রমজান মাসে বাড়তি চাহিদার কথা মাথায় রেখে ভোগ্যপণ্য আমদানিতে পর্যাপ্ত ডলার সরবরাহ রাখতে জানুয়ারি মাসে বাংলাদেশ ব্যাংককে চিঠি দেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। পাশাপাশি ব্যাংকগুলোকে শূন্য মার্জিনে এলসি খোলারও পরামর্শ দেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। একই সঙ্গে কিছু পণ্যের আমদানি শুল্ক কমানোর জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সঙ্গে আলোচনাও করে এই মন্ত্রণালয়। এক বছর ধরেই বাজার অস্থিতিশীল। মূল্য পরিস্থিতির কারণে রোজার মাসে ভোগ্যপণ্যের দাম নিয়ে চিন্তিত সাধারণ মানুষ। এ নিয়ে খোদ সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা তার উদ্বেগ প্রকাশ করে দ্রব্যমূল্য স্বাভাবিক রাখতে নানা উদ্যোগ গ্রহণ ও তত্ত্বাবধান করে আসছেন। এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকসহ সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকেও মূল্যস্ফীতি কমিয়ে আনতে সর্বোচ্চ প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে কিন্তু তার প্রতিফলন নেই বাজারে। সরকার দাবি করছে, বাজারে নিত্যপণ্য সরবরাহ নিশ্চিত করতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হচ্ছে, যাতে কেউ সরবরাহ নেই দাবি করে দ্রব্যমূল্য বাড়াতে না পারে। বাজারে সরবরাহে ঘাটতি চোখে না পড়লেও দাম নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে অসন্তোষ আছে।
ব্যবসায়ীদের কেউ কেউ অভিযোগ করে বলেছেন, ডলারসংকট ও বিনিময় হার বেশি হওয়ার কারণে ছোট ও ব্যক্তিপর্যায়ের আমদানিকারকরা বাংলাদেশ ব্যাংকের সুযোগ নিতে পারেনি। ব্যাংকের অসহযোগিতাকেও দায়ী করছেন তারা। বড় প্রতিষ্ঠান ও করপোরেট ব্যবসায়ীদের নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে নিত্যপণ্য আমদানি, সরবরাহ ও দর নির্ধারণের মতো বিষয়গুলো। এ কারণে মূল্য নিয়ন্ত্রণে ছোট ব্যবসায়ী ও পাইকারি পর্যায়ে নিজেদের মতো করে কিছু করার সুযোগ নেই। সূত্র বলছে, পণ্য সরবরাহ বাড়াতে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে যে সুযোগ দেওয়া হয়েছে তা কাজে না আসার অন্যতম কারণ ডলারসংকট।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসাবে, এ বছরে জানুয়ারির শেষে মূল্যস্ফীতি বেড়ে ৯.৮৬ শতাংশে পৌঁছেছে। ডিসেম্বরে ছিল ৯.৪১ শতাংশ। আর এক বছর আগে অর্থাৎ ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে মূল্যস্ফীতি ছিল ৮.৫৭ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার এক বক্তব্যে বলেছেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করতে হলে অর্থনৈতিক কারণ ছাড়াও বাইরের কারণগুলো আমলে নিতে হবে। তা না হলে বিশ্ববাজারে দাম কমলেও বাংলাদেশ তার সুফল পাবে না।
ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি আশরাফ আহমেদ খবরের কাগজকে বলেন, ঢাকায় ৪০-৫০ বছর আগে যে বাজার অবকাঠামো ছিল তা এখনো আছে। এসব বাজার বা আড়তকে সরবরাহ পয়েন্ট বা সাপ্লাই পয়েন্ট ধরলে তার সংখ্যা বাড়েনি। নগরায়ণের পরিকল্পনায় এই গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো বাড়ানোর চিন্তা করা হয়নি। ফলে একই পয়েন্টে আগে আসত ১০০ ট্রাক, এখন আসে ৫০০ ট্রাক। এতে করে ট্রাফিকসহ জীবনযাত্রা সব ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। কয়েক দফা চাঁদাবাজি হচ্ছে। আর এর প্রভাব পড়ছে দ্রব্যমূল্যে। এগুলো নিয়ে ভাবতে হবে। সরবরাহ কেন্দ্রের সংখ্যা আরও বাড়াতে হবে।
সরকার জ্বালানির দাম কিছুটা কমিয়েছে, এটা অবশ্যই ইতিবাচক দিক। এতে পরিবহন ব্যয় সামান্য হলেও কমবে। উৎপাদক ও আমদানিকারক পর্যায় থেকে ভোক্তা পর্যায় পর্যন্ত পরিবহন ব্যয় কমলে দ্রব্যমূল্য কম হবে। যদিও সরেজমিন পরিদর্শনে গিয়ে খবরের কাগজের প্রতিনিধিরা দেখেছেন, জ্বালানি তেলের দাম কমার কোনো ইতিবাচক প্রভাব পরিবহন খাতে পড়েনি। এ ক্ষেত্রে সরকারের বাজার নিয়ন্ত্রণে সঠিক ব্যবস্থাপনা জরুরি। সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে ভোক্তা পর্যায়ে সবাইকে সহযোগিতার মনোভাব নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। তাহলে দ্রব্যমূল্যের বাজারে হয়তো ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।