ঢাকা ১ শ্রাবণ ১৪৩২, বুধবার, ১৬ জুলাই ২০২৫
English

মুহসীন মোসাদ্দেক এর 'ফোকলা ভূত'

প্রকাশ: ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০১:০১ পিএম
আপডেট: ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৩:১০ এএম
মুহসীন মোসাদ্দেক এর 'ফোকলা ভূত'

‘বাবা, ভূত আঁকো!’

রাজু এমন আহ্লাদে ভূত আঁকার কথা বলল যেন ভূত আঁকা ডালভাতের মতো ব্যাপার! আবার ব্যাপারটা এমন যেন, বাবা পাবলো পিকাসোর মতো বড় মাপের কোনো শিল্পী, যখন যা খুশি তাই আঁকতে বললে নিমিষেই এঁকে দিবে!
রাজুর কথা শুনে বাবা প্রথমে অবশ্য একটু চমকে উঠল, ‘কী আঁকব!’
‘ভূত আঁকো বাবা, ভূত!’
রাজু আঁকার খাতা আর পেন্সিল ধরিয়ে দিলো বাবার হাতে।
‘ভূত কীভাবে আঁকব? আমি কী কখনো ভূত দেখেছি নাকি!’
রাজু অবাক হলো, ‘কী বলো তুমি বাবা! এত বড় হয়েছো এখনো তুমি ভূতই দেখোনি?’
বাবা বিরক্ত হলো, ‘ভূত কি পাখ-পাখালির মতো চোখের সামনে ওড়াওড়ি করে যে যখন তখন দেখা যায়!’
‘পাখ-পাখালির মতো ওড়াওড়ি না করুক, সিনেমায়-বইতে-পত্রিকায় কত কত ভূতের ছবি দেখা যায়! ঘুমের ভেতরে স্বপ্নেও তো কতদিন ভূতেরা এসে আনাগোনা করে। তুমি কখনো দেখোনি?’
‘তা না হয় দেখেছি। কিন্তু তুমি নিজেই তো এঁকে ফেলতে পারো। তুমি না কত কিছু আঁকতে পারো, একটা ভূত আঁকতে পারবে না?’
রাজুর মুখ দেখে মনে হলো সে আঁতকে উঠল, ‘না, না, না। আমি আঁকব না!’
বাবা মুচকি মুচকি হেসে বলে, ‘কেন? ভয় লাগে?’
‘না, না, না। ভয় লাগে না।’ রাজুর দ্রুত জবাব, ‘আমি আঁকলে কাগের ঠ্যাং বগের ঠ্যাং হয়ে যাবে। এজন্য তুমি আঁকো।’
‘আচ্ছা, তুমি তাহলে বলে দাও কেমন ভূত আঁকব।’
‘হুম।’ একটু চিন্তা করল রাজু, ‘ইয়া বড় একটা মাথা আঁকো।’
বাবা আঁকল।
‘মাথায় দুইটা শিং দাও।’
বাবা দিলো।
‘চোখ আঁকো, গোল গোল চোখ। নাক হবে ভোঁতা। কান খাড়া খাড়া। ইয়া বড় বড় দাঁতওয়ালা মুখ, উপরের পাটির দাঁতগুলো মুখের বাইরে বের হয়ে থাকবে। আর এলোমেলো লম্বা লম্বা জটপাকা চুল।’
রাজু একমনে বলে যাচ্ছিল। একটু থেমে উঁকি দিয়ে দেখে নিল বাবা ঠিকঠাক আঁকছে কিনা।
‘তারপর?’ বাবা তাড়া দিলো।
‘ভূতের শরীরটা আঁকো ডিমের মতো। লম্বা লিকলিকে হাত, হাতের চেয়ে মোটা মোটা আঙুল হবে। হাত দুপাশে ছড়িয়ে রাখো।’
‘আর?’
‘উমমম...’ রাজু ভাবল একটু, ‘আর কিছু লাগবে না। শেষ।’
‘কী বলো? ভূতের পা কী হবে? ভূত কি হাঁটবে না?’
‘না, হাঁটা লাগবে না। এ ভূত হাত দিয়ে ডানার মতো ঝাপটিয়ে উড়ে বেড়াবে।’ রাজু তাগাদা দিলো, ‘তুমি সুন্দর করে ঘষামাজা করে আরেকটু বিদঘুটে আর ভয়ঙ্কর ভাব দিয়ে শেষ করে ফেলো।’
বাবা কথা বাড়াল না। আঁকা শেষ করে জানতে চাইল, ‘দেখো, কেমন হয়েছে?’
রাজু ভ্রু কুঁচকে খাতাটা এদিক-ওদিক ঘুরিয়ে দেখে গম্ভীর স্বরে বলল, ‘যেমনই হোক, আপাতত চলবে।’
বাবা ফিক করে হেসে দিলো। আরও জানতে চাইল, ‘ছবিটা নিয়ে এখন তুমি কী করবে?’
‘কাল স্কুলে নিয়ে গিয়ে রিতু-সেতুকে ভয় দেখাব। ওরা ভূত খুব ভয় করে কিনা!’ বলেই ছবিটা নিয়ে রাজু নিজের ঘরে চলে গেল।

