রাজপথে কাঁঠাল ছায়া । খবরের কাগজ
ঢাকা ২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, বৃহস্পতিবার, ১৬ মে ২০২৪

রাজপথে কাঁঠাল ছায়া

প্রকাশ: ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১১:৩৮ এএম
রাজপথে কাঁঠাল ছায়া
গরমে কাঁঠালগাছের ছায়ায় বসে বিশ্রাম নিচ্ছেন পথচারীরা। ছবিটি গতকাল সংসদ ভবন এলাকা থেকে তোলা। ছবি: খবরের কাগজ

চলছে বৈশাখ মাস। তীব্র দাবদাহে চারদিক খাঁখাঁ করছে। আর কয়দিন পরই শুরু হবে জ্যৈষ্ঠ মাস। আর এই মাসে পাওয়া যায় আম, কাঁঠাল, লিচুর মতো সুস্বাদু ফল। এরই মধ্যে গাছে গাছে দেখা যাচ্ছে আম বা কাঁঠাল। শহরে সাধারণত হাটে বাজারে কিংবা রিকশাভ্যানে দেখা মেলে কাঁঠালের পসরা। অন্যদিকে আম-কাঁঠালের গাছের কথা চিন্তা করলে আমাদের মনের চিত্রপটে ভেসে ওঠে গ্রামের মেঠো পথের পাশে বা বাড়ির উঠোনে থাকা গাছের কথা। যেখানে ধরে আছে ফল-ফলাদি।

কিন্তু ইট-পাথরের আর কংক্রিটের এই শহরে ফলের গাছের দেখা মেলা ভার। খুব বেশি হলে ছাদবাগানে টবের মধ্যে লাগানো গাছ চোখে পড়ে। চারদিকে গাছ কেটে ব্যাঙের ছাতার মতো যেভাবে নগরায়ণ হচ্ছে এতে একদিকে যেমন শহরের তাপমাত্রা বেড়ে জনজীবন বেহাল হচ্ছে। অন্যদিকে একটু স্বস্তির জন্য বা বিশ্রাম নেওয়ার জন্য পাওয়া যায় না কোনো বৃক্ষছায়া।

কিন্তু এর ব্যতিক্রম দেখা যায় মানিক মিয়া অ্যভিনিউ, ধানমন্ডি, উত্তরা বা এয়ারপোর্টের দিকের রাস্তায় চলাচলের সময়। রাস্তায় পাশে সারি ধরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায় কাঁঠালের গাছ। মেঠো পথ কিংবা নির্দিষ্ট কোনো বাগানবাড়ির বাইরে রাজপথে এমন কাঁঠালগাছ অনেকের মনে কৌতূহলের সৃষ্টি করে। জাতীয় ফল বলে কথা!
এসব কাঁঠালগাছ একদিকে যেমন ফল দিচ্ছে অন্যদিকে এই তীব্র গরমে দিচ্ছে সুশীতল ছায়া। জীবিকার তাগিদে যারা এই গরমে বাড়ির বাইরে বের হন তারা কিছুটা সময় এসব কাঁঠালগাছের ছায়ায় বসে জিরিয়ে নেন। আবার কেউ কেউ তাকিয়ে থাকেন গাছে ঝুলে থাকা কাঁচা কাঁঠালের দিকে।

প্রাচীন বাংলার জ্যোতিষী খনা বলেছেন,
‘আম লাগাই জাম লাগাই
কাঁঠাল সারি সারি-
বারো মাসের বারো ফল
নাচে জড়াজড়ি।’

অর্থাৎ বারো মাসে বারো রকম ফলের গাছ লাগালে সারা বছরই ফলের স্বাদ পাওয়া যাবে। কাঁঠাল এমন একটি ফল যা একাধিক উপায়ে খাওয়া যায়। কাঁচা কাঁঠাল বা এচোঁড় রান্না করে খাওয়া যায়। আবার পাকা কাঁঠাল যেমন খাওয়া যায়, তেমনি কাঁঠালের বিচি ভেজে বা ভর্তা করে অথবা রান্না করেও খাওয়া যায়। পাকা কাঁঠাল দিয়ে কাঁঠালের সত্ত্বও তৈরি করা হয়। এ ছাড়া কাঁঠালগাছের আঠা কাঠ বা বিভিন্ন পাত্রের ছিদ্র বন্ধে ব্যবহার করা হয়।

মেছোবাঘ: বাঘ শুধু নামেই

প্রকাশ: ১২ মে ২০২৪, ১২:২৫ পিএম
মেছোবাঘ: বাঘ শুধু নামেই
মেছোবাঘ বাঘের মত দেখতে হলেও এরা বাঘ নয়। ছবি: সংগৃহীত

