিরসনে কোরআনে দিকনির্দেশনা রয়েছে। আল্লাহ বলেন, ‘পুরুষরা নারীর দায়িত্বশীল। কেননা আল্লাহ তাদের একে অপরের ওপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন এবং এ জন্য যে পুরুষ তাদের ধনসম্পদ ব্যয় করে। সুতরাং ভালো স্ত্রীরা অনুগতা এবং লোকচক্ষুর অন্তরালে আল্লাহ যা সংরক্ষিত করেছেন তা হেফাজত করে। স্ত্রীদের মধ্যে যাদের অবাধ্যতার আশঙ্কা করো তাদের সদুপদেশ দাও, তারপর তাদের শয্যা ত্যাগ করো এবং তাদের (মৃদু) প্রহার করো। যদি তারা তোমাদের অনুগত হয়, তবে তাদের বিরুদ্ধে কোনো পথ অন্বেষণ করো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ মহান, শ্রেষ্ঠ। তাদের উভয়ের মধ্যে বিরোধ আশঙ্কা করলে তোমরা তার (স্বামী) পরিবার থেকে একজন এবং তার (স্ত্রী) পরিবার থেকে একজন সালিশ নিযুক্ত করবে। তারা উভয়ে নিষ্পত্তি চাইলে আল্লাহ তাদের মধ্যে মীমাংসার অনুকূল অবস্থা সৃষ্টি করবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ সর্বজ্ঞ, সবিশেষ অবহিত।’ (সুরা নিসা, আয়াত: ৩৪-৩৫)


উল্লিখিত আয়াতে আদর্শ স্ত্রীর দুটি গুণের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। স্বামীর আনুগত্য এবং স্বামীর অনুপস্থিতিতে সতীত্ব রক্ষা করা। বিবাদসংক্রান্ত আয়াতে এ দুটি গুণের উল্লেখ করার মাধ্যমে আল্লাহ এ ইঙ্গিতই করছেন যে, বেশির ভাগ দাম্পত্য কলহের পেছনে অবাধ্যতা ও অনৈতিকতাই দায়ী। সুতরাং স্বামীর অবাধ্যতা ও অনৈতিকতা থেকে বেঁচে থাকতে হবে। 


ইসলামি বিধানে স্ত্রীর ওপর স্বামীর কিছু অধিকার রয়েছে। এখানে কয়েকটি উল্লেখ করা হলো—১. সতীত্বের হেফাজত করা। ২. স্বামীর অনুগত থাকা এবং সেবা করা। ৩. স্বামীর সাধ্যের বাইরে কোনো আবদার না করা। ৪. স্বামীর অনুমতি ছাড়া ঘর থেকে বের না হওয়া এবং কাউকে ঘরে প্রবেশ করতে না দেওয়া। ৫. স্বামীর সম্পদ বিশ্বস্ততার সঙ্গে সংরক্ষণ করা। ৬. স্বামীর কথা মেনে চলা। 


স্বামীর ওপর রয়েছে স্ত্রীর কিছু অধিকার। এখানে কয়েকটি উল্লেখ করা হলো—১. মোহর আদায় করা। ২. স্ত্রীর ভরণ পোষণের ব্যবস্থা করা। ৩. বাসস্থানের ব্যবস্থা করা। ৪. সম্ভব হলে কাজের লোকের ব্যবস্থা করা। ৫. স্ত্রীর ওপর জুলুম না করা। 


স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক অত্যন্ত গভীর। পবিত্র কোরআনে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তারা তোমাদের জন্য পোশাকস্বরূপ এবং তোমরা তাদের জন্য পোশাকস্বরূপ।’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ১০) রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘বৈবাহিক সম্পর্কের মাধ্যমে স্থাপিত ভালোবাসার সম্পর্ক তুলনাহীন। আমি অন্য কোনো ক্ষেত্রে এমন গভীর সম্পর্ক দেখি না।’ (ইবনে মাজাহ)

লেখক: সহকারী অধ্যাপক, এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ

 

