ঢাকা ২৫ আষাঢ় ১৪৩২, বুধবার, ০৯ জুলাই ২০২৫
English

ইউএনও’র হস্তক্ষেপে বেতন-ভাতা পেলেন ৫৪ শিক্ষিকা

প্রকাশ: ০৪ জুন ২০২৫, ০৭:১৬ পিএম
আপডেট: ০৪ জুন ২০২৫, ০৭:১৭ পিএম
ইউএনও’র হস্তক্ষেপে বেতন-ভাতা পেলেন ৫৪ শিক্ষিকা
বেতনের অপেক্ষায় শিক্ষিকারা। ছবি: খবরের কাগজ

আউট অব স্কুল চিলড্রেন কর্মসূচির আওতায় বাগেরহাটে ‘সুখী মানুষ’ নামক একটি এনজিওর বাস্তবায়নাধীন শিক্ষা কর্মসূচির ৫৪ জন শিক্ষিকার বেতন-ভাতা উত্তোলন নিয়ে জটিলতা সৃষ্টি হয়। বুধবার (৪ জুন) কোরবানির ঈদের শেষ কর্মদিবসে ফকিরহাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার হস্তক্ষেপে ওই নারী শিক্ষিকারা তাদের বেতন-ভাতা তুলতে সক্ষম হন।

এনজিও ‘সুখী মানুষ’ পরিচালিত ওই শিক্ষা কার্যক্রমের কয়েকজন শিক্ষিকা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ করেন, প্রতিষ্ঠানটির সুপারভাইজার বশির কয়েকজন শিক্ষিকার চেকবই ও ডেবিট কার্ড, ডেবিড কার্ডের পাসওয়ার্ড নিয়ে গেছেন এবং তাদের তিন মাসের বেতন, বোনাস ও ঘরভাড়া-সহ মোট ২৬ হাজার ৬০০ টাকার একটি অংশ তিনি রেখে দিবেন। বিষয়টি আমলে নিয়ে তিনি বাগেরহাট উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরো এর সহকারী পরিচালক শুভেন্দু ঘোষকে জানালে তিনি ডাচ বাংলা ব্যাংকে এসে প্রত্যেক শিক্ষিকার বেতন তাদের স্ব স্ব হিসাব নম্বরে প্রদানের ব্যবস্থা করেন। এসময় টাকা বুঝে পেয়ে শিক্ষিকারা সন্তোষ প্রকাশ করেন।

অভিযুক্ত সুপারভাইজার বশির দাবি করেন, তিনি শিক্ষিকাদের সহযোগিতা করার জন্য ডেবিট কার্ড ও পিনকোড নিয়েছিলেন। কিন্তু সার্ভার ডাউনের কারণে বেতন তোলা যাচ্ছিল না। ফলে কয়েকজন শিক্ষিকা তাকে ভুল বুঝে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে অভিযোগ করেন। এসময় কয়েকজন শিক্ষিকা তার এ বক্তব্যকে সমর্থন করেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, চিতলমারী, মোল্লাহাট ও বাগেরহাট সদর উপজেলায় শিক্ষকদের বেতন ও ভাতা নিয়ে এ ধরনের পায়তারা চলছে। এ বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছেন শিক্ষিকারা।

বাগেরহাট জেলা উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরো এর সহকারী পরিচালক শুভেন্দু ঘোষ জানান, খবর পেয়ে তিনি ফকিরহাট এসে শিক্ষিকাদের সঙ্গে কথা বলেছেন। তিনি উপস্থিত থেকে প্রত্যেক শিক্ষিকার একাউন্টে টাকা পোস্টিং এর ব্যবস্থা করেছেন। তবে সার্ভার জ্যাম থাকায় একটু দেরি হচ্ছে।

ফকিরহাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুমনা আইরিন বলেন, কয়েকজন শিক্ষিকার অভিযোগ পেয়ে বিষয়টি সমাধানের দায়িত্ব দিয়েছি। আশা করি দ্রুত সমাধান হয়ে যাবে।

উল্লেখ্য বেসরকারী সংস্থা ‘সুখী মানুষ’ বাগেরহাটের ৮টি উপজেলায় আউট অব স্কুল চিলড্রেন কর্মসূচি পরিচালনা করে আসছে। রামপাল, কচুয়া, মোড়েলগঞ্জ ও মংলা উপজেলায় সহযোগী সংস্থার মাধ্যমে কর্মসূচি পরিচালনা করেছে। এদিকে বাগেরহাট সদর, চিতলমারী, ফকিরহাট ও মোল্লাহাট উপজেলায় সুখী মানুষ নিজে কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। 

প্রকল্পের শুরু থেকে সুখী মানুষ কোটি কোটি টাকার অনিয়ম করেছে বলে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় খবর প্রকাশিত হওয়ার পর দূদক বিষয়টি আমলে নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে বলে জানা গেছে।

রিফাত আল মাহামুদ/মাহফুজ

 

ফেনীতে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে পানিবন্দি ২০ গ্রামের মানুষ

প্রকাশ: ০৯ জুলাই ২০২৫, ০৯:১৬ এএম
ফেনীতে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে পানিবন্দি ২০ গ্রামের মানুষ
ছবি: খবরের কাগজ

ফেনীতে ভারী বৃষ্টিপাত ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে মুহুরী ও সিলোনিয়া নদীর ১১টি স্থানে ভাঙন সৃষ্টি হয়েছে। এতে ২০টি গ্রাম প্লাবিত হয়ে ভোগান্তিতে পড়েছেন হাজারো মানুষ।

মঙ্গলবার (৮ জুলাই) বিকেল থেকে বাঁধ ভেঙে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করতে শুরু করে।

ফুলগাজীতে মুহুরী নদীর চার স্থানে ও পরশুরামে সিলোনিয়া নদীর সাত স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে।

মুহুরী নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের পরশুরাম উপজেলার চিথলিয়া ইউনিয়নের মধ্যম ধনীকুন্ডা, নোয়াপুর, শালধর এলাকায় তিনটি, ফুলগাজী উপজেলার দেড়পাড়ায় দুইটি, নাপিত কোনায় একটি স্থান ভেঙে গেছে। 

এছাড়া সিলোনিয়া নদীর মির্জানগর ইউনিয়নের পশ্চিম গদানগর, জঙ্গলঘোনা, উত্তর মনিপুর দাসপাড়া ও মেলাঘর কবরস্থানের পাশে চারটি স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে।

পরশুরামের উত্তর মনিপুর এলাকার রহমান মিয়া বলেন, ‘গেল বছরে বল্লামুখা বাঁধের ভাঙন স্থলের একটি স্থানে এখনো মেরামত কাজ শেষ হয়নি। পানি উন্নয়ন বোর্ডের লোকদের গাফিলতির কারণে এমন হয়েছে। সেই জায়গা দিয়ে আজ আবারও পানি প্রবেশ করছে। এছাড়া নদীগুলোর নাব্যতা ফিরিয়ে না আনলে প্রতিবছরই এমন ভোগান্তিতে পড়তে হবে।’ 

ফেনী পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী আবুল কাশেম বলেন, আমরা এখন পর্যন্ত ১১টি স্থানে ভাঙনের তথ্য পেয়েছি। আরও খোঁজ নিয়ে বিস্তারিত জানব। মাঠপর্যায়ে আমাদের কাজ অব্যাহত রয়েছে। 