রাতে ঘুমের মধ্যে মনে হলো কেউ যেন রাজুর পিঠে টোকা দিয়ে ডাকছে। রাজু চোখ খুলে পাশ ফিরে চমকে উঠল, বাবার আঁকা ভূতটা দাঁতগুলো বের করে বিদঘুটে হাসি দিয়ে তার দিকে তাকিয়ে আছে! রাজু ভয় পেলেও বুঝতে দিতে চাইল না, তবুও একটু তোতলাতে লাগল, ‘তু-তুমি কে?’
‘হে, হে, হে, আমি ওই ভূতটা, তোমার ব্যাগের ভেতরে খাতায় যেটা আঁকা আছে।’ কর্কশ স্বরে খিক খিক করে হাসতে হাসতে বলল ভূতটা।
রাজু অবাক হলো, ভয়ও পেল। তারপরও নিজেকে শান্ত রাখল, ‘ধুর! বাজে কথা। স্বপ্ন 
দেখছি বোধহয়।’ বলেই আবার পাশ ফিরে 
শুয়ে পড়ল। ভূতটা আবার টোকা দিলো, 
‘ঘুমিয়ে পড়ছো কেন? আমি তো তোমাকে ভয় দেখাতে এসেছি।’
রাজু পাশ ফিরে বলল, ‘আমি এসব ভয় পাই না। দূর হও।’ তারপর আবার পাশ ফিরে চোখ বুজে নিল। ভূতটার আত্মসম্মানে লাগল, ‘বললেই হলো ভয় পাও না! আগে এদিকে ভালো করে তাকিয়ে দেখো।’
রাজু তাকাতেই ভূতটা তার বের হয়ে থাকা উপরের পাটির দাঁতগুলো আরও বের করে, হাত দুটো কান পর্যন্ত তুলে ভেঙচানোর মতো ভঙ্গি করে নাড়িয়ে খিক খিক করে বলতে লাগল, ‘হাউ মাউ খাও, এখন কি ভয় পাও?’
রাজু ভয় পায়, কিন্তু ধমকিয়ে বলে, ‘কীসের ভয়! দূর হও!’ রাজু আবার পাশ ফিরে চোখ বুজে ফেলে। ভূতটা রাজুর পিঠে আবার টোকা দেয়। রাজু তাকায় না। ভূতটা টোকা দিতে থাকে। রাজু তাকায় না। ভূতটা টোকা দিতেই থাকে। রাজু এবার রেগে যায়, ‘এখনই দূর হও বলছি। আমি বেশি রেগে গেলে কিন্তু তোমার দাঁতগুলো সব ফেলে দিব!’
‘কী! ভূতের দাঁত ফেলে দিবে!’ ভূতটাও উত্তেজিত হয়ে গেল, ‘কত্তবড় সাহস তোমার! একটা ভূতের দাঁত তুমি ফেলে দিবে! এসো, উঠে এসো, দেখি কেমন করে তুমি ভূতের দাঁত ফেলো!’ ভূতটা অস্থিরতায় এলোমেলোভাবে তার লিকলিকে হাত দুটো নাড়াতে লাগল।
রাজু শান্তভাবে বলল, ‘সত্যিই দেখতে চাও?’
‘চাই মানে! অবশ্যই চাই। এই আমি কোমড় বেঁধে দাঁড়ালাম। দেখি তুমি কী করতে পারো।’
‘পরে কিন্তু পস্তাবে। কাউকে কিন্তু মুখ দেখাতে পারবে না!’
‘সেটা নিয়ে তোমাকে ভাবতে হবে না! তুমি আগে আমার দাঁত ফেলে দেখাও।’
‘ঠিক আছে, সত্যিই যদি তুমি দেখতে চাও তাহলে কাল আবার এসো। যদি আসতে পারো তবেই দেখাব।’
‘কাল মানে! আজই দেখাও, এখনই...।’ ভূতটা অস্থির হয়ে গেল।
‘তোমার যদি সাহস থাকে তবে কাল আবার এসে দেখাও। সাহস করে যদি কাল আবার আসতে পারো তবেই আমি তোমার দাঁত ফেলে দেখাব। আর যদি সে সাহস না থাকে তাহলে থাকো কোমড় বেঁধে দাঁড়িয়ে, আমাকে বিরক্ত করো না। আমি ঘুমাব।’
‘সাহস নিয়ে প্রশ্ন! ভূতের সাহস নিয়ে প্রশ্ন!’ মনে হলো রাগের চোটে ভূতটার চোখ দিয়ে আগুন বের হয়ে আসবে! কিন্তু সে সামলে নিল, ‘ঠিক আছে, কালকেই আসব। দেখব তুমি কীভাবে আমার দাঁত ফেলো!’
ভূতটা চলে গেল। রাজু চোখ খুলে পাশ ফিরে একবার দেখে নিয়ে নিশ্চিত হয়ে নিল যে ভূতটা আসলেই চলে গেছে কিনা। সেটা নিশ্চিত হয়ে আবার পাশ ফিরে শুয়ে পড়ল। তার মাথায় এরইমধ্যে ভূতের দাঁত ফেলে দেয়ার একটা বুদ্ধি এসে গেছে। তাই সে নিশ্চিন্তে ও নির্ভয়ে ঘুমিয়ে পড়ল।