সাক্ষাৎকার স্মার্ট বাংলাদেশে স্মার্ট হজব্যবস্থা গড়তে কাজ করছি : মুহম্মদ কামরুজ্জামান

প্রকাশ: ১৭ মে ২০২৪, ০৩:০০ পিএম
স্মার্ট বাংলাদেশে স্মার্ট হজব্যবস্থা গড়তে কাজ করছি : মুহম্মদ কামরুজ্জামান
মুহম্মদ কামরুজ্জামান, পরিচালক, হজ অফিস, আশকোনা, ঢাকা

প্রশ্ন : এবার ৮৫ হাজারের বেশি মানুষ হজে যাওয়ার কথা রয়েছে। হাজিরা আল্লাহর মেহমান, তাদের আপনি কীভাবে সমাদর করছেন?
মুহম্মদ কামরুজ্জামান : আমরা আল্লাহর মেহমানদের সর্বোচ্চ সুবিধা দেওয়ার চেষ্টা করছি। এর আগে একজন হাজিকে তিনবার হজ অফিসে আসতে হতো, এখন একবার আসলেই হয়। হজক্যাম্পে ২৪টি ডরমেটরি আছে, একসঙ্গে ২ হাজার ৪০০ হাজি ঘুমাতে পারেন সেখানে। মসজিদের নিচতলায় পুরুষ ও দুই তলায় নারীদের নামাজের জায়গা আছে। দুটি ক্যান্টিনের খাবারের মান যাচাই করা হচ্ছে প্রতিদিন, দুটিতে খাবারের দামও সমান। ১৭টি ব্যাংক কাজ করছে এখানে। ডাক্তার-নার্স ও ফার্মাসিস্ট আছেন ২৪ জন। ২৪ ঘণ্টা সেবা দিচ্ছেন তারা। হাজিদের বাংলাদেশের ইমিগ্রেশনও শেষ হচ্ছে এখানে। ইমিগ্রেশনের সামনে রোড টু মক্কা ইনিশিয়েটিভ ওকালাহ কোম্পানি হাজিদের ব্যাগে স্টিকার লাগিয়ে দিচ্ছেন। আমরা আগেই সাত রঙের স্টিকার তৈরি করেছি। একজন হাজি একই রঙের তিনটি স্টিকার পান। এই রঙের কারণে সৌদি আরবে তাদের সমস্যায় পড়তে হয় না। হাজিদের সঙ্গে যারা আসেন, তাদের জন্যও পাশের মার্কেটে টয়লেটের ব্যবস্থা আছে। গাড়ি পার্কিংয়ের জায়গা আছে। মশা দূরীকরণে উদ্যোগ নিয়েছি। হাজিদের সেবায় ১৯৪৮ সাল থেকে আঞ্জুমান খাদেমুল হজ কাজ করছে এখানে। কাজ করছে রোভার স্কাউটও। 

প্রশ্ন : এখানে হাজিদের জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা আছে?
মুহম্মদ কামরুজ্জামান : হজক্যাম্প মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদেমদের গাইডলাইন দেওয়া আছে। তারা এখানে আগত হাজিদের নানাভাবে সহযোগিতা করছেন। প্রতি ওয়াক্ত নামাজের পর হজবিষয়ক আলোচনা করছেন। প্রতিদিন মাগরিবের নামাজের পর ইহরামের কাপড় পরার নিয়ম হাতে-কলমে শেখাচ্ছেন। 

প্রশ্ন : হাজিদের নিয়ে কাজ করতে কেমন লাগে?
মুহম্মদ কামরুজ্জামান : আমি আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞ, তিনি আমাকে হাজিদের সেবা করার সুযোগ দিয়েছেন। এর আগেও আমি জেদ্দা কনস্যুলেটে পাঁচ বছর হাজিদের খেদমতে কাজ করেছি। এখানে কর্মরত সবার যেমন লক্ষ্য প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বাধীন ই-হজ ব্যবস্থাপনা সফল করা; একই সঙ্গে আখেরাতের একটা পুঁজি যে এই কাজের মাধ্যমে সংগ্রহ হচ্ছে, এটা সবাই হৃদয়ে ধারণ করছে। 

