সুগন্ধি উপহার পারস্পরিক সম্প্রীতি বাড়ায় । খবরের কাগজ
ঢাকা ২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, বৃহস্পতিবার, ১৬ মে ২০২৪

সুগন্ধি উপহার পারস্পরিক সম্প্রীতি বাড়ায়

প্রকাশ: ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১০:১৯ এএম
সুগন্ধি উপহার পারস্পরিক সম্প্রীতি বাড়ায়
সুগন্ধির ছবি। ইন্টারনেট

সুগন্ধির প্রতি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর প্রচণ্ড অনুরাগ ছিল। তিনি নিয়মিত আতর ব্যবহার করতেন। আতর ও সুগন্ধি খুব পছন্দ করতেন তিনি। আনাস ইবনে মালেক (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘এ দুনিয়ায় নারী ও সুগন্ধি আমার জন্য পছন্দনীয় করা হয়েছে। আর নামাজে আমার চোখের শীতলতা দেওয়া হয়েছে।’ (নাসায়ি, হাদিস: ৮৮৮৭)

রাসুলুল্লাহ (সা.) সুগন্ধি উপহার দিতেও পছন্দ করতেন। আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা পরস্পর উপহার প্রদান করো, তা হলে পারস্পরিক সম্প্রীতি বাড়বে।’ (মুসনাদু আবি ইয়ালা, হাদিস: ৬১৪৮)

আর এ দুটো সুন্নাহ এক সঙ্গে আদায় করে রাসুলুল্লাহ (সা.) নতুন আরেকটি সুন্নাহ প্রতিষ্ঠা করেছেন। আর সেটি হলো সুগন্ধি উপহার দেওয়া। আনাস ইবনে মালেক (রা.)-কে কেউ সুগন্ধি হাদিয়া দিলে তিনি সুগন্ধি ফিরিয়ে দিতেন না। তিনি বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) সুগন্ধি প্রত্যাখ্যান করতেন না।’ (বুখারি, হাদিস: ২৪৪৩)

রাসুলুল্লাহ (সা.) আরও বলেছেন, ‘কারও কাছে কোনো সুগন্ধি পেশ করা হলে সে যেন তা প্রত্যাখ্যান না করে। কেননা তা বহন করতে হাল্কা এবং ঘ্রাণে উত্তম।’ (মুসলিম, হাদিস: ২২৫৩)

এই হাদিসে ব্যবহৃত শব্দটি হলো ‘রাইহান’। হাদিসে রাইহান দ্বারা সাধারণত সুগন্ধি উদ্দেশ্য হয়। মুহাদ্দিসরা এমনটিই ব্যাখ্যা করেছেন। এ বিষয়টি আরেকটি হাদিসে ফুটে উঠেছে এভাবে, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘কাউকে সুগন্ধি দেওয়া হলে সে যেন তা ফিরিয়ে না দেয়। কারণ তা ঘ্রাণে উৎকৃষ্ট এবং বহন করতে হাল্কা।’ (আবু দাউদ, হাদিস: ৪১৭২)

রাসুলুল্লাহ (সা.) সুগন্ধি উপহারে সাহাবিদের তাগিদ দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘সৎসঙ্গী ও অসৎসঙ্গীর উদাহরণ মেশক বিক্রেতা ও কর্মকারের হাপরের মতো। সুগন্ধি বিক্রেতার কাছে গেলে তুমি রেহাই পাবে না। হয় তুমি সুগন্ধি খরিদ করবে, না হয় তার সুঘ্রাণ পাবে। আর কর্মকারের কাছে গেলে তার হাপর হয় তোমার ঘর অথবা কাপড় পুড়িয়ে দেবে, না হয় তুমি তার দুর্গন্ধ পাবে।’ (বুখারি, হাদিস: ৫২১৪)

এই হাদিসেও সুগন্ধি উপহার দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। সুগন্ধি বলতে আতর, মেশকসহ সুঘ্রাণ ছড়ানো যাবতীয় উপাদান উদ্দেশ্য। তাই এই সুন্নাহ পালনে মুসলমানদের সচেতন হতে হবে।

