চুয়েটের অচলাবস্থা নিরসন করুন । খবরের কাগজ
ঢাকা ৩০ বৈশাখ ১৪৩১, সোমবার, ১৩ মে ২০২৪

চুয়েটের অচলাবস্থা নিরসন করুন

প্রকাশ: ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১১:৪০ এএম
চুয়েটের অচলাবস্থা নিরসন করুন

প্রতিদিন সড়কে ঝরছে প্রাণ। কিন্তু সড়ক দুর্ঘটনার লাগাম কিছুতেই টানা যাচ্ছে না। গত সোমবার (২১ এপ্রিল) বেলা ৩টার দিকে চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়কে বাস ও মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষে চুয়েটের দুই শিক্ষার্থী শান্ত সাহা ও তৌফিক হোসেন নিহত হন। আহত হন আরও এক শিক্ষার্থী। এমন মৃত্যু মেনে নেওয়া যায় না।

চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (চুয়েট) বাসচাপায় দুই সহপাঠী নিহতের ঘটনায় টানা তিন দিন আন্দোলন করেন শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। আন্দোলন স্থগিত করা হয়েছে। কিছুদিন পর আবার খুলে দেওয়া হবে চুয়েট। ততদিনে শিক্ষার্থীরা হয়তো তাদের প্রিয় সহপাঠীর কথা ভুলে যাবেন। এভাবেই কি চলতে থাকবে? যিনি প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করে পরিবার ও দেশকে সমৃদ্ধ করার কথা, তিনি আজ অকালেই ঝরে গেলেন। এভাবেই ঝরে যায় অসংখ্য প্রাণ। শান্ত সাহা ও তৌফিকের বাবা-মা হয়তো সন্তানের দিকে তাকিয়ে ছিলেন। পাস করে বের হয়ে তারা চাকরি করবেন। পরিবারের অবলম্বন হবে। কিন্তু তাদের সব স্বপ্ন-আশা-আকাঙ্ক্ষা ভেঙে চুরমার হয়ে গেল। তাদের ভবিষ্যৎ হয়ে পড়ল অনিশ্চিত।

চুয়েটের শিক্ষার্থী ফুয়াদ ইকবাল খবরের কাগজকে বলেন, ‘আমাদের দুই ভাই নিহত হয়েছেন। আমরা বিচারের দাবিতে ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জন করেছি। অথচ আমাদের ভিসি চাইছেন আমরা আন্দোলন না করে পরীক্ষা দিতে যাই। আমরা ৭২ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়েছি। দুই সহপাঠী নিহতের ঘটনায় শিক্ষার্থীরা নিরাপদ সড়ক, দুই শিক্ষার্থী হত্যার বিচার, কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করা এক শিক্ষকের বহিষ্কারসহ ১০ দফা দাবি পেশ করেছি। আমাদের দাবি পূরণ না হলে আন্দোলন দীর্ঘ হবে। আমরা চাই এ ধরনের ঘটনার যাতে পুনরাবৃত্তি না ঘটে। 

চুয়েটের ভিসি ড. মো. রফিকুল আলম বলেন, ‘আমরা চাই দুই শিক্ষার্থী নিহতের ঘটনায় যথাযথ বিচার হোক। কিন্তু শিক্ষার্থীরা ক্লাসে না গিয়ে বিক্ষোভ করবে তা হতে পারে না। দুই শিক্ষার্থী নিহতের ঘটনার শান্তিপূর্ণ বিচার হোক, আমি সেটি কামনা করি।’ 

প্রতিটি মৃত্যুই বেদনাদায়ক। সেই মৃত্যু যদি অকাল ও আকস্মিক হয়, তবে তা মেনে নেওয়া কঠিন। দুর্ঘটনাকে কেন্দ্র করে এক বিভীষিকাময় ও অরাজক পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এই উদ্বেগজনক পরিস্থিতির নিরসন করতেই হবে। এভাবে চলতে পারে না। অকালে এভাবে মানুষের জীবনপ্রদীপ নিভে যেতে পারে না। দুর্ঘটনার কারণগুলো যেহেতু স্পষ্ট, সেহেতু সড়ক দুর্ঘটনা রোধে প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা নিশ্চিত করা দুরূহ নয়।

দেশে সড়ক দুর্ঘটনার কারণগুলো কমবেশি সবারই জানা। চালকের অসতর্কতা, অসচেতনতা, বেপরোয়া বা অনিয়ন্ত্রিত গতিতে গাড়ি চালনা, চালকের গাড়ি ওভারটেক করার প্রবণতা, ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন ও রাস্তা দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ। বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় পাবলিক যান চলাচলে অনেকটা বিধিনিষেধ থাকলেও মানছে না চালকরা। 