প্রশ্ন : হজক্যাম্প নিয়ে আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা জানতে চাই।
মুহম্মদ কামরুজ্জামান : হজক্যাম্পকে শুধু মৌসুমকেন্দ্রিক ব্যবহার না করে আমরা সারা বছরের কিছু পরিকল্পনা হাতে নিয়েছি। এর মধ্যে ডিজিটাল ল্যাব তৈরির পরিকল্পনা আছে। এই ল্যাবের মাধ্যমে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষকে প্রশিক্ষণ দিলে এটা মানুষের কাজে লাগবে। হাজিদের সব কার্যক্রম আমরা সহজ করতে চেষ্টা করছি। স্মার্ট বাংলাদেশে স্মার্ট হজব্যবস্থা গড়তে কাজ করছি। সর্বোপরি বাংলাদেশের মানুষের হজ যেন কবুল হজ হয়, সে বিষয়টি আমরা নিশ্চিত করতে কাজ করছি।

হজক্যাম্পে যেভাবে কাটে আল্লাহর মেহমানদের দিন-রাত

প্রকাশ: ১৭ মে ২০২৪, ১২:০০ পিএম
হজক্যাম্পে যেভাবে কাটে আল্লাহর মেহমানদের দিন-রাত
হজক্যাম্পে উপস্থিত হাজিদের ছবি

আব্দুল হালিমের বাড়ি দিনাজপুরের চিরিরবন্দরে। বয়স ৬৫ ছুঁইছুঁই। স্ত্রী ও বোন নিয়ে এবার হজে যাচ্ছেন। ঢাকার আশকোনা হজক্যাম্পে এসে পৌঁছেছেন সকাল ৯টায়। বিমানে চড়বেন এক দিন পর। ‘আমার হজের খবরে আমার বউ-ই বেশি খুশি হলো। এক দিন বউ বলল, ‘আমারেও নিইয়া চলেন। আপনার সঙ্গে হজে যেতে চাই। চিন্তা করলাম, ৪০ বছর ধরে এক লগে আছি। হজটাও এক লগে করি। আল্লাহ রহম করলেন। হজক্যাম্পে নিজেরে বন্দি পাখির মতো লাগে। মক্কায় যেতে পারলেই কেবল মুক্তি।’ জানালেন আব্দুল হালিম।


বাংলাদেশ থেকে এবার মোট ৮৫ হাজার ২৫৭ জন হজ করতে যাবেন। চাঁদ দেখা সাপেক্ষে ১৬ জুন হজ অনুষ্ঠিত হবে। বাংলাদেশি হাজিদের হজযাত্রার প্রাথমিক কার্যক্রম শেষ করা হয় ঢাকার আশকোনা হজক্যাম্পে। বাংলাদেশের ইমিগ্রেশন সম্পন্ন করা হয় এখানেই। জেদ্দার ইমিগ্রেশন হয় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে। হাজিদের প্রথম হজক্যাম্পেই আসতে হয়। 


ঢাকার বিমানবন্দর রেলস্টেশন বা বাসস্টেশন নেমে হাতের বামে আশকোনার দিকে কিছুটা পথ হাঁটলেই হজক্যাম্প। ক্যাম্পের মূল ভবনের গেট দিয়ে প্রবেশ করলেই চোখে পড়ে তথ্যকেন্দ্র। হাজিদের সব বিষয়ে তথ্য দেওয়া হয় এখান থেকে। গেটের ডান দিকে রয়েছে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের বইয়ের প্রদর্শনী ও বিক্রয়কেন্দ্র। এরপরই মসজিদ। নিচ তলায় পুরুষদের নামাজের জায়গা, ওপরে নারীদের। একসঙ্গে ৫ হাজার মুসল্লি নামাজ পড়তে পারেন। প্রতিদিন মাগরিব ও ফজর নামাজের পর হজবিষয়ক আলোচনা হয়। মাগরিবের পর ইহরামের কাপড় পরে দেখানো হয়। মসজিদের পাশে রয়েছে দুটি খাবার ক্যান্টিন। প্রতিদিনই খাবারের মান যাচাই করা হয়। 


