একাদশ অধ্যায় : খনিজ সম্পদ: জীবাশ্ম
সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর-৫
উদ্দীপকটি পড়ে নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর লেখ।
দুই কার্বন যুক্ত একটি যৌগ ‘অ’ জারিত করে ‘ই’ যৌগ পাওয়া গেল। যৌগকে আবার জারিত করে ‘C’ যৌগ পাওয়া গেল।
ক. ভিনেগার কী?
খ. জৈব অ্যাসিডকে খাদ্য সংরক্ষক বলা হয় কেন?
গ. ‘অ’ যৌগটি থেকে অ্যালকিন যৌগ পাওয়া সম্ভব, ব্যাখ্যা করো।
ঘ. ‘অ’ ও ‘C’ শ্রেণির যৌগ থেকে পলিমার প্রস্তুত করা যায়, বিশ্লেষণ করো।
উত্তর: ক. ভিনেগার হলো অ্যাসিটিক অ্যাসিডের (ইথানোয়িক অ্যাসিড) ৫ থেকে ৮ শতাংশ জলীয় দ্রবণ। এটি খাদ্য সংরক্ষণে, রান্নার কাজে এবং পরিষ্কারক হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
খ. জৈব অ্যাসিড, যেমন- অ্যাসিটিক অ্যাসিড (ভিনেগারের মূল উপাদান), বেনজোয়িক অ্যাসিড এবং সাইট্রিক অ্যাসিড, খাদ্য সংরক্ষক হিসেবে কাজ করে কারণ তারা ব্যাকটেরিয়াসহ অন্যান্য জীবাণুর বৃদ্ধি এবং কার্যকারিতা ব্যাহত করতে পারে। জৈব অ্যাসিডগুলো জীবাণুর কোষের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে, সেখানকার PH কমিয়ে দেয়, যা জীবাণুর এনজাইমগুলোর কার্যকারিতা নষ্ট করে ফেলে এবং তাদের প্রজনন ক্ষমতা হ্রাস করে। ফলে খাদ্যদ্রব্য দীর্ঘ সময় ধরে সতেজ থাকে এবং পচন রোধ হয়।
আরো পড়ুন : খনিজ সম্পদ: জীবাশ্ম অধ্যায়ের ১টি সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর, ৪র্থ পর্ব
গ. উদ্দীপকে বলা হয়েছে দুই কার্বন যুক্ত একটি যৌগ ‘অ’। এটিকে জারিত করে ‘ই’ এবং পরবর্তী সময়ে ‘C’ যৌগ পাওয়া যায়। এই তথ্য থেকে বোঝা যায় ‘অ’ যৌগটি একটি অ্যালকোহল, কারণ অ্যালকোহলকে প্রথমে অ্যালডিহাইড (ই) এবং পরবর্তী সময়ে কার্বক্সিলিক অ্যাসিডে (C) জারিত করা যায়। যেহেতু যৌগটিতে দুটি কার্বন পরমাণু রয়েছে, তাই ‘অ’ যৌগটি হলো ইথানল (CH3CH2OH), ‘ই’ যৌগটি হলো ইথানাল (CH3CHO), এবং ‘C’ যৌগটি হলো ইথানোয়িক অ্যাসিড (CH3COOH).
এখন প্রশ্ন হলো ‘অ’ যৌগ (ইথানল) থেকে অ্যালকিন যৌগ পাওয়া সম্ভব কি না। হ্যাঁ, ইথানল থেকে ইথিন (CH2=CH2), যা একটি অ্যালকিন, পাওয়া সম্ভব। এর জন্য ইথানলের পানি নিষ্কাশন বিক্রিয়া ঘটাতে হয়।
ইথানলকে অতিরিক্ত গাঢ় সালফিউরিক অ্যাসিড (H2SO4) এর উপস্থিতিতে প্রায় ১৭০°C তাপমাত্রায় উত্তপ্ত করলে পানি নিষ্কাশন ঘটে এবং ইথিন উৎপন্ন হয়। সালফিউরিক অ্যাসিড এখানে নিরুদক হিসেবে কাজ করে।
রাসায়নিক বিক্রিয়াটি নিম্নরূপ:
CH3CH2OHH2SO4,170°CCH2=CH2+H2O
ইথানল ইথিন জল
সুতরাং, উদ্দীপকের ‘অ’ যৌগ (ইথানল) থেকে পানি নিষ্কাশন বিক্রিয়ার মাধ্যমে অ্যালকিন যৌগ (ইথিন) পাওয়া সম্ভব।
ঘ. উদ্দীপকের ‘অ’ যৌগ হলো ইথানল (CH3CH2OH) এবং ‘C’ শ্রেণির যৌগ হলো ইথানোয়িক অ্যাসিড (CH3COOH)। এই উভয় যৌগ থেকেই পলিমার প্রস্তুত করা সম্ভব, যদিও এর প্রক্রিয়া এবং উৎপাদিত পলিমারের ধরন ভিন্ন হবে। নিচে তা বিশ্লেষণ করা হলো-
‘অ’ যৌগ (ইথানল) থেকে পলিমার প্রস্তুতি:
ইথানল সরাসরি পলিমারকরণ বিক্রিয়ায় অংশগ্রহণ না করলেও, এটিকে প্রথমে অন্য মনোমারে রূপান্তরিত করে পলিমার প্রস্তুত করা যায়। যেমন-
ইথিন থেকে পলিথিন: ইথানলকে পানি নিষ্কাশনের মাধ্যমে ইথিনে (CH2=CH2) রূপান্তরিত করা যায়। ইথিন উচ্চ চাপ ও তাপমাত্রায় অক্সিজেনের উপস্থিতিতে পলিমারকরণ বিক্রিয়ার মাধ্যমে পলিথিন নামক বৃহৎ অণু গঠন করে। পলিথিন বহুল ব্যবহৃত একটি প্লাস্টিক।
nCH2=CH2 উচ্চচাপ, উচ্চ তাপমাত্রা, অক্সিজেন c[−CH2−CH2−]n
‘C’ শ্রেণির যৌগ (ইথানোয়িক অ্যাসিড) থেকে পলিমার প্রস্তুতি:
ইথানোয়িক অ্যাসিড সরাসরি পলিমারকরণে অংশগ্রহণ না করলেও, এর ডেরিভেটিভ (যেমন এস্টার) পলিমার তৈরিতে ব্যবহৃত হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ-
পলিয়েস্টার: ইথানোয়িক অ্যাসিড ইথিলিন গ্লাইকলের সঙ্গে বিক্রিয়া করে ইথিলিন ইথানোয়েট নামক এস্টার তৈরি করে। এই এস্টার পলিমারকরণ বিক্রিয়ার মাধ্যমে পলিয়েস্টার গঠন করতে পারে। পলিয়েস্টার বস্ত্রশিল্পে বহুল ব্যবহৃত একটি তন্তু।
nHOCH2CH2OH+nCH3COOH অক্সিজেন, ∆ [−OCH2CH2OCOC(CH3)O−]n+nH2O
এ ছাড়া ইথানোয়িক অ্যাসিড থেকে অন্যান্য মনোমার তৈরি করা সম্ভব, যা পরবর্তী সময়ে পলিমারকরণে অংশ নেয়।
লেখক : প্রধান শিক্ষক
হাজী রফিজুদ্দিন ভূঁইয়া বালিকা উচ্চবিদ্যালয়, রূপগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ
কবীর