এদিকে টানা বর্ষণে ফেনী শহরের ডাক্তারপাড়া, শহিদ শহিদুল্লা কায়সার সড়ক, পুরাতন রেজিস্ট্রি অফিস, শাহীন একাডেমি এলাকা, পাঠানবাড়ি, নাজির রোড, মিজান রোড, একাডেমি, সদর হাসপাতাল মোড় ও পেট্রোবাংলাসহ বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। পানিতে তলিয়ে গেছে এসব এলাকার নিচু সড়কগুলো। দোকানপাটে পানি ঢুকে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মালপত্র। তবে বিকেল থেকে বৃষ্টির পানি ধীরে ধীরে নামতে শুরু করেছে।
 
ফেনী আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মজিবুর রহমান বলেন, জেলায় টানা দুই দিন ধরে মাঝারী ও ভারী বৃষ্টিপাত হচ্ছে। মঙ্গলবার (৮ জুলাই) রাত ৯টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৪৪১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। যা বিগত কয়েক বছরে সর্বোচ্চ। আগামী দুই-তিন দিন জেলাজুড়ে বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।

তোফায়েল/অমিয়/

প্রত্যাশার সেতু এখন মরণফাঁদ নতুন চেয়ে মিলছে সংস্কারের আশ্বাস

প্রকাশ: ০৯ জুলাই ২০২৫, ০৯:১৪ এএম
আপডেট: ০৯ জুলাই ২০২৫, ০৯:১৫ এএম
প্রত্যাশার সেতু এখন মরণফাঁদ নতুন চেয়ে মিলছে সংস্কারের আশ্বাস
ক্যাপশন: স্কুলগামী কয়েকজন শিক্ষার্থী জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সেতু পার হচ্ছে। মানিকগঞ্জের সিংগাইর উপজেলার বলধারা ইউনিয়ন থেকে তোলা/ খবরের কাগজ প্রত্যাশার সেতু এখন মরণফাঁদ নতুন চেয়ে মিলছে সংস্কারের আশ্বাস আসাদ জামান, মানিকগঞ্জ মানিকগঞ্জের সিংগাইর উপজেলার বলধারা ইউনিয়ন। আট বছর আগে এই এলাকার জৈল্যা খালের ওপর একটি বেইলি সেতু নির্মাণ করা হয়। শুরুতে এই সেতুকে ঘিরে স্থানীয়দের মধ্যে আশার সঞ্চার হয়। কিন্তু এই সেতুটিই এখন মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে। দীর্ঘদিন সংস্কার না হওয়ায় সেতুটির রেলিং ভেঙে গেছে। কাঠের পাটাতনে তৈরি হয়েছে বড় বড় ছিদ্র। এ ছাড়া নড়বড়ে অবকাঠামোর কারণে প্রতিমুহূর্তে রয়েছে সেতু ভেঙে পানিতে পড়ে প্রাণহানির শঙ্কা। অথচ এই সেতুর ওপর দিয়ে প্রতিদিন স্কুলগামী শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার শত শত মানুষ যাতায়াত করেন। এলাকাবাসীর দাবি, দ্রুত সময়ের মধ্যে এখানে একটি টেকসই সেতু নির্মাণ করা হোক। যদিও এই দাবি একাধিকবার সংশ্লিষ্টদের কাছে করেও কোনো ফল না পাওয়ার বিষয়টি উঠে এসেছে খোদ জনপ্রতিনিধির মুখে। অবশ্য উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ মিলেছে সেতুটি সংস্কারের আশ্বাস। বলধারা ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে এলজিএসপি প্রকল্পের আওতায় মাত্র ২ লাখ টাকা ব্যয়ে জৈল্যা খালের ওপর প্রায় ২০০ মিটার দৈর্ঘ্যের এই বেইলি সেতুটি নির্মাণ করা হয়। সম্প্রতি সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সেতুর রেলিং অনেক আগেই ভেঙে পড়েছে। পাটাতনের অসংখ্য স্থানে সৃষ্টি হয়েছে বড় বড় ছিদ্র। কোথাও কোথাও কাঠ উঠে গিয়ে ফাঁকা জায়গা তৈরি হয়েছে। হেঁটে কিংবা বাইসাইকেল চালিয়ে ব্রিজ পার হওয়াটাই যেন রীতিমতো এক দুঃসাহসিক অভিযান। সেতুর দক্ষিণ পাশেই অবস্থিত জৈল্যা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এই বিদ্যালয়ের প্রায় দুই শতাধিক শিক্ষার্থী প্রতিদিন ঝুঁকিপূর্ণ ব্রিজটি দিয়ে স্কুলে যাতায়াত করছে। ফলে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় রয়েছেন অভিভাবকরা। স্থানীয়রা বলছেন, বছরের পর বছর ধরে তারা ঝুঁকিপূর্ণ এই সেতুটি সংস্কারের দাবি জানিয়ে আসছেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো কার্যকর উদ্যোগ নিতে দেখা যায়নি। এলাকাবাসীর অভিযোগ, দীর্ঘদিনের অবহেলা ও অব্যবস্থাপনার কারণে ব্রিজটি এখন জননিরাপত্তার জন্য মারাত্মক হুমকিতে পরিণত হয়েছে। তাদের আশঙ্কা-যেকোনো মুহূর্তেই ঘটতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা। স্থানীয়রা জানান, সংস্কারের আশ্বাস বহুবার পেলেও বাস্তবে কোনো দৃশ্যমান উদ্যোগ তারা দেখেননি। এ অবস্থায় দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা নিতে তারা প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। আবুল কাশেম মিয়া নামে স্থানীয় এক প্রবীণ ব্যক্তি বলেন, ‘আমার জীবনে অনেক ব্রিজ দেখেছি, কিন্তু এমন ভয়ানক অবস্থা কখনো দেখিনি। দিনে দিনে শুধু খারাপই হচ্ছে। আমরা না জানি কখন একটা বড় দুর্ঘটনার খবর শুনব।’ শিক্ষার্থী রাকিব হোসেন বলে, ‘ব্রিজের ওপর হাঁটতে ভয় লাগে। মাঝেমধ্যে পাটাতনের ফাঁকার মধ্যে পা ঢুকে যায়। আমার স্কুলের অনেকে ব্যথাও পেয়েছে। আর বৃষ্টির দিনে আরও বেশি ভয় করে। আমাদের কথা চিন্তা করে হলেও এখানে একটি নতুন ব্রিজ বানানো হোক।’ এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক সালমা বেগম বলেন, ‘আমার ছোট মেয়েটা জৈল্যা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ে। প্রতিদিন এই ব্রিজ দিয়েই স্কুলে যায়। আমি প্রতিদিন ওর জন্য দোয়া করি যেন নিরাপদে যেতে পারে। কিন্তু কতদিন এভাবে চলবে?’ আবদুর রহমান নামে স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, ‘সেতুর যে অবস্থা তাতে আমাদের গ্রামের কেউ মারা গেলে তার খাটিয়া নিয়ে কবরস্থানে যাওয়া অনেক কষ্টের ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। সরকারের কাছে আমাদের আবেদন, জনগণের দুর্ভোগের কথা চিন্তা করে এখানে দ্রুত একটি মজবুত সেতু নির্মাণ করা হোক।’ মজিবর রহমান নামে এক কৃষক বলেন, ‘কৃষিপণ্য বাজারে নিতে হলে আমাদের এই ব্রিজ ব্যবহার করতে হয়। কিন্তু সব সময় ভয় করে, বড় বোঝা নিয়ে যদি ফেঁসে (আটকে) যাই?’ এ বিষয়ে স্থানীয় ইউপি সদস্য আবদুর রাজ্জাক বলেন, ‘জৈল্যার এই ঝুঁকিপূর্ণ বেইলি ব্রিজটি এখন আর শুধু একটি অবকাঠামোগত সমস্যা নয়, এটি হয়ে উঠেছে জীবন-মরণের প্রশ্ন। আমরা বারবার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে এ বিষয়ে অবগত করেছি। যদি এখনই কার্যকর পদক্ষেপ না নেয়, তাহলে যেকোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। যার দায় এড়ানো যাবে না।’ সিংগাইর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কামরুল হাসান সোহাগ খবরের কাগজকে বলেন, ‘বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। জনগণের নিরাপত্তা বিশেষ করে শিক্ষার্থীদের কথা মাথায় রেখে ব্রিজটির সংস্কারে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ ক্যাপশন: স্কুলগামী কয়েকজন শিক্ষার্থী জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সেতু পার হচ্ছে। মানিকগঞ্জের সিংগাইর উপজেলার বলধারা ইউনিয়ন থেকে তোলা/ খবরের কাগজ প্রত্যাশার সেতু এখন মরণফাঁদ নতুন চেয়ে মিলছে সংস্কারের আশ্বাস আসাদ জামান, মানিকগঞ্জ মানিকগঞ্জের সিংগাইর উপজেলার বলধারা ইউনিয়ন। আট বছর আগে এই এলাকার জৈল্যা খালের ওপর একটি বেইলি সেতু নির্মাণ করা হয়। শুরুতে এই সেতুকে ঘিরে স্থানীয়দের মধ্যে আশার সঞ্চার হয়। কিন্তু এই সেতুটিই এখন মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে। দীর্ঘদিন সংস্কার না হওয়ায় সেতুটির রেলিং ভেঙে গেছে। কাঠের পাটাতনে তৈরি হয়েছে বড় বড় ছিদ্র। এ ছাড়া নড়বড়ে অবকাঠামোর কারণে প্রতিমুহূর্তে রয়েছে সেতু ভেঙে পানিতে পড়ে প্রাণহানির শঙ্কা। অথচ এই সেতুর ওপর দিয়ে প্রতিদিন স্কুলগামী শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার শত শত মানুষ যাতায়াত করেন। এলাকাবাসীর দাবি, দ্রুত সময়ের মধ্যে এখানে একটি টেকসই সেতু নির্মাণ করা হোক। যদিও এই দাবি একাধিকবার সংশ্লিষ্টদের কাছে করেও কোনো ফল না পাওয়ার বিষয়টি উঠে এসেছে খোদ জনপ্রতিনিধির মুখে। অবশ্য উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ মিলেছে সেতুটি সংস্কারের আশ্বাস। বলধারা ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে এলজিএসপি প্রকল্পের আওতায় মাত্র ২ লাখ টাকা ব্যয়ে জৈল্যা খালের ওপর প্রায় ২০০ মিটার দৈর্ঘ্যের এই বেইলি সেতুটি নির্মাণ করা হয়। সম্প্রতি সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সেতুর রেলিং অনেক আগেই ভেঙে পড়েছে। পাটাতনের অসংখ্য স্থানে সৃষ্টি হয়েছে বড় বড় ছিদ্র। কোথাও কোথাও কাঠ উঠে গিয়ে ফাঁকা জায়গা তৈরি হয়েছে। হেঁটে কিংবা বাইসাইকেল চালিয়ে ব্রিজ পার হওয়াটাই যেন রীতিমতো এক দুঃসাহসিক অভিযান। সেতুর দক্ষিণ পাশেই অবস্থিত জৈল্যা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এই বিদ্যালয়ের প্রায় দুই শতাধিক শিক্ষার্থী প্রতিদিন ঝুঁকিপূর্ণ ব্রিজটি দিয়ে স্কুলে যাতায়াত করছে। ফলে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় রয়েছেন অভিভাবকরা। স্থানীয়রা বলছেন, বছরের পর বছর ধরে তারা ঝুঁকিপূর্ণ এই সেতুটি সংস্কারের দাবি জানিয়ে আসছেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো কার্যকর উদ্যোগ নিতে দেখা যায়নি। এলাকাবাসীর অভিযোগ, দীর্ঘদিনের অবহেলা ও অব্যবস্থাপনার কারণে ব্রিজটি এখন জননিরাপত্তার জন্য মারাত্মক হুমকিতে পরিণত হয়েছে। তাদের আশঙ্কা-যেকোনো মুহূর্তেই ঘটতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা। স্থানীয়রা জানান, সংস্কারের আশ্বাস বহুবার পেলেও বাস্তবে কোনো দৃশ্যমান উদ্যোগ তারা দেখেননি। এ অবস্থায় দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা নিতে তারা প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। আবুল কাশেম মিয়া নামে স্থানীয় এক প্রবীণ ব্যক্তি বলেন, ‘আমার জীবনে অনেক ব্রিজ দেখেছি, কিন্তু এমন ভয়ানক অবস্থা কখনো দেখিনি। দিনে দিনে শুধু খারাপই হচ্ছে। আমরা না জানি কখন একটা বড় দুর্ঘটনার খবর শুনব।’ শিক্ষার্থী রাকিব হোসেন বলে, ‘ব্রিজের ওপর হাঁটতে ভয় লাগে। মাঝেমধ্যে পাটাতনের ফাঁকার মধ্যে পা ঢুকে যায়। আমার স্কুলের অনেকে ব্যথাও পেয়েছে। আর বৃষ্টির দিনে আরও বেশি ভয় করে। আমাদের কথা চিন্তা করে হলেও এখানে একটি নতুন ব্রিজ বানানো হোক।’ এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক সালমা বেগম বলেন, ‘আমার ছোট মেয়েটা জৈল্যা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ে। প্রতিদিন এই ব্রিজ দিয়েই স্কুলে যায়। আমি প্রতিদিন ওর জন্য দোয়া করি যেন নিরাপদে যেতে পারে। কিন্তু কতদিন এভাবে চলবে?’ আবদুর রহমান নামে স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, ‘সেতুর যে অবস্থা তাতে আমাদের গ্রামের কেউ মারা গেলে তার খাটিয়া নিয়ে কবরস্থানে যাওয়া অনেক কষ্টের ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। সরকারের কাছে আমাদের আবেদন, জনগণের দুর্ভোগের কথা চিন্তা করে এখানে দ্রুত একটি মজবুত সেতু নির্মাণ করা হোক।’ মজিবর রহমান নামে এক কৃষক বলেন, ‘কৃষিপণ্য বাজারে নিতে হলে আমাদের এই ব্রিজ ব্যবহার করতে হয়। কিন্তু সব সময় ভয় করে, বড় বোঝা নিয়ে যদি ফেঁসে (আটকে) যাই?’ এ বিষয়ে স্থানীয় ইউপি সদস্য আবদুর রাজ্জাক বলেন, ‘জৈল্যার এই ঝুঁকিপূর্ণ বেইলি ব্রিজটি এখন আর শুধু একটি অবকাঠামোগত সমস্যা নয়, এটি হয়ে উঠেছে জীবন-মরণের প্রশ্ন। আমরা বারবার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে এ বিষয়ে অবগত করেছি। যদি এখনই কার্যকর পদক্ষেপ না নেয়, তাহলে যেকোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। যার দায় এড়ানো যাবে না।’ সিংগাইর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কামরুল হাসান সোহাগ খবরের কাগজকে বলেন, ‘বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। জনগণের নিরাপত্তা বিশেষ করে শিক্ষার্থীদের কথা মাথায় রেখে ব্রিজটির সংস্কারে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ ক্যাপশন: স্কুলগামী কয়েকজন শিক্ষার্থী জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সেতু পার হচ্ছে। মানিকগঞ্জের সিংগাইর উপজেলার বলধারা ইউনিয়ন থেকে তোলা : খবরের কাগজ