মূল গেটের বাম দিকে পুলিশ কন্ট্রোল রুম পেরিয়ে ডান দিকে পথ নিলেই বিমান বাংলাদেশ, সৌদি এয়ারলাইন্সের চেকইন কাউন্টার। এরপর ডান দিকে বাঁক নিলেই ফ্লাইনাসের চেকইন কাউন্টার। বিমান বাংলাদেশের ইমিগ্রেশন অফিসও লাগোয়া সিঁড়ি ভেঙে ওপরে উঠলেই চোখে পড়বে বেশ কয়েকটি ব্যাংকের বুথ। রিয়াল সংগ্রহ থেকে শুরু করে অর্থনৈতিক অন্যান্য সুবিধা পাওয়া যায় সেখানে। 


হাজিদের সেবায় রয়েছে অস্থায়ী চিকিৎসাসেবা। ডাক্তার-নার্স ও ফার্মাসিস্ট মিলিয়ে ২৪ জন সেবা দিচ্ছেন। পুরো নিচতলায় রয়েছে সারি সারি চেয়ার পাতা। আছে পর্যাপ্ত ফ্যান ও আলোর ব্যবস্থা। মূল ভবনের দুই থেকে সাত তলা পর্যন্ত ডরমেটরি রয়েছে ২৪টি। ওপরে ওঠার জন্য পাঁচটি লিফট আছে। প্রতিটি ডরমেটরি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত। হাজিরা বিনামূল্যে থাকতে পারেন এখানে। ফ্লাইটের আগের সময়টা চাইলে এখানেই কাটান হাজিরা। নিজেদের মতো সময় কাটাতে পারেন তারা। ডরমেটরিতে আরাম করতে পারেন। মসজিদে ইবাদত করতে পারেন। নিতে পারেন প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ। হাজিদের সেবা দিতে নিরবচ্ছিন্ন কাজ করছেন হজক্যাম্পের দায়িত্বশীলরা। তাদের সঙ্গে যুক্ত আছেন আঞ্জুমান খাদেমুল হজের ৮০ জন ও রোভার স্কাউটের ১০০ জন স্বেচ্ছাসেবক। হজক্যাম্পের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা বলেন, ‘এখানে সুন্দর ও সুশৃঙ্খল ব্যবস্থাপনা রয়েছে। অনেকেই এই ভালো ব্যবস্থাপনার কথা জানেন না। ডরমেটরির কথা জানেন না। হাজিরা এসে এলোমেলো বসে থাকেন। ফলে মানুষ মনে করে তাদের জন্য ভালো ব্যবস্থাপনা নেই।’ 


তখন বিকেল, ঘড়িতে ৪টা বাজে। হজক্যাম্পের মূল ভবনের গেটে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত একটি বাস থামল। বাস থেকে নামছেন শুভ্র পোশাকের হজযাত্রীরা। তাদের চোখে-মুখে আনন্দের ঝিলিক। তারা এসেছেন বরিশাল থেকে। ১১৬ জনের কাফেলা। রাত ২টা ১৫ মিনিটে ফ্লাইট। মাহবুব হাসানের সঙ্গে কথা হলো। তিনি বলেন, ‘কত বছর ধরে কাবাঘরের দিকে মুখ করে নামাজ পড়ছি, সেই ঘর আজও দেখা হয়নি। এবার দেখার সৌভাগ্য হচ্ছে। তাওয়াফ করব। রাসুলের রওজায় সালাম দেব। এর চেয়ে আনন্দের বিষয় আর কী হতে পারে।’ মূল গেটের বাইরে দেখা হলো নাছিমা বেগমের সঙ্গে। সাভারে বাড়ি তার। ভার্সিটি পড়ুয়া মেয়েকে জড়িয়ে কাঁদছেন। নাছিমা বেগম বললেন, ‘জায়নামাজে বসে আল্লাহর কাছে কাঁদতাম। মক্কা-মদিনা দেখতে চাইতাম। আল্লাহ ডাক শুনেছেন।’

লেখক: আলেম ও সাংবাদিক

বাতাসকে গালমন্দ করা যাবে কি?

