জিন আল্লাহর বিস্ময়কর। পৃথিবীতে মানুষ সৃষ্টির আগে জিনদের বসবাস ছিল। তারা বেশ শক্তিশালী। খুব দ্রুত চলাফেরা করতে পারে। ভারি জিনিসপত্র খুব সহজে স্থানান্তরিত করতে পারে। ইফরিত জিন সুলাইমান (সা.)-কে বলেছিল, তিনি বৈঠক শেষ হওয়ার আগেই ইয়েমেনের রানির সিংহাসন ফিলিস্তিনের বাইতুল মাকদিসে নিয়ে আসতে পারবে। অথচ প্রযুক্তির উৎকর্ষের এই সময়েও মানুষের জন্য এ কাজ শুধু দুষ্করই নয়; বরং অসম্ভব। পবিত্র কোরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘ইফরিত (সবচেয়ে শক্তিশালী জিন) বলল, আপনি বৈঠক শেষ করার আগেই আমি তা নিয়ে আসব। আর নিশ্চয় আমি এ কাজে শক্তিশালী ও বিশ্বস্ত।’ (সুরা নামল, আয়াত: ৩৯)
তবে সেই সময় যা ঘটেছিল তা মানবেতিহাসের এক মহাবিস্ময়। সুলাইমান (আ.)-এর বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন একজন আলেম (জ্ঞানী)। যার কাছে ছিল আল্লাহর কিতাবের জ্ঞান। তিনি সুলাইমান (আ.)-কে বললেন, এক পলক পড়ার আগেই আমি রানি বিলকিসের সিংহাসন নিয়ে আসতে পারব। সুরা নামলে আল্লাহতায়ালা সেই ঘটনা তুলে ধরেছেন, “যার কাছে কিতাবের জ্ঞান ছিল, সে বলল, ‘আপনার পলক ফেলার আগেই আমি তা এনে দিতে পারব।’ ওই ব্যক্তি যখন সিংহাসন তার সামনে উপস্থিত দেখল, সে বলল, ‘এটা আমার রবের অনুগ্রহ, যাতে তিনি আমাকে পরীক্ষা করতে পারেন, আমি কৃতজ্ঞ না অকৃতজ্ঞ; যে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে, সে তা করে তার নিজের কল্যাণের জন্য এবং যে অকৃতজ্ঞ (সে যেন জেনে রাখে) আমার রব অভাবমুক্ত, মহানুভব।” (সুরা নামল, আয়াত: ৪০)
জিনদের দ্রুতগতিতে চলার ক্ষমতা শুধু এই পৃথিবীর আসমান ও জমিনেই সীমাবদ্ধ। পাখার সাহায্যে তারা মহাকাশে ভ্রমণ করতে পারলেও পৃথিবীর আসমান অতিক্রম করতে পারে না। আল্লাহ তাদেরকে মহাকাশ ভ্রমণে মানুষের থেকে অগ্রগামী করেছেন। জিনেরা পৃথিবীতে বসবাসের শুরু থেকেই আসমানে যেতে পারত। আল্লাহতায়ালা যখন কোনো হুকুম করতেন, পর্যায়ক্রমে সেই খবর এসে পৌঁছাত প্রথম আসমানের ফেরেশতাদের কাছে। তারা সেটা আলোচনা করত। জিন-শয়তানেরা সেই খবর শোনার জন্য তারা প্রথম আসমানে গিয়ে আড়ি পেতে থাকত। আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, (আল্লাহর রাসুল নবুওয়ত লাভের পর) জিন-শয়তানেরা আসমানের খবর জানতে পারে না। শুনতে গেলে তাদেরকে জ্বলন্ত উল্কা নিক্ষেপ করা হয়। ইবলিস তাদের জিজ্ঞাসা করল, কী হয়েছে তোমাদের? তারা বলল, আমাদেরকে আর আসমানের খবর শুনতে দেওয়া হয় না; বরং আগুনের গোলা নিক্ষেপ করা হয়। ইবলিস বলে,‘নিশ্চয় পৃথিবীতে কিছু একটা ঘটেছে। সে তার দলবলকে আদেশ দেয় পৃথিবীর পূর্ব-পশ্চিমের আনাচে-কানাচে তালাশ করো এবং খুঁজে বের করো সেই ঘটনা কী? খুঁজতে খুঁজতে যখন তারা আরবের নিম্নাঞ্চল নাখলার দিকে দৃষ্টিপাত করল, যেখানে নবিজি (সা.) তার সাহাবিদের সঙ্গে নিয়ে উকাজ মেলার উদ্দেশে বের হয়েছিলেন। পথিমধ্যে নবিজি (সা.) ফজরের নামাজ আদায় করছিলেন। জিনেরা মনোযোগসহকারে কোরআন তেলাওয়াত শুনে বলল, ‘এটাই আমাদেরকে আসমানের বার্তা থেকে বিরত রেখেছে।’ অতঃপর তারা তাদের গোত্রের কাছে ফিরে গিয়ে বলল, ‘নিশ্চয় আমরা এক বিস্ময়কর কোরআন শুনেছি, যা সঠিক পথ প্রদর্শন করে, তাই আমরা বিশ্বাস স্থাপন করেছি। আর আমরা কখনোই আমাদের রবের সঙ্গে কাউকে অংশীদার সাব্যস্ত করব না।’ (সুরা জিন, আয়াত: ১-২)
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো জ্যোতিষী বা গণকের কাছে যায়। এবং তারা যা বলে তা বিশ্বাস যে করে। নিশ্চয় সে আমি যে (বিধিবিধান) নিয়ে এসেছি তা অস্বীকার করল।’ (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস: ১৫৩৬)
লেখক: আলেম, গবেষক ও সাংবাদিক