সকালে ঘুম থেকে উঠেই রাজু তার ব্যাগ থেকে খাতাটা বের করল। বাবার আঁকা ভূতটা যেভাবে আঁকা হয়েছিল সেভাবেই আছে। সে ঠিক করল, এটা আজ আর স্কুলে নিয়ে যাবে না, রিতু-সেতুকে ভয় দেখাবে না। গতরাতের ঘটনা সত্য হোক বা স্বপ্ন, এর একটা হেস্তনেস্ত করতে হবে আগে।
সে একটা ইরেজার দিয়ে ভূতটার দাঁতগুলো সব মুছে দিলো! তারপর ছবির নিচে লিখে দিলো, ‘ফোকলা ভূত’।
রাতে অনেকক্ষণ রাজু জেগে থাকল, ভূতটা আর এল না। সারারাতে ভূতটা আর এলই না। আর কোনোদিন আসবেও না! ফোকলা মুখ নিয়ে কীভাবে আসবে!
রাজুর কাছে অবাক লাগল, মানুষের মতো ভূতেরাও আজকাল ‘দাঁত থাকতে দাঁতের মর্ম’ বোঝে না!

জাহ্নবী

 

বর্ষায় যেসব ফুল ফোটে

প্রকাশ: ১৩ জুলাই ২০২৫, ০২:৩৪ পিএম
বর্ষায় যেসব ফুল ফোটে
ছবি সংগৃহীত

বর্ষাকালে ক্ষণে ক্ষণে দিগন্তে কালো মেঘ ভর করে। ভাবখানা এমন, গোমড়া মুখ করে আকাশ যেন এখনই কেঁদে দেবে। বর্ষার সময় ডোবা-নালা সব পানিতে ভরে ওঠে। বৃষ্টির পরশে নতুন রূপ ধারণ করে প্রকৃতি। বৃক্ষরাজির ফাঁকে ফাঁকে উঁকি দেয় সুগন্ধি ফুল। বর্ষায় ফোটা ফুলগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- কদম, কেয়া, বেলি, কামিনী, বকুল, স্পাইডার লিলি, দোলনচাঁপা, ঘাসফুল, অলকানন্দ, পর্তুলিকা, নয়নতারা, মোরগঝুঁটি, কলাবতী, রজনীগন্ধা, মালতীলতা, চালতা, জুঁই, সন্ধ্যামালতী, কলমি, গুলনার্গিস, দোপাটি, শাপলা, পদ্ম ইত্যাদি।
অনেকের কাছে বর্ষা মানেই শুধুই কদমের সৌরভ! কদম ফুল প্রকৃতির সৌন্দর্য বাড়িয়ে দেয়। কদম গাছ দীর্ঘাকৃতির ও শাখা-প্রশাখাবিশিষ্ট। এ ফুলের আদি নিবাস ভারত ও চীন। তবে বাংলাদেশে এ ফুল বিশেষ স্থান করে নিয়েছে। কদমের নজরকাড়া সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয় সবাই। শহর-গ্রাম সব জায়গাতেই দেখা মেলবে কদমের। নদীর তীরে, খোলা প্রান্তরে, রাস্তার পাশে প্রচুর কদম গাছ দেখা যায়। শহরের পার্ক ও উদ্যানে কদম গাছ চোখে পড়ে। বর্ষা মৌসুমে কদম ফুল নিয়ে খেলা করতে দেখা যায় গ্রামের শিশু-কিশোরদের। 