প্রকাশ: ১৬ মে ২০২৪, ০৭:০০ পিএম
বাতাসকে গালমন্দ করা যাবে কি?
তীব্র বেগে বাতাস বয়ে চলার ছবি। ইন্টারনেট

ইসলামে গালিগালাজ করা সম্পূর্ণ হারাম। কোনো কারণেই কাউকে গালি দেওয়া যাবে না। পবিত্র কোরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘যারা বিনা অপরাধে ঈমানদার পুরুষ ও নারীদের কষ্ট দেয়, তারা অবশ্যই মিথ্যা অপবাদ এবং স্পষ্ট অপরাধের বোঝা বহন করে।’ (সুরা আহজাব, আয়াত: ৫৮)

ইমানদার ব্যক্তি কখনো কাউকে গালি দিতে পারে না। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘মুমিন কখনো দোষারোপকারী, অভিশাপদাতা, অশ্লীলভাষী ও গালাগালকারী হয় না।’ (তিরমিজি, হাদিস: ২০৪৩)

জগতের সবকিছু আল্লাহর সৃষ্টি। এর সংখ্যা অসংখ্য ও অগণিত। আল্লাহ এদের যেভাবে নির্দেশ দেন, তারা সেভাবেই চলেন। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘নভোমণ্ডল ও ভূমণ্ডলের বাহিনীসমূহ আল্লাহরই।’ (সুরা ফাতহ, আয়াত: ৭) 

এর মধ্যে একটি হলো বাতাস। আল্লাহ একে যেভাবে নির্দেশ করেন সেভাবেই সে বয়ে যায়। কল্যাণ বয়ে আনুক বা অকল্যাণ। তা আল্লাহর আদেশেই আসে। সুতরাং নিজের সুবিধামতো না এলে বাতাসকে গালমন্দ করার কোনো অধিকার মানুষের নেই। ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, “এক ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সামনে একবার বাতাসকে অভিশাপ দিল। তখন রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, ‘তুমি বাতাসকে অভিশাপ দিয়ো না। কারণ, সে নির্দেশিত। কেউ যদি কোনো বস্তুকে অভিশাপ দেয় আর তা যদি ওই অভিশাপের উপযুক্ত না হয়, তবে সেই অভিশাপ অভিশাপকারীর দিকে ফিরে আসে।” (তিরমিজি, হাদিস: ১৮৭৮)

বাতাস আল্লাহর সৈনিক। এর দ্বারা আল্লাহতায়ালা রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে সাহায্য করেছেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আমাকে পুবালি বায়ু দিয়ে সাহায্য করা হয়েছে। আর আদ জাতিকে ধ্বংস করা হয়েছে পশ্চিমা বায়ু দিয়ে।’ (বুখারি, হাদিস: ৩০৩৩)

খন্দক যুদ্ধের দিন পূর্ব দিক থেকে বাতাস পাঠিয়ে রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে সাহায্য করা হয়েছে। আর আদ জাতির ওপর ধ্বংস নেমেছে পশ্চিমা বায়ুর মাধ্যমে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা বাতাসকে গালি দিয়ো না। কারণ, তা আল্লাহর অপার দয়াসমূহের একটি; তা রহমত ও আজাব বয়ে আনে। এর মধ্যে থাকা কল্যাণ তোমরা আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করো এবং এর মধ্যে থাকা অনিষ্ট থেকে আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করো।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস: ৩৭২৭)

