চট্টগ্রামের দর্জিপাড়াখ্যাত খলিফাপট্টিতে তৈরি হয় লেহেঙ্গা, গাউন, স্কার্ট, থ্রিপিস, পাঞ্জাবিসহ বিভিন্ন ধরনের পোশাক। ঈদ এলে এখানকার কারিগরদের দম ফেলার সময় থাকে না। এখানে তৈরি করা পোশাকগুলো বিদেশি পোশাক হিসেবে বিক্রি হয় বিভিন্ন শপিং সেন্টারে। বলতে গেলে অবিকল নকলের কারখানা খলিফাপট্টি।
জানা গেছে, খলিফাপট্টিতে ৮৫ শতাংশ লেডিস জামা কাপড়, ১৫ শতাংশ জেন্টসের পোশাক তৈরি হয়। এটি থেকে চট্টগ্রামের কাপড়ের চাহিদার প্রায় ২০ শতাংশ পূরণ হয়। কারখানাগুলোতে সর্বনিম্ন ২০০ টাকা থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকার জামাও তৈরি হয়। কাপড়গুলোর দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় বেশ ভালো চাহিদা রয়েছে।
খলিফাপট্টিতে গিয়ে দেখা গেছে, দিনরাত সেলাই মেশিনের খটখট শব্দে ব্যস্ত সময় পার করছেন শ্রমিকরা। নগরীর সিরাজউদ্দৌলা রোডের সাবেরিয়া বাজারসংলগ্ন খলিফাপট্টিতে সাধারণত রমজান শুরুর দুই সপ্তাহ আগে দর্জিদের ব্যস্ততা শুরু হয়। কারিগরদের যেন দম ফেলার ফুরসত নেই। কেউ কাপড় কাটছেন, কেউ-বা সেলাই করছেন, কেউ আবার সেলাই করা কাপড়ে নানা ধরনের পুঁতি ও লেইস সংযুক্ত করছেন।
খলিফাপট্টির কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, এখানকার ব্যবসায়ীরা সারা বছর রমজানের ঈদের দিকে তাকিয়ে থাকেন। সারা বছর যত কাজ হয়, তার ৮০ শতাংশ কাজ হয় ঈদকেন্দ্রিক। কারখানাগুলোতে সর্বনিম্ন ২০০ টাকা থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকার জামাও তৈরি হয়। দেশি ছাড়াও বিদেশি বিভিন্ন বাহারি ডিজাইনের স্যুট, শার্ট, প্যান্ট, থ্রিপিস, লেহেঙ্গা ও স্কার্ট তৈরি করে থাকেন খলিফাপট্টির ডিজাইন মাস্টাররা।’
খলিফাপট্টির এসএস গার্মেন্টের স্বত্বাধিকারী মোহাম্মদ ইয়ামিন বলেন, ‘জিনিসপত্রের দাম প্রায় দ্বিগুণ হয়ে গেছে। এছাড়া উৎপাদন খরচও বেড়েছে। তাই আগের চেয়ে লাভ কমে গেছে।’
নুর ফ্যাশনের স্বত্বাধিকারী মোহাম্মদ সেলিম বলেন, ‘গার্মেন্ট শার্ট, থ্রিপিস, ফ্রক, প্যান্ট সব কিছুই আমরা তৈরি করি। নিজেদের কারখানায় তৈরি করা পোশাক পাইকারি বিক্রি করি। আমরাই সবচেয়ে কম দামে ভালো পোশাক বিক্রি করি।’
রহমান ফ্যাশনের মালিক আবদুর রহমান বলেন, ‘আমাদের তৈরি করা পোশাক বিভিন্ন শপিং সেন্টারে বিদেশি পোশাক হিসেবে বিক্রি হচ্ছে। অথচ আমরা কম লাভে কম দামে পাইকারি বিক্রি করেছি।’
রুপনা ফ্যাশনের আবদুল রহিম বলেন, ‘বিশেষ করে রমজানের শেষের দিকে খুচরা দোকানে কাপড়ের টান পড়লে আমাদের এখান থেকে কাপড় নিয়ে যায়। বড় শপিং সেন্টারগুলোতে নেওয়া হয়। দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় আমাদের তৈরি পোশাকের বেশ চাহিদা রয়েছে। দূর-দূরান্ত থেকে ব্যবসায়ীরা পাইকারি পণ্য কেনার জন্য আমাদের এখানে আসেন। আমরাও কম দামে বেশি পণ্য বিক্রি করার চেষ্টা করি। ফলে যুগ যুগ ধরে আমাদের এ ব্যবসা টিকে আছে।’
খলিফাপট্টির খাজেম আলী বাই লেনের ‘আশা আল্লাহ দোয়েল ফ্যাশনে’র মালিক আবদুর রহিম বলেন, ‘গুণে ও মানে ভালো পোশাক তৈরি হয় খলিফাপট্টিতে।’
খলিফাপট্টি বণিক কল্যাণ সমিতির সভাপতি নুরুল ইসলাম বলেন, ‘এখানে ২০০ টাকা থেকে ১০ হাজার টাকার কাপড় পাওয়া যায়। এ কাপড়গুলোই বড় শপিং সেন্টারে গেলে বিদেশি কাপড় হয়ে যায়। এমনিতেই আমাদের এখন ভারতীয় পোশাকের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে টিকে থাকতে হচ্ছে। তবে আমি এটুকু বলতে পারি, আমাদের পোশাকের মান ভারতীয় পোশাকের চেয়ে কোনো অংশেই খারাপ না।’
তিনি বলেন, ‘এখন জামা কাপড় তৈরির অনেক উপকরণের দাম বেড়েছে। তারপরেও সব মিলিয়ে আমাদের বিক্রি মোটামুটি ভালোই হয়। বর্তমানে খলিফাপট্টিতে ২৫০টি কারখানা এবং ১০০টির মতো শোরুম রয়েছে। বিদেশি জামা কাপড়ের ওপর নির্ভরশীলতাও কমাতে কাজ করছে খলিফাপট্টির ব্যবসায়ীরা।’
১৯৪৭ সালের পর আইয়ুব আলী নামে নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের এক ফেরিওয়ালা নিজ গ্রামের কিছু লোকজন এনে খলিফাপট্টিতে কাপড় তৈরির কাজ শুরু করেন। সেই থেকেই শুরু। বর্তমানে খলিফাপট্টিতে প্রায় ২৫০ কারখানা রয়েছে। পুরোনো বেশ কয়েকটি ভবনজুড়ে রয়েছে কারখানাগুলো। প্রায় সব কারখানার শ্রমিক হচ্ছে নোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুর জেলার।