বিশ্বের বৃহত্তম শিম গিলা ফল । খবরের কাগজ
ঢাকা ২৬ বৈশাখ ১৪৩১, বৃহস্পতিবার, ০৯ মে ২০২৪

বিশ্বের বৃহত্তম শিম গিলা ফল

প্রকাশ: ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২:৪২ পিএম
বিশ্বের বৃহত্তম শিম গিলা ফল
দিনাজপুরের সিংড়া জাতীয় উদ্যানে গিলা লতার গাছ ও ফল। ছবি: লেখক

বৈশাখের এক মাঝ দুপুরে দাবদাহে ছটফট করতে করতে একটু শান্তি চাইলাম শালগাছদের কাছে। কিন্তু কোথায় শান্তি! বনের ওই গাছগুলোও উলঙ্গ হয়ে গায়ে রোদ মাখাচ্ছে, রোদে পুড়ে খাক হচ্ছে।

এখন তো পাতাঝরা শালগাছগুলোতে নতুন পাতা আসার কথা। কিন্তু দিনাজপুর-ঠাকুরগাঁওয়ের মাঝে বীরগঞ্জের ভোগনগর ইউনিয়নে সিংড়া শালবনের শালগাছগুলোতে কোনো নতুন পোশাক নেই। বড়ই বিচিত্র এ দেশের প্রকৃতি। টাঙ্গাইল, সাভার, গাজীপুর আর ঢাকায় জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যানের শালগাছগুলো যেখানে নবপত্রপল্লবে সুশোভিত, সেখানে সিংড়া শালবনের গাছ  এখনো নিষ্পত্র, এখনো বাতাসে বাতাসে ঝরে পড়ছে পুরোনো পাতারা। কোনো ছায়া নেই সে বনের ভেতর। 

তবে বনের ভেতর এক আশ্চর্য গাছের দেখা পেলাম, যার ফল হচ্ছে পৃথিবীর বৃহত্তম শিম। অর্থাৎ শিমগোত্রীয় যত গাছ আছে, সেগুলোর মধ্যে এই গাছের ফল সবচেয়ে বড়। এদের একেকটা ফলের দৈর্ঘ্য ২ মিটার পর্যন্ত হতে পারে।

আকাশে গনগনে সূর্য। ওপরে তাকাতেও সাহস হয় না, চোখ জ্বলে। সিংড়া শালবনের বিট অফিসার গয়াপ্রসাদ পাল একটু ছায়া দেওয়ার জন্য একটা বিশাল জারুল গাছের কাছে নিয়ে গেলেন। বললেন, ‘যে গাছ আপনি খুঁজছেন সেটি ওই, গিলা লতার গাছ।’ গাছটির কথা কয়েক বছর আগে শুনেছিলাম দিনাজপুর আরডিআরএস বিশ্রামাগারের জনৈক রিসেপশনিস্টের মুখে। সেখানে একটি ঢাউস গিলা লতার ফল সাজিয়ে রাখা ছিল। দেখেই তাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, কোথা থেকে আনা হয়েছে ওটা? বলেছিলেন, এক বিদেশি সাহেব ঘুরতে গিয়েছিলেন সিংড়া শালবনে। তিনি ওই ফল দেখে সেখান থেকে নিয়ে এসেছিলেন। আমরা যত্ন করে শো পিস হিসেবে এখানে রেখে দিয়েছি।

দুষ্প্রাপ্য সেই গিলা লতার গাছ এখন চোখের সামনে। কিন্তু লতা কোথায়? গয়াপ্রসাদকে দেখে বিভূতিভূষণের ‘আরণ্যক’ উপন্যাসের যুগলপ্রসাদের নাম মনে পড়ল, বনের গাছপালার প্রতি যার ছিল অগাধ মমতা। গয়াপ্রসাদেরও কি তাই? জানালেন, সিংড়া শালবনে নেই, অথবা হারিয়ে গেছে এরূপ ২২ প্রজাতির গাছ এবার লাগানো হয়েছে এ বনে। আটটি শকুন পালন করে ছাড়া হয়েছে। বনটাকে কিছুটা জীববৈচিত্র্যময় করে তোলার চেষ্টা হচ্ছে। তিনি যে গাছটিকে গিলা লতা গাছ বলে পরিচয় করিয়ে দিলেন, তা দেখে সে গাছকে ঠিক গিলা লতা গাছ বলে মেনে নিতে মন সায় দিচ্ছে না। লতা কোথায়? মূল গিলা লতার গাছ তো দেখছি মোটাসোটা শালগাছের মতোই। 

একদিকে হেলে পড়ে লতাটা উঠে গেছে আকাশের দিকে। উঠে আশেপাশের সব গাছের মাথায় মাখামাখি ও জড়াজড়ি করে চলে গেছে দুই-তিনশ হাত দূরে। হয়তো ভবিষ্যতে লতা না কাটলে আরও বহুদূর পর্যন্ত ছড়াবে। এমন বড় আর কাষ্ঠল লতা এর আগে আর চোখে পড়েনি। নিশ্চয়ই সেটা অনেক পুরোনো গাছ, বয়স অনেক। এক গাছ থেকে আরেক গাছে এই লতা বেয়ে সাঁকোর মতো চলাচল করা যায়। 