রাসুলুল্লাহ (সা.) আরও বলেছেন, ‘তোমরা বাতাসকে গালমন্দ করবে না। অপছন্দনীয় কিছু দেখলে বলবে, হে আল্লাহ, আমরা তোমার কাছে এই বাতাসের কল্যাণ এবং তাতে নিহিত বিষয়ের কল্যাণ এবং সে যে বিষয়ে নির্দেশিত হয়েছে তার কল্যাণ প্রার্থনা করি। তোমার কাছে আশ্রয় চাই এই বাতাসের অকল্যাণ থেকে, তাতে নিহিত বিষয়ের অমঙ্গল থেকে এবং সে যে বিষয়ে নির্দেশিত তার অমঙ্গল থেকে। (মুসনাদ লিল ইমাম আহমাদ, হাদিস: ২১১৭৬) 

লেখক: আলেম, গবেষক ও সাংবাদিক

রাসুলুল্লাহ (সা.) যেভাবে খাবার খেতেন

প্রকাশ: ১৭ মে ২০২৪, ০৯:০০ এএম
রাসুলুল্লাহ (সা.) যেভাবে খাবার খেতেন
প্রতীকী ছবি

দস্তরখানা বিছিয়ে খাবার খেতেন: রাসুলুল্লাহ (সা.) দস্তরখানা বিছিয়ে বসে বিসমিল্লাহ বলে খাবার খেতেন। (বুখারি, ৫৩৮৬) ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, আমার খালাম্মা একবার রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর জন্য কাঁধের গোশত ও দুধসহ কিছু খাবার হাদিয়া পাঠালেন। তিনি খাবারগুলো দস্তরখানার ওপরে রাখলেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) দুধ পান করলেন এবং ছাগলের গোশত খেলেন। এই হাদিস দ্বারা বোঝা যায়, রাসুলুল্লাহ (সা.) দস্তরখানা বিছিয়ে খেতেন। (তুহফাতুল কারি, ১০/৩৫৬)

বিসমিল্লাহ বলে ডান হাত দিয়ে খাবার খেতেন, মধ্যখান থেকে নয়; বরং সামনে থেকে খেতেন: উমর ইবনে আবু সালামা (রা.) বলেন, “আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর লালন-পালনে ছিলাম। খাবারের পাত্রে আমার হাত ছোটাছুটি করত। 
রাসুলুল্লাহ (সা.) আমাকে বললেন, ‘হে ছেলে, বিসমিল্লাহ বলে ডান হাতে খাও এবং তোমার কাছে থেকে (সম্মুখ) খাও।” (বুখারি, ৫০৬; মুসলিম, ২০২২) রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা বাম হাত দিয়ে খাবার খেয়ো না ও পান করো না। কারণ, শয়তান বাম হাত দিয়ে খাবার খায় ও পান করে।’ (তিরমিজি, ১৯১২) রাসুলুল্লাহ (সা.) আরও বলেছেন, ‘খাবারের মধ্যস্থলে বরকত নাজিল হয়। সুতরাং তোমরা পাশ থেকে খাও, মধ্যস্থল থেকে খেয়ো না।’ (তিরমিজি, ১৮০৫)

বিসমিল্লাহ বলতে ভুলে গেলে অন্য দোয়া পড়তেন: রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যখন তোমরা খানা খেতে শুরু করো, তখন আল্লাহর নাম স্মরণ করো। আর যদি আল্লাহর নাম স্মরণ করতে ভুলে যাও, তাহলে বিসমিল্লাহি আউয়ালুহু ওয়া আখিরুহু বলো।’ (রিয়াজুস সালেহিন, ৭২৯)

একাকী না খেয়ে সম্মিলিতভাবে খাবার খেতেন: রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা সম্মিলিতভাবে তোমাদের খাবার খাও এবং আল্লাহর নামে খাও; দেখবে তোমাদের খাদ্যে বরকত হবে।’ (আবু দাউদ, ৩৭৬৬; ইবনে মাজাহ, ৩২৮৬) তিনি আরও বলেছেন, ‘তোমরা একসাথে খাও এবং পৃথক হয়ে থেকো না। কারণ জামাতের সঙ্গে বরকত আছে।’ (আবু দাউদ, ৩৭৬৪; ইবনে মাজাহ, ৩২৮৭)

