
পঞ্চম অধ্যায় : রাসায়নিক বন্ধন
সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর-১
উদ্দীপকটি পড়ে নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর লেখ।
A, B, C, D মৌল চারটির পারমাণবিক সংখ্যা যথাক্রমে 6, 8, 14, 24
ক. অরবিট কী?
খ. আপেক্ষিক আণবিক ভরের একক নেই কেন?
গ. উদ্দীপকের D মৌলটি ব্যতিক্রমী ইলেকট্রন বিন্যাস প্রদর্শন করে উপযুক্ত কারণসহ ব্যাখ্যা করো।
ঘ. AB₂ যৌগটি গ্যাসীয় হলেও CB₂ যৌগটি কঠিন, ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: ক. পরমাণুর নিউক্লিয়াসের চারপাশে কতগুলো নির্দিষ্ট অনুমোদিত বৃত্তাকার কক্ষপথ বা শক্তিস্তর রয়েছে, যেখানে ইলেকট্রনগুলো নিউক্লিয়াসকে কেন্দ্র করে ঘোরে। এই বৃত্তাকার কক্ষপথ বা শক্তিস্তরগুলোকে অরবিট বলে।
খ. আপেক্ষিক আণবিক ভর হলো কোনো মৌলের একটি পরমাণুর ভর এবং ১২ কার্বন আইসোটোপের ভরের ১/১২ অংশের অনুপাত। অর্থাৎ এটি একই রাশির দুটি এককের অনুপাত। তাই আপেক্ষিক আণবিক ভরের কোনো একক নেই।
গ. উদ্দীপকের D মৌলটির পারমাণবিক সংখ্যা ২৪। এর ইলেকট্রন বিন্যাস হলো 1s² 2s² 2p⁶ 3s² 3p⁶ 4s¹ 3d⁵। এটি একটি ব্যতিক্রমী ইলেকট্রন বিন্যাস। এর কারণ হলো-
পূর্ণ ও অর্ধপূর্ণ অরবিটালগুলো অধিক স্থিতিশীল।
D মৌলটির ইলেকট্রন বিন্যাসে 4s অরবিটালটি অর্ধপূর্ণ এবং 3d অরবিটালটিও অর্ধপূর্ণ।
এই অর্ধপূর্ণ অরবিটালগুলোর কারণে মৌলটি অধিক স্থিতিশীলতা লাভ করে।
এই স্থিতিশীলতা লাভের জন্য, 4s অরবিটাল থেকে একটি ইলেকট্রন 3d অরবিটালে স্থানান্তরিত হয়।
ফলে, D মৌলটি একটি ব্যতিক্রমী ইলেকট্রন বিন্যাস প্রদর্শন করে।
ঘ. উদ্দীপকের A, B, C মৌলগুলোর পারমাণবিক সংখ্যা যথাক্রমে 6, 8 এবং 14। তাই, মৌলগুলো হলো-
A = কার্বন (C), B = অক্সিজেন (O), C = সিলিকন (Si)
সুতরাং, AB₂ যৌগটি হলো কার্বন ডাই-অক্সাইড (CO₂) এবং CB₂ যৌগটি হলো সিলিকন ডাই-অক্সাইড (SiO₂)।
CO₂ যৌগটি গ্যাসীয় হওয়ার কারণ:
CO₂ একটি সমযোজী যৌগ, যার অণুগুলোর মধ্যে দুর্বল ভ্যান ডার ওয়ালস বন্ধন বিদ্যমান।
এই দুর্বল বন্ধনের কারণে CO₂ অণুগুলো সহজেই পরস্পর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গ্যাসীয় অবস্থায় থাকতে পারে।
SiO₂ যৌগটি কঠিন হওয়ার কারণ:
SiO₂ একটি ত্রিমাত্রিক নেটওয়ার্ক সমযোজী কঠিন পদার্থ, যেখানে প্রতিটি সিলিকন পরমাণু চারটি অক্সিজেন পরমাণুর সঙ্গে সমযোজী বন্ধন দ্বারা যুক্ত থাকে।
এই শক্তিশালী সমযোজী বন্ধনের কারণে SiO₂ একটি কঠিন পদার্থ হিসেবে বিদ্যমান থাকে।
আরো পড়ুন : পর্যায় সারণি অধ্যায়ের ১টি সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর, ৩য় পর্ব
সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর-২
উদ্দীপকটি পড়ে নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর লেখ।
A, B, C, D চারটি মৌলের পারমাণবিক সংখ্যা যথাক্রমে 6, 8, 11 এবং 17.