রাসুলুল্লাহ (সা.) পুরুষ ও নারীদের সুগন্ধির মধ্যে পার্থক্য করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘পুরুষ এমন সুগন্ধি ব্যবহার করবে, যার মধ্যে সুবাস থাকবে, কিন্তু কোনো রং থাকবে না। আর নারী এমন সুগন্ধি ব্যবহার করবে, যার মধ্যে রং থাকবে, কিন্তু সুবাস থাকবে না।’ (তিরমিজি, হাদিস : ২৭১১) তবে নারীদের জন্য ঘরে যেকোনো ধরনের সুগন্ধি ব্যবহার করা বৈধ। এতে কোনো অসুবিধা নেই।

লেখক: আলেম ও সাংবাদিক

 

স্ত্রীকে সুখী রাখা রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সুন্নত

প্রকাশ: ১৫ মে ২০২৪, ০৭:০০ পিএম
স্ত্রীকে সুখী রাখা রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সুন্নত
মুসলিম স্বামী-স্ত্রীর ছবি। এআই

রাসুলুল্লাহ (সা.) কখনো আলস্য সময় কাটাননি। সব সময় ব্যস্ত থাকতেন। রাষ্ট্র পরিচালনা থেকে শুরু করে সাহাবিদের দ্বীন শেখানো, দ্বীনের প্রচার-প্রসার, বিভিন্ন কাজ, নানা পরিকল্পনা ও চিন্তাভাবনা, যুদ্ধ ইত্যাদি কল্যাণকর কাজে নিয়োজিত থাকতেন। এসবের মধ্যেও নিজের ঘর ও দাম্পত্য জীবনকে যথেষ্ট পরিমাণ গুরুত্ব দিতেন। স্ত্রীদের আত্মিক প্রশান্তি দিতে মনোযোগী থাকতেন। সচেষ্ট থাকতেন স্ত্রীদের আনন্দ দিতে এবং তাদের সুখী রাখতে। তাদের সঙ্গে খেলাধুলা করতেন। আয়েশা (রা.) বলেন, “একবার তিনি এক সফরে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সঙ্গে ছিলেন। তখন তার বয়স ছিল অল্প। তিনি তাঁর সঙ্গীদের বললেন, ‘তোমরা সামনে এগিয়ে যাও।’ এরপর (আমাকে) বললেন, ‘এসো, তোমার সঙ্গে প্রতিযোগিতা করব।’ এরপর আমি তাঁর সঙ্গে দৌড় প্রতিযোগিতা করে তাঁর আগে চলে গেলাম। পরবর্তী সময় আবার তাঁর সঙ্গে সফরে গেলাম। তখন তিনি সঙ্গীদের বললেন, ‘তোমরা সামনে এগোতে থাকো।’ এরপর বললেন, ‘এসো, তোমার সঙ্গে প্রতিযোগিতা করব।’ আমি আগের প্রতিযোগিতার কথা ভুলে গিয়েছিলাম। আর তখন আমার শরীর কিছুটা ভুলকায় হয়ে গিয়েছিল। আমি বললাম, ‘হে আল্লাহর রাসুল, এই অবস্থায় কী করে আমি আপনার সঙ্গে প্রতিযোগিতা করব?’ তিনি বললেন, ‘তুমি পারবে।’ এরপর আমি তার সঙ্গে প্রতিযোগিতা করলাম। দৌড়ে তিনি আমার আগে চলে গেলেন। এরপর বললেন, ‘এই জয় আগের পরাজয়ের বদলা।” (আস-সুনানুল কুবরা লিন-নাসায়ি, হাদিস: ৮৯৪৫)। অপর বর্ণনায় আছে, “এরপর আমি তার সঙ্গে প্রতিযোগিতা করলাম। তাতে তিনি আমার আগে চলে গেলেন। এরপর তিনি হাসতে হাসতে বললেন, ‘এটি ওই পরাজয়ের শোধ।” (আল-মুসনাদ লিল ইমাম আহমাদ, হাদিস: ২৬৩২০)

