চা-শিল্প অনেকটাই প্রকৃতির ওপর নির্ভরশীল। তীব্র তাপপ্রবাহের ফলে এই শিল্পের উৎপাদন কমেছে। বলা যায়, উৎপাদন অর্ধেকে নেমে গেছে। তথ্য বলছে, প্রতিদিন ১৬ হাজার কেজির মতো পাতা প্রক্রিয়াজাত করার কথা ছিল, সেখানে মাত্র ৭ থেকে ৮ হাজার কেজি চা-পাতা প্রক্রিয়াজাতকরণ করা সম্ভব হচ্ছে। চা-বাগান কর্তৃপক্ষ বলছে, আগামী এক সপ্তাহ এ রকম তাপপ্রবাহ চলতে থাকলে চা-গাছ থেকে আর কোনো পাতা তোলা সম্ভব হবে না। এদিকে চা-শিল্পে খরার প্রভাবে উৎপাদিত চায়ের গুণগত মান পড়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন চা ব্যবসায়ীরা। উৎপাদন কমে গেলে স্বাভাবিকভাবে পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে চা-পাতার দাম বাড়বে। পাশাপাশি চায়ের মানও কমে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে।
তীব্র তাপপ্রবাহে চা-শিল্প সংকট ও চ্যালেঞ্জ দুটোর মুখেই পড়েছে। বিভিন্ন স্থানে চা-বাগান বন্ধ হওয়ার উপক্রম। এ অবস্থায় তাপপ্রবাহের ফলে সৃষ্ট সমস্যাগুলো মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হিসেবে দেখছেন অনেকে। দীর্ঘদিন ধরে বৃষ্টি না হওয়ায় চা-গাছে গজাচ্ছে না নতুন কুঁড়ি, পুড়ে যাচ্ছে চা-গাছের পাতা। নানান জাতের রোগবালাই দেখা দিচ্ছে। পাশাপাশি তীব্র তাপপ্রবাহে চা-গাছের পাতা তুলতে সমস্যায় পড়ছেন চা-শ্রমিকরা। তীব্র গরমে লোডশেডিংয়ে ব্যাহত হচ্ছে উৎপাদন।
চলমান তাপপ্রবাহের কারণে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে ৪২টি চা-বাগানের চা-গাছে আসছে না নতুন পাতা ও কুঁড়ি। পাশাপাশি ছায়াবৃক্ষের নিচে থাকা চা-গাছগুলোতে ধরেছে ‘বাঞ্জি দশা’, চায়ের পাতা শক্ত হয়ে যাওয়া। দীর্ঘদিন ধরে চাহিদামাফিক বৃষ্টি না হওয়ায় চা-গাছগুলোয় আক্রমণ করেছে রেড স্পাইডার, ফলে চা-গাছগুলোতে ধরেছে লাল রোগ। লাল রোগের প্রভাবে চা-গাছের পাতাগুলো লাল হয়ে ঝরে যাচ্ছে।
সাধারণত মার্চ-এপ্রিল মাসকে চা-পাতা উৎপাদনের ভরা মৌসুম হিসেবে ধরা হয়। কিন্তু উৎপাদনের এই ভরা মৌসুমে তীব্র তাপপ্রবাহের ফলে চা-শিল্পে আশানুরূপ উৎপাদন নিয়ে দেখা দিয়েছে শঙ্কা।
বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউট সূত্রে জানা যায়, সাধারণত চা-গাছগুলো ৩২ ডিগ্রি পর্যন্ত তাপ সহ্য করতে পারে। কিন্তু এবার গড় তাপমাত্রা থাকছে ৩৬ ডিগ্রির ওপর। চা-গাছগুলোতে পর্যাপ্ত পরিমাণে সেচ দেওয়া সত্ত্বেও ময়েশ্চার ধরে রাখা যাচ্ছে না। অতিরিক্ত তাপ মাটি থেকে দ্রুত পানি শুষে নিচ্ছে।
বাংলাদেশ চা গবেষণা কেন্দ্রের পরিচালক ড. ইসমাইল হোসেন বলেন, এই তাপপ্রবাহ ও খরার সময় সেচ এবং পচা গোবরের সঙ্গে টিএসপি সার মিশিয়ে বাগানগুলোর মাটিতে দিলে ভালো ফল মিলতে পারে।
বাংলাদেশ চা বোর্ডের প্রকল্প উন্নয়ন ইউনিটের পরিচালক ড. এ কে এম রফিকুল হক বলেন, ‘সারা বিশ্বের জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব আমাদের দেশেও পড়েছে। যে কারণে এই তাপপ্রবাহের সৃষ্টি হয়েছে। তাপপ্রবাহে চা-বাগান মালিকদের আমরা চা-গাছ টিকিয়ে রাখার জন্য প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছি। এ বছর আমাদের চা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১০৮ মিলিয়ন কেজি। এই তাপপ্রবাহ চলমান থাকলে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে বেশ বেগ পেতে হবে।’
চলমান তাপপ্রবাহ থেকে চা-শিল্পকে রক্ষার জন্য সরকারকে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। চায়ের গুণগত মান ঠিক রাখতে এবং চা-শিল্পের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় করণীয় ঠিক করতে হবে কর্তৃপক্ষকে। চা-শিল্পের উৎপাদনশীলতা বাড়াতে এবং
চা-গাছ টিকিয়ে রাখার জন্য বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ কাজে লাগাতে হবে।