![সুস্থ ধারার বিনোদন দিতে কাজ করছি](uploads/2024/02/08/1707372111.por-jabe.jpg)
স্বাধীনতার পর থেকেই দেশের রিয়েল এস্টেট এবং কনস্ট্রাকশন খাতে ব্যাপক ভূমিকা রাখছে কনকর্ড। ঠিক সেভাবেই দেশের মানুষকে সুস্থ ধারার বিনোদন দেওয়ার লক্ষ্যে কনকর্ড এন্টারটেইনমেন্ট কোম্পানি লিমিটেড কাজ করছে। এই স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানের বর্তমান কার্যক্রম এবং আগামীর ভাবনা নিয়ে খবরের কাগজ কথা বলেছে কোম্পানিটির হেড অব মিডিয়া অ্যান্ড পিআর এম মাহফুজুর রহমানের সঙ্গে। সাক্ষাৎকারের চুম্বকীয় অংশ তুলে ধরেছেন খালেদ আহমেদ।
খবরের কাগজ: সুস্থ ধারার বিনোদনের জন্য কনকর্ড এন্টারটেইনমেন্ট কোম্পানি লিমিটেড কাজ করছে। বিষয়টি আপনি কীভাবে দেখেন?
এম মাহফুজুর রহমান: ২০০২ সালে কনকর্ড গ্ৰুপ সর্বপ্রথম ফ্যান্টাসি কিংডম, পরবর্তী সময়ে ওয়াটার কিংডম প্রতিষ্ঠা করে, যা আজ অবধি দেশের অন্যতম বৃহত্তম অ্যামিউজমেন্ট পার্ক হিসেবে পরিচিত। চট্টগ্রামের ফয়’স লেক ঘিরে আমরা গড়ে তুলেছি ফয়’স লেক কনকর্ড, যেখানে আছে আধুনিক সব রাইড।
বর্তমানে আউটডোর বিনোদনের খাত একেবারে নেই বললেই চলে, যে কারণে অনেকেই ডিভাইসভিত্তিক বিনোদনের দিকে বেশি ঝুঁকে পড়ছে। এতে শিশুদের শারীরিক সমস্যার সঙ্গে দেখা দিচ্ছে মূল্যবোধের অবক্ষয়। ফ্যান্টাসি কিংডম এবং ফয়’স লেক এ ক্ষেত্রে আমাদের অতিথিদের সুস্থ ধারার বিনোদনের ব্যবস্থা করে দিচ্ছে। একই জায়গায় মজাদার রাইডস, খাবার, বিশ্রামের সুযোগ থাকার কারণে পরিবার কিংবা প্রিয়জনদের সঙ্গে সুন্দর কিছু মুহূর্ত কাটানোর জন্য এই পার্কগুলোর জুড়ি নেই।
খবরের কাগজ: আপনাদের ব্যবসার টার্গেট, কাস্টমার কারা এবং আপনাদের সেবা সম্পর্কে বলুন।
এম মাহফুজুর রহমান: বাংলাদেশের আপামর জনগণই আমাদের টার্গেট কাস্টমার। আমরা দেশের প্রত্যেকের কাছে আমাদের উন্নত মানের সুস্থ বিনোদন সেবা পৌঁছে দিতে চাই। আমাদের এখানে যে কেউ একা কিংবা পরিবার নিয়ে ঘুরতে যেতে পারবেন, একই সঙ্গে আমরা স্টুডেন্ট আর করপোরেট প্যাকেজের ব্যবস্থাও করেছি। আমাদের স্টুডেন্ট প্যাকেজগুলোতে বিভিন্ন স্কুল, কলেজ কিংবা ইউনিভার্সিটি থেকে গ্রুপ আসে। আবার করপোরেট প্যাকেজে বিভিন্ন সরকারি আর বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে ডে-আউটে আসেন।
খবরের কাগজ: আপনাদের ব্যবসার সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ কী, সেগুলো মোকাবিলা করেন কীভাবে?