এ দেশে আইন প্রণয়ন হয়, কিন্তু সেই আইনের বাস্তবায়ন হয় না। দুঃখজনক হলেও সত্য যে, সড়ক পরিবহন আইন নিয়ন্ত্রণ করেন মূলত পরিবহন নেতারা। সেই নেতারা সরকারদলীয় বড় পদে বহাল থাকেন। ফলে সড়ক দুর্ঘটনা রোধে আইন থাকলেও তা কার্যকর হচ্ছে না। 

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সড়ক পরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়নে নগরের ভেতরে গণপরিবহন ব্যবস্থা পরিকল্পনা অনুযায়ী পরিচালনা করতে হবে। দুর্ঘটনা নিরসনে পরিবহন কর্তৃপক্ষের পাশাপাশি ট্রাফিক পুলিশ ও সিটি করপোরেশনকেও দায়িত্বশীল হতে হবে।

সড়ক দুর্ঘটনা রোধে প্রয়োজনীয় আইন পরিবর্তন ও আইনের কার্যকর প্রয়োগ নিশ্চিত করার পাশাপাশি চালকদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি ও প্রশিক্ষণ কার্যক্রমও চালিয়ে যেতে হবে। তবে সড়কে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চালকদের পাশাপাশি যাত্রী ও পথচারীদেরও সচেতন হওয়া উচিত। 

সড়ক দুর্ঘটনা নিরসনে ট্রাফিক আইনের আধুনিকীকরণ করতে হবে। ট্রাফিক পুলিশের দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনে একনিষ্ঠ হতে হবে। বেপরোয়াভাবে গাড়ি  চালালে কঠিন শাস্তি দিতে হবে। গাড়ি নিয়ন্ত্রণে আইনের যথাযথ প্রয়োগ করতে হবে। আইন অমান্যকারীকে জরিমানাসহ শাস্তির আওতায় আনতে হবে। চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে সড়ক দুর্ঘটনায় ছাত্র নিহতের ঘটনায় দোষীদের উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা করা হোক। বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বাভাবিক শিক্ষার পরিবেশ ফিরে আসুক, এটাই প্রতাশা।  

জনজীবনে চাপ কমিয়ে আনুন

প্রকাশ: ১২ মে ২০২৪, ১১:০৫ এএম
জনজীবনে চাপ কমিয়ে আনুন

মূল্যস্ফীতির কারণে সাধারণ মানুষের ওপর চাপ যেন একটু বেশিই। এর মধ্যে বিদ্যুতের দাম বাড়লে জনগণের ওপর চাপ আরও ঘনীভূত হবে। মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) অনুপাতে বাংলাদেশে কর আদায় বিশ্বে সবচেয়ে কম। এর অন্যতম কারণ হলো কর অব্যাহতির পরিমাণ বেশি। বর্তমানে বাংলাদেশে জিডিপির তুলনায় কর অনুপাত ৯ শতাংশের নিচে। আইএমএফ এই অনুপাত কমপক্ষে ১২ শতাংশে উন্নীত করতে চায়। এ জন্য কর অব্যাহতি তুলে নিতে বলেছে সরকারকে। এমনিতেই মূল্যস্ফীতির চাপ বাড়ছে। বাজেট ঘাটতি মেটাতে ব্যাংকের ওপর নির্ভরশীল হতে হয়। আবার ব্যাংক থেকে ঋণ নিলে মূল্যস্ফীতিতে প্রভাব পড়ে। সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিদ্যুতের দাম বাড়লে নিত্যপণ্যের দাম বাড়ে। তাই এটি বছরে কয়েকবার বাড়ানো হলে বাজারে জিনিসপত্রের দাম নাগালের বাইরে চলে যাবে। 

