ঢাকা ২০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, সোমবার, ০৩ জুন ২০২৪

পণ্যের বেঁধে দেওয়া দাম কার্যকর করুন

প্রকাশ: ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১০:৩২ এএম
পণ্যের বেঁধে দেওয়া দাম কার্যকর করুন

নিত্যপণ্যের দাম লাগামহীন হওয়ায় বাধ্য হয়ে সরকার গত বছরের আগস্ট, সেপ্টেম্বরে কিছু পণ্যের দাম নির্ধারণ করে দেয়। কিন্তু চার মাসের ব্যবধানে এসব পণ্যের কোনো দামই বেঁধে দেওয়া দামের ধারেকাছে নেই। এমনকি নতুন সরকার গঠনের পর সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী থেকে শুরু করে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী পর্যন্ত পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন। তারপরও কোনো পণ্য সরকারনির্ধারিত দামে পাওয়া যাচ্ছে না। খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, গোড়ায় গলদ থেকে যাচ্ছে। বড় ব্যবসায়ীরা কোনো নিয়মনীতির তোয়াক্কা করছেন না। সিন্ডিকেট করেই তারা বিভিন্ন অজুহাতে দাম বাড়াচ্ছেন। তারা না কমালে খুচরা পর্যায়ে কমবে না দাম। মিলার থেকে আড়ত, পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতারা একে অপরকে দোষারোপ করেই ভোক্তাদের কাছে বেশি দামে পণ্য বিক্রি করছেন।

পেঁয়াজ বা আলুর ভরা মৌসুমেও কমছে না দাম। কয়েকটি কোম্পানি সিন্ডিকেট করে ডিমের দাম গত বছরের আগস্টে হঠাৎ করে বাড়িয়ে দেয়। বাড়তে বাড়তে ডজনে তা ১৭০ টাকায় ঠেকে। এ নিয়ে হইচই পড়লে অনেক পরে পেঁয়াজ, আলুর সঙ্গে ডিমের দামও ১৪৪ টাকা ডজন বেঁধে দেয় সরকার। সেই দামই আছে গরিবের এই আমিষের। নিত্যপণ্যের মধ্যে বিভিন্ন অজুহাতে চিনিতেও ভোক্তাদের পকেট কাটা হচ্ছে।

এদিকে আওয়ামী লীগ নতুন সরকার গঠন করে নিত্যপণ্যের দাম কমানোর জন্য ঘোষণা দিলেও বাজারে তার কোনো প্রভাব পড়েনি। মন্ত্রিসভা গঠনের পরই বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ভোজ্যতেল, চিনি ও খেজুরের আমদানি শুল্ক কমানোর জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) চিঠি দেয়। 

তারপরও বাজারে কোনো পণ্যের দাম কমেনি। কিন্তু কোনো পণ্যের দাম বাড়ানোর ঘোষণা দিলে তাৎক্ষণিক বেড়ে যায়। দোকান মালিক সমিতির সদস্যরা বলছেন, সরকার তো আমদানি করে না। সরকার কেন দাম বেঁধে দেয়? সরকারের তো দাম নির্ধারণ করে বাস্তবায়ন করার কথা নয়। সরকার পারলে নিজেরা মাল আনবে, বাজারে বাজারে বিক্রি করবে, দেখবে আমরা বেশি দামে বিক্রি করছি কি না।

আসন্ন রমজান সামনে রেখে বাজার নিয়ন্ত্রণে কঠোর অবস্থানে থাকবে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, দুই মাস আগেই রমজান ঘিরে সব ধরনের পণ্য সরবরাহ করা হয়েছে। এ জন্য বাজারমূল্য স্বাভাবিক রয়েছে। রমজানে অসাধু ব্যবসায়ীদের কঠোরভাবে দমন করে বাজার পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখা হবে।

এদিকে আলু, পেঁয়াজ, ডিম, রসুনসহ যাবতীয় কৃষিপণ্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি রোধে উচ্চপর্যায়ের কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। ক্রেতার সঙ্গে ব্যবসায়ীদের প্রতারণার যেন আর শেষ নেই। বাজারে নতুন পেঁয়াজ এলেও এখনো বিক্রি হচ্ছে সর্বোচ্চ ১৪০ টাকায়। দেখারও যেন কেউ নেই।

কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-এর সভাপতি গোলাম রহমান খবরের কাগজকে বলেন, ‘সরবরাহ পরিস্থিতি যদি উন্নত না হয়, তাহলে ঘোষণা দিয়ে মুক্তবাজার ব্যবস্থায় পণ্যের দাম নির্ধারণ করা বাস্তবসম্মত নয়। যদি বাস্তবায়ন করতে হয়, পর্যাপ্ত সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। যদি পর্যাপ্ত সরবরাহ নিশ্চিত না করি, কেবল ঘোষণা দিয়ে জেল-জরিমানা করে বাস্তবায়ন করি, তাহলে এটা বাস্তবসম্মত মনে হয় না।