নাম মেছোবাঘ। দেখতে বাঘের মতো হলেও মূলত এটি বিড়ালগোত্রীয় প্রাণী। বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে মেছোবাঘ কম বেশি দেখা গেলেও হাওর অঞ্চলে এদের দেখা যায় বেশি। বিশেষ করে সিলেট অঞ্চলে এই প্রাণীটির বিচরণ বেশি। বিভিন্ন অঞ্চলে মেছোবাঘ বিভিন্ন নামে পরিচিত। অনেক অঞ্চলে মেছোবিড়াল, ছোট বাঘ, বাঘরোল বা বাঘুইলা নামে এটি পরিচিত। এদের গায়ে ছোপ ছোপ দাগ থাকায় চিতাবাঘ বলেও ভুল করে থাকেন অনেকে।

মেছোবাঘ মাঝারি আকারের স্তন্যপায়ী প্রাণী। এটি দক্ষিণ এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় পাওয়া যায়। মেছোবাঘের বৈজ্ঞানিক নাম Prionailurus viverrinus বা Felis viverrina। ইংরেজি নাম Fishing Cat। এরা নিশাচর। ব্রাজিল, কোস্টারিকা, বাংলাদেশ, ভারত, বলিভিয়া, কম্বোডিয়া, লাওস, শ্রীলঙ্কায় এরা স্থানীয়ভাবে বাঘরোল নামে পরিচিত। মেছোবাঘের আদি আবাসস্থল থাইল্যান্ড ও এল সালভাদরে।

বাংলাদেশে মেছোবাঘ সাধারণত জলাভূমি, নদীর প্রবাহ, অশ্বখুরাকৃতি হ্রদ, জলাভূমি এবং ম্যানগ্রোভে বাস করে। এদের উপস্থিতি সেখানকার জলাভূমির অবস্থার ভালো-মন্দ নির্ধারণে সাহায্য করে। এরা সাঁতারে পারদর্শী হওয়ায় এ ধরনের পরিবেশে সহজেই খাপ খাওয়াতে পারে।

মেছোবাঘের প্রধান খাবার মূলত মাছ। এ ছাড়া কাঁকড়া, শামুক, মুরগি, হাঁস, ছাগল, ভেড়াও এই প্রাণীর খাদ্য তালিকায় রয়েছে। মাছ ধরার জন্য মেছোবাঘ বা মেছোবিড়াল পানিতে নামে না। পানির ওপর কোনো গাছের ডালে বা পানির ওপর জেগে থাকা কোনো পাথরে বসে থাবা দিয়ে শিকার ধরে। তবে খুব খাদ্যাভাব দেখা দিলে মেছোবাঘ মানুষের ওপরও আক্রমণ করে থাকে। তবে এরা হিংস্র হলেও খুব ভীতু প্রকৃতির প্রাণী।

এরা আকারে গৃহপালিত বিড়ালের চেয়ে অনেকটা বড় হয়। শরীর ঘন, পুরু লোমে আবৃত। পুরুষ মেছোবিড়াল আকারে স্ত্রী মেছোবিড়ালের চেয়ে বড় হয়ে থাকে। এদের চেহারা ও গায়ের ডোরা অনেকটা বাঘের মত। মেছোবিড়াল লেজসহ লম্বায় সাড়ে তিন ফুটের মতো হয়ে থাকে। সামান্য হলুদ মেশানো ধূসর রঙের চামড়ায় মোটামুটি লম্বালম্বিভাবে কয়েক সারি গাঢ় হলুদ ডোরা থাকে। পেটের নিচের রং সাদাটে। এদের কান ছোট এবং গোলাকার হয়। চোখের পেছন থেকে গলার শেষ পর্যন্ত ৬ থেকে ৮টি কালো বর্ণের ডোরাকাটা দাগ থাকে। পুরো শরীরে ছোপ ছোপ কালো দাগ আছে।

১৫ মাস বয়স হলে এরা প্রজনন উপযোগী হয়। সাধারণত মার্চ মাস থেকে জুন মাস পর্যন্ত এদের প্রজননের সময়। একসঙ্গে একাধিক বাচ্চা প্রসব করে থাকে মেছোবাঘ। এদের গড় আয়ু ১০ বছর।

বিভিন্ন কারণে গত কয়েক দশকে মেছোবাঘের সংখ্যা মারাত্মকভাবে হ্রাস পেয়েছে। এর পেছনে একটি বড় কারণ হলো মেছোবাঘের প্রতি মানুষের হিংসাত্মক মনোভাব ও ভ্রান্ত ধারণা।