মানিকগঞ্জের সিংগাইর উপজেলার বলধারা ইউনিয়ন। আট বছর আগে এই এলাকার জৈল্যা খালের ওপর একটি বেইলি সেতু নির্মাণ করা হয়। শুরুতে এই সেতুকে ঘিরে স্থানীয়দের মধ্যে আশার সঞ্চার হয়। কিন্তু এই সেতুটিই এখন মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে। দীর্ঘদিন সংস্কার না হওয়ায় সেতুটির রেলিং ভেঙে গেছে। কাঠের পাটাতনে তৈরি হয়েছে বড় বড় ছিদ্র। এ ছাড়া নড়বড়ে অবকাঠামোর কারণে প্রতিমুহূর্তে রয়েছে সেতু ভেঙে পানিতে পড়ে প্রাণহানির শঙ্কা।

 অথচ এই সেতুর ওপর দিয়ে প্রতিদিন স্কুলগামী শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার শত শত মানুষ যাতায়াত করেন। এলাকাবাসীর দাবি, দ্রুত সময়ের মধ্যে এখানে একটি টেকসই সেতু নির্মাণ করা হোক। যদিও এই দাবি একাধিকবার সংশ্লিষ্টদের কাছে করেও কোনো ফল না পাওয়ার বিষয়টি উঠে এসেছে খোদ জনপ্রতিনিধির মুখে। অবশ্য উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ মিলেছে সেতুটি সংস্কারের আশ্বাস।

বলধারা ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে এলজিএসপি প্রকল্পের আওতায় মাত্র ২ লাখ টাকা ব্যয়ে জৈল্যা খালের ওপর প্রায় ২০০ মিটার দৈর্ঘ্যের এই বেইলি সেতুটি নির্মাণ করা হয়। 

সম্প্রতি সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সেতুর রেলিং অনেক আগেই ভেঙে পড়েছে। পাটাতনের অসংখ্য স্থানে সৃষ্টি হয়েছে বড় বড় ছিদ্র। কোথাও কোথাও কাঠ উঠে গিয়ে ফাঁকা জায়গা তৈরি হয়েছে। হেঁটে কিংবা বাইসাইকেল চালিয়ে ব্রিজ পার হওয়াটাই যেন রীতিমতো এক দুঃসাহসিক অভিযান। সেতুর দক্ষিণ পাশেই অবস্থিত জৈল্যা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এই বিদ্যালয়ের প্রায় দুই শতাধিক শিক্ষার্থী প্রতিদিন ঝুঁকিপূর্ণ ব্রিজটি দিয়ে স্কুলে যাতায়াত করছে। ফলে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় রয়েছেন অভিভাবকরা।

স্থানীয়রা বলছেন, বছরের পর বছর ধরে তারা ঝুঁকিপূর্ণ এই সেতুটি সংস্কারের দাবি জানিয়ে আসছেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো কার্যকর উদ্যোগ নিতে দেখা যায়নি। এলাকাবাসীর অভিযোগ, দীর্ঘদিনের অবহেলা ও অব্যবস্থাপনার কারণে ব্রিজটি এখন জননিরাপত্তার জন্য মারাত্মক হুমকিতে পরিণত হয়েছে। তাদের আশঙ্কা-যেকোনো মুহূর্তেই ঘটতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা। স্থানীয়রা জানান, সংস্কারের আশ্বাস বহুবার পেলেও বাস্তবে কোনো দৃশ্যমান উদ্যোগ তারা দেখেননি। এ অবস্থায় দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা নিতে তারা প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

আবুল কাশেম মিয়া নামে স্থানীয় এক প্রবীণ ব্যক্তি বলেন, ‘আমার জীবনে অনেক ব্রিজ দেখেছি, কিন্তু এমন ভয়ানক অবস্থা কখনো দেখিনি। দিনে দিনে শুধু খারাপই হচ্ছে। আমরা না জানি কখন একটা বড় দুর্ঘটনার খবর শুনব।’

শিক্ষার্থী রাকিব হোসেন বলে, ‘ব্রিজের ওপর হাঁটতে ভয় লাগে। মাঝেমধ্যে পাটাতনের ফাঁকার মধ্যে পা ঢুকে যায়। আমার স্কুলের অনেকে ব্যথাও পেয়েছে। আর বৃষ্টির দিনে আরও বেশি ভয় করে। আমাদের কথা চিন্তা করে হলেও এখানে একটি নতুন ব্রিজ বানানো হোক।’

এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক সালমা বেগম বলেন, ‘আমার ছোট মেয়েটা জৈল্যা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ে। প্রতিদিন এই ব্রিজ দিয়েই স্কুলে যায়। আমি প্রতিদিন ওর জন্য দোয়া করি যেন নিরাপদে যেতে পারে। কিন্তু কতদিন এভাবে চলবে?’

আবদুর রহমান নামে স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, ‘সেতুর যে অবস্থা তাতে আমাদের গ্রামের কেউ মারা গেলে তার খাটিয়া নিয়ে কবরস্থানে যাওয়া অনেক কষ্টের ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। সরকারের কাছে আমাদের আবেদন, জনগণের দুর্ভোগের কথা চিন্তা করে এখানে দ্রুত একটি মজবুত সেতু নির্মাণ করা হোক।’

মজিবর রহমান নামে এক কৃষক বলেন, ‘কৃষিপণ্য বাজারে নিতে হলে আমাদের এই ব্রিজ ব্যবহার করতে হয়। কিন্তু সব সময় ভয় করে, বড় বোঝা নিয়ে যদি ফেঁসে (আটকে) যাই?’

এ বিষয়ে স্থানীয় ইউপি সদস্য আবদুর রাজ্জাক বলেন, ‘জৈল্যার এই ঝুঁকিপূর্ণ বেইলি ব্রিজটি এখন আর শুধু একটি অবকাঠামোগত সমস্যা নয়, এটি হয়ে উঠেছে জীবন-মরণের প্রশ্ন। আমরা বারবার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে এ বিষয়ে অবগত করেছি। যদি এখনই কার্যকর পদক্ষেপ না নেয়, তাহলে যেকোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। যার দায় এড়ানো যাবে না।’

সিংগাইর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কামরুল হাসান সোহাগ খবরের কাগজকে বলেন, ‘বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। জনগণের নিরাপত্তা বিশেষ করে শিক্ষার্থীদের কথা মাথায় রেখে ব্রিজটির সংস্কারে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

 

 

১২ দিন পর মুরাদনগরে ধর্ষণের শিকার নারীর স্বাস্থ্য পরীক্ষা, কারাগারে ৪ আসামি

প্রকাশ: ০৮ জুলাই ২০২৫, ১০:৪৪ পিএম
১২ দিন পর মুরাদনগরে ধর্ষণের শিকার নারীর স্বাস্থ্য পরীক্ষা, কারাগারে ৪ আসামি
ছবি: খবরের কাগজ

কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার পাঁচকিত্তা গ্রামে ঘরে ঢুকে এক নারীকে ধর্ষণ ও নির্যাতনের ১২ দিন পর ভুক্তভোগীর স্বাস্থ্যপরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। মঙ্গলবার (৮ জুলাই) কুমিল্লার মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মুরাদনগর থানার উপ-পরিদর্শক রুহুল আমিন। এর আগে স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য ভুক্তভোগীকে হাসপাতালে পাঠানো হলেও তিনি পরীক্ষা করতে অসম্মত হন।

এদিকে ওই ঘটনার অশালীন সেই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার পর্নোগ্রাফি মামলায় গ্রেপ্তার চার যুবককে তিন দিনের রিমান্ড শেষে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। 

মঙ্গলবার বিকেলে কুমিল্লার আমলি আদালত-১১-এর বিচারক মমিনুল হকের আদালতে আসামিদের হাজির করা হলে শুনানি শেষে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা রুহুল আমিন জানান, গ্রেপ্তারের পর আসামিদের সাত দিনের রিমান্ডের আবেদন জানানো হলে আদালত তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। রিমান্ড শেষে তাদের আবার আদালতে হাজির করা হয়। 

গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন- মো. সুমন (২২), রমজান (২৩), মো. আরিফ (২৪) ও মো. অনিক (২২)।

উপপরিদর্শক রুহুল আমিন বলেন, ‘আমরা সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করেছিলাম, আদালত তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। গত শনিবার থেকে সোমবার পর্যন্ত তিন দিন রিমান্ডে রেখে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। রিমান্ডে থাকা অবস্থায় তাদের কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে। তদন্তের স্বার্থে সেগুলো এখন প্রকাশ করা হচ্ছে না। সময়মতো বিস্তারিত জানানো হবে। আজ আদালতে চারজনের মধ্যে দু’জনের জবানবন্দি দেওয়ার কথা জানালেও পরে তারা তা দেননি। পরে আদালত তাদের জেলহাজতে পাঠান।’

এদিকে ওই নারীকে ধর্ষণের ঘটনায় দায়ের করা ধর্ষণের মামলায় গ্রেপ্তার এক মাত্র আসামি ফজর আলী এখনো অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। সে সুস্থ হলে মামলার পরবর্তী কার্যক্রম শুরু করা যাবে বলেও জানিয়েছে মুরাদনগর থানা পুলিশ।

জহির শান্ত/মাহফুজ

ঝিনাইদহে পিকআপের ধাক্কায় প্রাণ গেল ২ ভাইয়ের

প্রকাশ: ০৮ জুলাই ২০২৫, ১০:০৮ পিএম
ঝিনাইদহে পিকআপের ধাক্কায় প্রাণ গেল ২ ভাইয়ের
খবরের কাগজ গ্রাফিকস

ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুরে পিকআপ ভ্যানের ধাক্কায় শফিকুল ইসলাম (১৯) নামে এক মোটরসাইকেল আরোহী ও তার চাচাতো ভাই হাবিব নিহত হয়েছেন।

মঙ্গলবার (৮ জুলাই) বিকেলে কোটচাঁদপুর উপজেলার বলুহর এলাকার ডাকাততলা ব্রিজের উপর মর্মান্তিক এ দুর্ঘটনা ঘটে।

নিহত শফিকুল ইসলাম ও হাবিব মহেশপুর উপজেলার আজমপুর গ্রামের বাসিন্দা। 

স্থানীয়রা খবরের কাগজকে জানান, মঙ্গলবার বিকেলে শফিকুল ইসলাম কোটচাঁদপুর থেকে মোটরসাইকেলে করে তার চাচাতো ভাই হাবিবকে সঙ্গে নিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন। পথিমধ্যে উপজেলার ডাকাততলা ব্রিজের ওপর পৌঁছালে বিপরীত দিক থেকে আসা একটি পিকআপ তাকে ধাক্কা দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই মোটরসাইকেল আরোহী শফিকুল ইসলাম মারা যান। আহত হাবিবকে কোটচাঁদপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে যশোর জেনারেল হাসপাতালে রেফার করেন। রাত ৮টার দিকে যশোর জেনারেল হাসপাতালে হাবিব মারা যান।

কোটচাঁদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কবির হোসেন মাতুব্বর মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে খবরের কাগজকে জানান, পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে মরদেহ উদ্ধার করে ঝিনাইদহ সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠিয়েছে। ঘাতক পিকআপটি আটক করা যায়নি। এ ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

মাহফুজুর রহমান/

 

জলবায়ু বাস্তুচ্যুতদের জন্য মৃত্যু নয়, বেঁচে থাকাই শাস্তি

প্রকাশ: ০৮ জুলাই ২০২৫, ০৯:৫২ পিএম
জলবায়ু বাস্তুচ্যুতদের জন্য মৃত্যু নয়, বেঁচে থাকাই শাস্তি
১৯৮৮ সালের ঘূর্ণিঝড়ে গৃহহারা হয়ে সাতক্ষীরা শহরের বলফিল্ড বস্তিতে আশ্রয় নেন আমিরুন বেগম। ৩৭ বছরের বস্তি জীবনে তার ঘরে কখনও বিদ্যুতের আলো জ্বলেনি।

১৯৮৮ সালের এক শীতল সকালে সাতক্ষীরার শ্যামনগরের এক বিধ্বস্ত গ্রামে দাঁড়িয়ে ছিল বারো বছরের এক কিশোরী। নাম তার আমিরুন বেগম। ঘূর্ণিঝড়ে ভেসে যাওয়া ঘর, নিঃস্ব পরিবার আর অশ্রুসিক্ত চোখে সে বুঝে গিয়েছিল—এই দেশ, এই মাটি তাকে আর আগলে রাখবে না। স্বামীর হাত ধরে যখন বস্তিতে আশ্রয় নেয়, তখনও জানত না, সামনে অপেক্ষা করছে দীর্ঘতর এক দুঃস্বপ্ন।

৩৭ বছর কেটে গেছে। কিন্তু আমিরুনের জীবন থেমে আছে সেই প্রথম বাস্তুচ্যুতির দিনে। তার ঘরে নেই বিদ্যুৎ, নেই স্যানিটেশন, নেই নিরাপদ পানি। রাত হলে একটি মাত্র কেরোসিন ল্যাম্পের আলোতে কাঁপে তার ছায়া, যেমন কাঁপে তার ভবিষ্যতের সমস্ত সম্ভাবনা। ৬ সন্তানের কেউ দেখে না তাকে। 

‘পায়ে বল থাকলে ভিক্ষা করি, না থাকলে খালি পেটে শুয়ে থাকি। বস্তির এ মাথা থেকে ও মাথা কেউ জানে না, কে বাঁচে, কে মরে,’—নীরব গলায় বলেন আমিরুন।

স্বামীকে হারিয়েছেন দুই যুগ আগে। কিন্তু এই রাষ্ট্র এখনো খোঁজ নেয়নি তার। কোনো বিধবা ভাতা নেই, স্বাস্থ্যসেবা নেই, এমনকি কেউ জানতেও চায় না—তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে কেমন আছে এই নারী। তার জীবনের প্রতিটি দিন যেন নিষ্ঠুরতার নতুন অধ্যায়। এই গল্প কেবল আমিরুনের নয়, এই গল্প সাতক্ষীরার বাস্তুচ্যুত এক লাখ মানুষের। 