এমনিতেই সাধারণ মানুষ উচ্চ মূল্যস্ফীতির চাপে আছে। এত চাপ ভোক্তা নিতে পারবে না। বিদ্যুৎ খাতে মূল্য বৃদ্ধি করে পুরো ভর্তুকি সমন্বয়ের সিদ্ধান্ত হবে আত্মঘাতী। তাই মূল্য বৃদ্ধি না করে বিদ্যুৎ খাতে যেসব অনিয়ম ও দুর্নীতি আছে, সেগুলো বন্ধ করতে হবে। পাশাপাশি দক্ষতা বৃদ্ধির মাধ্যমে কেন্দ্রগুলোর উৎপাদন খরচ কমিয়ে ভর্তুকি কমানো যেতে পারে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) বাংলাদেশের জন্য ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ কর্মসূচি অনুমোদন করে গত বছর জানুয়ারিতে। কিস্তিভিত্তিক এই ঋণ পাওয়ার জন্য রাজস্ব আয় বাড়ানো, কর অব্যাহতি কমানো, ব্যাংক খাতে সুশাসন নিশ্চিতকরণ, টাকার বিনিময় হার নমনীয়সহ অনেক শর্ত দিয়েছে সংস্থাটি। তবে অন্যতম শর্ত হচ্ছে বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকি কমিয়ে আনা। সরকার তাদের এই শর্ত মেনে নিয়েছে এবং বছরে চার দফা বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কীভাবে এই দাম সমন্বয় করা হবে, তার একটি পরিকল্পনাও দিয়েছে আইএমএফের কাছে। পরিকল্পনা অনুযায়ী, আগামী তিন বছর বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকি কমিয়ে আনা হবে।

সংকট থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশের অর্থনীতি ধীরে ধীরে স্থিতিশীল হবে বলে আশা প্রকাশ করেছে সফররত আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল মিশন। সংস্থাটি বলেছে, আমদানি সংকোচন ও নীতি সুদহার কঠোরসহ বেশ কিছু সংস্কার পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার। এসব পদক্ষেপের ফলে দেশটির অর্থনীতি ক্রমশ স্থিতিশীল হবে। বাংলাদেশের আর্থিক খাতে চলমান গৃহীত সংস্কার কর্মসূচিতে আইএমএফ সন্তুষ্ট। অর্থ মন্ত্রণালয়ের একটি দায়িত্বশীল সূত্র খবরের কাগজকে জানায়, বাংলাদেশ ঋণের তৃতীয় কিস্তির টাকা পেতে প্রায় সব শর্ত পূরণ করেছে এবং জুন মাসে এই ঋণ ছাড় হবে। তৃতীয় কিস্তিতে বাংলাদেশ ৬৮ কোটি ১০ লাখ ডলার পেতে পারে। 

বিবৃতিতে আইএমএফ বলেছে, সুদের হার উদারীকরণ, মুদ্রানীতিতে অতিরিক্ত কড়াকড়ি আরোপ ও বিনিময় হার সংস্কারের ফলে মূল্যস্ফীতিতে চাপ কমাতে সহায়তা করবে। আইএমএফ বলেছে, ভবিষ্যতে যদি মূল্যস্ফীতির চাপ তীব্র হয়, তা হলে নীতি সুদহার আরও কঠোর করার উদ্যোগ নিতে হবে বাংলাদেশ ব্যাংককে।

সরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান বিআইডিএসের ঊর্ধ্বতন গবেষণা পরিচালক ড. জায়েদ বখত বলেন, রাজস্ব আদায়ে বড় দুর্বলতা আছে। কাঙ্ক্ষিত রাজস্ব আদায় করতে পারলে ভর্তুকির ওপর এত বেশি চাপ আসত না। আইএমএফের সব পরামর্শ মেনে চলার দরকার পড়ত না। তিনি বলেন, দেশে মূল্যস্ফীতির চাপ রয়েছে। বিদ্যুতের দাম বাড়লে এই চাপ আরও বাড়বে। ফলে সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ বাড়বে। ভর্তুকির চাপ সামলাতে হবে। তবে সেটি সহনীয়ভাবে।

মূল্যস্ফীতির প্রভাব থেকে জনগণকে মুক্ত রাখতে সরকারকেই পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। কোন কোন উৎস থেকে রাজস্ব আদায় বাড়ানো হবে তা ঠিক করতে হবে। ধনিক শ্রেণির কাছ থেকে প্রত্যক্ষ কর আদায়ে বেশি মনোযোগী হতে হবে। কৃষি খাতে ভর্তুকি কমানো যাবে না। কাজেই সব দিক বিচার-বিশ্লেষণ করে অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে সরকারকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। সঠিক সময়ে সঠিক পরিকল্পনার মাধ্যমে জনজীবনের ওপর থেকে মূল্যস্ফীতির চাপ অনেকাংশে কমিয়ে আনা সম্ভব হবে।  

পানির সংকট সমাধানে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিন

প্রকাশ: ১১ মে ২০২৪, ১১:১৭ এএম
পানির সংকট সমাধানে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিন

পানির সংকট দিন দিন বাড়ছে। সেই সংকটের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে নামছে পানির স্তর। এই অবস্থা যদি অব্যাহত থাকে, তাহলে কৃষির জন্য মরণদশা হবে। তথ্য বলছে, দেশের ভূ-সীমানায় পানির সব উৎস মিলে বছরে পানির মজুত কমছে ২০০ কোটি কিউবিক মিটার করে। অর্থাৎ দেশের অভ্যন্তরীণ নদ-নদী, জলাশয় ও ভূগর্ভস্থ স্তরে কমে যাচ্ছে পানি। অন্যদিকে বছরে দেশে বৃষ্টিপাত কমছে ১০ মিলিমিটার করে। শুকনো মৌসুমে দেশের প্রধান তিন নদ-নদীর পানিপ্রবাহ কমছে বছরে ১১৩ কিউবিক মিটার, যার বড় প্রভাব পড়ছে দেশের কৃষি খাতে সেচব্যবস্থার ওপর। উত্তরাঞ্চলে চাষাবাদের জন্য পানির সংকট দিন দিন বাড়ছেই। নদ-নদী, জলাশয়ে সেচের পানি না পাওয়ায় ভূগর্ভস্থ পানির সহায়তা নিতে গিয়েও পড়তে হচ্ছে বড় বিপদে। প্রতিবছর সেচের জন্য প্রয়োজনীয় এলাকায় ভূগর্ভস্থ পানির স্তর শূন্য দশমিক ৯৪ মিটার করে কমে যাচ্ছে। সম্প্রতি আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান সাময়িকী ন্যাচারে প্রকাশিত এক প্রবন্ধে বাংলাদেশের সর্বশেষ পানি পরিস্থিতি নিয়ে এমন তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পানি জোগানে এমন বিপর্যয় নেমে এলে দেশের উত্তর-পশ্চিমে কৃষিব্যবস্থা মরণদশায় পড়বে।

খাদ্যনিরাপত্তাকে উৎসাহিত করার জন্য সরকার কৃষিব্যবস্থাকে আধুনিকায়ন করেছে। কৃষির এই অগ্রযাত্রা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে পর্যাপ্ত সেচব্যবস্থার অভাবে। ফলে দেশের কৃষকদের এখন শুধু বর্ষা মৌসুমে নয়, শুষ্ক মৌসুমেও ধান চাষে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। সেদিকে লক্ষ রেখে ধানসহ অন্যান্য ফসলের জাত আবিষ্কারেও নজর দেওয়া হচ্ছে।

তথ্য বলছে, বাংলাদেশে এখন শুষ্ক মৌসুমে প্রায় ৫০ লাখ হেক্টর জমিতে সেচ দিতে হয়; যার ৭৩ শতাংশ পানি ভূগর্ভস্থ উৎস থেকে আসে। একই সময়ে প্রতিবেশী দেশ ভারতেও কৃষির জন্য ব্যাপক পরিমাণে ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলন করা হয়। বাংলাদেশ থেকে ভারতের অবস্থান উজানে হওয়ায় দেশের ভেতর ভূগর্ভস্থ পানির প্রবাহেও ঘাটতি পড়ে। ন্যাচারের তথ্যানুসারে, বাংলাদেশের ক্ষেত্রে স্যাটেলাইট ডেটা বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ২০০২ সাল থেকে সারা দেশে ৩৭ দশমিক ৫ বিলিয়ন ঘনমিটার স্থলজ পানির জোগান কমে গেছে। এই ক্ষতির সিংহভাগই ভূগর্ভস্থ পানি হ্রাসের কারণে। দেশের উত্তর-পশ্চিম এবং ঢাকাসহ কিছু জায়গায় ২০০০ সাল থেকে প্রতিবছর জলাবদ্ধতাও এক মিটার করে হ্রাস পাচ্ছে। চাষাবাদের জন্য এসব এলাকায় দুই দশক আগের তুলনায় এখন প্রায় ২০ মিটার গভীর থেকে ভূগর্ভস্থ পানি টেনে তুলতে হচ্ছে। কৃষি মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুসারে, দেশে বর্তমানে প্রায় ৭৯ লাখ হেক্টর জমিতে সেচ দরকার হয়।

বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের সদস্য পরিচালক (ক্ষুদ্র সেচ) মো. মজিবুর রহমান খবরের কাগজকে বলেন, ‘সেচ চাহিদা পূরণে আমরা যথেষ্ট চেষ্টা করছি। এমন সব জায়গায় নতুন নতুন চাষাবাদের জমি খুঁজে বের করছি, যেখানে সেচের চাহিদা কম থাকবে। সেই সঙ্গে কম পানি লাগে তেমন জাতের ফসল উৎপাদনেও জোর দেওয়া হচ্ছে। তার পরও পানির সংকট বাড়ছে। ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাচ্ছে, তাই সেচের সক্ষমতা বাড়াতে নানামুখী পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। আরেকটি বড় সমস্যা হচ্ছে, ভূগর্ভ থেকে সেচ বা অন্য কাজে ব্যবহারের জন্য যে পরিমাণ পানি উত্তোলন করা হয়, সেই হারে রিচার্জ বা শূন্যতা পূরণ হয় না। সেচ কার্যক্রম সচল রাখতে আমাদের বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করা। সেদিকে নজর রেখে কৃষিকাজে বিদ্যুতের চাহিদা পূরণ করতে নানা ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।’