বিশিষ্ট প্রাণিবিদ ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. মোস্তফা ফিরোজ বলেন, ‘মেছোবাঘ একটি বিপন্ন প্রজাতির প্রাণী। বাংলাদেশে কতগুলো মেছোবাঘ আছে এই সংক্রান্ত কোনো সার্ভে বা জরিপ আমাদের করা হয়নি। তবে দিন দিন বিভিন্ন সংকটের কারণে এই প্রাণীর সংখ্যা কমে যাচ্ছে। মাছ এদের প্রধান খাদ্য হওয়ায় এরা মূলত বিভিন্ন জলাশয় যেমন, টাঙ্গুয়ার হাওর, রাজশাহীর চলনবিল, শ্রীমঙ্গলের হাইল হাওর, বাইক্কার বিল এলাকায় বসবাস করে। কিন্তু এই এলাকাগুলোতে মাছ ধরার জন্য পাতা ফাঁদ, কারেন্ট জালে আটকে মারা যায় মেছোবাঘ। আবার এদের আবাসস্থল, ঝোপ-ঝাড়, বন-জঙ্গল বা অভয়ারণ্য ধ্বংস করে ফেলায় এরা বংশ বৃদ্ধি করতে পারছে না।’

তিনি আরও বলেন, ‘২০১২ সালের বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইনে প্রজাতিটি একটি সংরক্ষিত প্রাণী। বাইক্কার বিলে ৫১ থেকে ৫৪টি বিল আছে, সুনামগঞ্জের টাঙ্গুয়ার হাওরে এদের অভয়ারণ্য রয়েছে কিছু জায়গায়। তবে এদেরকে বসবাসের পরিবেশ না দিলে এরা টিকবে কীভাবে? তাই শুধুমাত্র জনসচেতনতা নয় বরং আইনের কঠোর প্রয়োগ এবং অভয়ারণ্য রক্ষার ব্যবস্থা করা দরকার।’ 

এক গবেষণায় দেখা গেছে, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ৪৫ শতাংশ অভয়ারণ্য এবং বিশ্বের ৯৪ শতাংশ জলাশয় ধীরে ধীরে মানুষের দখলে চলে যাওয়ায় বন্যপ্রাণীর আবাসস্থল মুছে গেছে। ভারতের বণ্যপ্রাণী ও প্রকৃতি নিয়ে কাজ করা সংস্থা ওয়ার্ল্ড ওয়াইল্ড ফান্ড ফর নেচার ইন্ডিয়ার (ডব্লিউডব্লিউএফ) তথ্য মতে, বর্তমানে সারা বিশ্বে প্রায় ১০ হাজারের মতো মেছোবাঘ টিকে আছে।

তবে বনাঞ্চল বা আবাসস্থল ধ্বংস করে জনবসতি স্থাপন ও কৃষিজমিতে রূপান্তর, হাওর ভরাট, মানুষের অসচেতনতা ও ভ্রান্ত ধারণা, খাদ্যসংকট ইত্যাদি কারণে এদের সংখ্যা দিন দিন কমে যাচ্ছে। 

একদিকে হাওরাঞ্চলে মাছের সংখ্যা দিন দিন কমে যাওয়ায় খাদ্যাভাবে মেছোবাঘ কমে যাচ্ছে। অন্যদিকে মানুষ বাঘ মনে করে অনেক মেছোবাঘ হত্যার কারণেও এর সংখ্যা দিন দিন কমে যাচ্ছে। জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে জলাশয় ভরাট এবং বন উজাড়ের কারণে এদের আবাসস্থল বিরাট হুমকির মুখে পড়ে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে এই প্রাণী।

তাই ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব নেচার (আইইউসিএন) ২০০৮ সালে মেছোবাঘকে বিপন্ন প্রজাতির প্রাণীর তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে।

বাংলাদেশের ১৯৭৪ ও ২০১২ সালের বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইনের তফসিল-১ অনুযায়ী এ প্রজাতিটি সংরক্ষিত। 

মেছোবাঘ সংরক্ষণের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি দরকার জনসচেতনতা। আমাদেরকে পরিবেশ দূষণ রোধে কাজ করতে হবে। কারেন্ট জালের ব্যবহার কমাতে হবে। আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে কঠোর হতে হবে।

ভারতের পশ্চিমবঙ্গে এটিকে সেই রাজ্যের ‘রাজ্য প্রাণী’ তকমা দেওয়া হয়েছে এবং এই রাজ্য বর্তমানে বাঘরোল সংরক্ষণে বিশেষ ভূমিকা পালন করছে। যা মেছোবাঘের সংখ্যা বৃদ্ধিতে বিরাট অবদান রাখছে।

কালো মাথা বেনেবউ

প্রকাশ: ১১ মে ২০২৪, ১০:১১ এএম
কালো মাথা বেনেবউ
চুপ করে বসে আছে বেনেবউ, ঢাকার জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যান থেকে তোলা। ছবি: লেখক