বাস্তবসম্মত করতে হলে বাজারে পণ্যের পর্যাপ্ত সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। তা না হলে নির্ধারিত দামে পণ্য বিক্রির বিষয়টা কার্যকর হবে না।’
বিশেষজ্ঞদের মতে, বাজারব্যবস্থায় যেভাবে পণ্যের মূল্য নির্ধারণ করে দেওয়া হয়, তা বাস্তবায়নের জন্য পর্যাপ্ত কাঠামো না থাকলে সুফল পাওয়া যায় না। ইতোপূর্বে আমরা বিভিন্ন সময় দেখেছি, যেসব পণ্যের মূল্য নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে, সেগুলোর বাস্তবায়ন এলপিজি আর তেলের ক্ষেত্রে কিছুটা দেখা গেছে। কাঁচা পণ্যের ক্ষেত্রে, বিশেষ করে যেসব পণ্য কম সময়ে বাজারে আসে এবং চাহিদা থাকে, নিয়মিত বাজার তদারকি এবং নির্ধারণ করা মূল্যে সেটি বিক্রি হচ্ছে কি না, তা দেখার জন্য কাঠামো দরকার। দুর্ভাগ্যবশত আমাদের দেশে মনিটরিং কাঠামোটি শক্তিশালী নয়। সে কারণে মূল্য নির্ধারণ করে দিয়ে যে প্রত্যাশা করা হয়, সেটি পূরণ হয় না। এ ক্ষেত্রে প্রতিটি পণ্যের উৎপাদন থেকে শুরু করে খুচরা বাজার পর্যন্ত যত মার্কেট এজেন্ট থাকবে তাদের প্রত্যেকের নিবন্ধন দরকার। শুধু ট্রেড লাইসেন্স থাকলে চলবে না। লাইসেন্সধারীরা বাজারে যে ব্যবসায়িক লেনদেন করবেন, তা ডিজিটাল পদ্ধতিতে রিপোর্ট করবেন। তাদের প্রত্যেকের আইডি থাকবে এবং আইডি দিয়ে তার কাছে কী পরিমাণ পণ্য মজুত আছে, সেটি শনাক্ত করা যাবে।

বাজারে বড় ধরনের কোনো অযাচিত প্রভাব আছে কি না, তা দেখা দরকার। তদারকি শক্তিশালী করতে হবে। এটা উপজেলা, জেলা থেকে জাতীয় পর্যায় পর্যন্ত হতে হবে। প্রশাসন থেকে শুরু করে সংশ্লিষ্ট যেসব বিভাগ রয়েছে তাদের সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে দায়িত্ব পালন করতে হবে। বাজার কমিটিগুলোকেও সক্রিয় পর্যবেক্ষণ বাড়াতে হবে। নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির চাপে সাধারণ মানুষের জীবন এখন চিড়েচ্যাপটা। যে কারণে সরকার পণ্যের একটা বেঁধে দেওয়া দাম নির্ধারণ করেছে, তা কার্যকর করা মঙ্গলজনক হবে।

জনশক্তি রপ্তানিতে শৃঙ্খলা ফেরাতে হবে

প্রকাশ: ০২ জুন ২০২৪, ১১:০৩ এএম
জনশক্তি রপ্তানিতে শৃঙ্খলা ফেরাতে হবে

মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার ৩১ মে ২০২৪ থেকে বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে দিনভর অপেক্ষা শেষে গত শুক্রবার যেতে না পারায় হাজারও কর্মী কান্নাকাটি করেছেন। অতিরিক্ত টাকা দিয়েও মেলেনি তাদের ফ্লাইটের টিকিট। সংকট জেনেও জোরালো পদক্ষেপ নেয়নি মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে অভিযোগ উঠেছে, আবারও টিকিটের দাম কয়েক গুণ বাড়িয়েছে সিন্ডিকেট। বাংলাদেশ জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) তথ্য বলছে, দীর্ঘ চার বছর বন্ধ থাকার পর ২০২২ সালে শ্রমবাজার চালু করা হয়। এরপর মালয়েশিয়া থেকে পাওয়া চাহিদাপত্রের বিপরীতে প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয় ৫ লাখ ২৪ হাজার ৯৪৬ কর্মীকে মালয়েশিয়া যাওয়ার অনুমোদন দেয়। 