রাসুলুল্লাহ (সা.) স্ত্রীদের সঙ্গে আনন্দ বিনোদন করতেন। তাদের মন ভালো হয়ে যায়, এমন আচরণ করতেন। এখানে হাদিসের একটি ঘটনা বলা যেতে পারে। আয়েশা (রা.) বলেন, “একবার আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর জন্য গোশত, ঝোল ও রুটি মেশানো খাবার তৈরি করে তাঁর কাছে এলাম। এসে সাওদাকে বললাম, তুমি খাও। রাসুলুল্লাহ (সা.) তখন আমার ও তার মাঝখানে অবস্থান করছিলেন। কিন্তু সাওদা খেতে চাইল না। আমি বললাম, অবশ্যই তুমি খাবে, না হয় আমি তোমার চেহারা লেপ্টে দেব। তারপরও সে খেতে চাইল না। এরপর আমি খাবারের পাত্রে হাত ঢুকিয়ে (হাতে ঝোল মাখিয়ে) সাওদার চেহারায় লেপ্টে দিলাম। তা দেখে রাসুলুল্লাহ (সা.) হাসলেন। এরপর তাঁর উরু সাওদার জন্য বিছিয়ে দিলেন এবং সাওদাকে বললেন, ‘এবার তুমি ওর চেহারা লেপ্টে দাও। তা শুনে সেও আমার চেহারা লেপ্টে দিল। আবারও রাসুলুল্লাহ (সা.) হাসলেন। এমন সময় উমর (রা.) আবদুল্লাহ... আবদুল্লাহ...’ ডাকতে ডাকতে এদিক দিয়ে যাচ্ছিলেন। উমর হয়তো এখানে প্রবেশ করবেন ভেবে রাসুলুল্লাহ (সা.) আমাদের দুজনকে বললেন, ‘তোমরা যাও। তোমাদের চেহারা ধুয়ে নাও।’ আয়েশা (রা.) বলেন, ‘উমর (রা.)-এর ডাক শুনে সেদিন রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর ভয় পাওয়ার পর থেকে আমিও উমরকে ভয় পাই।” (আস সুনানুল কুবরা লিন-নাসায়ি, হাদিস: ৮৯১৭; মুসনাদে আবু ইয়ালা, হাদিস: ৪৪৭৬)

স্ত্রীদের আনন্দ বিনোদনে রাসুলুল্লাহ (সা.) কখনো দ্বিমত প্রকাশ করেননি। রাগ করেননি; বরং তাদের আনন্দ বিনোদনের সুযোগ করে দিতেন। আয়েশা (রা.) বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সামনেই আমি পুতুল বানিয়ে খেলতাম। আমার বান্ধবীরাও আমার সঙ্গে খেলাধুলা করত। রাসুলুল্লাহ (সা.) ঘরে প্রবেশ করলে তারা দৌড়ে পালাত। তখন তিনি তাদের ডেকে আমার কাছে পাঠিয়ে দিতেন এবং তারা আমার সঙ্গে খেলা করত।’ (বুখারি, হাদিস: ৮৭৭৯)। মনে রাখতে হবে, আয়েশা (রা.) যে ধরনের পুতুল দিয়ে খেলতেন, তা বর্তমানে তৈরি করা পুতুলের মতো ছিল না। তা ছিল সাধারণ কাপড় ও তুলা দিয়ে তৈরি, যার বিশেষ কোনো আকৃতি ছিল না। অথবা তা ছিল ছবি তৈরির ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা আসার আগের ঘটনা।

রাসুলুল্লাহ (সা.) পারিবারিক পরিবেশকে সব সময় আনন্দমুখর রাখতে চেষ্টা করতেন। তিনি পরিবার তথা স্ত্রীদের গুরুত্ব দিতেন। তিনি ছিলেন স্ত্রীদের কাছে উত্তম স্বামী। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তি উত্তম যে নিজের পরিবারের কাছে উত্তম। আর আমি তোমাদের চেয়ে আমার পরিবারের কাছে অধিক উত্তম।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস: ১৯৭৭)