এম মাহফুজুর রহমান: বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশ হলেও এখানে বিনোদনব্যবস্থা প্রায় একটি মৌলিক চাহিদা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তার পরও আমরা দেশের সবাইকে এই বিনোদনের আনন্দ নেওয়ার সুযোগ করে দিচ্ছি যেন তারাও নির্মল আনন্দের অংশীদার হতে পারে। ২০০২ সালে ফ্যান্টাসি কিংডম প্রতিষ্ঠার সময় থেকেই বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছি আমরা।
যেমন, বাংলাদেশের অবকাঠামোগত অবস্থার কারণে যাতায়াতব্যবস্থায় কিছু সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। আবার আমরা যে আন্তর্জাতিক মানের বিনোদন সেবা দিতে চাই, বিদেশ থেকে রাইডস আমদানির সময়ের আমদানি শুল্কজনিত জটিলতার জন্য রাইডের দাম অনেক গুণে বেড়ে যায়। এই রাইডস রক্ষণাবেক্ষণ আর নিরাপত্তা নিশ্চিত করাও আমাদের জন্য বড় একটি চ্যালেঞ্জ। অতিথিদের সুরক্ষা ও নিরাপত্তা আমাদের কাছে সব সময়ই অগ্রাধিকার পায়।
পার্কগুলোতে আমরা এত কঠিন নিরাপত্তাব্যবস্থা নিশ্চিত করি যে ২০০২ সাল থেকে আজ পর্যন্ত আমাদের কোনো পার্কে কোনো বড় দুর্ঘটনার নজির নেই। এই নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে, রাইডগুলোর সার্ভিসিংসহ আরও নানান কাজে আমাদের অনেক পরিমাণ নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ, গ্যাসের মতো এনার্জি প্রয়োজন হয়। বাংলাদেশ সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় এসব বিষয়ে আমরা আরও সাহায্য পেলে আমাদের বিনোদন সেবা আমরা আরও উন্নত করতে পারব বলে আমি বিশ্বাস করি।
খবরের কাগজ: বাংলাদেশের সুস্থ ধারার বিনোদন শিল্পের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে আপনার মতামত কী?
এম মাহফুজুর রহমান: বাংলাদেশর মতো একটি ঘনবসতিপূর্ণ মধ্যম আয়ের দেশে সুস্থ বিনোদনের ব্যবস্থা করা কঠিন ব্যাপার। তার ওপর ডিজিটাল মিডিয়ার প্রবর্তনের মাধ্যমে যতটা না আমরা প্রগতি করতে পেরেছি, তার থেকে বেশি হয়েছে শারীরিক সমস্যা আর মূল্যবোধের অবক্ষয়। তরুণ প্রজন্মের মাঝে বিনোদন বলতেই এখন ফোন কিংবা ল্যাপটপের স্ক্রিন। প্রকৃতির অপার সৌন্দর্যে সুন্দর মুহূর্ত কাটানোর অবকাশ তাদের নিতান্তই কম।
কনকর্ড এন্টারটেইনমেন্ট কোম্পানি লিমিটেড এ ক্ষেত্রে দারুণ কাজ করে যাচ্ছে। আমাদের প্রচেষ্টায় এখন বাংলাদেশের মানুষ মজাদার আউটডোর অ্যাক্টিভিটি করতে পারছে। পরিবার নিয়ে ঘুরতে যাওয়া কিংবা বন্ধুদের সঙ্গে আনন্দময় সময় কাটানোর জন্য ফ্যান্টাসি কিংডম আর ফয়’স লেক কনকর্ড আদর্শ জায়গা।
খবরের কাগজ: কোভিড-১৯ মহামারি আপনাদের ব্যবসার ওপর কী প্রভাব ফেলেছে?