শস্যভাণ্ডারখ্যাত উত্তরাঞ্চলে খরায় সেচ খরচ বেড়েছে বিঘায় ৩০০ টাকা। তাই সেচ খরচ কমিয়ে আনতে সরকারকে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করে তা যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে। শুষ্ক মৌসুমের সংকট সমাধানে নানামুখী পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে। নতুন নতুন চাষাবাদের জমি খুঁজে বের করতে হবে, যেখানে সেচের চাহিদা কম আছে। স্বল্প পানি খরচ পড়বে, এমন ফসল উৎপাদনে জোর দিতে হবে। 

অংশগ্রহণমূলক শান্তিপূর্ণ নির্বাচনই কাম্য

প্রকাশ: ১০ মে ২০২৪, ১১:১৪ এএম
অংশগ্রহণমূলক শান্তিপূর্ণ নির্বাচনই কাম্য

ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদের প্রথম ধাপের ভোট গত বুধবার অনুষ্ঠিত হয়েছে। স্থানীয় সরকার নির্বাচনে সাধারণত ভোটার উপস্থিতি বেশি লক্ষ করা যায়। কিন্তু এবার তা খুব একটা চোখে পড়েনি। অর্থাৎ শান্তিপূর্ণ ভোটে ভোটার উপস্থিতি ছিল কম। খবরের কাগজের তথ্য বলছে, ১১ হাজার ৪০০ কেন্দ্রের ৪০টিতে সহিংসতা, আহত অর্ধশতাধিক। প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, নির্বাচনে বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা ঘটেছে। এমন ৩৪টি ঘটনায় ৩৭ জনকে আটক করা হয়েছে।

দুটি কেন্দ্রে ভোট স্থগিত করা হয়েছে। ভোটের হার ৩০-৪০ শতাংশের মাঝামাঝি হতে পারে। নির্বাচন অবাধ, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ হয়েছে। প্রথম ধাপের উপজেলা নির্বাচনে কোনো প্রাণহানি ছাড়াই শান্তিপূর্ণভাবে হয়েছে বলে উল্লেখ করেন ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। অপরদিকে ৭ জানুয়ারির নির্বাচনের মতো উপজেলা নির্বাচনের ভুয়া নাটকও দেশের মানুষ বর্জন করেছেন বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান। তিনি দাবি করেন, ১৩৯ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে কোনো কোনো কেন্দ্রে একজন ভোটারও আসেননি।

তথ্য বলছে, ২০১৯ সালে প্রথমবার দলীয় প্রতীকে উপজেলা নির্বাচনে ভোটারের উপস্থিতি ছিল ৪০ দশমিক ২২ শতাংশ। তখন পাঁচ ধাপে উপজেলা ভোট অনুষ্ঠিত হয়। ভোটারদের নির্বাচন-বিমুখতা গণতন্ত্রের জন্য কখনোই ভালো ফল বয়ে আনে না বলে তৎকালীন জাতীয় সংসদের বিরোধী দলের সংসদ সদস্যরা মন্তব্য করেন। এর আগে ২০১৪ সালে অনুষ্ঠিত চতুর্থ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভোট পড়েছিল ৬১ শতাংশের মতো। সে বছর ছয় ধাপে উপজেলা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। দেড় দশক আগে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর ২০০৯ সালের ২২ জানুয়ারি তৃতীয় উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভোট পড়েছিল ৬৮ দশমিক ৩২ শতাংশ। অর্থাৎ গত দুই নির্বাচনে ভোটারের উপস্থিতি ব্যাপকভাবে কমেছে।

২০১৯ সালে প্রথমবার বিএনপি ও তাদের সমমনা দলগুলো উপজেলা নির্বাচন বর্জন করে। এর পর থেকেই ভোটারের উপস্থিতি কমতে থাকে। এবার দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে বিএনপির ৭৫ জন অংশ নিয়েছেন। বিএনপি তাদের দল থেকে বহিষ্কারও করেছে। এবারে নির্বাচন বর্জনকারী দলগুলোর তালিকা একটু বেশিই হবে। বিএনপি ছাড়াও তাদের জোটসঙ্গী দলগুলো- জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলন ও সিপিবির মতো দলগুলো নির্বাচন অর্থবহ হবে না জানিয়ে এই নির্বাচনে অংশ নেওয়া থেকে বিরত রয়েছে। ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও ভোটার উপস্থিতি খুব একটা সন্তোষজনক মনে না হওয়ায় কোনো কোনো রাজনৈতিক বিশ্লেষক হতাশা ব্যক্ত করেছেন। উপজেলা পরিষদ নির্বাচন নিয়েও রাজনৈতিক মহলে একধরনের হতাশার চিত্র ফুটে উঠেছে।