সেটিই করে দেখালেন সিংড়া শালবনের কর্মী মামুন। তরতর করে শাখামৃগের মতো ওপরে উঠে গেলেন লতা বেয়ে, এরপর সেই গাছ থেকে একটা ফল পেড়ে নিয়ে এলেন। শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে ফলটা। আরও অনেক ফল ঝুলছে গাছে। সবই শুকিয়ে কাঠ, ফেটে বীজ ছড়িয়ে পড়ার অপেক্ষা। ফলটা মেপে দেখলাম, লম্বায় পাক্কা দুই হাত, তেরোটা বীজ গোলাকার চাকতি বা সসারের মতো গিঁটের ভেতরে রয়েছে। 

বীজ চ্যাপ্টা গোলাকার, উজ্জ্বল চকচকে বাদামি। পাকা ফল ধরে নাড়ালে ঝনঝন করে বীজগুলো ভেতরে বেজে উঠল। হিন্দুদের অন্নপ্রাশন, বিয়ে ও গায়ে হলুদ- এসব অনুষ্ঠানে এখনো গিলা বীজের ব্যবহার অনিবার্য। অতীতে গিলা ফল ব্যবহার করে দর্জিরা পাঞ্জাবির দুটো হাতায় ভাঁজ ফেলতেন। সে জন্য সে পাঞ্জাবিকে বলা হতো গিলা করা পাঞ্জাবি। এখন এর চল সেভাবে নেই। তবু বাজারে গিলা ফল বানিয়াতি দোকানে পাওয়া যায়। 

গিলা লতার উদ্ভিদতাত্ত্বিক নাম Entada rheedii ও গোত্র ফ্যাবেসি, অর্থাৎ শিমগোত্রীয় গাছ। এদের ফলও শিমের মতো চ্যাপ্টা ও লম্বা। পাতা যৌগিক। কিন্তু ফল যত বড়, পাতা সে রকম বড় না। ঝরে যাওয়া গাছে দেখলাম নতুন কিছু পাতা এসেছে, এসেছে লম্বা শীষে ফুলের কুঁড়িও। 

গাছের লতা ছোট ও প্রথম অবস্থায় সরু থাকলেও বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তা কাষ্ঠল ও মোটা হয়ে যায়। মোটা গুঁড়ির মতো কাণ্ড থেকে যেসব লতা বের হয়, পুরোনো সেসব লতার গড়ন হয় চ্যাপ্টা শিরযুক্ত স্ক্রুর মতো পাকানো। পাকটা থাকে ঘড়ির কাঁটা ঘোরার উল্টো দিকে। বেশ শক্ত লতা। গয়াপ্রসাদ বললেন, ফল গাছে রাখার উপায় নেই, কবিরাজরা মাঝে মাঝে এসেই নিয়ে যায়। মনে হয়, এই গাছটির কিছু ঔষধি গুণ আছে। গাছটি দুষ্প্রাপ্য হলেও তা সংরক্ষণে তেমন উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। 

হালদায় নমুনা ডিম ছাড়ছে মা মাছ

প্রকাশ: ০৭ মে ২০২৪, ০২:৫৯ পিএম
হালদায় নমুনা ডিম ছাড়ছে মা মাছ

দেশের একমাত্র প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন কেন্দ্র হালদা নদীতে নমুনা ডিম ছেড়েছে মা মাছ।

মঙ্গলবার (৭ মে) সকালে হালদা নদীর রাউজান অংশে ভাটার শেষ সময়ে কিছু ডিম ছাড়ে মা মাছ। এ ডিমকে ‘নমুনা ডিম’ বলা হয়। অর্থাৎ ডিম ছাড়া আগেই অল্প কিছু ডিম ছাড়ে মা মাছ। যা কিছু কিছু জেলের জালে ধরা পড়ে।

এ নমুনা ডিম ছাড়ার পর বৃহৎ পরিসরে ডিম ছাড়ে মা মাছেরা। তখন হালদা জুড়ে সব জেলেরাই কম-বেশি ডিম পেয়ে থাকেন।

জানা যায়, এপ্রিল থেকে জুন মাসে যেকোনো সময়ে এই নদীতে কার্পজাতীয় মা মাছ ডিম ছাড়ে। তবে পূর্ণিমা বা অমাবস্যার জোঁ থাকতে হয়। এবার অমাবস্যার জোঁতে ডিম দিচ্ছে মা মাছ। গতকাল সোমবার বিকেলে বজ্রসহ প্রচুর বৃষ্টি হলে নদীতে পাহাড়ি ঢল নেমে আসে। মঙ্গলবার সকালে মা মাছ নমুনা ডিম ছাড়ে।

