
গল্প: মাসি-পিসি
অনুধাবনমূলক প্রশ্ন ও উত্তর
প্রশ্ন-৮. মাসি-পিসির বিরোধ দূর হয়েছিল কীভাবে, ব্যাখ্যা করো?
উত্তর: ‘মাসি-পিসি’ গল্পে জীবন-সংগ্রামে একসঙ্গে রোজগার করতে গিয়ে মাসি-পিসির বিরোধ দূর হয়েছিল। মাসি-পিসির মধ্যে আগেও সুসম্পর্ক ছিল। কিন্তু পিসির বাপের বাড়িতে মাসি আশ্রয় নেওয়ায় মাসির প্রতি পিসির অবজ্ঞা ও অবহেলার ভাব ছিল। পিসি মাঝে মধ্যে মাসিকে খোঁচা দিলে ঝগড়া বেঁধে যেত। দুর্ভিক্ষের পর গ্রামের শাকসবজি নিয়ে শহরে গিয়ে বিক্রি করে রোজগারের চেষ্টা শুরু করার পর থেকে তাদের দুজনের মন, প্রাণ এক হয়ে গেল। আর আহ্লাদির দায়িত্ব বুঝে নেওয়ার পর তাদের বিরোধও উবে গেল। একদিকে দুর্ভিক্ষ এবং অন্যদিকে আহ্লাদির প্রতি দায়িত্বশীল হওয়ায় মাসি-পিসির সব বিরোধ দূর হয়ে যায়।
প্রশ্ন-৯. ‘মাসি-পিসি’ গল্পে জগুর বউ নিয়ে যাওয়ার জন্য এত আগ্রহের কারণ কী ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: ‘মাসি-পিসি’ গল্পে আহ্লাদির বাপের জমিজমার লোভে জগু বউ নিয়ে যাওয়ার জন্য এত আগ্রহ দেখায়। দুর্ভিক্ষের সময় আহ্লাদির বাবা-মা ও ভাই মারা যায়। এতে বাপের ঘরবাড়ি ও জমিজমার মালিক হয় আহ্লাদি। আহ্লাদিকে নিলে জগু তার জমিজমার মালিক হতে পারবে। আর এ লোভেই সে আহ্লাদিকে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে খুব আগ্রহী ছিল। শ্বশুরের সম্পত্তির প্রতি লোভ থেকেই জগু কৈলাশকে দিয়ে মাসি-পিসিকে জানায় সে এখন ভালো হয়ে গেছে এবং বউ নিয়ে সংসার করতে যায়।
আরো পড়ুন : মাসি-পিসি গল্পের ৫টি অনুধাবনমূলক প্রশ্নোত্তর, ২য় পর্ব
প্রশ্ন-১০. মাসি-পিসি খালি ঘরে আহ্লাদিকে রেখে যেতে সাহস পায় না কেন?
উত্তর: আহ্লাদির নিরাপত্তার কথা ভেবে মাসি-পিসি খালি ঘরে তাকে রেখে যেতে সাহস পায় না। স্বামী জগুর অত্যাচার থেকে বাঁচার জন্য আহ্লাদি বাবার বাড়ি চলে আসে এবং মাসি-পিসির কাছে আশ্রয় নেয়। কিন্তু এখানেও তার নিরাপত্তা ছিল না। গ্রামের জোতদার, দারোগা ও গুন্ডা-বদমাশদের লালসার দৃষ্টি পড়ে তার ওপর। তাই মাসি ও পিসি আহ্লাদিকে ঘরে একা রেখে কোথাও যাওয়ার সাহস করে না। কোথাও যেতে হলে তারা আহ্লাদিকে সঙ্গে করে নিয়ে যায়। গ্রামের নারীর কোনো নিরাপত্তা ছিল না। গোকুল মাতব্বর যখন-তখন যে কোনো নারীর দিকে চোখ দিলে তার আর রক্ষা হতো না। তাই মাসি-পিসি আহ্লাদিকে সঙ্গে সঙ্গে রাখত।
প্রশ্ন-১১. ‘ছেলের মুখ দেখে পাষাণ নরম হয়।’ উক্তিটি ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: ‘মাসি-পিসি’ গল্পের প্রশ্নোক্ত উক্তিটিতে সংসারে সন্তানাদি এলে অত্যাচারী পুরুষ মানুষও যে সন্তানের মায়ায় পরিবর্তিত হয়, জগু প্রসঙ্গে এ কথা বলা হয়েছে।
সন্তানের প্রতি পিতা-মাতা স্বভাবতই সংবেদনশীল হয়। অপত্য স্নেহের বশবর্তী হয়ে কঠিন হৃদয়ের মানুষও আবেগে আপ্লুত হয়। আর তাই সন্তানের প্রতি স্নেহের কারণে স্ত্রী নির্যাতনকারী কঠিন হৃদয়ের পুরুষও অনেক সময় স্ত্রীর প্রতি যত্নশীল হয়। আলোচ্য উক্তিটিতে মাদকাসক্ত, নিষ্ঠুর জগুও যে ঘরে সন্তান এলে পরিবর্তিত হবে, আহ্লাদি আবার সুখের সংসার করতে পারবে, পিসি সে কথা সান্ত্বনার সুরে আহ্লাদিকে জানায় এবং অভয় দিয়ে তাকে আশাবাদী করে তোলে।
লেখক : সহকারী অধ্যাপক বাংলা
আদমজী ক্যান্টনমেন্ট কলেজ, ঢাকা
কবীর