এবারের স্থানীয় সরকারের এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে চার ধাপে। এরপর ২১ মে দ্বিতীয় ধাপে ভোট হবে ১৬০টি উপজেলার, ২৯ মে তৃতীয় ধাপে ১১০ উপজেলায় এবং ৫ জুন চতুর্থ ধাপে ৫০টির বেশি উপজেলায় ভোট গ্রহণ করা হবে।

নির্বাচন কমিশন নির্বাচন পদ্ধতিতে জনগণের আস্থা ফেরানোর জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারে। নির্বাচনকে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ করতে কমিশন চেষ্টা চালিয়েছে এটা যেমন ঠিক, তেমনি ভোটার উপস্থিতি এবং দলীয় অংশগ্রহণ বাড়ানোটা আরও জরুরি হয়ে পড়েছে গণতন্ত্র রক্ষার জন্য। বেশ কয়েক বছরের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের চালচিত্র এটাই ইঙ্গিত দেয়। উপজেলা পরিষদ নির্বাচন দলীয় প্রতীক ছাড়া করা এবং স্বতন্ত্র প্রার্থিতার জন্য ১ শতাংশ ভোটারের স্বাক্ষর জমা দেওয়ার বাধ্যবাধকতা তুলে দেওয়ার মতো কিছু বিধি নির্বাচন কমিশন সংশোধন করেছে, যা ডামি নির্বাচন বা বিনা ভোটের নির্বাচন এড়াতেই এসব সংশোধনীর প্রয়োজন হয়েছে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন। এ দেশের গণতন্ত্রকে সুসংহত ও গতিশীল করতে অংশগ্রহণমূলক ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের বিকল্প নেই। পরবর্তী ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ করতে কমিশন আরও কার্যকর ভূমিকা রাখবে, সেটিই প্রত্যাশা। 

চা-শিল্পকে রক্ষা করুন

প্রকাশ: ০৯ মে ২০২৪, ১০:১৯ এএম
চা-শিল্পকে রক্ষা করুন

চা-শিল্প অনেকটাই প্রকৃতির ওপর নির্ভরশীল। তীব্র তাপপ্রবাহের ফলে এই শিল্পের উৎপাদন কমেছে। বলা যায়, উৎপাদন অর্ধেকে নেমে গেছে। তথ্য বলছে, প্রতিদিন ১৬ হাজার কেজির মতো পাতা প্রক্রিয়াজাত করার কথা ছিল, সেখানে মাত্র ৭ থেকে ৮ হাজার কেজি চা-পাতা প্রক্রিয়াজাতকরণ করা সম্ভব হচ্ছে। চা-বাগান কর্তৃপক্ষ বলছে, আগামী এক সপ্তাহ এ রকম তাপপ্রবাহ চলতে থাকলে চা-গাছ থেকে আর কোনো পাতা তোলা সম্ভব হবে না। এদিকে চা-শিল্পে খরার প্রভাবে উৎপাদিত চায়ের গুণগত মান পড়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন চা ব্যবসায়ীরা। উৎপাদন কমে গেলে স্বাভাবিকভাবে পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে চা-পাতার দাম বাড়বে। পাশাপাশি চায়ের মানও কমে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে।

তীব্র তাপপ্রবাহে চা-শিল্প সংকট ও চ্যালেঞ্জ দুটোর মুখেই পড়েছে। বিভিন্ন স্থানে চা-বাগান বন্ধ হওয়ার উপক্রম। এ অবস্থায় তাপপ্রবাহের ফলে সৃষ্ট সমস্যাগুলো মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হিসেবে দেখছেন অনেকে। দীর্ঘদিন ধরে বৃষ্টি না হওয়ায় চা-গাছে গজাচ্ছে না নতুন কুঁড়ি, পুড়ে যাচ্ছে চা-গাছের পাতা। নানান জাতের রোগবালাই দেখা দিচ্ছে। পাশাপাশি তীব্র তাপপ্রবাহে চা-গাছের পাতা তুলতে সমস্যায় পড়ছেন চা-শ্রমিকরা। তীব্র গরমে লোডশেডিংয়ে ব্যাহত হচ্ছে উৎপাদন।