রাউজানের ডিম সংগ্রহকারী পাকিরাম দাশ, হরিরঞ্জন দাশ, সন্তোষ দাশ, সুজিত দাশ ও সুনিল দাশ জানান, তারা মইশকরম এলাকার চইল্যাখালিতে সকালে ১১টি নৌকার মাধ্যমে ডিম সংগ্রহ করেন। প্রতিটি নৌকায় গড়ে ২ থেকে ২.৫ বালতি করে ডিম সংগ্রহ করেছেন।

এছাড়া হালদার মদুনাঘাট এলাকায় এক থেকে দেড় বালতি ডিম পেয়েছে জেলেরা। তবে উজানে আরও ৫ থেকে ১০টি স্পটে ডিম পায়নি জেলেরা।

হাটহাজারী উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ ফারুক ময়েদুজ্জামান খবরের কাগজকে বলেন, ‘আমি হালদায় রয়েছি। নিচের দুটি স্পটে নমুনা ডিম পেয়েছে জেলেরা। মাত্র কয়েকটি নৌকাতে দু’এক বালতি করে ডিম পেয়েছে। বৃহৎ আকারে ডিম পাওয়া যায়নি। হালদায় সব স্থানে মা মাছের আনাগোনা রয়েছে। এতে বুঝা যাচ্ছে বৃহৎ আকারে ডিম পাওয়া যাবে।’

তিনি জানান, হালদায় ডিম সংগ্রহের পর ফোটানোর জন্য মৎস্য অধিদপ্তরের সব ধরণের প্রস্তুতি রয়েছে। পোনা তৈরির জন্য চারটি হ্যাচারি প্রস্তুত রাখা হয়েছে। নদীতে বালুবাহী যান্ত্রিক নৌকা চলাচলে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। আশা করা হচ্ছে উল্লেখ্যযোগ্য পরিমাণ ডিম পাওয়া যাবে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, এপ্রিল-জুনে অমাবস্যা ও পূর্ণিমা তিথিতে পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাতসহ পানির বিভিন্ন ভৌত ও রাসায়নিক প্যারামিটার যেমন-পানির তাপমাত্রা, স্রোত, পানির স্তর, তড়িৎ পরিবাহিতা, টারবিডিটি, দ্রবীভূত অক্সিজেন, পিএইচ ইত্যাদির মিথস্ক্রিয়তায় হালদা নদীতে কার্প জাতীয় মা মাছ ডিম ছাড়ে।

হালদা গবেষক ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় হালদা রিভার রিসার্চ ল্যাবরেটরির সমন্বয়ক অধ্যাপক ড. মনজুরুল কিবরিয়া খবরের কাগজকে বলেন, ‘হালদায় অতি সামান্য কিছু মা মাছ ডিম ছেড়েছে। যা নমুনা ডিম হিসেবে বিবেচনা করে থাকি আমরা। নমুনা ডিম ছাড়ার অর্থ হলো, মা মাছ ডিম ছাড়ার জন্য প্রস্তুত। প্রতিবছরই মুল ডিম ছাড়ার আগেই নমুনা ডিম ছাড়ে মা মাছ। এটিই নিয়ম। আজ জেলেরা যা ডিম পেয়ে তা অতি সামস্য।

তবে, সোমবার রাতে ডিম ছাড়ার একটি যথেষ্ট সম্ভাবনা ছিল। আজ মঙ্গলবার ডিম ছাড়া সম্ভাবনা রয়েছে। দিন বা রাতে যেকোন সময় ডিম ছাড়তে পারে মা মাছ। হালদার উজানে পাহাড়ি ঢল নেমেছে। মা মাছের ডিম ছাড়ার অধিক সম্ভাবনা রয়েছে এখন।’

এদিকে, ডিম ছাড়ার মৌসুম ঘিরে হালদা নদীর দুই পাড়ে প্রতি বছরের মতো নৌকা ও ডিম সংগ্রহের সরঞ্জাম নিয়ে সংগ্রহকারীরা নিষিক্ত ডিম ধরার জন্য প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছেন।

গত বছর হালদা থেকে ১৫ হাজার কেজি ডিম সংগ্রহ করা হয়েছিল। এর আগে ২০২০ সালে ২৫ হাজার কেজি ডিম পাওয়া গিয়েছিল। ২০২১ সালে আট হাজার ৫০০ কেজি. ২০২২ সালে ছয় হাজার কেজি ডিম সংগ্রহ করা হয়েছিল। এবারও উল্লেখ্যযোগ্য হারে ডিম সংগ্রহ হবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

আবদুস সাত্তার/অমিয়/

স্বাদে-গুণে ভরা পানিতাল

প্রকাশ: ০৭ মে ২০২৪, ১২:৫৩ পিএম
স্বাদে-গুণে ভরা পানিতাল
পানিতাল কাটছেন বিক্রেতা। ছবি: খবরের কাগজ

