দেশে প্রাইভেট হাসপাতাল সংখ্যায় বেশি হলেও সাধারণ মানুষের এখনো প্রধান ভরসার জায়গা সরকারি হাসপাতাল। ফলে সব হাসপাতালেই অতিরিক্ত রোগীর ভিড় লেগেই থাকে চিকিৎসা নিতে গিয়ে। নানামুখী সমস্যা, হয়রানি ও ভোগান্তির শিকার হতে হয় রোগীদের। এর মধ্যেই চলে চিকিৎসাসেবা। দেশে সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সংখ্যা ১৫ হাজারের বেশি। এর বাইরে ১৪ হাজার আছে কমিউনিটি ক্লিনিক। আছে পল্লি চিকিৎসকদের অপ্রাতিষ্ঠানিক নানা ধরনের সেবা। ফার্মেসি থেকেও সেবা নেয় একাংশ মানুষ। সব মাধ্যম মিলিয়ে দেশে প্রতিদিন ৩০ লাখের বেশি মানুষ রোগী হিসেবে সেবার জন্য ছুটে বেড়ায় বলে আনুমানিক তথ্য পাওয়া যায় বিভিন্ন সূত্র থেকে।
রোগীর এই চাপ সামাল দিতে একদিকে হিমশিম অবস্থা সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিদের। অন্যদিকে খরচের চাপ নিয়ে অসহায় হয়ে পড়েন রোগী ও তাদের পরিবার।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশের স্বাস্থ্যসেবার পরিধি ব্যাপক হলেও তা প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়ছে দুর্নীতি, অনিয়ম, অনৈতিক বাণিজ্য ও বিশৃঙ্খলার কারণে। এমন পরিস্থিতি থেকে রেহাই পেতে দেশের স্বাস্থ্য খাতের সামর্থ্য বাড়াতে হবে। দুর্নীতি, অনিয়ম ও বিশৃঙ্খলা বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। প্রাইভেট স্বাস্থ্যসেবা সেন্টারের জন্য আলাদা নিয়ন্ত্রণ কাঠামো তৈরির তাগিদও দেন কেউ কেউ। সেই সঙ্গে রোগ প্রতিরোধে আরও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা কার্যক্রম বাস্তবায়নেও জোর দেন বিশেষজ্ঞরা।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যসূত্র অনুসারে, কয়েক বছর ধরে স্বাস্থ্য খাতে দুর্নীতি ও অনিয়ম হয়েই চলেছে। এ ছাড়া বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নে প্রকৃত দামের চেয়ে অনেক বেশি দামে কেনাকাটার মাধ্যমে অর্থ তছরুপের ঘটনা ঘটেছে কয়েকটি। করোনা মহামারির সময় দুর্নীতির আলোচনা সামনে চলে আসে; আগের বড় বড় আলোচিত দুর্নীতির ঘটনাকে পেছনে ফেলে। অন্যদিকে সম্প্রতি অ্যানেসথেসিয়ার প্রভাবে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় কয়েকজনের মৃত্যুর ঘটনা দেশের প্রাইভেট সেক্টরের চিকিৎসাসেবা খাতকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে; যা নিয়ে চিকিৎসকরাও বিব্রত। নবায়ন ছাড়াই রয়েছে ১ হাজারের বেশি প্রাইভেট হাসপাতাল-ক্লিনিক। এ ছাড়া রোগীর কাছ থেকে যেনতেনভাবে টাকা আদায়ের অভিযোগ অনেক দিনের। চিকিৎসার খরচ জোগাতে গিয়ে মানুষ নিঃস্ব হয়ে পড়ছে।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা স্বাস্থ্যসেবা শক্তিশালী করার পাশাপাশি রোগ যাতে না হয়, যাতে মানুষকে হাসপাতালে যাওয়া না লাগে, চিকিৎসার খরচ যাতে কমানো যায়, সে জন্য রোগ প্রতিরোধে আরও বেশি সচেতনতা বাড়ানোর তাগিদ দিয়েছেন। সেই সঙ্গে স্বাস্থ্য খাতে বাজেট আরও বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতির অধ্যাপক ড. সৈয়দ আব্দুল হামিদ খবরের কাগজকে বলেন, মানুষ একদিকে যেমন ছুটে বেড়াচ্ছে, দিনে লাখো মানুষ সেবা নিচ্ছে, আবার তাদের আস্থার জায়গাটিও প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে উঠছে দিন দিন। এমন অবস্থা থেকে বের হতে হলে নজর দিতে হবে সরকারি স্বাস্থ্যসেবার চিকিৎসা ও ব্যবস্থাপনা সংস্কারের দিকে। বিশেষ করে যারা ব্যবস্থাপনায় থাকবেন, তাদের আলাদা কাঠামোর আওতায় দক্ষ করে গড়ে তুলতে হবে চাকরির শুরু থেকেই। সেই সঙ্গে বেসরকারি খাতকে আরও শৃঙ্খলা, সমন্বয় ও নিয়ন্ত্রণের মধ্যে নিয়ে আসতে হবে।
স্বাস্থ্য খাতে দুর্নীতি, অনিয়ম ও বিশৃঙ্খলা বন্ধে সরকারকে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। এ খাতকে গতিশীল রাখতে সামর্থ্য বাড়াতে হবে। সেই সঙ্গে রোগ প্রতিরোধে আরও কার্যকর পদক্ষেপ ও সচেতনতা বাড়াতে হবে।