বর্ষায় চিরসবুজ চালতা গাছের রূপ বহুগুণে বাড়িয়ে দেয় তার সাদা সাদা ফুল। নতুন ঘন সবুজ পাতার মধ্যে মাঝারি সবুজ আবরণের ফুল যেন খুব সহজেই চোখে পড়ে না! যদিও চালতার ফুল আকারে বেশ বড়। চালতা ফুল খুবই মনোহারী। 
আবার ঝুম বৃষ্টির দিনে দোলনচাঁপা বাতাসে ছড়ায় তার বিমুগ্ধ সৌরভ। বর্ষায় বেলি ও বকুলের সৌরভ ভেসে আসে বহু দূর থেকে। বর্ষায় বেলিফুলের মালা গেঁথে শিশু-কিশোরদের খেলতে দেখা যায়। 
বর্ষার আরেক সৌন্দর্য জলজ ফুলের সমাহার। বর্ষার জলে হরেক রকমের ফুল ফোটে। শাপলা-শালুক-পদ্ম মূলত বর্ষাকালের ফুল। বিশ্বের একেক দেশে জাতীয় ফুলের নাম একেক রকম। আমাদের জাতীয় ফুল শাপলা। খাল, বিল, ঝিল, ডোবা-নালা, পুকুর ও জলাশয়ে শাপলা ফুটে থাকার দৃশ্য সহজেই চোখে পড়ে। গ্রাম-বাংলার সৌন্দর্য ফুটিয়ে তোলে হরেক রকমের শাপলা। আমাদের দেশে সাধারণত সাদা, গাঢ় লাল, নীল ও গোলাপি রঙের শাপলাই বেশি দেখা যায়। বর্ষাকালে পদ্ম ও শাপলা বিলে ভ্রমণপিপাসুদের আনাগোনা থাকে। শাপলা ও পদ্ম বিলের সৌন্দর্য ছোট-বড় সবাইকে বিমোহিত করে। 
অনেকেই শাপলার সঙ্গে পদ্মকে মিলিয়ে ফেলে! কিন্তু শাপলা ও পদ্ম দুটোই ভিন্ন ফুল। এদের আকারগত পার্থক্য রয়েছে। পদ্মর সুবাস শাপলার চেয়ে তুলনামূলক বেশি। দুটোরই ফুল ও পাতা আলাদা। পদ্মফুলের পাপড়িগুলো চিকন ও লালচে হয়। পদ্মে এক জাতীয় ফল হয়। পদ্মকে বলা হয় জলজ ফুলের রানি! পদ্ম কিংবা শাপলা ফুল উৎপাদন করা লাগে না। প্রাকৃতিকভাবে বর্ষাকালে বিল-জলাশয়ে এগুলো হয়ে থাকে। বর্ষাকালে গ্রামীণ জনপদে সহজেই পদ্মর খোঁজ মেলে। 
প্রকৃতির আরেক নান্দনিক সৌন্দর্য কচুরিপানা ফুল। খুব অবহেলিত হলেও এর সৌন্দর্যও কম নয়। গ্রামাঞ্চলে খাল, বিল ও জলাশয়ে প্রচুর কচুরিপানার দেখা মেলে। বাদল দিনের ফুল জুঁই ও মালতী। জুঁই ও মালতির সুগন্ধে মেতে উঠে না এমন মানুষ খুব কমই পাওয়া যাবে!

