জগতে মানুষই আল্লাহর প্রিয় সৃষ্টি। বড় ভালোবেসে মানুষ সৃষ্টি করেছেন আল্লাহতায়ালা। মানুষের অধীন করে দিয়েছেন সৃষ্টির সমস্ত কিছু। আল্লাহতায়ালা মানুষকে নানা স্তরে ও বিচিত্র শ্রেণিতে বিভক্ত করেছেন। কেউ শাসক, কেউ শাসিত। কেউ মালিক, কেউ কর্মচারী। কেউ শক্তিশালী, কেউ দুর্বল। একজন যেন অন্যজনের মাধ্যমে নিজের কাজ আদায় করে নিতে পারে, পৃথিবীর অবস্থা সুশৃঙ্খলভাবে চলতে পারে, এজন্যই এই শ্রেণিভেদ। আল্লাহ বলেন, ‘আমি তাদের মধ্যে তাদের জীবিকা বণ্টন করেছি পার্থিব জীবনে এবং একের মর্যাদাকে অপরের ওপর উন্নীত করেছি, যাতে তাদের একে অন্যের দ্বারা কাজ করে নিতে পারে।’ (সুরা জুখরুফ, আয়াত: ৩২।
এই শ্রেণিভেদ তৈরি করা হয়েছে মানুষকে স্বস্তি দেওয়ার উদ্দেশ্যে নয়; বরং তাদেরকে পরীক্ষা করার জন্য। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘এবং একে অন্যের ওপর মর্যাদা সমুন্নত করেছেন, যাতে তোমাদেরকে প্রদত্ত বিষয়ে পরীক্ষা করেন।’ (সুরা আনয়াম, আয়াত: ১৬৫।
ধনী ও মনিবশ্রেণির কর্তব্য হলো, কর্মচারীরা তাদের জন্য পরীক্ষাস্বরূপ—এ কথা মনেপ্রাণে বিশ্বাস করে কর্মচারীদের সঙ্গে সদাচরণ করা। কারণ, কর্মচারী কখনো মনিবের বিরুদ্ধে কথা বলতে পারবে না। অন্যদিকে কর্মচারীর কাজ করতে হয় বেশি। ফলে তার ভুল হওয়ার আশঙ্কাও বেশি থাকে। এ কারণেই মনিবের কর্তব্য হলো, তাকে বেশি বেশি মাফ করা। কারণ প্রত্যেক ভুলের কারণে যদি কথা দিয়ে বা অন্য কোনো উপায়ে তাকে শাস্তি দেওয়া হয়, তা হলে ওই কর্মচারী সারাবছর দুঃখভারাক্রান্ত থাকবে, মর্মাহত থাকবে। এ কারণেই কর্মচারীকে ক্ষমা করা ও প্রতিটি ভুলে তাকে জবাবদিহিতার সম্মুখীন না করা হলো রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর অন্যতম সুন্নাহ। আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) বলেন, “এক লোক রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে এসে বলল, ‘হে আল্লাহর রাসুল, সেবককে (গোলামকে) আমি কতবার মাফ করব?’ প্রশ্ন শুনে রাসুলুল্লাহ (সা.) চুপ রইলেন। সে আবার জিজ্ঞাসা করল, ‘হে আল্লাহর রাসুল, সেবককে (গোলামকে) আমি কতবার মাফ করব?’ এবার তিনি উত্তরে বললেন, ‘প্রতিদিন ৭০ বার।” (তিরমিজি, হাদিস: ১৯৪৯)
একজন সেবক তো প্রতিদিন ৭০ বার ভুল করতে পারে না। সুতরাং হাদিসের মর্ম হলো, সব সময় তাকে মাফ করেই যেতে হবে। আনাস (রা.) বলেন, “আমি ১০ বছর রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সেবা করেছি। আল্লাহর শপথ করে বলছি। কখনো তিনি উফ শব্দটিও আমাকে বলেননি। কোনো কাজ করার পর ‘এভাবে করলে কেন?’, ‘ওভাবে করলে না কেন?’ এমনটি বলেননি।” (মুসলিম, হাদিস: ২৩০৯)
অফিসের কর্মচারী, অধীনস্থ লোক, বাড়ির বুয়া, দারোয়ান ও সেবকদের সঙ্গে উত্তম আচরণ করতে হবে। মনে রাখতে হবে, তারা আমাদের ভাই। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তারা তোমাদের ভাই, তাদেরকে আল্লাহ তোমাদের অধীন করেছেন…।’ (বুখারি, হাদিস: ৩০)
লেখক: আলেম ও সাংবাদিক