লেখক: আলেম, গবেষক ও সাংবাদিক

 

ঋণের কিছু অংশ ক্ষমা করলে যে সওয়াব হয়

প্রকাশ: ১৫ মে ২০২৪, ১০:৪৫ এএম
ঋণের কিছু অংশ ক্ষমা করলে যে সওয়াব হয়
প্রতীকী ছবি। ইন্টারনেট

ইসলামের দৃষ্টিতে ঋণ মূলত একটি আমানত। আর এ আমানত রক্ষায় পবিত্র কোরআনে নির্দেশনা রয়েছে। আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয় আল্লাহতায়ালা তোমাদের নির্দেশ দিচ্ছেন, যেন তোমরা আমানত তার প্রাপককে দিয়ে দাও।’ (সুরা নিসা, আয়াত: ৫৮) 

ঋণ মানুষের সবচেয়ে বড় বোঝা। এ বোঝা শুধু দুনিয়াতেই নয়; আখেরাতেও টানতে হবে। আবু কাতাদা (রা.) বলেন, “একবার রাসুলুল্লাহ (সা.) তাদের মাঝে দাঁড়িয়ে বর্ণনা করলেন, ‘আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ এবং আল্লাহর প্রতি ঈমান হচ্ছে সর্বোত্তম আমল।’ তখন এক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে বলল, ‘আপনি কি মনে করেন, আমি যদি আল্লাহর রাস্তায় নিহত হই, তবে আমার সকল পাপ মোচন হয়ে যাবে?’ তখন তিনি তাকে বললেন, ‘হ্যাঁ, যদি তুমি ধৈর্যশীল হও, প্রতিদান লাভের আশায় পৃষ্ঠপ্রদর্শন না করে শত্রুর মুখোমুখি অবস্থায় নিহত হও।’ তারপর রাসুলুল্লাহ (সা.) জিজ্ঞেস করলেন, ‘তুমি কী বললে?’ তখন সে (আবার) বলল, ‘আপনি কি মনে করেন, আমি যদি আল্লাহর রাস্তায় নিহত হই, তাহলে আমার সকল গুনাহের কাফফারা হয়ে যাবে?’ তখন রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, ‘হ্যাঁ, তুমি যদি ধৈর্যধারণকারী হও, প্রতিদানের আশায় পৃষ্ঠপ্রদর্শন না করে শত্রুর মুখোমুখি অবস্থায় নিহত হও; তবে ঋণের কথা আলাদা। কারণ, জিবরাইল (আ.) আমাকে এ কথা বলেছেন।” (মুসলিম, হাদিস: ১৮৮৫)

ঋণগ্রস্ত হওয়া ভালো নয়। তবে ঋণগ্রস্ত হলে দ্রুতই তা পরিশোধ করতে হবে। রাসুলুল্লাহ (সা.) মৃত্যুর আগে যাবতীয় ঋণ পরিশোধ করার নির্দেশ দিয়েছেন। তবে দরিদ্র হওয়ার কারণে অনেক সময় ঋণ পরিশোধ করা কঠিন হয়ে পড়ে। সে ক্ষেত্রে ঋণের কিছু অংশ মাফ করে দেওয়া উত্তম কাজ, সওয়াবের কাজ। সুন্নাহও বটে। যেন ঋণ পরিশোধ করা তার জন্য সহজ হয়। কাব (রা.) মসজিদের ভেতরে ইবনে আবি হাদরাদ (রা.)-এর কাছে তার পাওনা ঋণের তাগাদা দিলেন। দুজনের মধ্যে এ নিয়ে বেশ উচ্চবাচ্য হলো। এমনকি তাদের কথার আওয়াজ শুনে রাসুলুল্লাহ (সা.) ঘর থেকে পর্দা সরিয়ে তাদের কাছে এলেন। এরপর ডাক দিলেন, ‘হে কাব।’ তিনি উত্তর দিলেন, ‘লাব্বাইক ইয়া রাসুলাল্লাহ।’ রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, ‘তোমার পাওনা ঋণ থেকে এতটুকু ছেড়ে দাও।’ হাতে ইশারা করে বোঝালেন। অর্থাৎ অর্ধেক পরিমাণ। তখন কাব (রা.) বললেন, ‘আমি ছেড়ে দিলাম হে আল্লাহর রাসুল।’ তখন তিনি ইবনে আবি হাদরা (রা.)কে বললেন, ‘যাও এবার বাকিটা পরিশোধ করে দাও।” (বুখারি, হাদিস: ৪৫৫)