‘দেখেছি হলুদ পাখি বহুক্ষণ থাকে চুপ করে,
নির্জন আমের ডালে দুলে যায়-দুলে যায়-বাতাসের সাথে বহুক্ষণ;’
-জীবনানন্দ দাশ

মেঘশিরীষগাছে নতুন পাতা এসেছে। শাখা-প্রশাখার রং ঢেকে গেছে পাতার রঙে। তখন গ্রামবাংলায় পাখিদের বাসা বানানোর সময়। পাকড়া শালিক, লাল ঘুঘু, বুলবুলি, ছাতারে, হাঁড়িচাঁচা নিয়মিত মেঘশিরীষের ডালে ডাকাডাকি করছে। বাসা তৈরির জন্য উপযুক্ত জায়গা খুঁজছে ঘুঘু।

এমন দিনে একজোড়া হলুদ পাখি উড়ে এল। ঠোঁটে তাদের হলুদ নরম খড়। মেঘশিরীষের পাতি ডালে ঘনপাতার ভেতরে ওরা চলে গেল। ওই ডালেই ওদের বাসা। দুপুরের রোদ শেষে বিকেলের সময় শুরু হলো। মেঘশিরীষ বা রেইনট্রি গাছের পাতাগুলো তখন লজ্জাবতী পাতার মতো গুটিয়ে নিল ধীরে ধীরে ঝিরিঝিরি বাতাসের ছোঁয়ায়। মগডালে বেনেবউদের কাপের মতো সুন্দর বাসাটি দেখা গেল। ইংরেজি ‘ভি’ এর মতো ছড়ানো দুটি ডালের বিভাজিত অংশে এই বাসাটি। নরম খড়, ঘাস, গাছের তন্তু ও মাকড়সার জাল দিয়ে বাসাটি বানানো হয়েছে।

এ পাখিরা সাধারণত উঁচু গাছের মগডালেই বাসা বানায়। বাসা বানানোর জন্য মেঘশিরীষ ও বড় আমগাছ তাদের বেশ পছন্দ। দেখতে দেখতে এক দিন তাদের বাসায় ছানা এল। কয়েক সপ্তাহ ছানাদের কিচিরমিচির শুনেছি। উভয় পাখি ছানাদের খাবার খাওয়াত পালা করে। এক দিন ছানারা বাসা ছাড়ল এবং উড়ে চলে গেল কোথাও।

কালো মাথা বেনেবউ গ্রামবাংলায় হলদে পাখি নামে বহুল পরিচিত। লোকে এদের কুটুমপাখিও বলে। এ পাখি ডাকলে বাড়িতে মেহমান আসবে, এমন ধারণা বরিশালের গ্রামে গ্রামে বহুল প্রচলিত। আমরাও ছেলেবেলায় এমটি মনে করতাম। কালো মাথা বেনেবউ পালকের উজ্জ্বল হলুদ রঙের জন্য খুব সহজেই মানুষের চোখে পড়ে। সাধারণত একাকী এবং জোড়ায় চলে। কণ্ঠ সুমধুর। প্রজনন মৌসুমে তাদের গান শোনা যায়। বেশ পরিচ্ছন্ন ও পরিপাটি পাখি।

তাদের চলাফেরায় এক রকম নীরবতা, লাজুকতা এবং সৌন্দর্য আছে। আছে দারুণ ব্যক্তিত্ববোধ। যে কারণে এ পাখিটি আমার মন জয় করে নিয়েছে। মানুষকে মোটেও বিরক্ত করে না। গাছপালাময় মানুষের বসতির কাছেই থাকতে ভালোবাসে। শহরের পার্কেও তাদের দেখা যায়। এদের প্রধান খাদ্য হলো পাকা ফল, কীটপতঙ্গ ও ফুলের মধু। আম, জাম, পেঁপে, তেলাকুচা ফল পাকলে বেনেবউরা নিয়মিত সেখানে আসে।

সৌরভ মাহমুদ: প্রকৃতিবিষয়ক লেখক ও পরিবেশবিদ, জার্মান অ্যারোস্পেস সেন্টার
[email protected]

পরমসুন্দর উদয়পদ্ম ফুল

প্রকাশ: ১০ মে ২০২৪, ০৯:৫৬ এএম
পরমসুন্দর উদয়পদ্ম ফুল
গ্রীষ্মে কার্জন হলের সামনে ফুটেছে উদয়পদ্ম ফুল। ছবি: লেখক

পদ্মের মতো যে ফুলের উদয়, নাম তো তার উদয়পদ্মই হবে। কিন্তু বেশির ভাগ ফুলপ্রেমীর কাছে সে এ নামের চেয়ে ম্যাগনোলিয়া নামেই বেশি পরিচিত। উদয়পদ্ম নামটি দিয়েছিলেন বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। উদয়পদ্ম দেখতে পদ্মের মতো হলেও পদ্ম না। ডালের ঠিক আগায় সূর্যের মতো উদয় হয় বলে কবিগুরু এর নাম দিয়েছিলেন উদয়পদ্ম।