গত মার্চে মালয় সরকার ঘোষণা করেছিল, দেশটির ভিসা পাওয়া বিদেশি কর্মীদের ৩১ মের মধ্যে মালয়েশিয়ায় প্রবেশ করতে হবে। প্রায় আড়াই মাস সময় পাওয়ার পরও ভিসা পাওয়া বাংলাদেশি কর্মীদের জন্য পর্যাপ্ত ফ্লাইট নিশ্চিত করতে পারেনি সরকার। ফ্লাইট বৃদ্ধির ব্যবস্থা না করে মন্ত্রণালয় কর্মীদের প্রবেশের সময়সীমা বৃদ্ধির অনুরোধ করে। এতে সাড়া না দিয়ে ৩১ মে সব দেশের কর্মীদের জন্য শ্রমবাজার বন্ধ করে মালয়েশিয়া। শ্রমবাজারসংশ্লিষ্টরা বলছেন, মালয়েশিয়া সরকার নতুন কোটা বরাদ্দ করে বাংলাদেশসহ সব ‘সোর্স কান্ট্রি’ থেকে আবার কর্মী নেওয়া শুরু করবে ২০২৪ সালের দ্বিতীয়ার্ধে। 

মালয়েশিয়া এ ধরনের নিয়ম করায় হাজারও কর্মীর সর্বনাশ হয়েছে। অনেকে বাংলাদেশি রিক্রুটিং এজেন্সি ও দালালকে টাকা দিয়েও শেষরক্ষা পাননি। যেতে পারেননি তাদের স্বপ্নের দেশে। এদিকে কর্মীদের টাকা ফেরতের আশ্বাস দিয়েছেন প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয় এবং রিক্রুটিং এজেন্সির সংগঠন বায়রার নেতারা। জনশক্তি ব্যবসায়ীদের ভাষ্য, ২০২২ সালের ৮ আগস্ট থেকে গত শুক্রবার পর্যন্ত ৪ লাখ ৭০ হাজার কর্মী মালয়েশিয়া গেছেন। ছাড়পত্র পেয়েও ২৩ হাজারের বেশি কর্মী নানা কারণে দেশটিতে যাননি। টিকিট সংকটে যেতে না পারা কর্মীর সংখ্যা ১০ হাজার হতে পারে। 

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মালয়েশিয়ান সরকার তাদের সিদ্ধান্তে অনড়। বায়রা দাবি করছে, এজেন্সির পক্ষ থেকে সবকিছু করা হলেও সরকারি ব্যবস্থাপনার ঘাটতি ছিল। তারা বলছে, মালয়েশিয়া গমনেচ্ছুদের জন্য বাড়তি ফ্লাইট পরিচালনা করা হলে বর্তমানে এ সমস্যা তৈরি হতো না। টিকিটবিহীন পাঁচ থেকে ছয় হাজার কর্মী বিক্ষোভ করেছেন শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে। শুক্রবার বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষকে তাদের সামাল দিতে বেশ বেগ পেতে হয়েছে। 

বেশ কয়েকটি ট্রাভেল এজেন্সির নেতৃত্বে বিশেষ সিন্ডিকেট শ্রমিকদের জিম্মি করে রাতারাতি হাতিয়ে নিয়েছে শতকোটি টাকারও বেশি। এমনই অভিযোগ উঠে এসেছে। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ সরকার কালো তালিকাভুক্ত করেছে ৫৩টি এজেন্সিকে। অন্যদিকে ৪৭টি এজেন্সির লাইসেন্স বাতিল করেছে মালয়েশিয়া। জানা গেছে, প্রায় ১০ লাখ কর্মীর মেডিকেল করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো। দেশটিতে প্রবেশের সময় বৃদ্ধি না হলে প্রায় ২০ থেকে ৩০ হাজার কর্মী মালয়েশিয়া গমনে অনিশ্চয়তার মুখে পড়বে। 

মালয়েশিয়া অভিবাসী শ্রমিকদের অধিকার রক্ষায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আটকে পড়া বাংলাদেশি কর্মীরা ঋণের চাপে আধুনিক দাসত্বের কবলে পড়বে বলে সতর্ক করে ফিনল্যান্ডভিত্তিক অধিকার সংগঠন ফিনওয়াচ। তাই মালয়েশিয়া সরকারকে বিষয়টি বিবেচনা করার আহ্বান জানিয়েছে সংগঠনটি। ফিনওয়াচের গবেষক অ্যান্ডি হল বলেছেন, মালয়েশিয়া যাওয়ার জন্য শ্রমিকরা ধার করে এজেন্টদের মোটা অঙ্কের টাকা দিয়েছেন। এখন তারা মালয়েশিয়া আসতে না পারলে চরম বিপদে পড়বেন। তারা তীব্র ঋণের চাপে আধুনিক দাসত্বের শিকার হবেন। 

বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শ্রমবাজার মালয়েশিয়া। মালয়েশিয়া সরকারের সিদ্ধান্ত বাংলাদেশি কর্মীদের জন্য হতাশার বিষয়। এতে বিদেশে বাংলাদেশের শ্রমবাজার বড় ধরনের ধাক্কা খেল। শুধু মালয়েশিয়ায় নয়, বাংলাদেশিরা এখন বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ছেয়ে আছে। এতে সরকারও বিপুল পরিমাণ রেমিট্যান্স পেয়ে থাকে। সম্প্রতি অবৈধভাবে ভূমধ্যসাগর দিয়ে ইউরোপে বাংলাদেশিরা বেশি যাচ্ছে। এ পথে যাওয়া সব দেশ থেকে শীর্ষে রয়েছে বাংলাদেশ। এ প্রবণতা পরিহার করে বৈধপথে প্রশিক্ষণ দিয়ে বিদেশে কর্মী পাঠালে দেশ লাভবান হবে। 

রেমিট্যান্সযোদ্ধারা দেশের মায়া ত্যাগ করে বিদেশের মাটিতে শ্রম বিনিয়োগ করে অর্থ পাঠাচ্ছেন। তারা দেশের উন্নয়নে ভূমিকা রাখছেন। এদিকে অবশ্যই সংশ্লিষ্টদের মনোযোগী হতে হবে। বাংলাদেশের যেসব কর্মী মালয়েশিয়ায় যেতে পারেননি তাদের দ্রুত পাঠাতে সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে। ভবিষ্যতে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার উন্মুক্ত হলে যাতে কোনো সিন্ডিকেটের মাধ্যমে কর্মী নিয়োগ না করা হয়, সে জন্য উভয় দেশের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে শক্ত অবস্থান নিতে হবে। জনশক্তি রপ্তানিতে শৃঙ্খলা ফিরে আসুক, সেটাই প্রত্যাশা। 

আলুর সংকট নিরসনে পদক্ষেপ নিন

প্রকাশ: ০১ জুন ২০২৪, ১০:৪৬ এএম
আলুর সংকট নিরসনে পদক্ষেপ নিন

ভালো জাতের আলু নিয়ে দেশের গবেষকরা গবেষণা করছেন। তারা ভালো জাতের আলু উৎপাদনে কাজ করলেও এর সুরক্ষায় খুব একটা কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারছে না সরকার। যার প্রভাব পড়ছে চাহিদা ও জোগানের তারতম্যের ওপর। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর এ পর্যন্ত মোট ১৮৭ জাতের আলু উৎপাদন করা সম্ভব হয়েছে। এর মধ্যে কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট নিজস্বভাবে উদ্ভাবন করেছে ১০৪টি জাত। এ দেশের কৃষিবিজ্ঞানীদের মতে, আমাদের এখন চ্যালেঞ্জ হচ্ছে জলবায়ুর ক্ষতিকর প্রভাব থেকে আলুর জাতগুলোকে সুরক্ষা দেওয়া। কারণ তাপমাত্রার প্রভাবে আলু উৎপাদনে সমস্যা সৃষ্টি  হয়েছে। তাপমাত্রার প্রভাবে নাভিদশা রোগের মতো কিছু রোগ আলুর বড় ক্ষতি করছে। এতে উৎপাদন কমে যাচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কৃষকরা নিজেরাই হিমাগারে আলু রাখছেন। বেশি দামে মোকামে বিক্রি করছেন। তাই কমছে না দাম। তাই বেশি করে উৎপাদন বা আমদানি করে সরবরাহ না বাড়ালে আলুর দাম কমবে না। 

কৃষি মন্ত্রণালয়ের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বলছে, এবার আলুর উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ১ কোটি ১৬ লাখ টন। উৎপাদন হয়েছে ১ কোটি ৭ লাখ টন। গত বছরে লক্ষ্যমাত্রা ১ কোটি ১২ লাখ টন ধরা হলেও অর্জিত হয়েছে ১ কোটি ১১ লাখ টন। বাজারসংশ্লিষ্টদের মতে, দেশে আলুর বার্ষিক চাহিদা প্রায় ১ কোটি টন। কিন্তু কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে ৯০ লাখ টন। বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের তথ্যমতে, এ দেশে মোট ৬ লাখ মেট্রিক টন আলুর বীজ চাষ করা হয়। এর মধ্যে সরকারিভাবে সরবরাহ করা হয় মাত্র ৪০ হাজার টন। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, দেশ এখন আলু উৎপাদনে বেশ এগিয়েছে। ১০টি জাতের আলু কয়েকটি দেশে রপ্তানি হয়। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে লক্ষাধিক টন আলু রপ্তানি হলেও পরবর্তী সময় তা অর্ধেকের নিচে নেমে এসেছে। 