হাত ও আঙুল চেটে খেতেন: রাসুলুল্লাহ (সা.) খাওয়ার সময় সর্বদা হাত চেটে খেতেন। না চাটা পর্যন্ত কখনো হাত মুছতেন না। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা যখন খাবার গ্রহণ করো তখন আঙুল চেটে খাও। কারণ বরকত কোথায় রয়েছে, তা তোমরা জানো না।’ (ইবনে মাজাহ, ১৯১৪)

খাবারের লোকমা তুলে খেতেন: খাবার খাওয়ার সময় থালা-বাসন থেকে খাবারের লোকমা বা কিছু ভাত, রুটি কিংবা অন্য খাবার পড়ে যায়। রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর খাবার সময় যদি কোনো খাবার পড়ে যেত, তাহলে তিনি তা তুলে খেতেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের খাবার আহারকালে যদি লোকমা পড়ে যায়, তাহলে ময়লা ফেলে তা খাও। শয়তানের জন্য ফেলে রেখো না।’ (তিরমিজি,  ১৯১৫, ইবনে মাজাহ, ৩৪০৩)

হেলান দিয়ে খাবার খেতেন না: কোনো কিছুর ওপর হেলান দিয়ে খাবার খেতে নিষেধ করেছেন রাসুলুল্লাহ (সা.)। আবু হুজাইফা (রা.) বলেন, ‘আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর দরবারে ছিলাম। তিনি এক ব্যক্তিকে বলেন, আমি টেক লাগানো অবস্থায় (হেলান দিয়ে) কোনো কিছু খাই না।’ (বুখারি, ৫১৯০; তিরমিজি, ১৯৮৬)

খাবারের দোষ-ত্রুটি ধরতেন না: আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) কখনো খাবারের দোষ-ত্রুটি ধরতেন না। পছন্দ হলে খেতেন আর অপছন্দ হলে পরিত্যাগ করতেন।’ (বুখারি, ৫১৯৮; ইবনে মাজাহ, ৩৩৮২)

খাবারের গরম ভাব দূর করে খেতেন: আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘ভাপ না চলে যাওয়া পর্যন্ত কোনো খাবার খাওয়া উচিত নয়।’ (বাইহাকি, ১৯৭৮) তিনি আরও বলেছেন, ‘খাবারের বেশি গরম ভাপ দূর করে খেলে তাতে বরকত বেশি হয়।’ (মুসনাদে আহমাদ, ২৬৪১৮)

খাবারে ও পানিতে ফুঁ দিতেন না এবং পানির পাত্রে নিশ্বাস ফেলতেন না: ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) কখনো খাবারে ফুঁ দিতেন না। এমনকি ফুঁ দিতেন না কোনো কিছু পানকালেও।’ (ইবনে মাজাহ, ৩৪১৩)
পানির পাত্রে নিঃশ্বাস ফেলতেও নিষেধ করেছেন রাসুলুল্লাহ (সা.)। তিনি বলেছেন, ‘তোমরা (পান করার সময়) পাত্রে নিঃশ্বাস ফেলো না।’ (বুখারি, ১৫৪) আবু সাইদ খুদরি (রা.) বলেন, ‘খাবারে ফুঁ দিতে রাসুলুল্লাহ (সা.) নিষেধ করেছেন। এ ছাড়া পানির পাত্রে শ্বাস ছাড়তে নিষেধ করেছেন।’ (তিরমিজি, ১৮৮৭) আবু কাতাদা (রা.) বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যখন তোমাদের কেউ পানি পান করবে, পানির পাত্রে যেন শ্বাস না ছাড়ে।’ (তিরমিজি, ১৮৮৯)