বৈশাখের এক সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হলের সামনের প্রাঙ্গণে একজোড়া ম্যাগনোলিয়া গাছের সব ডালে ফোটা ফুল দেখে মন ভরে গেল। কাছে যেতেই ফুলগুলোর সুমিষ্ট সুবাস বাতাসে ভেসে এল। আহ্‌, কি মধুর ঘ্রাণ! কিন্তু বিপত্তি বাধল যখন ফুলের ছবি তুলতে চাইলাম। প্রায় ২০ ফুট উঁচু গাছে ডালের আগায় ফুলের উদয়। এ গাছ আরও লম্বা হতে পারে, ৭০-৮০ ফুট লম্বা গাছও এ দেশের পাহাড়ি অরণ্যে আছে। একটি বয়স্ক গাছ কয়েক বছর আগে দেখেছিলাম রংপুরের পায়রাবন্দে, বেগম রোকেয়া স্মৃতিকেন্দ্রে।

কার্জন হলের সামনের গাছ দুটির প্রায় সব ডালের আগায় ফুল ফুটে রয়েছে। একটি ডালকে যখন বাগে আনা গেল, তখন পূর্ণ প্রস্ফুটিত রূপ দেখে বিমোহিত হয়ে গেলাম। গত সপ্তাহে জাতীয় সংসদ ভবনের পাশে চন্দ্রিমা উদ্যানেও দেখেছিলাম কয়েকটি ম্যাগনোলিয়া গাছ। কিন্তু সেসব গাছে ফোটা ফুলগুলোর চেয়ে এ দুটি গাছের ফুল অনেক বড়। প্রাণবন্ত, সতেজ ও লাবণ্যময়ী। ফুলের ছবি তোলার পর শুরু করলাম সেই লাবণ্যময়ী উদয়পদ্মের অবয়ব পাঠ।

পাপড়ির বিস্তার পাওয়া গেল প্রায় ৭ ইঞ্চি। ১০টি পাপড়ি ২টি সারিতে সাজানো। প্রথম বা ওপরের সারির পাপড়িগুলো ছোট, পরের সারিরগুলো বড়। জ্বাল দেয়া দুধের মতো পাপড়ির রং। কোনো কোনোটার রং আবার বরফসাদা। এ জন্য এ ফুলের আরেক নাম হিমচাঁপা, হিন্দিতেও এর নাম হিমচাঁপা।

ম্যাগনোলিয়া ছোট বৃক্ষ প্রকৃতির। বহুবর্ষজীবী ও চিরসবুজ। পাতা দেখতে কিছুটা কাঁঠালপাতার মতো। তবে কাঁঠালপাতার চেয়ে ম্যাগনোলিয়া গাছের পাতা লম্বাটে ও ছোট। পাতার ওপরের পিঠ চকচকে কালচে সবুজ বা তামাটে, নিচের পিঠ মখমলের মতো ও বাদামি। পাতার আকৃতি লম্বাটে উপবৃত্তাকার ও পত্রফলকের আগা কিছুটা ভোঁতা, ফলকের কিনারা সামান্য নিচের দিকে বাঁকানো। পাতাগুলো ডালের ওপর ঊর্ধ্বমুখীভাবে সাজানো থাকে। ফুল ফোটা শুরু হয় বসন্তের শেষ থেকে, ফুটতে থাকে বর্ষাকাল পর্যন্ত। তবে গ্রীষ্মকালে বেশি ফুল ফোটে।

ম্যাগনোলিয়া ফুলের কেন্দ্রস্থলে থাকে একটি প্যাগোডা বা শম্বুকের মতো জননাঙ্গ, কি চমৎকার তার গড়ন! কদিন পর ওই অঙ্গটাই বড় হতে হতে ফল হয়। আকার বদলায়। কিন্তু তার আকৃতি বদলায় না। পাপড়িঝরা সেসব ফল থাকে আকাশের দিকে মুখ করে তাকিয়ে। একপলকে ফুলকে দেখলে ওকে শ্বেতপদ্মের মতোই মনে হবে। ফুলগুলোও আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকে। পাপড়িগুলো সম্পূর্ণ খোলে না।