আর কয়েক দিন পরই বিদায় নেবে বৈশাখ মাস। দোরগোড়ায় কড়া নাড়ছে জ্যৈষ্ঠ। এরই মধ্যে ডালি সাজিয়ে গ্রীষ্মকালীন নানা ধরনের ফল উঠতে শুরু করেছে বাজারে। খরতাপের কারণে গ্রীষ্মকাল অনেকের পছন্দ না হলেও এই সময়ের রসালো ফল পছন্দ নয় এমন মানুষ পাওয়া ভার। কিছুদিন ধরেই বাজারে দেখা মিলছে স্বাদে ও দর্শনে লোভনীয় ফল পানিতালের। এলাকাভেদে অনেকের কাছে এটি তালের শাঁস হিসেবে পরিচিত।

ভ্যানের মধ্যে নিয়ে গ্রাম ও শহরের বিভিন্ন এলাকায় বিক্রি করা হচ্ছে হালকা সবুজ ও কালো রঙের মিশেলে কাঁদি কাঁদি কচি তাল। ভ্যানকে ঘিরে ভিড় করছেন গরমে কাহিল ও ক্লান্ত পথচারী। ক্রেতা এলেই হাতে থাকা দা দিয়ে দক্ষতার সঙ্গে খোসা কেটে ছাড়াচ্ছেন বিক্রেতা। প্রতিটি কোপের সঙ্গে বের হয়ে আসছে পানিতে ভরা স্বচ্ছ শাঁস। প্রতি কামড়ে মিষ্টি পানি ও তুলতুলে শাঁস ক্লান্তি দূর করছে মানুষের।

মৌসুমে খুব কম সময় ধরে পাওয়া যায় এই পানিতাল। বৈশাখ মাস এলেই কৃষকের কাছ থেকে চুক্তিতে তালগাছ কিনে নেন ব্যবসায়ীরা। তারপর বৈশাখ থেকে জ্যৈষ্ঠ মাসের অর্ধেক পর্যন্ত মাত্র দেড় মাস চলে পানিতাল বিক্রির কাজ। খেতে অনেকটা নারকেলের শাঁসের মতো এই ফলকে বিভিন্ন মানুষ চেনে বিভিন্ন নামে। কেউ ডাকে পানিতাল, কেউ ডাকে তালের শাঁস, কেউ বলে তালের চোখ, কেউ আষাঢ়ী আবার কেউ তালের বিচি। যে নামেই ডাকা হোক না কেন, স্বাদু এই ফল পছন্দের তালিকায় রয়েছে সবারই।

বাংলাদেশে খুলনা, রাজশাহী, রংপুর, ফরিদপুর, ময়মনসিংহ, গাজীপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় তালের ব্যাপক চাষ হয়। গতকাল কারওয়ান বাজারে পানিতাল বিক্রেতা জসীম উদ্দিনের সঙ্গে কথা হলো। তিনি খবরের কাগজকে জানান, কচি অবস্থায় সংগ্রহ করে এসব তাল রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় সরবরাহ করা হয়। সাইজ অনুযায়ী গাছভিত্তিক প্রতিটি তাল ৫ থেকে ১০ টাকা দামে কাঁদি ধরে কেনা হয়। কোনো কাঁদিতে ১৫টি আবার কোনো কাঁদিতে ১০টি, কোনো কাঁদিতে থাকে ৬টি বা কোনোটায় ৪টি করে থাকে পানিতাল। এখান থেকে পাইকারিভাবে সাইজ অনুযায়ী প্রতিটি তাল বিক্রি করা হয় ১৬ থেকে ২২ টাকা পর্যন্ত।

মোহাম্মদপুরের ইকবাল রোডে পানিতালের ভ্যানের চারপাশে ভিড় করে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায় বিভিন্ন বয়সী নারী ও পুরুষ ক্রেতাদের। বিক্রেতা শহীদ জানান, কারওয়ান বাজারের আড়ত থেকে প্রতি পিস তাল তার কেনা পড়েছে ১৮ টাকা। তিনি প্রতি পিস শাঁস বিক্রি করছেন ১০ টাকা করে। এক-একটি তালে শাঁস থাকে দুই বা তিনটি। চাহিদা থাকায় গত দুই দিনে ৩০০টিরও বেশি পিস পানিতাল বিক্রি করেছেন তিনি।

খেতে সুস্বাদু শুধু নয়, পানিতালে রয়েছে অনেক উপকারী গুণ। এতে প্রচুর পরিমাণ অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, ফাইবার, ভিটামিন এ, বি ও সি, জিংক, পটাশিয়াম, আয়রন, ক্যালসিয়ামসহ বিভিন্ন খনিজ উপাদান থাকে। স্বাদে ভরা মৌসুমি এ ফল শুধু মানুষের ক্লান্তিই দূর করে না, পূরণ করে নানা রকম পুষ্টি চাহিদাও। 

রমনায় মাংকি ব্রাশ ফুল

প্রকাশ: ০৪ মে ২০২৪, ১২:১১ পিএম
রমনায় মাংকি ব্রাশ ফুল
রমনা উদ্যানে ফুটেছে মাংকি ব্রাশ ফুল। ছবি: লেখক

