প্রথম বাংলাদেশি নারী আম্পায়ার হিসেবে নারীদের টি-টোয়েন্টি ম্যাচে আম্পায়ারিংয়ের অভিজ্ঞতা হয়েছিল সাথিরা জাকির জেসির। ঘরোয়া ক্রিকেটে নারীদের টুর্নামেন্টের পাশাপাশি সমানতালে পরিচালনা করেছেন ছেলেদের প্রথম বিভাগ-দ্বিতীয় বিভাগ লিগ। অপেক্ষায় ছিলেন ঘরোয়া ক্রিকেটের সবচেয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক আসর ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে (ডিপিএল) আম্পায়ারিং করার। অবশেষে গত বৃহস্পতিবার প্রাইম ব্যাংক-মোহামেডান ম্যাচ দিয়ে ডিপিএলে আম্পায়ারিংয়ের সুযোগ আসে তার সামনে। ডিপিএলের সুপার লিগের গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে দায়িত্ব পালন করা সাথিরা জাকির জেসি নিজের অভিজ্ঞতা ভাগাভাগি করেছেন খবরের কাগজের প্রতিবেদক পার্থ রায়ের সঙ্গে।
প্রথমবার ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে দায়িত্ব পালন করলেন। অভিজ্ঞতা কেমন ছিল?
আলহামদুলিল্লাহ অভিজ্ঞতা ভালো। চাপের ম্যাচ ছিল। এ ছাড়া প্রথম ম্যাচ সবার মধ্যে স্নায়ুচাপ থাকে, সেটা ছিল। আলহামদুলিল্লাহ, ঠিকঠাকভাবে ম্যাচ শেষ করতে পেরেছি। যেটা (মুশফিকুর রহিমের আউট বিতর্ক) সমস্যা হয়েছিল ওই জায়গায় আমাদের কিছু করার ছিল না। বাকিটা পুরোপুরি ঠিকঠাক ছিল।
মেয়েদের আন্তর্জাতিক ম্যাচ নাকি ডিপিএল- কোন জায়গায় ম্যাচ পরিচালনা করা বেশি চাপের?
মেয়েদের আন্তর্জাতিক ম্যাচ করার চেয়ে এই ধরনের ম্যাচ পরিচালনা করা কঠিন। সবাই জানেন প্রিমিয়ার লিগে দলগুলোর মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা অনেক বেশি থাকে। বিপিএলেও হয়তো বা এত বেশি চাপ থাকে না যতটা থাকে প্রিমিয়ার লিগে। ডিপিএলে এই চাপটা নিয়েই আম্পায়ারিং করতে হবে। অন্যান্য জায়গা থেকে অনেক বেশি চাপ ছিল। ক্রিকেটাররা অনেক সময় তর্কবিতর্ক করে, খেলা বন্ধ থাকে। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এসব হয় না। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে টিভি আম্পায়ার থাকে। ফলে সিদ্ধান্তগুলো দেওয়া সহজ হয়। এ জন্য এখানে অনেক নিখুঁত আম্পায়ারিং করতে হয়।
ম্যাচে জাতীয় দলের অনেক সিনিয়র ক্রিকেটার ছিলেন। তাদের কাছ থেকে ম্যাচে কেমন সহযোগিতা পেলেন?
জুনিয়র কিছু ক্রিকেটার ছাড়া সবাই তো আসলে আমার পরিচিত। মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ভাইসহ তামিম ভাই, ইমরুল ভাই, মুশফিক ভাই সবাই পরিচিত। তাদের জন্য আমার কাজ করাটা সহজ হয়েছিল। নতুন যারা ছিল- জাকির, নাঈম ওরাও খুব ভালো। সবার কাছ থেকে খুব ভালো সমর্থন পেয়েছি। ভালো ব্যাপার হলো ম্যাচ শেষে দুই দলের ক্রিকেটাররা অনেক প্রশংসা করেছে। ম্যাচ শেষে বিষয়টি আমার অনেক ভালো লেগেছে।
অন্য সহকর্মীদের কাছ থেকে কেমন সহযোগিতা পেয়েছেন?
আমার সঙ্গে যারা কাজ করেছেন অনফিল্ড আম্পায়ার, রিজার্ভ আম্পায়ার, ম্যাচ রেফারি সবাই আমার প্রশংসা করেছেন। ম্যাচ রেফারি রকিবুল ভাই তো প্রথম থেকেই উৎসাহ দিচ্ছিলেন। ওপর থেকে বারবার বলছিলেন ভালো ডিসিশন দিচ্ছেন। রান আউট বা অন্যান্য কঠিন সিদ্ধান্তগুলো ভালো হচ্ছে বলে খুবই প্রশংসা করেছেন। ম্যাচ রেফারি খুশি আমার ম্যাচ নিয়ে। ম্যাচে কিছু ছোটখাটো ভুল হবেই। বড় কোনো ভুল ছাড়া ম্যাচ শেষ হয়েছে এটা ভালো ছিল। কালকের ম্যাচ তো আসলে বড় ম্যাচ ছিল- দুই দলই রানার্স আপের জন্য খেলছিল। তো সব মিলিয়ে ভালো হয়েছে।
ম্যাচ পরিচালনার সময় প্রচণ্ড গরম ছিল। এটা কতটা বাধা তৈরি করেছিল?
গরমে তো আসলে আম্পায়ারিং করা কঠিন। এর আগে এত গরমে ম্যাচ খেলেছি। তবে খেলা আর আম্পায়ারিং করার মধ্যে অনেক পার্থক্য আছে। খেলোয়াড়রা খেলার সময় কিছুটা বিশ্রাম পায়। ফিল্ডিংয়ের সময় চাইলেই ৮-১০ মিনিট বাইরে থাকতে পারে। ব্যাটিংয়ের সময় তো দুই ব্যাটার ছাড়া বিশ্রামেই থাকে। আম্পায়ারদের তো সেই সুযোগ নেই। সবার আগে মাঠে নেমে সবার শেষে বের হতে হয়। এমনকি ফিল্ডাররা মাঠে নামার ৫ মিনিট আগে মাঠে নামতে হয়। খেলার মাঝের অল্প সময়ের মধ্যে আসলে বিশ্রামটা হয়ও না ঠিকঠাক মতো। চাইলেও বাইরে আসতে পারি না। পুরো ১০০ ওভার আমাদের মাঠে থাকতে হয়। এই রোদের মধ্যেও মনোযোগটা ঠিক রাখতে হয়। সব মিলিয়ে এই গরমে আম্পায়ারিং করা আসলেই অনেক কঠিন।