তথ্য বলছে, চলতি বছর সব রেকর্ড ছাড়িয়ে ১ কোটি ৭ লাখ টন আলুর উৎপাদন হয়েছে। গত ফেব্রুয়ারিতে কেজি ৩০ টাকায় আলু বিক্রি হয়েছে। তারপর থেকে দাম বেড়ে বর্তমানে ৫৫ টাকার কমে মিলছে না আলু। ভোক্তাদের ছোট গোল লাল আলু কিনতে কেজিতে আরও বেশি দাম ৬০ থেকে ৬৫ টাকা গুনতে হচ্ছে। ব্যবসায়ীদের মতে, হয় আমদানি করতে হবে, নতুবা উৎপাদন বাড়াতে হবে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর যে ভুল তথ্য দিচ্ছে, সেই জায়গা থেকে সরে আসতে হবে। কারণ তাদের তথ্যের কারণে সরকার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে পারছে না। 

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সরেজমিন বিভাগের পরিচালক তাজুল ইসলাম পাটোয়ারী খবরে কাগজকে বলেন, দেশের ইতিহাসে এ বছর রেকর্ড পরিমাণ আলু উৎপাদিত হয়েছে। তা ১ কোটি ৭ লাখ টন হবে। লক্ষ্য ছিল ১ কোটি ১৬ লাখ টন। বর্তমানে দেশে আলুর ঘাটতি নেই। তিনি আরও বলেন, সাড়ে ৭ লাখ টন বীজের জন্য আলু রাখা হয়েছে। ১০ থেকে ১৫ শতাংশ পচে যায়। তাতে ১০ লাখ টন কমে যায়। থাকে ৯০ লাখ টন। এ ছাড়া বিভিন্ন হোটেল, রেস্টুরেন্ট ও করপোরেট কোম্পানি চিপস তৈরিতে আলু ব্যবহার করছে। এ জন্য আলুর চাহিদা বাড়ছে। সে কারণে কমছে না দাম। 

আলুর সংকট নিরসনে উৎপাদনের ওপর জোর দিতে হবে। উচ্চফলনশীল জাতের আলু উৎপাদনে যেতে হবে। বীজ সংরক্ষণের জন্য পর্যাপ্ত কোল্ড স্টোরেজের ব্যবস্থা করতে হবে। একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী অতিমুনাফা লাভের আশায় দাম বাড়িয়ে ভোক্তাদের পকেট কাটছে। এ জন্য বাজার মনিটরিং ব্যবস্থা শক্তিশালী করতে হবে। বিক্রেতারা বেশি দাম নিলে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করবে এবং তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে। 

কিশোর গ্যাংয়ের দৌরাত্ম্য থামান

প্রকাশ: ৩১ মে ২০২৪, ১১:১৯ এএম
কিশোর গ্যাংয়ের দৌরাত্ম্য থামান

কিশোর গ্যাং ভয়ংকর হয়ে উঠছে। মাদক থেকে শুরু করে চাঁদাবাজি, চুরি, ছিনতাই, যৌন হয়রানিসহ নানা ধরনের মারাত্মক অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে তারা। কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা ফেসবুক পেজ খুলে গ্রুপের কার্যক্রম চালালেও তারা এখন অনেক সতর্ক। এখন তারা হোয়াটসআপ, ইমো, সিগন্যালসহ বিভিন্ন অ্যাপসে গ্রুপ খুলে নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ রক্ষা ও দল ভারী করছে। প্রতিনিয়ত তারা সদস্য সংগ্রহ করছে। এভাবে তারা সদস্য বৃদ্ধি করছে। উত্তরার ডিসকো বয়েজ ও নাইন স্টার গ্রুপের আগেকার ফেসবুকের একাধিক ছবি ও কিছু নথি খবরের কাগজের কাছে এসেছে, যা রীতিমতো ভয়ংকর। 

রাজধানীর উত্তরায় ২০১৭ সালের ৬ জানুয়ারি দুই কিশোর গ্যাংয়ের দ্বন্দ্বে খুন হয়েছিল স্কুলছাত্র আদনান কবির (১২)। সম্প্রতি কারাগার থেকে বের হওয়ার পর থেকে এই কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা প্রতিনিয়ত হুমকি দিচ্ছে আদনানের পরিবারকে। সম্প্রতি এ ঘটনায় উত্তরা ছাড়তে বাধ্য হয়েছে আদনানের পরিবার। আলোচিত চাঞ্চল্যকর সেই ঘটনার ছয় বছর পেরিয়ে গেলেও বিচার পায়নি আদনানের পরিবার। উত্তরায় কিশোর গ্যাং দৌরাত্ম্য এতটুকুও কমেনি, বরং বেড়েছে। যারা আদনানকে হত্যা করেছে তারা এখন ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের ছত্রচ্ছায়ায় আরও বেপরোয়া। 