উদয়পদ্মের উদ্ভিদতাত্ত্বিক নাম ম্যাগনোলিয়া গ্রান্ডিফ্লোরা, গোত্র ম্যাগনোলিয়েসী। ইংরেজি নাম লরেল ম্যাগনোলিয়া। উদয়পদ্মের আদি নিবাস যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা ও টেক্সাসে। এশিয়ার প্রায় সব দেশেই ম্যাগনোলিয়া গাছ আছে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের লুইজিয়ানা অঙ্গরাজ্যের মতো পৃথিবীর আর কোনো দেশে একে এত বেশি সহজে চোখে পড়ে না। সেখানে প্রায় প্রতিটি বাড়ি ও রাস্তার ধারে ম্যাগনোলিয়া গাছ লাগানো আছে। আর থাকবেই বা না কেন? ম্যাগনোলিয়া যে সে অঙ্গরাজ্যের জাতীয় ফুল। বাংলাদেশের বন্য প্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন-২০১২-এর তফসিল ৪ অনুসারে ম্যাগনোলিয়া এ দেশে সংরক্ষিত উদ্ভিদ, যেখানে যেটা আছে সে গাছ কাটা বারণ। কার্জন হলের সামনে ছাড়াও এ গাছ আছে মিরপুরে জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যানে, বলধা গার্ডেনের সাইকি অংশে, ময়মনসিংহে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ উদ্যানে।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৯২৬ সালে অস্ট্রিয়ার ভিয়েনায় হোটেল ইম্পিরিয়ালে বসে তার ‘বনবাণী’র ভূমিকা লিখেছিলেন। সেখানেই তাকে আন্দোলিত করেছিল গাছগাছালির পরমসুন্দরতা। তিনি লিখেছিলেন, ‘পরমসুন্দরের মুক্তরূপে প্রকাশের মধ্যেই পরিত্রাণ, আনন্দময় সুগভীর বৈরাগ্যই হচ্ছে সেই সুন্দরের চরম দান।’ উদয়পদ্ম ফুলগুলোর সান্নিধ্যে সকালটা কাটিয়ে মনে হলো, আমি সেই পরমসুন্দরের দেখা পেয়েছি, আহ্বানও শুনেছি এক বৈরাগ্যের। পরমসুন্দর- সে তো ম্যাগনোলিয়ার মাত্র এক বেলার জন্য সুন্দরী যুবতী থাকার অহংকার, বৈরাগ্য- সে হলো সেই পরমসুন্দরের খসে পড়া, শিথিল কটিবাসের মতো একটার পর একটা খসে পড়ে পাপড়িগুলো গাছের তলায়।

তা দেখেই হয়তো কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখেছিলেন: ‘ম্যাগনোলিয়ার শিথিল পাপড়ি থরে থরে/ পড়ে ঘাসে।’ উদ্যানে উদ্যানে ম্যাগনোলিয়া গাছ চোখে পড়লেও তা খুব সুলভ নয়, আরও বেশি এ গাছ লাগানো যায়। গ্রীষ্মকালে এ গাছের আধা কাষ্ঠল শাখা কেটে কলম করে চারা তৈরি করা যায়।

হালদায় নমুনা ডিম ছাড়ছে মা মাছ

প্রকাশ: ০৭ মে ২০২৪, ০২:৫৯ পিএম
হালদায় নমুনা ডিম ছাড়ছে মা মাছ

দেশের একমাত্র প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন কেন্দ্র হালদা নদীতে নমুনা ডিম ছেড়েছে মা মাছ।

মঙ্গলবার (৭ মে) সকালে হালদা নদীর রাউজান অংশে ভাটার শেষ সময়ে কিছু ডিম ছাড়ে মা মাছ। এ ডিমকে ‘নমুনা ডিম’ বলা হয়। অর্থাৎ ডিম ছাড়া আগেই অল্প কিছু ডিম ছাড়ে মা মাছ। যা কিছু কিছু জেলের জালে ধরা পড়ে।

এ নমুনা ডিম ছাড়ার পর বৃহৎ পরিসরে ডিম ছাড়ে মা মাছেরা। তখন হালদা জুড়ে সব জেলেরাই কম-বেশি ডিম পেয়ে থাকেন।

জানা যায়, এপ্রিল থেকে জুন মাসে যেকোনো সময়ে এই নদীতে কার্পজাতীয় মা মাছ ডিম ছাড়ে। তবে পূর্ণিমা বা অমাবস্যার জোঁ থাকতে হয়। এবার অমাবস্যার জোঁতে ডিম দিচ্ছে মা মাছ। গতকাল সোমবার বিকেলে বজ্রসহ প্রচুর বৃষ্টি হলে নদীতে পাহাড়ি ঢল নেমে আসে। মঙ্গলবার সকালে মা মাছ নমুনা ডিম ছাড়ে।

রাউজানের ডিম সংগ্রহকারী পাকিরাম দাশ, হরিরঞ্জন দাশ, সন্তোষ দাশ, সুজিত দাশ ও সুনিল দাশ জানান, তারা মইশকরম এলাকার চইল্যাখালিতে সকালে ১১টি নৌকার মাধ্যমে ডিম সংগ্রহ করেন। প্রতিটি নৌকায় গড়ে ২ থেকে ২.৫ বালতি করে ডিম সংগ্রহ করেছেন।

