ইট-পাথরের নগরীতে আবাসিক এলাকায় অগ্নিনির্বাপণব্যবস্থা খুবই নাজুক। এসব এলাকায় আইনের তোয়াক্কা না করে গড়ে উঠেছে হাজারও আবাসিক ভবন। এসব ভবনে নিজস্ব অগ্নিনির্বাপণব্যবস্থা দূরে থাক, রাস্তা এতটাই সরু যে কোনো ভবনে দুর্ঘটনা ঘটলে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি প্রবেশেরও সুযোগ নেই। এ কারণে মানুষের জীবনহানি ও সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি বেশি হয়। অগ্নিনির্বাপণ আইনে বলা আছে, ছয় তলার ওপরে ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে তিন স্তরের নিজস্ব স্থায়ী অগ্নিনির্বাপণব্যবস্থা থাকতে হবে। কিন্তু বেশির ভাগ আবাসিক ভবনে এ নিয়ম মানা হয় না। এতে প্রতিবছর অগ্নিকাণ্ডে বিপুল সম্পদহানি ঘটে। নগর বিশেষজ্ঞদের মতে, অনেক ভবনমালিক বহুতল ভবনের বিরোধপূর্ণ আইনি সংজ্ঞার সুযোগ নিয়ে অগ্নিনিরাপত্তা বিধিমালা মেনে চলেন না। কোনো আবাসিক বা বাণিজ্যিক ভবনে আগুন লাগার পর অনুসন্ধানে দেখা যায়, সেখানে আগুন নেভানোর কোনো নিরাপত্তাব্যবস্থা ছিল না। বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের তথ্যানুযায়ী, ২০২৩ সালে সারা দেশে মোট ২৭ হাজার ৬২৪টি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। অর্থাৎ প্রতিদিন গড়ে দেশে ৭৭টি আগুনের ঘটনা ঘটেছে এবং তাতে কয়েক শ মানুষ আহত ও নিহত হয়েছেন।
সূত্র জানায়, একটি আবাসিক এলাকায় অগ্নিদুর্ঘটনা এড়ানোর জন্য নানা রকম সুবিধা থাকবে। সেগুলো হলো বাসার ফ্লোরের আয়তন বেশি হওয়া, সিঁড়ির প্রশস্ততা, জরুরি প্রস্থানের সিঁড়ির সংখ্যা বেশি হওয়া এবং প্ৰতি তলায় সেফটি লবি থাকা, যাতে আগুন লাগলে বাসিন্দারা সেখানে আশ্রয় নিতে পারেন। এ ছাড়া বাসার ছাদে ওঠার একাধিক সিঁড়ি রাখা, ছাদের দরজায় কোনো অবস্থাতেই তালা না দেওয়া অর্থাৎ সব সময় খোলা রাখা, ছাদের ওপর পানির ট্যাংকে ওঠার ছোট সিঁড়ি রাখা এবং সেখানে কিছু অতিরিক্ত জায়গা রাখা, বাসার নিচের রিজার্ভ ট্যাংকে ৭০ হাজার গ্যালন পানি থাকার ব্যবস্থা, রিজার্ভ ট্যাংকের মুখ বড় হওয়া। ট্যাংকের চারপাশ বড় হলে সেটি আগুনের ঝুঁকিমুক্ত হিসেবে বিবেচিত হবে। এ ছাড়া আবাসিক ভবনের বৈদ্যুতিক ওয়্যারিং থাকা, ফায়ার এক্সটিংগুইশার থাকা ও বাসায় আলো চলাচলের ব্যবস্থা থাকতে হবে।
ঢাকার অধিকাংশ আবাসিক ভবনেই আগুন থেকে সুরক্ষার জন্য কোনো ব্যবস্থা নেই। থাকলেও সেটি লোক দেখানো। অধিকাংশ আবাসিক ভবন ঝুঁকিপূর্ণ। ঢাকায় কতটি আবাসিক ভবন ঝুঁকিপূর্ণ তা কোনো প্রতিষ্ঠান আলাদা করে সমীক্ষা করেনি। তবে ফায়ার সার্ভিসের একটি সূত্র বলছে, তারা প্রাথমিক পর্যায়ে ছোট করে একটি জরিপ করেছিল। কিন্তু সেটি চূড়ান্ত নয়। ওই প্রতিবেদনে দেখা গেছে, প্রায় ৮৫ শতাংশ আবাসিক ভবনই অগ্নিঝুঁকিপূর্ণ।
সামাজিক সংগঠন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের পক্ষ থেকেও বলা হয়েছে, ঢাকায় ৮৫ শতাংশ আবাসিক ভবনই আগুনের ঝুঁকিতে রয়েছে। ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে বিভিন্ন স্থানে আগুনের ঝুঁকিতে রয়েছে, এমন ভবনে ব্যানার টাঙানো হয়ে থাকে। কিন্তু তারা আইনগত প্রক্রিয়া প্রয়োগ করতে পারে না বলে তাদের এই এই কার্যক্রম অনেকেই কর্ণপাত করে না। বিষয়টি দেখভাল করে রাজউক।
নিয়মনীতি ও কর্তৃপক্ষের নজরদারি থাকলে আবাসিক এলাকায় অগ্নিনির্বাপণব্যবস্থা এমন হতো না। আবাসিক এলাকায় আইন লঙ্ঘন করে যারা ভবন নির্মাণ করেছে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। সেই সঙ্গে কর্তৃপক্ষের নজরদারিও বাড়াতে হবে।