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ২০২২ সালের শেষের দিকে একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, উত্তরা বিভাগে সক্রিয় রয়েছে ১১টি কিশোর গ্যাং। এ ছাড়া ২০২৩ সালে কিশোর গ্যাংয়ের মধ্যকার দ্বন্দ্বে ২৫টি খুনের ঘটনা ঘটেছে। পুলিশ ও অপরাধ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মূলত কিছু রাজনৈতিক নেতার পৃষ্ঠপোষকতাই কিশোর গ্যাং সংস্কৃতি ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য দায়ী। 

মাদক বাণিজ্য, চাঁদাবাজি এবং স্থানীয় পর্যায়ে কর্তৃত্ব তৈরির জন্য এলাকার শিশু-কিশোরদের নিয়ে গ্যাং তৈরি করে নিজ নিজ স্বার্থে ব্যবহার করেন নেতারা। ডিএমপির তথ্যমতে, কিশোর গ্যাং এখনো আছে। তবে আগের তুলনায় কম। তাদের দমনে পুলিশ কাজ করছে। পুলিশ প্রতিনিয়ত ব্যবস্থা নিচ্ছে। বছরে ৪০০ থেকে ৫০০ জন আটক হচ্ছে। মামলা হচ্ছে। সংশোধনাগারে দেওয়া হচ্ছে অনেককে। তারপরও কিশোর গ্যাং তৎপরতা বন্ধ হচ্ছে না। এলাকার কথিত কিছু বড় ভাই ও রাজনৈতিক নেতার ছত্রচ্ছায়ায় কিশোর গ্যাংয়ের তৎপরতা বাড়ছে। 

সমাজ ও অপরাধ বিশেষজ্ঞ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ড. তৌহিদুল হক খবরের কাগজকে বলেন, শুধু উত্তরায় আদনান হত্যা নয়, রাজনৈতিক ছত্রচ্ছায়ায় কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা অনেক সময় এদের গ্রেপ্তার করলেও রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতায় যারা রয়েছে তারা গ্রেপ্তার হয় না। রাজনৈতিক গডফাদারদের আইনের আওতায় আনতে পারলে এটি কমে আসবে। এর সঙ্গে কিশোর গ্যাং দমন করতে হলে সামাজিকভাবে সবাইকে সচেতন হতে হবে। এ জন্য সমাজের দায়িত্বশীলদের এগিয়ে আসতে হবে। 

রাজনৈতিক দলের ছত্রচ্ছায়ায় শিশু-কিশোররা বেশি অপরাধপ্রবণতায় ঝুঁকে পড়ে। মূলত গডফাদাররা তাদের নিজ স্বার্থেই ব্যবহার করে। কিশোর গ্যাংয়ের দৌরাত্ম্য প্রতিরোধে রাজনৈতিক গডফাদারদের আইনের আওতায় আনতে হবে। তাদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। শিশু-কিশোররা যাতে অপরাধে ঝুঁকে না পড়ে, সে জন্য পারিবারিকভাবে নীতি-নৈতিকতার শিক্ষা জোরালো করতে হবে। সর্বোপরি সমাজ থেকে কিশোর গ্যাং অপরাধ নিয়ন্ত্রণে জনসচেতনতা বাড়াতে হবে। 

বেনাপোল বন্দরে পণ্য আমদানি বাড়াতে কার্যকর ব্যবস্থা নিন

প্রকাশ: ৩০ মে ২০২৪, ১১:৩০ এএম
বেনাপোল বন্দরে পণ্য আমদানি বাড়াতে কার্যকর ব্যবস্থা নিন

দেশের সর্ববৃহৎ স্থলবন্দর বেনাপোল কাস্টমস হাউসে রাজস্ব আদায়ে বড় ধরনের ঘাটতি দেখা দিয়েছে। এই বন্দর দিয়ে পণ্য আমদানি প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে। সংকট কাটাতে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হলে সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব ঘাটতির মুখে পড়বে। একদিকে বৈশ্বিক মন্দা এবং ডলারসংকট, অন্যদিকে কাস্টমসের ব্যাপক কড়াকড়ি ও হয়রানির কারণে গত ১০ মাসে ৬৭ কোটি ৮৯ লাখ টাকা রাজস্ব ঘাটতি হয়েছে। 

ইতোমধ্যে পচনশীল বাণিজ্যিক ও উচ্চ শুল্ককরের পণ্য এ বন্দর দিয়ে আমদানি কমে গেছে। ফেব্রিক্স, আয়রন, স্টিল, আপেল ও মোটরগাড়ির যন্ত্রাংশ আমদানিকারকরা এ বন্দর দিয়ে ব্যবসা বন্ধ করেছেন। রাজস্ব আদায়ের বড় ধসের অন্যতম কারণ হলো কাস্টমস হাউসে ডকুমেন্ট সাবমিট করার পর কর্মকর্তাদের অতিরিক্ত হয়রানি। এতে ব্যবসায়ীদের মধ্যে একধরনের আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে পণ্যের এইচএস কোড ও ভ্যালু নিয়ে জটিলতার কারণে রাজস্ব আদায় কমে গেছে। 