এ কাজটি অনেকের কাছে একটু কষ্টকর মনে হবে। কারণ, তা করতে গেলে ঋণদাতার অধিকার লাঘব হয়। কিন্তু ঋণগ্রহিতা যদি বাস্তবেই ঋণ পরিশোধে অক্ষম হয়ে পড়ে, তখনই এই সুন্নাহ অবলম্বন করা উচিত। 

আজকাল অনেক ব্যাংকও ঋণগ্রস্তদের কিছু ঋণ মাফ করে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) পনেরো শ বছর আগে এ কাজটি করেছেন। শুধু তাই নয়, ঋণের সামান্য অংশ মাফ করছে না দেখে অনেক ঋণদাতার ওপর তিনি ক্ষোভও প্রকাশ করেছেন। আয়েশা (রা.) বলেন, “রাসুলুল্লাহ (সা.) একবার দরজার কাছে বিবাদের আওয়াজ শুনতে পেলেন; দুজনই উঁচু আওয়াজে কথা বলছিল। একজন আরেকজনের কাছে ঋণের কিছু অংশ মাফ করে দেওয়ার, সহানুভূতি দেখানোর (কিছু সময় দেওয়ার) অনুরোধ করছিল। আর অপর ব্যক্তি বলছিল, ‘না, আল্লাহর শপথ। আমি তা করব না।’ রাসুলুল্লাহ (সা.) বের হয়ে তাদের কাছে এসে বললেন, ‘সৎ কাজ করবে না বলে যে আল্লাহর নামে শপথ করেছে সে ব্যক্তিটি কোথায়?’ সে বলল, ‘হে আল্লাহর রাসুল, আমি।’ সে যা ভালো মনে করে তার জন্য তাই হবে।” (বুখারি, হাদিস: ২৫৫৮) অর্থাৎ সেই সাহাবি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সুপারিশ মেনে নিয়ে ঋণগ্রস্তের চাহিদা অনুযায়ী কিছু অংশ মাফ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। ঋণের কিছু অংশ মাফ করে দেওয়ার মাধ্যমে সওয়াব পাওয়া যায়। নবিজি (সা.)-এর সুন্নতের ওপর আমল হয়।  

লেখক: আলেম ও সাংবাদিক

 

কোনো কিছু বারবার চাওয়া যাবে কি?

প্রকাশ: ১৪ মে ২০২৪, ০৭:০০ পিএম
কোনো কিছু বারবার চাওয়া যাবে কি?
প্রতীকী ছবি

রাসুলুল্লাহ (সা.) সাহাবিদের উপার্জনের প্রতি গুরুত্বারোপ করতেন। এমনকি কিভাবে তারা সসম্মানে উপার্জন করতে পারে, সে ব্যাপারে দিকনির্দেশনা দিতেন। প্রয়োজনে লাকড়ি বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করার তাগিদ দিতেন, যা তখনকার যুগে সবচেয়ে সহজ মাধ্যম ছিল। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘হে লোকসকল, তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং উত্তম পন্থায় জীবিকা অন্বেষণ করো। কেননা কোনো ব্যক্তিই তার জন্য নির্ধারিত রিজিক পূর্ণরূপে না পাওয়া পর্যন্ত মৃত্যুবরণ করবে না, যদিও তার রিজিক প্রাপ্তিতে কিছুটা বিলম্ব হয়। আর তাই তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং উত্তম পন্থায় জীবিকা অন্বেষণ করো, যা হালাল তাই গ্রহণ করো এবং যা হারাম তা বর্জন করো।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস: ২১৪৪)