অতিভোজন না করে পরিমিত খাবার খেতেন: রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘মানুষের ভরা পেটের চেয়ে খারাপ পাত্র আর নেই। আদম সন্তানের কোমর সোজা রাখার জন্য কয়েকটি লোকমাই যথেষ্ট। সুতরাং সে যদি তাতে তুষ্ট না হতে পারে, তাহলে (পেটকে তিন ভাগে ভাগ করে নেবে) এক-তৃতীয়াংশ খাদ্যের জন্য, এক-তৃতীয়াংশ পানির জন্য এবং অপর এক-তৃতীয়াংশ শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য ঠিক করে নেবে।’ (তিরমিজি, ২৩৮০; ইবনে মাজাহ, ৩৩৪৯) রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘মুসলিমরা খায় এক পেটে আর কাফেররা খায় সাত পেটে।’ (বুখারি, ৫৩৯৬)

খাবার শেষে কুলি করতেন ও হাত ধুয়ে নিতেন: রাসুলুল্লাহ (সা.) খাবার শেষে কুলি করতেন ও হাত ধুতেন। (বুখারি, ৫৩৯০; মুসনাদে আহমাদ, ২৭৪৮৬) আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘(খাবার পর) হাত না ধুয়ে যে হাতে তরকারি বা গোশতের ঝোল লেগে থাকাবস্থায় শয়ন করে; এর কারণে তার কোনো ক্ষতি হলে, সে যেন নিজেকেই এর জন্য দোষারোপ করে।’ (আবু দাউদ, ৩৮৫২; তিরমিজি, ১৮৬০)
খাবারের পাত্রও চেটে খেতেন: ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) আঙুল ও খাওয়ার পাত্র চেটে খাওয়ার নির্দেশ দিয়ে বলেছেন, তোমাদের জানা নেই, তোমাদের কোন খাবারের মধ্যে বরকত রয়েছে।’ (মুসলিম, ৫৪২০)

খাওয়ার শুরু ও শেষে দোয়া পড়তেন: রাসুলুল্লাহ (সা.) খাওয়ার শুরু ও শেষে দোয়া পড়তেন। খাওয়ার শুরুতে যে দোয়াটি পড়তেন তা হলো—বাংলা উচ্চারণ: বিসমিল্লাহি ওয়া আলা বারাকাতিল্লাহ। বাংলা অর্থ: আল্লাহর নামে ও তাঁর বরকতের প্রত্যাশায়। (মুসতাদরাকে হাকিম, ৭১৬৩) আর খাওয়ার শেষে যে দোয়াটি পড়তেন তা হলো—বাংলা উচ্চারণ: আলহামদুলিল্লাহিল্লাজি আতয়ামানা ওয়া সাকানা ওয়া জায়ালানা মিনাল মুসলিমিন। বাংলা অর্থ: সব প্রশংসা ওই আল্লাহর, যিনি আমাদের পানাহার করিয়েছেন এবং মুসলমান বানিয়েছেন। (আবু দাউদ, ৩৮৫০)

দস্তরখানা উঠানোর দোয়া পড়তেন: খাবার শেষে দস্তরখানা ও থালা-বাসন উঠানোর সময় রাসুলুল্লাহ (সা.) এই দোয়াটি পড়তেন। বাংলা উচ্চারণ: আলহামদুলিল্লাহি হামদান কাসিরান তাইয়িবান মুবারাকান ফিহি। গাইরা মাকফিইন ওয়ালা মুয়াদদাইন ওয়ালা মুসতাগনা আনহু রব্বানা। বাংলা অর্থ: হে আল্লাহ, সমস্ত প্রশংসা তোমার। অধিক প্রশংসা তোমার জন্য, যা পবিত্র ও বরকতময়। হে প্রভু, তোমার অনুগ্রহ থেকে মুখ ফেরানো যায় না। এর অন্বেষণ ত্যাগ করা যায় না এবং এর প্রয়োজন থেকে মুক্ত থাকা যায় না। (বুখারি, ৫৪৫৮) 

লেখক: আলেম, গবেষক ও সাংবাদিক