এছাড়া হালদার মদুনাঘাট এলাকায় এক থেকে দেড় বালতি ডিম পেয়েছে জেলেরা। তবে উজানে আরও ৫ থেকে ১০টি স্পটে ডিম পায়নি জেলেরা।

হাটহাজারী উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ ফারুক ময়েদুজ্জামান খবরের কাগজকে বলেন, ‘আমি হালদায় রয়েছি। নিচের দুটি স্পটে নমুনা ডিম পেয়েছে জেলেরা। মাত্র কয়েকটি নৌকাতে দু’এক বালতি করে ডিম পেয়েছে। বৃহৎ আকারে ডিম পাওয়া যায়নি। হালদায় সব স্থানে মা মাছের আনাগোনা রয়েছে। এতে বুঝা যাচ্ছে বৃহৎ আকারে ডিম পাওয়া যাবে।’

তিনি জানান, হালদায় ডিম সংগ্রহের পর ফোটানোর জন্য মৎস্য অধিদপ্তরের সব ধরণের প্রস্তুতি রয়েছে। পোনা তৈরির জন্য চারটি হ্যাচারি প্রস্তুত রাখা হয়েছে। নদীতে বালুবাহী যান্ত্রিক নৌকা চলাচলে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। আশা করা হচ্ছে উল্লেখ্যযোগ্য পরিমাণ ডিম পাওয়া যাবে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, এপ্রিল-জুনে অমাবস্যা ও পূর্ণিমা তিথিতে পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাতসহ পানির বিভিন্ন ভৌত ও রাসায়নিক প্যারামিটার যেমন-পানির তাপমাত্রা, স্রোত, পানির স্তর, তড়িৎ পরিবাহিতা, টারবিডিটি, দ্রবীভূত অক্সিজেন, পিএইচ ইত্যাদির মিথস্ক্রিয়তায় হালদা নদীতে কার্প জাতীয় মা মাছ ডিম ছাড়ে।

হালদা গবেষক ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় হালদা রিভার রিসার্চ ল্যাবরেটরির সমন্বয়ক অধ্যাপক ড. মনজুরুল কিবরিয়া খবরের কাগজকে বলেন, ‘হালদায় অতি সামান্য কিছু মা মাছ ডিম ছেড়েছে। যা নমুনা ডিম হিসেবে বিবেচনা করে থাকি আমরা। নমুনা ডিম ছাড়ার অর্থ হলো, মা মাছ ডিম ছাড়ার জন্য প্রস্তুত। প্রতিবছরই মুল ডিম ছাড়ার আগেই নমুনা ডিম ছাড়ে মা মাছ। এটিই নিয়ম। আজ জেলেরা যা ডিম পেয়ে তা অতি সামস্য।

তবে, সোমবার রাতে ডিম ছাড়ার একটি যথেষ্ট সম্ভাবনা ছিল। আজ মঙ্গলবার ডিম ছাড়া সম্ভাবনা রয়েছে। দিন বা রাতে যেকোন সময় ডিম ছাড়তে পারে মা মাছ। হালদার উজানে পাহাড়ি ঢল নেমেছে। মা মাছের ডিম ছাড়ার অধিক সম্ভাবনা রয়েছে এখন।’

এদিকে, ডিম ছাড়ার মৌসুম ঘিরে হালদা নদীর দুই পাড়ে প্রতি বছরের মতো নৌকা ও ডিম সংগ্রহের সরঞ্জাম নিয়ে সংগ্রহকারীরা নিষিক্ত ডিম ধরার জন্য প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছেন।

গত বছর হালদা থেকে ১৫ হাজার কেজি ডিম সংগ্রহ করা হয়েছিল। এর আগে ২০২০ সালে ২৫ হাজার কেজি ডিম পাওয়া গিয়েছিল। ২০২১ সালে আট হাজার ৫০০ কেজি. ২০২২ সালে ছয় হাজার কেজি ডিম সংগ্রহ করা হয়েছিল। এবারও উল্লেখ্যযোগ্য হারে ডিম সংগ্রহ হবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

আবদুস সাত্তার/অমিয়/

স্বাদে-গুণে ভরা পানিতাল

প্রকাশ: ০৭ মে ২০২৪, ১২:৫৩ পিএম
স্বাদে-গুণে ভরা পানিতাল
পানিতাল কাটছেন বিক্রেতা। ছবি: খবরের কাগজ

