![সেবা দিতে আমরা বদ্ধপরিকর](uploads/2024/02/08/1707371674.b7.jpg)
২০১৬ সাল থেকে পর্যটন খাতে কাজ করে যাচ্ছে মার্লিন ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেল। প্রতিষ্ঠানটির উদ্যোক্তা শাহীন আখতার। দেশের পর্যটনশিল্প ও তার প্রতিষ্ঠান নিয়ে কথা হয় তার সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন খালেদ আহমেদ
নিজের সম্পর্কে কিছু বলুন
আমি নারী উদ্যোক্তা। ২০১৬ সালে মার্লিন ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেল প্রতিষ্ঠা করি। করোনা মহামারির ধকল সামলে আমার এখন ৩০ জনের পরিবার। চাকরি জীবন শেষে যখন উদ্যোক্তা জীবন শুরু করলাম, ভাবলাম এখন নিজের অফিস, ইচ্ছামতো আসতে পারব, যখন খুশি অফিস থেকে বের হতে পারব। কিন্তু ব্যস্ততা আর দায়িত্ববোধের চাপে বেসামাল আমি! ব্যক্তিগত জীবনে আমি দুই সন্তানের মা। বড় ছেলে মাইক্রোসফটে কাজ করছে। মেয়ে ‘এ লেভেল’ পড়ছে।
আপনার ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলের ব্যবসা শুরুর গল্প জানতে চাই
অনেক বছর চাকরি করার পর মনে হলো নিজে কিছু করি। প্রথমে ভাবলাম এক্সপোর্ট-ইম্পোর্টের ব্যবসা করব। পরে দেখলাম, এটা করতে অনেক টাকা লাগে। সেই মুহূর্তে অত টাকা আমার কাছে ছিল না। অনেক পথ পাড়ি দিয়ে ফার্মগেটে ছোট একটা অফিস নিয়ে শুরু করলাম ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেল ব্যবসা।
আপনার ব্যবসার ধরন, টার্গেট বাজার এবং সেবা সম্পর্কে বলুন
আমার ব্যবসার ধরন অন্য ব্যবসার চেয়ে একটু আলাদা। অনেক কিছুর ওপর এটা নির্ভর করে। যেমন করোনার সময় লকডাউনের কারণে এটা পুরোপুরি বন্ধ। যখন ডলারের দাম বাড়ে, তখন এই ব্যবসায় মন্দা। আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম বাড়তি। তখনো এই ব্যবসা থেমে যায়। এক কথায়, অনেক কিছু ফ্যাক্টর এই ব্যবসার সঙ্গে জড়িত।
আমাদের মূল মন্ত্র হলো ‘গ্রাহক সন্তুষ্টি’। এটা পুরাটাই সেবামূলক ব্যবসা। ভালো সার্ভিস দিতে পারলেই আমার ব্যবসা ভালো চলবে। গ্রাহকদের প্রয়োজন অনুযায়ী সর্বোচ্চ সেবা দিতে আমরা বদ্ধপরিকর।
আপনার ব্যবসার সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ কী এবং আপনি সেগুলো কীভাবে মোকাবিলা করেন?
প্রত্যেক ব্যবসাতেই চ্যালেঞ্জ থাকে। আমার ব্যবসায় বড় চ্যালেঞ্জ হলো টিকে থাকা। বিভিন্ন অসাধু প্রতিষ্ঠানের রংবেরঙের ধামাকা অফারে অনেকে ভুল করেন। গ্রাহকদের কম খরচে সঠিক পথে বিদেশের মাটিতে নিশ্চিত ভ্রমণের নিশ্চয়তাই আমার কাছে বড় চ্যালেঞ্জ। ভ্রমণবিষয়ক নতুন নতুন আপডেট নিয়মিত রাখলে এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা সহজ হয়।
বাংলাদেশের পর্যটনশিল্পের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে আপনার মতামত
গত পাঁচ বছরের চিত্র দেখলে বোঝা যায়, পর্যটনশিল্পে অনেক পরিবর্তন এসেছে। আমাদের চিন্তাভাবনায় পরিবর্তন আসায় এটা সম্ভব হয়েছে। বাংলাদেশের পর্যটন এলাকাগুলোতে এখন অনেক নতুন রিসোর্ট তৈরি হয়েছে, যেখানে পরিবার নিয়ে নিরাপদে ভ্রমণ করা যায়। তা ছাড়া রাস্তাঘাট উন্নত করায় আরামে ভ্রমণ করা যায়।
বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় পর্যটন গন্তব্যগুলো কী কী?
দেশে অনেক জনপ্রিয় পর্যটন এলাকা রয়েছে। এর মধ্যে আছে রাঙামাটি, কক্সবাজার, টেকনাফ, সেন্টমার্টিন, কুয়াকাটা, কটকা, সুন্দরবন, রাতারগুল, কাপ্তাই, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ি। এর পাশাপাশি ময়মনসিংহ, সিলেট, মহেশখালী দ্বীপ, সোনাদিয়া দ্বীপ, পতেঙ্গা, পারকী জায়গাগুলোও সমান জনপ্রিয়।
কোভিড-১৯ মহামারি পর্যটনশিল্পের ওপর কী ধরনের প্রভাব ফেলেছে
আমার মনে হয়, কোভিড-১৯ মহামারি পর্যটনশিল্পের ওপর সবচেয়ে বেশি খারাপ প্রভাব ফেলেছে। অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান- এই তিনটি মৌলিক অধিকারের পর যদি আপনার হাতে টাকা থাকে, তবেই আপনি ভ্রমণ করতে চাইবেন। কিন্তু করোনার প্রভাবে বিশ্বের অর্থনৈতিক অবস্থা এতই নাজুক ছিল যে মানুষ ভ্রমণকে পুরোপুরি ‘না’ বলেছিল। যে কারণে অনেক এয়ারলাইনস বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। এখন পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হয়ে উঠেছে।
বিভিন্ন ধরনের ভ্রমণকারীর চাহিদা পূরণের জন্য আপনার প্রতিষ্ঠান কীভাবে কাজ করে আমরা দেশ-বিদেশের বিভিন্ন ট্যুর প্যাকেজ নিয়ে কাজ করি। সব দেশের ভিসা, এয়ার টিকিট, হোটেল বুকিং, শহর দেখা, ঐতিহাসিক স্থানগুলো পরিদর্শনের পাশাপাশি ভ্রমণবিষয়ক নানা জটিলতার সহজ সমাধান দিই। এ ছাড়া ভ্রমণকারীদের অল্প খরচে সব ধরনের সহযোগিতা দেওয়ার চেষ্টা করি।
আপনার ব্যবসার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা জানতে চাই।
মার্লিন এখন ৩০ জনের পরিবার। এখানে যারা চাকরি করে, তারা বেশির ভাগ শিক্ষার্থী। পড়াশোনার পাশাপাশি তারা চাকরি করে নিজেদের পড়ার খরচ জোগায়। চাকরি করতে হলে অনেক সার্টিফিকেট দরকার। আমি এই ধারণার বাইরে গিয়ে শিক্ষার্থীদের নিয়ে কাজ করতে চাই। মার্লিনকে ৫০০ জনের পরিবার হিসেবে দেখতে চাই।
সর্বশেষে যেটা না বললেই নয়, আমার স্বামীর সহযোগিতা না পেলে এই প্রতিষ্ঠান কখনোই আলোর মুখ দেখত না। আমার স্বামী আমার জীবনের আলো।
জাহ্নবী