বাংলাদেশকে বিনিয়োগের উদীয়মান গন্তব্য বলে এ দেশের সঙ্গে ব্যবসা করতে আগ্রহের কথা জানিয়েছেন কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানি। এরই অংশ হিসেবে এ দেশে সম্ভাবনাময় ব্যবসা খুঁজে বের করতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। গত মঙ্গলবার বাংলাদেশ ও কাতারের শীর্ষ পর্যায়ের বৈঠক হয়। বৈঠকে দুই দেশের সম্পর্ক আরও এগিয়ে নিতে সই হয় পাঁচ চুক্তি ও পাঁচ সমঝোতা স্মারক। প্রবাসী বাংলাদেশি শ্রমিকদের প্রশংসা করেন শেখ তামিম। বিশেষ করে কাতারের উন্নয়নে তাদের ইতিবাচক ভূমিকা এবং দুই দেশের অর্থনীতিতে অবদানের বিষয় তুলে ধরেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশ থেকে আরও শ্রমিক, পেশাজীবী, নার্স, টেকনিশিয়ান নিয়োগের বিষয়ে বিবেচনার অনুরোধ জানান। এতে ইতিবাচক সাড়া দিয়েছেন কাতারের আমির। ব্যবসায়িক সম্পর্ক বাড়াতে ব্যবসায়ীদের কাতারের ভিসা সহজীকরণের আহ্বান জানায় ঢাকা।
এ সময় পর্যটন খাতের উন্নয়নে কক্সবাজারে কাতারের বিনিয়োগকারী ও ব্যবসায়ীদের সম্ভাবনা খুঁজে দেখার পাশাপাশি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে কাতারকে বিনিয়োগের আহ্বান জানানো হয়। কক্সবাজার ও বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগের প্রস্তাবকে স্বাগত জানান তিনি। বৈঠকে দুই দেশ বিদ্যমান জ্বালানি সহযোগিতায় সন্তোষ প্রকাশ করেন এবং ভবিষ্যতে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে অংশীদারি পর্যায়ে উন্নীত করার বিষয়ে আলোচনা করেন।
বাংলাদেশ ও কাতারের পারস্পরিক সহযোগিতা জোরদারে সই হওয়া চুক্তিগুলোর মধ্যে রয়েছে দ্বৈত কর পরিহার এবং রাজস্ব ফাঁকি প্রতিরোধ, দুই রাষ্ট্রের মধ্যে আইনি ক্ষেত্রে সহযোগিতা, দ্বিপক্ষীয় সমুদ্র পরিবহন, দুই দেশের মধ্যকার পারস্পরিক বিনিয়োগ উন্নয়ন ও সুরক্ষা এবং বাংলাদেশ-কাতার যৌথ ব্যবসায়ী পরিষদ প্রতিষ্ঠা। আর সই হওয়া ৫ সমঝোতা স্মারক হলো জনশক্তি কর্মসংস্থান (শ্রম), বন্দর (এমডব্লিউএএনআই) কাতার এবং চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ, বাংলাদেশ ও কাতারের মধ্যে উচ্চশিক্ষা ও বৈজ্ঞানিক গবেষণা, যুব ও ক্রীড়া ক্ষেত্রে এবং বাংলাদেশ ও কাতারের মধ্যে কূটনৈতিক প্রশিক্ষণে সহযোগিতা। এরই মধ্যে দুই দেশের পারস্পরিক বিনিয়োগ উন্নয়ন ও সুরক্ষা চুক্তি স্বাক্ষর একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ হিসেবে সামনে এসেছে।
বাংলাদেশ ও কাতার বাণিজ্যিক এবং অর্থনৈতিক সম্পর্ক আরও জোরদার করার পাশাপাশি ব্যবসায়িক সহযোগিতা বাড়াতে চায়। এ জন্য জয়েন্ট বিজনেস কাউন্সিল (জেবিসি) গঠন করা হয়েছে। দুই শীর্য বাণিজ্য সংগঠনের মধ্যে চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশ ও কাতারের মধ্যে বাণিজ্য বিনিয়োগ প্রযুক্তি হস্তান্তর সেবা এবং অন্যান্য শিল্প খাতে বাণিজ্য কার্যক্রম জোরদারের একটি প্ল্যাটফর্ম হয়ে উঠবে এই কাউন্সিল। দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও পরিষেবা-সম্পর্কিত তথ্য বিনিময়ের মাধ্যমে উপকৃত হবে।
কাতার বাংলাদেশের ষষ্ঠতম আমদানির উৎস দেশ। তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি), সার বা পেট্রোকেমিক্যাল পণ্য সবচেয়ে বেশি কাতার থেকে আমদানি হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাংলাদেশ কাতার থেকে ২৩৭ কোটি ডলারের পণ্য আমদানি করেছে, যা দেশের মোট আমদানির সাড়ে ৩ শতাংশ। আর ২০২১-২২ অর্থবছরে কাতার থেকে বাংলাদেশের আমদানির পরিমাণ ছিল ২১৮ কোটি ডলার। আমদানির তুলনায় বাংলাদেশ থেকে কাতারের রপ্তানি হয় কম। এ দেশ থেকে কাতারে সবজি, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, জুস, পোশাকসহ বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর পরিমাণ বছরে ৩ থেকে সাড়ে ৩ কোটি ডলার।
ঢাকা-দোহার মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধির জন্য দুই দেশের সম্পর্ক যাতে দীর্ঘস্থায়ী হয়, সে জন্য কূটনৈতিকভাবে আরও কৌশলী ভূমিকা পালন করতে হবে। চুক্তি ও সমঝোতাগুলো সঠিকভাবে বাস্তবায়নের মাধ্যমে দেশকে একটি গতিশীল প্ল্যাটফর্মে চালিত করার অভিপ্রায় রাখতে হবে। দুই দেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় ও বহুপক্ষীয় সম্পর্ক উন্নয়নে এ চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে, এটি সবার প্রত্যাশা।