পেঁয়াজ রপ্তানিতে ভারতের ২০ শতাংশ শুল্কহার কমানোর খবরের প্রভাব পড়েছে চট্টগ্রামের পাইকারি বাজারে। দুই দিনের ব্যবধানে সব ধরনের পেঁয়াজে কেজিপ্রতি ১০ টাকা কমেছে বলে জানিয়েছেন পাইকারি ব্যবসায়ীরা।
খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, ভারত পেঁয়াজ রপ্তানিতে শুল্ক কমানোর খবরে গত শুক্রবার থেকে খাতুনগঞ্জে পেঁয়াজের দাম কমতে শুরু করেছে। বর্তমানে খাতুনগঞ্জে দেশি ও ভারতীয় পেঁয়াজ রয়েছে। চীন ও মিসর থেকে আসা পেঁয়াজের সরবরাহ একেবারে নেই। পাশাপাশি পাকিস্তানি পেঁয়াজের সরবরাহও অনেকটাই কমে গেছে। ভারত থেকে কম শুল্কে পেঁয়াজ এলে বর্তমানে সরবরাহে থাকা আগের কেনা দেশি ও ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হবে না। তখন বড় লোকসানে পড়তে হবে। তার ওপর বেচাকেনাও কম। তাই ব্যবসায়ীরা দাম কমিয়ে আড়তে থাকা পেঁয়াজগুলো বিক্রি করে দিচ্ছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার খাতুনগঞ্জে কেজিপ্রতি দেশি পেঁয়াজ ১০৫ টাকা ও ভারতীয় পেঁয়াজ ১০০ থেকে ১০৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে। অন্যদিকে পাকিস্তানি পেঁয়াজ ৮৩ টাকা ও মিসরের পেঁয়াজ ৭৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে। বর্তমানে ভারতীয় ও দেশি পেঁয়াজ ৯৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তা ছাড়া পাকিস্তান থেকে আসা পেঁয়াজ কেজিপ্রতি ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
চাক্তাইয়ের আফরা ট্রেডার্সের মালিক মো. আলাউদ্দিন খবরের কাগজকে বলেন, ‘বর্তমানে চাক্তাই-খাতুনগঞ্জে দেশি, ভারতীয় ও পাকিস্তানি পেঁয়াজ রয়েছে। দামও কমতে শুরু করেছে। কম শুল্কের ভারতীয় পেঁয়াজ এই সপ্তাহে বাজারে চলে আসবে। সরবরাহ বাড়বে। তখন পণ্যটির দাম আরও কমে যাবে।’
খাতুনগঞ্জের হামিদুল্লাহ মিয়া মার্কেট ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. ইদ্রিস খবরের কাগজকে বলেন, ‘ভারত পেঁয়াজ রপ্তানিতে ২০ শতাংশ শুল্ক কমিয়েছে, এমন খবরে খাতুনগঞ্জে প্রতি কেজি পেঁয়াজে ১০ থেকে ১৫ টাকা কমে গেছে। এসব পেঁয়াজ আগের কেনা। নতুন নির্ধারিত শুল্কের পেঁয়াজ বাজারে এখনো আসেনি। কিন্তু চলে এলে পুরোনো পেঁয়াজের প্রতি ক্রেতার আগ্রহ থাকবে না। তখন ব্যাংক লোন শোধ করা সম্ভব হবে না। তাই আমরা কেজিপ্রতি ১০ থেকে ১৫ টাকা লোকসান দিয়ে পণ্যটি বিক্রি করে দিচ্ছি। পাশাপাশি চলতি সপ্তাহের মধ্যে ক্রেতারা কম দামে ভারতীয় পেঁয়াজ পাবেন।’
যা বলছেন সীমান্তের ব্যবসায়ীরা