আর কয়েক দিন পরই বিদায় নেবে বৈশাখ মাস। দোরগোড়ায় কড়া নাড়ছে জ্যৈষ্ঠ। এরই মধ্যে ডালি সাজিয়ে গ্রীষ্মকালীন নানা ধরনের ফল উঠতে শুরু করেছে বাজারে। খরতাপের কারণে গ্রীষ্মকাল অনেকের পছন্দ না হলেও এই সময়ের রসালো ফল পছন্দ নয় এমন মানুষ পাওয়া ভার। কিছুদিন ধরেই বাজারে দেখা মিলছে স্বাদে ও দর্শনে লোভনীয় ফল পানিতালের। এলাকাভেদে অনেকের কাছে এটি তালের শাঁস হিসেবে পরিচিত।

ভ্যানের মধ্যে নিয়ে গ্রাম ও শহরের বিভিন্ন এলাকায় বিক্রি করা হচ্ছে হালকা সবুজ ও কালো রঙের মিশেলে কাঁদি কাঁদি কচি তাল। ভ্যানকে ঘিরে ভিড় করছেন গরমে কাহিল ও ক্লান্ত পথচারী। ক্রেতা এলেই হাতে থাকা দা দিয়ে দক্ষতার সঙ্গে খোসা কেটে ছাড়াচ্ছেন বিক্রেতা। প্রতিটি কোপের সঙ্গে বের হয়ে আসছে পানিতে ভরা স্বচ্ছ শাঁস। প্রতি কামড়ে মিষ্টি পানি ও তুলতুলে শাঁস ক্লান্তি দূর করছে মানুষের।

মৌসুমে খুব কম সময় ধরে পাওয়া যায় এই পানিতাল। বৈশাখ মাস এলেই কৃষকের কাছ থেকে চুক্তিতে তালগাছ কিনে নেন ব্যবসায়ীরা। তারপর বৈশাখ থেকে জ্যৈষ্ঠ মাসের অর্ধেক পর্যন্ত মাত্র দেড় মাস চলে পানিতাল বিক্রির কাজ। খেতে অনেকটা নারকেলের শাঁসের মতো এই ফলকে বিভিন্ন মানুষ চেনে বিভিন্ন নামে। কেউ ডাকে পানিতাল, কেউ ডাকে তালের শাঁস, কেউ বলে তালের চোখ, কেউ আষাঢ়ী আবার কেউ তালের বিচি। যে নামেই ডাকা হোক না কেন, স্বাদু এই ফল পছন্দের তালিকায় রয়েছে সবারই।

বাংলাদেশে খুলনা, রাজশাহী, রংপুর, ফরিদপুর, ময়মনসিংহ, গাজীপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় তালের ব্যাপক চাষ হয়। গতকাল কারওয়ান বাজারে পানিতাল বিক্রেতা জসীম উদ্দিনের সঙ্গে কথা হলো। তিনি খবরের কাগজকে জানান, কচি অবস্থায় সংগ্রহ করে এসব তাল রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় সরবরাহ করা হয়। সাইজ অনুযায়ী গাছভিত্তিক প্রতিটি তাল ৫ থেকে ১০ টাকা দামে কাঁদি ধরে কেনা হয়। কোনো কাঁদিতে ১৫টি আবার কোনো কাঁদিতে ১০টি, কোনো কাঁদিতে থাকে ৬টি বা কোনোটায় ৪টি করে থাকে পানিতাল। এখান থেকে পাইকারিভাবে সাইজ অনুযায়ী প্রতিটি তাল বিক্রি করা হয় ১৬ থেকে ২২ টাকা পর্যন্ত।

মোহাম্মদপুরের ইকবাল রোডে পানিতালের ভ্যানের চারপাশে ভিড় করে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায় বিভিন্ন বয়সী নারী ও পুরুষ ক্রেতাদের। বিক্রেতা শহীদ জানান, কারওয়ান বাজারের আড়ত থেকে প্রতি পিস তাল তার কেনা পড়েছে ১৮ টাকা। তিনি প্রতি পিস শাঁস বিক্রি করছেন ১০ টাকা করে। এক-একটি তালে শাঁস থাকে দুই বা তিনটি। চাহিদা থাকায় গত দুই দিনে ৩০০টিরও বেশি পিস পানিতাল বিক্রি করেছেন তিনি।

খেতে সুস্বাদু শুধু নয়, পানিতালে রয়েছে অনেক উপকারী গুণ। এতে প্রচুর পরিমাণ অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, ফাইবার, ভিটামিন এ, বি ও সি, জিংক, পটাশিয়াম, আয়রন, ক্যালসিয়ামসহ বিভিন্ন খনিজ উপাদান থাকে। স্বাদে ভরা মৌসুমি এ ফল শুধু মানুষের ক্লান্তিই দূর করে না, পূরণ করে নানা রকম পুষ্টি চাহিদাও।