প্রবন্ধ রচনা
জাতীয় ফল কাঁঠাল
ভূমিকা: অজস্র মজাদার ফলে বাংলাদেশের প্রকৃতি ভরপুর। এসব ফলের রয়েছে বিচিত্র নাম, ভিন্ন রূপ, নানা স্বাদ ও গন্ধ। গ্রীষ্মকালীন ফল কাঁঠাল। কাঁঠাল বাংলাদেশের জাতীয় ফল। এ ফল গন্ধ ও স্বাদে বাঙালির অতিপ্রিয়। কবির ভাষায়-
‘কাঁঠাল কণ্ঠকে ঘেরা ভিতরেতে কোষ,
তার তরে এ ফলে কেবা দেয় দোষ।’
আকার-আকৃতি: কাঁঠাল আকৃতিতে বেশ বড়। গায়ে থাকে কাঁটার আবরণ। কাঁচা কাঁঠাল সবুজ বা সবুজাভ হলুদ কিংবা হলদেটে রঙের হয়ে থাকে। কাঁঠাল গাছ মাঝারি থেকে বড় হয়ে থাকে। একটি গাছে অনেক কাঁঠাল ধরে। গাছের গোড়া থেকে শাখা পর্যন্ত কাঁঠাল ধরে।
প্রাপ্তিস্থান: কাঁঠাল বাংলাদেশের প্রায় সর্বত্রই পাওয়া যায়। তবে গাজীপুর, টাঙ্গাইল, নরসিংদী, ময়মনসিংহ ও যশোরে কাঁঠালের ফলন বেশি হয়। বাংলাদেশের পার্বত্য জেলাগুলোতে ও সিলেটের পাহাড়ে বিশেষ আকারের ও স্বাদের কাঁঠাল জন্মে।
চাষপদ্ধতি: কাঁঠাল উঁচু জমির ফল। যেখানে বৃষ্টির পানি জমে না, সেখানে কাঁঠাল গাছ ভালো জন্মে। বীজ এবং কলমের মাধ্যমে কাঁঠাল গাছের বংশবৃদ্ধি ঘটানো যায়। বীজ থেকে চারা উৎপন্ন করলে সেই চারা এক স্থান থেকে অন্য স্থানে নিয়ে রোপণ করলে উৎপাদন ভালো হয়।
আরো পড়ুন : মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী প্রবন্ধের ২টি বর্ণনামূলক প্রশ্নোত্তর
অর্থনৈতিক গুরুত্ব: বাংলাদেশে কাঁঠালের বাণিজ্যিক চাষ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এটি দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে চাষ করা হয় এবং বাজারে বিক্রি করা হয়। এ ছাড়া কাঁঠালের রপ্তানি সম্ভাবনা রয়েছে। বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপের দেশগুলোয় কাঁঠাল রপ্তানির মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব হচ্ছে। কাঁঠালের চাষ কৃষকদের আয় বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। এটি কৃষকদের ও দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
উপকারিতা: কাঁঠালের ভেতর অসংখ্য কোষ হয়ে থাকে। কাঁচা অবস্থায় তা কেটে রান্না করে খাওয়া হয়। কাঁঠালের সব অংশই ব্যবহার করা যায়। পাকা কাঁঠালের কোষ মানুষের উপাদেয় ও পুষ্টিকর খাবার। এর ছাল গবাদিপশুর খাবার। কাঁঠালের বিচি ভেজে কিংবা রান্না করে খাওয়া যায়। কাঁঠালই ফলের মধ্যে সবচেয়ে আমিষসমৃদ্ধ ফল। কাঁঠালের কোয়ায় মানুষের শরীরের জন্য উপকারী ভিটামিন ‘এ’ ও ভিটামিন ‘সি’ রয়েছে। হাঁপানি, সর্দি কাশি, ক্যান্সারের মতো রোগে কাঁঠাল খেলে উপকার পাওয়া যায়। এছাড়া কাঁঠাল আমাদের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
অপকারিতা: মুখরোচক হলেও কাঁঠাল একটি গুরুপাক খাদ্য। অর্থাৎ এটি সহজে হজম হয় না। তাই বেশি কাঁঠাল খেলে পেটের পীড়া হতে পারে। কাঁঠালের আঠা খুবই বিরক্তিকর।
উপসংহার: কাঁঠাল অত্যন্ত সুস্বাদু ও পুষ্টিকর একটি ফল। এটি বাংলাদেশের অন্যতম অর্থকরী ফসল। দেশের চাহিদা মিটিয়ে এটি বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে। সুষ্ঠু পরিকল্পনার মাধ্যমে কাঁঠালের উৎপাদন বাড়ানোর প্রতি আমাদের সবার সচেষ্ট হওয়া উচিত।
লেখক : সিনিয়র শিক্ষক (বাংলা)
আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, মতিঝিল, ঢাকা
কবীর