গত বছরের ডিসেম্বর থেকে চলতি বছরের ৩১ মার্চ পর্যন্ত চার মাসের জন্য পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ ঘোষণা করে ভারত। এর পর থেকেই হিলিসহ দেশের বিভিন্ন স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ থাকে। গত ২৩ মার্চ সেই মেয়াদের সময়সীমা বাড়িয়ে অনির্দিষ্টকালের জন্য পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ ঘোষণা করে ভারত সরকার। পরে গত ৪ মে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নেয় ভারত সরকার। কিন্তু রপ্তানিতে ৪০ শতাংশ শুল্ক আরোপ রেখেছিল দেশটি।
ভারত গত ১৩ সেপ্টেম্বর পেঁয়াজ রপ্তানিতে শুল্কহার ৪০ শতাংশ থেকে নামিয়ে ২০ শতাংশ করেছে। তবে পাইপলাইনে এখনো অনেক ট্রাক সারিবদ্ধভাবে ওই দেশের বর্ডারে দাঁড়িয়ে আছে। সিদ্ধান্ত হলেও এখন পর্যন্ত ২০ শতাংশ শুল্কে ভারত পেঁয়াজ বাংলাদেশে ছাড়েনি। অন্যদিকে ১৬ সেপ্টেম্বর (আজ সোমবার) ঈদে মিলাদুন্নবীর (দ.) বন্ধ রয়েছে। চলতি সপ্তাহের মধ্যেই নতুন নির্ধারিত শুল্কহারে পেঁয়াজ বাংলাদেশে আসবে বলে জানিয়েছেন সীমান্তের ব্যবসায়ীরা।
আমদানিকারকরা হিসাব কষে জানিয়েছেন, বর্তমানে ভারত থেকে প্রতি কেজি পেঁয়াজ আনতে ৪৮ রুপি খরচ পড়বে। বাংলাদেশি মুদ্রায় ৬৮ টাকা (প্রতি রুপি ১ টাকা ৪৩ পয়সা হিসেবে)। বাংলাদেশে প্রতি কেজিতে গাড়ি ভাড়া খরচ ৪ টাকা। ওই হিসাবে প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম পড়বে ৭২ টাকা। আগে ৪০ শতাংশ শুল্কে পেঁয়াজ আমদানি খরচ পড়ত শত টাকার কাছাকাছি।
তবে আমদানিকারকরা আরও জানিয়েছেন, ভারতে যদি আবহাওয়া ভালো থাকে, এক সপ্তাহ পর প্রতি কেজি পেঁয়াজ ২০ থেকে ২২ রুপিতে পাওয়া যাবে। তখর খুচরা পর্যায়ে ৫০ থেকে ৫৫ টাকা কেজিতে ভারতীয় পেঁয়াজ পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
হিলি স্থলবন্দর দিয়ে পেঁয়াজ আমদানিকারক মো. মোবারক হোসাইন খবরের কাগজকে বলেন, ‘গত ছয় মাসেরও বেশি সময় ধরে আমরা ৪০ শতাংশ হারে শুল্ক দিয়ে পেঁয়াজ এনেছি। তবে এ সময়ে দেশটি থেকে পেঁয়াজ রপ্তানিতে ধস নামে। কারণ আমাদের আমদানিকারকরা এত বেশি শুল্ক দিয়ে পেঁয়াজ আনতে অনাগ্রহ দেখান। তাই গত ১৩ সেপ্টেম্বর ভারত পেঁয়াজ রপ্তানিতে ২০ শতাংশ শুল্ক নির্ধারণ করে। তবে সেটা এখনো বাস্তবায়ন করেনি দেশটি। আশা করছি, চলতি সপ্তাহের মধ্যে আমরা নির্ধারিত শুল্কে পেঁয়াজ আনতে পারব। বর্তমানে পাইপলাইনে প্রচুর পেঁয়াজ আছে। চলতি সপ্তাহের মধ্যে পেঁয়াজের সরবরাহ অনেক বেড়ে যাবে। মানুষ কম দামে পেঁয়াজ পাবে।’
পেঁয়াজ রপ্তানির ওপর বিধিনিষেধ আরও শিথিল করেছে ভারত। পেঁয়াজ রপ্তানির ওপর চার মাস আগে আরোপ করা ৪০ শতাংশ শুল্ক কমিয়ে ২০ শতাংশ করার ঘোষণা দিয়েছে দেশটির সরকার। গত শুক্রবার সন্ধ্যায় ভারতের বৈদেশিক বাণিজ্য সংস্থার মহাপরিচালক সন্তোষ কুমার স্বাক্ষরিত এক নোটিশের মাধ্যমে পেঁয়াজ রপ্তানিতে শুল্ক প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়।