এ দেশে গ্রীষ্মকাল নিয়ে আসে তীব্র তাপপ্রবাহ, আগুনের হল্কা। তাই বুঝি গ্রীষ্মে ফোটা অনেক ফুলের রঙও হয় উজ্জ্বল, আগুনের শিখার মতো টকটকে লাল, কমলা ও হলুদ। বৈশাখের দিনগুলো রাঙিয়ে দেয় রক্তরাঙা কৃষ্ণচূড়া ও রুদ্রপলাশ, হলুদ রঙের সোনাল আর কনকচূড়া। এর সঙ্গে মাঝ বৈশাখ থেকেই রমনায় ফুটতে শুরু করেছে মাধুরীলতা।

পুষ্পমঞ্জরিতে আগুনের শিখার মতো লাল আর কমলা রঙের মিশেলে অসংখ্য কেশর আড়াল করে ফেলেছে ফুলের পাপড়িগুলোকে। ফোটা ফুলের মঞ্জরিকে দেখলে টুথব্রাশের মতো মনে হয়, তবে তার আকার বেশ বড়। এ জন্য এর এক নাম ব্রাশ ফুল।

মটর বুটের মতো না ফোটা কুঁড়িগুলো পুষ্পমঞ্জরির দণ্ডের ওপর সারি করে গেঁথে আছে। ঘন সবুজ পাতার ঝোপে ফুটতে শুরু করেছে কয়েকটা ফুল। কয়েক দিনের মধ্যেই আরও অনেক ফুল ফুটে আলো করে ফেলবে লতানো গাছের সেই ঝোপটিকে। ফুলে কোনো ঘ্রাণ নেই বটে, তবে ব্যতিক্রমী রূপ প্রকৃতিপ্রেমীদের আনন্দিত করে। এর ইংরেজি নাম মাংকি ব্রাশ ভাইন বা ব্রাশ ফুল, উদ্ভিদতাত্ত্বিক নাম Combretum rotundifolium ও গোত্র কমব্রিটেসি। বাঁদরের মুখে দাড়ির পশমের মতো এ ফুলের চেহারা বলেই কি এর ইংরেজি নাম রাখা হয়েছে মাংকি ব্রাশ ভাইন?

সারা বিশ্বে কমব্রিটাম মহাজাতিতে ২৭২ প্রজাতির গাছ আছে। বাংলাদেশে আছে ১১ প্রজাতির গাছ। কিন্তু ১১ প্রজাতির গাছের মধ্যে এই প্রজাতি নেই। ব্রাশ ফুলের গাছ আরোহী লতানো কাষ্ঠল গুল্ম, গাছ বাঁচে অনেক বছর। একবার কোথাও লাগিয়ে দিলে আর একটু-আধটু যত্ন করলে এ গাছ সহজে মরে না। অনেকটা জংলি ধাঁচের। দ্রুত লতিয়ে ছড়িয়ে যায়। প্রতিবছর বেয়াড়া লতাগুলো ছেঁটে না রাখলে আশেপাশে অনেক দূর পর্যন্ত বেয়ে যায়। পাতা গাঢ় বা কালচে সবুজ, অগ্রভাগ তীক্ষ্ণ। লতার দুই পাশে বিপরীতমুখী দুটি করে পাতা ছড়িয়ে থাকে। লতাগুলোর আগায় ফুলের কুঁড়ি আসে। কুঁড়িগুলো একটি পুষ্পদণ্ডের ওপর সুন্দরভাবে সারি করে সাজানো থাকে। কুঁড়ি দেখতে পোড়ামাটি লাল রঙের, ছোট্ট বুটের দানা বা মাছের চোখের মতো।

পুষ্পমঞ্জরির গোড়ার দিক থেকে একটা দুটো করে ফুল ফুটতে শুরু করে, পরে দ্রুত সব ফুল ফুটে যায়। ফুলের পাপড়ির চেয়ে এর জননকেশরগুলো বেশি লম্বা, যা ব্রাশের মতো ঊর্ধমুখীভাবে থাকে। সেগুলো প্রায় তিন সেন্টিমিটার লম্বা, সোনালি লাল রঙ। সব কুঁড়ি ফুটে গেলে পুষ্পমঞ্জরির গড়নটা হয়ে যায় ব্রাশের মতো। মুখে ছোঁয়ালে সে ব্রাশের একটা কোমল পরশ পাওয়া যায়। ফুল ফোটার পর বাসি হলে শুকিয়ে যায়, তখন কেশরগুলো হয়ে যায় লালচে বাদামি।

কোনো গন্ধ নেই ফুলের। তবে উজ্জ্বল রং আকৃষ্ট করে মানুষ ও পতঙ্গদের। বৈশাখ থেকেই গাছে ফুল ফুটতে শুরু করে, ফুটতে থাকে পুরো গ্রীষ্মকাল ধরে। এমনকি বর্ষাকালেও দুই-একটা ফুল দেখা যায়। এরপর আর ফুল ফোটে না।