এম মাহফুজুর রহমান: বাংলাদেশের এমন কোনো ক্ষেত্র বাকি নেই, যেখানে কোভিড-১৯ মহামারির প্রভাব দেখা যায় না। দেশের অর্থনীতি, অবকাঠামো, শিল্প, বিনোদনসহ সব ক্ষেত্রেই এই মহামারির প্রভাব রয়েছে। যেহেতু কনকর্ড এন্টারটেইনমেন্ট কোম্পানি লিমিটেডের সব বিনোদন সেবাই আউটডোরভিত্তিক, দুই বছরের লম্বা লকডাউনে সব পার্ক অচল পড়েছিল। লকডাউন তুলে দেওয়ার পরও জনগণের মনে একটা ভীতি কাজ করত, তাই সবাই বড় লোকসমাগম এড়িয়ে চলত। এই প্রভাব থেকে ঘুরে দাঁড়াতে আমাদের বেশ বেগ পোহাতে হয়েছে।
কোভিড-১৯ মহামারিতে প্রায় দুই বছর বাংলাদেশের সব পার্ক বন্ধ ছিল। এ সময়ে পার্ক রক্ষণাবেক্ষণ আর রাইডস পরিচালনা করে সচল রাখতে হয়েছে। তাই পার্কের কোনো কর্মী ছাঁটাই করা হয়নি। কর্মীদের বেতন-ভাতার সঙ্গে রাইডের জ্বালানির জন্য আমাদের অনেক টাকা খরচ হয়েছে, যা আমাদের মোট বার্ষিক আয়ের বড় একটি অংশ। একই সঙ্গে মানুষের শারীরিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং তাদের মনে পার্ক বিনোদন সম্পর্কে বিশ্বাস ফিরিয়ে নিয়ে আসা একটি বিশাল চ্যালেঞ্জ ছিল। আমরা সফলভাবে এই দুর্বোধ্য কাজ করতে সক্ষম হয়েছি। এখন সারা বছরই আমাদের পার্কগুলো অতিথিদের ভিড়ে মুখর থাকে।
খবরের কাগজ: বিভিন্ন ধরনের ভ্রমণকারীদের ও দর্শকের চাহিদা পূরণের জন্য আপনার প্রতিষ্ঠান কীভাবে কাজ করে?
এম মাহফুজুর রহমান: কনকর্ড এন্টারটেইনমেন্ট কোম্পানি লিমিটেডের সেবা কিছু মুষ্টিমেয় মানুষের জন্য নয়, বরং পুরো দেশের সবার জন্য। দেশের সব শ্রেণি, পেশা, বর্ণের মানুষ আমাদের পার্কে আসেন সুন্দর সব মুহূর্ত উপভোগ করার জন্য। বিভিন্ন ধরনের ভ্রমণকারীদের ও দর্শকের চাহিদা পূরণের জন্য সারা বছরই আমরা বিভিন্ন বিনোদন সেবার আয়োজন করে থাকি।
এ দেশের দর্শনার্থীদের চাহিদা এবং মনোভাব বুঝতে পারা আমাদের অনেক বড় একটি সফলতা। এ কারণেই আমরা বছরজুড়ে নানা ধরনের প্যাকেজ আর অফার দিয়ে থাকি, যা এখানে দর্শনার্থীদের আকর্ষণের মূল কারণ। স্টুডেন্ট প্যাকেজ আর করপোরেট প্যাকেজ এখানের বিভিন্ন প্যাকেজের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয়। তার সঙ্গে প্রতি শুক্র ও শনিবার এখানে ডিজে পার্টির আয়োজন হয়, যেখানে বাংলাদেশের নানান জনপ্রিয় অভিনেতা-অভিনেত্রীরাও অংশ নেন। এ ছাড়া আমাদের পার্কগুলোতে অ্যাক্রোবেট শো, ম্যাজিক শো, লাইভ পারফরমেন্স ইত্যাদির আয়োজন করা হয়। সর্বোপরি বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দিনগুলোকে ঘিরে আমরা বরাবরই বিশেষ আয়োজনের ব্যবস্থা করে থাকি, যা আমাদের দর্শকদের মন জুগিয়ে রাখে।
খবরের কাগজ: ঢাকার বাইরে থেকে কাস্টমার আকৃষ্ট করার জন্য আপনারা কী করেন?
এম মাহফুজুর রহমান: বাংলাদেশের রাজধানী হিসেবে পরিচিতি থাকায় এখানেই বেশি জনসংখ্যা পরিলক্ষিত হয়। তাই বলে আমরা কখনোই ঢাকার বাইরের মানুষকে আমাদের টার্গেট কাস্টমারের বাইরে ধরি না। তাদের কাছে আমাদের সেবা সম্পর্কে বার্তা পৌঁছে দিতে আমরা বিভিন্ন ক্যাম্পেইন করে থাকি। যেমন চট্টগ্রাম বিভাগে আমরা ফয়’স লেক কনকর্ড নির্মাণ করেছি, যা ওই অঞ্চলের মানুষের বিনোদন সেবা দিয়ে থাকে।
খবরের কাগজ: আমরা জানি, ফ্যান্টাসি কিংডম, হেরিটেজ পার্ক, ওয়াটার কিংডম-ওয়াটার পার্ক, এক্সট্রিম রেসিং বাংলাদেশ, রিসোর্ট আটলান্টিস ও চট্টগ্রামের ফয়’স লেকে সি ওয়ার্ল্ড রয়েছে। এসব বিনোদন কেন্দ্রে প্রতিদিন কেমন দর্শনার্থী আসেন?