কেউ কারও কাছে হাত পাতবে; রাসুলুল্লাহ (সা.) এটা পছন্দ করতেন না। তিনি চান, মানুষ নিজে উপার্জন করুক। সে আত্মবিশ্বাসী হোক। তার ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়, মানহানি ঘটে, এমন কাজ না করুক। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা মানুষের কাছে (সাহায্যের জন্য) হাত বাড়িয়ো না। আল্লাহর শপথ! তোমাদের কেউ যদি আমার কাছে কিছু চায় এবং আমার অপছন্দ হওয়া সত্ত্বেও তার সে প্রার্থনার কারণে আমি তাকে দিয়ে দিই, আমার এ দানে তার জন্য কোনো বরকত হবে না।’ (মুসলিম, হাদিস: ১০৩৮)

যেসব দরিদ্র মুমিন মানুষের কাছে হাত বাড়ায় না; বরং নিজের সম্মান রক্ষা করে চলে, তাদের প্রশংসা করে আল্লাহ বলেন, ‘তারা যেহেতু (অতি সংযমী হওয়ার কারণে কারও কাছে) চায় না, তাই অনবগত ব্যক্তি তাদের বিত্তবান মনে করে। তুমি তাদের চেহারার আলামত দ্বারা তাদেরকে (অর্থাৎ তাদের অভ্যন্তরীণ অবস্থা) চিনতে পারবে। কিন্তু তারা মানুষের কাছে নাছোড় হয়ে চায় না।’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ২৭৩)

কারও কাছে কোনো কিছু বারবার চাইতে থাকলে বরকত নষ্ট হয়ে যায়। হাকিম ইবনে হিজাম (রা.) বলেন, “আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে কিছু চাইলাম, তিনি আমাকে দিলেন। আবার চাইলাম, তিনি আবার দিলেন। আবার চাইলাম, তিনি আবার দিলেন। তারপর বললেন, ‘হে হাকিম, এই সম্পদ আকর্ষণীয় ও সুস্বাদু। যে ব্যক্তি প্রশান্ত অন্তরে (বিনা লোভে) তা গ্রহণ করে, তার জন্য তা বরকতময় হয়। আর যে ব্যক্তি অন্তরে লোভ নিয়ে তা গ্রহণ করে, তার জন্য তা বরকতময় করা হয় না। সে এমন ব্যক্তির মতো, যে খায় কিন্তু তার ক্ষুধা মেটে না। ওপরের হাত নিচের হাত থেকে উত্তম।” (বুখারি, হাদিস: ১৪০৩)



 

স্বজনহারা মানুষকে সান্ত্বনা দেবেন যেভাবে

প্রকাশ: ১৪ মে ২০২৪, ১২:৪৯ পিএম
স্বজনহারা মানুষকে সান্ত্বনা দেবেন যেভাবে
ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত ভারাক্রান্ত মানুষকে সান্ত্বনা দেওয়ার ছবি।

মুসলমান ভাই ভাই। এ সম্পর্কে কোনো কৃত্রিমতা নেই, কোনো দোটান নেই। এ সম্পর্ক মহান আল্লাহ মুসলমানদের মধ্যে করে দিয়েছেন। পবিত্র কোরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘মুমিনরা পরস্পরের ভাই ভাই।’ (সুরা হুজুরাত, আয়াত: ১০)। এ সম্পর্কের মায়া ও টানে মুসলমান পরস্পরের সুখে আনন্দিত হয়। দুঃখে কাঁদে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘নিশ্চয় মুমিনরা পরস্পর প্রাচীরের মতো, যা একটি অপরটিকে মজবুত করে। এই বলে তিনি তাঁর আঙুলগুলো পরস্পর মিলিয়ে দেখান।’ (বুখারি, হাদিস: ৫৬৮০)

কোনো মুসলিমের আত্মীয় মারা গেলে রাসুলুল্লাহ (সা.) তাকে সান্ত্বনা দিতেন। তাকে বুঝাতেন। তার কষ্ট লাঘবের চেষ্টা করতেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে তার মুমিন ভাইয়ের বিপদে সান্ত্বনা দেবে, আল্লাহতায়ালা কেয়ামতের দিন তাকে সম্মানের পোশাক পরাবেন।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস: ১৬০১)