এটি একটি শোভাময়ী লতানো ফুলের গাছ। যেকোনো বাগানের প্রবেশপথের ওপরে খিলানের মতো তোরণ করে তার ওপর এ গাছ লতিয়ে দেওয়া যায়। গাছ চিরসবুজ কাষ্ঠল লতানো প্রকৃতির। অনেক বছর বাঁচে। এ গাছের কখনো বীজ হতে দেখিনি, তাই বীজ থেকে চারা করা যায় না। দাবা কলম ও গুটিকলম করে এর চারা তৈরি করা যায়।

ব্রাশ ফুল এ দেশে ততটা সুলভ নয়, খুব কমই চোখে পড়ে। প্রায় ১৫ বছর আগে বলধা গার্ডেনের সাইকি অংশে এ ফুলগাছের এক বিশাল ছড়ানো লতানো ঝোপ দেখেছিলাম। মালীদের জিজ্ঞেস করলে তার নাম বলেছিলেন ব্রাশ ফুল। এ ফুলের পুষ্পমঞ্জরির গড়ন দেখতে অবিকল টুথ ব্রাশের মতো, তাই হয়তো তারা এ ফুলকে এ নামে ডাকেন। পরে ঢাকা শহরে আরও কিছু জায়গায় এ ফুলের দেখা পাই।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বোটানিক্যাল গার্ডেনেও আছে একটা সুশোভিত লতানো ঝোপ। তবে তার প্রজাতি আলাদা, Combretum coccineum যার বাংলা নাম করা হয়েছে মাধুরীলতা। প্রবেশপথে আর্চের মতো গেটের ওপর তুলে দেওয়া হয়েছে গাছকে। মিরপুরে জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যানে ঢুকে রাস্তা দিয়ে হেঁটে ভেতরে যেতে যেতে চোখে পড়ে ডানপাশে একটি ব্রাশ ফুলের গাছ। বাগানের এত সব রূপ, এত ফুলের ঐশ্বর্য দেখে পুলকিত হয়ে ভাবি কত সৌভাগ্য আমার!

মনে পড়ে ভারতীয় কবি জয়দীপ রাউতের দিনান্তে কবিতার কয়েকটি পঙ্‌ক্তি- ‘বাগানের বহু গাছে গাছে/ ওড়ে অনায়াসগামী লতা/ আমি তার অকৃতজ্ঞতা/ ফুল হয়ে ফুটতে দেখেছি।’ বারবার ছুটে যাই রমনা আর জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যানে, কার্জন হলের সামনে, বলধায়- একের পর এক দেখি গাছগুলোতে ফুল ফুটতে। চোখে চোখে রাখি মহুয়া চত্বরের পাশের প্রাঙ্গণে লাগানো লতানো ফুলের গাছগুলোর দিকে।

বসন্তে উদ্বেল হতে দেখেছিলাম মাধবীলতাকে, এবার গ্রীষ্মে প্রস্ফুরণ দেখলাম ব্রাশ ফুলে, মাধুরীলতাকে দেখলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ উদ্যানে। অপেক্ষায় রইলাম বর্ষায় আর একটি লতানো ফুল দেখার আশায়।

শামখোল ও ইরিধান

প্রকাশ: ০৩ মে ২০২৪, ১১:২৯ এএম
শামখোল ও ইরিধান
ছবি : লেখক

বাংলাদেশের হাওর-বিলে শামখোল পাখির সংখ্যা বাড়ছে জেনে আপনি হয়তো বিস্মিত হবেন। কিন্তু বিগত তিন দশক ধরে জলচর পাখি গণনার ফলাফল দেখে আমরা নিশ্চিত, এ দেশে শামখোলের সংখ্যা সত্যই বেড়েছে। পাখি ও প্রকৃতি নিয়ে দুঃসংবাদ-ভারাক্রান্ত এই দিনে এ এক বিরল সুখবর। সত্তর বছর আগে ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছিল, বিশ্বের সব শামখোল অচিরে বিলুপ্ত হয়ে যাবে।

বাংলার নদী-চরে ও বাদাভুঁইয়ে দল বেঁধে হেঁটে বেড়ানো বিশাল এই পাখি শামখোল, শামুকখোল ও শামুক-ভাঙা ইত্যাদি নামে পরিচিত। ‘মানিকজোড়’ বা ‘স্টর্ক’ পরিবারের যে ছয় প্রজাতির পাখি আজও বাংলাদেশে টিকে আছে, তার মধ্যে শামখোল সবচেয়ে বেশি সুপরিচিত ও বিস্তৃত। এ পরিবারের অপর পরিচিত পাখি ‘মদনটাক’ এখন বেশ বিরল এবং বাদবাকি সবাই অতিবিরল হয়ে গেছে।