সুপার হিরো ক্যাপ্টেন অ্যান্ট

প্রকাশ: ১১ জুলাই ২০২৫, ০২:০৪ পিএম
ক্যাপ্টেন অ্যান্ট
এঁকেছেন মাসুম

দূর দেশে এক বাসার রান্নাঘরের কোণায় পিঁপড়ার রাজ্য। সে রাজ্যের নাম ‘চিনিনগর’। সেখানকার রাজা হচ্ছেন মহামহিম পিঁপড়া ত্রয়োদশতম, যিনি ছয় বছর ধরে রাজত্ব করছেন, যা পিঁপড়াদের ইতিহাসে রেকর্ড! তবে এ গল্প তার রাজত্বের নয়, এ গল্প এক দুঃসাহসী পিঁপড়ার, যার নাম ক্যাপ্টেন অ্যান্ট!
ক্যাপ্টেন অ্যান্ট আদতে এক সাধারণ শ্রমিক পিঁপড়া। তার কাজ ছিল সারা দিন খাবার খোঁজা আর লাইনে হেঁটে হেঁটে ফেরত আনা। কিন্তু সে বরাবরই অন্যদের চেয়ে একটু আলাদা। সে সব সময় প্রশ্ন করত, ‘আমরা কেন শুধু চিনিই খাই?’ ‘আমরা কেন সিঁড়ি বেয়ে ওপরে উঠি না?’ ‘আচ্ছা, ছাদে গেলে কী কেক পাওয়া যাবে?’
সব পিঁপড়া বলত, ‘ধুর! পিঁপড়ার কাজ হলো মাটির নিচে থাকা আর চিনির দানার পিছে ছোটা!’ 
কিন্তু ক্যাপ্টেন অ্যান্ট ছিল জেদি। একদিন সে ভয়ংকর সিদ্ধান্ত নিল- রান্নাঘরের ফ্রিজের নিচে যাবে! সবাই জানত ওখানে গেলেই ‘ঝাড়ু দৈত্য’ এসে এক বাড়িতে সব উড়িয়ে দেবে! কিন্তু ক্যাপ্টেন অ্যান্টের একই কথা, সে যাবেই।
ক্যাপ্টেন অ্যান্ট গোপনে এক নানা যন্ত্রপাতি সংগ্রহ করে বানিয়ে ফেলল নিজের যান, ‘ফাস্ট সার্ফার’। সেটা চালিয়ে সে চলল ফ্রিজের নিচে। আর কী আশ্চর্য! সেখানে আবিষ্কার করল এক চিপসের প্যাকেট। তার ভেতরে অজস্র লবণ আর মসলা আর চিপসের গুঁড়া! ক্যাপ্টেন অ্যান্ট ঝটপট কিছু চিপসের গুঁড়া বয়ে নিয়ে এল রাজ্যে। সবাই একে একে চেখে দেখল। কেউ বলল, ‘ওরে বাবা! ঝাল!’ কেউ বলল, ‘হায় হায়, আমার চোখে পানি!’ 
তবে কিছুক্ষণ পর সবাই একযোগে বলল, ‘কিন্তু খেতে দারুণ।’ 
রাজা নিজে এসে ঘোষণা করলেন, ‘আমরা পিঁপড়ারা আর শুধু চিনি খাব না। এখন থেকে মসলা, ঝাল, লবণ, চিপস এমনকি তেলের স্বাদও নেব। আর এই বীর যোদ্ধাকে বলা হবে, ক্যাপ্টেন অ্যান্ট।’
সেদিন থেকে পিঁপড়ারা শুধু চিনিই নয়, চিপসের টুকরা, বিস্কুটের কণা আর বাদামের গুঁড়াও সংগ্রহ করতে লাগল। রান্নাঘর আর শুধু রান্নাঘর রইল না, হয়ে উঠল এক বিশাল অভিযানভূমি! আর ক্যাপ্টেন অ্যান্ট? সে এখনো তার ফাস্ট সার্ফারে চড়ে চষে বেড়ায় পুরো বাসা- নতুন স্বাদের খোঁজে, নতুন স্বপ্নের আশায়।

মাটিতে হাঁটে যেসব মাছ

প্রকাশ: ২২ জুন ২০২৫, ০৭:১০ পিএম
আপডেট: ২২ জুন ২০২৫, ০৭:১১ পিএম
মাটিতে হাঁটে যেসব মাছ
মাডস্কিপার পশ্চিম আফ্রিকা থেকে অস্ট্রেলিয়া পর্যন্ত ম্যানগ্রোভ জঙ্গলে থাকে।