১৯৮৮ সালের সেই বিভীষিকাময় ঝড়ে শ্যামনগরের নিঃস্ব ঘরে শেষ নিঃশ্বাস ফেলেছিল অনেক স্বপ্ন। দশ বছরের নববধূ আমিরুন বেগম তখনও বুঝে উঠতে পারেননি—ঘর ভাঙার অর্থ কী। সেই থেকে শুরু হয় তার জীবনের একপক্ষীয় যুদ্ধ—যেখানে প্রতিপক্ষ ছিল অনাহার, অন্ধকার আর রাষ্ট্রীয় অবহেলা।

৩৭ বছর ধরে তিনি আটকে আছেন সাতক্ষীরা পৌরসভার কুখরালী বলফিল্ড বস্তির একচালা ঘরে। বিদ্যুৎ নেই, ফ্যান নেই, রোদ বা বৃষ্টির দিনে ছাউনির টিন কাঁপে, আর রাত হলে একটি মাত্র ল্যাম্পের বাতিতে জ্বলে ওঠে তার জীবনের অন্তহীন ক্লান্তি। ‘পায়ে বল থাকলে ভিক্ষা করি। না থাকলে উপোস করে ঘুম,’—এই বাক্যেই বন্দি তার ৩৭ বছরের বেঁচে থাকা। স্বামী হারিয়েছেন দুই যুগ আগে, রাষ্ট্র দিয়েছে কেবল নীরবতা।

ইব্রাহীমের ঘরে আলো নেই, ছেলের শরীরে জীবন নেই

ইব্রাহীম হোসেন জন্ম নিয়েছেন বস্তিতে, নদীভাঙনে উদ্বাস্তু এক বাবার সন্তান। এখন তিনিও বন্দি—এক প্রতিবন্ধী সন্তানের কান্না আর রাষ্ট্রের নীরবতার ভেতর।

ইব্রাহীমের ৪ বছর বয়সী ছেলে নয়ন গাজীর শরীরে পুষ্টি নেই, চোখে দৃষ্টি আছে, কিন্তু ভবিষ্যৎ অন্ধকার। সারা দিন মাটিতে পড়ে থাকে—একটা শরীর, যেটা কেবল শ্বাস নেয়, বাঁচে না।

‘ভাতার টাকায় একদিনের ওষুধ হয় না,’—বলতে বলতে গলা কাঁপে ইব্রাহীমের। হুইলচেয়ার নেই, চিকিৎসা নেই। ইব্রাহীম বলেন, ‘ঘরে জ্বলে একমাত্র বাল্ব—সেটিও টানা তারে। অন্যের বাসা থেকে সাইট লাইনে বিদ্যুৎ আসে, মাসে ১০০ টাকার বিনিময়ে। ফ্যান, ফ্রিজ নিষিদ্ধ। মোবাইল চার্জ দেওয়া যায়—কিন্তু, শর্ত একটাই—বাল্ব যেন বেশি না জ্বলে। আলো নয়, অভাবই এই ঘরের নিয়তি।”

ডলি শান্তা: পানি মানেই লড়াই

শহর যেখানে বোতলজাত পানি টেবিলে উঠে, সেই শহরেরই আরেক পাশে পিপাসার নাম—সাতক্ষীরা। সেখানেই বাস করেন ডলি শান্তা, সাতক্ষীরা পৌর এলাকার এক বস্তিতে। তার সকাল শুরু হয় আধা কিলোমিটার দূরের টিউবওয়েলে। তিন শতাধিক পরিবারের ভিড়ে পানির লাইনে দাঁড়িয়ে। এক কলস পানির জন্য প্রতিদিন হারান ঘণ্টার পর ঘণ্টা। আর সময় হারালে কাজ হারান। যার প্রভাব পড়ে সংসারে।

“কাজ করতে পারি, ঘাম ঝরাতে পারি—কিন্তু মালিকের চোখে আমি ‘পানি আনতে দেরি করা মেয়েমানুষ’। একটা কলসের জন্য অনেক বার কাজ চলে গেছে।”

কংক্রিটের শহরের নিচে চাপাপড়া মানুষ

শুধু আমিরুন-ইব্রাহীম নন। বরং সাতক্ষীরা পৌরসভার ৪৭ বস্তিতে বাস্তুচ্যুত হয়ে আসা প্রায় এক লাখ মানুষের গল্প একই ধরনের। এ সমস্ত বস্তিবাসীর একটি বড় অংশ এসেছে উপকূলীয় ও নদীভাঙন প্রবল অঞ্চল থেকে। সহায়-সম্বল হারিয়ে বেঁচে থাকার আশা নিয়ে জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত থেকে বাঁচার জন্য তাদের অধিকাংশ বছরের পর বছর সাতক্ষীরা পৌর শহরের ঘিঞ্জি এলাকায় কোনোভাবে বসবাস করে আসছেন। কিন্তু অভাব, দারিদ্র্য, অশিক্ষা, বন্যা, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ তাদের পিছু ছাড়ে না। কয়েক ফুটের ছোট্ট ঘরেই রান্নাবান্না খাওয়া ঘুম এক ঘরেই। আর সেই ঘরে বন্দি তাদের কষ্টের জীবন।

পানি সংকট: বেঁচে থাকাটাই বিলাসিতা

সাতক্ষীরার বস্তিগুলোতে সুপেয় পানি পাওয়াই সবচেয়ে বড় যুদ্ধ। প্রতিটি টিউবওয়েলের ওপর নির্ভর করে শত শত পরিবার। গ্রীষ্মকালে টিউবওয়েল শুকিয়ে যায়। তখন জারের পানি কিনতে হয় ২৫-৩০ টাকা দিয়ে। সেই পানি দিয়েই রান্না। আর নোংরা অপরিচ্ছন্ন পানিতে গোসল, প্রস্রাব–পায়খানা সবকিছু হয়।

স্যানিটেশন: স্বাস্থ্য নয়, অপমান

সাতক্ষীরা পৌর এলাকার প্রতিটি বস্তিতে শৌচাগারের অবস্থা ভয়াবহ। অধিকাংশই রিংবিহীন, খোলা পরিবেশে, পলিথিন বা টিন দিয়ে ঘেরা। নারীরা রাতে টয়লেট যেতে ভয় পান, আর শিশুদের জন্য এটি জীবনের ঝুঁকি।

কামালনগরের এক গৃহবধূ জানান, গর্ভবতী অবস্থায় টয়লেটের কাছে পড়ে গিয়ে দুইবার রক্তপাত হয়েছে। ডাক্তার বলেছিল বিশ্রাম দরকার, কিন্তু বিশ্রামের জায়গা কোথায়?