রাসুলুল্লাহ (সা.) আরও বলেছেন, ‘যে কোনো বিপন্নকে সান্ত্বনা দেয়, সে তার সমান প্রতিদান পায়। ’(তিরমিজি, হাদিস: ১০৭৩)

রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সান্ত্বনার ভাষা ছিল খুবই চমৎকার। তিনি এমন কথা বলে সান্ত্বনা দেন, যা ব্যক্তির দুনিয়া-আখেরাতে কল্যাণ সুনিশ্চিত করত। উসামা ইবনে জায়েদ (রা.) বলেন, “রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর মেয়ে (জয়নব) তাঁর খেদমতে লোক পাঠিয়ে বললেন, ‘আমার এক ছেলে মুমূর্ষু অবস্থায়, তাই আপনি আমাদের এখানে আসুন।’ তিনি বলে পাঠালেন, ‘(তাকে) সালাম দেবে এবং বলবে, সবকিছু আল্লাহরই অধিকারে যা-কিছু তিনি নিয়ে যান। আর তাঁরই অধিকারে যা-কিছু তিনি দান করেন। তাঁর কাছে সবকিছুর একটি নির্দিষ্ট সময় আছে। সুতরাং সে যেন ধৈর্যধারণ করে এবং প্রতিদানের আশায় থাকে।’ তখন তিনি তাঁর কাছে শপথ দিয়ে পাঠালেন, তিনি যেন অবশ্যই আসেন। তখন তিনি দাঁড়ালেন এবং তাঁর সঙ্গে ছিলেন সাদ ইবনে উবাদা, মুয়াজ ইবনে জাবাল, উবাই ইবনে কাব, জায়েদ ইবনে সাবেত (রা.) এবং আরও কয়েকজন। তখন শিশুটিকে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে তুলে দেওয়া হলো। তখন তিনি মৃত্যুযন্ত্রণায় ছটফট করছিল। বর্ণনাকারী বলেন, ‘আমার ধারণা, তিনি এ বলেছিলেন, যেন তার শ্বাসে মশকের মতো (আওয়াজ হচ্ছিল)। আর রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর দুচোখ বেয়ে অশ্রু ঝরছিল। সাদ (রা.) জিজ্ঞেস করলেন, ‘ইয়া রাসুলাল্লাহ, এ কী?’ তিনি বললেন, ‘এ হচ্ছে রহমত, যা আল্লাহ তাঁর বান্দার অন্তরে আমানত রেখেছেন। আর আল্লাহ তো তাঁর দয়ালু বান্দাদের প্রতিই দয়া করেন।” (বুখারি, হাদিস: ১২২৪) 

রাসুলুল্লাহ (সা.) মৃতের স্বজনদের জন্য খাবার পাঠাতেন। আবদুল্লাহ ইবনে জাফর (রা.) বলেন, “(আমার পিতা) জাফর (রা.)-এর শাহাদতের সংবাদ যখন পৌঁছে, তখন রাসুলুল্লাহ (সা.) ঘোষণা দিলেন, ‘জাফরের পরিবারের জন্য খাবার তৈরি করো; কারণ, তাদের এমন খবর এসেছে, যা নিয়ে তারা ব্যতিব্যস্ত রয়েছে।” (তিরমিজি, হাদিস: ৯৯৮) 

লেখক: আলেম ও সাংবাদিক

আপনার ঘরে কি মসজিদ আছে?