কখনো কি ভেবেছো মাছ হাঁটতে পারে? আমাদের যেমন পা আছে, তাই আমরা হেঁটে বেড়াতে পারি। কিন্তু মাছের তো পা নেই! তাহলে?
আমরা জানি, মাছ পানিতে সাঁতার কেটে চলে। কিন্তু মজার ব্যাপার হলো, পৃথিবীতে কিছু মাছ আছে যারা মাটির ওপর হাঁটতে পারে! হাঁটতে না পারলেও হামাগুড়ি দিয়ে চলতে পারে। আজ তোমাদের তেমন কিছু আশ্চর্য মাছের গল্প শোনাব।

স্নেকহেড – সাপমুখো মাছ!

‘স্নেকহেড’ নাম শুনে ভয় পেও না! এটা আসলে আমাদের পরিচিত শোল মাছ। মাথাটা দেখতে অনেকটা সাপের মতো বলে এটাকে বাইরের দেশে সাপমুখো মাছ বলে। এই মাছ দক্ষিণ এশিয়ায় বেশি দেখা যায়। তবে আমেরিকাতেও এর দেখা মেলে।
স্নেকহেড মাটি দিয়ে হামাগুড়ি দিয়ে চলে, এমনকি পানির বাইরে ডাঙায়ও আসতে পারে। আর মজার কথা, ডাঙায় এসেও সে চার দিন পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে! তার গায়ে বাদামি রঙের আঁশ আর গাঢ় দাগ থাকে। এই মাছ কিন্তু বেশ ভয়ংকর- সে নিজের চেয়ে বড় মাছ, ব্যাঙ, পোকামাকড় সব খেয়ে ফেলে। তাই একে কাছ থেকে দেখলে সাবধান থাকতে হয়!

মাডস্কিপার- লাফিয়ে লাফিয়ে হাঁটে

মাডস্কিপার পশ্চিম আফ্রিকা থেকে অস্ট্রেলিয়া পর্যন্ত ম্যানগ্রোভ জঙ্গলে থাকে। সুন্দর বনেও এদের দেখতে পাওয়া যায়। মাডস্কিপার লাফিয়ে লাফিয়ে হাঁটে, আবার কাদার ওপর দিয়ে হামাগুড়িও দেয়। ওরা মাটির ওপর বসে পোকা, কৃমি খুঁজে খায়। সবচেয়ে চমকপ্রদ ব্যাপার, মাডস্কিপার শুধু পানিতে নয়, ডাঙায়ও থাকতে ভালোবাসে। তারা পানি আর বাতাস, দুই দিক থেকেই অক্সিজেন নিতে পারে!

 

আমাদের চেনা কই মাছ

বাংলাদেশের খাল-বিলেই কই মাছের দেখা মেলে। কই মাছের পাখনা খুব শক্তিশালী। পাখনা দিয়ে সে ডাঙায়ও চলাফেরা করতে পারে। মাটির ওপরেও ছয় দিন পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে! এদের শরীরে এমন একটা অঙ্গ আছে, যেটা দিয়ে বাতাস থেকে সরাসরি অক্সিজেন নিতে পারে। তাই কই মাছ সহজেই জল-স্থল দুই জায়গায় থাকতে পারে।
দেখলে তো! মাছ মানেই শুধু পানির বাসিন্দা না। কিছু মাছ কিন্তু আমাদের মতোই ডাঙায় হাঁটতে জানে। প্রকৃতির কী মজার সব চমক, তাই না? 

দুরন্ত ছড়া: বৃষ্টি

প্রকাশ: ২০ জুন ২০২৫, ০২:০৭ পিএম
দুরন্ত ছড়া: বৃষ্টি
ছবিটি এঁকেছে মহুয়া

খুকুর ছড়া বনের ছড়া
রথিন্দ্রজিৎ হিরু

নাচে হাতি নাচে ঘোড়া
নাচে বনের পাখি,
নাচে খুকুর কাজল মাখা
নাচে দুটো আঁখি।

নাচে বানর নাচে হালুম
নাচে হরিণ ছানা,
নাচে খুকুর পুকুর জলে
নাচে বগি কানা।

নাচে জেব্রা নাচে জিরাফ
নাচে ঝুপুরঝুপুর,
নাচে খুকুর কুকুর ছানা
নাচে ঝুমুর নূপুর।

নাচে ভালুক নাচে খরগোশ
নাচে সিংহ মামা,
নাচে খুকুর বন্দি খাঁচায়
নাচে ময়না শ্যামা।