ক. মুক্ত অবস্থায় পদার্থের জারণ সংখ্যা কত?
খ. পলিমাকরণ বিক্রিয়া ব্যাখ্যা করো।
গ. A ও B-এর মধ্যে বন্ধন গঠন প্রক্রিয়া ব্যাখ্যা করো।
ঘ. C ও D মৌলের সমন্বয়ে গঠিত যৌগ পানিতে দ্রবণীয় হলেও A ও B-এর সমন্বয়ে গঠিত যৌগ পানিতে অদ্রবণীয়, ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: ক. মুক্ত অবস্থায় পদার্থের জারণ সংখ্যা শূন্য।
খ. পলিমারকরণ বিক্রিয়া হলো একটি রাসায়নিক প্রক্রিয়া, যেখানে একাধিক ছোট অণু (মনোমার) যুক্ত হয়ে একটি বৃহৎ অণু (পলিমার) গঠন করে। এই বিক্রিয়ায় মনোমারগুলোর মধ্যে রাসায়নিক বন্ধন গঠিত হয়, যার ফলে দীর্ঘ শৃঙ্খল বা ত্রিমাত্রিক নেটওয়ার্ক তৈরি হয়। পলিমারকরণ বিক্রিয়া বিভিন্ন ধরনের পলিমার তৈরি করতে ব্যবহৃত হয়, যেমন- পলিথিন, পলিভিনাইল ক্লোরাইড (PVC), পলিস্টাইরিন ইত্যাদি।
গ. উদ্দীপকের A, B, C, D মৌলগুলোর পারমাণবিক সংখ্যা যথাক্রমে 6, 8, 11 এবং 17। তাই মৌলগুলো হলো-
A = কার্বন (C), B = অক্সিজেন (O)
C = সোডিয়াম (Na), D = ক্লোরিন (Cl)
কার্বন ও অক্সিজেনের মধ্যে বন্ধন গঠন প্রক্রিয়া:
কার্বনের ইলেকট্রন বিন্যাস: 1s² 2s² 2p²
অক্সিজেনের ইলেকট্রন বিন্যাস: 1s² 2s² 2p⁴
কার্বনের বহিস্থ কক্ষপথে ৪টি এবং অক্সিজেনের বহিস্থ কক্ষপথে ৬টি ইলেকট্রন রয়েছে।
অক্সিজেনের অষ্টক পূরণের জন্য ২টি ইলেকট্রন প্রয়োজন।
কার্বনের অষ্টক পূরণের জন্য ৪টি ইলেকট্রন প্রয়োজন।
কার্বন ও অক্সিজেন পরমাণুগুলো ইলেকট্রন শেয়ারের মাধ্যমে সমযোজী বন্ধন গঠন করে।
কার্বন ডাই-অক্সাইড (CO₂) যৌগে কার্বন ও অক্সিজেনের মধ্যে দ্বৈত সমযোজী বন্ধন গঠিত হয়।
ঘ. C ও D মৌলের সমন্বয়ে গঠিত যৌগ হলো সোডিয়াম ক্লোরাইড (NaCl)। এটি একটি আয়নিক যৌগ, যা পানিতে দ্রবণীয়। এর কারণ হলো-
সোডিয়াম ক্লোরাইড পানিতে দ্রবীভূত হলে সোডিয়াম আয়ন (Na⁺) এবং ক্লোরাইড আয়ন (Cl⁻) উৎপন্ন করে।
পানির পোলার অণুগুলো এই আয়নগুলোকে ঘিরে ধরে এবং দ্রবীভূত করে।
A ও B মৌলের সমন্বয়ে গঠিত যৌগ হলো কার্বন ডাই-অক্সাইড (CO₂)। এটি একটি সমযোজী যৌগ, যা পানিতে অদ্রবণীয়। এর কারণ হলো-
কার্বন ডাই-অক্সাইডের অণুগুলো পোলার নয়, তাই পানির পোলার অণুগুলো এদের আকর্ষণ করতে পারে না।
ফলে, কার্বন ডাই-অক্সাইড পানিতে দ্রবীভূত হয় না।
লেখক : প্রধান শিক্ষক
হাজী রফিজুদ্দিন ভূঁইয়া বালিকা উচ্চবিদ্যালয়, রূপগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ
কবীর