শামখোলও কিন্তু আর সব মানিকজোড়ের মতোই বিশালাকার পাখি এবং এর আহার ও বাসস্থানের চাহিদাটাও বড়। জনাকীর্ণ এই দেশে আর সব বড় পাখির মতো শামখোলের সংখ্যাও কমে যাওয়ারই তো কথা। বিশেষ করে গত শতাব্দীর প্রথমার্ধে ক্ষতিকর কীটনাশক ‘ডিডিটি’ ব্যবহারের ফলে এ দেশের অন্যান্য বড় পাখির সঙ্গে শামখোলেরও বিলুপ্ত হওয়াটা প্রায় নিশ্চিতই ছিল।

শামখোল পাখির ইংরেজি নাম ‘ওপেন বিল’ বা খোলা-চঞ্চু। দুই পাটি চঞ্চুর মাঝে একটা ফাঁকা জায়গা থাকে বলেই এ পাখির এই নাম। চঞ্চুর এই আজব ফাঁকটির জন্যই এর বৈজ্ঞানিক নামকরণ হয়েছে ‘অ্যানাস্টোমাস অসিটান্স’, যার অর্থ হাই তোলা মুখ। শামখোল যেন আজীবন মুখ হাঁ করে আছে, দুনিয়ার আর সব পাখির মতো সে কখনো দুই চঞ্চু এক করতে পারে না।

বাংলার মানুষ কিন্তু এ পাখির চঞ্চুর বিশেষত্বকে গুরুত্ব না দিয়ে বরং খাদ্যাভ্যাসের ভিত্তিতে এর নাম দিয়েছে শামুক-ভাঙা অথবা শামুকখোল এবং সংক্ষেপে শামখোল। শামখোল পাখির নাতিদীর্ঘ খাদ্যতালিকায় প্রথমেই আছে শামুক ও ঝিনুক। শামুক-ঝিনুকের শক্ত খোলস খুলে ফেলার জন্যই শামখোলের চঞ্চুর ওই আজব আর্কিটেকচার, যা আর কোনো পাখির নেই।

শামখোলের অদ্ভুত চঞ্চু নিয়ে প্রাচীন পাখি বিজ্ঞানীদের কৌতূহলের অন্ত ছিল না। ব্রিটিশ বিজ্ঞানী স্যার জুলিয়ান হাক্সলি ভেবেছিলেন, হয়তো দুই চঞ্চুর ফাঁকে ফেলেই পাখিটি শামুক ভাঙে। কিন্তু তার ধারণা ভুল ছিল। শামখোল তার চঞ্চুর চোখা প্রান্ত দিয়েই শামুক ভাঙে। পানির মধ্যে চঞ্চুর প্রান্ত ডুবিয়েই সে শামুকের খোলস ভেঙে মাংস বের করে নেয়। পানির তলে পড়ে থাকে শামুকের খোলস।

শামুক ভাঙার কাজে শামখোলের দক্ষতা তুলনাহীন। পাখিবিদ ড. জার্ডন একটা শামখোলের চোখ বেঁধে তার সামনে পানিতে শামুক দিয়ে প্রমাণ পেয়েছিলেন যে, কিছু দেখতে না পেলেও পাখিটি অনায়াসে শামুক ভেঙে খেতে পারে। তবে একই পদ্ধতিতে সে ঝিনুক ভাঙতে পারে না। শামখোল পাখি ঝিনুক তুলে এনে রোদে রাখে। কিছুক্ষণ রোদে থাকলে ঝিনুক আপনি খুলে গিয়ে শামখোলের সুইট-ডিশ হয়ে যায়।

বিশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে প্ল্যান্ট-প্রোটেকশন নামে এক অদূরদর্শী প্রকল্প এ দেশের বিল-বাঁওড়ে বিমান উড়িয়ে ডিডিটি ছিটিয়েছিল। তার ফলে কীটপতঙ্গ, সরীসৃপ, উভচর, পাখি ও মাছের অপূরণীয় ক্ষতি হয়। শামুক-ঝিনুকও বিষাক্ত হয়ে পড়ে এবং শামখোল মরতে থাকে। যুক্তরাষ্ট্রে ডিডিটির প্রভাব নিয়ে ‘নীরব বসন্ত’ শিরোনামে অবিস্মরণীয় এক বই লেখেন বিজ্ঞানী র‌্যাচেল কার্সন। এর ফলে ডিডিটি-বিরোধী আন্দোলন শুরু হয় এবং ভয়ংকর কীটনাশকটি নিষিদ্ধ ঘোষিত হয়।

ডিডিটি নিষিদ্ধ হওয়ার পর এর ব্যবহার কমে গেলেও এ দেশে ব্যবহৃত ক্ষতিকর কীটনাশকের তালিকা দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হয়েছে। স্টর্ক, ক্রেইন, র‌্যাপ্টর ইত্যাদি পরিবারের অনেক প্রজাতির বড় আকারের পাখির সংখ্যা ক্রমাগত কমে গেছে, আজও কমেই চলেছে। এর একমাত্র ব্যতিক্রম শামখোল পাখি। বিলুপ্তির স্টিম রোলারের সামনে থেকে এই একটি পাখি সরে আসতে সক্ষম হয়েছে।