নাচে আলো নাচে ছায়া
নাচে পাহাড় ঝর্ণা,
নাচে খুকুর দুপুর গড়া
নাচে সাগর কন্যা।

 

 


কত্ত রকম ফল
বেণীমাধব সরকার 

জ্যেষ্ঠ মাসে বাগান ভরে 
নানান রকম ফলে,
ছেলে বুড়ো সবার চোখে
সুখের বাতি জ্বলে।

এক বাগানে আম্রপালি
ল্যাংড়া আরেক বাগে,
রং মাখানো সিন্দুরে আম 
দেখতে ভালো লাগে।

হিমসাগর ও গোপালভোগে
দৃষ্টি যদি পড়ে
খাওয়ার আগেই জিভের পানি 
উথাল পাথাল করে।

লিচু গাছে থোকায় থোকায় 
ঝুলছে কত লিচু
ফলের ভারে ন্যুব্জ হয়ে 
ডালগুলো হয় নিচু।

কাণ্ড ধরে গলাগলি 
করছে কাঁঠালগুলি
মধুর মতো মিষ্টি লাগে
মুখে নিলে তুলি।

কালো জামের মধুর রসে
রঙিন করি মুখ
জ্যেষ্ঠ মাসের ফলের বাহার
দেখলে নাচে বুক।

 

 


জ‍্যৈষ্ঠ মাসে 
মো. দিদারুল ইসলাম 

জ‍্যৈষ্ঠ মাসে গাছে গাছে
কাঁচা-পাকা আম,
খোকাখুকি ডালে বসে
খাচ্ছে রঙিন জাম।

আম-কাঁঠালের গন্ধে ভাসে
ওই অদূরের গাঁ,
দাদা ডাকে, কই রে নাতি?
লিচু পেড়ে খা।

ক্লান্ত দুপুর, গাছের ডালে
নানা পাখির ঝাঁক,
পাড়ায় পাড়ায় কোক্কুরুৎ কু
দিচ্ছে মোরগ ডাক।

আনারসের বাগান জুড়ে 
মৌমাছি গায় গান,
জামরুল চিবায় কাঠবিড়ালী
মাচায় নতুন পান।

গাঁয়ের পাশেই নদীর বাঁকে
জমজমাট এক হাট,
নানান ফলের বেচাকেনায়
ব‍্যস্ত নদীর ঘাট।

 

 


তোতলা ভূত
হাফিজুর রহমান

খপ করে খায় খাবার 
গিলে এক ঢোক,
মাথার থেকে মুখ বড়
লাল দুটো চোখ।

কালো পুরো দাঁতগুলো
ধারালো যেন ছুরি, 
ছোট-বড় সব মিলে
অন্তত এক কুড়ি।

হোক না চিকনা দেহের 
উদ্দেশ্যে নেই খুঁত,
ক্ষতি করে না মানুষের 
তোতলা এই ভূত।

 

 

 