চলমান তাপপ্রবাহের কারণে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে ৪২টি চা-বাগানের চা-গাছে আসছে না নতুন পাতা ও কুঁড়ি। পাশাপাশি ছায়াবৃক্ষের নিচে থাকা চা-গাছগুলোতে ধরেছে ‘বাঞ্জি দশা’, চায়ের পাতা শক্ত হয়ে যাওয়া। দীর্ঘদিন ধরে চাহিদামাফিক বৃষ্টি না হওয়ায় চা-গাছগুলোয় আক্রমণ করেছে রেড স্পাইডার, ফলে চা-গাছগুলোতে ধরেছে লাল রোগ। লাল রোগের প্রভাবে চা-গাছের পাতাগুলো লাল হয়ে ঝরে যাচ্ছে।

সাধারণত মার্চ-এপ্রিল মাসকে চা-পাতা উৎপাদনের ভরা মৌসুম হিসেবে ধরা হয়। কিন্তু উৎপাদনের এই ভরা মৌসুমে তীব্র তাপপ্রবাহের ফলে চা-শিল্পে আশানুরূপ উৎপাদন নিয়ে দেখা দিয়েছে শঙ্কা।

বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউট সূত্রে জানা যায়, সাধারণত চা-গাছগুলো ৩২ ডিগ্রি পর্যন্ত তাপ সহ্য করতে পারে। কিন্তু এবার গড় তাপমাত্রা থাকছে ৩৬ ডিগ্রির ওপর। চা-গাছগুলোতে পর্যাপ্ত পরিমাণে সেচ দেওয়া সত্ত্বেও ময়েশ্চার ধরে রাখা যাচ্ছে না। অতিরিক্ত তাপ মাটি থেকে দ্রুত পানি শুষে নিচ্ছে।

বাংলাদেশ চা গবেষণা কেন্দ্রের পরিচালক ড. ইসমাইল হোসেন বলেন, এই তাপপ্রবাহ ও খরার সময় সেচ এবং পচা গোবরের সঙ্গে টিএসপি সার মিশিয়ে বাগানগুলোর মাটিতে দিলে ভালো ফল মিলতে পারে।

বাংলাদেশ চা বোর্ডের প্রকল্প উন্নয়ন ইউনিটের পরিচালক ড. এ কে এম রফিকুল হক বলেন, ‘সারা বিশ্বের জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব আমাদের দেশেও পড়েছে। যে কারণে এই তাপপ্রবাহের সৃষ্টি হয়েছে। তাপপ্রবাহে চা-বাগান মালিকদের আমরা চা-গাছ টিকিয়ে রাখার জন্য প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছি। এ বছর আমাদের চা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১০৮ মিলিয়ন কেজি। এই তাপপ্রবাহ চলমান থাকলে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে বেশ বেগ পেতে হবে।’

চলমান তাপপ্রবাহ থেকে চা-শিল্পকে রক্ষার জন্য সরকারকে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। চায়ের গুণগত মান ঠিক রাখতে এবং চা-শিল্পের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় করণীয় ঠিক করতে হবে কর্তৃপক্ষকে। চা-শিল্পের উৎপাদনশীলতা বাড়াতে এবং
চা-গাছ টিকিয়ে রাখার জন্য বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ কাজে লাগাতে হবে। 

ফিলিস্তিনে শান্তি ফেরাতে ঐকমত্য প্রয়োজন

প্রকাশ: ০৮ মে ২০২৪, ১০:৪০ এএম
ফিলিস্তিনে শান্তি ফেরাতে ঐকমত্য প্রয়োজন

ফিলিস্তিনে মানবতার বিরুদ্ধে এক ভয়াবহ অপরাধ সংঘটিত হয়ে আসছে সেই অর্ধশতাব্দী আগে থেকে। গত বছরের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের হামলার পর গাজায় হামলা চালানো শুরু করে ইসরায়েলি সেনারা। তাদের হামলায় ছোট এ উপত্যকায় ৩৪ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হওয়ার পাশাপাশি হাজার হাজার ঘরবাড়ি ধ্বংস হয়েছে। এ হামলার প্রতিবাদে ফুঁসে উঠেছেন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। ফিলিস্তিনিদের অধিকার, তাদের ভূখণ্ড দখল করেছে ইসরায়েল। এটিই বড় সমস্যা। এর শান্তিপূর্ণ সমাধানের জন্য বারবার প্রস্তাব দিলেও তোয়াক্কা করছে না ইসরায়েল। প্রতিবছর হাজার হাজার ফিলিস্তিনিকে হত্যা করা হয়েছে। বিশ্ব মানবতা তার প্রতিবাদ জারি রেখেছে। গাজায় গণহত্যার প্রতিবাদে মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা যে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করছিলেন, তাতে বহিরাগতরা হস্তক্ষেপ করছে। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালিয়েছে পুলিশ। জানা গেছে, আন্দোলন দমাতে কর্তৃপক্ষই পুলিশ ডেকে এনেছে। বিশ্বজুড়ে যে প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে, তা ক্রমেই জোরদার হচ্ছে।

