আশঙ্কাজনক হারে নামছে রাজধানীর পানির স্তর। ইতোমধ্যে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে তীব্র তাপপ্রবাহে খরার সৃষ্টি হয়েছে। পানিসংকটে নগরবাসীর জীবন অতিষ্ঠ হয়ে গেছে। বর্তমানে ঢাকা ওয়াসার ১০টি অঞ্চলেই কমবেশি পানির সংকট চলছে। প্রতিবারের মতো এবারের গ্রীষ্মকালেও পানির সংকট শুরু হয়েছে। শুধু সংকটই নয়, এমন অনেক এলাকা আছে যেখানে পানি পাওয়া যাচ্ছে কিন্তু ময়লা। অনেক এলাকায় দেখা গেছে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে পানি পেতে যুদ্ধ করছেন বাসিন্দারা। তাদের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে এমন চললেও কোনো পদক্ষেপ নেই ঢাকা ওয়াসার পক্ষ থেকে। ঢাকা ওয়াসার তথ্যানুসারে, রাজধানী ঢাকার দুই অংশে পানির চাহিদা প্রতিদিন গড়ে ২৬০ কোটি লিটার। ওয়াসার উৎপাদনক্ষমতা রয়েছে ২৯০ কোটি লিটার। অর্থাৎ চাহিদার তুলনায় দৈনিক ৩০ কোটি লিটার বেশি উৎপাদন সক্ষমতা রয়েছে ঢাকা ওয়াসার। ঢাকায় পানির এই সংকট আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের।
অন্য সময় সংকট না থাকলেও প্রতিবছর শুকনো মৌসুমে চাহিদা পূরণে বেসামাল হতে হয় ঢাকা ওয়াসাকে। আবার যে পরিমাণ পানি উত্তোলন হয়, ৭৮ শতাংশই ভূগর্ভস্থ উৎস থেকে আসে। বাকি ২২ শতাংশ পানি ভূ-উপরিস্থ উৎস থেকে বিভিন্নভাবে জোগাড় করা হয়। এমন অবস্থায় শুকনো মৌসুমে সংকটের পেছনে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর দ্রুত নিচের নেমে যাওয়া ও নানামুখী সিস্টেম লসকে দায়ী করা হয়। স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের একটি হিসাব বলছে, রাজধানী ঢাকায় পানির স্তর প্রতিবছর ২ থেকে ৩ মিটার নেমে যাচ্ছে।
ঢাকা ওয়াসা বলছে, ৫০ বছর আগেও ভূগর্ভস্থ পানির স্তর ২ থেকে ৩ মিটারের মধ্যে ছিল। বর্তমানে ৮৬ মিটার নেমে গেছে। এভাবে নামতে থাকলে ঢাকায় একসময় পানি সরবরাহ দুরূহ হয়ে যাবে। সাম্প্রতিককালে প্রতিবছর ২ থেকে ৩ মিটার করে পানির স্তর নিচে নেমে যাচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশের কিছু এলাকায় বোরো মৌসুমে পানির স্তর নিচে নামলেও আবার বৃষ্টির সময় আগের অবস্থানে ফিরে আসে। তবে ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় পানির স্তর শুধু নামছেই।
ঢাকা ওয়াসার পরিসংখ্যান বলছে, ২০১৮ সালে যেখানে ঢাকায় গভীর নলকূপ ছিল ৭৯৫টি, ২০২২ সালে সেটি ৯০৬টি। বর্তমানে ৯৬০টি গভীর নরকূপ রয়েছে। ৯৬০টি গভীর নলকূপ ছাড়াও বেসরকারি পর্যায়ে ২ হাজারের বেশি গভীর নলকূপের অনুমোদন রয়েছে। গভীর নলকূপের সংখ্যা প্রতিবছর এভাবে বাড়তে থাকলে ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলনের ক্ষেত্রে বড় ধরনের হুমকি হতে পারে বলে বলছেন বিশেষজ্ঞরা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাটি, পানি ও পরিবেশ বিভাগের অধ্যাপক ড. আখতার হোসেন খান খবরের কাগজকে বলেন, কোনো সন্দেহ নেই আগামী দিনগুলোতে এই সংকট আরও বাড়বে। ঢাকা শহর কংক্রিটে ঢাকা পড়েছে। যে পরিমাণ পানি আমরা ভূগর্ভস্থ উৎস থেকে উত্তোলন করি, বৃষ্টি হলে কংক্রিটের কারণে সেই পরিমাণ বৃষ্টির পানি রিচার্জ হতে পারে না। বৃষ্টি হলে পানি মাটির নিচে যেতে পারে না।
জনসাধারণের দুর্ভোগের বিষয়টি মাথায় রেখে সরকারকে পানির পাম্প বসানোর পাশাপাশি ভূগর্ভস্থ উৎসের ওপর থেকে নির্ভরতা কমাতে উদ্যোগ নিতে হবে। ভূ-উপরিস্থ পানির যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। বৃষ্টির পানি সংরক্ষণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।