তথ্যমতে, চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের ১০ মাসে রাজস্ব আদায় লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫ হাজার ২৮১ কোটি টাকা। তার বিপরীতে রাজস্ব আদায় হয়েছে মাত্র ৫ হাজার ২১৩ কোটি ১১ লাখ টাকা। অর্থাৎ ৬৭ কোটি ৮৯ লাখ টাকার রাজস্ব আদায় কম হয়েছে। একদিকে কাস্টম হাউসের ব্যাপক কড়াকড়ি, অন্যদিকে ডলারসংকট ও দামের ঊর্ধ্বগতি কোনোভাবে নিয়ন্ত্রণে না আসায় আমদানিকারকরা আমদানি করতে পারছেন না।

এলসি খুলতে না পারায় ব্যবসায়ীরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন এবং তাদের লোকসান গুনতে হচ্ছে। আমদানি কম হওয়ায় সরকারের রাজস্ব আয় বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। দ্রুত সংকট না কাটলে বছর শেষে আমদানির পরিমাণ কমে আরও বড় ধরনের সংকটের কবলে পড়তে হতে পারে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। গত ১৩-১৪ বছর ধরে বেনাপোল কাস্টমসে রাজস্ব আদায়ে বড় ধরনের ঘাটতি হচ্ছে। 

কাস্টমস সূত্র জানায়, যেসব পণ্য ভারত থেকে আমদানি হয়, তার ওপর প্রতি মাসে নির্দিষ্ট পরিমাণ রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড। আমদানি স্বাভাবিক থাকলে লক্ষ্যমাত্রার কাছাকাছি পৌঁছায় কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। কিন্তু আমদানি কমে যাওয়ায় কয়েক বছর ধরে রাজস্ব আদায় লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারছে না বেনাপোল কাস্টমস। 

বন্দরসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা বলছেন, ডলারের দাম ঊর্ধ্বগতি আর সংকটের কারণ দেখিয়ে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো কয়েক বছর ধরে এলসির সংখ্যা কমিয়েছে। এতে আমদানি কমে গেছে। দেখা দিয়েছে রাজস্ব ঘাটতি। ব্যাংকগুলো ডলারের দাম অযৌক্তিক বাড়ানোয় এলসি খুলতে পারছেন না ব্যবসায়ীরা। সরকারের নির্ধারিত ডলার রেট থাকলেও ব্যাংকগুলো বেশি রাখছে। এর বিরূপ প্রভাবে দেশে শিল্পকারখানায় উৎপাদন ব্যাহত ও আমদানি পণ্যের মূল্য লাগামহীন বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। এতে সরকারও রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। 

বেনাপোল কাস্টম হাউসের যুগ্ম কমিশনার শাফায়েত হোসেন খবরের কাগজকে বলেন, এ বন্দর দিয়ে প্রতিদিন যেখানে ৫০০ থেকে ৬০০ ট্রাক পণ্য আমদানি হতো, বর্তমানে ডলারসংকটের কারণে প্রতিদিন তা ৩০০ ট্রাকে এসে দাঁড়িয়েছে। ডলারসংকটের জন্য ব্যবসায়ীরা ব্যাংকে এলসি খুলতে পারছেন না। যে কারণে আমদানি কমে গেছে। আমদানি কমলে রাজস্ব আদায় কমে যাবে- এটাই স্বাভাবিক। 

বেনাপোল কাস্টমসে রাজস্ব ফাঁকি রোধে জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি অনিয়ম ধরা পড়েছে। সেগুলোতে রাজস্ব পরিশোধ করে ২০০ পারসেন্ট জরিমানা আদায় করা হয়েছে। রাজস্ব ফাঁকি দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। তবে ব্যবসায়ীরা কোনো হয়রানির শিকার হচ্ছেন না। 

আমদানি বাড়লে সরকারের রাজস্ব আয়ও বাড়বে, এ জন্য সরকারকে আরও কার্যকর ভূমিকা পালন করতে হবে। কাস্টমস হাউসের ডকুমেন্ট সাবমিট ব্যবস্থা সহজ এবং কর্মকর্তাদের সেবামূলক মনোভাব নিয়ে কাজ করতে হবে। বন্দরে হয়রানি বন্ধের ব্যবস্থা নিতে হবে। পণ্যের এইচএস কোড ও ভ্যালু নিয়ে জটিলতার নিরসন করতে হবে। 

রিমালে ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়ান

প্রকাশ: ২৯ মে ২০২৪, ১০:৩৭ এএম
রিমালে ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়ান