প্রকাশ: ১৩ মে ২০২৪, ০৭:০০ পিএম
আপনার ঘরে কি মসজিদ আছে?
কুল শরিফ জামে মসজিদ, কাজান, রাশিয়া। ইন্টারনেট

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য মসজিদ নির্মাণ করবে, মহান আল্লাহ তার জন্য জান্নাতে অনুরূপ ঘর তৈরি করে দেবেন।’ (বুখারি, হাদিস : ৪৫০)

ঘরোয়া মসজিদ সম্পূর্ণ ঘর থেকে আলাদা হতে হবে অথবা সম্পূর্ণ পৃথক একটি কক্ষ তার জন্য নির্দিষ্ট করতে হবে এমনটি জরুরি নয়; বরং উদ্দেশ্য হলো ঘরের একটি জায়গা নামাজের জন্য নির্দিষ্ট রাখা। নানা আয়োজনে সেই জায়গা মসজিদের রূপ দেওয়া। এই সুন্নতের কথা একাধিক হাদিসে এসেছে। আয়েশা (রা.) বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) ঘরে ঘরে মসজিদ নির্মাণের নির্দেশ দিয়েছেন এবং তা সুগন্ধিযুক্ত ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে বলেছেন।’ (আবু দাউদ, হাদিস: ৪৫৫)

সামুরা (রা.) নিজের ছেলেকে লেখেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) আমাদের ঘরে ঘরে মসজিদ নির্মাণের নির্দেশ দিয়েছেন এবং তা ঠিকভাবে তৈরি করে পরিষ্কার রাখারও নির্দেশ দিয়েছেন।’ (আবু দাউদ, হাদিস: ৪৫৬)

হাদিসের ব্যাখ্যায় কিছু আলেম বলেছেন, বসতবাড়িতে নয়; বরং এখানে প্রতিটি গোত্র বা এলাকায় মসজিদ নির্মাণ করা উদ্দেশ্য। তবে অন্য আলেমরা বলেন, এখানে ব্যক্তিগত ঘরে মসজিদ তৈরি উদ্দেশ্য। যেখানে পরিবারের সদস্যরা নফল এবং তাহাজ্জুদ নামাজ পড়বে। বিশেষভাবে নারীরা সেখানে নিয়মিত নামাজ আদায় করবে। এমনকি পুরুষরা কখনো মসজিদে যেতে অপারগ হলে, তারাও সেখানে নামাজ আদায় করবে।

ইতবান ইবনে মালেক আনসারি (রা.) বলেন, “আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে গিয়ে বললাম, আমার দৃষ্টিশক্তি কমে গেছে এবং আমার বাড়ি থেকে স্বগোত্রেীয় মসজিদ পর্যন্ত যেতে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে জলাবদ্ধতা। আমার একান্ত ইচ্ছা আপনি আমার বাড়িতে এসে এক জায়গায় নামাজ আদায় করবেন, যেন আমি সে জায়গাটুকু নামাজ আদায়ের জন্য নির্দিষ্ট করে নিতে পারি।’ রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, ‘ইনশাআল্লাহ, আমি তা করব।’ পরদিন রোদের প্রখরতা বাড়ার পর রাসুলুল্লাহ (সা.) এবং আবু বকর (রা.) আমার বাড়িতে এলেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) প্রবেশের অনুমতি চাইলে আমি তাঁকে অনুমতি দিলাম। তিনি না বসেই বললেন, ‘আমার নামাজ আদায়ের জন্য তুমি তোমার ঘরের কোন স্থানটি পছন্দ করো?’ তিনি পছন্দমতো একটি জায়গা রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে নামাজ আদায়ের জন্য ইশারা করে দেখালেন। তারপর তিনি দাঁড়ালেন। আমরাও তাঁর পেছনে কাতারবন্দি হলাম। অবশেষে তিনি সালাম ফেরালেন, আমরাও তাঁর সালামের সময় সালাম ফেরালাম।” (বুখারি, হাদিস: ৮০৪) 

ঘরে নামাজের জায়গা থাকা মুসলমানদের জন্য আবশ্যকীয় একটি কাজ। এতে মুসল্লির হৃদয়ে প্রশান্তি অনুভব হয়। বাচ্চারা নামাজ শেখে। তারা সেখানে নামাজ পড়ে। কোরআন তেলাওয়াত করে। পরিবারের সবাই নামাজের প্রতি আগ্রহী হয়। বেনামাজিদের ওপর প্রভাব পড়ে। 

লেখক: আলেম, গবেষক ও সাংবাদিক