এ দেশের অনেক ধানখেতেই আমরা এখন শামখোলের ঝাঁক দেখতে পাই। ইরি ধানের খেতে পানি জমা থাকে বলে এখানে শামুকের বাড়বাড়ন্ত হয় এবং তা নিয়ন্ত্রণ করতে নেমে পড়ে শামুকভুক এই পাখির দল। অনুমান করি, বিলুপ্তির দ্বার থেকে শামখোল পাখিকে ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে দেশব্যাপী ইরি চাষেরও কিঞ্চিৎ অবদান রয়েছে।

রাজপথে কাঁঠাল ছায়া

প্রকাশ: ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১১:৩৮ এএম
রাজপথে কাঁঠাল ছায়া
গরমে কাঁঠালগাছের ছায়ায় বসে বিশ্রাম নিচ্ছেন পথচারীরা। ছবিটি গতকাল সংসদ ভবন এলাকা থেকে তোলা। ছবি: খবরের কাগজ

চলছে বৈশাখ মাস। তীব্র দাবদাহে চারদিক খাঁখাঁ করছে। আর কয়দিন পরই শুরু হবে জ্যৈষ্ঠ মাস। আর এই মাসে পাওয়া যায় আম, কাঁঠাল, লিচুর মতো সুস্বাদু ফল। এরই মধ্যে গাছে গাছে দেখা যাচ্ছে আম বা কাঁঠাল। শহরে সাধারণত হাটে বাজারে কিংবা রিকশাভ্যানে দেখা মেলে কাঁঠালের পসরা। অন্যদিকে আম-কাঁঠালের গাছের কথা চিন্তা করলে আমাদের মনের চিত্রপটে ভেসে ওঠে গ্রামের মেঠো পথের পাশে বা বাড়ির উঠোনে থাকা গাছের কথা। যেখানে ধরে আছে ফল-ফলাদি।

কিন্তু ইট-পাথরের আর কংক্রিটের এই শহরে ফলের গাছের দেখা মেলা ভার। খুব বেশি হলে ছাদবাগানে টবের মধ্যে লাগানো গাছ চোখে পড়ে। চারদিকে গাছ কেটে ব্যাঙের ছাতার মতো যেভাবে নগরায়ণ হচ্ছে এতে একদিকে যেমন শহরের তাপমাত্রা বেড়ে জনজীবন বেহাল হচ্ছে। অন্যদিকে একটু স্বস্তির জন্য বা বিশ্রাম নেওয়ার জন্য পাওয়া যায় না কোনো বৃক্ষছায়া।

কিন্তু এর ব্যতিক্রম দেখা যায় মানিক মিয়া অ্যভিনিউ, ধানমন্ডি, উত্তরা বা এয়ারপোর্টের দিকের রাস্তায় চলাচলের সময়। রাস্তায় পাশে সারি ধরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায় কাঁঠালের গাছ। মেঠো পথ কিংবা নির্দিষ্ট কোনো বাগানবাড়ির বাইরে রাজপথে এমন কাঁঠালগাছ অনেকের মনে কৌতূহলের সৃষ্টি করে। জাতীয় ফল বলে কথা!
এসব কাঁঠালগাছ একদিকে যেমন ফল দিচ্ছে অন্যদিকে এই তীব্র গরমে দিচ্ছে সুশীতল ছায়া। জীবিকার তাগিদে যারা এই গরমে বাড়ির বাইরে বের হন তারা কিছুটা সময় এসব কাঁঠালগাছের ছায়ায় বসে জিরিয়ে নেন। আবার কেউ কেউ তাকিয়ে থাকেন গাছে ঝুলে থাকা কাঁচা কাঁঠালের দিকে।

প্রাচীন বাংলার জ্যোতিষী খনা বলেছেন,
‘আম লাগাই জাম লাগাই
কাঁঠাল সারি সারি-
বারো মাসের বারো ফল
নাচে জড়াজড়ি।’

অর্থাৎ বারো মাসে বারো রকম ফলের গাছ লাগালে সারা বছরই ফলের স্বাদ পাওয়া যাবে। কাঁঠাল এমন একটি ফল যা একাধিক উপায়ে খাওয়া যায়। কাঁচা কাঁঠাল বা এচোঁড় রান্না করে খাওয়া যায়। আবার পাকা কাঁঠাল যেমন খাওয়া যায়, তেমনি কাঁঠালের বিচি ভেজে বা ভর্তা করে অথবা রান্না করেও খাওয়া যায়। পাকা কাঁঠাল দিয়ে কাঁঠালের সত্ত্বও তৈরি করা হয়। এ ছাড়া কাঁঠালগাছের আঠা কাঠ বা বিভিন্ন পাত্রের ছিদ্র বন্ধে ব্যবহার করা হয়।