ফিলিস্তিনে মানবতার বিরুদ্ধে এক ভয়াবহ অপরাধ সংঘটিত হয়ে আসছে সেই অর্ধশতাব্দী আগে থেকে। গত বছরের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের হামলার পর গাজায় হামলা চালানো শুরু করে ইসরায়েলি সেনারা। তাদের হামলায় ছোট এ উপত্যকায় ৩৪ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হওয়ার পাশাপাশি হাজার হাজার ঘরবাড়ি ধ্বংস হয়েছে। এ হামলার প্রতিবাদে ফুঁসে উঠেছেন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। ফিলিস্তিনিদের অধিকার, তাদের ভূখণ্ড দখল করেছে ইসরায়েল। এটিই বড় সমস্যা। এর শান্তিপূর্ণ সমাধানের জন্য বারবার প্রস্তাব দিলেও তোয়াক্কা করছে না ইসরায়েল। প্রতিবছর হাজার হাজার ফিলিস্তিনিকে হত্যা করা হয়েছে। বিশ্ব মানবতা তার প্রতিবাদ জারি রেখেছে। গাজায় গণহত্যার প্রতিবাদে মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা যে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করছিলেন, তাতে বহিরাগতরা হস্তক্ষেপ করছে। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালিয়েছে পুলিশ। জানা গেছে, আন্দোলন দমাতে কর্তৃপক্ষই পুলিশ ডেকে এনেছে। বিশ্বজুড়ে যে প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে, তা ক্রমেই জোরদার হচ্ছে।
বিশিষ্টজনরা বলছেন, অস্ত্র ও অর্থ দিয়ে গণহত্যা টিকিয়ে রেখেছে পশ্চিমারা। মুসলিম উম্মাহর একাত্মতা ফিলিস্তিন সংকট সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। ইইউর অনেক দেশ ফিলিস্তিনকে স্বাধীন হিসেবে স্বীকৃতি দিতে চেয়েছে। এটা ভালো পদক্ষেপ। ফিলিস্তিনের সাধারণ জনগণের ওপর ইসরায়েলি আগ্রাসন স্থায়ীভাবে নিরসনের লক্ষ্যে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ওআইসির সদস্যদেশগুলোকে ঐক্যবদ্ধভাবে আরও কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস গাজার মানুষের জন্য ওই অঞ্চলের স্বার্থের বিষয়টি আমলে নিয়ে ইসরায়েল ও হামাসকে সমঝোতায় পৌঁছানোর অনুরোধ জানিয়েছেন।
জাতিসংঘের অফিস ফর দ্য কো-অর্ডিনেশন অব হিউম্যানিটেরিয়ান অ্যাফেয়ার্স বলছে, ইসরায়েল রাফায় স্থল অভিযান চালালে শত শত মানুষ মৃত্যুঝুঁকিতে পড়বে। জাতিসংঘ থেকে শুরু করে বিশ্বের বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মানবিক সংস্থা জানিয়েছে, ইসরায়েল গাজায় আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করছে। ইসরায়েলের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার আদালতের শরণাপন্ন হয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা। তারা সরাসরি ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গাজায় গণহত্যা চালানোর অভিযোগ তুলেছে। আদালতের পক্ষ থেকেও ইসরায়েলকে গণহত্যামূলক কর্মকাণ্ড থামানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সেসব কোনো কাজে আসেনি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রে ছাত্ররা বিক্ষোভ করছে, কিন্তু মধ্যপ্রাচ্যে কোনো বিক্ষোভ নেই। যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলকে সমর্থন দিচ্ছে। এখানে মধ্যপ্রাচ্যে কোনো ছাত্র বিক্ষোভ দেখছি না বা ইরান-ইরাকেও কোনো বিক্ষোভ হচ্ছে না। এর কারণ হচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যের যারা শাসক, তারা ইসরায়েলের মতো পুঁজিবাদী হয়ে গেছে। তারা ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ করছে না। অসহায় ফিলিস্তিনিরা আরও অসহায় হয়ে পড়েছে। এই বিশ্বব্যবস্থার পরিবর্তন আনতে হবে। হিটলারি ব্যবস্থার পরিবর্তন করতে হবে। ব্যক্তিমালিকানার জায়গায় সামাজিক মালিকানা প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এই পৃথিবীকে বদল করতে হবে। তা না হলে আমরা টিকতে পারব না। সংগ্রামটা এখন বিশ্বব্যাপী।’
একদিকে করোনার জাঁতাকলে বৈশ্বিক মন্দা, অন্যদিকে যুদ্ধের নিষ্ঠুর ভয়াবহতা- এসবই মানবজাতির জন্য অকল্যাণকর। বৈশ্বিক এই পরিস্থিতি কাটিয়ে বিশ্বে মানবতার একাত্মতা প্রয়োজন। বিশ্বে শান্তি ফিরিয়ে দেওয়ার পরিবর্তে বিশ্ব মোড়লরা অশান্তির বিষবাষ্প ছড়িয়ে দিচ্ছে। ইসরায়েল-ফিলিস্তিনিদের ক্ষেত্রেও তাই আজ স্পষ্ট। মানবতার কথা বিশ্ব মোড়লরা বললেও কেউই এর ধারেকাছে নেই। আরব রাষ্ট্রগুলোর একাত্মতাও এই ইস্যুতে চোখে পড়ছে না। বরং জিইয়ে রেখেছে যুদ্ধ। বিশ্ব থেকে যুদ্ধ নামক সব সংকট দূর হোক এবং ফিলিস্তিন রাষ্ট্রে শান্তি ফিরে আসুক, এটাই প্রত্যাশা।