এম মাহফুজুর রহমান: ফ্যান্টাসি কিংডম বাংলাদেশের সর্বপ্রথম থিম পার্ক, যেটি ২০০২ সালে পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে পরিচিতি পায়। এক এক করে কনকর্ড এন্টারটেইনমেন্ট কোম্পানি লিমিটেড এখানে গড়ে তোলে ওয়াটার কিংডম ওয়াটার পার্ক, হেরিটেজ পার্ক, এক্সট্রিম রেসিং গো-কার্ট, রিসোর্ট আটলান্টিস। অপরদিকে চট্টগ্রাম এলাকায় বিনোদন শিল্পে আমূল পরিবর্তন আনে ফয়’স লেক কনকর্ড। এখানেও আমরা তৈরি করেছে সি ওয়ার্ল্ড, ওয়াটার পার্ক, ফয়’স লেক রিসোর্ট আর ফয়’স লেক বেসক্যাম্প। ঢাকা এবং চট্টগ্রাম দুই জায়গায়ই আছে উন্নত মানের রেস্টুরেন্ট, যেখানে দেশ-বিদেশের মজাদার খাবার পাওয়া যায়।
উন্নত সেবার জন্যই সারা বছর দর্শনার্থীদের ভিড় লেগে থাকে আমাদের পার্কগুলোতে। আকর্ষণীয় মূল্যের প্যাকেজের ব্যবস্থা থাকার জন্য আমরা পিকনিক সিজনে আরও বেশি দর্শনার্থীর দেখা পাই। এ ছাড়া ঈদ, বিজয় দিবস, বর্ষবরণের মতো প্রতিটি বিশেষ দিনকে ঘিরে থাকে আমাদের বিশেষ আয়োজন, যা আমাদের অতিথিদের বারবার পার্কগুলোতে টেনে নিয়ে আসে।
খবরের কাগজ: আপনাদের ব্যবসার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা জানতে চাই।
এম মাহফুজুর রহমান: ফ্যান্টাসি কিংডম আর ফয়’স লেক কনকর্ড ইতোমধ্যেই বাংলাদেশের বিনোদন শিল্পে আমূল পরিবর্তন নিয়ে এসেছে। আমরা সফলভাবে আমাদের দর্শনার্থীদের মনে আলাদা জায়গা করে নিতে পেরেছি। জাতীয় সীমানা পেরিয়ে কনকর্ড এন্টারটেইনমেন্ট কোম্পানি লিমিটেডের খ্যাতি এখন আন্তর্জাতিক অঙ্গনে। আমরা এখন ইন্টারন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন অব অ্যামিউজমেন্ট পার্ক অ্যান্ড অ্যাট্রাকশনেরও সদস্য।
ভবিষ্যতে আমাদের এই ব্যবসাকে আরও প্রসারিত করতে চাই। নিত্যনতুন আমিউজমেন্ট পার্ক নির্মাণ করে আমরা দেশবাসী এবং বিশ্ববাসীর জন্য অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে চাই।
এরই সূত্র ধরে কনকর্ড এন্টারটেইনমেন্ট কোম্পানি লিমিটেড ঢাকা-চট্টগ্রাম সড়কের দাঁড়িয়াকান্দায় নতুন ওয়াটার পার্ক ‘স্প্ল্যাশ কিংডম’-এর কাজ শুরু করেছে। আমাদের প্রিয় দর্শনার্থীদের সমর্থন, বাংলাদেশ সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা এবং আমাদের দেশসেবার দৃঢ় অঙ্গীকারে আমরা বিশ্বাস করি। এই আপসহীন সেবাদানের লক্ষ্যে আমরা পৌঁছাতে পারব।
কলি