ঘূর্ণিঝড় রিমালের তাণ্ডবে লণ্ডভণ্ড হয়েছে দেশের দক্ষিণ উপকূলীয় ছয় জেলা। সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাস ও প্রবল বর্ষণে পটুয়াখালীর বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। টানা বৃষ্টির প্রভাবে রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে পানি জমে দুর্ভোগও কম হয়নি নগরবাসীর। বিদ্যুৎস্পর্শে কয়েকজন মারাও গেছেন। ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের বরিশাল, খুলনা, চট্টগ্রাম বিভাগে অন্তত ১৪ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। 

তাদের অধিকাংশেরই গাছ ও ঘরধসে মৃত্যু হয়েছে। তবে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে ১০ জনের মৃত্যুর খবর দিয়েছে। সব মিলিয়ে মোট ১৯ জেলার ৩৭ লাখের বেশি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মো. মহিববুর রহমান এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে ১ লাখ ৫০ হাজার ৪৭৫ ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে ৩৬ হাজারের বেশি ঘরবাড়ি সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়েছে। নিচু এলাকাগুলোয় পানি জমে সৃষ্টি হয়েছে জলাবদ্ধতার। 

ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে ভারী বর্ষণে রাঙামাটিতে পাহাড়ধসের শঙ্কা দেখা দিয়েছে। পানির নিচে বন্দরনগরী চট্টগ্রাম। বিদ্যুৎ-বিচ্ছিন্ন হয়েছে বরগুনা জেলা। এবারও ঢাল হয়ে খুলনা অঞ্চলকে রক্ষা করেছে সুন্দরবন। বন বিভাগের তথ্যমতে, ৩০টি হরিণের মৃতদেহ পাওয়া গেছে। জলোচ্ছ্বাসে বনের প্রায় ৮৫টি মিষ্টি পানির পুকুরে লবণ পানি ঢুকেছে। বাগেরহাটে ঘূর্ণিঝড় রিমালের তাণ্ডব এবং জলোচ্ছ্বাসে জেলার বিভিন্ন এলাকার নদীপাড়ের ৬১ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ভেঙে গেছে। 

জেলার বিভিন্ন এলাকায় ১০ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। পুকুর ও ঘেরের মাছ ভেসে যাওয়ায় চরম দুর্ভোগে পড়েছেন এসব গ্রামের বাসিন্দারা। তথ্যমতে, রিমালের প্রভাবে ২ কোটি ৩৫ লাখ গ্রাহকের বিদ্যুৎ ভোগান্তি হয়েছে। ১২ হাজারের বেশি টাওয়ারে নেটওয়ার্ক সংযোগ ব্যাহত হয়েছে। অন্যদিকে মোবাইল নেটওয়ার্ক ছাড়া প্রায় ৩ লাখ ব্রডব্যান্ড গ্রাহক ইন্টারনেট সেবা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। 

ঘূর্ণিঝড়-পরবর্তী পরিস্থিতির জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কাজ করছে। প্রবণ ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় সরকারের সহযোগী প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করছে বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি। ঘূর্ণিঝড়-পরবর্তী জানমালের নিরাপত্তায় উপকূলীয় অঞ্চলজুড়ে ৮০ হাজার স্বেচ্ছাসেবকের সঙ্গে কাজ করতে মাঠে আছে বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির ২ হাজারের বেশি স্বেচ্ছাসেবক।

ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে যেকোনো ধরনের পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। এ সময় দেখা যাবে তীব্র খাওয়ার পানির সংকট। ডায়রিয়া, কলেরা দেখা দিতে পারে। পানিবাহিত রোগগুলো ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। স্বাস্থ্য বিভাগকে তাদের কার্যক্রম যথাযথভাবে পালন করতে হবে। ইতোমধ্যে উপকূলবর্তী এলাকার মানুষের খাবারসংকট দেখা দিয়েছে। 

ঘরবাড়িহীন মানুষ খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবনযাপন করছে। ঘূর্ণিঝড়-পরবর্তী সময়ে অনেক সময় লুটপাটের ঘটনা ঘটতে পারে, এ জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা তৎপর থাকবেন। বিদ্যুৎ-বিচ্ছিন্ন হয়ে আছে উপকূলীয় জেলাগুলো। বিদ্যুৎ বিভাগকে ওই এলাকাগুলোয় দ্রুত সমস্যার সমাধান করতে হবে। পানি উন্নয়ন বোর্ডকে বেড়িবাঁধ দ্রুত সংস্কার করতে হবে। পরিস্থিতি উত্তরণে স্ব স্ব বিভাগকে তাদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করতে হবে। সরকারের পাশাপাশি দেশের বিত্তবানদের অসহায় দুর্গত মানুষের পাশে থেকে তাদের সাহাযার্থে এগিয়ে আসতে হবে।