স্বাস্থ্য ও পুষ্টি সংকট: ধুঁকে ধুঁকে বেঁচে থাকা

বস্তিগুলোতে শিশুরা জন্ম নেয়, কিন্তু বড় হয় না—ওজন কম, শরীর দুর্বল, চোখে অনাগত অসুখের ছায়া। BRAC Urban Health Survey অনুযায়ী, সাতক্ষীরা পৌরসভার বস্তিগুলোর অন্তত ৪৬ শতাংশ শিশু অপুষ্টিতে ভোগে। জন্ম থেকেই তাদের শরীর হয় লড়াইয়ের মাঠ—ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া, টাইফয়েড যেন ঘরোয়া রোগ।

অপুষ্টি শুধু পেটের ক্ষুধা নয়, এটি দৃষ্টি নষ্ট করে, শিখতে দেয় না, জীবনকে ধীরে ধীরে নিঃশেষ করে।

সাতক্ষীরা শিশু হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. আবুল বাশার আরমান বলেন, ‘বস্তির শিশুরা শুধু শারীরিক নয়, মানসিকভাবেও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এই অবস্থা চলতে থাকলে আগামী প্রজন্ম অসুস্থ, দুর্বল ও বিপন্ন হবে। এটা শুধু স্বাস্থ্য সমস্যা না, এটা জাতীয় নিরাপত্তার প্রশ্ন।’

কর্মসংস্থান ও আয় সংকট: ঘামের বদলে অপমান

এই বস্তিগুলোর অধিকাংশ পুরুষ ও নারী কাজ পান না প্রতিদিন। কেউ রিকশা চালান, কেউ দিনমজুরি করেন, কেউ কেউ হকারি। কিন্তু আয় অস্থায়ী। দিনে ২০০–৩০০ টাকা, কোনো দিন খালি হাতে ফিরতে হয়। দিনে যেটা পান সেই টাকায় খাওয়া, ভাড়া, ওষুধ, স্কুল সবকিছু সামলানো অসম্ভব।

ইব্রাহীম হোসেন বলেন, ‘সকাল ৬টা থেকে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকি। কাজ পাই না। ছেলে প্রতিবন্ধী, বছরে ৩ বার ভাতা পাই। সেটা দিয়ে সংসার চালাতে হয়। আর এভাবে ৪ বছর বয়সী প্রতিবন্ধী নয়নের তিন বছর ধরে পাওয়া ভাতার টাকাতে ইব্রাহীমের সংসার চলছে।’

সুদের চক্র: পুঁজি নয়, বেঁচে থাকার মূলধনই বন্ধক

সাতক্ষীরা পৌর এলাকার বস্তিবাসীরা চিকিৎসা, খাবার কিংবা স্কুলের খরচ সবকিছুর জন্যই ঋণ করেন। তাদের কাছে ঋণ মানে করুণা নয়, এক জ্যান্ত দাসত্ব। মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে বস্তিবাসীরা সহায়তা পান না। এক হাজার টাকা ধার নিলে, সেখানে সুদ দিতে হয়। কেউ সুদের টাকা ফেরাতে ফেরাতে শেষমেশ নিজের শরীরটাই বিকিয়ে দিতে বসেন। এই চক্র থেকে কেউ বের হতে পারেন না। কারণ, ঋণ থেকে বেরিয়ে আসা মানে বাঁচা নয়, বরং অস্তিত্ব হারানো।

কেউ এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে হাঁস-মুরগি পালন শুরু করেন, কেউ ছোট চায়ের দোকান দেন। কিন্তু পুঁজি বাড়ার আগেই কিস্তি এসে দাঁড়ায় দরজায়—জীবন থেমে যায়, ব্যবসা ভেঙে পড়ে।

এদিকে সাতক্ষীরা শহরের বস্তি এলাকাগুলোতে সুদের চক্রে আটকে আছে শত শত পরিবার। একাধিক ভুক্তভোগী বলেন, ‘ঋণ করে সরকারি জমিতে একচালা ঘর বা দোকান তুলছিলাম। কিন্তু গত বছর প্রশাসন সেই ঘর-দোকান উচ্ছেদ করে দেয়। এখন কিস্তির টাকা দিতে না পেরে বাড়ি ফেলে পালিয়ে থাকতে হয়। সুদের লোক ঘরে এলে, শুধু টাকা না—আমাদের বেঁচে থাকার জায়গাটুকুও আর থাকে না।’

এই শহরে আশ্রয় নেই, ব্যবসা নেই, আস্থাও নেই। থেকে যায় শুধু কিস্তির খাতা আর ভাঙা ঘরের স্মৃতি। এ নিয়ে অনেকের মাঝে আক্ষেপ থাকলে বাস্তবতাকে মেনে এই জীবনে অভ্যস্ত হয়েছেন তারা।

শিক্ষা সংকট: ভবিষ্যৎহীন প্রজন্ম

বস্তির শিশুরা স্কুলে যায় না বললেই চলে। সরকারি স্কুলে জায়গা হয় না, বেসরকারি স্কুলে ফি দেওয়া অসম্ভব। মেয়েদের জন্য নিরাপদ যাতায়াত নেই বলে ১২–১৩ বছরেই তাদের বিয়ে দিয়ে দেওয়া হয়।

সাতক্ষীরা প্রাণসায়ের খালধারের বস্তিতে বাস করা আজিবার রহমান বলেন, ‘আমার মেয়ে ক্লাস থ্রিতে থাকতে বিয়ে দিয়েছি। মেয়ের বয়স এখন সতেরো। তার কোলে তিন বছরের সন্তান।’ 

তিনি বলেন, ‘ভাবছিলাম মেয়েটারে পড়াব, কিন্তু ছেলেরা উত্ত্যক্ত করত। সম্মানের তাগিদে মেয়েকে বিয়ে দিয়ে দিই।’

প্রাণসায়েরে এখন স্রোত নয়, শোক বইছে

যে খালে একসময় জল বইত, এখন সেখানে বইছে বস্তির গন্ধ, গ্লানি আর গর্হিত রাষ্ট্রের মুখোশহীনতা। সাতক্ষীরা শহরে বস্তিগুলোর জন্য নেই কোনো বর্জ্য ব্যবস্থা। যা পচে, যা দগদগে, যা সমাজ ছুঁতে চায় না— তার বড় একটি অংশ ফেলে দেওয়া হয় প্রাণসায়ের খালে। এখন আর এটা খাল নয়—একটা চলমান শবগৃহ। প্লাস্টিক, ডায়াপার, পচা খাবার, মল-মূত্র… আর দিনের দুবার সেই গন্ধভরা স্রোত ফিরে আসে জোয়ারে। শহরের মিনারেল ওয়াটার ঘরে ঢোকে, আর খালে ভেসে চলে গরিবের অপমান। এই পানিতে গোসল করে শিশুরা, খেলে, হাসে, কাশে, ঘুমায়… এবং চুপচাপ অসুস্থ হয়। সাতক্ষীরা কুখরালী এলাকার খালধারের বাসিন্দারা বলেন, ‘খাল ছাড়া পথ নাই। ওখানেই ধুই। এরপর জ্বর, পুঁজ, গা-পোড়া লাগে। কিন্তু কিছু তো করার নাই!’