বৃষ্টি 
মোহাম্মদ শামীম মিয়া 

মেঘের মেয়ের আঁচল ছেঁকে,
বৃষ্টি পড়ে আকাশ থেকে।

বৃষ্টি পড়ে টিনের চালে,
সবুজ বনের গাছের ডালে।

বৃষ্টি পড়ে নদীর ঘাটে,
খোলা সবুজ মাঠে মাঠে।

বৃষ্টি পড়ে দিন ও রাতে,
স্নিগ্ধ মায়া জড়ায় তাতে।

বৃষ্টি পড়ে খাল ও বিলে,
ব্যাঙে ডাকে পুকুর-ঝিলে।

বৃষ্টি পড়ে চোখের পাতায়,
দৃশ্য আঁকা মনের খাতায়।

রিয়ানা ও রঙিন পরী

প্রকাশ: ২০ জুন ২০২৫, ০২:০২ পিএম
রিয়ানা ও রঙিন পরী
এঁকেছেন মাসুম

রিয়ানা ওর বড় মামাকে ডাকে বুড়ো মামা। বুড়ো মামা ওকে একটি ড্রয়িং খাতা কিনে দিয়েছেন, আর দিয়েছেন রং পেন্সিল। আজ রিয়ানা মহাখুশি!
কিন্তু ড্রয়িং খাতায় তো কিছু আঁকতে হবে! কী আঁকা যায়? কী আঁকা যায়? রিয়ানা ছুটে যায় বুড়ো মামার কাছে।
বারান্দায় চেয়ারে বসে আছেন বুড়ো মামা। চোখে চশমা, মাথায় কোঁকড়া চুল আর হাতে বই। মনোযোগ দিয়ে বই পড়ছেন তিনি।
রিয়ানা বলল, ‘বুড়ো মামা, ড্রয়িং খাতায় আমি কী আঁকব?’
মামা চেয়ারে বসে ভাবলেন। বইটা রেখে দাঁড়িয়ে ভাবলেন। মাথায় হাত দিয়ে ভাবলেন। ভ্রু কুঁচকে ভাবলেন। চশমাটা খুলে হাতে নিয়ে ঘোরালেন কয়েকবার। তারপর মামা বললেন, ‘একটা পরী আঁকো, তোমার মতো একটা পরী।’
রিয়ানা দৌড়ে ঘরের ভেতরে গেল আবার। পড়ার টেবিলে বসল। পেন্সিল নিল হাতে। তারপর পরী আঁকতে শুরু করল।
রিয়ানা ড্রয়িং খাতায় একটি পরী এঁকেছে। রং করেছে রং পেন্সিল দিয়ে। কিন্তু পরীকে ঠিক পরী মনে হচ্ছে না! মনে হচ্ছে পরীটার কিছু একটা নেই! কিন্তু কী নেই?
খাতার পরীটা তখনই বলল, ‘ও মা, তুমি আমার ডানা আঁকোনি কেন? ডানা ছাড়া কি পরী হয়?’
হ্যাঁ, তাইতো! পরীর ডানা আঁকা হয়নি! এত ভারি অন্যায়! রিয়ানা পরীর দুটো ডানা এঁকে দিল।
কিন্তু তারপর কি হলো জানো? শুনলে তোমরাও অবাক হবে!
তারপর রঙিন পরীটা আর খাতায় থাকল না! উড়ে এসে রিয়ানার পাশে বসল! রিয়ানা অবাক! ড্রয়িং খাতার পরী কীভাবে ওর পাশে এসে বসল!
রিয়ানাকে আরও অবাক করে দিয়ে পরীটা বলল, ‘আমাদের দেশে যাবে তুমি?’
রিয়ানা বলল, ‘সে হয় নাকি? আমার তো ডানা নেই! আমি কীভাবে তোমাদের দেশে যাব?’
পরীটা আরও কাছে এসে বসল। তারপর রিয়ানার পিঠে হাত বুলিয়ে দিল একবার। সঙ্গে সঙ্গে দুটি ডানা গজাল! রিয়ানা আরও অবাক হয়ে গেল, চোখ দুটি বড় হয়ে গেল তার।
আয়নার সামনে দাঁড়াল রিয়ানা। বুড়ো মামা তো ঠিকই বলেছিলেন-ওকে সত্যিই পরী পরী লাগছে!
পরীটা কিছুটা তাড়া দিয়ে বলল, ‘তাহলে আর দেরি কেন? চলো, পরীর দেশ ঘুরে আসি।’
পরীর কথায় মাথা নাড়াল রিয়ানা।
রিয়ানা উড়ছে। রঙিন পরীটাও উড়ছে। ওরা মেঘের ওপর দিয়ে উড়ে যাচ্ছে। কয়েকটি মেঘ এসে ওর ডানা ভিজিয়ে দিল।
উড়তে উড়তে পরীর দেশে চলে এল ওরা। পরীর দেশের চারদিকে রঙিন পাতার গাছ। রঙিন রঙিন ফুল। সেখানে খেলা করছে ছোট্ট ছোট্ট পরী। রিয়ানাও খেলতে শুরু করল তাদের সঙ্গে।
তখন সেখানে এলেন একজন পরী। চোখে চশমা তার। বয়স কিছুটা বেশি। এসেই বললেন, ‘অনেক খেলা হয়েছে, এবার সবাই পড়তে যাও।’
চশমা পরা পরীর কথা শুনে সবাই খেলা বন্ধ করল। তারপর চলে গেল পড়তে।
রঙিন পরীটা এসে রিয়ানার কানে কানে বলল, ‘দেখলে তো, এখানে সবাই পড়ার সময় পড়ে, খেলার সময় খেলে। আর বড়দের কথা মেনে চলে।’