বিশিষ্টজনরা বলছেন, অস্ত্র ও অর্থ দিয়ে গণহত্যা টিকিয়ে রেখেছে পশ্চিমারা। মুসলিম উম্মাহর একাত্মতা ফিলিস্তিন সংকট সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। ইইউর অনেক দেশ ফিলিস্তিনকে স্বাধীন হিসেবে স্বীকৃতি দিতে চেয়েছে। এটা ভালো পদক্ষেপ। ফিলিস্তিনের সাধারণ জনগণের ওপর ইসরায়েলি আগ্রাসন স্থায়ীভাবে নিরসনের লক্ষ্যে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ওআইসির সদস্যদেশগুলোকে ঐক্যবদ্ধভাবে আরও কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস গাজার মানুষের জন্য ওই অঞ্চলের স্বার্থের বিষয়টি আমলে নিয়ে ইসরায়েল ও হামাসকে সমঝোতায় পৌঁছানোর অনুরোধ জানিয়েছেন।

জাতিসংঘের অফিস ফর দ্য কো-অর্ডিনেশন অব হিউম্যানিটেরিয়ান অ্যাফেয়ার্স বলছে, ইসরায়েল রাফায় স্থল অভিযান চালালে শত শত মানুষ মৃত্যুঝুঁকিতে পড়বে। জাতিসংঘ থেকে শুরু করে বিশ্বের বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মানবিক সংস্থা জানিয়েছে, ইসরায়েল গাজায় আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করছে। ইসরায়েলের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার আদালতের শরণাপন্ন হয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা। তারা সরাসরি ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গাজায় গণহত্যা চালানোর অভিযোগ তুলেছে। আদালতের পক্ষ থেকেও ইসরায়েলকে গণহত্যামূলক কর্মকাণ্ড থামানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সেসব কোনো কাজে আসেনি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রে ছাত্ররা বিক্ষোভ করছে, কিন্তু মধ্যপ্রাচ্যে কোনো বিক্ষোভ নেই। যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলকে সমর্থন দিচ্ছে। এখানে মধ্যপ্রাচ্যে কোনো ছাত্র বিক্ষোভ দেখছি না বা ইরান-ইরাকেও কোনো বিক্ষোভ হচ্ছে না। এর কারণ হচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যের যারা শাসক, তারা ইসরায়েলের মতো পুঁজিবাদী হয়ে গেছে। তারা ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ করছে না। অসহায় ফিলিস্তিনিরা আরও অসহায় হয়ে পড়েছে। এই বিশ্বব্যবস্থার পরিবর্তন আনতে হবে। হিটলারি ব্যবস্থার পরিবর্তন করতে হবে। ব্যক্তিমালিকানার জায়গায় সামাজিক মালিকানা প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এই পৃথিবীকে বদল করতে হবে। তা না হলে আমরা টিকতে পারব না। সংগ্রামটা এখন বিশ্বব্যাপী।’

একদিকে করোনার জাঁতাকলে বৈশ্বিক মন্দা, অন্যদিকে যুদ্ধের নিষ্ঠুর ভয়াবহতা- এসবই মানবজাতির জন্য অকল্যাণকর। বৈশ্বিক এই পরিস্থিতি কাটিয়ে বিশ্বে মানবতার একাত্মতা প্রয়োজন। বিশ্বে শান্তি ফিরিয়ে দেওয়ার পরিবর্তে বিশ্ব মোড়লরা অশান্তির বিষবাষ্প ছড়িয়ে দিচ্ছে। ইসরায়েল-ফিলিস্তিনিদের ক্ষেত্রেও তাই আজ স্পষ্ট। মানবতার কথা বিশ্ব মোড়লরা বললেও কেউই এর ধারেকাছে নেই। আরব রাষ্ট্রগুলোর একাত্মতাও এই ইস্যুতে চোখে পড়ছে না। বরং জিইয়ে রেখেছে যুদ্ধ। বিশ্ব থেকে যুদ্ধ নামক সব সংকট দূর হোক এবং ফিলিস্তিন রাষ্ট্রে শান্তি ফিরে আসুক, এটাই প্রত্যাশা।