শৌচাগার: অপমানের অপর নাম

সাতক্ষীরার বিভিন্ন বস্তি এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, এখানে টয়লেট মানে নয় গোপনতা, নয় নিরাপত্তা—বরং এক অমানবিক খাঁচা। রিংবিহীন গর্ত, চারদিকে পলিথিনে মোড়া লজ্জার দেয়াল। মেঝেতে পানি, কাদা এবং ভেসে থাকা মানুষের অপমান। সকালে যেতে লজ্জা, রাতে যেতে ভয়। মায়েরা তাদের কিশোরী মেয়েকে দুপুরে যেতে দেয় না—‘দিনের আলোয় ওখানে গেলে, মেয়েটা আর মেয়ে থাকে না।’ 

এই টয়লেটগুলো কেবল মলমূত্র রাখে না—এগুলো গিলে ফেলে নারীর সম্মান, শিশুর নিরাপত্তা, আর মানুষের মর্যাদা। শৌচাগার নয়, এ যেন প্রতিদিনের এক বোবা অত্যাচার—যেখানে প্রতিটি প্রবেশ এক অপমান, আর প্রতিটি বের হওয়া এক ক্ষত।

ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প: অন্ধকারেও সম্ভাবনার আলো

সব অন্ধকারে কিছু মানুষ জ্বলে ওঠেন আশার মতো। পারকুখরালী এলাকার বস্তির ইয়াসমিন খাতুন ছিলেন একসময় গৃহবধূ, স্বামীর অকার্যকর সংসারের বোঝা। এখন নিজের ঘরের সামনে গড়ে তুলেছেন পুষ্টি বাগান, পাশাপাশি বিভিন্ন অনুষ্ঠানে রান্নার কাজ করেন।

৫ হাজার টাকার এনজিও ঋণেই শুরু করেছিলেন। আজ দিনে আয় হয় ৫০০–১০০০ টাকা।

‘স্বামী আয়ে সংসার চলছিল। বাধ্য হয়ে ১২ বছরের মেয়ে বিয়ে দিয়েছিলাম। তারপরেও সংসারে স্বচ্ছতা ফিরিনি। একদিন ভাবলাম—এই ঘর বাঁচাতে হলে আমাকে দাঁড়াতেই হবে। এখন কিস্তিও দেই, কিছু জমেও যাচ্ছে।’ — বলেন ইয়াসমিন।

একই এলাকার আজমির হোসেন। অনেক কষ্টে টেকনিক্যাল প্রশিক্ষণ নিয়ে হয়েছেন একজন স্যানিটারি মিস্ত্রি। আগে ছিলেন বেকার, এখন দিনে আয় করেন ৫০০–৭০০ টাকা।

‘সবসময় কাজ থাকে না। কিন্তু একটা জিনিস বুঝেছি—নিজের হাতের কাজ থাকলে কেউ ঠকাতে পারে না।” — বলেন আজমির।

এই গল্পগুলো ছোট, কিন্তু বার্তা বড়

সহযোগিতা, প্রশিক্ষণ আর সম্মান পেলে, প্রান্তিকরাও পেছনে থাকেন না—তারা উঠতে জানেন। যারা অন্ধকারে জন্মায়, তারাও আলো বানিয়ে নেয়।

সাতক্ষীরার বাস্তুচ্যুতরা কী জানেন, আর কী জানেন না

সাতক্ষীরা শহরের যেসব এলাকায় জলবায়ু বাস্তুচ্যুত মানুষজন বসতি গড়েছেন—সেগুলো শহরের মানচিত্রে থাকলেও, নাগরিক সেবার খাতায় প্রায় অদৃশ্য। বস্তির মানুষ জানেন না কোথায় গেলে পানীয় জল মিলবে, কোথায় গেলে চিকিৎসা পাওয়া যাবে, আর কীভাবে সরকারি সহায়তা পাওয়ার আবেদন করতে হয়।

পৌরসভার দৃষ্টিভঙ্গি

সাতক্ষীরা পৌরসভার প্রশাসক মাশরুবা ফেরদৌস বলেন, ‘সাতক্ষীরা শহরে বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় আমাদের অনেক সীমাবদ্ধতা রয়েছে। জমির সংকট, পুরোনো অবকাঠামো আর বাজেটের ঘাটতি আমাদের কাঙ্ক্ষিত সেবা দিতে দিচ্ছে না। যেখানে ডাস্টবিন বসাতে চাই, সেখানেও স্থানীয়ভাবে বাধা আসে।’

তিনি আরও জানান, পৌরসভা এখন উন্নয়ন সহযোগীদের সঙ্গে কাজ করছে এবং মন্ত্রণালয়কে বলেছে যেন এ জন্য বিশেষ প্রকল্প নেওয়া হয়।

গবেষক ও উন্নয়ন সংস্থার দৃষ্টিভঙ্গি

শিশুদের পুষ্টি, নারীর স্বনির্ভরতা, নিরাপদ পানি ইত্যাদি নিয়ে কাজ হয় বটে, কিন্তু তা প্রকল্পভিত্তিক। প্রকল্প শেষ মানেই সহায়তা শেষ। স্থানীয় বাস্তবতা নীতিতে প্রতিফলিত হয় না—এটাই সবচেয়ে বড় দুর্বলতা।

বস্তিবাসীর উপলব্ধি ও অজ্ঞতা

অনেকে জানেন না, তারা কোথায় অভিযোগ জানাতে পারেন। কীভাবে চিকিৎসার ভাতা পাওয়া যায়, সেটাও স্পষ্ট না। কেউ কেউ নিজের চেষ্টা ও এনজিওর সহায়তায় ঘুরে দাঁড়িয়েছেন—তবে এসবই বিচ্ছিন্ন উদ্যোগ। কিন্তু অনেকেই জানেন না—তাদেরও আছে বলার অধিকার, জানার অধিকার।

রাষ্ট্রীয় আইন কী বলছে?

দেশের সংবিধান (ধারা ১৫) অনুযায়ী: প্রত্যেক নাগরিকের জন্য অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। আর ২০০১ সালের হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী: পুনর্বাসন ছাড়া কোনো বস্তি উচ্ছেদ করা যাবে না।

ঘরহীনদের নামে নীরব রাষ্ট্র—কী হতে পারে সমাধান

মাধব চন্দ্র দত্ত, সাতক্ষীরার বিশিষ্ট মানবাধিকার কর্মী ও নাগরিক নেতা। দীর্ঘদিন ধরে বস্তিবাসীর মানবিক অধিকার ও পুনর্বাসনের দাবিতে কাজ করে যাচ্ছেন। তিনি বলেন, ‘সাতক্ষীরায় উপকূল ও নদীভাঙন থেকে বাস্তুচ্যুত হয়ে বস্তিতে ঠাঁই নেওয়া মানুষরা এখন রাষ্ট্রীয় সেবাব্যবস্থার বাইরে। তারা নাগরিক, কিন্তু নাগরিক হিসেবে গণ্য নন।’

এই বাস্তুচ্যুতি শুধুই পরিবেশগত নয়, এটি একটি জটিল মানবিক সংকট—যেখানে স্বাস্থ্য, শিক্ষা, পুষ্টি, নিরাপত্তা ও মর্যাদা সবই অনিশ্চিত। অথচ দেশের সংবিধান বলছে, অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসা রাষ্ট্রের দায়িত্ব।

বাংলাদেশ আন্তর্জাতিকভাবে সিডিজি (SDG), সেন্ডাই ফ্রেমওয়ার্ক ও UN Guiding Principles on Internal Displacement–এ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। সেখানে বলা হয়েছে, অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুতদের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। কিন্তু সাতক্ষীরা আজ সেই প্রতিশ্রুতির বিপরীতে দাঁড়িয়ে এক নীরব বিপর্যয়ের নাম। এই নীরবতা শুধু প্রশাসনিক ব্যর্থতা নয়—এটি আন্তর্জাতিক দায় অস্বীকারের সমান। সাতক্ষীরার বাস্তুচ্যুতরা এখন আমাদের উন্নয়ন নীতির আয়নায় সবচেয়ে স্পষ্ট অথচ উপেক্ষিত প্রতিবিম্ব। তাদের পাশে দাঁড়ানো এখন আর দয়ার বিষয় নয়, এটি রাষ্ট্র ও বিশ্বের যৌথ নৈতিক, সাংবিধানিক ও আন্তর্জাতিক দায়িত্ব।